ইসলামবিরোধীদের প্রতি জবাব

আয়িশা (রাঃ) কি ৯ বছরে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছুন নি? – সাথে বিভ্রান্তির জবাব

Contents Hide

কাফের প্রশ্ন ও কুযুক্তিঃ

১. আয়িশা (রাযিঃ) কি নয় বছর বয়সে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছিলেন? এর প্রমাণ কী?

২. তাহলে তিনি নয় বছরে নিজের সাথে পুতুল রেখেছিলেন কীভাবে? যেহেতু বয়ঃসন্ধির পর পুতুল রাখা/খেলা হারাম সেহেতু তিনি সেসময় বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছুন নি!

৩. ইবনে হাজার (রহঃ) বলেছেন আয়িশা (রাঃ) ১৪-১৬ বছরেও বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছুন নি। অতএব পৌঁছুন নি।

৪. সেসময় সবাই ‘বাল্যবিবাহ’ করতো, সেই কারণে মুহাম্মদ (সঃ)-এর ‘বাল্যবিবাহ’ সমর্থণ একটা ফ্যালাসি। নাহলে এই যুক্তিতে বলা যায় খ্রিস্টানদের মুসলিমহত্যাও নৈতিকভাবে সমর্থিত।

৫. মুহাম্মদ (সাঃ)-দেনমোহরের অভাবে আয়িশা (রাঃ)-কে ঘরে আনতে পারেন নি। নইলে ছয় বছরেই সহবাস করে ফেলতেন!

৬. মুহাম্মদ (সাঃ) কোলের বাচ্চার প্রতি যৌনভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন – অতএব তিনি পেডোফাইল!

উত্তরঃ

১. আয়িশা (রাঃ) ৯ বছরে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছিলেন তার প্রমাণ কী?

যেটা স্বাভাবিকভাবেই ঘটে থাকে সেটার আলাদা প্রমাণের দরকার হয় না। বরং সেটাকে Disprove করতে হয়। সে সময়ের আরব অঞ্চলের জলবায়ু, লোকজনদের সম্পর্কেই জানা যায় যে ৯ বছরে মেয়েদের বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছুনো খুবই স্বাভাবিক ও নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিলো।

وعن الشافعي، قال: رأيت باليمن بنات تسع يحضن كثيراً ইমাম আল শাফেঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি ইয়েমেনে নয় বছর বয়সী মেয়েদের দেখেছি যাদের অধিকাংশই ঋতুবতী হয়েছিলো। সিয়ার আ’লম আল-নুবালা’ ১০/৯

يَعْنِي الْمَهَالِبَةَ امْرَأَةً صَارَت جدة وَهِي بنت ثَمَان عَشْرَةَ سَنَةً وَلَدَتْ لِتِسْعِ سِنِينَ ابْنَةً فَوَلَدَتِ ابْنَتُهَا لِتِسْعِ سِنِينَ ابْنَةً فَصَارَتْ هِيَ جَدَّةً وَهِيَ ابْنَةُ ثَمَانِي عَشْرَ سَنَةً. আব্বাদ ইবনে আব্বাদ আল-মুহলবি বলেছেন, “আমি মুহলাবাহতে একজন মহিলাকে দেখেছি যিনি ১৮ বছর বয়সে নানি হয়েছেন। তিনি তার নয় বছর বয়সে জন্মদান করেছেন (তার মেয়েকে) এবং তার মেয়ে তার সন্তানকে জন্ম দিয়েছে নয় বছর বয়সে, এভাবেই সেই মহিলা ১৮ বছরে নানি হয়ে গিয়েছেন।”তাহক্বীক ফি হাদিস আল-খলিফ ২/২৬৭-২৬৮

ইমাম আল-শাফেঈ (রহঃ) বলেছেন, আমি সানা’আ শহরে (ইয়েমেনের) এক মহিলাকে ২১ বছরে নানি হতে দেখেছি। ৯ বছরে সে ঋতুবতী হয়, আর ১০ বছরে সন্তান জন্ম দেয়। সুনানুল কুবরা আল-বায়হাক্বী ১/৩১৯

ঐতিহাসিক প্রমাণ হিসেবে এগুলোই যথেষ্ট।

জার্মানির গাইনোকোলোজিস্ট হার্মান হেনরিচ প্লস, ম্যাক্স বার্টেলস এবং পৌল বার্টেলস বিভিন্ন জাতির মহিলাদের উপর অনুসন্ধান করেছেন। তাদের ফলাফলগুলো “Das Weib in der Natur- und Völkerkunde : anthropologische Studien von Dr H. Ploss” বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে ১৮৮৫ সালে। যার ইংরেজি অনুবাদ “Woman : an historical, gynæcological and anthropological compendium” প্রকাশিত হয়েছে ১৯৩৫ সালে। সেখান থেকে প্রাসঙ্গিক অংশঃ

Woman : an historical, gynæcological and anthropological compendium vol 1 page 563
দেশভেদে বয়ঃসন্ধির বয়স

এখানে তারা তাদের পর্যবেক্ষণলব্ধ উপাত্ত উল্লেখ করলেন, শৈত্য অঞ্চলের মেয়েদের ঋতু শুরু হয় গড়ে ১৪ তে, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ১২-১৩, উষ্ণ অঞ্চলে ৮-১০। এ অংশগুলোও উল্লেখযোগ্যঃ

…The average yearly temperature of the country or province is considered the chief factor here, not only with regard to menstruation, but as regards the whole sexual develop ment at puberty… …the nearer the Equator, the earlier the average age for menstruation… Woman : an historical, gynæcological and anthropological compendium / by Hermann Heinrich Ploss, Max Bartels and Paul Bartels ; edited by Eric John Dingwall., vol 1, page 563

তারা তাপমাত্রাকে একটি ফ্যাক্টর হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এখন কেউ এটা অস্বীকার করার জন্য বলতে পারেন, বর্তমান বিজ্ঞানীরা তাপমাত্রার সাথে ঋতুর সম্পর্ক খুঁজে পান নি। – এরকম কথা যারা বলেন, তারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞ। কারণ “cause” খুঁজে না পাওয়া পর্যবেক্ষণলব্ধ উপাত্তকে নাকোচ করতে পারে না। গ্র‍্যাভিটন কণা খুঁজে না পাওয়া মহাকর্ষ বলকে নাকোচ করতে পারে না, আপনি ওজন অনুভব করতে পারেন।

আরেকটি উষ্ণ অঞ্চল আলজেরিয়ার সাম্রাজ্যের ইতিহাস নিয়ে ফ্রেঞ্চ ঐতিহাসিক Laugier de Tassy তার ১৭২৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত Histoire du royaume d’Alger বইয়ে উল্লেখ করেছেনঃ

আলজেরিয়াতে বিবাহের বয়স

On marie les garçons quelquefois à l’âge de quatorze à quinze ans, & les filles à l’âge de dix & même de huit ans. On en a vu enfanter à onze, à dix & même à neuf ans, suivant le rapport des gens du pays.

