হাদিসইসলামবিরোধীদের প্রতি জবাবমুনকিরে হাদিস

হাদিসের ইসনাদ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও জবাব

ইসলামে ইতিহাস সংরক্ষণের বেলায় ইসনাদের গুরুত্ব ও তার উপর ভিত্তি করে হাদিসের প্রামাণ্যতা যাচাই করার বিষয়ে অনেক প্রশ্ন করে থাকে। বিশেষ করে নতুন ফিতনা মুনকিরে হাদিস সম্প্রদায়তো রীতি মত এসব বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান না রেখেও অসংখ্য ধরনের প্রশ্ন ও অভিযোগ নিয়ে আসে বিভিন্ন যায়গা হতে কপি করে করে। এই লিখায় সেসব বিষয়ে ছোট করে আলোচনার চেষ্টা করেছি।

ইসনাদের গুরুত্ব

সহজ ভাষায় ইসনাদ হলো কোন হাদিস বর্ণনা করা হলে বর্ণনাকারীদের যে শৃঙ্খল থাকে সেটাই। যেমন ক থেকে খ বর্ণনা করেছে, এখানে খ থেকে গ, গ থেকে ঘ, ঘ থেকে ঙ। এই যে চেইন দেখছেন এটাই মূলত ইসনাদ বা সনদ। আর এই সনদে বর্ণিত হাদিসের মূল কথা ও তার শব্দ সমষ্টিই হল মতন।

মুসলিমদের ইতিহাস সংরক্ষিত করা হয়েছে সনদ দ্বারা। ইসলামে বিভিন্ন ঘটনাবলি সত্য বা মিথ্যা হওয়া নির্ভর করে মূলত ইসনাদের উপর, সনদ ইসলামিক হিস্ট্রির সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই বিষয়ে আবু আলী আল-হুসাইন বিন মুহাম্মদ বিন আহমেদ আল-জিয়ানি (রহ) বলেন,

خص الله تعالى هذه الأمة بثلاثة أشياء لم يعطها من قبلها: الإسناد، والأنساب، والإعراب

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এই উম্মতকে তিনটি জিনিস দিয়ে সম্মানিত করেছেন যা তিনি এর পূর্বে কোন জাতিকে দেননি: ইসনাদ, বংশ পরম্পরা এবং ই’রব (ব্যাকরণ ও বাক্যগঠন)।[1]তাদরিব আল রাউই, ২/১৬০; তাদকিরাত আল-হুফ্ফাজ লিল-ধাহাবী ৪/১২৩৩-৩৪

মুহাদ্দিস আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ) বলেন,

الإسناد من الدين، لو لا الإسناد لقال من شاء ما شاء … بيننا وبين القوم قوائم

‘সনদ দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। যদি সনদ না থাকত, যার যা ইচ্ছা তা-ই বলত।…আমাদের এবং বিদআতিদের মধ্যে স্তম্ভ রয়েছে, যা ইসনাদকে ইঙ্গিত করে।’[2]মুকাদ্দিমা সহিহ মুসলিম, ১/১২

ইবনু আছারী (রহ) বলেন,

اعلم أنّ الإسناد في الْحَدِيْث هُوَ الأصل، وعليه الاعتماد، وبه تعرف صحته وسقمه

জেনে রাখুন যে, হাদীসের সনদটিই আসল এবং এর উপর নির্ভর করতে হবে এবং এর দ্বারা আপনি এর সত্যতা ও ভ্রান্তি জানতে পারেন।[3]জামি’ আল-উসুল ১/৯ – ১০

ইমাম শাফেঈ (রহ) বলেন,

مثل اللذي يطلب الحديث بلا اسناد كمثل حاطب ليل يحمل خرمة الحطب فيها افعي تلدغه و هو لا يدري

‘যে ব্যক্তি সনদ ছাড়া ইলম অর্জন করে তার দৃষ্টান্ত ওই ব্যক্তির মতো, যার মাথায় লাকড়ির বোঝা। আর সেই বোঝার ভেতর লুকিয়ে রয়েছে বিষধর সাপ। অথচ সাপের কথা সে জানতেও পারে না।[4]ফাতহুল মুগীস, ৩/৫; আল ইসনাদু মিনাদ্দিন, পৃষ্ঠা ৯৬

ইমাম সুফিয়ান ইবনু সাঈদ আস-সাওরী (রহ) বলেন,

الإسناد سلاح المؤمن، إذا لَمْ يَكُنْ مَعَهُ سلاح فبأي شيء يقاتل؟

ইসনাদ হলো মুমিনের অস্ত্র। যদি তোমার সাথে অস্ত্র না থাকে তাহলে তুমি লড়াই করবে কীভাবে?[5]ফাইফুল কাদির, ১/৪৩৩; শারাফু আসহাবিল হাদিস-৪২

ইসাম আল বাসির (হাফি) বলেন,

فالإسناد هو قسم أساسي من الحديث، ولذا يقال: إن علم الإسناد هو نصف علوم الحديث، فالإسناد هو المسبار الذي يحاكم كل ما يقال، والحديث الذي لا سند له كبيت لا سقف له أو لا أساس له.

ইসনাদ হাদীসের একটি অপরিহার্য অংশ, অতএব, বলা হয়: হাদিসের চেইন অফ ট্রান্সমিশন হল হাদীসের জ্ঞানের অর্ধেক, ইসনাদ হল এমন একটি অনুসন্ধান পদ্ধতি যার দ্বারা যা বর্ণনা করা হয় তার সমস্ত কিছু পরিক্ষা করা হয়, একটি হাদীস যার কোন সনদ নেই তা হল একটি বাড়ির মত যার কোন ছাদ বা ভিত্তি নেই।[6]উসূল মানহাজ আল নাকদ আনদ আহলুল হাদিস, পৃ. ৬১

আল কাদি আইয়াদ (রহ) বলেন,

اعلم أولاً أنّ مدار الْحَدِيْث عَلَى الإسناد فِيْهِ تتبين صحته ويظهر اتصاله

প্রথমে জেনে রাখুন যে হাদিসটির কেন্দ্রবিন্দু হল বর্ণনার শৃঙ্খল যেখানে এর সত্যতা প্রমাণিত হয় এবং এর সংযোগ প্রদর্শন করা হয়।[7]আল-ইলমা’ ১৯৪

মোহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনে মুজাফ্ফর (রহ) বলেন,

إن الله أكرم هذه الأمة وشرفها وفضلها بالإسناد ، وليس لأحد من الأمم كلها ، قديمهم وحديثهم إسناد ، وإنما هي صحف في أيديهم ، وقد خلطوا بكتبهم أخبارهم ، وليس عندهم تمييز بين ما نزل من التوراة والإنجيل مما جاءهم به أنبياؤهم ، وتمييز بين ما ألحقوه بكتبهم من الأخبار التي أخذوا عن غير الثقات . وهذه الأمة إنما تنص الحديث من الثقة المعروف في زمانه ، المشهور بالصدق والأمانة عن مثله حتى تتناهى أخبارهم ، ثم يبحثون أشد البحث حتى يعرفوا الأحفظ فالأحفظ ، والأضبط فالأضبط ، والأطول مجالسة لمن فوقه ممن كان أقل مجالسة ، ثم يكتبون الحديث من عشرين وجها وأكثر حتى يهذبوه من الغلط والزلل ، ويضبطوا حروفه ويعدوه عدا ؛ فهذا من أعظم نعم الله تعالى على هذه الأمة . نستوزع الله شكر هذه النعمة ، ونسأله التثبيت والتوفيق لما يقرب منه ويزلف لديه ، ويمسكنا بطاعته ، إنه ولي حميد

আল্লাহ তায়ালা এই উম্মাহকে সম্মানিত করেছেন ও ইসনাদের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করেছেন। প্রাচীন কিংবা নতুন কোন জাতি এমন নেই, যাদের কাছে ইসনাদের মত মহা গৌরবের অধিকার রয়েছে। তাদের কাছে যা আছে, তা কেবল পাতা-পুস্তকের কিছু সংগ্রহ। তারা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থাদির সাথে নিত্যকার কথামালা জুড়ে দিয়েছে। সেগুলোকে কেচ্ছা-কাহিনীর সাথে মিশ্রিত করেছে। নবীদের আনীত তাওরাত যবুর এর আসমানি বিধিমালা এবং লোক মুখে ছড়িয়ে থাকা কথাবার্তা—যা তারা আসমানি কিতাবের সাথে গুলিয়ে ফেলেছে—আদতে এ দুয়ের মাঝে এখন পার্থক্য করার মত কোন প্রামানাদী তাদের হাতে মজুদ নেই। আর এই উম্মাহ রাসুলের হাদিস গ্রহণ করেছে কেবল এমনসব ব্যক্তিবর্গ থেকে, যারা নির্ভরযোগ্য, সত্যবাদী, ধী-শক্তি সম্পন্ন ও নিজের কালে সুপ্রসিদ্ধ। অতঃপর প্রচণ্ড মাত্রায় তত্ত্ব তালাশ করেছেন, সূত্রে থাকা ব্যক্তিদের স্মৃতিশক্তির বিচারিক বিশ্লেষণ করেছেন, উস্তাদের সংস্রবে কোন মুহাদ্দিস বেশী সময় যাপন করেছেন আর কার সংস্রব কম—এগুলোকেও খুটিয়ে বের করেছেন। এরপর একেকটা হাদিস বিশটিরও অধিক সূত্রে লিপিবদ্ধ করেছেন, যাতে ভুলভ্রান্তি ও স্খলন থেকে হাদিসটি পরিশুদ্ধ থাকে। এরপর প্রত্যেক বর্ণনাকারীর নাম ও হাদিসের প্রতিটি কঠিন শব্দকে যের যবর দিয়ে শুদ্ধ রূপটি দেখিয়ে গেছেন। এই কঠিন ও সুদীর্ঘ পরিক্রমা কেবল মাত্র আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহেই সম্ভব হয়েছে।’[8]শারাফু আসহাবিল হাদিস-৪০; ফাতহুল মুগহিত, ৩/৩

ইবন হিব্বান (রহ) বলেন,

هذا خبر باطل رفعه، وإنما هو قول ابن عباس، فرفعه حفص بن عمر هذا، ولسنا بخير أن نحتج بخبر لا يصح من جهة النقل في شيء من كتبنا، ولأن فيما يصح من الأخبار بحمد الله ومنه كاف يغني عنا عن الاحتجاج في الدين بما لا يصح منها، ولو لم يكن الإسناد وطلب هذه الطائفة له لظهر في هذه الأمة من تبديل الدين ما ظهر في سائر الأمم، وذاك أنه لم تكن أمة لنبي قط حفظت عليه الدين عن التبديل ما حفظت هذه الأمة، حتى لا يتهيأ أن يزداد في سنة من سنن رسول الله -صلى الله عليه وسلم

