ইসলামবিরোধীদের প্রতি জবাবসীরাত ও ইতিহাস

সাহাবী মুগীরা ইবনে শুবা (রাঃ) যিনা করেছিলেন?

গত কয়েকদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় জনৈক ব্যক্তির একটি স্ক্রিনশট বার বার চোখে পড়ছে। সেটা দেখা যাচ্ছে সেই ব্যক্তি যারা সাহাবাগণকে সত্যের মাপকাঠি মানে তাদেরকে টিটকারি করে মন্তব্য করেছে,

/* যে সাহাবী যিনা করেছিলো, সেই সাহাবীকে সত্যের মাপকাঠি ভাবা সকল শায়েখদের অভিনন্দন। */

এই মন্তব্যটি মূলত শিয়াদেরকে করতে দেখা যায় বেশি, তারা বিশেষ করে বহু জাল যঈফ হাদিস উপস্থাপন করে এই বিষয়টি প্রমাণ করার চেষ্টা করে থাকে। সাথে ইদানীং কিছু অনলাইন কেন্দ্রিক নতুন নতুন মাযহাব তৈরি হচ্ছে আমাদের দেশে, তাদের অনেকেও এই জাতীয় কথা বলছে। বাংলা ভাষাভাষী নয় এমন বহু মানুষকেও এই বিষয়ে অভিযোগ বা প্রশ্ন করতে দেখেছি। তাই চিন্তা করলাম এই বিষয়ে সকলের উদ্দেশ্যে এই টপিকে কিছু না বললেই নয়। সাহাবাদের মর্যাদা নিয়ে আমার এই লিখা নয়, আমার লিখাটি মূলত যে সাহাবী প্রসঙ্গে মন্তব্য তার ঘটনাটি নিয়ে।

মন্তব্যকারী মূলত সাহাবী মুগীরা ইবনে শুবা (রা)-কে ইঙ্গিত করেছেন। সংক্ষেপে ঘটনাটি বলে রাখা প্রয়োজনীয়। মুগীরা ইবনে শুবা (রা) এর সাথে উম্মে জামিলের পরিচয় ছিল বলে বিভিন্ন রেওয়ায়েতে পাওয়া যায়। তো একদিন কিছু সাহাবা উনাকে কোন এক নারীর সাথে মিলিত হতে দেখে ফেললেন। তাদের মাঝে অন্যতম ও প্রধান ছিলেন আবু বাকরা (রা)। তিনি খলিফা ওমর (রা)-এর কাছে অভিযোগ দায়ের করলে ওমর (রা) মুগীরা (রা)-কে ডেকে পাঠানের এবং তৎক্ষণাৎ তদন্ত করার ব্যবস্থা নিলেন। ৪ জন সাক্ষী মুগীরার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিলেন কিন্তু শেষের জন্য বললেন তিনি নারীটিকে দেখেননি, তিনি জানেন না সেই নারী কে, এবং তিনি সরাসরি ব্যভিচার হতেও দেখেন নি। মুগীরা (রা)-এর দাবি ছিল সে ব্যভিচার করে নি, বরং সে তার স্ত্রীর সাথেই ছিল। অপর দিকে আবু বাকরা (রা)-এর দাবি ছিল সেটা তার স্ত্রী নয় বরং উম্মে জামিল ছিল। এখানে সম্পূর্ণ সাক্ষীর অভাবে মুগীরা (রা) খালাস পেয়ে যান এবং আবু বাকরা (রা) অপবাদের অভিযোগে শাস্তি ভোগ করেন।

