নারীর বীর্য (মনি) সংক্রান্ত প্রশ্ন

প্রশ্নোত্তর (Q&A)Category: হাদিসনারীর বীর্য (মনি) সংক্রান্ত প্রশ্ন
অপূর্ব asked 12 months ago
সহিহ মুসলিমের ৩১১ ও তার আগে পরের হাদিসগুলোর কিছু বিষয় নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন জন্মেছে। পয়েন্ট আকারে তুলে ধরছি, দয়া করে সমাধান দিবেন আসা করি।                  ১. এক সনদে বলা হয়েছে নারীর স্বপ্নদোষ হইলে যে বীর্য বের হয় তার একটা অবদানে সন্তান মায়ের সদৃশ হয়, আরেক সনদে বলা হয়েছে নারীর বীর্য হলুদ ও পাতলা। কিন্তুু আমরা জানি নারীদের বীর্য হলুদ ও পাতলা নয়। স্বপ্ন দোষে বাহির যেই ফ্লুইড বাহির হয় সেটা ভ্যাজাইনাল সিক্রেশন। অইটা squirting fluid ও বলে। পানি কম খাইলে squarting fluid হলুদ হয়ে যায়। আরব দেশ এমনেতেই পানির অভাব।                   ২. এখানে নারীর যে বীর্যের কথা বলা হইছে সেটা কোন ক্রমেই ডিম্বানু না। কারন ডিম্বানু বের হয়ে যায় না, কিন্তু এই হাদিসে যে বীর্য যৌনি থেকে বের হয় তার কথা বলা হয়েছে যেমন সপ্নদোষ ও সহবাসের সময়, এই থেকেই বুঝা যাচ্ছে এখানে ডিম্বানুর কথা বলা হচ্ছে না। এখন যদি হাদিসে squirting fluid এর কথা বলা হয়েছে বলেন তাহলে আরো নিশ্চিত হয়ে যায় যে এটা ডিম্বানু না, কারন squarting fluid এ ওভাম থাকেনা।              ৩. হাদিসে বীর্য বলা হয়েছে কিন্তু squarting fluid মূলত পেশাবই, কারন প্রস্রাবই হলুদ ও পাতলা হয়। যদিও ডিম্বানুও হলুদ. কিন্তু ডিম্বানু পাতলা নয়।                       ৪. স্বপ্নদোষে বীর্যপাত, ও নারীদের বীর্য হলুদ ও পাতলা বলা হয়েছে হাদিসে। এই থেকে বুঝাই যাচ্ছে ইসলাম স্বীকারই করছে মনি তথা ভ্যাজাইনাল সিক্রেশন বা squirting fluiid ই সন্তান জন্মে ভূমিকা রাখে। তার মানে তো ইনডাইরেক্টলি বুঝাই যাইতেসে ইসলাম মতে ডিম্বানু অই ফ্লুইডেই থাকে। ওভারি থেকে আসেনা। কিন্তু এটা সত্য না।            ৫. আসলে হাদিস গুলায় মনি শব্দটা ইউজ হইছে। এই মনি বা নারীর বীর্য মূলত squrating fluid বা vaginal secretion. এই ফ্লুইডের সন্তান জন্মদানে কোন ভূমিকা নাই। সূরাহ তারিকেও একই ফ্লুইডের কথাই বলা হইছে হয়ত            ৬. আরেকটা বীর্যের হাদিস দেখতে পাই যেখানে বলা হইছে মায়ের মনি যখন বাবার মনির উপর প্রাধান্য বা উপরে উঠে যায় পায় তখন ছেলে মায়ের মত হয়। আবার আরেক হাদিসে বলা হয়েছে যার আগে বীর্যপাত হয় তার মত হয়। কিন্তু এরকম তো কোন বৈজ্ঞানিক প্রমানাদি নাই যে মায়ের বীর্য আগে স্খলন বা বীর্য পাত হইলেই মায়ের মত হবে সন্তান। আবার এই হাদিসের সব ভার্সন দেখলেই বুঝা যায় হাদিসে যে মায়ের মত বা বাবার মত হবে বলা হয়েছে তা আসলে আকার আকৃতি ও লিঙ্গ নির্ধারন করাকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু এসবতো জিনের উপর নির্ভর করে, বীর্যের উপর নয়। এছাড়া ভাই এখানেও মনিই ইউজ হইছে শব্দটা, মহিলাদের যেই এজাকুলেটরি ফ্লুইড আছে যেটার সাথে squirting fluid এর মিশ্রনও থাকে, সেটার সন্তান উতপাদনে কোনই ভূমিকা নাই। এই হাদিসে মহিলাদের বীর্যকে সন্তানের উতপাদনে সহায়ক বলা হইছে। বাস্তবে তা নয়।
1 Answers
Ashraful Nafiz Staff answered 12 months ago

