কুরআনে বৈজ্ঞানীক মিরাকেল রয়েছে? নাকি কোরআন বিজ্ঞান বিরোধী?

প্রশ্নোত্তর (Q&A)Category: বিজ্ঞানকুরআনে বৈজ্ঞানীক মিরাকেল রয়েছে? নাকি কোরআন বিজ্ঞান বিরোধী?
আমার প্রশ্ন হল কুরআনে কি আদো বৈজ্ঞানীক মিরাকেল রয়েছে? কোরআনের বহু কিছুই বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে যায়, কিন্তু কেন? কোরআনের সাথে বৈজ্ঞানের বৈপরিত্য কেন? যদি আসলেই এমন হয়ে থাকে তাহলে ইসলামের সত্যতা কি? আসলে ইসলাম বিদ্বেষীরা দাবি করে সব ভুয়া এবং ইসলাম বা বিশেষ করে কোরআন নাকি সব সময় বিজ্ঞান বিরোধী। এই কারনে জানতে চেয়েছি
1 Answers
Ashraful Nafiz Staff answered 3 months ago
আপনার কাছে প্রশ্ন

১. রাসুলের চন্দ্র দ্বিখন্ডের পিছনে কি বিজ্ঞান খুঁজেন? রাসুলের মিরাজে যাওয়ার পিছনে কি বিজ্ঞান খুঁজেন? একটি বকরি ও সামান্য জবের রুটি দিয়ে হাজার সাহাবিদের তৃপ্তিভরে খাওয়ানো, খেজুরের ডাল তরবারিতে পরিণত হওয়া এসবের পিছনে বিজ্ঞান খুঁজেন?

২. ঈসা (আ) এর পিতা ছাড়া জন্ম হওয়ার পিছনে কি বিজ্ঞান খুঁজেন? ঈসা (আ) এর অন্ধকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়া, মৃতকে জীবিত করা, শ্বেত কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করা, মাটির পুতুলকে জীবিত করা ইত্যাদির পিছনে বিজ্ঞান খুঁজেন?

৩. বনী ইজরাইলিদেরকে বানরে ও শূকরে পরিণত করার পিছনে কি বিজ্ঞান খুঁজেন?

৪. মুসা (আ) এর নিল নদকে রক্তে পরিনতা করা, লাঠিকে সাপে, এবং পঙ্গপাল, উকুন, প্লেগ, তুফান, ব্যাঙ এর আজাব আনার পিছনে কি বিজ্ঞান খুঁজেন?

৫. দাউদ (আ) এর লোহাকে সহজেই নরম করে ফেলার পিছনে বিজ্ঞান খুঁজেন?

৬. সুলাইমান (আ) এর জ্বীন দিয়ে মসজিদ তৈরি, বাতাসে করা চলাফেরা, প্রাণীদের ভাষা বুঝতে পারার পিছনে কি বিজ্ঞান খুঁজেন?

৭. সালেহ (আ) এর পাথরের পাহাড় থেকে উষ্ট্রী বের করে আনার পিছনে বিজ্ঞান খুঁজেন?

৮. ইউসুফ (আ) এর স্বপ্নের ব্যাখ্যা ও তা হুবহু ঘটে যাওয়া, কোলের শিশু উনার হয়ে সাক্ষী দেওয়া এগুলোর পিছনে কি বিজ্ঞান খুঁজেন?

এমন আরো অসংখ্য বিষয় উপস্থাপন করা সম্ভব। এগুলোর পিছনে কি বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা দাঁড় করানো সম্ভব? একজন শুধু বিজ্ঞানে বিশ্বাসী মানুষতো এসবকে বিশ্বাসও করবে না, সেতো এগুলোকে কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দিবে। বিজ্ঞান দিয়ে এসবকে সত্য প্রমাণ সম্ভব নয়, বরং বৈজ্ঞানিক দর্শনের আলোকে হয়তো এসব অসম্ভবই। হয়তো অনেকে এগুলোকে বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক বলতে পারে।

তাহলে আমার প্রশ্ন আপনি কেন এসবে বিশ্বাস করেন? প্রতিটা ঘটনাই আল্লাহর হুকুম বা ইচ্ছায় হয়েছে, শুধু তাই? হয়তো বলবেন আল্লাহর পক্ষেতো সবই সম্ভব, এসব অলৌকিক বিষয়তো দুধ-ভাত ছাড়া আর কিছুই না, মহার স্রষ্টাতো এগুলো করতেই পারেন!