ইংরেজি অনুবাদঃ Boys are sometimes married at the age of fourteen to fifteen, and girls at the age of ten and even eight. We have seen them give birth at eleven, at ten and even at nine years old, according to the report of the people of the country. Histoire du royaume d’Alger by Laugier de Tassis, 1724, page 61

১৯৩৬ সালে প্রকাশিত ‘যৌনবিজ্ঞান‘ বইয়ে উল্লেখ আছেঃআয়িশা (রাঃ) কি ৯ বছরে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছুন নি? - সাথে বিভ্রান্তির জবাব

আয়িশা (রাঃ) কি ৯ বছরে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছুন নি? - সাথে বিভ্রান্তির জবাব

সূত্রঃ আবুল হাসানাৎ, যৌনবিজ্ঞান, পৃ ১৬৭-১৬৮, প্রথম প্রকাশ- ১৯৩৬, প্রকাশক—বীরেশ্বর চক্রবর্তী , স্ট্যাণ্ডার্ড পাবলিশার্স  ৬, এণ্টনী বাগান লেন  কলিকাতা-১

Ploss & Bartels এর রিসার্চ আগেই উল্লেখ করেছি। এখানে দ্বিতীয় পয়েন্টটা দেখানো যায়।

  • Breast Development  অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েদের বয়ঃসন্ধির প্রথম চিহ্ন। সূত্রঃ Sciencedirect
  • পূর্ণভাবে সম্পন্ন হতে শীতপ্রধান দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েদের ১৭-১৮ বছর লেগে যায়। সূত্রঃ Texus Childrens

তাহলে সেই হিসেবে আরব/কুর্দ/ইরাক অঞ্চলের মেয়েদের মহিলা হয়ে যাওয়ার সময়টা অনেক তাড়াতাড়ি আসে।

আমরা উপরের রেফারেন্সগুলো উল্লেখ করলাম ঐতিহাসিক দিক বিবেচনা করে। কারণ আমরা এখানে প্রাচীন আরবের কথা আলোচনা করছি। তাই সেই সময়ের কাছাকাছি রেফারেন্সই অধিক বিবেচ্য। ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর পর্যবেক্ষণের বিপরীতে তাঁর পরের পর্যবেক্ষণ গ্রহণযোগ্য নয়। Ploss & Bartels এর (১৮৮৫)-উপাত্তের বিপরীতে এর পরের গুলো গ্রহণযোগ্য নয়।

বর্তমানকালেও মেয়েদের বয়ঃসন্ধি শুরুর বয়স ৮-১৩ বছর ধরা হয় (সারাবিশ্বে গড়ে)। Cleveland Clinic তাদের ওয়েবসাইটে তথ্য দিয়ে রেখেছেঃ

আয়িশা (রাঃ) কি ৯ বছরে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছুন নি? - সাথে বিভ্রান্তির জবাব

একই তথ্য পাবেন , Healthychildren Kidshealth Healthdirect (অস্ট্রেলিয়ার সরকারি সাইট) , NHS UK , ( Girlshealth – USA এর সরকারি সাইট) NICHD (International) ইত্যাদিতে।

মেয়েদের বয়ঃসন্ধি ৬ বছরেও শুরু হতে পারেঃ

আয়িশা (রাঃ) কি ৯ বছরে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছুন নি? - সাথে বিভ্রান্তির জবাব

সূত্রঃ Familydoctor

মেয়েদের বয়ঃসন্ধি সাধারণত ৭-১২ বছরে শুরু হয়ঃ

আয়িশা (রাঃ) কি ৯ বছরে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছুন নি? - সাথে বিভ্রান্তির জবাব

সূত্র: StudentHealth – হংকং-এর সরকারি সাইট

অ্যামেরিকাতে শুধুমাত্র ৩% মেয়েরই ১৩ বছরেও বয়ঃসন্ধিতে পা পড়ে না। – Delayed puberty, Bionity

সবচেয়ে বড় কথা হলো, আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস দ্বারাই এর সত্যতা পাওয়া যায়ঃ

আয়েশাহ (রা.) বলেছেন: “যখন একটি মেয়ে ৯ বছর বয়সে পৌছায়, তখন সে মহিলা হয়ে যায়।

সূত্রঃ সুনান আত-তিরমিযী (২/৪০৯), মাসাইলু হারব ৩০৫৬ , ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বলের সনদকে সহিহ হিসাবে নিয়েছেন হাম্বলী আলেমগণ

ইমাম আল-বায়হাক্বী (রহঃ) বলেছেন,

এর অর্থ – (এবং আল্লাহই ভাল জানেন) – যখন তার মাসিক হয়, তখন সে একজন মহিলা।

সুনান আল-বায়হাকী (১/৩১৯)

তাহলে আয়িশা (রাযিঃ)-এর কথা দ্বারাই বোঝা যাচ্ছে তিনি নয় বছরে মহিলা ছিলেন (এটাই স্বাভাবিক)। তাঁর কথা Disprove না করা ছাড়া উপায় নেই।

সুনানে আবু দাউদ ৪৯৩৩ তে এসেছে,

 حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، ح وَحَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، قَالاَ حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَزَوَّجَنِي وَأَنَا بِنْتُ سَبْعِ سِنِينَ فَلَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ أَتَيْنَ نِسْوَةٌ – وَقَالَ بِشْرٌ فَأَتَتْنِي أُمُّ رُومَانَ – وَأَنَا عَلَى أُرْجُوحَةٍ فَذَهَبْنَ بِي وَهَيَّأْنَنِي وَصَنَعْنَنِي فَأُتِيَ بِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَبَنَى بِي وَأَنَا ابْنَةُ تِسْعٍ فَوَقَفَتْ بِي عَلَى الْبَابِ فَقُلْتُ هِيهْ هِيهْ – قَالَ أَبُو دَاوُدَ أَىْ تَنَفَّسَتْ – فَأُدْخِلْتُ بَيْتًا فَإِذَا فِيهِ نِسْوَةٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَقُلْنَ عَلَى الْخَيْرِ وَالْبَرَكَةِ ‏.‏ دَخَلَ حَدِيثُ أَحَدِهِمَا فِي الآخَرِ ‏.‏

অর্থঃ আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ছয় অথবা সাত বছর বয়সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিয়ে করেন। আমরা মদীনায় আগমন করলে একদল মহিলা আসলেন। বর্ণনাকারী বিশরের বর্ণনায় রয়েছেঃ আমার নিকট (আমার মা) উম্মু রূমান (রাঃ) আসলেন, তখন আমি দোলনায় দোল খাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন, আমাকে প্রস্তুত করলেন এবং পোশাক পরিয়ে সাজালেন। অতঃপর আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পেশ করা হলো। আমার বয়স নয় বছর। মা আমাকে ঘরের দরজায় দাঁড় করালেন এবং আমি উচ্চহাসি দিলাম। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ আমার মাসিক ঋতু হয়েছে। আমাকে একটি ঘরে প্রবেশ করানো হলো। তাতে আনসার গোত্রের একদল মহিলা উপস্থিত ছিলেন। তারা আমার জন্য কল্যাণ ও বরকত কামনা করলেন।

লক্ষ্যনীয়, ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) এখানে অট্টহাসির অর্থ মাসিক হওয়া বুঝেছেন।

২. পুতুল রাখার হাদিস কি বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোকে নাকোচ করে?

