সুষ্ঠ জ্ঞান, মানব স্বভাব ও মৌলিক শিক্ষার মানদণ্ডে হিন্দুধর্ম

⌘K
  1. Home
  2. Docs
  3. সুষ্ঠ জ্ঞান, মানব স্বভাব ...
  4. ১৭। প্রতিটি হিন্দু ব্যক্তির কেন ইসলামকে গ্রহণ করা উচিত?

১৭। প্রতিটি হিন্দু ব্যক্তির কেন ইসলামকে গ্রহণ করা উচিত?

একদিকে ইসলাম হচ্ছে সেই দীন ব্যবস্থা, যার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের জন্য সন্তুষ্ট হয়েছেন, এটিই হচ্ছে সেই ইলাহী শরীআত (চলার পথ), যা ছাড়া আল্লাহ অন্য কোন কিছু গ্রহণ করবেন না। আবার অন্যদিকে, হিন্দুধর্মের গ্রন্থসমূহ, যার সম্ভবত কিছু ভবিষ্যদ্বাণীমূলক অবশিষ্টাংশ এখনো রয়েছে, ইসলামের আগমন এবং ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে অসংখ্য সুসংবাদ দিয়েছে। হিন্দুদের ইসলাম গ্রহণ করার এবং বিচার দিবসে আল্লাহর কাছে তার মুক্তির একমাত্র পথটি নির্দ্বিধায় অনুসরণ করার ক্ষেত্রে এটি একটি শক্তিশালী কারণ।
আমি হিন্দুধর্মীয় পবিত্র গ্রন্থসমূহ থেকে ইসলামের ব্যাপারে কতিপয় সুসংবাদ উল্লেখ করব।
কিন্তু হিন্দুদের বইয়ের সুসংবাদে প্রবেশ করার আগে, আমি উল্লেখ করতে চাই: হিন্দু আইনের অবস্থা এবং হিন্দু কীভাবে শুদ্ধ হওয়ার জন্য তার দেহ পোড়ায়।
এবং কিভাবে হিন্দুরা অপ্রাকৃতিক তপস্যা সাধনা করে থাকে।
আর পরিস্থিতি আহলে কিতাবদের থেকে খুব বেশি দূরে নয়; কারণ আহলে কিতাব, বিশেষ করে ইহুদিদের উপরেও পবিত্রতা এবং খাদ্যদ্রব্যে কঠোর বিধি-নিষেধের অসংখ্য বেড়ী ছিল এবং তাদের অন্যায়, অত্যাচার ও দুর্নীতির কারণে তাদের উপর আরোপিত আইনেরও বিশেষ শৃঙ্খল ছিল অত্যন্ত কঠোর।
মহিমান্বিত কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন:
﴿فَبِظُلۡمٖ مِّنَ ٱلَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمۡنَا عَلَيۡهِمۡ طَيِّبَٰتٍ أُحِلَّتۡ لَهُمۡ وَبِصَدِّهِمۡ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ كَثِيرٗا١٦٠﴾ [النساء: 160] “সুতরাং ভাল ভাল যা ইয়াহুদীদের জন্য হালাল ছিল, আমরা তা তাদের জন্য হারাম করেছিলাম তাদের যুলুমের জন্য এবং তাদের আল্লাহর পথ থেকে অনেককে বাঁধা দেওয়ার জন্য।” সূরা আন-নিসা: ১৬০।
[এটা জানার ক্ষেত্রে] তোমার জন্য তাওরাতের [বর্তমানে পুরাতন নিয়মের] লেবীয় পুস্তক পাঠ করা যথেষ্ট হবে, যেখানে ইয়াহুদী নারীদের উপরে হায়েজের বিধান রয়েছে। তাওরাত বলছে:
“আর অশৌচকালে যে সব শয্যায় শয়ন করে,যার উপরে বসে তা অপবিত্র হয়ে যায়। আর যে তার বিছানা স্পর্শ করে, সে অবশ্যই তার কাপড় ধুইবে, পানি দ্বারা গোসল করবে। সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অপবিত্র থাকবে। আর যে তার বসার বস্তু স্পর্শ করে, সে অবশ্যই তার কাপড় ধুইবে, পানি দ্বারা গোসল করবে। সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অপবিত্র থাকবে। আর তাহার শয্যার কিম্বা আসনের উপরে কোন কিছু থাকিলে যে কেহ তাহা স্পর্শ করে, সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অপবিত্র থাকবে। আর অশৌচকালে যে পুরুষ তাহার সাথে শয়ন করে, ও তাহার রজঃ তাহার গাত্রে লাগে, সে সাত দিবস অশুচি থাকিবে; এবং যে কোন শয্যায় সে শয়ন করিবে, তাহাও অশুচি হইবে।” [৬১] বনী ইসরায়েলের অন্তরসমূহ কঠিন এবং শক্ত হওয়ার কারণেই এই কঠোর হুকুমসমূহ তাদের দেওয়া হয়েছিল।