তাহলে আবার আপনিই কেন ইসলামের প্রতিটা বিষয়ের পিছনে বিজ্ঞানের যুক্তি খুঁজেন? কেন প্রতিটা বিষয়ে আল্লাহকে সুস্পষ্ট করে বলে দিতে হবে ও তা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে হুবহু মিলতে হবে? কেন আল্লাহর দ্বারা আদম ও হাওয়াকে বিবর্তন ছাড়া তৈরি করা সম্ভব হবে না যদিও তা আধুনিক বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে যায়? কেন জ্বীন জাতী থাকতে পারবে না যদিও আধুনিক বিজ্ঞান আজও তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি? কেন ইসলামের প্রতিটা জিনিসকে আধুনিক বিজ্ঞানের দ্বারা স্বীকৃতি পেতে হবে? কেন প্রতিটা বিষয় বিজ্ঞানের সাথে মিলতে হবে? যেই বিজ্ঞান গত হাজার বছরে না জানি কত শতবার পরিবর্তন হয়েছে? চিন্তা করে দেখুন প্রতি যুগে কিন্তু ইসলামকে ভুল প্রমাণ করতো মানুষ যদি বর্তমান বিজ্ঞানের মত হুবহু কথা কুরআনে বলা হত। করত না? কারণ বর্তমানে বিজ্ঞান ও শুধু গত ৩০০ বছর আগের বিজ্ঞানেও আকাশ ও পাতাল পার্থক্য রয়েছে। বর্তমানে বিজ্ঞান যা বলছে তা কি ভবিষ্যতে ভুল প্রমাণিত হবে না? তখনওতো কোরআনকে ভুল প্রমাণ করা যাবে যদি বর্তমানের বিজ্ঞানের মত হুবহু কথা কোরআনে থাকে। পারবে না? অবশ্যই পারবে।

মানুষ প্রশ্ন করে কেন আল্লাহ বীর্য বের হওয়ার স্থানকে স্পেসিফিক ভাবে উল্লেখ না করে একটু গুরিয়ে পেছিয়ে বললেন? কেন পৃথিবীকে সরাসরি গোল না বলে প্রসারিত, বসবাসের উপযোগী ইত্যাদি বললেন? সুস্পষ্ট করে কেন বললেন না চাঁদের নিজস্ব আলো নেই? কেন সুস্পষ্ট করে বললেন না মহাবিশ্বের সাপেক্ষে পৃথিবী স্থির নয় বরং মানুষের সাপেক্ষে স্থির? ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমার প্রশ্ন, এগুলো কি ভুল প্রমান করা গিয়েছে? তারা বলে না, আবার আমার প্রশ্ন, তাহলে সমস্যা কোথায়? তারা বলে সুস্পষ্ট করে কেন বললেন না? আবার আমার প্রশ্ন, কেন সুস্পষ্ট করে বলতে হবে? কোরআনতো বিজ্ঞানের কোন বই না যে এখানে সুস্পষ্ট করে প্রতিটা বিষয়ে ডিটেইলস এ বলা থাকতে হবে! উপরে বলা কথাগুলোর কথাই চিন্তা করে উত্তর দিবেন আশা করি।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যদি বলতেন বীর্য এখানে থেকে বের হয় তাহলে হয়তো অভিযোগ আনতো আল্লাহ কি অশ্লীল! যদি বলতেন দুই পায়ের মাঝ হতে বের হয় তাহলে হয়তো অভিযোগ আসতো দুই পায়ের মাঝে তো ফাঁকা, কিছুই নেই! যদি পৃথিবীকে গোল বলতেন তাহলে বলতো বিজ্ঞান অনুসারে পৃথিবী সম্পূর্ণ গোল নয়, উত্তর মেরু দক্ষির মেরুর উপর নিছ আছে, সমুদ্রের তলদেশে পাহাড় ও খাদ আছে, সমুদ্রের তলদেশ নিছুও, ও ভূমির উপরে পাহাড় আছে, গর্ত আছে সুতরাং পৃথিবী বাস্তবে গোল নয়। যদি সাপেক্ষে সুস্পষ্ট করে বলতেন তাহলে হয়তো বলতো এত কঠিন করে কেন বলা হয়েছে? তখনকার মানুষ এতকিছু বুঝতো নাকি? যারা এত বিজ্ঞান জানে না তারা কি এত কিছু বুঝবে নাকি? মহাকাশের সাপেক্ষে পৃথিবী স্থির নয় মানে? মহাকাশ কি ফিজিক্যাল কোনো বস্তু নাকি? চন্দ্রের নিজস্ব আলো নেই এবং তার আলো প্রতিফলিত আলো বললে হয়তো বলতো সব কিছুতো এক সময় এক সাথে ছিল তখনতো সেগুলোতে আলো ছিল পরে আলাদা হয়েছে সেহেতু কুরআনের এ কথাও ঠিক নয়, আবার হয়তো অনেকে বলতে পারতো চাঁদে কিছু আলো স্টোর হয় সেহেতু তার নিজস্ব আলো একদমই নেই এই কথাও ভুল।