আর আমরা সনদের দিক থেকে ছহীহ নয় এরকম কোনো বর্ণনাই আমাদের কিতাবে উদ্ধৃত করাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। কারণ যেই বর্ণনাটা আল্লাহর রহমতে, ছহীহ হিসেবে আমরা পেয়েছি সেটাই আমাদেরকে দ্বীনের ভেতরে যা সঠিক নয় তার বিরোধ থেকে রক্ষা করতে যথেষ্ট। যদি সনদ আর মুক্তিপ্রাপ্ত দলের (ত্বয়িফাতুল মানছুরাহ) এই (সনদকে সংরক্ষণের) প্রচেষ্টা বজায় না থাকতো তবে এই উম্মতের দ্বীনের ভেতরে বিকৃতি সাধন হতো যেমনটা অন্যান্য জাতির (ইয়াহুদ-খ্রিষ্টান) ক্ষেত্রে হয়েছিল।

আর সেক্ষেত্রেই অন্যান্য নবীর উম্মতেরা কখনোই তাদের আনিত ধর্মকে বিকৃত থেকে হেফাযত করতে পারেনি যেমনটা এই উম্মতে মুহাম্মদি করতে পেরেছে। এমনকি এটা সম্ভবপর নয় যে তারা রাসূল সাঃ এর সুন্নাতে বিন্দুমাত্র হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটাতে পারবে।[9]আল মাজরুহীন লি ইবন হিব্বান, ১/৩০

ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেন,

علم الإسناد والرواية مما خص الله به أمة محمد صلى الله عليه وسلم، وجعله سُلَّماً إلى الدراية، فأهل الكتاب لا إسناد لهم يأثرون به المنقولات، وهكذا المبتدعون من هذه الأُمَّة أهل الضلالات، وإنما الإسناد لِمَنْ أعظم الله عليه المِنَّة، أهل الإسلام والسُّنَّة، يُفرقون به بين الصحيح والسقيم، والمُعْوَجِّ والقويم، وغيرهم من أهل البدع والكفار إنما عندهم منقولات يأثرونها بغير إسناد، وعليها من دينهم الاعتماد، وهم لا يعرفون فيها الحق من الباطل، ولا الحالي من العاطل

وأما هذه الأمة المرحومة، وأصحاب هذه الإمة المعصومة، فإن أهل العلم منهم والدين، هم من أمرهم على يقين، فظهر لهم الصدق من المين، كما يظهر لصبح لذي عينين، عصمهم الله أن يجمعوا على خطأ في دين الله معقول أو منقول، وأمرهم إذا تنازعوا في شيء أن يردوه إلى الله والرسول كما قال تعالى: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا

ইসনাদ ও ট্রান্সমিশনের পদ্ধতি এমন একটি নেয়ামত যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উম্মতকে বিশেষভাবে দান করেছেন এবং যা তিনি উপলব্ধি করার একটি সুযোগ করে দিয়েছেন। অতএব, আহলে কিতাবগণ তাদের বর্ণনা সম্পর্কে যা প্রেরণ করে তাতে কোন ইসনাদ নেই। একইভাবে, এই উম্মাহর বিপথগামী বিদাতিদের ক্ষেত্রেও। সুতরাং, ইসনাদ কেবল তাদেরই সুযোগ, যাদের উপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার অনুগ্রহ রয়েছে, অর্থাৎ ইসলামের লোকেরা এবং সুন্নাহর অনুসারী লোকেরা। এর মাধ্যমে তারা সহিহ ও মিথ্যা এবং খারাপ এবং সোজা মধ্যে পার্থক্য করে। বিদাতি ও কাফেরদের কাছে এমন কিছু প্রতিবেদন রয়েছে যা তারা কোন ইসনাদ ছাড়াই বর্ণনা করে, আর যা তাদের জন্য শুধু তাদের বিশ্বাসের উপর নির্ভর করা হয়। অতএব, তারা মিথ্যা থেকে সত্য জানতে পারে না, এবং এর মধ্যে থেকে সজ্জিত (অলংকার দিয়ে) তা থেকে সত্য জানতে পারে না।

এই সৌভাগ্যবান উম্মাহ এবং এই অদম্য জাতির অনুসারীদের জন্য, এর আলেম এবং এর মুত্তাকিরা তাদের নিজেদের এসব বিষয়ে সম্পূর্ণ দৃঢ়বিশ্বাসী। কারণ তাদের কাছে সত্য মিথ্যা থেকে স্পষ্ট, যেমন সকাল মানুষের দু’চোখের জন্য পরিষ্কার। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার দ্বীনের যুক্তিভিত্তিক ও ওহীভিত্তিক বিষয়ে ভুল-ভ্রান্তি উপর একমত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সংঘাতের সময় তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন বিষয়টি তাঁর কাছে ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর উপর নেস্ত করে, যেমনটি এই আয়াতে বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যর্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।”[10]মাজমু আল ফাতাওয়া, ১/৯; উদৃত আয়াতটি সূরা নিসা আয়াত ৫৯

অনেকটা একই প্রকারের কথা ইবনে হাজম (রহ)-ও নিজের কিতাবে[11]তাদরিব আল রাউই, ২/১৫৯; আল ফিসাল ফি আল মিলাল ওয়া আল নিহাল, ২/৬৯, ৭০ ও ইবনে আরাবি নিজের কিতাবে[12]ফেহরেসুল ফাহারিস ১/৮০ বলেছেন।

সত্যতা জানার পাশাপাশি হাদিস সংগ্রহের এই পদ্ধতিটির আরেকটি সুবিধা আছে, কিছু হাদিস ব্যাখ্যা করা উপযোগী, এবং কিছু বর্ণনাকারী হাদীসের অর্থ বর্ণনা করতে পারেন, বা কিছু অংশ ব্যাখ্যা করতে পারেন এবং দেখা যায় বাকিগুলি অন্য একটি বর্ণনার শৃঙ্খলে থাকে। তাই ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ) বলেন:

الْحَدِيْث إذا لَمْ تجمع طرقه لَمْ تفهمه، والحديث يفسر بعضه بعضاً

হাদিসের বর্ণনাগুলো একত্রিত না হলে আপনি তা বুঝতে পারবেন না যে হাদীসগুলো একে অপরকে ব্যাখ্যা করে।[13]আল-জামি’ল-আখলাক আল-রাবী ২/২১২ (১৬৪০)

আল-হাফিজ আবু জারাহ আল-ইরাকী (রহ) বলেছেন,

الْحَدِيْث إذا جمعت طرقه تبين المراد مِنْهُ، وليس لنا أن نتمسك برواية ونترك بقية الروايات

কোন হাদীসকে তার পথে (সবগুলো সূত্রকে) একত্রিত করলে তার অর্থ স্পষ্ট হয়ে যায়, এবং একটি বর্ণনাকে আঁকড়ে ধরা এবং বাকী বর্ণনা ত্যাগ করা আমাদের জন্য নয়।[14]তারহ আল-তাসরিব ৭/১৮১

ইমাম মুসলিম (রহ) তার “আল-জামি’ আল-সহীহ” গ্রন্থের প্রস্তাবনায় বলেছেন:

 قَالَ الإمام مُسْلِم في ديباجة كتابه ” الجامع الصَّحِيْح “: وإنا نعمد إلى جملة ما أسند من الأخبار عن رَسُوْل الله صلى الله عليه وسلم فنقسمها عَلَى ثلاثة أقسام وثلاث طبقات من الناس عَلَى غَيْر تكرار، إلا أن يأتي موضع لا أستغني فِيْهِ عن ترداد حَدِيْث فِيْهِ زيادة معنى أَوْ إسناد يقع إلى جنب إسناد لعلة تكون هناك؛ لأن المعنى الزائد في الْحَدِيْث المحتاج إِلَيْهِ يقوم مقام حَدِيْث تام، فلابد من إعادة الْحَدِيْث الَّذِيْ فِيْهِ ما وصفنا من الزيادة، أو أن يفصل ذَلِكَ المعنى من جملة الْحَدِيْث عَلَى اختصاره إذا أمكن، ولكن تفصيله ربما عسر من جملته فإعادته بهيأته إذا ضاق ذَلِكَ أسلم

আল্লাহ চান তো হাদীস সংকলনের কাজে আমি একটি নীতি অবলম্বন করে এগিয়ে যাব। আর তা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে যে সব হাদীস অবিচ্ছিন্ন সনদ পরম্পরায় (মুত্তাসিল) বর্ণিত হয়ে আসছে, আমি শুধুমাত্র সেগুলো থেকেই সংকলন করব। অতঃপর বর্ণনাকারীদের তিনটি স্তর অনুযায়ী হাদীসগুলোকে পূরণ ছাড়া তিন ভাগে বিভক্ত করব বলে ইচ্ছা করেছি। তবে যদি কোন হাদীসের পুনরুল্লেখ অপরিহার্য হয়ে পড়ে তাহলে ভিন্ন কথা। এর দুটি কারণ-

প্রথমতঃ পরবর্তী বর্ণনায় কিছু বাড়তি বিষয় আছে।
দ্বিতীয়তঃ কোন বিশেষ কারণে একটি সনদের সমর্থনে আরেকটি সনদ আনার প্রয়োজন হয়। কেননা, একটি বর্ধিত বিষয় একটি পূর্ণ হাদীসে স্থলাভিষিক্ত হয় বলে পুনর্বার উল্লেখ করা প্রয়োজন। কিংবা যদি সম্ভব হয়, তাহলে আমরা এ বর্ধিত অংশটুকু সংক্ষিপ্ত আকারে পূর্ণ হাদীস থেকে পৃথক করে বর্ণনা করব। তবে অনেক সময় পূর্ণ হাদীস থেকে সে অংশ পৃথক করা কঠিন হয়ে পড়ে বলে পূর্ণ হাদীসটির পুনরাবৃত্তি করাই নিরাপদ।[15]সহীহ মুসলিম ১/৩ https://www.hadithbd.com/hadith/detail/?book=22&section=507 ; তাবিয়্যাত মুহাম্মাদ ফুয়াদ ১/৪-৫

