জেনার কন্যাকে বিয়ে করা কি জায়েয?

প্রশ্নোত্তর (Q&A)Category: ইসলামজেনার কন্যাকে বিয়ে করা কি জায়েয?
সিফাত asked 2 months ago
আমি কয়েকটা তাফসিরে পড়েছিলাম ও ভারতের কিছু এক মুসলিম পরিচয় দেওয়া কিছু প্রতারকদের ভিডিওতে দেখেছিলাম যে, কোন ব্যক্তি যদি যিনা করে, এবং তার সেই যিনার কারনে সন্তান হয় তাহলে সেই সন্তান নাকি সেই লোকের নয়। এবং সেই লোক নাকি সেই কন্যাকে বিবাহও করতে পারবে। ইমাম শাফেয়ী ও অনেকেই নাকি এই মত দিয়েছেন। আমি সত্য মিথ্যা জানতে চাই এটার, দয়া করে উত্তরটা একটু দিবেন, প্লিজ। 
1 Answers
Ashraful Nafiz Staff answered 2 months ago

ফিকহি বিষয়গুলোতে গভীরে না গেলে আমরা উপর থেকে দুই একটা লিখা পরে অনেক সময় ভুল বুঝে বসে থাকি। যেমন দাসীর পর্দা নিয়ে আমি একটা আর্টিকেল লিখেছিলাম, ৪/৫টা লিখা পড়ে আমি যেই কনক্লুশনে পৌঁছে ছিলাম তা একদম পরিবর্তন হয়ে যায় যখন আমি বিস্তারিত নিজে গবেষণা করে লিখা শুরু করি। লিখার সময়ও আমি যে কনক্লুশনে পৌঁছাচ্ছিলাম তা ৪/৫ বার পরিবর্তন হয়েছিল লিখা শেষ হতে হতে। কিন্তু এই বিষয়ে বিস্তর ফিকহি ও ওলামাদের বক্তব্য টেনে আলোচনা করার মত হাতে সময় নেই, অবশ্য প্রয়োজনই নেই মনে হয়, তাই আপাতত শুধু কোরআন ও হাদিসের আলোকে এই বিষয়টা নিয়ে কিছু বলব।

প্রথমত এই বিষয়টা নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। ২য়ত এই জাতীয় বিয়ে যাদের মতে বৈধ তাদের কাছে বৈধ হওয়ার পক্ষে কোন সুস্পষ্ট সরাসরি বৈধ বলা হয়েছে এমন সহিহ হাদিস নেই, আর কোরআন হতেও এর পক্ষে কোন দলিল নেই। অর্থাৎ তারা সম্পূর্ণ ইজতিহাদের উপর ভিত্তি করেই এই ফতুয়া দিয়েছেন।

যারা এই বিবাহ বৈধ বলেছেন তারা মূলত কিছু হাসান হাদিস যেখানে বলা হয়েছে ‘জিনার কারণে হওয়া জারজ সন্তান তার জন্ম দাতা পিতার ওয়ারিশ হবে না, উত্তরাধিকার পাবে না, তাকে তার মায়ের সাথে সংযুক্ত করা হবে, সে তার মাতার পরিচয়ে, ওয়ারিশ, উত্তরাধিকারে থাকবে অথবা সন্তান জন্ম হওয়ার আগে যে লোক সেই নারীর স্বামী হবে সন্তান তার পরিচয়ে থাকবে’ [1] এই হাদিসের উপর ভিত্তি করে ইজতিহাদি মত প্রধান করেছেন। আবার তাদের মতে ব্যভিচারের কারনে হুরমতে মুসাহারাতের কনসেপ্ট এর মাধ্যমে হালাল জিনিস হারাম হয়ে যায় না কারণ এই সংক্রান্ত হাদিসগুলো যইফ ও কিছু হাদিসে বলা হয়েছে হারাম জিনিস কখনো হালাল সম্পর্ককে হারাম করে না। [1.1] তাদের এই মত আগের হাদিসের উপর ভিত্তি করে দেওয়া মতকে আরো শক্তিশালী করে বলে অনেকে বিবেচনা করেন। এই বিষয়ে কিছু আলোচনা করা যক তাহলে।

বেশ কয়েকভাবে প্রমাণ করা সম্ভব যে এই জাতীয় বিবাহ স্পষ্টতই হারাম।

[[1]]

