কাবা শরীফ এবং হাজরে আসওয়াদ বিষয়ক প্রশ্ন

প্রশ্নোত্তর (Q&A)Category: ইসলামকাবা শরীফ এবং হাজরে আসওয়াদ বিষয়ক প্রশ্ন
আহমেদ আবির asked 4 সপ্তাহ ago
আসসালামু আলাইকুম, ভাই এক নাস্তিক বলছে, যদি কাবা শরীফ সত্যি আল্লাহ রক্ষা করেন, তাহলে ইসলামের পূর্বে কাবা শরীফকে অনেকবার হামলা এমনকি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, তখন আল্লাহ রক্ষা করেননি কেন এবং হাজরে আসওয়াদ কে নংড়া জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, পরে নবী মোহাম্মদ (সা:) এর মাধ্যমে কাবা শরীফ নির্মাণ ও হাজরে আসওয়াদ কাবায় সঠিক জায়গায় স্থানান্তর করা হয়, তারপর যখন কাফের-মুশরিকদের সৈন্যরা কাবা শরীফ ভাঙতে এসেছিল তখন আবাবিল পাখি দ্বারা তা রক্ষা হয়ে যায়, কিন্তু এখানে কথা হচ্ছে ইয়ামেন থেকে সৌদি আরবে কাফের-মুশরিকদের সৈন্যরা যে বাহনে হামলার উদ্দেশ্যে ভ্রমন করেছিল, সেটি হচ্ছে হাতি, এখন হাতি ইয়ামেন থেকে সৌদি আরবে পৌছাতে হলে, প্রায় ১০ বা এর অধিক সময় লাগতে পারে এবং কি অসুস্থ হয়ে যেতে পারে, তাহলে এর জন্য আবাবিল পাখির দরকার কিসের. আশা করি এর সমাধান নিয়ে আসবেন, ইনশাল্লাহ
2 Answers
Mahfuj Alam answered 4 সপ্তাহ ago
প্রথম প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর ১.কাবা ততক্ষণ পর্যন্ত প্রটেক্টেড থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করেন। আল্লাহ কখনোই বলেননি তিনি এটা চিরকাল রক্ষা করবেন। সূরা ফীলও এটার দিকে ঈঙ্গিত করেনা।
২ . কাবাকে পূর্বে কখনোই পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়নি।
৩. আল্লাহ কখনোই এটা বলেননি যে তিনি কাবার গায়ে কোনো আচড় লাগতে দিবেননা বা একে সবধরণের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবেন।
৪. বিভিন্ন যুদ্ধসংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতির বাইরেও কাবার স্থাপনা দূর্বল কিংবা অন্যান্য কারণে কাবাকে অনেকবার পূনঃস্থাপন বা রিবিল্ড করা হয়েছে এটা দ্বারা প্রমান হয় যে কাবাকে সবসময় ফিজিক্যালি রক্ষা করা কখনোই আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিলোনা।
৫. এখন বলবেন তাহলে আবরাহার কাছ থেকে কেন রক্ষা করা হয়েছিল? একটু লক্ষ করলে সেটাও বুঝতে পারবেন। আবরাহার উদ্দেশ্য এটা ছিলোনা যে শুধু সে কাবাকে ফিজিক্যালি ড্যামেইজ করবে বরং তার উদ্দেশ্য ছিল সে তার নিজের কাবা তৈরি করেছিল এবং সেখানে মানুষকে যাওয়ার জন্য আহব্বান করেছিল কিন্তু লোকজন তো মক্কার কাবায় চলে আসতো তার ওখানে যেতোনা সুতরাং সে মক্কার কাবা ধ্বংস করে আল্লাহর নির্ধারণকৃত তাওয়াফ বা ইবাদতের স্থানকে পরিবর্তন বা স্থানান্তর করে তার নিজের কাবায় নিতে চাইছিলো। এটার কারণেই আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেন।
৬. দ্বীতিয়তো কাবা একটি ডাইরেকশন বা কিবলা । তাই কেউ কাবা ঘরকে ধ্বংস করে দিলেও কিবলা বা জায়গাটা তো একই স্থানে আছে সুতরাং এখানে আবার পূনরায় ঘর তৈরি করা যাবে ধ্বংসাবশেষের উপর।এতে আল্লাহ কাবার প্রটেক্টর এই কথাটা মিথ্যাপ্রমানিত হয়না।
এইরকম অনেক পয়েন্ট উল্লেখ করা যাবে। আপাতত এটাই এই বিষয়ে আমার সংক্ষিপ্ত উত্তর। আপনার বাকী প্রশ্নগুলোর উত্তরও দিবো ইংশাআল্লাহ।
Ashraful Nafiz answered 4 সপ্তাহ ago

প্রথমেই একটা কথা বলে দেই যে কাবা ঘরের উপর আবরাহার আক্রমণ যা আমুল ফিল” তথা হস্তী বাহিনীর বছর হিসেবে পরিচিত সেটা রাসুল (সা) এর জন্মের কয়েক মাস আগে ঘটেছিল। অর্থাৎ ঐ বছরই রাসুল (সা) এর জন্ম হয়েছিল [যাদুলমা‘আদ, পৃষ্ঠা-১/৭৬; সুবুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সিরাতে খাইরিল ইবাদ ১/৩৩৪-৩৩৫; আস-সিরাতুন নববিয়াহ আস-সাহিহাহ ১/৯৭]