সনদের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্যতা যাচাই এবং কিছু অভিযোগ ও তার জবাব

হাদিসের পদ্ধতির সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট বিবরণ উসুল রয়েছে, আলেমগণ ইসনাদ (বর্ণনাকারীদের শৃঙ্খল) এবং মতন (হাদীসের পাঠ্য) অধ্যয়ন করেন এবং এটি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করা হবে কিনা তা নির্ধারণ করেন। এই কারণেই ট্রান্সমিশনের চেইনটি প্রয়োজন যাতে নবী (ﷺ) এর সাথে এমন কিছু যোগ না করা যায়, যা উনার বক্তব্য নয়। এখানে হাদিস বিশারদগণ হাদিস গ্রহণের জন্য বর্ণনার শৃঙ্খলকে ভিত্তি বানিয়েছেন। একটি হাদিস গৃহীত হয় না যদি এটির পরিচ্ছন্ন শৃঙ্খল না থাকে। এর প্রথম কারণ হল একটি হাদিসের শৃঙ্খল থাকে যা থেকে কেউ নিশ্চিত হতে পারে যে এই হাদিসটি যার কাছে আরোপিত হয়েছে তার কাছ থেকে এসেছে। নবীর হাদিস থেকে মন্দকে দূর করার জন্য, সাহাবীদের সময় থেকে এটি হাদীস বিশারদদের দ্বারা ব্যবহৃত সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়।

এটি এমন একটি পদ্ধতি যা থেকে কেউ বর্ণনার সত্যতা, এর শর্ত, প্রকার ও বিধানগুলো জানতে পারে এবং জানতে পারে বর্ণনাকারীদের মর্যাদা এবং তাদের অবস্থা এবং বর্ণনাকারীদের ধরন এবং তাদের সাথে সম্পর্কিত সবকিছু।[16]তাদরিব আল রাবী শারহ তাকরীব আল-নওয়াবী, ১/৪০ এই পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থাৎ সনদের উপর ভিত্তি করে কীভাবে কোন ঘটনার সত্য মিথ্যা যাচাই করা হয় এটা অনেক অনেক বড় একটি টপিক যা এখানে বলে ‍বুঝানো সম্ভব না। এই বিষয়ে অনেক বড় বড় বইও রয়েছে, হাদিস শাস্ত্রে উসুলগুলো জানতে গেলেই ভালো ভাবে বিষয়টা বুঝতে পারবেন। তারপরও ছোট করে কয়েকটা কথা বলি বুঝানোর জন্য,

সনদে সকল রাবী পরিচিত কিনা, সনদের রাবীদের স্মৃতিশক্তি কখন কেমন ছিল, স্মৃতিশক্তি কতটা শক্তিশালী, তারা সত্যবাদী কিনা, তারা মিথ্যা বানোয়াট কাহিনি বলতো কিনা, হাদিস জাল করার কোন প্রমাণ রয়েছে কিনা, হাদিস বর্ণনায় ভুল করত কিনা, তাদের সত্যবাদিতা কি রকম, তাদের কার যোগ্যতা কেমন, সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে কিনা, সনদে কোন রাবী অন্য রাবীর নাম গোপনকারী কিনা, সনদের রাবীদের যে সিরিয়াল তা অনুসারে বাস্তবে তাদের মাঝে সাক্ষাৎ হয়েছিল কিনা, কোন রাবী সনদ বা মতন উলটা পালটা করে ফেলতো কিনা, তারা ব্যক্তি হিসেবে কেমন ছিল, তার উস্তাদ ও ছাত্র কারা কারা ছিল, কেমন আকিদা পোষণ করত, কোরআন ও শক্তিশালী কোন প্রমাণের বিরুদ্ধে যায় কিনা, সমার্থক হাদিস রয়েছে কিনা, রাবী নিজের কথা হাদিসের মতনে প্রবেশ করিয়েছে কিনা ইত্যাদি বহু কিছু বিচার বিবেচনায় এনে তারপর ইসলামে কোন হাদিস বা ঘটনা সত্য ও কোনটা সত্য নয় তার ফয়সালা দেওয়া হয়। বিষয়টা সংক্ষেপে দেখে খুব সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু যখন আরো বিস্তারিত পড়ে দেখবেন তখন বুঝতে পারবেন এর বিশালতা আরো কত বেশি। আরো বহু কিছু রয়েছে যা দুই একটা কথা বলে বুঝানো এত সহজ নয়।

এখন কাফেরদের অনেকে বলতে পারে বা বলেছে মুহাদ্দিসরা নিজেদের পরিচিত রাবীদের বেলায় পক্ষপাতিত্ব করে থাকতে পারে, কিন্তু আমরা রিজালশাস্ত্র ও মুহাদ্দিসগণের করা জারাহ দেখলেই বুঝতে পারি যে মুহাদ্দিসগণ হাদিস নিয়ে এত বেশি কঠোর ছিলেন যে নিজের বন্ধু, নিজের আপন ভাই, নিজের আপন পিতাকে পর্যন্ত হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে জয়িফ, মুনকার, মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করতে দ্বিধা বোধ করেন নি। তারা কখনোই অন্যায় ভাবে পক্ষপাতিত্ব করতেন না।[17]আল-মাজরুহিন ২/১৫; শরফ আসহাব আল-হাদীস ৪১; আল-জারহ ওয়াল-তা’দীল ২/২৮৯; আল-তানকিল ১/৫৪ এমনকি আকিদায় ভিন্ন হওয়া শর্তেও শিয়া রাবীকে হাদিস বর্ণনায় সত্যবাদী, বিশ্বস্ত বলতেও পিছপা হননি।[18]তাহদীব আল-কামাল ১০/৪১৪; ইবনে খুযায়মাহ তার সহীহ ২/৩৭৬ কিন্তু তারপরও যদি কেউ ভুল করে বা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে কোন রাবীর নামে ভুল কোন আরোপ করেও থাকে তাহলেও অন্য মুহাদ্দিসগণ সেটাকে গ্রহণ না করে যেটা সঠিক সেটাই গ্রহণ করতেন।[19]আল-রাফ’ ওয়াল-তাকমীল ৪০৯-৪৩২; শরফ আসহাব আল-হাদীস ৪৩; আল-মুকিজাহ ৮৪

আল্লামা আল-মুয়াল্লিমি (রহ) বলেনঃ

يقول العلامة المعلمي رحمه الله:
“ولكن هل راعوا العقل في قبول الحديث وتصحيحه؟
أقول: نعم، راعوا ذلك في أربعة مواطن: عند السماع، وعند التحديث، وعند الحكم على الرواة، وعند الحكم على الأحاديث.
فالمتثبتون إذا سمعوا خبرا تمتنع صحته أو تبعد لم يكتبوه ولم يحفظوه، فإن حفظوه لم يحدثوا به، فإن ظهرت مصلحة لذكره ذكروه مع القدح فيه وفي الراوي الذي عليه تبعته. قال الإمام الشافعي في الرسالة (ص399): وذلك أن يستدل على الصدق والكذب فيه بأن يحدث المحدث ما لا يجوز أن يكون مثله أو ما يخالفه ما هو أثبت أو أكثر دلالات بالصدق منه

কিন্তু তারা কি কোন হাদীস গ্রহণ করার সময় এবং এটিকে সঠিক হিসাবে বিবেচনা করার সময় যুক্তির প্রতি মনোযোগ দিয়েছে?

আমি বলছি: হ্যাঁ, তারা চারটি বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছিল: যখন তারা হাদীসটি শুনেছিল, যখন তারা এটি বর্ণনা করেছিল, যখন তারা বর্ণনাকারীদের উপর রায় দিয়েছিল এবং যখন তারা হাদিসের উপর রায় দিয়েছিল।

এই ক্ষেত্রে সুদক্ষ পণ্ডিতরা যখন এমন একটি প্রতিবেদন শুনতেন যা ভালো হতে পারে না, বা খুব ভাল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না, তখন তারা এটি লিখে রাখতেন না বা মনে রাখতেন না, এবং যদি তারা এটি মনে রাখতেন তবে তারা এটি অন্যদের কাছে বর্ণনা করতেন না।

যদি কোন স্বার্থ থাকে যা এটি উল্লেখ করে হাসিল করা যেতে পারে, তবে তারা তা উল্লেখ করবে এবং প্রতিবেদনের সমালোচনা করে এবং বর্ণনাকারীর দোষ উল্লেখ করে দিবেন (যেন অন্যরা) তা অনুসরণ করে। ইমাম আশ-শাফায়ী (রহ) আর-রিসালায় (পৃ. ৩৯৯) বলেছেন: একজন বর্ণনাকারী সত্য বলছেন বা মিথ্যা বলছেন কিনা তা নির্দেশ করতে পারে যখন একজন বর্ণনাকারী এমন একটি প্রতিবেদন বর্ণনা করেন যা সত্য হতে পারে না, বা এটি অন্য কোনও প্রতিবেদনের বিপরীত যা আরও খাঁটি, বা এটি প্রমাণ করার জন্য আরও প্রমাণ রয়েছে।[20]আরশীফ মুলতাক্বা আহলিল হাদীছ-২, ৩৩/৭৫; আল-আনওয়ার আল-কাশিফাহ, পৃ. ৬-৭

তিনি আরো বিস্তারিত আলোচনা করতে গিয়ে অনেকটা এমন কিছু বলেছেন (নিজের মত করে উপস্থাপন করলাম), বর্ণনাকারীদের মধ্যে এমন একদল আছে যারা যা শোনে এবং বর্ণনা করে সে সম্পর্কে খুব নমনীয়, কিন্তু ইমামগণ (শীর্ষস্থানীয় আলেমরা) বর্ণনাকারীদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। আপনি যে হাদিসগুলো গ্রহণযোগ্য নয় সেই ইসনাদে এক বা দু’জন বর্ণনাকারী বা একদল বর্ণনাকারী পাবেন যাদের বিষয়ে মুহাদ্দিসিনদের জারাহ রয়েছে। আমরা দুর্বল বর্ণনাকারীদের জীবনীতে বা ত্রুটিপূর্ণ এবং বানোয়াট প্রতিবেদনের কথা বলে এমন বইগুলিতে অর্থাৎ রিজাল শাস্ত্রে এটি প্রচুর পরিমাণে পাই, যাদের সমালোচনা করেছেন ইমামরা ও কার বর্ণনা কেন গ্রহণযোগ্য নয় তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। যেসব আলেম হাদীস পরীক্ষা করেছেন তারা বর্ণনাকারীকে বিশ্বাসযোগ্য বলে গণ্য করতেন না যতক্ষণ না তারা তার বর্ণিত হাদীসগুলোকে একে একে পরীক্ষা করে না দেখেন।