পুতুল খেলার হাদিস দিয়ে অপব্যাখ্যা করা হয় জাহেল-মহল থেকে। তাদের মূল পয়েন্ট এরকম যে, ‘মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে পুতুল খেলা অসম্ভব’। আসুন দেখি।

প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী আয়িশা বিনতে আবু বকর (রাযিঃ) এর জন্ম ৬১৩ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে, কিংবা ৬১৪ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে জন্মগ্রহণ করেন।

আবার, খয়বরের যুদ্ধ সংগঠিত হয় ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে,  তাবুকের যুদ্ধ সংগঠিত হয় অক্টোবর ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে।

তাহলে খয়বরের যুদ্ধের পর আয়িশা (রাযিঃ)-এর বয়স হবে ১৫ এর কাছাকাছি, আর তাবুকের যুদ্ধের পর ১৬ এর কাছাকাছি। এবার একটি হাদিস দেখুনঃ

আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক অথবা খায়বারের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। ঘরের তাকের উপর পর্দা ঝুলানো ছিলো। বায়ু প্রবাহের ফলে তার এক পাশ সরে যায় যাতে তার খেলার পুতুলগুলো দৃশ্যমান হয়ে পড়ে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুতুলগুলো দেখে বললেন, হে আয়িশাহ! এগুলো কি? উত্তরে তিনি বললেন, এগুলো অমার মেয়ে। আর তিনি এগুলোর মধ্যে কাপড়ের তৈরী দু’ ডানাবিশিষ্ট একটি ঘোড়াও দেখতে পেলেন। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ এগুলোর মধ্যে ওটা কি দেখতে পাচ্ছি? তিনি বললেন, ঘোড়া। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তার উপর আবার ওটা কি? তিনি বললেন, দু’টো পাখা। তিনি বললেন, এ আবার কেমন ঘোড়া, যার পাখা আছে! আমি বললাম, আপনি কি শুনেননি যে, সুলাইমান (আঃ)-এর ঘোড়ার কয়েকটি পাখা ছিলো! আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন, যাতে আমি তাঁর সামনের সারির দাঁত দেখতে পেলাম। – সুনানে আবু দাউদ (৪৯৩২, ইফাবা ৪৮৫০)

উক্ত হাদিসটি ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) ‘পুতুল দিয়ে খেলা’ পরিচ্ছদে এনেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে, ১৫ বছর বয়সেও তিনি পুতুল দিয়ে খেলতেন/পুতুল রাখতেন। তাহলে বোঝা গেলো পুতুল খেলার দোহাই দিয়ে প্রমাণ করা যাচ্ছে না কিছুই। নাকি এবার সমালোচকরা বলবেন ১৫ বছর বয়সেও তিনি বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছুন নি?!

যাই হোক তাদের উক্ত দাবিও খণ্ডিত হয়ে যায়। এ সম্পর্কে শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ (হাফিঃ) পরিচালিত Islamqa সাইটে সুদীর্ঘ ফতোয়ায় বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। আমরা সেটাই উল্লেখ করবো পরবর্তীতে।

পুতুল কি শুধু শিশুরাই খেলে?

ইসলামবিদ্বেষীদের বেহেশত অ্যামেরিকান একজন কী বলে শুনিঃ

When I was 13, I still played with Barbie. OK, I did it in secret, in my basement, where no one in my neighborhood could see me playing with Barbie, but play I did, and it was with great reluctance that I packed up my Barbie dolls in their doll trunk for the last time at 14. Back in Barbie’s early heyday, in the 1960s and 1970s, my story wasn’t unusual–girls often played with Barbie until their early teens.… A look at why Barbie dolls are uncool for tweens. by Denise Van Patten, (Archived 2004)

১৩-১৪ বছরেও পুতুল খেলা ৭০ এর দশকে অ্যামেরিকাতে সাধারণ ব্যাপার ছিলো। সেখানে কীভাবে কোনো জ্ঞানী মানুষ বলতে পারে দ্বেড় হাজার বছর আগে কোনো যুবতী পুতুল খেলতে পারবে না, যেখানে ছিলো না ইন্টারনেট, ছিলো না শপিং মল, ছিলো না টিভি চ্যানেল?

ডেইলিমেইলের প্রতিবেদনে দেখা যায় ৪৮ বছরের এক মহিলাও পুতুল রাখা ছাড়তে পারেন নি। তার সাথে ঘুরতে, শপিঙে যান। এখন কাফির লজিকে তার বয়স ৪৮ নয়, বরং ৪ কিংবা ৮!

ওদিকে ৩৫% ব্রিটিশরাই তাদের বিছানায় টেডি বিয়ার নিয়ে যায় বর্তমানে! – ডেইলিমেইল;PR

এ বিষয়ে লাইভসাইন্সেও একটি সমীক্ষা এসেছে।

৩. ইবনে হাজার (রহঃ)-এর ব্যাখ্যাই কি প্রমাণ করে আয়িশা (রাঃ) বালেগা হোন নি?

এখন কাফিরমহল থেকে এবার উত্তর দেওয়া হয় এরকমভাবে,

ইবনে হাজার আসকালানি (রহঃ) উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, যে আয়িশা (রাদ্বিঃ) সেসময়ও বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছুন নি।

অতএব, তিনি ১৫/১৬ বছরেও পৌঁছুন নি। – প্রমাণিত।

এরকমভাবে বলা একটা লজিক্যাল ফ্যালাসি। যেটাকে বলে ‘চেরি পিকিং ফ্যালাসি‘ কিংবা ”Incomplete Evidence Fallacy’…। অন্য আলেমগণের ব্যাখ্যা, ঘটনাগুলো তারা লুকিয়ে গিয়ে সেটা  অস্বীকার করেছে।

কারণ অন্যান্য আলেমগণের ব্যাখ্যা, এবং ইথিওপিয়ানদের তীর চালানোর সময় আয়িশা (রাদ্বিঃ)-এর পর্দাপালন, মারিয়া কিবতিয়া (রাযিঃ)-এর সন্তান হওয়ার পর নিজেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দী ভাবা ইত্যাদি সবকিছুই ইবনে হাজার (রহঃ)-এর উক্ত ব্যাখ্যাকে খণ্ডন করে।

** মজার ব্যাপার হলো ইবনে হাজার (রহঃ) প্রকৃতপক্ষে বলেছেন যে সেটা একাধিক সম্ভাবনার একটা,  নিশ্চিত নয়।

দেখুনঃ ফাতহুল বারী (১৩/১৪৩)

এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-দলিল দ্বিতীয় উত্তরের জন্য যে ফতোয়াটা দেখাবো, সেখানেই আছে। সত্যান্বেষী পাঠকগণ দেখে নেবেন।

৪. প্রাকৃতিক স্বাভাবিকতা কি আর্লি ম্যারেজের পক্ষে যুক্তিপূর্ণ নয়?

আমাদের পয়েন্টকে ‘ফ্যালাসি’ হিসেবে উপস্থাপন করতে গিয়ে তারা নিজেরাই ‘স্ট্র-ম্যান’-ফ্যালাসি করেছে।

কোনটা “Natural Common Practice” আর কোনটা “Obtained Common Pracrice”-এ দুটোর পার্থক্য হয় তারা বোঝেন না, কিংবা ইচ্ছে করেই বুঝতে চান না। আমাদের যুক্তিটা ” Natural Common Practice”-যা কোনো ফ্যালাসির মধ্যে পড়ে না।

আপনি মানব ইতিহাসের ১০০,২০০,১০০০,২০০০,১০০০০ বছর পেছনেই যান না কেন, আর্লি ম্যারেজ সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলো।

প্রাচীন গ্রিস (৪৭৯-৪৩১ খ্রিস্টপূর্ব)-এর সময়কালের ইতিহাস নিয়ে রচিত বইয়ে উল্লেখ আছেঃ

গ্রীসে বিয়ের বয়স

গ্রীসে বিয়ের বয়স

লক্ষ্যণীয় অংশঃ

…A man should marry at about thirty, choosing for his wife, a girl of sixteen…girls could marry as soon as puberty hit… “I give you this girl, that she may bring children into the world…”Daily Life In Greece At The Time Of Pericles by Robert Flacelière. Translated from French(1959) to English(1965) by Peter Green. Macmillan Publishing Co., Inc. Fifth Print(1974), page 59-60

প্রাচীন মিশরের কথাও ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেছেনঃ

Athenian men married out of a sense of civic duty and put off the fateful day until the age of 30 or more, at which time they married girls of half their age whose youth made them more easily controlled. In contrast, Ancient Egyptian men and women valued and enjoyed each other’s company. Love and affection were thought to be important, and marriage was the natural state for people of all classes. James C. Thompson, WOMEN IN ANCIENT EGYPT

