ধর্ষণের শাস্তি
- আবু দাউদ ৪৩২৮ মোতাবেক ধ্বর্ষনের দায়ী ব্যক্তিকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হয়নি নবী (সা) এর যুগে। bangla Hadith bd site অনুযায়ী আবু দাউদ 4379 তিরমিযী ও অন্যান্য কিতাবে একই হাদিস বর্ণিত থাকলেও সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত অই ধর্ষককে রজম করা হয়নি। নবী (সা) একজন ধর্ষককে কেন নিস্তার দিলেন? তাহলে নববী যুগে কি ধ্বর্ষণের কোন বিচার ছিল না? যদিও পরবর্তীতে খলিফা যুগে আমরা ধ্বর্ষণের বিচারাদির প্রমাণ পাই। সহীহুল বুখারী হাদিস নং ৬৯৪৯। প্রশ্ন হইল নবী (সা) ধ্বর্ষককে কেন নিস্তার দিলেন? কারণ অই লোককে রজম করা হইছিল না।
আপনার প্রথমে বর্ণনা করা হাদিসটি সহিহ নয়। [1] হাদিস বিডিতে কিছু কিছু হাদিসকে সহিহ বলা হয়েছে, কিন্তু তা হাসান, আবার কিছু হাদিসকে হাসান বলা হয়েছে অথচ তা যয়িফ। কিছু হাদিসকে শুধু আলবানি রহ. এর তাহকিকের উপর ভিত্তি করে মান বসানো হয়েছে। তাই হাদিস বিডির মান সব সময় সঠিক হয় না। আমি কিছুদিন আগে একটা হাদিস দেখেছিলাম, তিরমিজিতে সেটাকে হাসান বলেছে, কিন্তু একই সনদে একই হাদিসকে মিশকাতে যেয়ে আবার যয়িফ টেগ দিয়ে রেখেছে তারা।
যদি ধরি হাদিসটি হাসান, তাহলেও লোকটাকে ক্ষমা করে দেওয়ায় অন্যায় কিছু আছে বলে মনে হয় না। কারন নারীটি যে লোক তাকে ধর্ষন করেনি সেই লোককে অপরাধী দাবি করেছে, একজন নিরপরাধ লোককে শাস্তি দেওয়ার জন্য সে সম্মতি জানিয়েছে। তার কারনে একজন নিরীহ লোক হয়তো মৃত্যুদন্ডের শিকার হয়ে যেত। প্রশ্ন আসে যদি এটি আসলেই ধর্ষণ হত তাহলে কেন নারীটি নিরপরাধ একটি লোককে ফাঁসিয়ে দিল! নিশ্চই অন্য কোন কাহিনি ছিল যা হাদিসে বিস্তারিত আর আসেনি। এছাড়া আসল অপরাধী চাইলেই চুপ থেকে একজন নিরপরাধ লোকের মৃত্যু হতে দেখে নিজে বেঁচে যেত পারতো, কিন্তু সে তা না করে লোকটাকে বাঁচালো। এই কারনে আমার মনে হয় ঘটনা যদি আসলেই সত্য হয়ে থাকে তাহলে সেই লোককে শাস্তি না দেওয়াটা অন্যায় ছিল। যদি ঘটনা সত্য হয় তাহলে হয়তো রাসূল প্রথম লোককে শাস্তি দেওয়ার চিন্তা করলেও টরে সব কিছু ঘটার পর তিনি এসব চিন্তা করেই পরবর্তি লোককে আর শাস্তি দেন নি, এর কারন সংক্ষেপে আবার উল্লেখ করছি -
- সেই নারী নীরিহ একজনকে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল, তার কারনে একজন নিরপরাধ লোকের মৃত্যু ঘটতে পারতো
- আসল ঘটনা জানা যাওয়ার পর নারীটি অপরাধী হওয়া সত্ত্বেও তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল
- আসল অপরাধী নিজের দোষ স্বীকার করেছিল, ও অন্তর থেকে তাওবা করেছিল
- আসল অপরাধী নিরপরাধ লোককে শাস্তি দিতে নেওয়ায় নিজের দোষ স্বীকার করে সেই নিরপরাধ লোকটিকে শাস্তি হতে বাঁচিয়ে দিয়েছিল [2]
হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব মতে, ধর্ষণের জন্য ধর্ষকের উপর ব্যভিচারের শাস্তি প্রযোজ্য হবে। তবে ইমাম মালেক -এর মতে, ধর্ষণের অপরাধে ধর্ষকের উপর ব্যভিচারের শাস্তির পাশাপাশি ‘মুহারাবা’ বা ‘হিরাবাহ’র অর্থাৎ সুরা মায়িদা আয়াত ৩৩ এ বর্ণিত শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। উপযুক্ত প্রমান পাওয়ার পর তাকে সূরা মায়েদার ৩৩ নাম্বার আয়াত অনুযায়ি শাস্তি দিবে। যদি ধর্ষন নাও করে কিন্তু নারীকে অপরন করলেও লোকটিকে সেই শাস্তিই দিতে হবে। [3]
ইমাম মালেক (রহ), শায়খ সালমান আল-বাজি (রহ), ইমাম শাফেঈ (রহ), আল-লায়ছ (রহ) ও আলী ইবনে আবী তালিব (রা) এর মতে ধর্ষীতাকে জরিমানা হিসেবে মোহরও দিতে হবে। আবু হানিফাহ (রহ) ও আল-সাওরী (রহ) বলেন: হাদ্দের শাস্তি তার উপর কার্যকর করা হবে কিন্তু তিনি জরিমানা দিতে বাধ্য নন। [4]
যদি ধর্ষন অপহরন ও অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে হয়, তা ধর্ষীতাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয় তাহলে ধর্ষক মুহারাবার (জমিনে ফিতনা ফাসাত সৃষ্টি করা, ডাকাতি করা ইত্যাদি) শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। [5]
পণ্ডিতগণ সর্বসম্মতভাবে একমত যে ধর্ষককে হাদ শাস্তির শিকার হতে হবে যদি তার বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ থাকে যে সে হদ শাস্তির যোগ্য, অথবা যদি সে তা স্বীকার করে। কোন ধর্ষীতাকে শাস্তি দেওয়া হবে না যদি প্রমান হয় যে সে প্রকৃত অর্থে জিনাকারী নয় বরং ধর্ষীতা। [6]
বিস্তারিত আরো জানতে দেখুন [7]
তথ্যসূত্রঃ-
[1] https://islamicauthors.com/article/315
[2] বিস্তারিত প্রতিটা হাদিস দেখলে জানতে পারবেন - আবু দাউদ ৪৩৭৯; মিশকাত ৩৫৭২; তিরমিযী ১৪৫৪,আহমাদ ২৭২৪০, সহীহাহ্ ৯০০, সহীহ আত্ তারগীব ২০২৩
[3] শরহে মুসলিম, ১২/৩
[4] আল-মুওয়াত্তা', ২/৭৩৪; আল-মুন্তাহা শরহ আল-মুওয়াত্তা', ৫/২৬৮, ২৬৯
[5] আল-সারখাসি, আল-মাবসুত ৯/২০১, ইবনে কুদামা, আল-মুগনি ৯/১২৪; আল-হুকম ফি'ল-সাতওয়াল-ইখতিতাফ ওয়া মুশকিরাত, পৃ. ১০৪-১৯২; আততাশরীয়ুল জিনাইয়্যুল ইসলামী ২/৩৭৯-৩৮৫
[6] আল-ইস্তিদকার, ৭/১৪৬; দারসে তিরমিযি – মুফতি তাকি উসমানী, ৪/৩৮৬
[7] https://at-tahreek.com/article_details/6998
https://www.islamicqa.org/3619/
https://islamqa.info/en/answers/72338/punishment-for-rape-in-islam
ধর্ষণ: একটি জঘন্য অপরাধ এবং পাপ।
(১) হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব একজন মহিলাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন যে তার আত্মরক্ষায় ধর্ষককে হত্যা করেছিল।
(২) সুলতান মাহমুদ গজনভী একজন মহিলাকে ধর্ষণ কারণে তার নিজের ভাগ্নের সাথে যা করেছিলেন।
(৩) আলেমদের মতামত - যদি একজন নারী তার ধর্ষককে আঘাত করে হত্যা করে,
(৪) যে নারীকে যিনা করতে বাধ্য করা হয়েছিল তার জন্য কোনো শাস্তি নেই।
----------------
✨(১) হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব একজন মহিলাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন যে তার আত্মরক্ষায় ধর্ষককে হত্যা করেছিল।
আব্দুর রাজ্জাক বর্ণনা করেন:
উবায়দ ইবন উমাইর বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি হুদায়ল গোত্রের কিছু লোককে আমন্ত্রণ জানায়। তারা একটি দাসী মহিলাকে কিছু জ্বালানি কাঠ আনতে পাঠিয়েছিল এবং নিমন্ত্রক তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল, তাই সে (জঙ্গলে) তার অনুসরণ করেছিল এবং তার সাথে তার পথ পেতে চেয়েছিল (অর্থাৎ তাকে অবৈধভাবে পেতে চেয়েছিল) কিন্তু সে (দাসীটি) অস্বীকার করেছিল। সে (দাসীটি) তার সাথে কিছুক্ষণ লড়াই করে, যতক্ষণ না সে তার কাছ থেকে পালিয়ে যায় এবং তার দিকে একটি ঢিল ছুড়ে তাকে হত্যা করে। তার মালিক উমারের কাছে গিয়ে তাকে পরিস্থিতির কথা জানালেন। 'উমার তদন্তকারীদের পাঠিয়েছিলেন যারা তাদের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছিল এবং তারপরে 'উমার বললেন, "আল্লাহর দ্বারা নিহত ব্যক্তির জন্য কোন দিয়াহ (বা কিসাস - রক্তপণ বা ইত্যাদির ক্ষেত্রে কাফফারা) প্রদান করা হবে না।"
তিনি আত্মরক্ষাকে একটি বৈধ কারণ হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন যে, দাস মেয়েটি সেই হানাদারের রক্তপাত করেছিল যে তাকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল তাই এর কোনো কিসাস বা দিয়াহ হবে না এবং কোনো কাফফারা দেওয়া হবে না [কারণ সে আত্মরক্ষার জন্য তাকে হত্যা করেছিল]
ইমাম যুহরি আরও মন্তব্য করেছেন যে, পরবর্তীতে উমারের রায়ের অনুসরণে সমস্ত মুসলিম বিচারক অনুরূপ দৃষ্টান্তে একই রকম রায় দিয়েছিলেন।
[সূত্র: মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, ৯/৪৩৪ হা: ১৭৯১৯; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ ৫/৪৩৯ হা: ২৭৭৯৩ ইত্যাদি। আলেমগণ আত্মরক্ষার অধীনে এর উপর ভিত্তি করে রায় দিয়েছেন যেমনটা ইমাম মাওয়ার্দী রহ. রচিত শাফেয়ী মাযহাবের হাউইউল কাবীরে ১৩/৪৫১ বর্ণিত হয়েছে - from the blog why the shariah]
✨(২) সুলতান মাহমুদ গজনভী একজন মহিলাকে ধর্ষণ কারণে তার নিজের ভাগ্নের সাথে যা করেছিলেন।
ইবনে কাসীর বলেন:
তিনি অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। একজন লোক তার কাছে এসে অভিযোগ করে যে, আপনার ভাগ্নে আমার বাড়িতে আসে এবং আমাকে বের করে দিয়ে আমার স্ত্রীর কাছে থাকে.. এবং যখনই আমি কর্তৃপক্ষকে কিছু করতে বলি তারা সুলতানের (অর্থাৎ, মাহমুদ) ভয়ে কিছু করতে পারে না। মাহমুদ বললো, সে আবার এলে আমার কাছে এসো। দিন হোক রাত হোক কেউ বাধা দিলে কারো কথা শুনো না।
সুলতান তার দারোয়ানদের কাছে গিয়ে বললেন, সে যদি আসে তাহলে তাকে আমার কাছে আসতে দাও... এক-দুই রাত পর যুবকটি (অর্থাৎ সুলতানের ভাগ্নে) তার বাড়িতে এসে তাকে বের করে দিয়ে তার স্ত্রীর কাছে থেকে গেল। সে (লোকটি) কাঁদতে কাঁদতে সুলতানের কাছে এলে সুলতান ঘুমাচ্ছিলেন বলে দারোয়ানরা তাকে থামিয়ে দিল। সে বললো, তোমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আমাকে দিন হোক বা রাত হোক ভেতরে প্রবেশ করতে দিতে। তারা সুলতানকে জিজ্ঞাসা করলো এবং তিনি (সুলতান) তার বাড়িতে পৌঁছানো পর্যন্ত একা লোকটির সাথে এসেছিলেন। তিনি দেখলেন যে, যুবকটি একই বিছানায় লোকটির স্ত্রীর সাথে রয়েছে এবং পাশেই একটি মোমবাতি জ্বালানো রয়েছে।