হাদীসের সঠিকতা যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আলেমগণ অত্যন্ত মনোযোগী, কঠোর ও সতর্ক ছিলেন। যে সকল নেতৃস্থানীয় পণ্ডিতগণ হাদীসগুলি পরীক্ষা করেছিলেন তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে তাদের মধ্যে এমন কিছু হাদীস রয়েছে যা কিছু কালাম এবং তাদের অনুসারীদের পক্ষে গ্রহণ করা হয়তো কঠিন হতে পারে, তবে তারা সেগুলিকে ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারে বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি অনুসারে বলে মনে করেছেন এবং তা গ্রহনযোগ্য হওয়ার অন্যান্য সমস্ত শর্ত পূরণ করেছিল। তাছাড়া, তারা কোরানে এমন অনেক আয়াত খুঁজে পেয়েছে যা এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বা একই ধারণার কথা বলে। এটি কালামের পণ্ডিতদের পক্ষে মেনে নেওয়াও কঠিন, তবে হাদীস বিশারদরা জানেন যে নবী (ﷺ) কুরআনে বিশ্বাস করতেন এবং অনুসরণ করতেন, তাই এটি খুব সম্ভব যে তিনি এমন কিছু বলবেন যা কোরআনে যা আছে তার অনুরূপ অর্থ বহন করে।[21]আল-খতীব আল-কিফায়াহ ফী ইলম আর-রিওয়ায়াহ, পৃ. ৪২৯; আল-আনওয়ার আল-কাশিফাহ, পৃ. ৬-৭

বহু প্রাচ্যবিদের দাবি হাদিস বিশারদগণ নাকি হাদিস গ্রহণের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব করেছেন, যে হাদিসগুলো নিয়ে সমালোচনা বা আপত্তি উঠতে পারে সেই হাদিসগুলো নাকি মুহাদ্দিসগণ লুকিয়ে গেছেন এবং নিজের সার্থের হাদিসগুলোর ত্রুটিও নাকি লুকিয়েছেন। এই দাবিটি কতটা হাস্যকর তা কল্পনাতীত। কারণ যারা ইসলামের ইতিহাস লিখেছে মানে হাদিস বিশারদগণ যারা ইতিহাস লিখছেন তারা যদি পক্ষপাত করতেন তাহলে স্যাটানিক ভার্স ও সূরা নাজমের সিজদার বিতর্কিত কাহিনি ইসলামের কোন ইতিহাসের পাতাতেই থাকত না। যদিও কাহিনিগুলো সত্য নয় তা প্রমাণিত। ঠিক একই ভাবে আরো আরো বলা যায় যেমন ইসলামিক লেখকগণ অমুসলিমদের বহু অভিযোগের জবাব দিয়ে থাকেন হাদিস সম্পর্কিত, অনেক যয়িফ ও জাল হাদিস দেখিয়েও অমুসলিমরা বিভিন্ন অভিযোগ করে থাকে। যদি ইতিহাস সংগ্রহে পক্ষপাতিত্ব করা হত তাহলে এইসব একটাও হাদিস যেগুলো নিয়ে অমুসলিমরা অভিযোগ করে সেগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যেত না। শুধু এই একটি বিষয় দ্বারাই প্রথম অভিযোগটি খণ্ডন হয়ে যায়। আর তাদের দ্বিতীয় অভিযোগটি দেখে মনে হচ্ছে যে সকল হাদিস বিশারদই সম্ভবত নিজের সার্থ হাসিলের মত কোন হাদিস সর্বপ্রথম পাওয়া মাত্রই দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে একত্র হয়ে একই সময়ে একই বিষয়ে সকলে যুক্তি পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সকলেই ত্রুটিযুক্ত হাদিসটির ত্রুটি লুকিয়ে যাবেন ও কেউ কোন কিতাবে সেই ত্রুটি উল্লেখ করবেন না। মানে এই যাবতীয় চিন্তা আসেও কী করে মাথায়! এই দাবিটির মত কিছু ঘটা যে অসম্ভবই তা একদম কমনসেন্স বিষয়। কারণ আপনারা নিজেরাই একটু নিজের মস্তিষ্ক ব্যবহার করে চিন্তা করলেই উপলব্ধি করতে পারবেন।।

হাদিস শরিফের জন্য রেওয়ায়েত (বর্ণনা) পরীক্ষার সর্বোত্তম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। সূক্ষ্মতা ও সাফল্যের বিচারে পাশ্চাত্যের আধুনিকতম ইতিহাস পরীক্ষার পদ্ধতিও এর সঙ্গে তুলনীয় নয়। হাদিস বিশারদগণ সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্মভাবে যাচাই বাছাই করে অনুপ্রবেশকৃত মিথ্যা বর্ণনা কর্তন করে বিশুদ্ধ বর্ণনা আমাদের জন্য কিতাব আকারে সাজিয়ে রেখে গেছেন।মুহাদ্দিসগণ কতটা কঠোর ছিলেন হাদিস সংগ্রহ ও বর্ণনার বেলায় তা কল্পনাও করা যায় না। মুহাদ্দিসগণের মাঝে কঠিন নীতি ছিল যেন জেনে শুনে অগ্রহণযোগ্য হাদিসকে সহিহ না বলা হয়।[22]মাওকিফুল আকলি ওয়াল ইলমি ওয়াল আলম ৪/৮৭; সহিহ মুসলিম ১/৭ (ভূমিকায় ইমাম মুসলিম)। হাদিস কার থেকে বর্ণনা করা হচ্ছে সেই বিষয়ে যত কঠোর ছিলেন মুহাদ্দিসগণ ঠিক তেমনই কার থেকে ইলম নিচ্ছে সেই বিষয়েও কঠোর ছিলেন, কারণ মুহাদ্দিসগণের মতে জ্ঞানই হল ধর্ম, তাই সে কেমন, আকিদা কি, গ্রহণযোগ্য কিনা, সত্যবাদী ও হকের উপর আছে কিনা, দলিল দিয়ে ভুল সুধরানোর মনমানসিকতা রাখে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে সতর্ক থাকতেন ও থাকতে উপদেশ দিতেন। কার থেকে হাদিস শুনছেন সেই দিকে খেয়াল রাখতেন, সনদ না উল্লেখ করলে উনারা সেই হাদিস গ্রহণ করতেন না, এমনকি কেউ সনদ না দিতে চাইলে তার থেকে হাদিসও গ্রহণ করতেন না আর। হাদিস বিশারদদের দক্ষতা, সততা, যোগ্যতা, মেহনত, প্রচেষ্টা নিয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিরা নিশ্চিন্ত ছিলেন।[23]সহীহ মুসলিম, মুহাম্মাদ ফুয়াদ আবদেল বাকী দ্বারা সম্পাদিত, (বৈরুত: দার ইহিয়া আল-তুরাথ আল-আরাবি, ১২৭৪?/১৯৫৫ খ্রি.), ১ম সংস্করণ, ১/১৪; মুকাদ্দিমা সহিহ মুসলিম … See Full Note

৯৭ হিজরিতে জন্ম নেওয়া বিখ্যাত ইমাম সুফিয়ান আস সাওরী (রহ) এর মুখ থেকেই এই ইসনাদ পদ্ধতি ও রিজালশাস্ত্রের সফলতা সম্পর্কে শুনে নেওয়া যাক। তিনি বলেন,

عندما اخترع الكذابون أسانيد كاذبة استخدمنا ضدهم تاريخ الرواة

“যখন মিথ্যাবাদীরা মিথ্যা প্রমাণ তেরি করেছিল, তখন আমরা তাদের বিরুদ্ধে বর্ণনাকারীদের ইতিহাস ব্যবহার করেছি।[24]উসূল মানহাজ আল নাকদ আনদ আহলুল হাদিস, পৃ. ৮০

জানেন কেন এত কঠোরতা? কারণ মুসলিমদের মনে আখিরাতের ভয় রয়েছে ও আল্লাহর রহমত রয়েছে। হাদিস সংকলনের পদ্ধতির বেলায় সকল কার্যক্রম, সতর্কতা কোরআন ও সুন্নাহর দিক-নির্দেশনা অনুসারেই অবলম্বন করা হয়েছিল।[25]হাদীসের বিশুদ্ধতা যাচাই: রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশ ও সাহাবীগণের কর্মপদ্ধতি আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির (রহ) স্যারের হাদিসের সনদ, মৌখিক বর্ণনা ও পাণ্ডুলিপি নির্ভরতা নিয়েও একটি আর্টিক্যাল রয়েছে। চাইলে সেটাও পড়ে দেখতে পারেন।[26]হাদীসের সনদ: মৌখিক বর্ণনা বনাম পাণ্ডুলিপি নির্ভরতা

অপর দিকে অমুসলিমদের থেকে পাওয়া ইতিহাস কেমন? আশা করি আপনারা খুব ভালো করেই জানেন যে তাদের ইতিহাসের সত্যতা প্রমাণের তেমন কোন আহামরি শক্তিশালী ভিত্তি নেই। বেশির ভাগ ইতিহাসই ঘটনা ঘটে যাওয়ার বহু বছর পরে লিখিত হয়, এমন রেকর্ডও আছে মূল ঘটনার ২.৫-৩ শত বছর পরে যেহে সেই ঘটনার বিষয়ে অফিসিয়ালি লিপিবদ্ধ করা শুরু হয়েছিল, ইনশাআল্লাহ এই বিষয়ে পরবর্তিতে কোন সময় বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। অপর দিকে ইসলামে পুরো সুগঠিত একটি সিস্টেম তৈরি হয়েছে ইতিহাস রিজার্ভ করতে গিয়ে, যার সত্যতা প্রমাণের সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি রয়েছে। যদি ইসলামের ইতিহাসের উপর কেউ প্রশ্ন তুলে তারাও কেউ অমুসলিমদের ইতিহাসকে সত্য বলার মত কোন ভিত্তিই দেখাতে পারবে না।

