সুষ্ঠ জ্ঞান, মানব স্বভাব ও মৌলিক শিক্ষার মানদণ্ডে হিন্দুধর্ম

⌘K
  1. Home
  2. Docs
  3. সুষ্ঠ জ্ঞান, মানব স্বভাব ...
  4. ৯। হিন্দুধর্ম অনুসারে মানুষের শরীর কিসের তৈরী?

৯। হিন্দুধর্ম অনুসারে মানুষের শরীর কিসের তৈরী?

হিন্দুধর্ম অনুযায়ী, মানবদেহ পাঁচটি উপাদানের শক্তি দ্বারা গঠিত: জল (পানি), মাটি, বায়ু, আগুন এবং ইথার।
সমগ্র মহাবিশ্ব এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তা এই পাঁচটি উপাদান থেকে গঠিত।
পাঁচটি উপাদানের প্রত্যেকটির (বিপরীতে) অনুরূপ গ্রহ রয়েছে। মঙ্গল হচ্ছে: অগ্নিময়, এবং শনি হচ্ছে: পার্থিব, এবং মানুষের প্রতিটি অঙ্গের মুকাবালায় পাঁচটি উপাদানের একটি রয়েছে। যেমন: প্লীহা পার্থিব এবং হৃদয় অগ্নিময়।
প্রকৃতপক্ষে, অস্তিত্বে যা কিছু আছে, সব কিছুই পাঁচটি উপাদান অনুসারে দুইভাগ করা হয়েছে, এমনকি সময় বা কালও। তাদের কাছে রোগ হচ্ছে এ পাঁচটি উপাদানের ভারসাম্যহীনতার নাম।
পাঁচ উপাদানের ধারণাটি ‘প্রাণ’ (সাধনা)-এর দ্বারা জনপ্রিয় হয়েছিল, যা ক্ষুধার্ত অবস্থার সাধনা এবং ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে সম্পূর্ণ স্থিরতার সাথে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকত।
দুর্ভাগ্যবশত, পাঁচটি উপাদানের ধারণা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং শক্তি থেরাপির (Energy Therapy) এর অসংখ্য বিজ্ঞান তার ওপর নির্ভর।
এনার্জি থেরাপি, ম্যাক্রোবায়োটিক, ফেং শুই, কালার থেরাপি এবং এই জাতীয় অন্যান্য (চিকিৎসা) অনুশীলনের বিজ্ঞান এই উপাদানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
তাদের কাছে এ পাঁচটি উপাদানকে নিয়ন্ত্রণ করলে রিযিক লাভ এবং খারাবী দূর করা যায়।
বর্তমানে হিন্দু মন্দিরগুলোতে এ পাঁচটি উপাদানকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ম্যাসেজ বা মালিশ করা হয়; কারণ এটি অনেক রোগের নিরাময়।
আর পাঁচটি উপাদানের এ ধারণাটির কথা কোন ভাবেই বিজ্ঞানসম্মত নয়।
পদার্থবিদ্যা বা চিকিৎসাবিদ্যার সাথে এর কোন ধরণের সম্পর্ক নেই।
বরং বিজ্ঞান এ ব্যাপারটি এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট চর্চাকে এক ধরনের কুসংস্কার, প্রলাপ ও প্রতারণা বলে আখ্যায়িত করে।
পাঁচটি উপাদানের এ ধারণাকে ইতোমধ্যেই ছদ্মবিজ্ঞান (সিউডোসায়েন্স) হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।[৩৪] এর সাথে জড়িত চর্চা বা অনুশীলনগুলো কল্পনা এবং বিভ্রম হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। [৩৫] পাঁচটি উপাদানের ধারণাটি হয়ত একজন সন্ন্যাসীর মনে একইভাবে উদ্ভুত হয়েছিল যেভাবে বারবার জন্ম গ্রহণ এবং পুনর্জন্মের ধারণাটির উদ্ভব ঘটেছিল; কারণ এর পিছনে কোন বিবেকপ্রসূত, বৈজ্ঞানিক বা যৌক্তিক প্রমাণ নেই।
সুতরাং এটি একটি কাল্পনিক ধারণা মাত্র।
সমস্যা হলো, এই ধারণার অনুশীলনগুলো কেবল এমন পৌত্তলিক যাদুবিদ্যা, গ্রহ, আকার-আকৃতি, প্রতীক, রঙ এবং তাবিজের সাথে সংশ্লিষ্ট, যার ব্যাপারে আল্লাহ কোন ধরণের প্রমাণ নাযিল করেননি। [৩৬] পাঁচটি উপাদানের ধারণার সাথে সম্পর্কিত এই অনুশীলনগুলোর বিরুদ্ধে সতর্ক করার ক্ষেত্রে ইসলাম আধুনিক বিজ্ঞান থেকে এগিয়ে রয়েছে; কারণ এই অনুশীলনগুলো সঠিক চিকিৎসা গ্রহণে বিলম্বের দিকে ধাবিত করে, বাস্তব জগতের পাশাপাশি মানুষকে বিভ্রান্তের মধ্যে জীবনযাপনের দিকে নিয়ে যায় এবং মানুষকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য সত্তার সাথে সম্পর্কিত করার দিকে পরিচালিত করে। তাই ইসলাম এইসব অনুশীলন বা চর্চার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সতর্ক করেছে। