তাওবার দরজা রয়েছে?
- সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০৭০ নং হাদিসে দেখা যায়, সূর্য ডোবার স্থানে একটি দরজা রয়েছে যা কেয়ামত পর্যন্ত খোলা থাকবে। কিন্তু আমরা জানি যে সূর্য ডবার স্থান বলতে কিছু নেই। এবং গোলাকার পৃথিবীতে পশ্চিম দিক বলতে কিছু এক্সিস্ট করেনা, এবং গোলাকার পৃথিবীতেতে সূর্য ডোবার স্থানও অসংখ্য, তাহলে সূর্য ডোবার স্থানে একটি দরজা কিভাবে থাকা সম্ভব? কারণ এই বিষয়টা একমাত্র তখনই সম্ভব যখন পৃথিবী চ্যাপ্টা হিসাবে বিবেচনা করা যায়।
বর্ণনাগুলো অনুযায়ী ছায়াপথ (হাদিসের ইংরেজি অনুবাদে Milky Way বলা হয়েছে) আসমানের দরজা বা প্রবেশদ্বার। নাস্তিক-মুক্তমনারা এই উক্তি থেকে ‘বৈজ্ঞানিক ভুল’ (!) বের করার চেষ্টা করে। সম্ভবত তাদের সীমাবদ্ধ চিন্তা-ভাবনা অনুযায়ী ‘দরজা’ বা ‘দ্বার’ মানেই আমাদের বাড়িঘরের দরজার মতো কোনো কিছু হতে হবে। তাদের অবগতির জন্য জানাতে চাই, ‘দরজা’ মানেই ঘরের দরজার মতো কোনো কিছু – বিষয়টা মোটেও এমন নয়। ঘরের দরজা আর আসমানের দরজা এক জিনিস নয়। কিছু উদাহরণ দিলে এটা হয়তো বুঝতে সহজ হবে। প্রাইভেট কারেও দরজা থাকে, আবার বাড়ি-ঘরেও দরজা থাকে। এই ২ প্রকারের দরজা কি এক রকম হয়? মোটেও না। যেটা যেমন জিনিস, এর ‘দরজা’ও সে অনুযায়ী হয়। এবার আরো একটা উদাহরণ দেই। তুরস্ককে বলা হয় ইউরোপের ‘প্রবেশদ্বার’ (Gateway)। এই কথার অর্থ কি এই যে তুরস্ক একটা বাড়ির দরজার মতো যা ঠক ঠক করে নক করা যায়? কেউ যদি বলে এই কথার মাঝে ‘বৈজ্ঞানিক ভুল’ (!) আছে, তাহলে বিষয়টা কেমন হবে? সেটাকে আপনি মুক্তচিন্তা বলবেন নাকি বোকামী বলবেন?
কুরআনের আয়াত এবং বহু সংখ্যক হাদিস থেকে প্রমাণিত যে আসমানে ‘দরজা’ আছে এবং সেগুলো বিভিন্ন সময়ে খুলে দেয়া হয়।
নবী করীম(ﷺ) ইরশাদ করেছেন,
إِذَا نُودِيَ بِالصَّلاَةِ فُتِحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَاسْتُجِيبَ الدُّعَاءُ،
অর্থঃ ‘যখন আযান দেওয়া হয়, তখন আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দো‘আ কবুল করা হয়’। [4]
রাসূল(ﷺ) বলেন,
وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ تُحْمَلُ عَلَى الْغَمَامِ وَتُفْتَحُ لَهَا أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَيَقُولُ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ وَعِزَّتِي لأَنْصُرَنَّكَ وَلَوْ بَعْدَ حِينٍ.
অর্থঃ ‘মাযলূমের দো‘আ মেঘের উপরে তুলে নেওয়া হয় এবং উহার জন্য আকাশের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয়। আর আল্লাহ তা‘আলা বলতে থাকেন, আমার ইয্যতের কসম! আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব একটু পরে হলেও।” [5]
রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন,
إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ، وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ ".