আল্লাহ তাওরাতে তাদেরকে বলেছিলেন, তিনি একজন নবী পাঠাবেন, যিনি তাদের কাছ থেকে এই সমস্ত শৃঙ্খল তুলে নেবেন।
তাওরাত আমাদের জন্য বর্ণনা করে, নবী ইয়াকুব (আঃ) মৃত্যুর সময়, তিনি তার বারোজন পুত্রকে একত্রিত করেছিলেন এবং তাদের উপদেশ দিতে শুরু করেছিলেন, তাওরাতে ইয়াকুবের প্রসিদ্ধ উপদেশের মধ্যে যা রয়েছে। তাওরাত বলেছে:
“পরে যাকোব [ইয়াকুব] আপন পুত্রগণকে ডাকিয়া কহিলেন, তোমরা একত্র হও, উত্তর কালে তোমাদের প্রতি যাহা ঘটিবে, তাহা তোমাদিগকে বলিতেছি। যাকোবের পুত্রগণ, সমবেত হও, শুন, তোমাদের পিতা ইস্রায়েলের বাক্য শুন।

তারপরে তিনি যিহূদা (এহুদা)-কে বললেন, আর যিহুদা হচ্ছে নবীগণের পূর্বপুরুষ: [যাদের মধ্যে রয়েছেন] দাঊদ, সুলাইমান ও মাসীহ (ঈসা) আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম।
তিনি তাকে বলেছিলেন:
“যিহূদা হইতে রাজদণ্ড যাইবে না, তাহার চরণযুগলের মধ্য হইতে বিচারদণ্ড যাইবে না, যে পর্যন্ত শীলো না আইসেন; জাতিগণ তাঁহারই আজ্ঞাবহতা স্বীকার করিবে।” [৬২] আহলে কিতাবদের মধ্যে কোন ধরণের বিতর্ক ছাড়াই এ উদ্ধৃত অংশটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় ধরণের সুসংবাদ বটে!
সুতরাং এটি এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে সুসংবাদ বহন করছে, যার কাছে অচিরেই নবুয়ত স্থানান্তর করা হবে আর তার কাছে হুকুম ও শরী‘আতের দায়িত্বও অর্পন করা হবে।
“যিহূদা হইতে রাজদণ্ড যাইবে না”: রাজদণ্ড হল ক্ষমতা বা বিচারের লাঠি। এর অর্থ হল: যিহূদার বংশধরদের মধ্যে অসংখ্য বিচারক নবীগণ আসবেন।
“যে পর্যন্ত শীলো না আইসেন; জাতিগণ তাঁহারই আজ্ঞাবহতা স্বীকার করিবে।”
সুতরাং কে সেই শীলো? যাকে ইয়াকুব আলাইহিস সালাম নবী হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং জাতী যার আজ্ঞাবহতা স্বীকার করবে?
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে, আমাদের অবশ্যই জানতে হবে যে, বনী ইসরাঈলের শেষ নবী ছিলেন মাসীহ আলাইহিস সালাম এবং তিনি ছিলেন এহুদা (যিহুদা)-র বংশধর।
তারপর বনী ইসরাঈলের মধ্যে আকস্মিকভাবে নবীদের আগমন বন্ধ হয়ে যায়!
আর ইয়াকুব আলাইহিস সালামের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, বনী ইসরাঈলের মধ্যে বাণী বন্ধ হওয়ার পর শাসন, নবুয়ত ও শরী‘আত যিহূদার বাইরে থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে স্থানান্তরিত হয়েছিল বলে মেনে নেওয়া হয়, তাই না?
এটা স্পষ্ট যে, এ ব্যক্তি মাসীহ আলাইহিস সালাম নন; কেননা মাসীহ এহুদা বা যিহূদার বংশধর ছিলেন!
