কুরআননাস্তিক্যধর্ম

আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? – আরেকটি অযৌক্তিক প্রশ্ন

“আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?”
– এই প্রশ্নটি আমাদের লাইনের কমবেশি সবাই শুনেছে। নাস্তিকদের এই প্রশ্ন কমনলি করতে চায়। এই প্রশ্ন যে ইনভ্যালিড, তা যে তারা জানে না এমন নয়, তারা এটি ইচ্ছা করেই করে স্বল্প বোঝা লোকদের বিভ্রান্ত করার জন্য।
আসুন আগে দেখি এই প্রশ্নের যৌক্তিকতা।
এই ধরনের প্রশ্নকে বলা হয় Loaded Question Fallacy[1]Loaded Question Fallacy
আগে একটা বিষয়কে স্বীকার করে নিয়ে এই প্রশ্নটা করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ(আগেও দেখেছেন):
প্রশ্নঃ আপনি কি আপনার বউ পেটানো বন্ধ করেছেন?
সম্ভাব্য উত্তরঃ হ্যা অথবা, না।
আপনি যদি বলেন হ্যা, তাহলে এর মানে আগে বউ পেটাতেন এখন বন্ধ করেছেন।
যদি বলেন না, তাহলে আগেও+এখনো পেটান।
কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে আপনি কখনোই বউ পেটান নি।
এই প্রশ্নে আগেই ধরে নেওয়া হয়েছে “আপনি আগে বউ পেটাতেন”।
আমাদের আলোচ্য প্রশ্নেও ধরে নেওয়া হয়েছে ” আল্লাহকে কেউ না কেউ তো সৃষ্টি করেছে” – কিন্তু এই দাবি কতটুকু সত্য?
যারা এই ধরনের প্রশ্ন করে তাদের থেকে এই স্বীকার্যের সত্যতা জানতে চাই। তারা সত্য প্রমাণ করুক।
তারপরেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে।
আমি আমার দিক থেকে দু-একটি লজিক দেই।

এক

“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়।”[2]আল-ক্বুরআন, সূরা আশ-শুরা, আয়াত ১১ এর অংশবিশেষ
আমরা মানুষরা সৃষ্ট, কিন্তু আল্লাহ তো আমাদের মতো হতে পারেন না। তিনি সৃষ্ট নন।
এই আয়াতটাই যথেষ্ট।

দুই

যদি আল্লাহকে কেউ সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে এই প্রশ্নও আসবে তাকে কে সৃষ্টি করেছে? আবার তাকে কে সৃষ্টি করেছে?
এরকমভাবে এই প্রশ্ন অতীতে অসীমে/ইনফাইনিটিতে চলতে থাকবে।
তাহলে আপনার অস্তিত্ব কীভাবে আসলো? আপনি কী করে আমার পোস্ট পড়ছেন? আপনি তো তাহলে ইনফাইনিটিতে অবস্থান করছেন!
আদৌ কি এটি সম্ভব?
আপনার অস্তিত্বই ‘আল্লাহকে কেউ সৃষ্টি করেছে’ এই ধারণাকে অস্বীকার করে।

তিন

মনে করি, আল্লাহকে “X” নামক একজন সত্তা সৃষ্টি করেছেন। (এবার ইনিফাইনিটির দিকে না গিয়ে চেষ্টা করবো)।
আল্লাহ এবং X এর শক্তির তুলনা করা যাক।
সম্ভাব্য তুলনা সমূহঃ
১. আল্লাহর থেকে X বেশি শক্তিশালী।
২. আল্লাহ এবং X এর শক্তি সমান।
৩. X এর থেকে আল্লাহর শক্তি বেশি।
এগুলো বিবেচনা করে দেখা যাক।
~
প্রথম ধারণাটি সঠিক না।
কারণ, আল্লাহ সর্বশক্তিমান। [3]আল-ক্বুরআন ৫৪:৫৫, ২:২০, ২:১০৬, ২:১০৯, ২:১৪৮, ২:২৮৪, ৩:২৬ ইত্যাদি।
একইভাবে দ্বিতীয় ধারণাটিও সঠিক নয়।
তবে দ্বিতীয় ধারণাটি এভাবেও নাকচ করা যায়,
“যদি আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে বহু উপাস্য থাকত তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত।” [4]আল-ক্বুরআন ২১:২২
“আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই। (যদি থাকত) তবে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত; তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র!” [5]আল-ক্বুরআন ২৩:৯১
প্রথম দুটি ধারণাই যেহেতু ভুল সেহেতু এই দুটি ধারণার উপর ভিত্তি করে বলা যায় না X আল্লাহকে সৃষ্টি করেছে।
তৃতীয় ধারণাটি সঠিক, কিন্তু এই ধারণার উপর ভিত্তি করে আল্লাহর স্রষ্টা X হতে পারে না।
কারণ এখানে X আল্লাহর মধ্যে থাকা অতিরিক্ত ধরণের শক্তিটা পেলো কোথা থেকে দেওয়ার জন্য?
যদি কোনোভাবে (অসম্ভব) দিয়েও দেয়, এর মাধ্যমে তো X তার স্রষ্টাত্ব হারালো! X কি তাহলে বুদ্ধিহীন?
অতএব বলা যায়, X অবাস্তব। X থাকতে পারে না। আল্লাহর কোনো সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারে না।
বর্তমানে এই প্রশ্ন কখন করা হয়?
সাধারণত, যখন বলা হয় আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ দাও।
যখন বিশ্বাসীরা বলে শূণ্য থেকে বাহ্যিক কোনো হাত ছাড়া এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব।
তখনই অবিশ্বাসীরা ফট করে বলে, তাহলে আল্লাহ ‘এলো’ কীভাবে/কখন? আল্লাহকে কে ‘সৃষ্টি’ করেছে? এইসব অবাস্তব প্রশ্ন!
উত্তম প্রশ্ন জ্ঞানের অর্ধেক।
পুনশ্চঃ কমেন্টে আবার আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ চাইয়েন না। এটা এই পোস্টের বিষয়বস্তু নয়। এই প্রশ্নটা আল্লাহর অস্তিত্ব আছে ভেবেই করা হয়

আরও পড়ুনঃ

    Footnotes

    Footnotes
    1Loaded Question Fallacy
    2আল-ক্বুরআন, সূরা আশ-শুরা, আয়াত ১১ এর অংশবিশেষ
    3আল-ক্বুরআন ৫৪:৫৫, ২:২০, ২:১০৬, ২:১০৯, ২:১৪৮, ২:২৮৪, ৩:২৬ ইত্যাদি।
    4আল-ক্বুরআন ২১:২২
    5আল-ক্বুরআন ২৩:৯১
    Show More
    0 0 votes
    Article Rating
    Subscribe
    Notify of
    guest
    0 Comments
    Inline Feedbacks
    View all comments
    Back to top button