অর্থঃ “রমযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শৃংখলিত করে দেয়া হয় শয়তানকে।” [6]
এমন আরো বহু হাদিস রয়েছে যার সবগুলো উল্লেখ করলে লেখার কলেবর অনেক বেড়ে যাবে। উপরের হাদিসগুলো থেকেই এটি স্পষ্ট যে আসমানের ‘দরজা’ মোটেও ঘরের দরজার মতো কিছু না যা ঠক ঠক করে নক করার মতো কিংবা হাতল ধরে টেনে খোলা বা বন্ধ করার মতো কিছু। আমরা উপরের হাদিসে দেখছি যে মাজলুম ব্যক্তির দোয়াকে উপরে তুলে নেয়া হয় এবং এর জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। আযানের সময়েও দোয়া কবুল করা হয় এবং আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। দোয়া এমন জিনিস যার জন্য বাড়িঘরের দরজা খোলার কোনো ব্যাপার ঘটে না, কিন্তু আসমানের দরজা ঠিকই খোলা হয়। আবার বেশি বেশি নেক আমলের মাস রমযান মাসেও বিশেষভাবে আসমানের দরজা খোলা হয়। কী রূপে এই ‘দরজা’ খোলা হয় তা আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন। আমাদেরকে এর স্বরূপ জানানো হয়নি। এটি গায়েবের বিষয়। কিন্তু হাদিসের বর্ণনা থেকে এটি স্পষ্ট যে এটি বাড়িঘরের ‘দরজা’ র মতো কোনো কিছু না। আধুনিক বিজ্ঞানের এই যুগে আমরা জানি যে ছায়াপথ হচ্ছে তারকা, নাক্ষত্রিক অবশেষ, আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস, ধূলিকণা ইত্যাদি নিয়ে গঠিত মহাকর্ষীয় টানে আবদ্ধ একটি জগৎ। বিজ্ঞান আমাদেরকে বস্তুগতভাবে এই বিষয়ে জানায়। কিন্তু হাদিসে যে ‘আসমানের দরজা’র কথা বলা হয়েছে তা ভিন্ন এক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয়েছে। হাদিসের এই তথ্য বিজ্ঞানের তথ্যকে সত্যায়নও করে না, নাকচও করে না। যারা এখান থেকে ‘বৈজ্ঞানিক ভুল’ এর অভিযোগ তোলে তারা বৃথা চেষ্টা করে।
- ছায়াপথ ও রংধনু সম্পর্কিত সাহাবীদের উক্তি এবং নাস্তিকদের অভিযোগ
দরজার বিষয়ে যে প্রশ্নটি করলেন তার বিষয়টি বুঝাতে মিনার ভাইয়ের অন্য সমজাতিয় একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখার কিছু অংশ তুলে ধরলাম। আশা করি দরজা নিয়ে আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই।
এছাড়া উদাহরণ দেওয়া যায়, জাপানকে সূর্যদয়ের দেশ বলা হয়, কিন্তু প্রশ্ন হল জাপানেই কি শুধু সূর্য উঠে? বা সূর্যতো উঠেও না! ধরেন বুঝার সার্থে সহজ করার জন্য উঠা শব্দটা ব্যবহার করলাম কিন্তু এতেও সমস্যা হল উঠার স্থানতো অসংখ্যা! মজার বিষয় কি জানেন? নরওয়েওকেও সূর্যাস্তের দেশ বলা হয়। একই প্রশ্ন সেই ক্ষেত্রেও আসে, সূর্য ডোবার স্থানতো অনেক, এটা একমাত্র দেশ না যেখাসে সূর্যাস্ত যায়, আবার এই দেশেই সবার শেষে হয় এমনটাও বলা যায় না গোলাকার পৃথিবী যেহেতু, তাহলে কি এসব অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক নয়? ধরেন এটা দ্বারা প্রথম সুর্যের আলো পায় এটা বুঝালো, কিন্তু প্রশ্ন হল এটা কিভাবে নির্ধারণ করেছে গোল পৃথিবীতে? পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার সময় কি জাপানই প্রথম সূর্যের দিকে ফিরে ছিল? বিষয়টা অবৈজ্ঞানীক নয়?
আপনি বললেন গোলাকার পৃথিবীতে পশ্চিম দিক বলতে কিছু এক্সিস্ট করেনা, আপনি কি জানেন পিয়ারি ল্যান্ডকে বিশ্বের সবচেয়ে উত্তরের ভূমি বলা হয়, চিলিকে সবচেয়ে দক্ষিণের দেশ বলা হয়? গুগল করলেই জেনে যাবেন। আমাদের প্রশ্ন এসবও কি অবৈজ্ঞানীক? অযৌক্তিক? এসবও কি সমতল পৃথিবীর বেলায়?
এসবের উত্তর দেওয়া গেলে আপনার প্রশ্নের উত্তরও অটোমেটিকই বের করতে পারবেন আশা করি।
Please login or Register to submit your answer