এবং ইয়াকুবের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে এই ব্যক্তির উম্মাত বা জাতী যিহূদার ভূমি দখল করবে, যিহূদা হইতে রাজদণ্ড এবং চরণযুগলের মধ্য হইতে বিচারদণ্ড যাইবে না, যে পর্য্যন্ত শীলো না আইসেন; ফলে তার জন্যই হবে আনুগত্য ও আজ্ঞাবহতা।” তাই অচিরেই এই আসন্ন নবীর উম্মাত (স্বীয় জাতি) ভূমি ও ফিলিস্তিন দখল করবে, বড় বড় সাম্রাজ্যগুলো তার উম্মাতের অনুগত হয়ে যাবে।
আর খলিফা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) তার খিলাফতকালে যিহূদার ভূমি দখল করেন এবং শাম (সিরিয়া, জর্ডান), ইরাক ও পারস্য ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে বশ্যতা স্বীকার করে নেয়।
এই বাস্তবতা বোঝার জন্য খুব বেশী লেখা বা চিন্তার প্রয়োজন হয় না!
তাহলে ইতিহাস আমাদের বলে যে, যাকোব (ইয়াকুব আলাইহিস সালাম) তার পুত্রদের উদ্দেশ্যে করা ওসীয়তের মধ্যে যে নবুওয়াতের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, তা পূর্ণ হয়েছে। আর এটি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম ব্যতীত অন্য কোন নবীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি এবং এটি বিস্তারিতভাবে তার জাতি (মুসলিম) ছাড়া অন্য কোন জাতির ক্ষেত্রেও ঘটেনি।
কিন্তু ’শীলো’ শব্দের অর্থ কী?
শীলো অর্থ: বিশ্রামদাতা অথবা শৃংখল থেকে মুক্তকারী (Rest-giver); এ অর্থটি অধিকাংশ ওল্ড টেস্টামেন্টের বিশেষায়িত গবেষণা ওয়েবসাইটগুলোতে গ্রহণ করা হয়েছে। [৬৩] সুতরাং ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তাদেরকে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছিলেন, যিনি তাদের থেকে শৃংখলাবদ্ধতা ও বিধি-নিষেধসমূহ তুলে দেবেনে।
এখন আমরা আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী পড়ব:
﴿ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِيَّ ٱلۡأُمِّيَّ ٱلَّذِي يَجِدُونَهُۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَٰلَ ٱلَّتِي كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡۚ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُواْ ٱلنُّورَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٥٧﴾ [الأعراف: 157] “যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যে উম্মী নবী; যার গুণাবলী তারা নিজদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃংখল- যা তাদের উপরে ছিল- অপসারণ করে।” সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৭।
“আর তাদেরকে তাদের গুরুভার ও শৃংখল হতে মুক্ত করেন যা তাদের উপর ছিল।”: ইসলামের সহনশীল ও সহজ শরীআত এই সমস্ত শৃংখল ও বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে।
এবার আসা যাক হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের দিকে। [৬৪] হিন্দুধর্ম, যেমন আমি উল্লেখ করেছি, পাপ থেকে পবিত্র করার জন্য কামনা-লালসাকে পোড়ানোর জন্য কঠিন আচার-অনুষ্ঠানে ভরপুর।
সুতরাং হিন্দুদের বইগুলো এমন একজন মহান নবীর বর্ণনা দিচ্ছেন, যিনি তাদের বোঝা থেকে মুক্তি দেবেন এবং তাদের পাপ থেকে তাদের পবিত্র করবেন।
হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বলে: “মধু মাসের চাঁদের দ্বাদশ তারিখে কল্কি জন্মগ্রহণ করবেন।”[৬৫] আর কল্কি অর্থ: পাপসমূহ থেকে পবিত্রকারী।
এবং মধু মাস: এটি বসন্তের মাস, যা আত্মাসমূহের পছন্দনীয়।
সুতরাং সেই আগমনী নবী, যিনি তাদেরকে পাপ থেকে পবিত্র করবেন, তিনি বসন্ত মাসের দ্বাদশ তারিখে জন্মগ্রহণ করবেন।
আর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যেমনটি বেশিরভাগ মুসলিম পণ্ডিতদের কাছে সুপরিচিত যে, তিনি রবি‘উল-আউয়াল মাসের দ্বাদশ তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[৬৬] তার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)জন্মস্থান সম্পর্কে হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থে রয়েছে: “কল্কির জন্ম হবে শম্ভল গ্রামে, গৃহের দ্বাররক্ষীর নিকটে, ‘বিষ্ণুযশ’ নামক এক ব্যক্তির ঘরে।”[৬৭] শম্ভল গ্রামের অর্থ: নিরাপত্তাদানকারী শহর।