আপনি অনেকগুলো অভিযোগ বা যেগুলো আপনার মনে হচ্ছে সংশয় হচ্ছে সেগুলো জানিয়েছেন। আমরা এসবের একটা একটা করে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। আপনি মূলত যে হাদিসগুলোর কথা বলছেন তা হল সহিহ মুসলিমের ৩১১-৩১৬; সহিহ বুখারি ৩৯৩৮, সুনানে নাসাই ১৯৫-২০০

১. আপনি যে হাদিসগুলো নিয়ে কথা বলতেছেন সেই হাদিসগুলোতে মুনি শব্দটা ব্যবহার হয় নি, এটা শুধু ইমাম মুসলিম বা অন্য স্কলারগণ যে টাইটেল দিয়ে নিজের কিতাবে হাদিসগুলো এনেছেন সেই টাইটেলেই আছে শুধু। হাদিসে মায়া (مَاءَ) শব্দটি ব্যবহার হয়েছে যার অর্থ পানি। হাদিসে সরাসরি বীর্য শব্দ ব্যবহার হয়নি, হাদিসে পানি শব্দটা ব্যবহার করে আলোচনা করেছেন রাসূল (সা)। তাই নারীদের বীর্য হলুদ নয়, পাতলা নয় এসব বলার কোন যৌক্তিকতা নেই।

আবার অনেকে বলতে পারে নারীদের বীর্য হয় না, পুরুষের বীর্য দ্বারা ভ্রূণ গঠিত হয় না বরং শুক্রাণু দ্বারা হয়, নারী বীর্যের কোন কাজ নেই এর দ্বারা সন্তান জন্মদানে কোন অবদান নেই হেনতেন এসব অনেক পুরাতন ও লেইম টাইপের অভিযোগ। এসবের জন্য আলাদা উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই এখানেই পেয়ে যাবেন আশা করি। [ নারী ও পুরুষের বীর্যের মিলন এবং নুতফাহ গঠন। ]

২. হাদিসে নারী ও পুরুষ দুজনের ক্ষেত্রেই পানি শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু পুরুষ ও নারীদেরটার বৈশিষ্ট্য আলাদা আলাদা বলা হয়েছে। এখন হাদিসে নারীদের ক্ষেত্রে পানি শব্দটা ejaculatory fluid বা Vaginal Discharge বা squrating fluid বা Yellow Vaginal Discharge বা female ejaculation যেটার উদ্দেশ্যেই ব্যবহার হয়ে থাকুক না কেন, তার সাথে ডিম্বাণুর থাকা-না থাকা, বাহিরে থাকা, ভিতরে থাকা, বেরিয়ে আসা, বা বেরিয়ে না আসা এমন কোন কথা আমরা হাদিসে দেখছি না।

ধরে নিলাম আপনার কথা মত হাদিসে নারীর বীর্য বলতে squirting fluiid সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাহলে কি এটা প্রমাণ হয় যে ডিম্বাণু সেটাতে থাকে? হাদিসে কি কোথাও বলা হয়েছে যে এই squirting fluiid এর কারণেই সন্তান হয়? বা সন্তান জন্মদানে এই squirting fluiid এরই অবদান রয়েছে? squarting fluid এ Ovum থাকে? এমন কিছুই কিন্তু বলা হয়নি, বরং হাদিসে বলা বৈশিষ্ট্য অনুসারে আপনি সেটাকে squarting fluid ধরে নিচ্ছেন।