Marriage contracts do not generally tell the age of the parties, but we know from other documents that marriage almost always occurred after sexual adulthood. The average age for girls to enter puberty was 12 to 13, and around 14 for boys. Indeed boys, who had to achieve some work abilities in order to support a wife and future children, were usually 15 or over before contemplating marriage. However, from the Roman period we find documentation of brides being as young as 8, though most scholars believe that is an exception and that a more common age for brides was 12 or older. In royal marriages, particularly between brothers and sisters, the parties seemed to be often much younger. We know, for example, that Tutankhamun probably married his sister when he was about nine years old. It was not all together uncommon for older men who had usually lost their wife to either death or divorce to marry very young “women”. Qenherkhepeshef, a scribe from Deir El Medina for example married a 12 year old girl when he was 54. Marriage In Ancient Egypt by Jimmy Dunn writing as Mark Andrews

তাহলে এবার মধ্যযুগটাও দেখা যাক। খ্রিস্টান ইউরোপঃ

Women were marriageable right after puberty, marriage arrangements were made while they were in infancy; they were wed at the age of twelve or fourteen to men in their twenties and thirties. MEDIEVAL THOUGHT Reading Notes by Stephan T. Mayo Department of Philosophy Molloy College

Singlewomen in the European Past, 1250-1800” বইয়ের ৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছেঃ

আয়িশা (রাঃ) কি ৯ বছরে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছুন নি? - সাথে বিভ্রান্তির জবাব

আয়িশা (রাঃ) কি ৯ বছরে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছুন নি? - সাথে বিভ্রান্তির জবাব

As anthony molho persuasively illustrates, the cultural imperative to marry young women soon after they reached sexual maturity even prompted many florentine fathers to falsify their daughters’ ages to give them more time to negotiate a favorable marriage. Singlewomen in the European Past, 1250-1800, page 44, 1999 University of Pennsylvania Press

তাহলে কোন যুক্তিতে রাসূল (সাঃ)-কে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে? এখানে যদি ‘ছয় বছর’ বয়সী আয়িশা (রাদ্বিঃ)-কে বিবাহ করার কথা বলা হয়, সেই উত্তএ আগেই দেওয়া আছে, বিশেষ কারণবশত এবং সুস্পষ্ট কল্যাণের সাপেক্ষে বালেগা হওয়ার আগে বিবাহ দিতে পারবেন পিতা। – ইসলামকিউএ ফতোয়া নং ১৭৮৩১৮

মাত্র কয়েক দশক আগে থেকে কিছু Biased Research (লেইট ম্যারিজের সাথে বহু পুঁজিবাদী ব্যবসা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত) দেখিয়ে, পুরো প্রাকৃতিক মানবসভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা সত্যিই হাস্যকর!

এ প্রসঙ্গে ছোটবেলায় শোনা আমার একটা কৌতুক মনে পড়লো,

“মরুভূমিতে এক যাযাবরের কাছে এক লোক এসে বললো, আমরা চল্লিশজনের কাফেলা ছিলাম। যাত্রাপথে কাল রাতে বাকি ৩৯ জন হারিয়ে গেছে।

তখন যাযাবর ব্যক্তিটি উত্তর দিলো, এর মানে আপনি তাদের থেকে হারিয়ে গেছেন, তারা নয়!”

আর অন্যদিকে, অন্যায়ভাবে মুসলিমহত্যা এটার মধ্যে পড়েই না। – অবশ্য বিনোদনবাদীরা কী বুঝবে!

৫. মুহাম্মাদ (সাঃ) কি দেনমোহরের অভাবের কারণে আয়েশাকে (রাঃ) ঘরে তুলতে বিলম্ব করেছিলেন?

এ প্রসঙ্গে এমন একটা দলিল দেখায় যেটার দুটো সনদ যঈফ এবং জাল, অর্থাৎ আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, Not Reliable.

এটার জবাব দিয়েছেন আমাদের সামিঈ আল হাসান ভাইঃ

মুহাম্মাদ ﷺ কি দেনমোহরের অভাবের কারণে আয়েশাকে (রা.) ঘরে তুলতে বিলম্ব করেছিলেন?

উপরন্তু, অন্যান্য দলিল এর বিপরীতটাই দেখায়।

আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মায়ের ইচ্ছা ছিলো আমাকে স্বাস্থ্যবর্তী বানিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পাঠাবেন। এজন্য তিনি অনেক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন কিন্তু কোনো ফল হয়নি। শেষে তিনি আমাকে পাকা খেজুরে সাথে শসা বা খিরা খাওয়াতে থাকলে আমি তাতে উত্তমরূপে স্বাস্থ্যের অধিকারী হই। সুনানে আবু দাঊদ ৩৯০৩, সুনানে ইবনু মাজাহ

এর উপর তিনি মোহরানা যথাসম্ভব দ্রুত পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন, “সেই তিনি তিন বছর দেনমোহর পরিশোধের চেষ্টা করবেন না, স্ত্রীকে ঘরে আনবেন না”-এটা অস্বাভাবিক।

৬. মুহাম্মাদ (সাঃ) কি কোলের বাচ্চার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাকে বিয়ে করার আশা প্রকাশ করেছিলেন?

এখানেও তারা একটি অগ্রহণযোগ্য যঈফ হাদিস উপস্থাপন করে। বিস্তারিত লিখেছেন, সামিঈ আল-হাসান ভাইঃ

মুহাম্মাদ ﷺ কি কোলের বাচ্চার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাকে বিয়ে করার আশা প্রকাশ করেছিলেন?

তাছাড়াও এটি কোনোভাবেই যৌন উত্তেজনা বোঝায় না। উক্ত দলিলে দেখানো হয়, রাসূল (সঃ) বলেছেন, এই বাচ্চাটিকে বড় হলে বিয়ে করবো। – এখানে কোনোভাবে যৌনকাম প্রকাশ পেয়েছে? তাছাড়া, পেডোফাইলরা কি “বড় হলে” বিয়ে করার কথা বলে? তাহলে সে আর পেডোফাইল থাকলো কোথায়?

৭. বিতর্কের ইতিহাস

বেশিদিন হয় নি, মাত্র গত শতাব্দীতে সমালোচকরা আয়িশা (রাযিঃ)-কে নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছে। অথচ ব্যাপারটা এর আগে পুরো মানবজাতির কাছেই স্বাভাবিক ছিলো।

যেমন ফ্রেঞ অমুসলিম ফিলোসোফার Montesquieu ১৭৫৮ সালে তার বইয়ে লিখেছেন,

WOMEN, in hot climates, are marriageable at eight, nine, or ten years of age; thus, in those countries, infancy and marriage almost always go together. They are old at twenty…

তিনি এই অংশটুকুর টীকায় সংযুক্ত করেছেন,

Mahomet married Cadhisja at five, and took her to his bed at eight, years old. In the hot countries of Arabia and the Indies, girls are marriageable at eight years of age, and are brought to bed the year after. The Spirit of Laws, Volume I (1758) by  Montesquieu, translated by Thomas Nugent, Book XVI, Chapter II – WikiSource

তার কাছেও স্বাভাবিকই ছিলো। কাফেরদের এই ব্যাপারটাকে ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে উপস্থাপন করাটা সত্যিই হাস্যরসাত্মক!