আর নিরাপত্তাদানকারী শহর হচ্ছে মক্কা।
﴿وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِـۧمُ رَبِّ ٱجۡعَلۡ هَٰذَا بَلَدًا ءَامِنٗا وَٱرۡزُقۡ أَهۡلَهُۥ مِنَ ٱلثَّمَرَٰتِ مَنۡ ءَامَنَ مِنۡهُم بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ قَالَ وَمَن كَفَرَ فَأُمَتِّعُهُۥ قَلِيلٗا ثُمَّ أَضۡطَرُّهُۥٓ إِلَىٰ عَذَابِ ٱلنَّارِۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ١٢٦﴾ [البقرة: 126] “স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম বলেছিল: ‘হে আমার রব! একে নিরাপদ শহর বানিয়ে দিন।” সূরা আল-বাকারা: ১২৬।
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কাতে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
আর এ বাণী: “‘বিষ্ণুযশ’ নামক এক ব্যক্তির ঘরে।”, বিষ্ণুযশ শব্দের অর্থ: আল্লাহর বান্দা।
আবার এ আসন্ন নবীর মায়ের নাম হবে সুমতী: “কল্কির জন্ম হবে বিষ্ণুযশের গৃহে তার স্ত্রীর সুমতীর গর্ভে।” [৬৮] সুমতী নিরাপদ থেকে… অর্থাৎ: আমিনা (নিরাপদ)।
জানা বিষয় যে, নবী মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মায়ের নাম: আমিনা।
হিন্দুধর্ম অনুসারে, কল্কি তার শম্ভল গ্রাম থেকে বেরিয়ে আসবে, শয়তানের সাথে যুদ্ধ করবে এবং অন্ধকার, দুর্নীতি এবং অত্যাচার দূর করবে। তারপর তার শেষ সময়ে সেখানে ফিরে আসবে। তারপর মহাপ্রভু (আল্লাহ) তাকে আকাশে নিয়ে যাবেন।
এবং প্রত্যেক মুসলমান এই সত্যটি জানে যে, নবী মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা ছেড়ে মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং মানুষের মধ্যে একত্ববাদ ছড়িয়ে দেন, তারপর তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বিজয়ী হিসাবে মক্কায় ফিরে আসেন।
হিন্দুধর্ম এই আগমনী নবীর সম্পর্কে আরো কতিপয় বৈশিষ্ট্য যুক্ত করেছে, যেগুলোর সাথে আমরা একমত নই, যেমন: স্বীয় রীতি মোতাবেক, তাদের দৃষ্টিতে কল্কি হল ঈশ্বরের মূর্ত প্রতীক (শারিরিক প্রকাশ), এ সব থেকে আল্লাহ সম্পূর্ণ মুক্ত। আমরা এর আগে বিস্তারিতভাবে বেদ থেকে এই মিথ্যাচারের জবাব সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
সুতরাং মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মধ্যে মূর্ত নন, আর না তাঁর আকাশ বা যমীন তাঁকে বেষ্টন করতে পারে।
কিন্তু আগত নবী সম্পর্কে তাদের বইয়ে যে বৈশিষ্ট্য আমাকে থামিয়ে দিয়েছিল তার মধ্যে একটি হল: তিনি একটি সাদা ঘোড়ায় চড়বেন। আর মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আল-মুর্তাজিয নামে একটি সাদা ঘোড়া ছিল।[৬৯] হিন্দু মূর্তিগুলো আগত নবী কল্কিকে একজন সাদা ঘোড়ায় চড়ে এবং তার কাঁধে তলোয়ার রাখার মত করে চিত্রিত করে। আমি যে সমস্ত হিন্দু প্রতিমা এবং মূর্তি দেখেছি সেগুলি তাকে এভাবেই চিত্রিত করেছে।
তিনি একজন মুজাহিদ (সংগ্রামী) নবী। এটি হযরত মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুনাগুণ।তিনি তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করেন এবং আল্লাহর শত্রুদের প্রতিহত করেন।
তাদের বই অনুসারে এই আগত নবী কল্কির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: তিনি অদৃশ্যের কথা বলবেন, তিনি তার লোকদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভূক্ত হবেন এবং তিনি হবেন স্বল্পভাষী, উদার, শক্তিশালী গড়নের এবং সৌন্দর্য্যের স্বীকৃতি প্রদানকারী।
কিন্তু তাকে বিশেষভাবে আলাদাকারী বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে: “কল্কি তার সহচরদের মধ্য হতে চারজনের মাধ্যমে শয়তানকে ধ্বংস করবেন।” [৭০] এ বাক্যটি পড়া মাত্রই একজন মুসলিমের মাথায় শুধু আবূ বাকর, উমার ইবনুল খাত্তাব, উছমান ইবনু আফফান এবং আলী ইবনু আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের কথাই আসবে।