হুরমতে মুসাহারাত কি হয়ত অনেকে না জেনে থাকতে পারেন, এটা হল বিবাহ বা ব্যভিচারের কারণে হালাল সম্পর্ক হারাম হয়ে যাওয়া। যেমন আমি যদি কোন নারীর সাথে ব্যভিচার করি অথবা বিবাহ করি তাহলে সেই নারীর আপন মেয়ে ও মা আমার জন্য হারাম হয়ে যাবে, আমি আর তাদেরকে বিয়ে করতে পারব না। এইটা হল মূলত হুরমতে মুসাহারাতের বেসিক কনসেপ্ট। কিন্তু শাফেয়ী ও মালেকিদের মতে ব্যভিচারের কারনে হুরমতে মুসাহারাত সাভ্যস্ত হওয়ার মত এমন কিছু ইসলামে নেই, কারণ এই সংক্রান্ত হাদিসগুলো জয়িফ।

কিন্তু একটা বিষয় লক্ষণীয়, হাদিসগুলো যয়িফ হলেও সেখানে যারা আমার বায়োলজিক্যাল মেয়ে না বা আমার বিবাহ করার স্ত্রীর মা নয় তারা আমার জন্য হারাম হচ্ছে, তাই মালেকি ও শাফেয়ীদের কথা মত মেনে নিলাম হাদিসগুলো জয়িফ হওয়ায় তারা আমার জন্য হারাম হবে না। কিন্তু ব্যভিচারের কারণে যে কন্যা সন্তান জন্ম হবে সেতো আমার আপন কন্যা, সেতো আমার রক্ত তাহলেতো কোরআনের আয়াত অনুযায়ী সে আমার জন্য হারাম হবেই, তাহলে বুঝলাম হারামের কারণে হালাল সম্পর্ক হারাম হয় না, কিন্তু হারামের কারণে হারাম সম্পর্ক কি করে হালাল হতে পারে? কারণ সেই কন্যাতো এমন নয় সে সে আমার বায়োলজিক্যালী জন্ম দেওয়া কন্যা নয়, বরং সেই মেয়েতো আমারই রক্তের, আমিইতো তার জন্মদাতা পিতা যদিও তা ব্যভিচারের মাধ্যমেই হোক না কেন।

আমরা সবাই মাহরামের কনসেপ্ট মোটামুটি জানি। মাহরাম হয় মূলত ৩ ভাবে, ১. রক্ত সম্পর্কের কারণে ২. বৈবাহিক কারণে ৩. দুধ সম্পর্কের কারণে

কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,

وَ هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ مِنَ الۡمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَهٗ نَسَبًا وَّ صِهۡرًا ؕ وَ کَانَ رَبُّکَ قَدِیۡرًا

আর তিনিই পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কযুক্ত করেছেন। আর তোমার রব হল প্রভূত ক্ষমতাবান। [2]

এখানে نسب বলতে (রক্তগত) আত্মীয়তা যা মা-বাপের সঙ্গে সম্পর্কিত, সে একসময় কারো সন্তান ও একসময় কেউ তার সন্তান হয়। আর صِهر বলতে (বৈবাহিক) আত্মীয়তা যা বিবাহের পর স্ত্রীর পক্ষ থেকে হয়, যাকে আমরা বৈবাহিক সম্বন্ধ বলে থাকি। যেমন একসময় সে কারো জামাই হয়, পরবর্তীতে কেউ তার জামাই হয় (মেয়ের স্বামী) [3]

হাদিসে এসেছে,

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَحْرُمُ مِنَ الرَّضَاعَةِ مَا يحرم من الْولادَة» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বংশগত (রক্ত সম্পর্কের) কারণে ও দুধপান সম্পর্কের ভিত্তিতে সকল ক্ষেত্রে বিবাহ হারাম। [4]

সব জায়গায় রক্তের কারণে বিবাহ হারাম বলা হয়েছে, শুধু বিবাহের মাধ্যমেই সন্তান হলে তা হারাম হবে এমনটা বলা হয়নি। [5] ব্যভিচারী পিতার জন্য তার অবৈধ কন্যাকে বিবাহ করা বৈধ নয়, যদিও সেটা অবৈধ কিন্তু তারপরও সেই কন্যা তারই রক্ত, তারই বীর্য হতে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন। [6]