এবং আল্লাহই ভালো জানেন।


সংযুক্তিঃ

Islamqa প্রশ্নোত্তর নং ১৭৫৪০৫

মূল প্রশ্নোত্তর লিংকঃ https://islamqa.info/en/answers/175405/

অনুবাদঃ তাহসিন আরাফাত
বিস্তারিত প্রশ্নঃ
আমি জানতে চাই যারা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছোয় নি তাদের জন্য পুতুল খেলা কিসের ভিত্তিতে জায়েজ?
আমি নবী (সাঃ) এর উপস্থিতিতে পুতুল নিয়ে খেলতাম…”- এই হাদিসটির ব্যাখ্যায়, ফাতহুল বারীতে বলা হয়েছে:
ইমাম ইবনে হাজার, ইমাম আল-খাত্তাবীর দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করেছেন যে,
পুতুল খেলা অন্যসকল ছবিযুক্ত খেলার মত নয় যেগুলোর বিষয়ে কঠোর সতর্কবাণী রয়েছে।
বরং আয়েশা (রাঃ)-কে এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হয়েছিল কারণ তখনো তিনি বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেননি।
তারপর তিনি বললেন: এ বিষয়ে কিছু অনিশ্চয়তা থাকতে পারে যে এটিই মূল কারণ ছিলো – ‘তিনি এখনও বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছাননি
‘।
কিন্তু এটি সম্ভব, কারণ খায়বারের প্রচারাভিযানের সময়, ‘আয়েশার বয়স চৌদ্দ বছর ছিল – হয় তিনি চৌদ্দ বছর পূর্ণ করেছিলেন, অথবা সেই বয়সটি অতিবাহিত করেছিলেন, অথবা এর কাছাকাছি ছিলেন। (বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর সর্বোচ্চ সময় ১৫ বছর ধরা হয়, তাই ১৪ তে বয়ঃসন্ধিতে না পৌঁছানো সম্ভব)
তবে তাবুক অভিযানের ক্ষেত্রে, তিনি নিশ্চিতভাবে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছিলেন।
সুতরাং যিনি বলেছিলেন যে খয়বার অভিযানের সময়ের হাদিস এটি, তার কথাটিই সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যদি আমাদের মা আয়িশা (রাঃ) দশ বছর বয়সে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেন, তাহলে কি হবে? উদাহরণস্বরূপ, যদি এই হাদিসটি তাবুক অভিযানের সময়কে নির্দেশ করে তবে কী হবে?
সে ক্ষেত্রে, ছবিযুক্ত খেলা এমন কিছু হবে যা কেবল শিশুদের জন্য অনুমোদিত নয়। আমাদের মা আয়িশা (রাঃ) ঈদের দিন ইথিওপিয়ানদের খেলা দেখতে দেখার যে হাদিসে বলা হয়েছে, তার ক্ষেত্রে যা মনে হয় তা হল বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানোর পর এই ঘটনা ঘটেছে। ইবনে হিব্বানের হাদিসে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইথিওপিয়ানদের প্রতিনিধি দল যখন এসেছিল তখন এটি ঘটেছিল, এবং তারা ৭ হিজরিতে এসেছিল, তাই সেই সময়ে তার বয়স পনের বছর হতে পারত।
এখানে প্রশ্ন হচ্ছে: ইমাম ইবনে হাজার কেন বয়ঃসন্ধিকালকে ১৫ বছর বলে মনে করেন? কেন তিনি এই সত্যটি উপেক্ষা করেছিলেন যে মহিলারা এর চেয়ে অনেক আগেই বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছাতে পারে?
বিস্তারিত উত্তরঃ
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার

এক: বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানো – বালেগ/বালেগা হওয়া

কিছু লক্ষণ থেকে জানা যেতে পারে যে পুরুষ ও মহিলা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছে, সেই সময় তারা নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে পড়ে এবং (ফিরিশতাগণের) কলম তাদের খারাপ কাজগুলি লিখতে শুরু করে দেয়; এতে বোঝা যায়, যে কেউ পরিপক্কতার বয়সে পৌঁছেছে।
আলেমগণ এই বিষয়ে কোনো ভিন্নমত পোষণ করেননি যে, নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই সজাগ কিংবা ঘুমন্ত অবস্থায় ইহতিলাম (স্বপ্নদোষ/বীর্যপাত) বয়ঃসন্ধির একটি চিহ্ন।
ঋতুস্রাব যে মহিলাদের জন্য বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর একটি চিহ্ন সে সম্পর্কেও তাদের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল না।
বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর একটি নির্দিষ্ট বয়স সম্পর্কে (যা এখানে আমাদের উদ্বিগ্ন করে) – আলেমরা ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন, এবং একাধিক মত রয়েছে:

১. শাফেঈ ও হাম্বলী মাজহাবে, হানাফিদের মধ্যে আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদের মতে, পনের বছর বয়স পূর্ণ হলে পুরুষ ও মহিলা উভয়েই বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে যায়। (চন্দ্রবছর)

২. মালেকিদের মতে, আঠারো বছর পূর্ণ করার সময় বা আঠারো বছর শুরু করার সময় বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে যায়।

৩. ইমাম আবু হানিফার মতে, একটি ছেলের বয়স যখন আঠারো বছর হয় তখন তার জন্য বয়ঃসন্ধি হয়, এবং একটি মেয়ের জন্য যখন তার বয়স সতেরো বছর হয়। – আল-মাওসূ’আহ আল-ফিক্বাইয়াহ (৮/১৯২)

উল্লেখ্য, আলেমগণ অস্বীকার করেননি যে বয়ঃসন্ধিকাল পুরুষ ও মহিলা উভয়ের মধ্যেই সেই বয়সের আগে আসতে পারে।
বয়ঃসন্ধির যে কোনো লক্ষণ যেমন: ইহতিলাম বা ঋতুস্রাব-এবং যেগুলির বিষয়ে তাঁরা একমত।
বরং বয়ঃসন্ধি নির্ণয়ের জন্য বয়সের মাপকাঠি তখন প্রযোজ্য হবে যখন বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে যাওয়ার অন্য কোনো লক্ষণ দেখা না যায়। এর মানে এই যে, যারা পনেরো বছর বয়সে পৌঁছেছে তারা প্রত্যেকেই দায়বদ্ধতার বয়সে পৌঁছেছে, এমনকি অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে একটিও দেখা না গেলেও (পনেরো বছরের পক্ষের আলেমদের মতে)।
কিন্তু যদি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটিও দেখা যায়, এমনকি যদি সেই বয়সে পৌঁছানোর অনেক বছর আগেও হয়, তবে ব্যক্তিটি বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছে বলে গণ্য করা হবে।
এর উপর ভিত্তি করে, আল-হাফিয ইবনে হাজার (রহঃ) আয়েশা (রাঃ)-এর পনের বছর বয়সে বয়ঃসন্ধি লাভের বিষয়ে যা বলেছেন তা হল শাফাঈ ও হাম্বলী মাযহাবের মত, এবং হানাফী মাযহাবের দুইজন বিশিষ্ট আলেমের মত।
এতে একদিক থেকে অদ্ভুত কিছু নেই, এবং অন্যদিকে এটি অস্বীকার করা হয় না যে বয়ঃসন্ধিকাল সেই বয়সের আগেই পৌঁছে যেতে পারে।
কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জায়গা এটি নয়।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে সালিহ আল-উসাইমিন (রহ.) বলেন:
যখন একজন ব্যক্তি পনেরো বছর পূর্ণ করে, তখন সে বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হয়।
এর দলীল হল আবদুল্লাহ ইবনে উমরের হাদিস , যাতে তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধের দিনে আমাকে নবী (সাঃ)-এর কাছে পেশ করা হয়েছিল, যখন আমার বয়স ছিল চৌদ্দ বছর, এবং তিনি আমাকে সেনাবাহিনীতে যোগদানের অনুমতি দেননি।