এই ছিল সংক্ষেপে ঘটনাটি।[1]মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৮/৩৬২; তারিখ আল তাবারি ৩/১২০; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭/৯৪ যাইহোক এখানে পরিস্থিতি এমন যে দুজনই সাহাবা এবং কেউ ভুল প্রমাণিত হলে অপরজন মিথ্যাবাদী ও অপরাধী প্রমাণিত হচ্ছেন, আসলে বিষয়টা বাস্তবে এমন নয়। আমাদের কাছে সেভাবে উপস্থাপন করা হয় বিধায় আমাদের চোখের সামনে এমন পরিস্থিতির চিত্র ভেসে উঠে। তার ‍উপর মুগীরা (রা) পরবর্তীতে মুয়াবিয়া (রা) এর শাসনে উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন। মূলত এই কারণেই একদল মুগীরাকে সাহাবাদের কাতার থেকেও বের করতে দ্বিধা করেন না।

যাইহোক অসংখ্য হাদিস হতে প্রমাণ পাওয়া যায় সাহাবাগণের সম্মান, মর্যাদা, গুরুত্ব, দ্বীনদারিতা, ইসলামকে বুঝা ও মানার যোগ্যতা এবং প্রবণতা আপনার আমার এবং আমাদের সোকল্ড পির-আওলিয়াদের চাইতেও অনেক অনেক বেশি ছিল। রাসূল (ﷺ) বহু সময়, বহু যুদ্ধে বা ঘটনায় সেখানে উপস্থিত সকল সাহাবার জন্য দোয়া করেছিলেন, তাদের সকলকে সর্বোত্তম বলেছিলেন, তাদের জান্নাতের জন্য দোয়া করেছিলেন এবং তাদের ফজিলত নিয়ে বহু কথা বলেছেন। সেরকম কয়েকটি ঘটনা হল হুদায় বিহার সন্ধির সময় ও বাইয়াতে রিজওয়ানের সময়। দেখতে পারেন সাহাবাগণ সম্পর্কে কিছু আয়াত ও হাদিস-

  • সূরা তাওবা আয়াত ১০০
  • সূরা হাদীদ আয়াত ১০
  • সূরা ফাতাহ আয়াত ১৮,১৯
  • সূরা ফাতাহ আয়াত ২৬
  • সূরা ফাতাহ আয়াত ২৯
  • সূরা হুজুরাত আয়াত ৭
  • সূরা বাকারা আয়াত ১৩৭
  • তাফসির ইবনে কাসীর ৭/৩৩৯-৩৪০
  • সহীহ বুখারী ৩৬৪৯
  • সহীহ বুখারী ৩৬৫০, ৫১
  • সহীহ মুসলিম ১৮৫৬
  • সহীহ মুসলিম ২৪৯৫
  • সহীহ মুসলিম ২৪৯৬
  • ফাতহ আল-বারী ৩/৫০৭-৫০৮
  • মিশকাত ৬০০৭; তিরমিজি ৩৬১
  • মিশকাত ৬০১২
  • তিরমিজী ২৬৪০
  • আবু দাউদ ৪৬০৭
  • মুসলিম ২৫৩১
  • তাবরানী ফিল কাবির, ১২৭০৯

আর এই দুটো সময়তেই মুগীরা ইবনে শুবো সেখানে অংশগ্রহণকারী সাহাবাগণের কাতারে ছিলেন। এছাড়াও পরবর্তী বহু যুদ্ধ ও অভিযানের সময় যেমন ইয়ারমুক, কাদিসিয়ার যুদ্ধে তিনি উপস্থিত ছিলেন ও জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের একজন ছিলেন।[2]সহীহ বুখারি বুখারী ২৭৩১, ২৭৩২; সিয়ারু আলামিন নুবালা ৩/২১

[বিশেষ দ্রষ্টব্য: প্রতিটি স্টার মার্কে থাকা দলিলগুলো আলাদা আলাদা ধরনের হাদিস ও আয়াত]