সুলতান মোমবাতি নেভালেন এবং যুবকটির মাথা কেটে ফেললেন। এবং লোকটিকে কিছু পানি দিতে বললেন।
সুলতান যখন ফিরে আসছিল তখন লোকটি তাকে জিজ্ঞেস করলো, আপনি মোমবাতি নিভিয়ে দিলেন কেন? সুলতান উত্তর দিলো: "সে আমার ভাতিজা এবং আমি তাকে হত্যা করার সময় দেখতে পছন্দ করি না।" লোকটি জিজ্ঞেস করলো, আপনি পানি চেয়েছিলেন কেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমি শপথ নিয়েছিলাম যে, যতক্ষণ না আপনাকে সাহায্য করব ততক্ষণ আমি কিছু পান করবো না বা খাবো না। আপনি যেদিন আমাকে অবহিত করেছেন (অর্থাৎ, ২ রাত্রি) সেই দিন থেকে আমি তৃষ্ণার্ত, যতক্ষণ না আপনি কী ঘটেছে তা আমাকে দেখান। লোকটি সুলতানের জন্য দোয়া করলো এবং সুলতান চলে গেলেন।[আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ১২; ৪২১ হিঃ তে যা ঘটেছিল]
✨(৩) আলেমদের মতামত - যদি একজন নারী তার ধর্ষককে আঘাত করে হত্যা করে,
ক). আল-বাগাভী (৪৩৩-৫১৬হি.) বলেছেন:
যদি কোন পুরুষ জোরপূর্বক কোন মহিলার সাথে অবৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে এবং সে (মহিলাটি) তাকে তার থেকে বাধা দেয় এবং তাকে হত্যা করে তাহলে তার উপর কিছুই (অর্থাৎ কোন পাপ বা কিসাস) নেই। উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি একজন মহিলাকে [ধর্ষণ করতে] চেয়েছিল, তাই সে (মহিলাটি) তাকে একটি ঢিল ছুড়ে মেরে ফেলে। এতে ‘উমার বললেন, ‘আল্লাহ তাকে হত্যা করেছেন, আল্লাহর কসম, তার জন্য কোন দিয়াহ নেই’ অর্থাৎ, তাকে তার জন্য ‘রক্তপন’ দিতে হবে না... এটি ইমাম শাফেয়ী থেকেও বর্ণিত হয়েছে।
[শারহুস সুন্নাহ: ১০/২৫২]
খ). মোল্লা আলী আল ক্বারী হানাফীও একইভাবে উল্লেখ করেছেন। [মিরকাত আল মাফাতিহ: ৩৫১১]
গ). ইবনে কুদামাহ আল-হাম্বলী উল্লেখ করেছেন:
একজন মহিলা সম্পর্কে যাকে একজন পুরুষ তাড়া করেছিল এবং সে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তাকে হত্যা করে, আহমাদ বলেন: 'যদি সে জানে যে, সে তাকে [ধর্ষণ] করতে চায় এবং সে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তাকে হত্যা করে, তাহলে এতে তার দোষ নেই।' ইমাম আহমাদ সেই হাদীসটি উল্লেখ করেছেন যা আল-যুহরি আল-কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ থেকে, উবায়দ ইবনে উমায়ের থেকে বর্ণনা করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে যে একজন ব্যক্তির [হুদাইল গোত্রের] দর্শনার্থী ছিল এবং সে একজন মহিলাকে [ধর্ষণ করতে] চেয়েছিল, তাই সে তার দিকে ঢিল ছুড়ে তাকে হত্যা করে। 'উমার বললেন, 'আল্লাহর কসম, তার জন্য কোন দিয়াহ নেই' অর্থাৎ তাকে তার জন্য 'রক্তপণ' দিতে হয়নি। যদি নিজের সম্পদ রক্ষা করা জায়েয হয়, যা কেউ দিতে পারে, তবে একজন মহিলার নিজেকে রক্ষা করা এবং তার সম্মান রক্ষা করা যা দান করা যায় না - একজন পুরুষের তার সম্পদ রক্ষা করার চেয়ে স্পষ্টতই বেশি জায়েজ। যদি এটি স্পষ্ট হয়, তবে সে যদি পারে তবে নিজেকে রক্ষা করতে বাধ্য, কারণ কাউকে তার উপর [তাকে ধর্ষণ] করতে দেওয়া হারাম, এবং নিজেকে রক্ষা না করে সে তাকে তার উপর কর্তৃত্ব করতে দেয়।"
