সুষ্ঠ জ্ঞান, মানব স্বভাব ও মৌলিক শিক্ষার মানদণ্ডে হিন্দুধর্ম

⌘K
  1. Home
  2. Docs
  3. সুষ্ঠ জ্ঞান, মানব স্বভাব ...
  4. ১৩। কিন্তু হিন্দুধর্মে থাকা সম্পূর্ণ চুপ থাকা এবং ধ্যানের উপবেশন এ সবকি ভাল জিনিস?

১৩। কিন্তু হিন্দুধর্মে থাকা সম্পূর্ণ চুপ থাকা এবং ধ্যানের উপবেশন এ সবকি ভাল জিনিস?

হিন্দুধর্মে বিদ্যমান ধ্যান যেমন যোগাসনে যা ঘটে, যা পরবর্তী যুগে ‘প্রাণ’ (Prana) সাধনার দর্শনের মধ্য দিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল: এটি আল্লাহর সৃষ্টিসমূহ ও তাঁর প্রজ্ঞা বিষয়ক কোন চিন্তা নয়, আবার তাঁর বিস্ময়কর সৃষ্টি ও নেয়ামতের বিষয়েও ধ্যান বা চিন্তা করা নয়।
বরং তাদের জন্য ধ্যান হল এক প্রকার সম্পূর্ণ নীরবতা (শান্ত হওয়া) এবং মনকে যে কোন বিক্ষিপ্ত বা নিরর্থক চিন্তা থেকে শুন্য করা।
এটি মৃত্যুর ন্যায় একটি সম্পূর্ণ নিস্তব্ধতা, যেখানে মনকে চিন্তা করা থেকে বিরত রাখা হয় (Silence your Mind During Yoga)।
এই অদ্ভুত স্থির ধ্যানের উপবেশনগুলি, যা বেদ পরবর্তী যুগে আবির্ভূত হয়ে তাদের চিন্তাভাবনার উপরে প্রভাব ফেলেছিল, হ্যালুসিনেশন এবং ভ্রান্ত ধারণা তৈরী করতে শুরু করেছিল এবং শয়তানরা তাদের জ্ঞানজগতে খেল তামাশা শুরু করেছিল।
আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করে যে, সে (ঐশ্বরিক) জ্ঞান অর্জন করে ফেলেছে। অথচ তার সাথে যা ঘটেছে, তা হচ্ছে না খাওয়া এবং সম্পূর্ণ নীরবতার পাশাপাশি মস্তিষ্কের আয়নসমূহের ভারসাম্যহীনতার ফলে ঘটিত হ্যালুসিনেশন ছাড়া আর কিছুই নয়। যেমনটি আমি আগে ব্যাখ্যা করেছি। [৫৪] সুতরাং দীর্ঘ স্থির ধ্যান এবং চরম ক্ষুধা এই ধরনের হ্যালুসিনেশনের দিকে পরিচালিত করে, বিশ্বের স্থির ধ্যান (static meditation) সংক্রান্ত স্কুলসমূহের অন্যতম বিখ্যাত প্রতিষ্ঠাতা মিকাও উসুই (Mikao Usui) এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
এমনকি তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তিনি দীর্ঘ কয়েক ঘন্টার ক্ষুধা ও বঞ্চনার পরে চেতনা হারাতে শুরু করেছিলেন এবং হ্যালুসিনেট করতে শুরু করেছিলেন এবং এই মুহুর্তে তার চিন্তাভাবনা উদিত হতে শুরু করেছিল [৫৫]।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডোনোভান রক্লিফ (Donovan Rawcliffe) একটি পৃথক গবেষণায় নিশ্চিত করেছেন যে, এ জাতীয় অনুশীলনের ফলে উদ্ভূত চিন্তাভাবনাগুলি ও হ্যালুসিনেশনের কারণে সৃষ্ট অসুস্থ বিভ্রান্তির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। [৫৬] উপরোক্ত বিষয় ছাড়াও, বেশিরভাগ যোগব্যায়াম উপবেশনগুলি স্বাস্থ্যের জন্য ত্রুটিপূর্ণ এবং তাতে অভ্যস্ত হওয়া বিভ্রান্তি, বিভ্রম এবং স্থান ও সময়ের অনুভূতি হারানোর দিকে ধাবিত করে থাকে। আর এটি স্মৃতিশক্তিকে দুর্বল করে এবং আলঝেইমারকে ত্বরান্বিত করে। [৫৭] হিন্দুধর্ম এই অনুশীলনগুলির মাধ্যমে বেদ এবং নবীদের শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে।
ইসলাম আল্লাহর সৃষ্টিজগত নিয়ে চিন্তা, ধ্যান ও গবেষণা করার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এবং এটা হচ্ছে এমন এক চিন্তা, ধ্যান ও গবেষণা যা আমল, আনুগত্য, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং জীবনে অধ্যাবসায়ের দিকে ধাবিত করে, এটি নিরবতা ও চিন্তাকে বন্ধ রাখা নয় যার পরিণতি স্থিরতা।
প্রকৃত চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে, যা আনুগত্য ও আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশের দিকে ধাবিত করে।
﴿ٱلَّذِينَ يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ قِيَٰمٗا وَقُعُودٗا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمۡ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هَٰذَا بَٰطِلٗا سُبۡحَٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ١٩١﴾ [آل عمران: 191] “যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে, আর বলে, ‘হে আমাদের রব! আপনি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেননি, আপনি অত্যন্ত পবিত্র, অতএব আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি হতে রক্ষা করুন।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯১।
এটি হচ্ছে সেই ধ্যান বা চিন্তা-ভাবনা, যা ইসলাম নিয়ে এসেছে এবং এটি মানুষের সহজাত প্রকৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং একজন ব্যক্তিকে তার চারপাশে পরিবেষ্টিত আল্লাহর নিয়ামাতসমূহের জন্য কৃতজ্ঞ হতে এবং এই নিয়ামাতগুলোর ব্যাপারে গবেষণা করতে সহায়তা করে।
বর্তমান হিন্দুধর্মে সম্পূর্ণ স্থিরতার জন্য পালনীয় উপবেশনগুলো হল শয়তানের বিশ্রামের স্থান। যেখানে শয়তানরা এ সমস্ত লোকদেরকে এ ধরণের ধ্যানে লিপ্ত থাকা অবস্থায় কিছু সহয়তা, অন্তর্দৃষ্টি ও কিছু সংবাদ সম্পর্কে অবহিত করে থাকে। তখন তাদের অন্তরসমূহে বারবার জন্ম নেওয়া, আত্মার স্থানান্তর হওয়া, অস্তিত্বের একাত্মতা, প্রভু কর্তৃক মূর্তির মধ্যে শারীরিকভাবে প্রকাশ পাওয়া ইত্যাদির ধারণা জন্ম নেয়। তারপরে এ সমস্ত সন্ন্যাসীরা তাদের অনুসারীদের মধ্যে এসব ধ্যান-ধারণা ও শিক্ষার অবতারণা ঘটায়। ফলে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করে ফেলে।

    How can we help?