এখন হয়তো অনেকেই বলতে পারে বর্তমানেও তো তাহলে কেউ সনদ বানিয়ে কোন হাদিস বর্ণনা করতে পারবে! পয়েন্টটা ঠিক কিন্তু এখানেও কিছু বিষয় লক্ষণীয়। কেউ যদি বর্তমানে কোন জাল হাদিস বানায় ও জাল সনদ বানায় তাহলেও সেটা ধরা পরে যাবে, কারণ সেই সনদের ধারাবাহিকতা, রাবীদের যোগ্যতা ইত্যাদিতো সুস্পষ্ট করে লিখাই রয়েছে রিজালশাস্ত্রে। জাল হাদিস বানাতে গেলেই কোন না কোন দিক দিয়ে চরম সমস্যার সম্মুখীন হতেই হবে। তারপরও আলোচনার সাপেক্ষে মনে করে নিচ্ছি কেউ রিজাল শাস্ত্রের উপর উচ্চতর দক্ষতা অর্জন করে এমন বানোয়াট সনদ তৈরি করল যাতে কোন ত্রুটি নেই, তাহলেও হাদিসটি যে জাল তা ধরা পরে যাবে। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে সেটা কি করে! এর উত্তর একদমই সহজ, কেউ যদি কোন সনদে কোন হাদিস বর্ণনা করে নিশ্চয় সেটা কোন না কোন প্রাচীন হাদিস গ্রন্থে থাকবেই। যদি কোন কিতাবেই তার উল্লেখ না থাকে তাহলে সহজই প্রমাণিত হয়ে যাবে হাদিসটি বানোয়াট। কারণ বর্তমান যুগ অতিতেই সেই হাদিস সংকলনের যুগের মত নয় যেখানে নতুন নতুন সনদে হাদিস বর্ণিত হচ্ছে, সেহেতু অতীতের কোন হাদিস শাস্ত্রের কিতাবে যদি তা উল্লেখ না থাকে তাহলে সেই সনদ যে বানোয়াট সেটা খুব সহজেই প্রমাণিত হয়ে যায়।

এখন কেউ এটাও বলতে পারে যে অতিতেওতো তাহলে জাল সনদ বানানোর সুযোগ ছিল! এই কথাটাও চরম বাস্তব এমনকি এই কাজ বহু হাদিস জালকারী করেছেও, আপনারা যদি জাল হাদিস নিয়ে যে কিতাবগুলো রচিত হয়েছে সেগুলো পড়ে দেখেন তাহলে সেখানেই প্রমাণ পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ সেগুলোও খুব সহজে বের করতে সক্ষম ছিলেন। কারণ হাদিস সাধারণ যেকোনো মানুষ থেকে গ্রহণ করা হত না, এবং সাধারণ যেকোনো মানুষ হাদিস গ্রহণ ও বর্ণনা করলেও তা গ্রহণযোগ্য হতোই না, যাদের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যেত যে হাদিস শিক্ষা গ্রহণ করেছে ও হাদিসের রাবী সে তাহলেই তাদের থেকেই হাদিস গ্রহণ করা হত। আর হাদিস গ্রহণ করার পূর্বেই বা পরে ওলামাগণ সেই রাবীর বিস্তারিত বায়োডাটা খুঁজে বের করে ফেলতেন যার মাধ্যমে তারা সেই রাবীর আচার-আচরণ, কর্মকাণ্ড, আকিদা, অভ্যাস, চরিত্র, সততা সম্পর্কে খুব সহজেই জেনে যেতেন। সেই রাবী যদি এর আগেও একই কাজ করে থাকে ও সেই সময়ে তাকে যে মুহাদ্দিস দেখেছেন উনার জারাহ থেকেও তার জালিয়াতি সম্পর্কে জানতে পারা যায়। এছাড়া তারা যে রাবীদের নামে বানোয়াট সনদ তৈরি করছে তারা যদি সমসাময়িক হতেন অর্থাৎ জীবিত থাকতেন তাহলেতো তারাই স্বীকারোক্তি দিয়ে দিতেন যে হাদিস বানোয়াট। আর কোন রাবী যদি বানোয়াট সনদ তৈরি করে তাহলে আরেকটা সমস্যা থাকে যে, সে যার কাছ থেকে বর্ণনা করেছে সেই লোকটির সাথে যে হাদিস জালকারীর বাস্তবে সাক্ষাৎ হয়েছে তা অনেক ক্ষেত্রেই প্রমাণ করতে পারে না। আরো বহু কথা বলা সম্ভব যে কীভাবে বানোয়াট সনদ যে বানোয়াট সেটা মুহাদ্দিসগণ বুঝে যেতে পারতেন, কিন্তু লিখা এমনিতেই অনেক বড় হয়ে গিয়েছে বিধায় এই বিষয়ে আর কথা বাড়াচ্ছি না।

আবার আরেকটি অভিযোগ দেখা যায় যে সকল হাদিস নাকি রাসুলের দুই থেকে আড়াইশত বছর পরে সংকলিত করা হয়েছে, এটাই নাকি প্রমাণ করে হাদিস সংকলনের পদ্ধতির দুর্বলতা। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে যারা এই অভিযোগ করে থাকে তারা যে চরম অজ্ঞ তা হয়তো তারা নিজেরাও কখনো উপলব্ধি করতে পারেন নি।

এর কারণ হল আমরা অতীতের বহু কিতাব থেকে জানতে পারি ‘সহিফায়ে সাদিকা’ নামক হাদিস সংকলনের কিতাব সম্পর্কে যা লিখেছেন আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা), ‘সহিফা হাম্মাম ইবনে মুনাব্বিহ’ যা আবু হুরায়রা (রা) এর ছাত্র হাম্মাম ইবনে মুনাব্বিহ সংকলন করেন। তিনি ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ এর ভাই ছিলেন। সেই হিসেবে হাদিস গ্রন্থটি হিজরী ৫৮ সালের আগেই সংকলিত। এছাড়া আরেক সাহাবি আবু মুসা আল আ-আশআরী (রা) হতেও একটি সহিফার কথা জানা যায় যার নাম হল ‘সহীফা আবু মূসা আল আশ‘আরী’। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) হতেও ‘সহীফা জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ’ নামে একটি হাদিস সংকলনের কিতাব সম্পর্কে জানা যায়। এছাড়া সাহাবিদের থেকে আরো কিছু হাদিসের সংকলন পাওয়া যায় সেগুলো হল, ‘সহীফাতু সাদ ইবনে উবাদা’, ‘সহীফা আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা’, ‘সহীফা আবু সালামা আল আশজাঈ’, ‘কিতাবুচ্ছাকাহ’, ‘সহীফায়ে আমর ইবনু হাযম’, ‘সহীফায়ে আ’লী’, ‘সহীফায়ে ওয়ায়েল ইবনু হুজর’, ‘সহীফায়ে সামুরা ইবনু জুনদাব’, ‘সহীফায়ে আনাস ইবনু মালেক’, ‘সহীফায়ে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস’, ‘সহীফায়ে উমর ইবনুল খাত্তাব’, ‘সহীফায়ে উসমান’, ‘সহীফা আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ’, ‘মাজমুয়া মুগিরা ইবনে শুবা’ ‘মুসনাদু আবু হুরায়রা’, ‘রেওয়ায়েতে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা’, ‘মাকতুবাতে হযরত নাফে’, ‘সহীফায়ে বশীর ইবনু নাহীক’ ইত্যাদি।[27]বিস্তারিত জানতে বিভিন্ন হাদিস সংকলন বিষয়ে কিতাবসমূহ দেখতে পারেন

এগুলো ছাড়াও হাদিস গ্রন্থসমূহের মধ্যে ইমাম মালিকের (৭১১–৭৯৫ খ্রি.) “মুয়াত্তা” সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান প্রামাণ্য হাদীসগ্রন্থ। তিনি প্রায় একলক্ষ হাদীস থেকে প্রায় একহাজার নয়শ হাদীস সংকলন করেছেন। এর পূর্বে ইমাম আবু হানীফা (৬৯৯-৭৬৭ খ্রি.) দেশ-দেশান্তরে সফর করে ৪০ হাজার থেকে সহীহ ও আমলযোগ্য আহকামের হাদীসগুলো বাছাই করে তিনি একটি হাদীসের কিতাব লিখেন, যার নাম কিতাবুল আছার। আল জামে সুফিয়ান সওরী, মুসনাদে উবাইদুল্লাহ ইবনে মুসা, মুসনাদুল হুমাইদী, মুসনাদে মুসাদ্দাদ ইবনে মাসারহাদ, মুসনাদ আবূ দায়ূদ তায়ালিসী ইত্যাদি হাদিসগ্রন্থ এগুলো ইমাম বুখারির অনেক অনেক আগে লিখা হয়েছে। এগুলো প্রায় ১০০ থেকে ২০০ হিজরির মধ্যে লিখা হয়েছে। যদিও বহু মুসান্নাফ, সহিফা, মুসনাদ বা হাদিস সংকলনের কিতাব সমূহ কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে কিন্তু তারপরও আমরা সেগুলোর অস্তিত্ব থাকার কথা পরবর্তী ওলামাদের কিতাবাদিতেই পেয়ে যাই, এমনকি সাহাবাদের সংকলিত বহু হাদিসের কিতাব থেকে হাদিস পরবর্তীতে মুসনাদে আহমদ, মুসতাদরাকে হাকেম, মুসান্নাফে আবি শায়বা, মুসনাদ আল বাজ্জার, সহিহ ইবনে খুজাইমার মত প্রাচীন হাদিস গ্রন্থে সংকলন করা হয়েছিল।

ইসলামী রাষ্ট্রের বিভিন্ন কেন্দ্রে হাদীস সংকলন ও গ্রন্থ প্রণয়ন ও ফিকহি বিষয়ে কাজ করেছেন ও বিভিন্ন কিতাব লিখেছেন করেছেন, তাদের মধ্যে খুব পরিচিত কিছু মনীষি হলেন – মক্কা শরিফে ইবনে জুরাইজ (মৃঃ ১৫০ হিঃ); মদিনায় ইবনে ইসহাক (১৫১ হিঃ) ও ইমাম মালিক (১৭৯ হিঃ); বসরায় রুবাই ইবনে সুবাইহ (১৬০ হিঃ), সায়ীদ ইবনে আবূ আরুবা (১৫৬ হিঃ) ও হাম্মাদ ইবনে সালমা (১৭৬ হিঃ); কূফায় সুফিয়ান আস-সওরী (১৬১ হিঃ); সিরিয়ায় ইমাম আওযায়ী (১৫৬ হিঃ); ওয়াসত-এ হুশাইম (১৮৮ হিঃ); ইয়েমেন মা’মার (১৫৩ হিঃ); এবং খোরাসানে জরীর ইবনে আবদুল হামীদ (১৮৮ হিঃ); আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রা) (১৮১ হিঃ), আবদুল্লাহ ইবনে ওহাব (১৯৫ হিঃ); আবদুর রহমান ইবনুল কাসেম (১৯১ হিঃ) ও আশহুব (২০৪ হিঃ), ইসহাক ইবনে রাহওয়াই (২৩৮ হিঃ), ইমাম শা’বী (১০৪ হিঃ), হুশাইম ইবনে বশীর ইবনে আবূ হাযেম (১৮৩ হিঃ), আবদুর রাযযাক ইবনে হাম্মাম আসসানআনী (২৩৫ হিঃ), মা’মার ইবনে রাশিদ (১৫৪ হিঃ), আদ-দারিমী (২৫৫ হিঃ), ইমাম মকহুল ইন্তেকাল করেন ১৩৪, আর ইমাম যুহরীও এই ১২৩-২৫ হিজরী সনের মধ্যে কোন এক সময় ইন্তেকাল করেন।[28]হাদীস সংকলনের ইতিহাস, মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) (পৃ. ৩৪-৪০)