[আল-মুগনি: ৮/৩৩১ ইসলাম কিউএ থেকে নেওয়া।]
✨(৪)যে নারীকে যিনা করতে বাধ্য করা হয়েছিল তার জন্য কোনো শাস্তি নেই।
ক). বায়হাক্বীতে বর্ণিত হয়েছে:
“উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে একজন মহিলাকে আনা হলো, যিনি কিনা অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত ছিলেন এবং একজন রাখালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং মহিলাটি রাখালকে তাকে কিছু পান করাতে বললে সে তাকে কিছু পান করাতে অস্বীকার করেছিল যদি না সে তাকে তার সাথে তার পথ চলতে দেয়। (অর্থাৎ তাকে অবৈধভাবে পেতে চেয়েছিল)। হযরত ‘উমার লোকদের সাথে পরামর্শ করলেন যে, তাকে পাথর মারা হবে কিনা। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘সে এটা করতে বাধ্য হয়েছিল, তুমি তাকে ছেড়ে দাও।’ তাই তিনি তা ই করলেন।
[সুনান আল-বায়হাকী (৮/২৩৬); শায়খ আলবানী ইরওয়াউল গালীল (৭/৩৪১) নং ২৩১৩- এ এই বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন। ইসলাম কিউএ]
খ). ইবনুল কাইয়্যিম মন্তব্য করেছেন:
আমি বলি: এটাই করা উচিত। যদি একজন মহিলার একজন পুরুষের কাছ থেকে খাদ্য ও পানীয়ের নিদারুণ প্রয়োজন হয়, যা সে তাকে দেবে না যতক্ষণ না সে তাকে তার সাথে তার পথ চলতে দেয় (অর্থাৎ তার সাথে অবৈধ কিছু করতে দেয়) এবং সে ভয় পায় যে, সে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি ছাড়া মারা যাবে, তাহলে সে তাকে তার সাথে তার পথ চলতে দেবে। এতে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে না।
[আত-তুরুক আল-হুকমিয়া, ১৮; ইসলাম কিউএ ৪০১৭]
গ). শায়খ আলবানী আরেকটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।
ওয়াইল বিন হুজর (রা.) থেকে বর্ণিত:
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে একজন মহিলাকে জোরপূর্বক কুমারীত্ব হরণ করেছিল। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ছেড়ে দেন।
[শায়েখ আলবানী বলেন, এর সনদ দুর্বল। তবে তিনি এটিকে উমার এবং আলীর বর্ণনাকে সমর্থন করার জন্য উপরে উদ্ধৃত করেছেন। ইরওয়াউল গালীল (৭/৩৪১) নং ২৩১৩]
ঘ). নাফেয়ী থেকেও বর্ণিত আছে:
একজন ব্যক্তি আহলে বায়তের মধ্যে একজন মহিলাকে জড়িয়ে ধরে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করে তার কুমারীত্ব নাশ করে,। তাকে আবু বকরের কাছে পেশ করা হলে তিনি তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন এবং তাকে নির্বাসিত করেছিলেন, তবে তিনি মহিলাটিকে শাস্তি দেননি।