এরা হলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সাহাবী বা সহচর এবং তারাই তার দাওয়াতের শুরু পর্যায় থেকে তাকে সমর্থন করেছিলেন এবং তারা তার পরে তার উত্তরসূরি হয়েছিলেন।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশিষ্ট চারজন সাথী ছিলেন, যারা তার নিকটবর্তী ছিলেন এবং তার সাথে দাওয়াতে সক্রিয় ছিলেন।
আর তাঁর মৃত্যর পরে নিম্নোক্ত ধারাবাহিকতায় তারা মুসলিমদের খিলাফাত পরিচালনা করেছিলেন:
১. আবু বাকর আস-সিদ্দীক,
২. উমার ইবনুল খাত্তাব,
৩. উছমান ইবনু আফফান,
৪. আলী ইবনু আবী তালিব।
আর আলী ইবনু আবী তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুর মাধ্যমে খিলাফাতে রাশিদার যুগ শেষ হয়ে গেছে।
কল্কির আরো নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে: যুদ্ধে তাকে সহযোগিতা করার জন্য আসমান থেকে ফেরেশতা (দূত) অবতরণ করবে। [৭১] এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ইসলামী জিহাদের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি, তার যুদ্ধসমূহে ফেরেশতাগণ আসমান থেকে অবতরণ করেছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿إِذۡ تَسۡتَغِيثُونَ رَبَّكُمۡ فَٱسۡتَجَابَ لَكُمۡ أَنِّي مُمِدُّكُم بِأَلۡفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُرۡدِفِينَ٩﴾ [الأنفال: 9] “স্মরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের রবের নিকটে উদ্ধার প্রার্থনা করছিলে, অতপর তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন যে, অবশ্যই আমি তোমাদেরকে সাহায্য করব এক হাজার ফিরিশতা দিয়ে, যারা একের পর এক আসবে।” সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৯।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, কল্কি ‘রাম’ নামক বড় দেবদূত (ফেরেশতা) হতে শিক্ষা নেওয়ার উদ্দেশ্যে পর্বতে গমন করবেন। এরপরে তিনি উত্তর দিকে যাবেন, তারপরে আল্লাহ (মহাপ্রভু) তাকে আসমানে (স্বর্গে) উঠিয়ে নেওয়ার আগে তিনি তার গ্রামে ফিরে আসবেন। [৭২] হিন্দুদের কাছে ‘রাম’ হচ্ছে: বড় দেবদূত যে অস্বীকারকারীদের উপরে শাস্তি নিয়ে আসে। মুসলিমদের কাছে তিনি জিবরীল।
কার্যত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেরা পর্বতে গিয়েছিলেন এবং জিবরাইল (আঃ) তার কাছে অবতরণ করেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরতকারী হিসেবে উত্তর দিকে চলে যান। তারপর মৃত্যুর অল্প কয়েক বছর আগে মক্কাতে বিজয়ী হয়ে ফিরে আসেন।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, কল্কি হবেন শেষ প্রেরিত পুরুষ। [৭৩] এটা সর্বজনবিদিত যে, নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তিনিই নবী ও রাসূলদের মধ্যে সর্বশেষ।
﴿مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَآ أَحَدٖ مِّن رِّجَالِكُمۡ وَلَٰكِن رَّسُولَ ٱللَّهِ وَخَاتَمَ ٱلنَّبِيِّـۧنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٗا ٤٠﴾ [الأحزاب: 40] “মুহাম্মাদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নয়; তবে আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।” সূরা আর-আহযাব, আয়াত: ৪০।
উক্ত আগত নবীর বর্ণনা হিন্দুদের গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে: “অধিক প্রশংসাকারী/প্রশংসিত… নরশংস।“
নরশংস অর্থ হচ্ছে: অধিক প্রশংসাকারী/প্রশংসিত।
তথা: আরবীতে- মুহাম্মাদ অথবা আহমাদ।
এবং উভয় নামই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের, তিনি হলেন: মুহাম্মাদ এবং তিনিই আহমাদ।
নরশংসের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে যে: “তার রথ (বাহন) হবে উট, এবং তার বারোজন স্ত্রী থাকবে এবং সে তার রথ দিয়ে আকাশ স্পর্শ করবে এবং তারপর অবতরণ করবে।”[৭৪] এই গুণাবলী নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য কারো উপরে প্রযোজ্য হয় না।