এই হতে কি রক্ত সম্পর্কের কারণে জারজ কন্যাকে তার ব্যভিচারী পিতা বিবাহ করা হারাম সাভ্যস্ত হয় না? অবশ্যই হচ্ছে।

[[2]]

আরেকভাবে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা যাক। কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন,

حُرِّمَتۡ عَلَیۡکُمۡ اُمَّهٰتُکُمۡ وَ بَنٰتُکُمۡ وَ اَخَوٰتُکُمۡ وَ عَمّٰتُکُمۡ وَ خٰلٰتُکُمۡ وَ بَنٰتُ الۡاَخِ وَ بَنٰتُ الۡاُخۡتِ وَ اُمَّهٰتُکُمُ الّٰتِیۡۤ اَرۡضَعۡنَکُمۡ وَ اَخَوٰتُکُمۡ مِّنَ الرَّضَاعَۃِ وَ اُمَّهٰتُ نِسَآئِکُمۡ وَ رَبَآئِبُکُمُ الّٰتِیۡ فِیۡ حُجُوۡرِکُمۡ مِّنۡ نِّسَآئِکُمُ الّٰتِیۡ دَخَلۡتُمۡ بِهِنَّ

তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিজীদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সে সব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদেরকে [7]

۪ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَهُنَّ اِلَّا لِبُعُوۡلَتِهِنَّ اَوۡ اٰبَآئِهِنَّ اَوۡ اٰبَآءِ بُعُوۡلَتِهِنَّ اَوۡ اَبۡنَآئِهِنَّ اَوۡ اَبۡنَآءِ بُعُوۡلَتِهِنَّ اَوۡ اِخۡوَانِهِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اِخۡوَانِهِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اَخَوٰتِهِنَّ اَوۡ نِسَآئِهِنَّ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُهُنَّ اَوِ التّٰبِعِیۡنَ غَیۡرِ اُولِی الۡاِرۡبَۃِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفۡلِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یَظۡهَرُوۡا عَلٰی عَوۡرٰتِ النِّسَآءِ ۪

আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজেদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। [8]

কোরআনের আয়াতে কন্যাদের সহিত বিবাহকে হারাম করা হয়েছে, এসব আয়াতে আমভাবে "কন্যা" বা “পিতা” বলা হয়েছে। প্রায় সব ওলামা এই আয়াতের ‘কন্যা’ শব্দটা আম হিসেবেই নিয়েছেন ও বলেছেন যে কন্যা বলতে বৈধ অবৈধ সব কন্যারাই উদ্দেশ্য। আরবি ভাষায় কন্যা বলতে স্পেসেফিক্যালি বৈধ কন্যাদের উদ্দেশ্য করা হয় না, বরং যেকোনো ধরনের কন্যাকেই বুঝায়। আরবি ভাষায় বিনতুন শব্দটা দ্বারা সাধারণ ভাবে কন্যা বুঝায়, অবৈধ হোক বা বৈধ।

এখন, তাফসিরশাস্ত্রের অগ্রাধিকারপ্রাপ্তিতা নির্ণয়ের (তারজিহ) একটি মূলনীতি অনুযায়ী :

‘কোরআনের আয়াতকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে আম অর্থ গ্রহণ করে যেই ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে সেই ব্যাখ্যাটি খাস অর্থ গ্রহণ করে যেই ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে সেই ব্যাখ্যাটির উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। অর্থাৎ আম অর্থ অনুযায়ী প্রদানকৃত ব্যাখ্যা গায়রে আম অর্থ অনুযায়ী প্রদানকৃত ব্যাখ্যার উপর অগ্রাধিকার প্রাপ্ত হবে, যদি গায়রে আম অর্থের পক্ষে "নস" (মানে কোরান হাদিসের সুস্পষ্ট দলিল) না থাকে।’ (এটা হল সারমর্ম) [9]

এই নীতি অনুযায়ী, এক্ষেত্রে সঠিক মত হচ্ছে এটাই যে কোরআনের যেসব আয়াতে কন্যাদের সহিত বিয়ে হারামের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেসব আয়াতে কন্যা বলতে আমভাবে বৈধ-অবৈধ উভয় জাতীয় কন্যাই উদ্দেশ্য, খাসভাবে বৈধ বা অবৈধ কন্যা উদ্দেশ্য না। কেননা কোরআন হাদিসের কোথাও বলা হয় নি যে কন্যাদের সহিত বিয়ে হারামকরণের আয়াতে কন্যা বলতে বিশেষভাবে বৈধ কন্যারাই উদ্দেশ্য।