ইসনাদের পদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন জনের নিরপেক্ষ মন্তব্য

আশা করি এতক্ষণের আলোচনায় বেশ কিছু বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে, বেশ কিছু জিনিসের জবাব দেওয়া হয়ে গিয়েছে। চলুন এইবার ইসনাদের এই পদ্ধতি সম্পর্কে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে কিছু বক্তব্য দেখে আসি ও সেগুলো বুঝার ও উপলব্ধি করার চেষ্টা করি।

খতিব আল বাগদাদি (রহ) লিখেছেন,

والبحث في الإسناد مهم جداً في علم الْحَدِيْث، من أجل التوصل إلى مَعْرِفَة الْحَدِيْث الصَّحِيْح من غَيْر الصَّحِيْح، إِذْ إنّه كلما تزداد الحاجة يشتد نظام المراقبة، فعندما انتشر الْحَدِيْث بَعْدَ وفاة النَّبِيّ صلى الله عليه وسلم اشتد الاهتمام بنظام الإسناد، وعندما بدأ السهو والنسيان يظهران كثر الالتجاء إلى مقارنة الروايات، حَتَّى أصبح هَذَا المنهج مألوفاً معروفاً عِنْدَ الْمُحَدِّثِيْنَ؛ إِذْ إنه لا يمكن الوصول إلى النص السليم القويم إلا عن طريق البحث في الإسناد، والنظر والموازنة والمقارنة فِيْمَا بَيْنَ الروايات والطرق.

من هنا ندرك سر اهتمام الْمُحَدِّثِيْنَ بِهِ، إذ جالوا في الآفاق ينقّرون أَوْ يبحثون في إسنادٍ، أَوْ يقعون عَلَى علة أَوْ متابعة أَوْ مخالفة، وكتاب

ভুল হাদিস থেকে সহিহ হাদিসকে আলাদা করার জন্য হাদিসশাস্ত্রে ইসনাদ (চেইন অব ট্রান্সমিশন) নিয়ে গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যখন দরকার বাড়ে তখন এই গবেষণা/বিশ্লেষণ/পর্যবেক্ষণও জোরদার হয়।  রাসূল (সাঃ) এর মৃত্যুর পর যখন হাদিসগুলো প্রচারিত হওয়া শুরু করলো, ছড়িয়ে পড়া শুরু করলো, এবং তার মধ্যে অনেকের ভুলে যাওয়া কিংবা কনফিউশন সৃষ্টি হওয়া আরম্ভ হলো, অনেকেই যখন বর্ণনাগুলোর মধ্যে তুলনা করতে আরম্ভ করলেন তখন এই ইসনাদ ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহ তীব্রতর হলো লোকেদের। কারণ সনদ খোঁজা, বিশ্লেষণ, বর্ণনা ও পদ্ধতির তুলনা করা ছাড়া হাদিসের সঠিক শব্দে [বর্ণনায়] পৌঁছানো সম্ভব নয়।

আমরা এখান থেকে বুঝতে পারি মুহাদ্দিসগণের আগ্রহের রহস্য কী। তারা হাদিসের সনদের দুনিয়ায় বিচরণ করতেন, যদি সমস্যা/বৈপরিত্য/বিচ্ছিন্নতা থাকতো তাঁরা নিজেদের কিতাবে তা উল্লেখ করতেন।[29]আরশীফ মুলতাক্বা আহলিল হাদীছ-২, ২০/৩৭২ পৃ.

ইবনে আস সালাহ (রহ) বলেছিলেন,

” হাদিস বিজ্ঞানটি (সংকলনের পদ্ধতি) পুণ্যবিজ্ঞানের সর্বোত্তম এবং বিভিন্ন শাখার মধ্যে সর্বাধিক উপকারী। হাদিস বিজ্ঞানের ভূমিকা প্রভাবশালী। “এটি পুরুষদের মধ্যে সম্ভ্রান্তদের দ্বারা পছন্দ করা হয় এবং ভুল ও সম্পূর্ণ বৃত্তি প্রাপ্তদের থেকে সঠিক যাচাইয়ের সাথে সম্পর্কিত সেই আলেমদের প্রতি ঝোঁক রয়েছে; কেবল অবজ্ঞাহিত এবং এটিকে অপছন্দকারী কেবল তারাই। তাদের বিভিন্ন শাখায় অন্যান্য বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটি বিশেষত বিস্তৃত বিজ্ঞান, বিশেষত আইনশাস্ত্রে তাদের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।”[30]আল সালাহ, উম্মুল হাদিস (দারুল ফিকর), পৃষ্ঠা ৫

আবু আব্দুল্লাহ আল হাকিম (রহ) বলেন,

لو لا الإسناد وطلب هذه الطائفة له، وكثرة مواظبتهم على حفظه، لدرس منار الإسلام، ولتمكن أهل الإلحاد والبدع منه بوضع الأحاديث، وقلب الأسانيد، فإن الأخبار إذا تعرت عن وجود الأسانيد فيها كانت بترا

যদি ইসনাদ না থাকত, এবং এই দলটি (মুহাদ্দিসগণ) সেগুলো তালাশ না করতেন, এবং এটি ধারাবাহিকভাবে এটি মুখস্ত না করত, আর বেশী বেশী উল্লেখ না করতেন তাহলে ইসলামের আলো নিশ্চিহ্ন হয়ে মিটে যেতো এবং কাফের ও বিদাতিরা মিথ্যা হাদীস তৈরী করে মিথ্যুকরা পার পেয়ে যেতো এবং হাদীসের সনদগুলো উলোট পালোট হয়ে যেতো। আর এভাবেই বিদআতিরা বাতিলের ওপর বিজয়ী হতো। কেননা হাদীসকে যদি সনদের প্রয়োজনীয়তা থেকে বিমুখ করে দেয়া হয় তাহলে সে হাদীস ভিত্তিহীন হয়ে যায়।[31]মা’রিফাতু উলুমিল হাদীস লিল হাকীম, পৃষ্ঠা ৪০; সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৫/৪৫২

হাঙ্গেরিয়ান ওরিয়েন্টালিস্ট ডা. এলায়স স্প্রেংগার আল-ইসাবার লিখেন,

“মুসলিমদের মহাকৃর্তি তাদের এই জীবনিশাস্ত্র, পৃথিবীতে অতীতের কোনো সম্প্রদায় এমন ছিল না, আজও নেই, যারা মুসলমানদের মতো ১২ শতাব্দি ধরে প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তির ‘আসমাউর রিজালে’র (বর্ণনাকারীদের জীবনি শাস্ত্র) সুবিশাল শাস্ত্র লিপিবদ্ধ করেছে। যদি মুসলিমদের রচিত জীবনচরিত গুলো সংগ্রহ করা হয় আমরা খুব সম্ভবত তার মাধ্যমে আজ পাঁচ লাখ মানুষের জীবনি সম্পর্কে জানা যেতে পারে, দেখা যাবে একটা দশকও নেই এবং এমন একটা স্থানও নেই যা কৃতিপুরুষের জন্ম দেয়নি।”[32]খুতবাতে মাদরাস, পৃষ্ঠা ৪৫

ডঃ হুমাম সাঈদ বলেছেন:

সুতরাং এটি আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে হাদিস বিশারদদের পদ্ধতি একটি কুরআনের পদ্ধতি যা কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে উদ্ভূত, এবং এটি একটি সমালোচনামূলক পদ্ধতি যা ঐতিহাসিক প্রতিবেদনগুলির সাথে সম্পর্কিত; অন্য কথায়, এটি সমালোচনামূলকভাবে পরীক্ষা না করে একটি বর্ণনা করা হাদিস গ্রহণ করা হয় না, এবং এই হাদিসটি গ্রহণ করার জন্য কোনও পণ্ডিত বা সম্মানিত ব্যক্তির কাছ থেকে বর্ণনা করা যথেষ্ট নয়। বরং এটি অপরিহার্য যে রিপোর্টটি যিনি বলেছিলেন তার অ্যাট্রিবিউশনটি প্রমাণ করা উচিত, এবং এটি প্রমাণিত নীতি এবং সাধারণ নির্দেশিকাগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য এটি পুরোপুরি এবং সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করা উচিত।

ঐতিহাসিক প্রতিবেদনের সাথে সম্পর্কিত এই সমালোচনামূলক পদ্ধতিটি তওরাত এবং গসপেলের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত ছিল এবং ইসলামের আগে সমস্ত ঐতিহাসিক বিবরণের ক্ষেত্রে এটি অনুপস্থিত ছিল। অতঃপর ইসলাম বিশ্বকে এই সঠিক পদ্ধতি প্রদান করেছে যার ভিত্তি গবেষণা, পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা এবং সঠিক চিন্তার উপর ছিল। চার্লস গুইনেভার ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি সমালোচনামূলকভাবে পরীক্ষা করার এই পদ্ধতিটিকে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা খ্রিস্টানদের পদ্ধতির সাথে তুলনা করেছিলেন, যা কোনও আলোচনা বা সমালোচনামূলক পরীক্ষা ছাড়াই পূর্ববর্তী প্রজন্মের প্রতিবেদনগুলি গ্রহণ করে।