তার বাহন (রথ) হবে উট। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে একটি সুপরিচিত বিষয়। এটি আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে, তা হল: তিনি শেষ নবী হবেন এটি হিন্দু গ্রন্থসমূহের ভাষ্য ছাড়াও এটি আরো নির্দেশ করে যে, তিনি গাড়ি এবং বিমান আবিষ্কারের আগে আসবেন। [৭৫] এতে আরো ইঙ্গিত রয়েছে যে, এই আগত নবী হিন্দু-ব্রাহ্মনদের বাইরে থেকে আসবেন; কেননা তারা উটকে নিষিদ্ধ মনে করে।
আর তার বারোজন স্ত্রী হবে, এটি নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন-চরিত থেকে জানা যায়।
তিনি তার রথ দিয়ে আকাশ স্পর্শ করবেন এবং তারপর অবতরণ করবেন। এটি ইসরা ও মিরাজে যাওয়ার ঘটনা, যা প্রত্যেক মুসলমান বিশ্বাস করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বারা এটি সংঘটিত হয়েছিল। যখন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসমানে উত্থিত হয়েছিলেন।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ একই অধ্যায়ে, নরশংসের দেশত্যাগের (হিজরতের) কথা বলছে এবং তার প্রশংসা করে বলছে: “হে মানুষ! তোমরা নরশংসের সম্মান কর, আমি সেই নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠাকারী দেশত্যাগীকে রক্ষা করব।”[৭৬] সেই দেশত্যাগী: নবীর জীবনীর সবচেয়ে বড় ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি ছিল নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত, মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা ও একত্ববাদ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য।
এবং পরবর্তী মন্ত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিহাদ সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে, যেটি বলছে: “পবিত্রতার ঘোষণাকারীদের সাথে উক্ত পবিত্রতা ঘোষণাকারী যুদ্ধের জন্য বের হবে, আর মানুষকে নিরাপত্তা দেবে।”[৭৭] তিনি একজন মুজাহিদ (সংগ্রামী) নবী যিনি আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা ছড়িয়ে দেন।
ইসলাম, ইসলামের নবী, তার জীবনী, তার দাওয়াত এবং মক্কা আল-মুকাররামা সম্পর্কে কয়েক ডজন সুসংবাদ রয়েছে তাদের গ্রন্থগুলোতে।
কিছু হিন্দু এই গ্রন্থগুলোর কিছু বিষয়ের সাথে একমত হতে পারে এবং তারা অস্বীকারও করতে পারে যে, এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত এসেছে। এগুলো এমন সব বিষয়, যা সত্যকে অনুসন্ধানকারী কোন হিন্দুর জন্য এতে প্রবৃত্ত হওয়া সমীচীন নয়। কারণ এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি সমর্থনকারী ইঙ্গিত ছাড়া আর কিছু নয়। আর এ কারণেই আমি ভবিষ্যদ্বাণী বা সুসংবাদ বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রচুর ও বিভিন্ন বক্তব্য থাকা সত্তেও তা দীর্ঘায়িত করিনি; কারণ ইসলামের বিশুদ্ধ হওয়ার সবচেয়ে বড় দলীল হচ্ছে: স্বয়ং ইসলামের সুমহান বাণী, একত্ববাদের দাওয়াত, স্বভাবজাত প্রকৃতির আহবান এবং মানুষের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য ও পরিণাম জানার মাধ্যমে মানবিক প্রয়োজনে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর বুকে থাকা অন্যান্য প্রতিটি ধর্মের অপূর্ণাঙ্গতা।
সুতরাং পৃথিবীতে [অন্যান্য ধর্মে] বিকৃত পৌত্তলিকতা, শিরকী মতবাদ এবং নাস্তিকতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এবং ইসলাম ছাড়া বিশুদ্ধ একত্ববাদ এবং আল্লাহকে পবিত্র ঘোষণাকারী অন্য কিছুই নেই।
﴿قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ١ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ٢ لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ ٣ وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ٤﴾ [الإخلاص: 1-4] “বলুন, ‘তিনি আল্লাহ্, এক-অদ্বিতীয়। (১) আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। (২) তিনি কাউকেও জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। (৩) ‘এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।’ (৪)” সূরা আল-ইখলাস।

    How can we help?