ধর্ষণের শাস্তি
- আবু দাউদ ৪৩২৮ মোতাবেক ধ্বর্ষনের দায়ী ব্যক্তিকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হয়নি নবী (সা) এর যুগে। bangla Hadith bd site অনুযায়ী আবু দাউদ 4379 তিরমিযী ও অন্যান্য কিতাবে একই হাদিস বর্ণিত থাকলেও সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত অই ধর্ষককে রজম করা হয়নি। নবী (সা) একজন ধর্ষককে কেন নিস্তার দিলেন? তাহলে নববী যুগে কি ধ্বর্ষণের কোন বিচার ছিল না? যদিও পরবর্তীতে খলিফা যুগে আমরা ধ্বর্ষণের বিচারাদির প্রমাণ পাই। সহীহুল বুখারী হাদিস নং ৬৯৪৯। প্রশ্ন হইল নবী (সা) ধ্বর্ষককে কেন নিস্তার দিলেন? কারণ অই লোককে রজম করা হইছিল না।
আপনার প্রথমে বর্ণনা করা হাদিসটি সহিহ নয়। [1] হাদিস বিডিবে কিছু কিছু হাদিসকে সহিহ বলা হয়েছে, কিন্তু তা হাসান, আবার কিছু হাদিসকে হাসান বলা হয়েছে অথচ তা যয়িফ। কিছু হাদিসকে শুধু আলবানি রহ. এর তাহকিকের উপর ভিত্তি করে মান বসানো হয়েছে। তাই হাদিস বিডির মান সব সময় সঠিক হয় না। আমি কিছুদিন আগে একটা হাদিস দেখেছিলাম, তিরমিজিতে সেটাকে হাসান বলেছে, কিন্তু একই সনদে একই হাদিসকে মিশকাতে যেয়ে আবার যয়িফ টেগ দিয়ে রেখেছে তারা।
যদি ধরি হাদিসটি হাসান, তাহলেও লোকটাকে ক্ষমা করে দেওয়ায় অন্যায় কিছু আছে বলে মনে হয় না। কারন নারীটি যে লোক তাকে ধর্ষন করেনি সেই লোককে অপরাধী দাবি করেছে, একজন নিরপরাধ লোককে শাস্তি দেওয়ার জন্য সে সম্মতি জানিয়েছে। তার কারনে একজন নীরিহ লোক হয়তো মৃত্যু দন্ডের শিকার হয়ে যেত। প্রশ্ন আসে যদি এটি আসলেই ধর্ষণ হত তাহলে কেন নারীটি নিরপরাধ একটি লোককে ফাঁসিয়ে দিল! নিশ্চই অন্য কোন কাহিনি ছিল যা হাদিসে বিস্তারিত আর আসেনি। এছাড়া আসল অপরাধী চাইলেই চুপ থেকে একজন নিরপরাধ লোকের মৃত্যু হতে দেখে নিজে বেঁচে যেত পারতো, কিন্তু সে তা না করে লোকটাকে বাঁচালো। এই কারনে আমার মনে হয় ঘটনা যদি আসলেই সত্য হয়ে থাকে তাহলে সেই লোককে শাস্তি না দেওয়াটা অন্যায় ছিল। যদি ঘটনা সত্য হয় তাহলে হয়তো রাসূল প্রথম লোককে শাস্তি দেওয়ার চিন্তা করলেও টরে সব কিছু ঘটার পর তিনি এসব চিন্তা করেই পরবর্তি লোককে আর শাস্তি দেন নি, এর কারন সংক্ষেপে আবার উল্লেখ করছি -
- সেই নারী নীরিহ একজনকে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল, তার কারনে একজন নিরপরাধ লোকের মৃত্যু ঘটতে পারতো
- আসল ঘটনা জানা যাওয়ার পর নারীটি অপরাধী হওয়া সত্ত্বেও তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল
- আসল অপরাধী নিজের দোষ স্বীকার করেছিল, ও অন্তর থেকে তাওবা করেছিল
