সুষ্ঠ জ্ঞান, মানব স্বভাব ও মৌলিক শিক্ষার মানদণ্ডে হিন্দুধর্ম

⌘K
  1. Home
  2. Docs
  3. সুষ্ঠ জ্ঞান, মানব স্বভাব ...
  4. ৩। হিন্দুদের সুনির্দিষ্ট বিশ্বাস কী?

৩। হিন্দুদের সুনির্দিষ্ট বিশ্বাস কী?

বর্তমান হিন্দুধর্ম এমন একটি বিশ্বাস, যা বিপুল সংখ্যক দেবতাকে বিশ্বাস করে। হিন্দু ধর্মে অসীম সংখ্যক দেবতা রয়েছে। এতদসত্ত্বেও হিন্দুরা (এসব দেবদেবির সাথে) এক আল্লাহকে বিশ্বাস করে।
তারা কল্পনা করে, ইলাহ তারা যাদের পবিত্র জানে তার সবের মধ্যে ইলাহ অবতরণ করেছে।
এখানে কেউ কেউ মনে করে, হিন্দুদের এক ইলাহের প্রতি বিশ্বাস করা এবং এই মূর্তি এবং আকৃতিপ্রাপ্তগুলোকে ইলাহের প্রতিকৃতি বলে বিবেচনা করা পৌত্তলিকতা নয়!
এটি একটি মারাত্মক ভ্রান্তি।
আর মূর্তিগুলোকে ইলাহের প্রতিকৃতি বলে বিশ্বাস করাই হলো আসল পৌত্তলিকতা। যা প্রতিটি মানবের ইতিহাসে নবীগণের শিক্ষা এবং বেদসমূহের শিক্ষার পরীপন্থী।
নবীগণ এবং বেদসমূহের শিক্ষা বিরোধী প্রতিটি মুশরিক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস (ঈমান) করে; কিন্তু তারা মূর্তিগুলোকে ইলাহের প্রতিকৃতি বানায়। তবে মুশরিকদের আল্লাহর অস্তিত্ব ও তিনি এক হওয়ার প্রতি এ ধরনের বিশ্বাস, তাদের আল্লাহর সাথে কুফুরী করা, তার নবীগণ ও বেদসমূহের সাথে কুফরী করাকে না করে না। যতক্ষণ তারা এ সব মূর্তিগুলোকে গ্রহণ করে।
মূর্তিগ্রহণ (পূজা), অথবা এর নিকটবর্তী হওয়া অথবা এগুলোকে পবিত্র মনে করা নিষিদ্ধ হওয়ার বেদসমূহ স্পষ্ট এবং অকাট্য।
বেদ বলে: ”যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত তৈরীকৃত বস্তুসমূহকে পূজা করবে, সে অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে এবং আগুনের শাস্তি ভোগ করবে।” [৯] হিন্দুধর্ম যে সব মূর্তিগুলোর পুজা দ্বারা ভরপুর, সে সব মূর্তিগুলোকে যে গ্রহণ করবে, সে বেদের বাণী মতে স্থায়ীভাবে জাহান্নামে (নরকে) থাকবে।
বেদ আরও বলে: “সকলের মালিক, অদৃশ্যের জ্ঞানী তো তিনিই, যিনি অন্য কোন ইলাহের সহযোগিতার মুখাপেক্ষী নন। তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ, তিনিই উপযুক্ত যে মানুষ তাঁর অর্চনা করবে। আর যারা আল্লাহকে ছাড়া অন্যদেরকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করবে, তারা হতভাগ্য, তারা সর্বদা ভীতিকর বড় মুসিবতের সম্মুখীন হবে।” [১০] বরং ভগবত গীতায় (Bhagavad Gītā भगवद्गीता) রয়েছে: “যারা অসংখ্য ইলাহের পূজা করবে, তারা অসংখ্য ইলাহ পাবে, যারা পূর্বপুরুষদের পূজা করবে, তারা পূর্বপুরুষদেরকে পাবে, যারা শয়তানের পূজা করবে, তারা শয়তানকে পাবে, আর যারা আমার পূজা করবে, তারা আমাকে পাবে।” [১১] উপরোক্ত উদ্ধৃতিসমূহ এবং এছাড়াও অসংখ্য বর্ণনা স্পষ্টভাবে হিন্দুদেরকে এ সব মূর্তিপূজা ত্যাগ ও আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান করে। এমনকি মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী বলেছেন: “বেদসমূহে কোন একটি অক্ষরও বিদ্যমান নেই, যা পাথর ও অন্যান্য কিছু দ্বারা তৈরিকৃত মূর্তিসমূহের পূজার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে।”
সুতরাং বেদসমূহে থাকা একত্ববাদের বিশ্বাসকে হিন্দুরা পরিত্যাগ করেছে শুধুমাত্র পরবর্তীতে আসা বাতিল বিশ্বাসের হাত ধরে।
আল্লাহ কর্তৃক তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরে নাযিলকৃত মহিমান্বিত কুরআন তাগিদ দিয়েছে যে, যারা মূর্তিসমূহের ইবাদত (পূজা) করে, এ বিশ্বাসে যে, তারা এক আল্লাহর উপরে বিশ্বাস রাখার পাশাপাশি এসব মূর্তিগুলোকে গ্রহণ করে, তারা মুর্তিগুলোর পুজা করার কারণে আল্লাহকে অস্বীকারকারী।
মহিমান্বিত কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আল্লাহ তা`আলা বলেন,

﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُۚ قُلۡ أَفَرَءَيۡتُم مَّا تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ إِنۡ أَرَادَنِيَ ٱللَّهُ بِضُرٍّ هَلۡ هُنَّ كَٰشِفَٰتُ ضُرِّهِۦٓ أَوۡ أَرَادَنِي بِرَحۡمَةٍ هَلۡ هُنَّ مُمۡسِكَٰتُ رَحۡمَتِهِۦۚ قُلۡ حَسۡبِيَ ٱللَّهُۖ عَلَيۡهِ يَتَوَكَّلُ ٱلۡمُتَوَكِّلُونَ٣٨﴾ [الزمر: 38] “তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, আসমান-যমীন কে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।” [সূরা আয-যুমার: ৩৮]। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন:
﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَهُمۡ لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُۖ فَأَنَّىٰ يُؤۡفَكُونَ٨٧﴾ [الزخرف: 87] “তুমি যদি তাদেরকে প্রশ্ন করো তোমাদেরকে কে সৃষ্টি করেছে? তবে অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ্।” [সূরা আয-যুখরুফ: ৮৭]।
সুতরাং কুরআন ও বেদের ঐক্যমতেই এ সব মূর্তিগুলো গ্রহণ করা, মানুষকে আল্লাহর অস্বীকারকারী বানিয়ে দেয়।
মহিমান্বিত কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿إِنَّمَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَوۡثَٰنٗا وَتَخۡلُقُونَ إِفۡكًاۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ لَا يَمۡلِكُونَ لَكُمۡ رِزۡقٗا فَٱبۡتَغُواْ عِندَ ٱللَّهِ ٱلرِّزۡقَ وَٱعۡبُدُوهُ وَٱشۡكُرُواْ لَهُۥٓۖ إِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ١٧﴾ [العنكبوت: 17] ”তোমরা তো আল্লাহ্ ছাড়া শুধু মূর্তিপূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া যাদের ইবাদত কর তারা তো তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই তোমরা আল্লাহ্র কাছেই রিযিক চাও এবং তাঁরই ইবাদাত কর। আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্ৰকাশ কর। তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।” [সূরা আল-আনকাবূত: ১৭]।
সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে রিযিক অন্বেষণ কর এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদাত কর। কেননা তাঁর কাছেই আমরা সবাই ফিরে যাব।
আর বর্তমানে যমীনের বুকে ইসলাম ছাড়া আল্লাহর একত্ববাদ এবং সকল প্রকার শিরক থেকে মুক্ত অন্য কোন ধর্ম অবশিষ্ট নেই।
অতএব, প্রত্যেক হিন্দুর জন্য উচিত, কোন গোঁড়ামী ছাড়াই ইসলামকে গভীর দৃষ্টি সহকারে দেখা, আর এ ধর্মে থাকা একত্ববাদের বিশ্বাসের দিকে দেখা, এটি কি তার স্বভাবজাত প্রকৃতি ও বেদে যা আছে, তার সাথে সামঞ্জস্যশীল, নাকি সামঞ্জস্যশীল নয়?
নিশ্চয় মানুষের কাছে আল্লাহ যে সকল নবীদেরকে প্রেরণ করেছিলেন, তাদের প্রত্যেকের দাওয়াত ছিল: ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একক গণ্য করা। আর তা হবে: সকল মূর্তিকে অপসারণ ও আল্লাহর রাসূলগণ এবং সর্বশেষ নবী আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন, সেগুলোর প্রতি আত্মসমর্পণ করার মাধ্যমে।

    How can we help?