৩. হাদিসে বীর্য শব্দটি ইউজ করা হয়নি। আর ডিম্বাণু হলুদ ও এর উপরের আবরণ পাতলা হয়। এছাড়া ডিম্বাণুর সাথে ফ্লুইডও নির্গত হয় সেটাও হলুদ। Ovum ও follicular fluid এইটা হলুদ হয়, follicular fluid পাতলা হয়, ওভারি থেকে যখন ডিম্বাণু নির্গত হয় তখন তার সাথে হলুদ বর্ণের ফলিকুলার ফ্লুইডও বের হয়। এছাড়া সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে এই ফ্লুইড নিছক পানি না, এরও কিছু কাজ রয়েছে, কিছু অবদান রয়েছে। [Title: 'A Comparison of Follicular Fluid Composition between Monovular and Poliovular Species' ; Authors: 'N. A. Kowalski, C. J. Murphy, M. Z. Anwar, E. S. Riesenberger, L. C. Smith, and J. H. Burton' ; Journal: 'Journal of Reproduction and Fertility (1988), 82, 483-490' ; এছাড়া আরো দেখুন https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/23888310/ ; https://www.sciencegate.app/keyword/14861 ; https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/27203305/ ]

একটা আশ্চর্যের বিষয় রয়েছে এখানে। আশ্চর্যটা ঐখানেই যে, কাফেররাতো ওহি বিশ্বাস করে না, সেহেতু যদিও ধরে নেই squirting fluid দেখেই রাসূল ভেবেছেন ওইটাই বীর্য তাতেও তো ঝামেলা নাই কারণ ভুল হইতেই পারে, কারণ এটা দুনিয়াবি বিষয়, আর যেহেতু কাফেরদের মতে আল্লাহ বলতে কেউ নেই সেহেতু ওহিও নেই, সেহেতু মানুষের দ্বারা ভুল হতেই পারে। তো ভাই তাহলে একটা কথা বলেন, ফলিকুলার ফ্লুইড আর ডিম্বাণু তো দেখা যায় না, ওইটা কেন পাতলা হলুদ হয়? এটা কি নিছক কাকতালীয় ঘটনা! আমার মনে হয় না

৪ ও ৫. আপনি হাদিসের পানিকে squarting fluid ধরে নিচ্ছেন তাই আপনার কাছে সমস্যা মনে হচ্ছে, কিন্তু আধো এটা নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব না যে হাদিসে squarting fluid এর কথাই বলা হয়েছে। যেমনটা আমি পয়েন্ট ৩ এ বলেছি, হাদিসের দেওয়া বৈশিষ্ট্যের সাথে আরেকটা ফ্লুইডেরও মিল পাওয়া যাচ্ছে। এখন আবার প্রশ্ন করতে পারেন হাদিসেতো স্বপ্নদোষে যেটা বের হয়ে আসে তার কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু এখানে একটা ভুল আছে, হাদিসে কিন্তু সরাসরি বলা হয়নি স্বপ্ন দোষে যেটা বের হয়ে আসে সেটাই সেই সহবাসের সময় যেটা বের হয় সেটা। প্রতি ক্ষেত্রে পানি শব্দটা ব্যবহার হওয়ায় কনফিউসনটা তৈরি হয়েছে মূলত। এই কনফিউসনটা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক কারণ বর্তমান সময়ের মত এত আধুনিক ছিল না ১৪/১৫শত বছর আগের সমাজ ও ভাষা। বর্তমান সময়ে তখন এত অ্যাডভান্স তথ্য, টার্ম, পরিভাষা, শিক্ষা, জ্ঞান, ভাষা, শব্দ, জিনিস কোনোটাই ছিল না। কিন্তু গত ১৪/১৫ শত বছর আগে এই টার্মগুলো না থাকা সত্ত্বেও, এই পরিভাষা না থাকা সত্ত্বেও রাসূল (সা) তখনের ভাষা দিয়ে সাধারণ মানুষকে সহজ ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। এই শব্দের অপ্রতুলতার কারণে জিন, ক্রোমোজোম, ডিম্বাণু, শুক্রাণু, বিভিন্ন ধরনের ফ্লুইড ইত্যাদি নিয়ে মূলত সমস্যাটা দেখা যায় বর্তমান সময়ের মানুষদের মাঝে।

এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে হাদিসে কিন্তু বলা হয় নাই যে মহিলাদের ওই স্বপ্নদোষের পানি থেকেই বাচ্চা হয় বা ওইটাই সহবাসের সময় বের হয় ও সেটাই সন্তানের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখে এবং সেটাই হলুদ ও পাতলা। সাহাবি নারী জিজ্ঞাসা করেছেন পুরুষের মত দেখলে নারী কি করবে, তখন রাসূল (সা) বলেছেন পানি [দাগ] দেখলে গোসল করবে। সাহাবি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন এমনটা কি হয়! তখন নারীদেরও যে স্বপ্নদোষ হয়, নারীদেরও যে বীর্যপাত হয়, এটা বুঝানোর জন্যই রাসূল বলেছিলেন, “ তা না হলে ছেলে মেয়ে তার সদৃশ কোত্থেকে হয়?” আরেক সনদে তিনি নারী-পুরুষের সহবাসে যে পানি বের হয় সেটার উদাহরণ টেনেছেন, মূলত নারীরও ejaculation হয় সেটা বুঝানোর জন্যই এই উদাহরণটি টেনেছেন রাসূল (সা)। হাদিসের দুটো অংশ ছিল, ১মটিতে স্বপ্নদোষ ও গোসল নিয়ে আলোচনা হয়েছে, ২য়টিতে সাহাবীর প্রশ্নের উত্তরে নারী-পুরুরে বীর্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এখানে প্রথম অংশে বলা পানি ও ২য় অংশে বলা পানি আলাদা আলাদা। মূলত এখানে শব্দের অপ্রতুলতার কারণে কনফিউসনটা সৃষ্টি হয় মানুষের মাঝে।

হাদিসে আছে যে পানি সন্তানের বৈশিষ্ট্যের অবদান রাখে অর্থাৎ যেটা সহবাসের সময়ের কথা বলা হয়েছে সেই পানি হলুদ ও পাতলা, সেটা এই ফলিকুলার ফ্লুইড সহ ডিম্বাণু হতে কোন সমস্যা দেখিনা, কারণ সবগুলো হাদিসে শব্দ একটাই ব্যবহার হয়েছে তা হল পানি, আর ইহুদির প্রশ্ন যেটাতে রয়েছে শুধু তাতেই বলা হয়েছে সহবাসের সময় নারীর বীর্যের কথা। এই একটা থেকে বুঝা যায় সহবাসের সময়ের পানি ও স্বপ্নদোষের সময়ের যে পানির কথা বলা হয়েছে তা আলাদা হতে পারে, কারণ ইহুদির প্রশ্নের বেলায় সরাসরি নারীর বীর্যের কথা বলা হয়েছে, এতক্ষণ যা বললাম তার পক্ষে এই ইহুদির প্রশ্নের হাদিসটি সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ। আবার আপনি যদি ওভার অল সব কিছুকে squarting fluid  ধরেন তাহলে যেমন এটা বলতে পারবেন না যে হাদিসে ওখানেই ডিম্বাণু থাকে বলা হয়েছে তেমনই ডিম্বাণু ও তার ফ্লুইডকে ধরলেও ভুল কিছু হবে না, কারণ শব্দের কমতির কারণে সবকিছু স্পষ্ট নয়। এতক্ষণের সমগ্র আলোচনা থেকে বলা যায় স্বপ্ন দোষের সময় ejaculatory fluid বা squarting fluid কে বুঝানো হয়ে থাকতে পারে ও সহবাসের সময় Ovum ও follicular fluid কে বুঝানো হয়ে থাকতে পারে। এটা একটা সম্ভাবনার কথা বলছি, আপাতত এটাই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে। কিছুদিন পর হয়ত বিজ্ঞান অন্য আরেক জাতীয় ফ্লুইড এর আবিষ্কার করতে পারে যা হলুদ ও পাতলা ও তার অন্য কোন অবদান রয়েছে, অস্বাভাবিক কিছু না। তাই হাদিসে বলা পানি যে আসলে সন্তানের জন্মদানে বা তার বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণে কোন অবদান রাখে না এই কথাটাও ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। আসলে ভ্যাজাইনাল সিক্রেশন আর হলুদ ফলিকুলার ফ্লুইড দুইটারেই পানি বা আরবি যে শব্দটা ইউজ হয়েছে সেটার মধ্যে ফেলা যায় ও সেটার অনুবাদে "ফ্লুইড" বলাটা অতীব স্বাভাবিক বিষয় কারণ এইগুলার পার্থক্য তখন করার মত এত শব্দ ছিল না, করার দরকারও ছিল না, কারণ অনেকেই বুঝতো না। (এগুলো নিছক আমার কথা না, আরো অনেক জ্ঞানী মানুষই এই জাতীয় কথা বলেছেন)