- আসল অপরাধী নিরপরাধ লোককে শাস্তি দিতে নেওয়ায় নিজের দোষ স্বীকার করে সেই নিরপরাধ লোকটিকে শাস্তি হতে বাঁচিয়ে দিয়েছিল [2]
হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব মতে, ধর্ষণের জন্য ধর্ষকের উপর ব্যভিচারের শাস্তি প্রযোজ্য হবে। তবে ইমাম মালেক -এর মতে, ধর্ষণের অপরাধে ধর্ষকের উপর ব্যভিচারের শাস্তির পাশাপাশি ‘মুহারাবা’ বা ‘হিরাবাহ’র অর্থাৎ সুরা মায়িদা আয়াত ৩৩ এ বর্ণিত শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। উপযুক্ত প্রমান পাওয়ার পর তাকে সূরা মায়েদার ৩৩ নাম্বার আয়াত অনুযায়ি শাস্তি দিবে। যদি ধর্ষন নাও করে কিন্তু নারীকে অপরন করলেও লোকটিকে সেই শাস্তিই দিতে হবে। [3]
ইমাম মালেক (রহ), শায়খ সালমান আল-বাজি (রহ), ইমাম শাফেঈ (রহ), আল-লায়ছ (রহ) ও আলী ইবনে আবী তালিব (রা) এর মতে ধর্ষীতাকে জরিমানা হিসেবে মোহরও দিতে হবে। আবু হানিফাহ (রহ) ও আল-সাওরী (রহ) বলেন: হাদ্দের শাস্তি তার উপর কার্যকর করা হবে কিন্তু তিনি জরিমানা দিতে বাধ্য নন। [4]
যদি ধর্ষন অপহরন ও অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে হয়, তা ধর্ষীতাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয় তাহলে ধর্ষক মুহারাবার (জমিনে ফিতনা ফাসাত সৃষ্টি করা, ডাকাতি করা ইত্যাদি) শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। [5]
পণ্ডিতগণ সর্বসম্মতভাবে একমত যে ধর্ষককে হাদ শাস্তির শিকার হতে হবে যদি তার বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ থাকে যে সে হদ শাস্তির যোগ্য, অথবা যদি সে তা স্বীকার করে। কোন ধর্ষীতাকে শাস্তি দেওয়া হবে না যদি প্রমান হয় যে সে প্রকৃত অর্থে জিনাকারী নয় বরং ধর্ষীতা। [6]
বিস্তারিত আরো জানতে দেখুন [7]
তথ্যসূত্রঃ-
[1] https://islamicauthors.com/article/315
[2] বিস্তারিত প্রতিটা হাদিস দেখলে জানতে পারবেন - আবু দাউদ ৪৩৭৯; মিশকাত ৩৫৭২; তিরমিযী ১৪৫৪,আহমাদ ২৭২৪০, সহীহাহ্ ৯০০, সহীহ আত্ তারগীব ২০২৩
[3] শরহে মুসলিম, ১২/৩
[4] আল-মুওয়াত্তা', ২/৭৩৪; আল-মুন্তাহা শরহ আল-মুওয়াত্তা', ৫/২৬৮, ২৬৯
[5] আল-সারখাসি, আল-মাবসুত ৯/২০১, ইবনে কুদামা, আল-মুগনি ৯/১২৪; আল-হুকম ফি'ল-সাতওয়াল-ইখতিতাফ ওয়া মুশকিরাত, পৃ. ১০৪-১৯২; আততাশরীয়ুল জিনাইয়্যুল ইসলামী ২/৩৭৯-৩৮৫
[6] আল-ইস্তিদকার, ৭/১৪৬; দারসে তিরমিযি – মুফতি তাকি উসমানী, ৪/৩৮৬
[7] https://at-tahreek.com/article_details/6998
https://www.islamicqa.org/3619/
https://islamqa.info/en/answers/72338/punishment-for-rape-in-islam
Please login or Register to submit your answer