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আমার বান্দাদের মধ্যে কতিপয় বান্দা সকালে মু’মিন হিসেবে এবং কতিপয় বান্দা কাফির হিসেবে উঠেছে। সুতরাং যারা বলেছে: আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি, তারা আমার প্রতি বিশ্বাসী এবং গ্রহের উপরে অবিশ্বাসী, আর যারা বলেছে: অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি, তারা আমার প্রতি অবিশ্বাসী এবং গ্রহসমূহের প্রতি বিশ্বাসী।” [৩৭] সুতরাং যে ব্যক্তি গ্রহসমূহ এবং মানুষের উপর তাদের প্রভাব এবং এগুলো জীবিকার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে বলে বিশ্বাস করে, সে আল্লাহকে অস্বীকার করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে বিশ্বাস করে, সে অবশ্যই মানুষের ভাগ্যে গ্রহের হস্তক্ষেপে অবিশ্বাস করে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় ঝাড়ফুঁক, তাবীয ও কবজ হচ্ছে শিরক।” [৩৮] অতএব, একজন মুসলিম উক্ত পাঁচটি উপাদানের প্রভাব এবং তাদের সাথে সম্পর্কিত যাদু এবং তাবিজসমূহের কুসংষ্কারকে বিশ্বাস করে না।
বরং ইসলাম বলে, এ সমস্ত যাদু, জ্যামিতিক আকার, শক্তি পেন্ডুলাম এবং পাঁচটি উপাদানের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়গুলো তৈরী বা চর্চা করা এবং এ যাদুগুলো উপকার করতে পারে অথবা ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে- এ বিশ্বাস রাখা হচ্ছে শিরক এবং আল্লাহর সাথে কুফরী করা।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে তার হাতে পিতলের একটি আংটি দেখতে পেলেন এবং তিনি বললেন: “এটি কি?” তিনি বললেন: এটি দুর্বলতার জন্য। তিনি বললেন: “এটি শুধুমাত্র তোমার দুর্বলতা বাড়াবে, তোমার কাছ থেকে তা ছুড়ে ফেলে দাও; কেননা যদি তা তোমার উপর থাকা অবস্থায় তুমি মারা যাও, তবে তোমাকে তার প্রতিই সোপর্দ করা হবে।”[৩৯] অন্য একটি বর্ণনাতে রয়েছে: “যদি তুমি তা থাকা অবস্থায় মারা যাও, তবে তুমি কখনো সফল হতে পারবে না।” [৪০] শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: “যাদু চর্চা কোন উপকার করে অথবা কোন ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, [এ বিশ্বাস রাখা] এটি সম্পূর্ণ বড় শিরক।” [৪১] এটি সেই একই বিশ্বাস, যা ভগবত গীতা (Bhagavad Gītā, भगवद्गीता) বলছে, যেখানে বলা হচ্ছে: “যারা একাধিক প্রভুর পূজা করবে, তারা একাধিক প্রভু পাবে। যারা পূর্বপুরুষদের পূজা করবে, তারা পূর্বপুরুষদেরকে পাবে। যারা শয়তানের পূজা করবে, তারা শয়তানকে পাবে। আর যারা আমার পূজা করবে, তারা আমাকে পাবে।” [৪২] সুতরাং যে ব্যক্তি এসব যাদু দ্বারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সাথে সম্পর্ক গড়ে, সে গাইরুল্লাহর ইবাদাতকারী (পূজাকারী) ।
বেদ অনুযায়ী তার স্থায়ী বাসস্থান হবে আগুন (নরক)। যজুর্বেদ বলে: ”যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত তৈরীকৃত বস্তুসমূহকে পূজা করবে, সে যুগ যুগ ধরে অন্ধকারসমূহে নিমজ্জিত হবে আর আগুনের শাস্তি ভোগ করবে।” [৪৩] আমাদের রব আল্লাহ সুবহানাহ বলেছেন:
﴿… إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُخۡلِفُ ٱلۡمِيعَادَ٣١﴾ [الرعد: 31] “বরং যাবতীয় সকল বিষয় আল্লাহর জন্যই [এখতিয়ারভুক্ত]।” সূরা আর-র‘দ, আয়াত: ৩১।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন তুমি কোন কিছু চাইবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর যখন তুমি সাহায্য চাইবে, তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে।” [৪৪] অতএব, মুসলিম ব্যক্তি উক্ত পাঁচটি উপাদান, গ্রহমণ্ডলী, যাদুমন্ত্র এবং তাবিজের প্রভাবের পৌরাণিক কাহিনীতে বিশ্বাস করে না; বরং সে বিশ্বাস করে যে এগুলো পৌত্তলিকতা, ভ্রষ্টতা, মিথ্যা এবং কুসংস্কার।

    How can we help?