কিছু আলেম এও বলেছেন মুগীরা (রা) হতে পারে গোপনে উম্মে জামিলকে বিয়ে করেছিলেন।[3]তালকিস আল হাবির ৪/৬৩,ফায়দ আল বারী আলা সহীহ আল বুখারী ৩/৩৮৬ উনাদের এই বক্তব্যের পিছনে কারণ ও যুক্তি হল মুগীরা (রা) দাবি করেছিলেন তিনি তার স্ত্রীর সাথে ছিলেন। এবং এটা সবার জানা তিনি বহু বিবাহ করেছিলেন। উনার বিবাহের সংখ্যা নিছক ২/৪টা ছিল না। প্রমাণিত সূত্রে বর্ণিত হয়েছে তিনি ৭০ বা তারচেয়ে বেশি বিবাহ করেছিলেন।[4]সুনানে বাইহাকি ৭/১৩৬; সিলসিলাত আল-আহাদিস আল-সহীহ ১/১৯৮ এখন প্রশ্ন এসেই যায় যেহেতু তিনি বৈধ ভাবে বিয়েই করতে পারছেন সেহেতু তিনি কেন যিনার মত কবিরা গুনার সাথে জড়িয়ে যাবেন? এছাড়া তিনি সাধারণ কোন মানুষও ছিলেন না, ওমর (রা)-এর শাসন আমলেও তিনি বসরার গভর্নর ছিলেন। সেহেতু তিনি উম্মে জামিলকে বিয়ে করতে চাইলে কি উনাকে বিয়ে করতে পারতেন না? অবশ্যই পারতেন, বরং এটা তার জন্য ওয়ান-টুর ব্যাপার হত।

যাইহোক কিন্তু যেহেতু সুস্পষ্ট প্রমান নেই তিনি উম্মে জামিলকে বিবাহ করেছেন সেহেতু আমরা জোর গলায় এই দাবিটি করছি না। কিন্তু তবুও যুক্তির সাথে এই সন্দেহের কলুষতাও আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু তিনি প্রচুর বিবাহ করেছেন, তার জন্য হারাম কাজ করার কি দরকার যখন তার কাছে যথেষ্ট পরিমাণে জায়েজ পন্থা উন্মুক্ত ছিল?! দাসদাসী ও উপপত্নী থেকে হোক বা স্বাধীন নারীদের সাথে বিবাহের মাধ্যমে হোক। তাহলে হারামের মধ্যে ইচ্ছা পূরণের তালাশ করার কারণ কি যদি তা হালালের মধ্যে পাওয়া যায়, বিশেষ করে মুগীরার মতো একজন সাহাবীর জন্য!

এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার বলে রাখা ভালো যে তিনি এতগুলো বিবাহ একত্রে করেন নি। আর কেউ এতগুলো বিবাহ করতে হয়েছিল পূর্বের স্ত্রীদেরকে কেন তালাক দিয়েছেন তা সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য কোন বর্ণনা আমরা খুঁজে পাই না। দুই একটা হাদিস পাওয়া যায় যেখানে বলা হয়েছে তিনি অযথাও তালাক দিতেন কিন্তু সেই হাদিসগুলোও গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের নয়।[5]মিজান আল ইতিদাল ৭/৩৩৪; আহওয়াল আল রিজাল লি আল জাওয্যানী ১/২২; আল দাইয়াফ ওয়াল মাতরুকিন লি নাসাই ১/৪৬; আল দাইয়াফ ওয়াল মাতরুকিন লি ইবনে জাওজি ২/১২

এছাড়া কোরআনের আইন[6]সূরা নিসা আয়াত ১৫ অনুসারেইতো মুগীরা ইবনে শুবার অপরাধ প্রমাণিত হয় নি, সেহেতু আর কি করে উনার বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ থাকে? আল্লাহর আইনের চাইতে কি বেশি বুঝা শুরু করল নাকি তারা?

