রাসূল সা বক্ষ বিদীর্ণ সংক্রান্ত হাদিস
১. রাসূল (সা) এর বক্ষ বির্দীর্ণ হয়েছিল ২ বার। আপনি যেটা বলছেন সেটা রাসূলের ছোট বেলার কাহিনি, আরেকটি ছিল মেরাজের যাওয়ার আগে। ছোট বেলায় হওয়া ঘটনায় রাসূলের ভাই-বোনেরা বিষয়টা দেখেছিলেন। পরে হালিমা ভয় পেয়ে যান এবং রাসূলকে ফেরত দিয়ে আসেন। [মুসলিম ১৬২; মিশকাত ৫৮৫২; নবীদের কাহিনী, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ), মাক্কী জীবন, বক্ষ বিদারণ অনুচ্ছেদ, আসাদুল্লাহ আল গালিব] দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে মিরাজের আগে যার বিস্তারিত বিবরণ রাসূল নিজের মুখেই দিয়েছিলেন। [বুখারী ৩৮৮৭, ৩৪৯; মুসলিম ১৬৪, ১৬৩; মিশকাত ৫৮৬২, ৫৮৬৪]
দুই ঘটনার সনদেই আনাস ইবনু মালিক (রা) রয়েছেন যা থেকে এটা বলাই যায় যে তিনি রাসূলের কাছ থেকেই হয়তো এই ঘটনাটি শুনেছেন, না হয় কি তিনি রাসূলের নামে এত বড় মিথ্যা কথা নিজ থেকে বানিয়ে প্রচার করবেন? এছাড়া রাসূল নিজ মুখে কেন সেটার কথা বর্ণনা করতে পারবেন না? যখন বক্ষ বির্দীর্ণ করা হচ্ছিল রাসূল কি সেই মুহুর্তেই ঘটনা বর্ণনা করছিলেন সবার কাছে?
২. পানি দ্বারা নালার পানিও বুঝায়, ময়লার পানিও বুঝায়, সাগরের পানিও বুঝায়, লালাকেও বুঝায়, চোখের পানিকেও বুঝায়, মূত্রকেও বুঝায়, খাওয়ার পানিকেও বুঝায়, বৃষ্টির পানিকেও বুঝায়, ভূগর্ভস্ত পানিকেও বুঝায়, অনেক ক্ষেত্রে নারী পুরুষের বীর্য বা কামরসকেও বুঝায় আরো বহু জিনিসকেই বুঝাতে পারে। এখন আপনি কনটেক্স না বুঝে যদি সব যায়গায় পানি বলতে একটাকেই বুঝান তাহলেতো তা আসলে চরম বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়! বাংলা ব্যকরণতো আশা করি পড়েছেনই, বাংলায় স্থান কাল পাত্র ভেদে কোন কোন শব্দ ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করতে পারে, আরবি শব্দের ক্ষেত্রে কি এই কথা প্রযোজ্য হয় না?
অথচ আরবিতে একেক শব্দের ৪/৫ বা তার চেয়েও বেশি ভিন্ন ধরনের অর্থ হতে পারে। যেমন এই আলাকার কথাই ধরি, আরবিতে এর আক্ষরিক ও পারিভাষিক অর্থগুলো হল জোঁক, রক্তপিন্ড, যা আঁকড়ে থাকে, শক্ত রক্ত, ভ্রুণের একটি পর্যায়, এমন কিছু যা যুক্ত থাকে ইত্যাদি। এই আলাকা অসংখ্য প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়, এমনি ব্রুণ সংক্রান্ত দূর দূরান্তেও কোন সম্পর্ক নেই এমন প্রেক্ষাপটেও ব্যবহার হয়ে থাকে। [ https://www.almaany.com/ar/dict/ar-ar/علقة/ ]
তাই আপনি যদি কোরআনের সেই আয়াত ও এই হাদিসে আলাকাকে এক বানিয়ে দেন প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করে তাহলেতো এটা ব্যবকরণের উপরই চরম জুলুম, তাই নয় কি?
৩. হাদিসে যে আসলেই আপনি যা বলছেন ক্লট নাকি কি যেন সেটাকেই যে বুঝানো হয়েছে এটার নিশ্চয়তাটা কি? আপনার কথা দ্বারাতো মনে হচ্ছে এই ক্লটটাই মূলত সয়তান যা মানুষকে ওয়াসওয়াসা দেয় কিন্তু আদো কি বিষয়টা এমনই? এই আলাকা দ্বারা দিয়ে কি অন্য কিছুকে বুঝিয়ে থাকতে পারে না? বর্তমানে বিজ্ঞানেতো মানব দেহের সূক্ষ থেকে সূক্ষ রগেরও ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে রেখেছে, কিন্তু তখনতো এত বড় শব্দের ভান্ডার ছিল না মানব দেহের বিভিন্ন অংশের ব্যপারে, তাহলে আলাকা দ্বারা যে আপনার বলা ক্লটকেই বুঝিয়েছে সেটার নিশ্চয়তাটা কি?
