কাফেরদের দাবিমতে মোহরানা খারাপ, এটা কি সত্যি?
ইসলামবিরোধীরা মোহরানা দেওয়া-নেওয়া কে একটি খারাপ প্রথা হিসেবে অভিহিত করে। তাদের মতে মোহরানা দেওয়া যেন পতিতাকে অর্থমূল্য(কাজের বিনিময়ে) দেওয়ার মতো। আবার, হিন্দুরাও বলে এর অর্থ নাকি একজন মেয়ের টাকার বিনিময়ে নিজেকে বিক্রি করে দেওয়া! এখন এক্ষেত্রে তারা যেসব যুক্তি দেখায় কিংবা উদাহরণের সাহায্যে ফুটিয়ে তোলে, তাতে বিষয়টিকে আসলেই অমানবিক মনে হয়।
একজন তো বলেছে, "স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হলো ভালোবাসার সম্পর্ক। এর মাঝে টাকা-পয়সার কোনো বিষয় আসতেই পারে না।" টাকা-পয়সার বিষয় এর মাঝে টেনে আনা যে কতটা ক্ষতিকর- তা নিয়ে অনেক কথা বলেছে। এখন এমনভাবে বলেছে যে কি জবাব দিব বুঝতেও পারছি না।
আবার, বিভিন্ন ফিকহের কিতাব বা (হয়ত) আয়াতে, এটাও লেখা আছে যে, মোহরানা হলো নারীর যৌনাঙ্গ ভোগ করার অধিকার। এ নিয়ে আসিফ মহিউদ্দিনের একটা আর্টিকেলও আছে।
এখন আমার অনুরোধ, এ সকল বিষয়ের সংশয় দূরীভূত করার জন্য আপনাদের সাহায্য চাই। এ নিয়ে একটা আর্টিকেল লিখলে খুব খুশি হবো।
মোহরানা স্বামীর কাছে স্ত্রীর অধিকার, এটা ভিক্ষা নয়। যাদের নিয়ত ও চরিত্র যেমন তারা সব কিছুকে সেটার ভিত্তিতেই বিচার করবে। যেমন যে লোক চরিত্রহীন, টাকা দিয়ে যার তার সাথে শুয়ে পড়ে, তার কাছে এটাই মনে হবে যে দুনিয়ার সকল নারীই বুঝি এমন যে টাকা দিলেই তার সাথে শুয়ে পড়বে। একজন মানুষ যে পর্ণগ্রাফীতে আসক্ত তার কাছে তার আসে পাশের সবাইকেই মনে হবে যে আসলেই বুঝি এমন হওয়া সম্ভব, একটু চেষ্টা করে দেখলেই হয়তো আমিও এমন সব কিছু করতে পারব। যারা ঘুস দিয়ে অভ্যস্ত তাদের কাছে প্রকৃত উপহারকেও ঘুসই মনে হবে। যার অভ্যাসই শুধু সন্দেহ করা তার সাথে কেউ ভালো ব্যবহার করলেও সে চিন্তা করতে নিশ্চয় তার পিঠ পিছে তার বিরুদ্ধে কিছু করছে বা বলছে তাই তার সামনে ভালো হয়ে আছে।
এসব যার যার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি, তাই কার কি মনে হয় না হয় তা দিয়ে আসলে কিছু বিচার করা সম্ভব নয়। প্রতিটা বিয়ের পড়েই কি সংসার টিকে? অবশ্যই না, এমন রেকর্ডও আছে মাসখানেকের মাধ্যেই স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিয়ে গিয়েছে, এটা কি নারীর জন্য কষ্টদায়ক নয়? নারী পক্ষের জন্য আর্থীক ক্ষতি নয়? সামাজিক ভাবে, পারিবারিক ভাবে তাদের উপর চাপ সৃষ্টি হয় না। অবশ্যই হয়। সেহেতু স্ত্রীকে যদি এই অধিকার বা হক দেওয়া হয় তাহলে এতে সমস্যা কোথায়? এক জনের খুশিও কি সহ্য হয় না কাফেরদের?
আবার হাদিসে অল্প মোহরানার বিনিময়ে, কুরআন শিখানোকে মোহরানা হিসেবে নিয়েও বিয়ে দেওয়ার ঘটনাও আছে। দেখানতো পতিতাদের বেলায় এই জাতীয় ঘটনা। স্ত্রীকে রানী করে রাখা হয়, দেখানতে পতিতার সাথে কি রকম আচরণ করা হয়। স্ত্রীকে তার স্বামী প্রকৃত অর্থে ভালোবাসে, দেখানতো পতিতাকে কেউ নরমালিও দেখে কিনা। স্ত্রী হিসেবে একজন নারী সমাজে সবার কাছে সম্মানিতা হয়ে থাকে, দেখানতো পতিতাকে কেউ ভালো চোখে দেখে কিনা। স্ত্রীকে সারা জীবনের জন্য কাছে চায় মানুষ, আর পতিতাকে শুধু কিছুক্ষনের জন্য। স্ত্রীকে শুধু তার দেহের জন্য কেউ ভালোবাসে না, কিন্তু পতিতার কাছে শুধু তার দেহের কারনেই যায়। স্ত্রীর কথা বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ায় মানুষ আর পতিতার কথা জানলেতো সেই লোকটার আত্মহত্যা করার মত অবস্থা হয়ে যায় লজ্জায়। স্ত্রী দায়িত্ব, ভরন, পোষন, নিরাপত্তা সব কিছু স্বামী নেয়, আর পতিতার সাথেতো সুন্দর করে কেউ কথাও বলে না।
তাহলে কিসের সাথে কিসের তুলনা? তুলনা করতেও খাটে বিষয়ে এমন তুলনা করা যায়, কিন্তু এখানে খাটে না খাটে তা চিন্তা করে নাস্তিকদের এসব তুলনা মুর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আর টাকা পয়শা ছাড়া কি আপনি জীবিত থাকতে পারবেন? আপনার স্ত্রী থাকলে বলিয়েনতো আপনি আজ থেকে তাকে একটা টাকাও দিবেন না, ঘরের যা লাগবে আপনি নিজেই নিয়ে আসবেন, তার হাতে এক টাকাও দিবেন না, আপনি শুধু তাকে ভালোবাসা দিয়ে যাবেন, কারন হিসেবে তাকে বলবেন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হলো ভালোবাসার সম্পর্ক। এর মাঝে টাকা-পয়সার কোনো বিষয় আসতেই পারে না। তার পর দেখিয়েন কি হয় আপনার সাথে।
ভাইজান এসব আবেগি কথাবার্তা শুধু নাটক-সিনেমাতেই মানায়, বাস্তব জীবনে না। এখন টাকা পয়শা ছাড়া দুনিয়া চলে না। টাকা পয়শার কম বেশির উপর ভিত্তি করে বহু মা-বাবা পর্যন্ত সন্তানদের মাঝে বৈষম্যমূলক আচরণ করে, সেখানে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে টাকা পয়সার কোন বিষয় আসতে পারে না বলাটা চরম অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই না।
Please login or Register to submit your answer