আর ওমর (রা) খলিফা হিসেবে কতটা ন্যায়, নিষ্ঠাবান, কঠোর ছিলেন তা কি কারো অজানা রয়েছে? যিনা শুধু শারীরিক সম্পর্ক করলেই হয় এমন না, রাসূল বর্ণনা করেছেন চোখ, হাত, পা, অন্তর, মুখের যিনাও রয়েছে।[7]সহিহ বুখারী ৬২৪৩ সেহেতু মুগীরা যদি আগ থেকেই এসব করে আসতেন তাহলে কি ওমর উনাকে বসরার আমির নিযুক্ত করতেন? নাকি গভর্নর হিসেবে থাকতে দিতেন? আর ন্যায় বিচারে যেখানে এখনো ওমরের উদাহরণ পেশ করা হয় সেখানে আপনি আর আমি কীভাবে এটা চিন্তা করতে পারি যে ওমর শুধু এক জন সাক্ষী নেই বিধায় সম্পূর্ণ অভিযোগকে মিথ্যা হিসেবে বাতিল ঘোষণা করবেন! তিনি কি অন্য সম্ভবনা সমূহ বিবেচনা করে দেখেন নি!? নিজের মত করে অন্য আর তদন্ত করে দেখেন নি!? যে নিজের আপন সন্তানকে মদ্য পানের অপরাধে হদের কঠিন শাস্তিতে দণ্ডিত করেন এবং বলা হয়ে এর কিছুদিন পরেই সে মৃত্যু বরণ করে[8]মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৯/২৩২; ফাসল কিতাব ফি সিরাত আমিরুর মুমিনিন ওমার ইবনে খাত্তার, পৃ ৪৫৪ সেই ওমর মুগীরাকে এমনিতেই ছেড়ে দেওয়ার মানুষ!? সেই ওমর মুগীরার প্রতি অনুগ্রহ করবেন!? এই ঘটনার পর ওমর মুগীরাকে কুফার আমির হিসেবে নিযুক্ত করেন। প্রশ্ন আসে মুগীরা যে নির্দোষ তা শতভাগ ওমরের কাছে প্রমাণিত না হলে কি তিনি মুগীরাকে কুফার আমির বানাতেন?

উক্ত ঘটনার বিষয়ে কয়েকটা বিষয় বলে রাখা ভালো। উক্ত ঘটনা নিয়ে কোথাও দেখা যায় বলা হয়েছে তারা সকলে নিজ চোখে সরাসরি ব্যভিচার হতে দেখেছে এবং মুগীরা ও উম্মে জামিলকে নাকি সরাসরি দেখেছে, কোথাও বলা হয়েছে ঘর ছিল উম্মে জামিলের কিন্তু এই সংক্রান্ত হাদিসগুলো সবগুলোই যয়িফ।[9]https://www.islamweb.net/ar/fatwa/192335; https://islamqa.info/ar/answers/120030/

আবু বকর আল আরাবি (রহ) কোরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই বিষয়ে একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে আবু বাকরা ও মুগীরা ইবনে শুবা প্রতিবেশী ছিলেন এবং তারা মুগীরার ঘরেই বিষয়টা ঘটতে দেখেছেন। সেখানে আরো উল্লেখ রয়েছে প্রথম দৃশ্যটা আবু বাকরা (রা)-ই দেখেছেন, এবং তারপর বাকিরা দেখেছে। তারা দেখার পর জানতে চেয়েছে নারীটি কে? তখন আবু বাকরা (রা) বললেন তিনি উম্মে জামিল ইবনেতে আরকাম দরবারের খাদেমা। যখন ওমরের দরবারে হাজির করা হল তখন মুগীরা বললেন তাদেরকে যেন প্রশ্ন করা হয় তারা সেই নারীকে কীভাবে চিনত, তারা তাকে কি ভাবে দেখেছে, তার কি নারীকে দেখেছে কিনা, আরেক জনের স্ত্রীর ও ঘরে দিকে এভাবে তাকানো কি করে বৈধ করে নিল তারা। তখন আবু বাকরা (রা)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিস্তারিত বলেন যে ভুল বসত নজর চলে গিয়েছিল দরজা বা জানালা হালকা বাতাসের কারণে খোলা থাকায় এবং যখন উনাকে জিজ্ঞাসা করা হয় নারীটিকে কীভাবে দেখেছে তখন তিনি বলেন তিনি পিছন থেকে দেখে চিন্তে পেরেছেন (সরাসরি চেহারা দেখেন নি)। বাকি ২জনও একই উত্তর দেয়। ৪র্থ জন বলে সে সরাসরি যিনা দেখে নি এবং সেই নারীকেও চিনতো না।[10]আরশীফ মুলতাক্বা আহলিল হাদীছ-২ ৩৯/৪০৭-৪০৮; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/২০৫-২০৬