আর আপনার শেষ যে অভিযোগটা ছিল তা সূরা তারিকে ৫-৭ আয়াতে এই squarting fluid এর কথা বলা হয়েছে যা আসলে ঠিক না, কারণ সেই আয়াত নারী ও পুরুষ দুজনেরই কথা বলা হয়ে থাকতে পারে, শুধু নারীর কথাও বলা হয়ে থাকতে পারে আবার পুরুষের কথাও বলা হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও সঠিক মত হল আয়াতে পুরুষদেরকে উদ্দেশ্যে করে কথা বলা হয়েছে, কারণ মূলত শুক্রাণুই মানুষে পরিণত হয় যা আয়াতের সাথে সবচেয়ে বেশি যায়। [বিস্তারিত দেখুন - "এবং তা (বীর্য) নির্গত হয় সুলব ও তারাইবের মাঝখান হতে" ]

৬. কিছু কিছু হাদিসে দেখা যায় বলা হয়েছে যার আগে বীর্যপাত হবে সন্তান তার মত হবে। কিন্তু এই অনুবাদটি ভুল, কারণ হাদিসে বীর্যপাতের কথা আসেনি। বরং হাদিসে বলা হয়েছে যারটা প্রাধান্য পাবে, বা এগিয়ে যাবে বা উপরে উঠবে ইত্যাদি। হাদিসের ব্যাখ্যাকারগণ বলেছেন নারী-পুরুষের পানি একে অপরের উপরে যাওয়া বা একে অপর থেকে এগিয়ে যাওয়া কথাটা দ্বারা বুঝানো হয়েছে, এক জনের উপর আরেকজনের বৈশিষ্ট্য বিস্তার করা, প্রভাব ফেলা। মানে শক্তিশালী হয়ে প্রকাশ পাওয়া। মায়ের পানি বেশি (শক্তিশালী বা প্রকট) হলে সন্তান মাতৃবংশের বৈশিষ্ট্য পায়, পিতার পানি বেশি (শক্তিশালী বা প্রকট) হলে সন্তান পিতৃবংশের বৈশিষ্ট্য পায়। এছাড়া অনেক ওলামা আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন চাইলে দেখতে পারেন সেগুলো [সহিহ মুসলিম (ই.ফা.) ৬০৮, মিশকাত ৫৮৭০ এর ব্যাখ্যা; كتاب منة المنعم في شرح صحيح مسلم ১/২২৪ ; كتاب توفيق الرب المنعم بشرح صحيح الإمام مسلم ১/৫৪৮ ; كتاب فتح المنعم شرح صحيح مسلم ২/৩০৩ ; فتح الباری ৭/৩৯৩৮]

আবার আপনি বিজ্ঞানের দোহাই দিলেন, কিন্তু বিজ্ঞান কি সম্পূর্ণ? প্রতিষ্ঠিত সত্য? সব কিছু আবিষ্কার করে ফেলছে? এর কোনোটারই উত্তর হল ‘না’। আচ্ছা, আপনার কাছে প্রশ্ন, সন্তানের বৈশিষ্ট্য বাবার মত হয় নাকি মায়ের মত হয় অথবা বাবার মত হবে নাকি মায়ের মত হবে এটা এটা বিজ্ঞান দিয়ে বের করার মত কোন উপায় আছে? হাদিসে বাবার মত হয়, মায়ের মত হয় এটা দ্বারাতো হুবহু মায়ের চেহারার বা আকৃতির মত হয়, বা বাবার চেহারা বা আকৃতির মত হয় এমন বুঝানো হয়নি, হাদিসের বেশির ভাগ ভার্সন দেখলেই বুঝা যায় যে সেখানে সাদৃশ্য ও বৈশিষ্ট্যের কথা বুঝিয়েছে। এখানে বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে, এখন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কণ্ঠ, আচার আচরণ, স্বভাব, আকার আকৃতি, চেহারার সাদৃশ্য, শারীরিক শক্তি, বুদ্ধি, মনমানসিকতা, নীতি নৈতিকতা, দিনদারিতা, সাহসিকতা ইত্যাদি অনেক কিছুকেই বুঝানো যায়। বিজ্ঞান এসব বের করার মত যন্ত্র আবিষ্কার করেছে? বা পেরেছে? বা পারবে? আমার মনে হয় না।

আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে বাবার পানি প্রভাব বিস্তার করলে ছেলে, আর মায়ের পানি প্রভাব বিস্তার করলে মেয়ে হয়। [সহিহ মুসলিম ই.ফা. ৬০৯] এটা সহিহ হাদিস, যদিও কিছু স্কলার ছেলে হওয়া ও মেয়ে হওয়া অর্থাৎ লিঙ্গ নির্ধারণের এই অংশটুকু নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন, কিন্তু বেশির ভাগ স্কলারের মত হল এই হাদিস সহিহ।

অনেকে বলে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণে মায়ের কোন ভূমিকা নেই, কারণ মা xx ক্রোমোজোম বহন করে ও বাবা xy ক্রোমোজোম। x এর সাথে x হলে মেয়ে ও x এর সাথে y হলে ছেলে, অর্থাৎ সব কিছু নির্ভর করে বাবার উপর। কিন্তু আসলেই কি তাই? প্রথমত মায়ের কোন কাজ-কাম, অবদান নাই এটা ভুল ধারণা, মায়েরও অনেক অবদান রয়েছে, প্রধান অবদানতো অর্ধেকের মত ক্রোমোজোম মায়ের থেকেই আসে, এছাড়া মায়ের থেকে বুদ্ধি আসা সহ আরো নানা বিষয় গবেষণায় উঠে এসেছে। এত কিছু বলার মত সুযোগ নেই, কারণ প্রশ্নের সেকশন হিসেবে উত্তর অনেক বড় হয়ে গেছে, আপনারা মিথ্যাবাদী নাস্তিকদের কথায় না নেচে নিজেরা কিছু গবেষণা, রিসার্চ পেপার স্টাডি করলেই মায়ের অবদান সম্পর্কে আরো অনেক তথা পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ। আপাতত এটা দেখতে পারেন [ সন্তানের লিঙ্গ ও নারীর বীর্য – হাদিসের ব্যাখ্যা ]

আপনারা হয়ত একটা তথ্য জেনে অবাক হতে পারেন যে, আমরা যে এতদিন জেনে এসেছিলাম যে শুক্রাণু আগে পৌঁছায় সেই ডিম্বাণুর সাথে নিষিক্ত হয়, এই একটা ভুল ধারণা ছিল। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনের সময়ও একটা পক্ষপাতিত্ব হয়। যে শুক্রাণু আগে পৌঁছায় সেটাই নিষিক্ত হয় না বরং ডিম্বাণু তার নিজের পছন্দ মত শুক্রানুকে বেছে নেয় ও সেটার সাথেই নিষেক ঘটায়, যদিও সেই শুক্রাণু অন্যগুলোর পরে আসুক না কেন।[ https://royalsocietypublishing.org/doi/10.1098/rspb.2020.0805https://doi.org/10.6084/m9.figshare.c.5004644. ;  A woman’s eggs choose lucky sperm ] হাদিসে বলা হয়েছে যেই পানি প্রভাব বিস্তার করে, আর এই গবেষণা দেখে দেখা যাচ্ছে সেই প্রভাবটা তৈরি করেই ডিম্বাণু। এছাড়া অসংখ্য গবেষণা দেখানো সম্ভব যেখানে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু দুটোরই প্রয়োজন ও মেজর অবদান রাখে সন্তান জন্মদানে, বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণে ইত্যাদিতে।

এটাতো আমি আমার মত করে বললাম, এছাড়া ইসলামকিউ.ইনফো এ একটা লিখাও রয়েছে এই বিষয়ে, সেখানেও বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ডাক্তারগণ বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। চাইলে এই দুটো আর্টিক্যালও পড়তে পারেন [ Views of the scholars and doctors on the role of the man’s water and the woman’s water ; হাদিসে কি নারীর বীর্য সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে? ]

শেষে একটা কথাই বলব, যেখানে ততকালির ইহুদি নিজের ধর্মের জ্ঞানের আলোকে রাসূল (সা) কে প্রশ্ন করে উত্তর শুনে সেগুলোর সত্যতার শাক্ষি দিয়েছে সেখানে আপনি কি করে সেগুলোকে ভুল প্রমান করতে পারবেন? কখনোই পারবেন না ইনশাআল্লাহ।

Back to top button