সুষ্ঠ জ্ঞান, মানব স্বভাব ও মৌলিক শিক্ষার মানদণ্ডে হিন্দুধর্ম

⌘K
  1. Home
  2. Docs
  3. সুষ্ঠ জ্ঞান, মানব স্বভাব ...
  4. ৬। জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে হিন্দুধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?

৬। জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে হিন্দুধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?

আজকের হিন্দুধর্ম পুনর্জন্মের ধারণা এবং প্রজন্মের অন্তহীন চক্রের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত: হিন্দু চিন্তাধারার আলোকে আমরা পুনর্জন্মের একটি বৃত্তাকার চক্রে আবর্তিত হই, প্রত্যেক জন্মগ্রহণকারী সত্তা তার আগে অন্য আরেকটি সত্তায় অস্তিত্ববান ছিল এবং তার আত্মা তার মৃত্যুর পরে আবার অন্য সত্তায় চলে যাবে, এভাবে চলতে থাকে। আর এটি হিন্দুধর্মে “সংসার”(Saṃsāra, संसार) হিসেবে পরিচিত।[২২] আত্মার এ স্থানান্তরের বিশ্বাসের সাথে বেশ কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক এবং বৈজ্ঞানিক সমস্যাও রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
প্রথম সমস্যা: এটি “টারটুলিয়ানের আপত্তি” (Tertullian’s objection) নামে পরিচিত, তিনি বলেছেন: স্থানান্তর (পুনর্জন্ম) যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে কিভাবে শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো একই মানসিক ক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে না?[২৩] দ্বিতীয় সমস্যা: যদি আত্মার পুনর্জন্ম সত্য হয়, তাহলে ধরে নিতে হয় যে, জীবের সংখ্যা স্থির; কারণ তারা জন্মের চক্রে একে অপরের মধ্যে পুনর্জন্ম পেয়েছে; অথচ এটি আজকের দিনে কোন জ্ঞানী ব্যক্তিই বলবে না!
এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এমন একটি সময় ছিল যখন এ গোলাকার পৃথিবী ও জীবিত প্রাণীর কোন অস্তিত্বই ছিল না।আর একটি সময় এমনও ছিল যখন জীবগুলি এই সমান সংখ্যায় জীবিতাকারে ছিল না; বরং এদের সংখ্যা খুবই কম ছিল, তারপর সময়ের ব্যবধানে সেগুলো বৃদ্ধি পায়। আর এ বিষয়ের উপরে আজকের মানুষ ঐক্যমত।
একটা সময় ছিল যখন এখনকার চেয়ে মানুষের সংখ্যা ছিল খুব কম।
সুতরাং মানুষের সংখ্যা সর্বসম্মতভাবে স্থির নয়। তাহলে কিভাবে আত্মার পুনর্জন্ম নির্দিষ্ট চক্রে ঘটে থাকে?
তৃতীয় সমস্যা: এই দর্শনের অনুসারীরা ব্যতীত পূর্বজন্ম –পূর্বে অতিবাহিত জীবন- এর কথা অন্যদের মনে থাকে না কেন?
রুথ সিমন্স (Ruth Simmons) নামে একজন আমেরিকান মহিলা ছিলেন, যিনি ব্রাইডি মারফি (Bridey Murphy) নামে অন্য একজন মহিলার পুনর্জন্ম বলে দাবি করেছিলেন এবং রুথ সিমন্স আয়ারল্যান্ডে উনিশ শতকে যখন তিনি ব্র্যাডি মারফি ছিলেন, তখনকার তার অতীতের স্মৃতি মনে করতে শুরু করেছিলেন। এরপরে গবেষকরা রুথ সিমন্সের জীবন অনুসন্ধান করার পরে জানা গিয়েছিল যে, তার একটি আয়ারল্যান্ডের পুরানো প্রতিবেশী ছিল, তার নাম ছিল ব্র্যাইডি মারফি এবং তিনি আয়ারল্যান্ডের ব্যাপারে ব্র্যাইডির স্মৃতি গ্রহণ করেছিলেন এবং সেগুলিকে নিজের দিকে সম্পৃক্ত করে দাবি করেন যে, তিনিই ব্র্যাইডি।[২৪] সুতরাং আত্মার স্থানান্তর (পুনর্জন্ম) একটি বিভ্রম এবং কল্পনা মাত্র এবং এটি বিজ্ঞান এবং ইন্দ্রিয়ের সহজতম স্বতঃসিদ্ধের বিপরীত।
এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফিলোসফির প্রধান সম্পাদক এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল এডওয়ার্ডস বলেছেন: “পুনর্জন্ম একটি কল্পনা যা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক।”[২৫] সুতরাং মানুষ মারা গেলে কখনোই [দুনিয়ায়] অন্য জীব হয়ে জন্ম নেয় না।