এই থেকে প্রমাণিত হয় আবু বাকরা (রা) ভুল অনুমানের ধরুন একটি অভিযোগ করেছিলেন, কিন্তু কোরআন ও হাদিসের আদেশ অনুসারে উনার উচিত ছিল নিছক অনুমানের ভিত্তিতে কিছু না করে নিশ্চিত হয়ে, অন্যন্যা প্রমাণ খুঁজে তারপর আগানো। যেহেতু তিনি শতভাগ প্রমাণসহ নিশ্চিত হওয়া ছাড়াই অভিযোগ করে বসেছিলেন সেহেতু তা স্বাভাবিক ভাবেই অপবাদ হিসেবে গণ্য হওয়ার কথা এবং উনার নিজের ভুলের কারণে উনাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে কোরআনের বিধান অনুসারে।[11]সূরা নুর আয়াত ৩-৫, ২৩

যদিও আমরা বিশ্বাস করি তিনি ইচ্ছাকৃত শত্রুতা বসত এমন কিছুই করেন নি, এবং ওলামাগণও এটাই বলেছেন যে উনি অনুমান নির্ভরতার কারণে ভুলবশত এই কাজ করে ফেলেছিলেন, ভালোভাবে দেখতে না পেরে তিনি মুগীরার স্ত্রীকে উম্মে জামিল ভেবে বসেছিলেন যেহেতু উম্মে জামিল ছিল দরবারের খেদমতকারদের একজন ও তার প্রায় সময় মুগীরা (রা)-এর বাসায় আসা যাওয়া করতে হত ও তিনি যেহেতু মুগীরার স্ত্রীকে আগে দেখেন নি। এবং আমরা এটাও মনে করি আবু বাকরা শত্রুতাবসত মিথ্যাচারের আশ্রয় নেননি বরং ইমানের দাবিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে থাকতে চেয়েছিলেন যদিও উনার দ্বারা ভুল বোঝাবুঝির হয়ে গিয়েছিল। আর আমাদের এমন কোন আকিদা নেই যে সাহাবীগণ ভুলের ঊর্ধ্বে, আমরা বিশ্বাস করি সাহাবীদের দ্বারাও ভুল হওয়া সম্ভব।[12]আরশীফ মুলতাক্বা আহলিল হাদীছ-২ ৩৯/৪০৮; মুজাকিরাহ ফি উসুলিল ফিকহ, আল শানক্বীতী, পৃষ্ঠা ১২৪; https://www.islamweb.net/ar/fatwa/192335

কিন্তু তাই বলে তাদের বিষয়ে অপমান সূচক কোন মন্তব্য করা কোন মুমিনের পক্ষে সম্ভব হতে পারে না।