কোরআনের এই আয়াতগুলোর আমত্ব বাতিল করা সম্ভব না, কারণ এর আমত্ব বাতিল করার পক্ষে সুস্পষ্ট নস নেই। সবার আগে কোনোভাবে সেই আমত্ব বাতিল করতে হবে, অন্যথায় সেই আয়াতে জারজ কন্যাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতটাই অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সঠিক মত হিসেবে গণ্য হবে।

[[3]]

জমহুর উলামাদের মতে নিজ জিনার কন্যাকে বিয়ে করা হারাম। অর্থাৎ কেউ যদি জিনা করে ও সেটার কারণে কন্যা সন্তান জন্ম হয় তাহলে সেই কন্যাকে তার জন্মদাতা ব্যভিচারী পিতা বিবাহ করা সম্পূর্ণ হারাম। [10]

জুমহুর উলামাদের একটা কমনসেন্সভিত্তিক ফতোয়াকে উপেক্ষা করে সামান্য হাতেগোনা অল্প সংখ্যক উলামাদের ভয়াবহ ফতোয়াকে গ্রহণ করা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। অনেকে বলে হারাম না হওয়ার দলিল নেই তাই হালাল, এই উসুল এই মাসয়ালায় জীবনেও খাটবেনা, কারণ হুরমতে মুসাহারাহ বলে একটা জিনিস আছে, ধরেন মেনে নিলাম ব্যভিচারীর অন্য ঘরের কন্যা ও মাতা হারাম হবে না, কিন্তু তারপরও জমহুর উলামাদের মতে এই কেইসে পিতা ও জারজ কন্যার মাঝে হুরমতে মুসাহারাহ প্রমাণিত হবে, এইখানে হুরমতে মুসাহারাহ থাকবেনা বা মুহাররামাত (মাহরাম সম্পর্ক) থাকবে না এইটা স্পষ্ট কমনসেন্স বিরোধী কথা এবং চরম ভুল।

এছাড়া বাস্তবে জারজ কন্যা ফিকহি দৃষ্টিকোণ হতে আইনি ভাবে কন্যা হবে নাকি না এটা নিয়েই ইখতিলাফ আছে এবং কোনো সুস্পষ্ট দলিল নাই এ ব্যাপারে। হয়ত অনেকে বলতে পারে ইমাম শাফেয়ীর মত একজন ভুল বলেছে! এই ক্ষেত্রে জুমহুর উলামাগণের কমনসেন্স এবং অধিক গ্রহণযোগ্য উসুলের বিপরীতে ইমাম শাফেঈ আর উনার কিছু অনুসারীদের মত আসলে তেমন কিছুই না।

এছাড়া শাফেয়ীরা যে দলিলের উপর ভিত্তি করে ইজতিহাদি মত দিয়েছেন সেই দলিলে জারজ কন্যার কন্যা না হওয়ার দাবির পক্ষে যা কিছু বলা হয়েছে, সেসব কিছু দ্বারা নিছক এতটুকু প্রমাণিত হয় যে জারজ সন্তান বৈধ সন্তান না, সে উত্তরাধিকার সূত্রে কিছুই পাবে না, এসব দ্বারা এটা প্রমাণিত হচ্ছে না যে জারজ কন্যাকে কন্যাই বলা হবে না।