হয়তো শেষের অংশ পড়ে অনেকের কাছে হাস্য্যকর মনে হতে পারে, অনেক লেম মনে হতে পারে ও বলতে পারেন আমি নিজ থেকে বানিয়ে বানিয়ে কি উল্টাপাল্টা কথা বলছি! কিন্তু ভাই বিশ্বাস করেন, আমি এর চাইতেও হাস্যকর ও লেম যুক্তি, অভিযোগ দেখেছি, সম্মুখিন হয়েছি।

জাহিলরা ভুল ধরবেই, যেটাতে কোন ভুল হয় না সেটাতেও কোন না কোন মতে গোঁজামিল দিয়ে হলেও ভুল বের করবেই। আল্লাহ যাই বলুন না কেন, যেভাবেই বলুন না কেন তারা ভুল বের করার জন্য উঠে পড়ে লাগবে, চেষ্টা করবে, ভুল আছে প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাবেই এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি কেন সেই মিথ্যাচার, গোঁজামিল ও ভণ্ডামির মাধ্যমে প্ররোচিত হবেন? কেন কোরআনের উপর আঙুল তুলবেন এই বিজ্ঞানকে ভিত্তি বানিয়ে?

একটা বার চিন্তা করে দেখুন পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কত অসাধারণ ও কৌশলীয় শব্দ, ভাষারীতি ব্যবহার করেছেন। এখন ১৪ শত বছর পরে এসেও প্রতিটা অভিযোগের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেওয়া সম্ভব হচ্ছে যার খণ্ডন করা প্রায় অসম্ভবই বলা যায়, যাদের ন্যূনতম আকল আছে তারাও সেইসব জবাব দেখলে অনায়াসে অভিযোগগুলোর সত্যতা কতটুকু তা বুঝে যায়। অথচ যারা বলে কোরআনে এটা এমনে বলে নি কেন, সেভাবে বলেনি কেন, সুস্পষ্ট করে বলে নি করে, ডািইরেক্ট বলেনি কেন ইত্যাদি ইত্যাদি, কোরআনে যদি তাদের বলা কথার মত কিছু বলা থাকতো তাহলে কোরআন বহু আগেই মানুষের কাছে ভুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত। আর আমার দৃষ্টিতে কোরআনের সবচেয়ে বড় মুজিজাগুলো একটি হল এটিই।

আমরা যখন নির্দিষ্ট মতবাদের পক্ষে কোরআন থেকে দলিল খুজব, কোরআনের আয়াতকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব তাহলে হয়তো আমাদের কাছে কোরআন ভুল মনে হতে পারে, কিন্তু যদি আমরা নির্দিষ্ট মতের পক্ষে কোরআন থেকে দলিল না খুজে বরং আমরা যখন পবিত্র কোরআনে যা বলা হয়েছে সেটাকেই গ্রহণ করব ও নিরপেক্ষ হয়ে চিন্তা করব, গবেষনা করব তখন কারো বাপের সাধ্যেও কুলাবে না কোরআনের কোন কিছুকে ভুল প্রমান করতে পারার। 
Back to top button