অনেক গবেষক পবিত্র কুরআন এবং হাদীস বিজ্ঞানের মধ্যে এই পদ্ধতিগত সংযোগকে উপেক্ষা করেছিলেন, এই পরিমাণে যে অনেকে ভেবেছিলেন যে হাদিস পণ্ডিতদের পদ্ধতিটি এক ধরনের অতুলনীয় প্রতিভার ফলাফল এবং এটি কেবল প্রয়োজনের কারণে বিকশিত হয়েছিল। কিন্তু যে সত্য নিয়ে সন্দেহ করা যায় না তা হলো, হাদীস পণ্ডিতদের পদ্ধতি কুরআনের একটি পদ্ধতি এবং এটি এই ধর্মের অলৌকিক প্রকৃতির অন্যতম বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ যেমন তাঁর পবিত্র কিতাবকে কোন পরিবর্তন বা পরিবর্তন থেকে রক্ষা করেছেন, তেমনি তিনি সুন্নাহকে সামগ্রিকভাবে সংরক্ষণ করেছেন এবং এটিকে বিলুপ্ত হওয়া এবং ভুলে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।[33]আল-ফিকর আল-মানহাজি ‘ইন্দা আল-মুহাদ্দী’ন পৃ. ২৪

ড. খালদুন আল-আহদাব বলেছেন:

উসুল আল-হাদীসের বিকাশ ছিল যৌক্তিক ভিত্তিতে। যদি তা না হত, তাহলে মুসলিম মন গঠনে এটি কখনোই এত বড় প্রভাব ফেলতে পারত না।

উসুল আল-হাদীসের এই যৌক্তিক বিকাশ শুরু হয় পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ-এ বর্ণিত পদ্ধতিগত ও যৌক্তিক নীতি থেকে, যার উপর ভিত্তি করে বর্ণনাকারী এবং তিনি যা বর্ণনা করেছেন তা পরীক্ষা করা, যার উপর ভিত্তি করে উসুল আল-হাদীসের বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত।

জ্ঞানের এই শাখার বিকাশের প্রতিনিধিত্ব করা যেতে পারে এই কারণে যে হাদিস পণ্ডিতরা একটি হাদিস পরীক্ষা করার সময় যুক্তির দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন, চারটি পর্যায়ে এটি কতটা সঠিক তা দেখার জন্য, যেমনটি মহান পণ্ডিত এবং সমালোচক আবদুর রহমান আল-মুয়াল্লিমি আল-ইয়ামানি বলেছিলেন।[34]আতহার ইলম উসুল আল-হাদীস ফি তাশকিল আল-আকল আল-মুসলিম, পৃ. ১৯

ডক্টর ‘আব্দুল্লাহ দাইফুল্লাহ আর-রুহাইলি বলেছেন:

রিপোর্ট যাচাইয়ের বিষয়ে একাডেমিক গাইডলাইন, আমাদের মুসলমানদের মতে – যেমন হাদীস বিশারধগণের পদ্ধতির ক্ষেত্রে – অদৃশ্যের উপর বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে নয়, যেমন এই রহস্যময় পদ্ধতি একটি বর্ণনা সঠিক কিনা তা নির্ধারণের জন্য অন্যতম নির্দেশিকা হতে পারে;  বরং এগুলি হল যুক্তিসঙ্গত নির্দেশিকা যা যুক্তি, প্রমাণিত ঐতিহাসিক তথ্য, প্রতিবেদনের তুলনা বা অন্যান্য নির্দেশিকা বিবেচনা করে যা হাদিস পণ্ডিতরা একটি প্রতিবেদনের সত্যতার প্রমাণ বা প্রমাণের বিষয়ে বিকশিত করেছেন।

এই নির্দেশিকাগুলি, যেমন আমরা তাদের বর্ণনা করেছি, যুক্তিসঙ্গত এবং সাধারণ জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে, যেন সমস্ত মানুষ – বা প্রায় সমস্ত মানুষ – তাদের ধর্ম বা সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে তাদের বুঝতে এবং গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। উদাহরণস্বরূপ, বর্ণনাকারীদের একটি বিঘ্নিত শৃঙ্খল সহ একটি প্রতিবেদন এমন বিষয় যা সমস্ত সুস্থ মনের লোকেরা সন্দেহ করবে এবং এর কারণে এটি গ্রহণ করবে না। কারণ প্রতিবেদনের উৎসে ফিরে যাওয়ার জন্য বর্ণনাকারীদের কোনও একটি ধারাবাহিক শৃঙ্খল নেই, এবং যদি তা উপলব্ধ না হয়, তবে কীভাবে ধারণা করা যায় যে প্রতিবেদনটি সঠিক?

মানুষের মন একটি প্রতিবেদনের একদিকে নিশ্চিত হওয়া, এবং অন্যদিকে এটি সম্ভাবনা হতে পারে বা নিছক সম্ভাবনার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। অতএব, এই প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই যা বলে যে, একটি প্রতিবেদন যাচাই করার ক্ষেত্রে হাদিস বিশারদদের দৃষ্টিভঙ্গি কোন একাডেমিক পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে? এটি কি বৈজ্ঞানিক-ভিত্তিক পদ্ধতি, নাকি এটি একটি রহস্যময়, বিশ্বাস-ভিত্তিক পদ্ধতি? কারণ অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস প্রতিবেদন পরীক্ষা ও যাচাই, তারপর তা গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা পালন করে না। যাইহোক, বিশারদদের পদ্ধতির এই দিকটি প্রতিবেদন যাচাই করার সাথে সম্পর্কিত এবং এটি ব্যক্তিগত মতামত বা অদৃশ্যের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে নয়।[35]হিওয়ার হাওলা মনহাজ আল-মুহাদ্দিসীন ফি নাকদ আর-রিওয়ায়াত সানাদন ওয়া মাতনান, পৃ. ১২-১৩

রেজা আসলান শ্যাচের ম্যাক্সিমামের উদ্ধৃতি দিয়েছেন:

`ইসনাদ যত বেশি নিখুঁত, পরবর্তী ঐতিহ্য – যাকে তিনি (আসলান)”মনস্তাত্ত্বিক কিন্তু নির্ভুল” বলে অভিহিত করেছেন।[36]No God But God : The Origins, Evolution, and Future of Islam by Reza Aslan, (Random House, 2005) p.163

ইংলিশ ওরিয়েন্টালিস্ট ডেভিড স্যামুয়েল মার্জোলিওথ বলেন :

মুসলিমদের কাছে ইসনাদ নামের সুসংহত যে ঐতিহ্য আছে, এটা নিয়ে অবশ্যই তারা গর্ব করার অধিকার রাখে’।[37]আল মাকালাত আল-ইলমিয়্যাহ ২৩৪-২৫৩

অস্ট্রিয়ান প্রাচ্যবিদ স্প্রেনজার( Aloys Sprenger) লেখেন –

’হাদিস সংকলনের ইতিহাস শুধু মুসলিমদের নয়; বরং গোটা মানব ইতিহাসের এক বিশাল অর্জন। কারণ, বিশ্ব সভ্যতার সামনে মুসলিমরাই কেবল এমন এক জাতি, এক ব্যক্তি (মুহাম্মাদ (ﷺ) )-এর কথা সংকলন করতে যাদের অর্ধ মিলিয়ন (পাচ লাখ) মানুষ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন। আজ আমরা চাইলেই এ সকল মনীষীর জীবনের আদ্যোপান্ত ইতিহাস বইয়ের পাতায় পাতায় জ্বলজ্বল করতে দেখি…’ (সারসংক্ষেপ)[38]১৮৫০ সনে হাফেয ইবনে হাজার (রহ) লিখিত আল ইসাবা গ্রন্থটি সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশ কালে কিতাবটির ভূমিকায় লিখেন

অনেকে বহু সমালোচনাও পেশ করতে পারে, আমার জানা রয়েছে ভালো করেই। কিন্তু বিষয় সেটা নয়, তাদের সমালচনাগুলো যদি একটু ভালো করে পড়ে বুঝার চেষ্টা করা হয় তাহলে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে অধিকাংশ সমালোচনা হাদিস শাস্ত্র সম্পর্কে চরম অজ্ঞতা থাকার দরুন করা হয়েছে। উদাহরণ সরূপ বলি একজন এই পদ্ধতির পক্ষে বলার পর আবার সম্ভাবনার ভিত্তিতে ইসলামের বহু হাদিস বানোয়াট ছিল এই মন্তব্য করেছে।

প্যাট্রিসিয়া ক্রোন উল্লেখ করেছেন যে,

প্রাথমিক ঐতিহ্যবাদীরা এখনও বর্ণনার শৃঙ্খল (ইসনাদ) পরীক্ষা করার পদ্ধতি গুলি বিকাশ করছিল যার পরবর্তী মানগুলি ঐতিহাসিক উপাদানগুলির কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও স্কেচ/ঘাটতিযুক্ত ছিল। পরে যদিও তারা অনবদ্য শৃঙ্খল ধারণ করেছিল, তবে বানোয়াট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল।[39]Patricia Crone, Roman, Provincial and Islamic Law (1987/2002 paperback), pp. 23–34, paperback edition

এছাড়া বহু ভবিষ্যৎবানীকে বহু পাশ্চাত্যবিদ রাজনীতির সাথে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গরা তৈরি করেছে বলেও মন্তব্য করেছে। অথচ সেইসব হাদিসের বর্ণনা দেখলে দেখা যায় ভবিষ্যদ্বাণীর শত শত বছর আগে হাদিসটি বর্ণনা করা হয়েছে। এমনই ভাবে সমালোচকদের প্রতিটা সমালোচনার জবাব একটা একটা করে দেওয়া সম্ভব। এমনকি এই লিখায়ও বেশির ভাগ সমালোচনা ও অভিযোগেরই জবাব দেওয়া হয়ে গিয়েছে।

হাদিস অস্বীকারকারীদের জবাবে ২০ টি বই, যা আপনাকে হাদিসের সনদ বা ইসনাদ সম্পর্কে জানতে আর সাহায্য করবে ইংশা-আল্লাহ,

