সুষ্ঠ জ্ঞান, মানব স্বভাব ও মৌলিক শিক্ষার মানদণ্ডে হিন্দুধর্ম

⌘K
  1. Home
  2. Docs
  3. সুষ্ঠ জ্ঞান, মানব স্বভাব ...
  4. ২৩। আল্লাহ তা‘আলার প্রতি আত্ম-সমর্পনের স্বরূপ কী? অথবা অন্য কথায়: কীভাবে তুমি বুঝতে পারবে যে, তুমি আল্লাহর জন্য একজন মুসলিম-অনুগত ব্যক্তি এবং তাঁর প্রতি পূর্ণাঙ্গ একজন আত্মসমর্পণকারী?

২৩। আল্লাহ তা‘আলার প্রতি আত্ম-সমর্পনের স্বরূপ কী? অথবা অন্য কথায়: কীভাবে তুমি বুঝতে পারবে যে, তুমি আল্লাহর জন্য একজন মুসলিম-অনুগত ব্যক্তি এবং তাঁর প্রতি পূর্ণাঙ্গ একজন আত্মসমর্পণকারী?

উত্তর: আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ চার প্রকার:
প্রথম: তোমার জীবনের ছোট-বড় প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহর গোলামী বা দাসত্ব করা, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣﴾ [الأنعام: 162-163] “বলুন, ‘আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্বজগতের রব আল্লাহরই জন্য।” (১৬২) ‘তাঁর কোন শরীক নেই। আর আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং আমি মুসলিমদের মধ্যে প্রথম।’ (১৬৩)” সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৬২-১৬৩।
“আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহরই জন্য।” এর অর্থ: আমি প্রতিটি কাজই আল্লাহর জন্য করে থাকি। এটাই হল প্রতিটি কাজে আল্লাহর দাসত্ব করা এবং এটিই হচ্ছে আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করার আলামত ও স্বরূপ।
দ্বিতীয় নিদর্শন- যতক্ষণ না তুমি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করছ: তা হল- আল্লাহ যা আদেশ করেছেন তা অনুসরণ করা এবং তিনি যা নিষেধ করেছেন তা পরিহার করা। আমাদের সুমহান রব বলেছেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَوَلَّوۡاْ عَنۡهُ وَأَنتُمۡ تَسۡمَعُونَ٢٠﴾ [الأنفال: 20] “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমরা যখন তাঁর কথা শোন তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিও না।” সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২০। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱدۡخُلُواْ فِي ٱلسِّلۡمِ كَآفَّةٗ وَلَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِۚ إِنَّهُۥ لَكُمۡ عَدُوّٞ مُّبِينٞ٢٠٨﴾ [البقرة: 208] “হে ঈমানদ্বারগণ! তোমরা ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর।” সূরা আল-বাকারা: ২০৮।
فِي السِّلْمِ শব্দের অর্থ: ইসলামের মধ্যে।
যার অর্থ: “তোমরা সকলে ইসলামে প্রবেশ কর”: অর্থাৎ তোমরা আল্লাহ যা আদেশ করেছেন তা মেনে চল এবং তিনি যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক।
আল্লাহ আমাকে কুরআনে কিছু আদেশ করেছেন, অথবা আমাকে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুযায়ী কিছু করার আদেশ দিয়েছেন, আমি তা করব… তিনি আমাকে কিছু কাজ করতে নিষেধ করেছেন যা থেকে আমি বিরত থাকব, এটাই হচ্ছে আল্লাহর কাছে পূর্ণাঙ্গ আত্মসমর্পণ এবং আল্লাহর গোলামী।
আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের তৃতীয় নিদর্শন হল: তাঁর আইন-কানুনকে মেনে নেয়া। সুতরাং তাঁর শরী‘আতের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবো এবং তা গ্রহণ করব।
আমরা কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহতে থাকা প্রতিটি ইলাহী বিধানকে গ্রহণ করব; কারণ আল্লাহই জানেন কোন বস্তু তাঁর বান্দাদের চরিত্রকে সংশোধন করে থাকে।
﴿أَلَا يَعۡلَمُ مَنۡ خَلَقَ وَهُوَ ٱللَّطِيفُ ٱلۡخَبِيرُ١٤﴾ [الملك: 14] “যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।” সূরাতুল মুলক, আয়াত: ১৪। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿أَفَحُكۡمَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ ٥٠﴾ [المائدة: 50] “হুকুমের দিক থেকে আল্লাহর চেয়ে আর কে উত্তম হতে পারে?” সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত: ৫০।
সুতরাং দুনিয়া এবং আখিরাতে মানুষের জন্য কোনটি সবচেয়ে ভালো, তা আল্লাহই জানেন।
আর আল্লাহর আইনের প্রয়োগ মানুষকে পরিশুদ্ধ করে এবং তাদের নিরাপদে বাস করতে শেখায়।
মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ وَلَوۡ أَنَّهُمۡ إِذ ظَّلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ جَآءُوكَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ ٱللَّهَ وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا٦٤﴾ [النساء: 64] “তোমাদের কাছে কোনো রাসূল প্রেরণ করিনি; কিন্তু আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের অনুকরণ করার জন্যই।” সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৪।
