অমুসলিমদের সহিত চুক্তি ও শান্তির আয়াত রহিত হয়ে গেছে?
না যুদ্ধের আয়াতগুলো দ্বারা চুক্তির আয়াতগুলো রহিত হয় নি, কারন চুক্তির আয়াতেই বলা হয়েছে চুক্তি ভঙ্গ করলে যুদ্ধ করার কথা। অবশ্যই সাময়িক সময়ের জন্য শান্তির আয়াতগুলো রহিত হয়ে যায় আবার চুক্তি চলাকালিন যুদ্ধের বিধান কার্যকর করা রহিত থাকে তখন অমুসলিমদের সাথে শান্তির আয়াতগুলো অনুসারে আচরন করা যাবে।
কাফেরদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর সম্পর্কিত সূরা বাকারার আয়াতটি অনেকের মতে রহিত। সূরা বাকারা ও সূরা তাওবার আয়াতটা যদি রহিত নাও হয় তাহলেও এতে কিছু যায় আসে না, কারন এই আয়াত দ্বারা সব অমুসলিমকে বুঝানো হয় নি, বরং এই আয়াতে সেই অমুসলিমদের কথা বলা হয়েছে যাদের সাথে যুদ্ধ করা বৈধ, যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, করছে। [1]
ইসলামে মুসলিম রাষ্ট্রে সাধারনত ৪ প্রকারের কাফেরদের পাওয়া যায়। ১) জিম্মী ২) মু'আহাদ ৩) মুস্তা'মান ৪) হারবি কাফের। প্রথম ৩ প্রকারের কাফেরদের সাথে যুদ্ধ বৈধ নয় যতক্ষন পর্যন্ত তারা প্রকৃত জিম্মী, মু'আহাদ ও মুস্তা'মান হওয়ার শর্তগুলো মেনটেন করে চলে। হারবি কাফের হল যারা প্রথম তিন প্রকারের মধ্যে পরে না। অর্থাৎ সহজ ভাষা বললে যারা দেশে অবৈধ নাগরিক অনেকটা এই রকম। হারবি কাফের ও অন্য দেশের কাফেরদের সাথে যুদ্ধ হলেও তাদের মধ্যে বৃদ্ধ, শিশু, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ, নারী, যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চায় না, করছে না এমন অমুসলিমদেরকে হত্যা করার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। [2]
ইসলামে অমুসলিমদের সাথে বৈধ চুক্তি করলে তা পালন করা বাধ্যতামূলক যতক্ষন না অমুসলিমরাই সেই চুক্তি ভঙ্গ করে। [3]
অমুসলিমদের সাথে ভালো আচরন করা, তাদেরকে দান করা, খাওয়ানো, প্রতিবেশি হলে খোজ খবর নেওয়া ও প্রতিবেশির অন্য হক আদায় করা, সাহায্য করা, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, ভালো-মন্দর উপদেশ দেওয়া, ন্যায় বিচার করা ইত্যাদি করার ক্ষেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, বড় অনেক ক্ষেত্রে এসব করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে যেন তারা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু এসব করতে যেয়ে ইসলামের কোন হুকুম-আহকামকে বাদ দেওয়া, অবজ্ঞা করা, অমুসলিমদের হারাম সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে পড়া যাবে না। [4]
তথ্যসূত্রঃ
[1] আহকাম আল-কুরআন ৪/১৭৭; মাজমু'আল-ফাতাওয়া ১৯/২০
[2] আল-মাওসুয়াতুল ফিকহিয়াতুল কুয়েতিয়াহ ৪২/১৯৮; কাইদাতুন মুখতাসারাহ ফি কিতালিল কুফফার পৃ. ১৮৮; কাশফুল মুশকিল ২/৫৬৯; আল-মাফাতিহ ফি শারহিল মাসাবিহ ৪/৪০৮; শারহুল মাসাবিহ ৪/৩৯৭; ফাতহুল উদুদ ৩/১২২; আল-মুগনী ১৩/১৭৫-১৮০; আল-কাফি শারহুল বাযুদী ২/৯৫৮; আল-হিদায়াহ ২/৩৮০; আল-বাহরুর রাইক ৫/৮৪; ফাতহুল উদুদ ৩/১২২
[3] আল-ইসলাম আকিদাহ ওয়া শরিয়াহ, পৃষ্ঠা ৪৫৭; ইবনে তাইমিয়া, মাজমুইল ফাতওয়া ১৯/২০; মুখতাসার যাদুল মা‘আদ, অনুচ্ছেদ “অমুসলিমদের সাথে চুক্তি করা এবং কর আদায় সম্পর্কে রসূল (সাঃ) এর হিদায়াত”, “নাবী (সাঃ) এর নিরাপত্তা চুক্তি, সন্ধি, অমুসলিমদের দূত, জিযইয়া গ্রহণ, আহলে কিতাব এবং মুনাফিকদের সাথে তাঁর আচরণ ও ওয়াদা-অঙ্গিকার পূরণ সম্পর্কে”
[4] বিস্তারিত - https://islamqa.info/en/answers/128862/how-to-treat-non-muslims
https://islamqa.info/en/answers/112006/how-should-a-muslim-deal-with-his-kaafir-family
https://islamqa.info/en/answers/131777/duties-of-a-muslim-towards-a-non-muslim
https://islamqa.info/en/answers/239930/permissibility-of-showing-kindness-to-a-non-muslim-and-lending-him-money
https://islamqa.info/en/answers/129664/there-is-nothing-wrong-with-treating-non-muslims-kindly-if-they-are-not-fighting-us
Please login or Register to submit your answer