কুরআনের আয়াত সম্পর্কিত প্রশ্ন
রাসূল (সা) এর মৃত্যুর পর উমার (রা) দুঃখে কষ্টে উনার হুশ বুদ্ধি লোপ পেতে থাকে। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করেন, কিছু সংখ্যক মুনাফিক্ব মনে করেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে তিনি মৃত্যুবরণ করেন নি, বরং আপন প্রতিপালকের নিকট গমন করেছেন। যেমন মুসা বিন ইমরান (আ) গমন করেছিলেন এবং নিজ সম্প্রদায়ের নিকট থেকে ৪০ রাত্রি অনুপস্থিত থাকার পর তাদের নিকট পুনরায় ফিরে এসেছিলেন। অথচ প্রত্যাবর্তনের পূর্বে বলা হতো যে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (সা) ও অবশ্যই ফিরে আসবেন এবং ঐ সকল লোকের হাত পা কেটে দেবেন যারা মনে করে যে প্রকৃতই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। [ইবনু হিশাম ২য় খন্ড ৬৫৫ পৃঃ]
ওমর (রা) মুলত রাসুল (সা)-কে অনেক বেশি ভালোবাসতেন, সব সাহাবিই রাসূলকে নিজের জীবন থেকেও বেশি ভালো বাসতেন। যার কারনে রাসূল (সা) এর মৃত্যুর কথা শুনে ওমর (রা) ও অন্যন্যা অনেক সাহাবি তা মেনে নিতে পারছিলেন না। তারা সবাই কোরআনের আয়াতটি জানতো কিন্তু দুঃখ ও কষ্টের কারনে সাধারন ভাবে মানুষের সাথে যা হয় উনাদের সাথেও সেরকম হয়েছে, সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারছিলেন না।
আর তখন এই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য সাহাবিদেরকে উদ্দেশ্যে করে আবু বকর (রা) কথা বলা শুরু করলেন, তিনি কোরআনের একটি আয়াত পাঠ করলেন,
আর মুহাম্মাদ কেবল একজন রাসূল। তার পূর্বে নিশ্চয় অনেক রাসূল বিগত হয়েছে। যদি সে মারা যায় অথবা তাকে হত্যা করা হয়, তবে তোমরা কি তোমাদের পেছনে ফিরে যাবে ? আর যে ব্যক্তি পেছনে ফিরে যায়, সে কখনো আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দেবেন। [সূরা আলে ইমরান আয়াত ১৪৪]
সাহাবায়ে কেরাম (রা) যাঁরা এতক্ষণ পর্যন্ত সীমাহীন দুঃখ বেদনায় কাতর অবস্থায় নীরবতা অবলম্বন করেছিলেন আবূ বাকর (রা)-এর এ ভাষণ শ্রবণের পর তাঁরা সুনিশ্চিত হলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) প্রকৃতই ওফাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে ইবনু আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন যে, ‘আল্লাহর কসম! এ ব্যাপারে এমনটি মনে হচ্ছিল যে, লোকজনেরা যেন জানতই না যে, আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। আবূ বাকর (রা) যখন এ আয়াত পাঠ করলেন তখন সকলেই এ আয়াত সম্পর্কে যেন নতুনভাবে ওয়াকেফহাল হলেন এবং সকলকেই এ আয়াত তিলাওয়াত করতে দেখা গেল।
সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব (রা) বলেছেন যে, ‘উমার (রা) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি যখন আবূ বাকর (রা)-কে এ আয়াত পাঠ করতে শুনলাম তখন আমি অত্যন্ত লজ্জিতবোধ করলাম। (অথবা আমার পিঠ ভেঙ্গে পড়ল) এমনকি আমার দ্বারা আমার পা উঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। এমনকি আবূ বাকর (রা)-কে এ আয়াত পাঠ করতে শুনে আমি মাটির দিকে গড়িয়ে পড়লাম। কারণ, আমি তখন অনুধাবন করতে সক্ষম হলাম যে, নাবী কারীম (সা) প্রকৃতই ওফাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। [বুখারীঃ ১২৪১, ১২৪২, ৪৪৫৩, ৪৪৫৪]
এখানে বলা হয়েছে সেই মুহুর্তে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যেন মনে হচ্ছে তারা এই আয়াত সম্পর্কে জানতই না, এটা আক্ষরিক অর্থে বলে নি যে তারা জীবনেও শুনেনি এই আয়াত বা তারা জীবনেও এই আয়াত পড়েনি এমন কিছুই বলা হয় নি। এখানে কথাটা রূপক অর্থে বলা হয়েছে, তারা এই আয়াত জানার পরও আবু বকর সেই সময় এই আয়াতটা তেলাওয়াত করার পর তাদের কাছে মনে হয়েছে যেন তারা আগে শুনেনি। এমনটা আমরা স্বাভাবিক ভাবেই বলে থাকি, যখন আমরা কিছু জানি কিন্তু একই বিষয় যখন গুরুত্বপূর্ণ কেউ বলে তখন যেন মনে হয় সেটাকে নতুন করে শুনছি, কিন্তু বাস্তবতা হল আমরা সেটা আগ থেকেই জানতাম।
আর সূরা আলে ইমরানের এই আয়াত আবু বকর (রা) নিজে তৈরি করেন নি। ওহুদ যুদ্ধে কাফেররা গুজব ছরিয়েছিল রাসূল (সা) মারা গিয়েছেন যার কারনে সাহাবিদের মনবল ভেঙ্গে গিয়েছিল তখন এই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই আয়াত নাজিল করেছেন। [আহসানুল বায়ান ১১৮ পৃ.]
Please login or Register to submit your answer