আল্লাহ রাসূলদের এ জন্য পাঠাননি যে, আমরা তাদের শরী‘আত ছেড়ে দেব এবং তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের আইনের কাছে সমাধান চাইব।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [النساء: 65] “কিন্তু না, আপনার রবের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর আপনার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের মনে কোনো দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়।” সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫।
আল্লাহর বিধানের কাছে সম্পূর্ণরূপে বশ্যতা স্বীকার করা ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। কেননা আল্লাহর বিধানের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করা ইসলামের আনুগত্যের অন্যতম লক্ষণ!
আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের চতুর্থ নিদর্শন হল: আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাকদীরের কাছে আত্মসমর্পণ। কারণ সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর হিকমাতের দ্বারা নির্ধারণ করেছেন। এবং তাই একজন মুসলিম আল্লাহর প্রতিটি তাকদীরের কাছে বশ্যতা স্বীকার করে… হোক তা ভালো অথবা মন্দ।
যদি কোন মুসলিমের উপর সমৃদ্ধি বা সুখকর সময় আসে, তবে সে শুকরিয়া আদায় করে আর যদি তার উপরে বিপদ আসে, তবে সে সবর করে।
সুতরাং প্রতিটি বিপর্যয়ই কোন না কোন হিকমাত এবং পরীক্ষার জন্য।
সবকিছু সর্বশক্তিমান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফয়সালা অনুযায়ীই হয়: সুস্থতা, অসুস্থতা, সম্পদ, দারিদ্র… সবকিছুই তাঁর বিচার ও হিকমাত অনুসারে, এবং মুসলমানকে অবশ্যই পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকতে হবে কারণ এটি আল্লাহই নির্ধারণ করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩﴾ [القمر: 49] “নিশ্চয় আমরা প্রত্যেকটি বস্তু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে।” সূরা আল-ক্বমার, আয়াত: ৪৯। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿قُل لَّن يُصِيبَنَآ إِلَّا مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَنَا هُوَ مَوۡلَىٰنَاۚ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ٥١﴾ [التوبة: 51] “আপনি বলুন! আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন, তা ছাড়া অন্য কিছুই আমাদের উপরে আসবে না।” সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৫১।
কখনোই আমাদের উপরে তা আপতিত হবে না, যা আল্লাহ আমাদের জন্য নির্ধারণ করে রাখেননি।
মহা সম্মানিত আল্লাহর বাণী:
﴿وَمَا كَانَ لِنَفۡسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذۡنِ ٱللَّهِ كِتَٰبٗا مُّؤَجَّلٗاۗ وَمَن يُرِدۡ ثَوَابَ ٱلدُّنۡيَا نُؤۡتِهِۦ مِنۡهَا وَمَن يُرِدۡ ثَوَابَ ٱلۡأٓخِرَةِ نُؤۡتِهِۦ مِنۡهَاۚ وَسَنَجۡزِي ٱلشَّٰكِرِينَ١٤٥﴾ [آل عمران: 145] “আর কোন প্রাণী আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মারাও যায় না।” সূরা আলে ইমরান: ১৪৫।
মৃত্যুর সময়কে আল্লাহ তা‘আলাই নির্ধারণ করে রেখেছেন।
মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটে, প্রত্যেকটি পরমাণু যা পৃথিবীতে ভ্রমণ করে এবং প্রতিটি ঘটনা যা ঘটে, তা আল্লাহর জ্ঞান, তাঁর চাওয়া, তাঁর ফায়সালা, প্রজ্ঞা এবং তাঁর কুদরতে ঘটে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ٱلَّذِي لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَلَمۡ يَتَّخِذۡ وَلَدٗا وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ شَرِيكٞ فِي ٱلۡمُلۡكِ وَخَلَقَ كُلَّ شَيۡءٖ فَقَدَّرَهُۥ تَقۡدِيرٗا ٢﴾ [الفرقان: 2] ”তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তা নিপুণভাবে নিরূপণ করেছেন।” সূরা ফুরকান: ০২।
তিনিই সুমহান সত্তা, যিনি সিব কিছু সৃষ্টি করেছেন, প্রতিটি জিনিস নির্ধারণ করেছেন, তিনি যা চেয়েছেন তা হয়েছে আর তিনি যা চাননি, তা হয়নি।
সুতরাং একজন মুসলিম হিসাবে, আমাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সমস্ত ফয়সালার কাছে নতি স্বীকার করতে হবে।
আর এভাবেই মানুষ আল্লাহর জন্য নিবেদিত প্রকৃত মুসলিম হতে পারে।

    How can we help?