এছাড়া যারা ব্যভিচারের কারনে হুরমতে মুসাহারাত সাভ্যস্ত হয় না এই মতকে সমর্থন করে বা সঠিক মনে করে তাদেরও মধ্যেও অসংখ্যা ওলামা কোরআনে নিজ কন্যাকে হারাম করার দলিলের ভিত্তিতেই এই জাতীয় বিবাহকে হারাম বলে ফতুয়া দিয়েছেন। [11] এমনকি ৪৮৯ হিজড়ীতে জন্ম হওয়া আবু আল-হুসাইন ইয়াহিয়া বিন আবি আল-খায়ের আল-ওমরানি (রহ)-এর লিখিত শাফেয়ী মতবাদ নিয়ে বিখ্যাত কিতাব ‘কিতাব আল বায়ান ফি মাযহাব আল ইমাম আল শাফেয়ী’ এ উল্লেখ রয়েছে, জিনা করার পর জন্ম নেওয়া কন্যাকে বিবাহ করার মত এই জাতীয় বিবাহকে ইমাম শাফেয়ী ঘৃণা করতেন, কিন্তু তিনি নাজায়েজ বলেন নি বা বিবাহ ভাঙ্গার চিন্তা করেননি। এমনকি বহু শাফেয়ীদের মাঝে এই ঘুণা কি অর্থে তা নিয়ে মতভেদ ছিল, এবং অনেকে এই বিবাহকে মাকরুহ মনে করতেন, যদিও কেউ কেউ জায়েজ বলেছেন। সেই কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে যে পরবর্তী সময়ের শাফেয়ীগণ ও অসংখ্যা মালেকি কোরআনে নিজ কন্যাকে হারাম করার দলিলের ভিত্তিতে বলেছেন, ‘যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে ব্যভিচারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া কন্যাটি সেই লোকেরই তাহলে সেই কন্যাকে বিবাহ করা তার জন্য জায়েজ নয়, কারন কন্যাটি সেই লোকের বীর্য হতেই জন্ম হয়েছে, এবং এটাই সঠিক মত’। [12]

‘অবৈধ কন্যাকে তার ব্যভিচারী পিতা বিবাহ করতে পারে না’ এই জাতীয় স্টেট ফরোয়ার্ড সুস্পষ্ট করে কথা হাদিস বা কোরআনে না থাকলেও, প্রায় সমস্ত দলিল-প্রমান, যুক্তি, কমনসেন্স, ৪ মাযহাবের প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি ওলামা আম ভাবে পিতার জন্য তার বৈধ ও অবৈধ উভয় জাতীয় কন্যাকেই বিবাহ হারাম হওয়ার পক্ষে। তাই একে জায়েজ প্রমান করতে যাওয়াটা নিছক মুর্খতা ছাড়া যে আর কিছুই না তা আমরা প্রমান করে দেখালাম।

ফ্রম মুসলিমস দুই লেখক তাহসিন আরাফাত ও সামিউল হাসান তবিব আল ইনফিরাদী ভাইদেরও সাহায্য ছিল এই লিখাতে।

তথ্যসূত্রঃ-
=======

[1] মিশকাত ৩৩১৮; আবু দাউদ ২২৭৪

[1.1] কিতাব আল বায়ান ফি মাযহাব আল ইমাম আল শাফেয়ী ৯/৪৫৫

[2] সূরা ফুরকান আয়াত ৫৪

[3] আদওয়াউল বায়ান; তাফসিরে বাগভী; তাফসীরে জাকারিয়া; তাফসীরে আহসানুল বায়ান; তাফসির ইবনে কাসির, তাফসিরে তাবারি, সুরা ফুরকান আয়াত ৫৪ এর তাফসির

[4] মিশকাত ৩১৬১-৬৩

[5] https://www.hadithbd.com/books/detail/?book=28&chapter=3694 ; https://islamqa.info/en/answers/5538/ ; https://www.drkhalilurrahman.com/1354/article-details.html ; https://www.hadithbd.com/books/link/?id=14714 ; https://al-itisam.com/article_details/1765; https://seekersguidance.org/answers/hanafi-fiqh/who-is-mahram/

[6] https://shamela.ws/book/27107/70285

[7] সূরা নিসা আয়াত ২৩

[8] সূরা নূর আয়াত ৩১

[9] https://shamela.ws/book/669/457

[10] https://www.islamweb.net/ar/fatwa/197247 ; https://shamela.ws/book/7289/15744

[11] https://shamela.ws/book/27107/65363 ; https://binbaz.org.sa/fatwas/6934/حكم-من-تزوج-بابنته-غير-الشرعية-بدون-علم

[12] https://shamela.ws/book/21721/4600#p1 , ৯/৪৫৬-৪৫৭। একই কথা আরো উল্লেখ রয়েছে, https://shamela.ws/book/6157/4139#p1https://shamela.ws/book/16934/4322#p1

Fahim Khan replied 1 month ago

Mashallah

Back to top button