আল-বায়হাকী এবং ইবনে হিব্বান থেকে একটি সহীহ বর্ণনানুসারে, তিনি বলেছেন: … কারণ তিনি মনে করেননি যে আমি বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে গেছি। খন্দকের যুদ্ধের দিনে আমাকে তার কাছে পেশ করা হয়েছিল, যখন আমার বয়স ছিল পনের বছর, এবং তিনি আমাকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে দেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে আমি বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছি।
এই হাদিসের মূল কথাটি হল “[তিনি] সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে আমি বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছি”।
কারণ আমরা যদি শুধুমাত্র প্রথম বর্ণনাটি দেখি, বুখারীর বর্ণনা, কেউ কেউ যুক্তি দিতে পারেন যে তিনি তাকে সেনাবাহিনীতে যোগদানের অনুমতি দেননি, কারণ ‘তার বয়ঃসন্ধি হয়েছে বা হয়নি’ এইজন্য নয়, বরং শারীরিক দুর্বলতা বা অন্য কোনো কারণে যুদ্ধ করার যোগ্যতা ছিল না বলে।
কিন্তু আল-বায়হাকী ও ইবনে হিব্বানের বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, তিনি তাকে অনুমতি দেননি কারণ তিনি তখনও বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছাননি এবং যখন তিনি বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেছিলেন, তখন তিনি তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন।
নাফি’ বলেন:

আমি উমর ইবন আব্দুল আযীযের কাছে এসেছিলাম যখন তিনি খলিফা ছিলেন এবং তাকে এই হাদিসটি সম্পর্কে বলেছিলাম এবং তখন তিনি বলেছিলেন: এটি বয়ঃসন্ধির সংজ্ঞা, এবং তিনি তার গভর্নরদেরকে এটি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন।
তার উপর ভিত্তি করে আমরা বলি যে, কেউ যদি পনেরো বছর বয়সে উপনীত হয়, তবে সে বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হয়েছে, যদিও সে দেখতে আকারে ছোট হয়, যদিও তার ইহতিলামের অভিজ্ঞতা না থাকে এবং এমনকি যদি তার যৌবনের চুলও না থাকে। একজন ব্যক্তির পক্ষে দিনের শুরুতে দায়বদ্ধ না হওয়া এবং দিনের শেষে দায়বদ্ধ হওয়া সম্ভব: যদি সে মধ্যাহ্নে জন্মগ্রহণ করে এবং মধ্যাহ্নে পনের বছর পূর্ণ করে, আর তবে সে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছে।
দেখুন: আশ-শারহ আল-মুমতি’ আলা যাদ আল-মুস্তাক্বনি (৯/২৯৬-২৯৭)

দুই: পুতুল খেলা জায়েজ – বেশিরভাগ আলেমগণের মত

বাড়িতে খেলনা পুতুল তৈরি এবং রাখার বিষয়ে, বেশিরভাগ আলেমগণ মনে করেন যে এটি জায়েজ, এমনকি যদি তারা জীবন্ত প্রাণীর আকারেও হয়। এবং তারা এটিকে ত্রিমাত্রিক চিত্রের উপর সাধারণ নিষেধাজ্ঞার ব্যতিক্রম হিসাবে বিবেচনা করে।
এটি তাদের বিপরীতে, যারা বলে যে বাচ্চাদের খেলনার মধ্যে জায়েজ হল সেগুলি, যেগুলি মানুষের আকৃতিতে নেই, এবং যারা বলে যে রাখার অনুমতিটি ছবির উপর নিষিদ্ধের হাদীস দ্বারা বাতিল করা হয়েছে।
খেলনা পুতুল জায়েয হওয়ার দলীল হল দুটি প্রসিদ্ধ হাদীস:

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলা করত।
সহিহুল-বুখারী (৬১৩০, ইফাবা ৫৭০০), ‘মানুষের সাথে হাসিমুখে মেলামেশা করা/মানুষের প্রতি প্রফুল্ল হওয়া’ অধ্যায়ে বর্ণিত;
মুসলিম (২৪৪০, হাদিস একাডেমী ৬১৮১, ইফাবা ৬০৬৯);
আবু দাঊদ (৪৯৩১, ইফাবা ৪৮৪৯); আল-লুলু-ওয়াল-মারজান ১৫৮১; ইবনু মাজাহ ১৯৮২, মিশকাত ৩২৪৩

আরেকটি হাদিস:

আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক অথবা খায়বারের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। ঘরের তাকের উপর পর্দা ঝুলানো ছিলো। বায়ু প্রবাহের ফলে তার এক পাশ সরে যায় যাতে তার খেলার পুতুলগুলো দৃশ্যমান হয়ে পড়ে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুতুলগুলো দেখে বললেন, হে আয়িশাহ! এগুলো কি? উত্তরে তিনি বললেন, এগুলো অমার মেয়ে। আর তিনি এগুলোর মধ্যে কাপড়ের তৈরী দু’ ডানাবিশিষ্ট একটি ঘোড়াও দেখতে পেলেন।
তিনি প্রশ্ন করলেনঃ এগুলোর মধ্যে ওটা কি দেখতে পাচ্ছি? তিনি বললেন, ঘোড়া। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তার উপর আবার ওটা কি? তিনি বললেন, দু’টো পাখা। তিনি বললেন, এ আবার কেমন ঘোড়া, যার পাখা আছে! আমি বললাম, আপনি কি শুনেননি যে, সুলাইমান (আঃ)-এর ঘোড়ার কয়েকটি পাখা ছিলো! আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন, যাতে আমি তাঁর সামনের সারির দাঁত দেখতে পেলাম।
সুনানে আবু দাউদ (৪৯৩২, ইফাবা ৪৮৫০)- তাহক্বীক আলবানী: সহিহ

এই বিষয়ে আরো তথ্যের জন্য দেখুন ফতোয়া নং 119056, 20325, 129324 এবং 9473
(অথচ তাবুকের যুদ্ধের সময় আয়িশা (রাঃ) এর বয়স ১৬ এর বেশি, তিনি তখনও পুতুল খেলতেন।)

তিন: আয়িশা (রাঃ) ইতোমধ্যেই বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছিলেন – এটাই সেরা ব্যাখ্যা

লিঙ্গ ও বয়স বিবেচনায় কাকে এই অনুমতি দেওয়া হয়েছিল? দেখা যাচ্ছে, এই অনুমতি শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য সীমাবদ্ধ নয়; বরং পুরুষদের জন্যও এটা জায়েয। তবে পুতুল বা খেলনা যেগুলোর দিয়ে খেলা হয় তার প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত, তাই মেয়েরা ছাড়া অন্য কেউ যেন মেয়েদের খেলনা না খেলে।
আমরা উপরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসে মহিলাদের খেলনা দিয়ে খেলার প্রমাণ উদ্ধৃত করেছি।
পুরুষদের জন্য এটা জায়েয হওয়ার ব্যাপারে:

রুবায়্যি‘ বিনতু মু‘আব্বিয (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আশূরার সকালে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেনঃ যে ব্যক্তি সওম পালন করেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যার সওম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সওম পূর্ণ করে। তিনি (রুবায়্যি‘) (রাযি.) বলেন, পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন সওম পালন করতাম এবং আমাদের শিশুদের সওম পালন করাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত।
সহিহুল-বুখারী (১৯৬০, আধুনিক প্রকাশনী ১৮২১, ইফাবা ১৮৩৩), মুসলিম (১১৩৬, হাদিস একাডেমী ২৫৫৯, ইফাবা ২৫৪০,২৫৪১), আল-লুলু-ওয়াল-মারজান ৬৯৬