[ইবনে আবী শাইবা, ১১/৬৮/১; শায়েখ আলবানী বলেন, সনদের রাবি সত্যবাদী, তারা বুখারী ও মুসলিমের রাবি কিন্তু এই সনদ মুনকাতা কারণ নাফেই আবু বকর সিদ্দিক রাজিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে দেখেননি। ইরওয়াউল গালীল (৭/৩৪১) নং ২৩১৩]
উ). ইমাম বুখারী বলেছেন:
পরিচ্ছেদঃ ৮৯/৭. যখন কোন মহিলাকে ব্যভিচারে বাধ্য করা হয় তখন তার উপর কোন ‘হদ’ আসে না। কেননা, আল্লাহ্ বলেনঃ তবে কেউ যদি তাদেরকে বাধ্য করে সে ক্ষেত্রে জবরদস্তির পর আল্লাহ্ তো তাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরাহ আন্-নূর ২৪/৩৩)
লায়স (রহ.) ... নাফি’ (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, সফীয়্যাহ বিন্ত আবূ ’উবায়দ তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, সরকারী মালিকানাধীন এক গোলাম গনীমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসীর সঙ্গে জবরদস্তি করে যিনা করে। তাতে তার কুমারীত্ব মুছে যায়। ’উমার (রাঃ) উক্ত গোলামকে কশাঘাত করলেন ও নির্বাসন দিলেন। কিন্তু দাসীটিকে সে বাধ্য করেছিল বলে কশাঘাত করলেন না, কারণ গোলাম তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে তার সাথে অবৈধ যৌন সঙ্গম করেছে।
[সহীহ বুখারী: ৬৯৪৯]
চ). ইবনে হাজার আসকালানী মন্তব্য করেন:
লাইছ হলেন ইবনে সাদ, নাফেয়ী হলেন ইবনে উমারের আজাদকৃত গোলাম।
সফীয়্যাহ বিন্ত আবূ ’উবায়দ হলেন আব্দুল্লাহ বিন ওমর এর স্ত্রী...
(সফীয়্যাহ বলেন, গোলাম নারী দাসীকে বলপ্রয়োগ করে) ক্বাফ ও দুআদ দিয়ে, যার অর্থ সে তার hymen ভেঙ্গে দিয়েছে, এটি তার কুমারী হওয়ার প্রমাণ।
('উমার তাকে আইন অনুযায়ী চাবুক মারেন, এবং তাকে নির্বাসিত করেন) তিনি তাকে ৫০ বার বেত্রাঘাত করেন এবং তাকে ৬ মাসের জন্য নির্বাসিত করেন কারণ গোলামের শাস্তি স্বাধীন ব্যক্তির অর্ধেক। এটি একটি প্রমাণ যে, উমার (রা.)-এর মতে, গোলামকেও স্বাধীন ব্যক্তির মতো নির্বাসিত করা হবে, যেমনটি কিতাব আল হুদুদে ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
(তিনি নারী দাসীকে বেত্রাঘাত করেননি) আমি তার নাম খুঁজে পাইনি, এই আছারটি আবুল কাসিম আল বাগাভী লাইছ থেকে আল আলা বিন মুসা থেকে উল্লেখ করেছেন। এই আছার আমার কাছে খুব উচ্চতর সনদের মাধ্যমে পৌঁছেছে যা স্পষ্ট শ্রবণে এবং আমার এবং আল বাগিভীর মধ্যে মাত্র আটজন লোক রয়েছে, যদিও তিনি আমার ৬০০ বছরেরও বেশি আগে মারা গেছেন। (অতঃপর তিনি এই ঘটনাটি তাঁর সনদের মাধ্যমে বর্ণনা করেন যে), আমি এটি মুহাম্মদ বিন আল হাসান বিন আব্দুল রহীম আদ-দাক্কাকের কাছে পড়েছিলাম, যিনি এটি আহমাদ বিন নেমাহ থেকে শুনেছিলেন, যিনি বলেছেন: আবুল মানজা বিন উমর আমাদেরকে বলেছেন, যিনি বলেছেন: আবুল ওয়াকত আমাদেরকে বলেছেন, যিনি বলেছেন: মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল আজিজ আমাদেরকে বলেছেন, যিনি বলেছেন: আবদুল রহমান ইবনে আবি শরীহ আমাদেরকে বলেছেন, যিনি আল বাগাভী থেকে এটি বর্ণনা করেছেন।
[ফাতহুল বারী: ৬৯৪৯]
- D.M.Nazmus Sadat
Please login or Register to submit your answer