বেদ সর্বদা এই সত্যের উপরেই জোর দেয় এবং বেদে পুনর্জন্ম বা সংসারের কোন কথা নেই।[২৬] এমনকি হিন্দু পণ্ডিত শ্রী সত্যকাম বিদ্যালঙ্কার বলেছেন: “পুনর্জন্মের বিশ্বাস বেদসমূহে নেই। যারা আছে বলে দাবী করে, আমি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করছি।”[২৭] বিদ্যালঙ্কারের কথা সত্য হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে যে, হিন্দুরা একটি প্রাচীন ধর্মীয় আচার পালন করে যাকে বলা হয়: শ্রাদ্ধ (Śrāddha श्राद्ध), এবং এই আচারের উদ্দেশ্য হল: মৃতদের আত্মাকে শান্ত করা।
তাহলে কিভাবে আত্মার পূনঃজন্ম হয়, যখন হিন্দুরা মৃতদের আত্মাকে শান্ত করে দেয়?
আর কুরআন কারীম, যা আল্লাহ তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপরে নাযিল করেছিলেন, সেখানে তিনি ঐ সকল জীবনের পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকার প্রবক্তাদেরকে ভ্রান্তির অপনোদন করেছেন, যারা বলে:
﴿إِنۡ هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا ٱلدُّنۡيَا نَمُوتُ وَنَحۡيَا وَمَا نَحۡنُ بِمَبۡعُوثِينَ٣٧﴾ [المؤمنون: 37] ”একমাত্র দুনিয়ার জীবনই আমাদের জীবন, আমরা মরি বাঁচি এখানেই। আর আমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে না।” সূরা আল-মুমিনূন: ৩৭। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাদের বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে তাঁর মহাগ্রন্থ কুরআনে বলেছেন:
﴿أَلَمۡ يَرَوۡاْ كَمۡ أَهۡلَكۡنَا قَبۡلَهُم مِّنَ ٱلۡقُرُونِ أَنَّهُمۡ إِلَيۡهِمۡ لَا يَرۡجِعُونَ٣١﴾ [يس: 31] “তারা কি লক্ষ্য করে না, আমি তাদের আগে বহু প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি? নিশ্চয় তারা তাদের মধ্যে ফিরে আসবে না।” সূরা ইয়াসিন: ৩১।
তাই যে ব্যক্তি মারা যাবে, সে দুনিয়াতে ফিরে আসবে না অথবা সে দ্বিতীয়বার প্রত্যাবর্তন করবে না। [২৮] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿لَا يَذُوقُونَ فِيهَا ٱلۡمَوۡتَ إِلَّا ٱلۡمَوۡتَةَ ٱلۡأُولَىٰۖ وَوَقَىٰهُمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ٥٦﴾ [الدخان: 56] “তারা এখানে প্রথম মৃত্যু ছাড়া অন্য মৃত্যুকে আস্বাদন করবে না।” সূরা আদ-দুখান: ৫৬।
এটি মুসলমানদের বিশ্বাস এবং এটি বেদেরও বিশ্বাস, যা দুর্ভাগ্যবশত হিন্দুরা পরিত্যাগ করেছে।
পুনর্জন্মের চতুর্থ সমস্যা: তারা দাবি করে যে, চূড়ান্ত লক্ষ্য হল: এই বারবার জন্ম নেওয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে পরমের সাথে একীভূত হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছানো বা যা মোক্ষ নামে পরিচিত। সুতরাং এর অর্থ দাঁড়ায়: বারবার জন্ম হওয়া একটি শাস্তি (আযাব)।
কিন্তু কে বলেছে যে বারবার জন্ম নেওয়া শাস্তি?
বেশিরভাগ লোককে যদি তুমি জিজ্ঞাসা কর যে: আপনি আবার জন্ম নিতে চান এবং আবার জীবন অনুভব করতে চান? তাদের মধ্যে অনেকেই হ্যাঁ উত্তর দিতে দ্বিধা করবে না।
তদুপরি, শাস্তি হিসাবে অস্তিত্বের এই হতাশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি একটি মিথ্যা দৃষ্টিভঙ্গি; কারণ অস্তিত্বের মধ্যে অনেক কল্যাণ রয়েছে এবং রয়েছে অগণিত নি‘আমাত।
সুতরাং মোক্ষ হল এমন একটি ধারণাপ্রসূত মুক্তির পন্থা, যার কোন বাস্তবতা নেই!
পঞ্চম সমস্যা: পুনর্জন্মের দর্শন অপরাধ বা অবাধ্যতার প্রতি উদাসীনতার দিকে ঠেলে দেয়; কারণ এতে করে অপরাধ সংঘটন সঠিক বলে অনুমোদিত হয়। কারণ মানুষ অনিবার্যভাবে পরবর্তী জন্মসমূহের মধ্য হতে কোন একটি জন্মে পরিত্রাণ পাবে। সুতরাং সে যে জন্মে বর্তমানে রয়েছে, সেখানে তার উপভোগ করা উচিত।
এ কাজটি নিশ্চিতভাবে যে কোন ধরণের অপরাধে বারবার লিপ্ত হওয়াকে প্রলুব্ধ করে। আর সম্ভবত এ কারণেই ভারতে বিশ্বব্যাপী অপরাধের হার সবচেয়ে বেশি, বিশেষভাবে ধর্ষণের অপরাধ। [২৯] ভারতে গণধর্ষণ অপরাধের হার সবচেয়ে বেশি।

    How can we help?