Abū Mūsā al-Madīnī, al-Majmūʿ al-Mughīth fī Gharībay al-Qurʾān wa-l-Ḥadīth (d. 1185 CE)
المجموع المغيث في غريبي القرآن والحديث لأبو موسى المديني
علق) – في حديث سَرِيَّةَ للنَّبِيِّ – صلى الله عليه وسلم -: “فإذا الطَّيْرُ تَرْمِيهِم بالــعَلَق”
: أي بقِطَع الدَّم، الواحدة عَلَقَــة.
– ومنه حَدِيثُ ابنِ أبي أَوفَى: “أنه بَزَقَ عَلَقَــةً، ثم مَضَى في صَلاتِه
আরবি ইবরাত সহ ডিকশনারির রেফারেন্স দিলাম দুইটা হাদিস সহ। এই হাদিস দ্বয়ে আলাকা অর্থ ক্লট বা রক্তপিন্ডই হয়। দ্বিতীয়ত, আলাকা শব্দটার অর্থ মুফাসিরেরা গবেষনা করে বের করছে এটা ভুল। কারণ আরবের মানুষ আগে থেকেই আলাকা যদি এনাটমিকাল বা অঙগসংস্থান সংক্রান্ত কোন কন্টেক্সটে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সেটার অর্থ রক্তপিন্ডই বুঝত এই একই কন্টেক্সটে তারা ভিন্ন কোন অর্থ বুঝত না।তার মানে আরবে পূর্ব থেকেই আলাকা মানে রক্তপিন্ড প্রচলিত ছিল। এটা মুফাসসিরদের গবেষনা নয়। আলাকার এই শারীরিক কনটেক্সটের ক্ষেত্রে অর্থ অবশ্যই রক্তপিন্ড। রক্তপিন্ড অর্থ না নেওয়া সুস্পষ্ট সালাফদের আকিদা বিরোধী। যেটা আপনারা করতে চান না কিন্তু অসারতার কারণে মাঝে মধ্যে Double standards প্রদর্শন করেন। গ্রিক সভ্যতার এরিস্টটলের ধারণা ছিল পুরুষদের শুক্রানু আর মেয়েদের ঋতুস্রাবের রক্ত জমাট বেধে মানব ভ্রূন গঠিত হয়। বিভিন্ন ডিকশনারি খুললে সূরা দাহরের মাশাজ শব্দটাএ অর্থও পাওয়া যায়, রক্ত ও শুক্রানুর মিশ্রণ। গ্রিকদের এই ভ্রান্ত বিশ্বাসগুলাই কেন যেন এখানে ফুটে উঠেছে। এর ব্যখ্যায় কি বলবেন?
আলাকাহ শব্দের অর্থ কী সেটা নিয়ে ফ্রম মুসলিমস্ এ একটি আর্টিকেল রয়েছেঃ
https://www.frommuslims.com/?p=1840
আলাকা অর্থ যে কি তার উত্তরতো আমিও দিয়েছিলাম ডিকশনারী থেকেই। Double standards আসলে কাকে বলে আদো জানেন নাকি নিজেকে বহু জ্ঞানী সাজাতে শব্দটির ব্যবহার করছেন? ভিন্ন অর্থ থাকায় তা গ্রহন করা Double standards? আমিতো এই জাতীয় নীতি নিজের বাপের কি দাদা এমনকি তারও দাদার জন্মেও শুনি নাই। অথচ আপনি বলছেন এটা মুফাস্সিররা এভাবে বুঝেছে, কিন্তু তারা কি কোথাও বলেছে যে রক্তপিন্ড ছাড়া আর কোন অর্থই সঠিক নয়? তারা কি বলেছে যে রক্তপিন্ড ছাড়া আর কোন অর্থই নেওয়া যাবে না? বলেন নি, এমনকি ভিন্ন অর্থ গ্রহন করেছেন পূর্বের ওলামাগণের অনেকে এমন সুস্পষ্ট প্রমানও রয়েছে। তারপরও ভিন্ন অর্থ নেওয়া Double standards? সালাফদের আকিদার বিরোধী! এই আজিব নেশাখুরি কথা আমি কখনো শুনি নাই। আর আপনিতো শুধু রক্তপিন্ডের কথা বলেছেন, অথচ বহু মুফাস্সির রক্তপিন্ডও অনুবাদ করেনি বরং তারা সরাসরি জোঁক বা তার সদৃশ অনুবাদ করেছেন, তাদেরকেও কি বলবেন যে তারা সালাফ বিরোধী? না হয় সেহেতু এখন হাদিসের আলাকাকে