আরও যে বিষয়টি দেখা যাচ্ছে তা হল যে খেলনাগুলি মূলত ছোট বাচ্চাদের জন্য জায়েয, পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্যই, যেমনটি উপরে আর-রুবাইয়ের বর্ণনায় দেখা গেছে।
আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,

তার সাত বছর বয়সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেন। তাকে নয় বছর বয়সে তার ঘরে বধুবেশে নেয়া হয় এবং তার সঙ্গে তার খেলার পুতুলগুলোও ছিল। তাঁর আঠারো বছর বয়সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন।
– মুসলিম (১৪২২, হাদিস একাডেমী ৩৩৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৩৪৬, ইসলামীক সেন্টার ৩৩৪৫)

আল-ক্বাদি ‘ইয়াদ (রহঃ) বলেছেন:

“এবং সে তার পুতুল তার সাথে নিয়ে গেছে” শব্দের অর্থ মেয়েরা যে পুতুল নিয়ে খেলে, কারণ সে খুব তরুন বয়সের ছিলো। – ইকমাল আল-মুআল্লিম শরহ সহীহ মুসলিম (৪/৫৭৪)

প্রাপ্তবয়স্কদের এই ধরনের পুতুল খেলার হুকুম সম্পর্কে, কেউ কেউ এটাকে জায়েয বলে এবং কেউ কেউ এটাকে অপছন্দনীয় (মাকরূহ) বলে মনে করে।
বদর আদ-দ্বীন আল-আয়নী (রহঃ), আয়েশা (রাঃ) এর হাদীসের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেনঃ

যেভাবে এই হাদীসটি ‘মানুষের প্রতি প্রফুল্ল হওয়া’-এর শিরোনামে এসেছে তা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রফুল্ল ছিলেন। আয়েশার প্রতি সদয় ছিলেন যখন তিনি তার পুতুলের সাথে খেলার অনুমোদন দেন এবং তার বন্ধুদের তার সাথে খেলার জন্য পাঠান। আয়েশা তখনও বয়ঃসন্ধিতে পৌছাননি, তাই এটি তার জন্য একটি ছাড় ছিল। যাইহোক, যারা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছেন তাদের জন্য এটি [পুতুলের সাথে খেলা] এখনও অপছন্দনীয়।
উমদাতুল ক্বারী (২২/১৭০)

আল-কাদি ‘ইয়াদ (রহ.) বলেন:

পুতুল খেলার বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে তা ছোট মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যখন কেবল সেই ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়।
ইকমাল আল-মুআল্লিম শরহ সহীহ মুসলিম (৬/৬৩৫)

আল-হাফিজ ইবনে হাজার (রহঃ) উদ্ধৃত করেছেন – (যেমনটি এই প্রশ্নকর্ত্রী বোনের দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে)

ইমাম ইবনে হিব্বান এবং ইমাম আন-নাসায়ী (রহ.)-এর মতে পুতুলের সাথে খেলার অনুমোদন অল্পবয়সী মহিলাদের(যারা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছোয়নি) তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইবনে হাজার এর পরে উল্লেখ করেছিলেন যে এটি এমন একটি বিষয় যা আরও আলোচনা করা দরকার।

এ থেকে বোঝা যায় যে [এই দুই আলেম] বলেছেন, পুতুল খেলা সাধারণভাবে সকল নারীর জন্য জায়েয।
আর এই দৃষ্টিভঙ্গিই সঠিক।
ঘটনাটি যেটি প্রতীয়মান হয় তা হল যে,
আয়েশার (রাঃ) হাদিস নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার বা তাবুক থেকে ফিরে এসে তার ঘরে তার খেলনা দেখেছিলেন, যার মধ্যে ঘোড়াটিও ছিল দুটি ডানা বিশিষ্ট। এটিই প্রমাণ যে, বয়ঃসন্ধির পরেও মহিলাদের খেলনা দিয়ে খেলা জায়েয।
৭ হিজরিতে সংঘটিত খায়বার অভিযানের সময় আয়েশা (রা.)-এর বয়স ছিল পনের বছর বা তার বেশি; ৯ হিজরিতে সংঘটিত তাবুক অভিযানের সময় তার বয়স ছিল ষোল বছর বা তারও বেশি। উভয় ক্ষেত্রেই, তিনি বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছিলেন, কারণ সেই দেশের লোকদের সম্পর্কে জানা যায় যে তারা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে যায়।
প্রকৃতপক্ষে, এটি ‘আয়িশাহ থেকেই বর্ণিত হয়েছে।
আত-তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ

আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ যখন কোন মেয়ে নয় বছর বয়সে উপনীত হয় তখন সে মহিলা হয়।
সুনান আত-তিরমিযী (২/৪০৯)

আল-বায়হাকী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:

এর অর্থ – (এবং আল্লাহই ভাল জানেন) – যখন তার মাসিক হয়, তখন সে একজন মহিলা।
সুনান আল-বায়হাকী (১/৩১৯)

এ সম্পর্কে আরো দেখুনঃ ফতোয়া নং ১২২৫৩৪ ⇗
এ থেকে মনে হয়, (এবং আল্লাহই ভালো জানেন যে), আয়েশা (রা.) খায়বার আসার আগেই বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছিলেন। পনের বছর বয়সে না পৌঁছানো পর্যন্ত তিনি বয়ঃসন্ধি লাভ করেননি এমন দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে এই দৃষ্টিভঙ্গি বেশি গ্রহণযোগ্য ও উপযুক্ত।
এর উপর ভিত্তি করে বলা যেতে পারে যে, আয়েশা (রাঃ) বয়ঃসন্ধির আগে এবং পরে উভয় ক্ষেত্রেই খেলনা ছিল এবং পুতুল নিয়ে খেলতেন, বিশেষ করে যেহেতু আমরা এমন কিছু পাইনি যাতে প্রমাণ হয় যে, তিনি তাদের সাথে খেলা বন্ধ করেছেন। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর পর, অথবা নবী (সাঃ) তাঁকে তা থেকে নিষেধ করেছেন, অথবা বয়ঃসন্ধিকালে তার খেলনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ার মতো কিছু। হাদিস ও অন্যান্য বর্ণনায় এ বিষয়ে কিছুই দেখা যায় না।
তবে এটি লক্ষণীয় যে, আল-হাফিজ ইবনে হাজার সেই কথায় স্পষ্টভাবে বলেননি যে আয়িশাহ (রা.) বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেননি, যেমনটা আল-খাত্তাবি (রহ.) বলেছিলেন।
বরং তিনি এই বলে মন্তব্য করেছেন যে “এটি এমন বিষয় যা নিয়ে আরও আলোচনা করা দরকার।”
প্রকৃতপক্ষে অন্যত্র, এবং আয়েশা এবং ইথিওপিয়ানদের নিয়ে বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, এটি ঘটেছিল ৭ম হিজরিতে – যে বছর খায়বার অভিযান হয়েছিল – এবং তিনি বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেছিলেন এবং সেই সময়ে যে সময় তার বয়স ছিল পনের বছর। তদুপরি, এক জায়গায় বলা হয়েছে যে তার বয়স ছিল ষোল বছর।
এটি ইমাম আন-নওয়াবীর মতের খণ্ডন করে। (ইমাম নববীর মত ছিলো, আয়েশা (রা.) তখনও অল্পবয়সী এবং তখনও বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেনি।)
বর্ণনাটি নিম্নরূপ:

আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখলাম, তিনি আমার হুজরার দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন আর কৃষ্ণাঙ্গ যুবকেরা তাদের অস্ত্র দ্বারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদে নবাবীতে তাদের যুদ্ধের কলাকৌশল দেখাচ্ছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তার চাদর দ্বারা আড়াল করে দিচ্ছেন(পর্দা) যাতে আমি তাদের খেলা দেখতে পারি। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকলেন, যতক্ষণ আমি নিজে ফিরে না আসি। অতএব অল্পবয়স্কা বালিকাদের খেল-তামাশার প্রতি যে লোভ রয়েছে তার মূল্যায়ন কর (তার সখ পূর্ণ কর)।
মুসলিম (৮৯২, হাদিস একাডেমী ১৯৪৯, ইফাবা ১৯৩৪); বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৪৫৪, ৪৫৫, ৯৫০, ২৯০৭, ২৯০৭)

আল-হাফিজ ইবনে হাজারের বাণী:
আল-হাফিজ (রহঃ) বলেন,

“যা মনে হচ্ছে তা হচ্ছে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানোর পর এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা উপরে ইবনে হিব্বানের বর্ণনায় দেখেছি যে, ইথিওপিয়ানদের প্রতিনিধিদল আসার সময় এই ঘটনা ঘটেছিল এবং তারা ৭ হিজরীতে [মদিনায়] এসেছিল। সুতরাং তার বয়স পনের বছর হতে পারতো।
– ফাতহুল বারী (২/৪৪৫)

এবং তিনি (রহঃ) বলেছেন:

“অল্পবয়স্কা বালিকাদের খেল-তামাশার প্রতি যে লোভ রয়েছে” শব্দগুলি এমন যুবতী মহিলাদের বোঝায় যারা এখনও শৈশবের পর্যায়ে কাছাকাছি রয়েছে। আল-ইদাইয়ানের লেখায় আমার ভাষ্যে আমি উল্লেখ করেছি যে, সে সময় তার বয়স ছিল পনের বছর বা তার বেশি।
ফাতহুল বারী (৯/২৭৮)

অতঃপর তিনি (রহঃ) বললেনঃ

আমরা ঈদের উপরের অধ্যায়গুলোতে উল্লেখ করেছি ইমাম আন-নববীর প্রতিক্রিয়া, যখন তিনি বলেছিলেন যে, ”আয়িশা (রাঃ) বয়ঃসন্ধির বয়সের কম বয়সী, অথবা পর্দার নির্দেশ আসার পূর্বেই এটা ঘটেছিল, এবং তিনি হাদিসের এই অংশের সাথে তার দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেছিলেন। সুতরাং বিনোদনের জন্য অল্পবয়সী মেয়েদের যে অনুরাগ রয়েছে তা আপনার বোঝা উচিত।
কিন্তু আমরা উপরে উল্লেখ করেছি যা এই ব্যাখ্যাকে খণ্ডন করতে পারে, যা হাদিসের কিছু বর্ণনায় বলা হয়েছে যে ইথিওপিয়ানদের প্রতিনিধি দল আসার পরে এটি ঘটেছিল, এবং তারা ৭ম হিজরিতে এসেছিল, সেই সময় আয়িশা (রাঃ) ষোল বছর বয়সী ছিলেন, তাই তিনি বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছিলেন, এবং হিজাবের নির্দেশ দেওয়ার পরে এটি ঘটেছিল।
ফাতহুল-বারি (৯/৩৩৬-৩৩৭)

এই সমস্ত কিছুই এই ধারণাকে সমর্থন করে যে ‘আয়েশা (রাঃ) ইতিমধ্যে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছেন যখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবার থেকে ফিরে এসে তার বাড়িতে তার খেলনা দেখেছিলেন। এটি আরও সমর্থন করে যে, যদিও ‘আয়েশা (রাঃ) বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছেন, তবুও তার কাছে অল্পবয়সী মেয়েদের মতো ঝোঁক ছিল যা জায়েয।

আল-মাওসুআহ আল-ফিকহিয়্যাহ (১২/১২১)- এ, আল-খাত্তাবি এবং ইবনে হাজার এর মন্তব্য উদ্ধৃত করার পর, বলা হয়:

… এটি ইঙ্গিত দেয় যে এই ছাড়টি এমন মেয়েদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় যারা এখনও বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায়নি; বরং এটি বয়ঃসন্ধির পরের পর্যায়টিও অন্তর্ভুক্ত করে, যতক্ষণ না এটির প্রয়োজন হয়। এই ছাড়ের কারণ হ’ল এটি তাদের বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আমরা আল-হুলাইমির একটি কথা উপরে উল্লেখ করেছি যা বলে যে এর জন্য আরও একটি কারণ রয়েছে, যা হ’ল ছেলেরা বিনোদন এবং মজা করতে পছন্দ করে এবং এটি তাদের আরও শক্তি এবং আনন্দ, ভাল লালনপালন এবং আরো কিছু শিক্ষা দেয়। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, এই বিষয়টি কেবল মহিলা শিশুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এর মধ্যে পুরুষ শিশুরাও রয়েছে।
আলেমদের মধ্যে যারা স্পষ্টভাবে এই কথা বলেছেন তাদের মধ্যে ছিলেন আবু ইউসুফ।
আল-কুনিয়াতে তার কাছ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: “খেলনা বিক্রি করা এবং শিশুদের জন্য তাদের সাথে খেলা করা জায়েয। পুতুল ছাড়াও ছবি রয়েছে এমন খেলনার সাথে খেলা করার জন্য শিশুদের গ্রহণযোগ্যতাকে সমর্থন করে – যা আর-রুবায়ির বিন্ত মু’আওভিদ আল-আনসারিয়াহ (রাঃ) থেকে আসা-সাহেহাইনে প্রমাণিত হয়েছে।”

এবং আল্লাহই ভালো জানেন।

পুনশ্চঃ আয়িশা (রাদ্বিঃ)-এর পুতুলে চোখমুখ ছিলো না

আলেমগণ যারা প্রাপ্তবয়ষ্ক অবস্থায় পুতুল খেলাকে মাকরূহ বলে থাকেন তাদের মতে আম্মাজান আয়িশা (রাদ্বিঃ) এর পুতুলে চোখ-মুখ ছিলো না। যা মূর্তির পড়ে না।

-” الصورة الراس، فإذا قطع الراس، فلا صورة”.-” الصورة الرأس، فإذا قطع الرأس، فلا صورة”.

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “মূর্তি (মূল অংশ) হলো মাথা, তাই যদি মাথা কেটে ফেলা হয়, তাহলে সেটা মূর্তি নয়।” – সিলসিলা সহিহাহ, ১৯২১

মূলত সেসময় খেলনা পুতুলে চোখ-মুখ থাকতোই না!

খেলনায় চোখ-মুখ-অভিব্যক্তি যোগ করা শুরু হয় ২০ শতকে। – John Clendenien of Nadda.org

সম্পর্কিত লেখাঃ  মুহাম্মাদ ﷺ যখন আয়েশা (রা.) এর সাথে সহবাস করেন তখন কি তার বয়স নয় বছর ছিল?

    Show More

    Tahsin Arafat

    Editor-in-Chief, FromMuslims তালিবুল ঈলম, আহলুল মানহাজুস সালাফ

    ইসলামকিউএ

    www.islamqa.info(এই একাউন্টটি ফ্রম মুসলিমস-এর এডমিন প্যানেল দ্বারা চালিত। ইসলামকিউএ থেকে বিভিন্ন অনুবাদকৃত লেখা এখানে পাবেন।)
    0 0 votes
    Article Rating
    Subscribe
    Notify of
    guest
    0 Comments
    Inline Feedbacks
    View all comments
    Back to top button