মন্তব্যকারীর উদ্দেশ্য অন্য সাহাবী যারা যিনা করে শাস্তিভোগ করেছিল তাদের বিষয়ে ছিল বলে মনে হয় না তাই প্রথমে সে বিষয়ে আলোচনা করিনি। তারপরও যদি ধরেও নি তিনি তাদেরকেও ইঙ্গিত করেছেন তাহলে বলে রাখা ভালো যে যে সাহাবীরা যিনা করেছিলেন এবং শাস্তি ভোগ করেছিলেন তাদের কেউই নিজেদেরকে নিরপরাধ বলে চিললা চিললি করেন নি। তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করেছিলেন, অনুতপ্ত হয়েছিলেন, নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং রাসুলের কাছে এর উপযুক্ত শাস্তি প্রধানের ফরিয়াদ জানিয়েছিলেন।[13]মিশকাত ৩৫৫৫-৩৫৬২ এই ক্ষেত্রেও এই সাহাবীগণ আমাদের নিকট সত্যের মাপকাঠি। তারা সত্যের মাপকাঠি এভাবে যে, যিনা করলে বা অপরাধ করে ফেললে সেই সাহাবীগণের মতো অনুতপ্ত হব ও তাওবা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করব।

এই জাতীয় মানুষ যারা নিজের অপরাধের কারণে অনুতপ্ত হয়েছিল ও দুনিয়ায় আল্লাহর আইন অনুসারে শাস্তি পেয়েছে তাদের বিষয়ে বহু হাদিস হতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে তাদেরকে আখিরাতে সেই অপরাধের জন্য কোন শাস্তি প্রদান করা হবে না।[14]সহীহ বুখারি ১৮; সুনানে তিরমিজি ২৩৯৬; আল-সিলসিলাহ আল-সহীহ ১২২০

এই থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় তারা আপনার আর আমার মত নাফরমান জাহিল মার্কা মানুষ ছিলেন না, তাদেরকে ব্যভিচারী বা এই জাতীয় উলটা পালটা ট্যাগ দেওয়ার কোন সুযোগও থাকছে না কারণ যেহেতু তারা মুমিন ছিলেন, অপরাধ স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং দুনিয়ায় শাস্তিভোগ করেছিলেন যা তাদের গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাই ভালো জানেন।

    Footnotes

    Footnotes
    1মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৮/৩৬২; তারিখ আল তাবারি ৩/১২০; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭/৯৪
    2সহীহ বুখারি বুখারী ২৭৩১, ২৭৩২; সিয়ারু আলামিন নুবালা ৩/২১
    3তালকিস আল হাবির ৪/৬৩,ফায়দ আল বারী আলা সহীহ আল বুখারী ৩/৩৮৬
    4সুনানে বাইহাকি ৭/১৩৬; সিলসিলাত আল-আহাদিস আল-সহীহ ১/১৯৮
    5মিজান আল ইতিদাল ৭/৩৩৪; আহওয়াল আল রিজাল লি আল জাওয্যানী ১/২২; আল দাইয়াফ ওয়াল মাতরুকিন লি নাসাই ১/৪৬; আল দাইয়াফ ওয়াল মাতরুকিন লি ইবনে জাওজি ২/১২
    6সূরা নিসা আয়াত ১৫
    7সহিহ বুখারী ৬২৪৩
    8মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৯/২৩২; ফাসল কিতাব ফি সিরাত আমিরুর মুমিনিন ওমার ইবনে খাত্তার, পৃ ৪৫৪
    9https://www.islamweb.net/ar/fatwa/192335; https://islamqa.info/ar/answers/120030/
    10আরশীফ মুলতাক্বা আহলিল হাদীছ-২ ৩৯/৪০৭-৪০৮; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/২০৫-২০৬
    11সূরা নুর আয়াত ৩-৫, ২৩
    12আরশীফ মুলতাক্বা আহলিল হাদীছ-২ ৩৯/৪০৮; মুজাকিরাহ ফি উসুলিল ফিকহ, আল শানক্বীতী, পৃষ্ঠা ১২৪; https://www.islamweb.net/ar/fatwa/192335
    13মিশকাত ৩৫৫৫-৩৫৬২
    14সহীহ বুখারি ১৮; সুনানে তিরমিজি ২৩৯৬; আল-সিলসিলাহ আল-সহীহ ১২২০
    Show More
    5 1 vote
    Article Rating
    Subscribe
    Notify of
    guest
    0 Comments
    Inline Feedbacks
    View all comments
    Back to top button