  1. ইলমে হাদিসের গুরুত্ব ও মর্যাদা, লেখক:শাইখ নাসেরুদ্দিন আল আলবানী
    https://drive.google.com/file/d/1WVssHtSO7MdTNyD2p9G_NEME6UhbEcZa/view?usp=drivesdk
  2. হাদিসের প্রামাণিকতা, লেখক : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
    https://drive.google.com/file/d/14XdiiCT1RDjqJ_Y8VYeOpPfV3Nv22aG8/view?usp=drivesdk
  3. হাদিসের প্রমাণিকতা, লেখক: ড. আসাদুল্লাহ আল গালিব
    https://drive.google.com/file/d/1CkdPNJxqa0dhXex-T7XoNvPYHcZKMmOT/view?usp=drivesdk
  4. কুরআন ইতিহাস হাদীস, লেখক: সৈয়দ ওয়ালিউল আলম
    https://drive.google.com/file/d/1AuLwoRTtsGdOwZbmUTwV1ooEDF4dHoTa/view?usp=drivesdk
  5. সুন্নাহ্’র আইনগত মর্যাদা, লেখক: জাস্টিস মুহাম্মদ তাকি ওসমানি
    https://freepdfboi.com/sunnahr-ayingoto-morzada-free-pdf-download/
  6. হাদিস অস্বীকারকারীদের সংশয় নিরসন, লেখক: আহমদ আব্দুল্লাহ সাকিব।
    https://drive.google.com/file/d/1fh4QtKiLNvtt9DxP9gknyxl7mVXtJqpc/view?usp=drivesdk
  7. আমরা হাদীছ মানতে বাধ্য, লেখক: আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক
    https://drive.google.com/file/d/172spj0eX1evoQBmExUzuQ0jX9-ZKjKZz/view?usp=drivesdk
  8. হাদিস নিয়ে বিভ্রান্তি, লেখক: ড. আ.ছ.ম. তরীকুল ইসলাম
    https://drive.google.com/file/d/1X4BhTGfA8vUsYbOW_vm3rkmxBrLfBykf/view?usp=drivesdk
  9. কোরআন হাদিস সংকলনের ইতিহাস, লেখক: এ কে এম এনামুল হক
    https://app.box.com/s/abm40cwnprjhjqxfktdu8qirzgdks60l?fbclid=IwAR0PjTZUtPHoA4HO73tt39r0Jg1QqlFNaRlNVEO1ZDJVTqZxHAmNRv9Sb-w
  10. হাদিস সংকলনের ইতিহাস, লেখক: মাওলানা মোহাম্মাদ আব্দুর রহিম
    https://www.mediafire.com/download/882dc1f57ytc2xp/Hadith+Sonkoloner+Itihas.pdf
  11. হাদীস কেনো মানতে হবে?, লেখক: কামাল আহমাদ
    https://drive.google.com/file/d/0BwKyqP3jTIdNWjluOTBEZHVydWs/view?usp=drivesdk&resourcekey=0-Zo4wwFqFzgf2pKijq70b3Q
  12. হাদিস কি আল্লাহর ওয়াহী? কোরআন কি বলে…, লেখক: মুহাম্মাদ ইকবাল বিন ফাখরুল
    https://drive.google.com/file/d/1Pco4R6y_7SXBMw1LAh_Aodxoz1Cq0rVx/view?usp=drivesdk
  13. হাদীসের তত্ত্ব ও ইতিহাস, লেখক: নুর মোহাম্মদ আজমি
    https://drive.google.com/file/d/1IWthZ7hLkKNd8z-nlqwPcAePcrGDi_cs/view?usp=drivesdk
  14. হাদিসের পরিচয় , লেখক:জিলহজ আলী
    https://drive.google.com/file/d/1K2jtXYlvW3G2eezvR84OpCtxT8BSxfPh/view?usp=drivesdk
  15. হাদীস ও সুন্নাহর মূল্যমান, লেখক: আব্দুল হামিদ ফাইযী
    https://drive.google.com/file/d/1dL_VqHvSHYsYJohKHPk-JXU463SxeecD/view?usp=drivesdk
  16. হাদীস শাস্ত্রের ইতিহাস, লেখক: মুফতী আমীমুল ইহছান
    https://drive.google.com/file/d/1sLTmB-Oi5tervxkumFC0lV2j43wyb4z9/view?usp=drivesdk
  17. হাদীস শাস্ত্রের পরিভাষা পরিচিতি, লেখক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
    https://drive.google.com/file/d/1IKy6oAEfHQuootnEM1vQQ2l-Wfx3vT5V/view?usp=drivesdk
  18. হাদীসের পরিভাষা, লেখক: ড.মাহমুদ আত-তাহহান
    https://drive.google.com/file/d/1pbWAefuUCAnhnq3i80ziLT4kN0XeI0nn/view?usp=drivesdk
  19. হাদীসের বিশুদ্ধতা নিরূপণ প্রকৃতি ও পদ্ধতি, লেখক: ড. মুহাম্মদ বেলাল হোসেন
    https://drive.google.com/file/d/1n2tWx9lzUR2uPzqapn3GzXp0vprMhZti/view?usp=drivesdk
  20. উসুলে হাদিস, লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ আমীন আছারী
    https://t.me/frommuslims_archive/123

    Footnotes

    Footnotes
    1তাদরিব আল রাউই, ২/১৬০; তাদকিরাত আল-হুফ্ফাজ লিল-ধাহাবী ৪/১২৩৩-৩৪
    2মুকাদ্দিমা সহিহ মুসলিম, ১/১২
    3জামি’ আল-উসুল ১/৯ – ১০
    4ফাতহুল মুগীস, ৩/৫; আল ইসনাদু মিনাদ্দিন, পৃষ্ঠা ৯৬
    5ফাইফুল কাদির, ১/৪৩৩; শারাফু আসহাবিল হাদিস-৪২
    6উসূল মানহাজ আল নাকদ আনদ আহলুল হাদিস, পৃ. ৬১
    7আল-ইলমা’ ১৯৪
    8শারাফু আসহাবিল হাদিস-৪০; ফাতহুল মুগহিত, ৩/৩
    9আল মাজরুহীন লি ইবন হিব্বান, ১/৩০
    10মাজমু আল ফাতাওয়া, ১/৯; উদৃত আয়াতটি সূরা নিসা আয়াত ৫৯
    11তাদরিব আল রাউই, ২/১৫৯; আল ফিসাল ফি আল মিলাল ওয়া আল নিহাল, ২/৬৯, ৭০
    12ফেহরেসুল ফাহারিস ১/৮০
    13আল-জামি’ল-আখলাক আল-রাবী ২/২১২ (১৬৪০)
    14তারহ আল-তাসরিব ৭/১৮১
    15সহীহ মুসলিম ১/৩ https://www.hadithbd.com/hadith/detail/?book=22&section=507 ; তাবিয়্যাত মুহাম্মাদ ফুয়াদ ১/৪-৫
    16তাদরিব আল রাবী শারহ তাকরীব আল-নওয়াবী, ১/৪০
    17আল-মাজরুহিন ২/১৫; শরফ আসহাব আল-হাদীস ৪১; আল-জারহ ওয়াল-তা’দীল ২/২৮৯; আল-তানকিল ১/৫৪
    18তাহদীব আল-কামাল ১০/৪১৪; ইবনে খুযায়মাহ তার সহীহ ২/৩৭৬
    19আল-রাফ’ ওয়াল-তাকমীল ৪০৯-৪৩২; শরফ আসহাব আল-হাদীস ৪৩; আল-মুকিজাহ ৮৪
    20আরশীফ মুলতাক্বা আহলিল হাদীছ-২, ৩৩/৭৫; আল-আনওয়ার আল-কাশিফাহ, পৃ. ৬-৭
    21আল-খতীব আল-কিফায়াহ ফী ইলম আর-রিওয়ায়াহ, পৃ. ৪২৯; আল-আনওয়ার আল-কাশিফাহ, পৃ. ৬-৭
    22মাওকিফুল আকলি ওয়াল ইলমি ওয়াল আলম ৪/৮৭; সহিহ মুসলিম ১/৭ (ভূমিকায় ইমাম মুসলিম)।
    23সহীহ মুসলিম, মুহাম্মাদ ফুয়াদ আবদেল বাকী দ্বারা সম্পাদিত, (বৈরুত: দার ইহিয়া আল-তুরাথ আল-আরাবি, ১২৭৪?/১৯৫৫ খ্রি.), ১ম সংস্করণ, ১/১৪; মুকাদ্দিমা সহিহ মুসলিম ১/১২; আল মুহাদ্দিস আল ফাসিল, পৃষ্ঠা ২০৯; সুয়ূতী, জালালুদ্দীন আব্দুর রাহমান, তাদরীবুর রাবী ২/১৬০; যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল ১/৩৪৪; সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৬/৭১; মা’রিফাতু উলুমিল হাদীছ, ৩৬ পৃষ্ঠা
    24উসূল মানহাজ আল নাকদ আনদ আহলুল হাদিস, পৃ. ৮০
    25হাদীসের বিশুদ্ধতা যাচাই: রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশ ও সাহাবীগণের কর্মপদ্ধতি
    26হাদীসের সনদ: মৌখিক বর্ণনা বনাম পাণ্ডুলিপি নির্ভরতা
    27বিস্তারিত জানতে বিভিন্ন হাদিস সংকলন বিষয়ে কিতাবসমূহ দেখতে পারেন
    28হাদীস সংকলনের ইতিহাস, মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) (পৃ. ৩৪-৪০)
    29আরশীফ মুলতাক্বা আহলিল হাদীছ-২, ২০/৩৭২ পৃ.
    30আল সালাহ, উম্মুল হাদিস (দারুল ফিকর), পৃষ্ঠা ৫
    31মা’রিফাতু উলুমিল হাদীস লিল হাকীম, পৃষ্ঠা ৪০; সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৫/৪৫২
    32খুতবাতে মাদরাস, পৃষ্ঠা ৪৫
    33আল-ফিকর আল-মানহাজি ‘ইন্দা আল-মুহাদ্দী’ন পৃ. ২৪
    34আতহার ইলম উসুল আল-হাদীস ফি তাশকিল আল-আকল আল-মুসলিম, পৃ. ১৯
    35হিওয়ার হাওলা মনহাজ আল-মুহাদ্দিসীন ফি নাকদ আর-রিওয়ায়াত সানাদন ওয়া মাতনান, পৃ. ১২-১৩
    36No God But God : The Origins, Evolution, and Future of Islam by Reza Aslan, (Random House, 2005) p.163
    37আল মাকালাত আল-ইলমিয়্যাহ ২৩৪-২৫৩
    38১৮৫০ সনে হাফেয ইবনে হাজার (রহ) লিখিত আল ইসাবা গ্রন্থটি সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশ কালে কিতাবটির ভূমিকায় লিখেন
    39Patricia Crone, Roman, Provincial and Islamic Law (1987/2002 paperback), pp. 23–34, paperback edition
    Show More
    5 1 vote
    Article Rating
    Subscribe
    Notify of
    guest
    0 Comments
    Inline Feedbacks
    View all comments
    Back to top button