রক্তপিন্ড অনুবাদ না করে জোঁক অনুবাদ করবেন? করবেন না, কারন এই অনুবাদ হাদিসের এখানে খাটবেও না, যার ধরুন ইসলামের বিরোধীতা করার মতও কিছু তৈরি করা যাবে না, রক্তপিন্ড অনুবাদ করলেতো দুটোকেই মিলানো যাবে এবং ইসলাম ভুল বলে লাফালাফি করা যাবে, তাই নিজের সুবিধামত সেটাকেই নিচ্ছেন সঠিক নাকি বেঠিকের তোয়াক্কা না করে। আপনি আদো জেনে কথা বলছেন কিনা আল্লাহই ভালো জানেন। নিজে কনফার্ম হয়ে জেনে তারপর শিখাতে আসিয়েন, https://www.frommuslims.com/?p=1840 ; https://islamicauthors.com/article/221; https://islamqa.info/ar/answers/421393/هل-تفسير-العلقة-بالدم-المتجمد-يخالف-العلم-الحديث ; https://islamqa.info/ar/answers/348627/لماذا-يفسر-العلماء-العلقة-بالدم-الجامد-وهذا-يتعارض-مع-علم-الاجنة
Please login or Register to submit your answer
আপনি আমার প্রশ্নের তৃতীয় ভাগটি হয়ত বুঝেন নাই, আগে বুঝেন। ক্লট অর্থ রক্তপিন্ড। আমার প্রশ্ন, কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের হৃদপিন্ডে রক্তপিন্ড পাওয়া সম্ভব নয়। আর মানুষের গর্ভেও ভ্রূনের রক্ত পিন্ড হবার কোন পর্যায় নেই। দুটি জায়াগায় অর্থাৎ সূরা আলাক এবং বক্ষ বিদীর্নের হাদিসে একই শব্দ “আলাকাহ” ব্যবহৃত হয়েছে। কাজেই দুইটা জিনিসই মানব শরীর সংক্রান্ত কাজে এখানে প্রেক্ষাপট ভিন্ন হবার কোন অযুহাতও নেই। বুকেও রক্তপিন্ড থাকেনা, গর্ভেও থাকেনা। যদি বুকজের বিষয়টায় অর্থ রক্তপিন্ড ধরেও নেই তাইলে আবার সূরা আলাকে গরমিল হয়। আলাকাহ ভ্রূনের পর্যায় হবে না বুকের ভিতর অবস্থিত রক্তপিন্ড হবে কোনদিকে যাবেন আপনারা? আগে ক্লট অর্থটা যদি বুঝতেন তাহলে এমন প্যাচ লাগাইতেন না।
আপনি কি আদো আমার কথার আগামাথা কিছু বুঝেছেন? বুঝার চেষ্টাও করেছেন? নাকি আপনি বলতে চাচ্ছেন ব্রুন আর হৃদপিন্ড এক জিনিস? প্রেক্ষাপট এক মানেতো এটাই বুঝাচ্ছেন তাই নয় কি? আপনার কথা অনুযায়ী মনে হচ্ছে চোখের পানি, নাকের পানি, মূত্র, লালা, কামরস ইত্যাদি একই জিনিস, যেহেতু সবগুলোই পানিই
যাইহোক মেনেই নিলাম আপনার কথা দুটোতেই এক। তাহলে প্রশ্ন ভ্রুনের বেলায় রক্তপিন্ডকেই কেন নিচ্ছেন অর্থ? আর কি কোন অর্থ নেই এটার? ঠিক একই ভাবে হৃদপিন্ডের বেলায়ও ঠিক একই অর্থ কেন নিচ্ছেন? আর কি কোন অর্থ নেই এটার? হাদিসে যে হৃদপিন্ডে রক্তপিন্ডকেই বুঝিয়েছে সেটা আপনি কোথায় পেয়েছেন? হাদিসে কি বলা হয়েছে যে রক্তপিন্ডকেই বুঝানো হয়েছে? আবারও করছি প্রশ্ন হাদিস দ্বারা কি করে বুঝলেন ক্লটকেই বুঝানো হয়েছে? আর অন্য কোন কিছু কি কারনে বুঝাতে পারে না? রক্তপিন্ডই কেন অর্থ নিতে হবে? অন্য অর্থ কেন নেওয়া যাবে না? হাদিসে বলা আলাকা যে আপনার বলা রক্তপিন্ড বা ক্লটই এটার প্রমান কি? অন্য কিছু যে হতেই পারবে না সেটারই বা গ্যারান্টি কি?