আপনি হয়ত লিখা গুছিয়ে বলতে পারেন নি অথবা সঠিক তথ্য জানেন না। নবি মুহাম্মদ (সা) এর মাধ্যমে কাবা শরীফ নির্মাণ ও হাজরে আসওয়াদ কাবায় সঠিক জায়গায় স্থানান্তর করা হয়, তারপর যখন কাফের-মুশরিকদের সৈন্যরা কাবা শরীফ ভাঙতে এসেছিল এমন কিছুই হয়নি। বরং এটা রাসূল (সা) এর জন্মের আগে ঘটেছিল।

কাবাঘরকে আল্লাহ নিজে রক্ষা করেন বা করবেন অথবা কাবা ঘরে কেউ আক্রমন করতে পারবে না, কখনো এর ক্ষতি হবে না এই জাতীয় কোন কথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কোরআন ও হাদিসে কোথাও বলেন নাই। বরং আল্লাহ কাবার হেফাজত কারী এটা আবু মুত্তালিব বলেছিলেন। যখন আবরাহা আক্রমণ করেছিল তখন রাসুল (সা) এর দাদা আবু মুত্তালিবের সকল উটকে দখল করে নেয়, রাসূল (সা) দাদা সেগুলো ফেরত চায় এবং বলে, “কা’বা ঘরের ব্যাপার যাকে আপনি ধ্বংস করতে এসেছেন, তো সেটা হল আপনার ব্যাপার আল্লাহর সাথে। কা’বা হল আল্লাহর ঘর। তিনিই হলেন তার হিফাজতকারী”[তাফসিরে আহসানুল বায়ান পৃ. ১১০৫ ইসলামিক সেন্টার]

অর্থাৎ কাবার জিম্মা তিনি আল্লাহ উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। এখন প্রশ্ন করতে পারেন আল্লাহ তখনই কেন কাবার হেফাজত করলেন, অন্য কখনো করেন নি কেন! এর উত্তর একদম সোজা তা হল, বাকি সময়ে আল্লাহ তার দ্বীনের জন্য তার বান্দাদেরকে নিয়োজিত করে দিয়েছিলেন, কিন্তু হস্তীবাহিনীর সময়ে তারা ছিল না। হয়ত এর পিছনেও কোন হিকমা রয়েছে, আল্লাহ হয়ত সবার কাছে নজির রাখার জন্যই তখন নিজেই কাবাকে নিজে হেফাজত করেছিলেন।

এছাড়া কোরআন ও হাদিসেতো কোথাও বলা হয়নি কাবা ঘর সব সময় অক্ষত থাকবে বা সব সময় এটাকে রক্ষা করতে আল্লাহ। কিন্তু হাদিসে এর বিপরীত তথ্য পাওয়া যায়, সহিহ বুখারির হাদিসে রয়েছে কেয়ামতের আগে হাবশার অধিবাসী পায়ের সরু নলা বিশিষ্ট লোকদের হাতে কাবা ধ্বংস হবে। [সহীহ বুখারি ১৫৯৫-১৫৯৬]

আর আপনি বললেন হাজরে আসওয়াদ কে নোংড়া জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কোথায় নেওয়া হয়েছিল? কিছু জানেন? আমরা আসলে এমন কিছু জানা নেই। কিন্তু যাইহোক এমন হলেও তাতে কি! পরবর্তীতে অনেকবার আক্রমণ হয়েছে, প্রতিবার মুসলিমরা একে হেফাজত করেছে। কাবার মত হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কেও কোরআন হাদিসে এমন কিছু বলা হয়নি যে আল্লাহ নিজে একে হেফাজত করবেন বা এর ক্ষতি কেউ করতে পারবে না ইত্যাদি। এছাড়া এর অবশ্যই কিছু মর্যাদা রয়েছে যেমন একে স্পর্শ করা ও চুমা দেওয়া সুন্নত, কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায় এই পাথর জান্নাত থেকে এসেছে, কিছু বর্ণনায় একে স্পর্শ করলে চুমা দিলে গুনা মাফ হয়, কিছু বর্ণনায় এটা সাক্ষী দিবে কেয়ামতের দিন যারা একে স্পর্শ করেছে [বুখারী ১৫৯৭; সুনানে আদ দারেমি হাদিস ১৯০২; তিরমিযী, ৯৬১; ইবনু মাজাহ, হাজ্জ ২৯৪৪; নাসাঈ ২৯১৯; ইবনে খুজাইমা ২৭০৩৩; মুসনাদে আহমদ ২৭৯৭]

কিন্তু তারপরও ওমর (রা) হতে রেওয়ায়েতে দেখা যায় উনার মতে এটা নিছকই একটা পাথর, এটা কোন কল্যাণ ও অকল্যাণ করতে পারে না, রাসূল (সা) স্পর্শ ও চুমা দিয়েছে তাই তিনিও করতেন। [বুখারী, হাজ্জ ১৫৯৭; মুসলিম, হাজ্জ ১২৭০; সুনানে আদ দারেমি ১৯০১; ইবনে মাজাহ ১৯৪৩]

আরেকটা বিষয় উল্লেখ করেছেন ইয়েমেন থেকে সৌদিতে আসতে ১০ দিন লাগতো। এখন প্রশ্ন হলো ইয়ামেন থেকে সৌদি আরবে আসতে ১০ দিন লাগুক বা ১০ বছর লাগুত তাতে কি কিছু যায় আসে? তখনতো যুদ্ধ এখানেই হয়েছে! ১ মাসও যুদ্ধ হয়েছে! তাহলে তাকে কি! গোড়া হাতি দুর্বল হয়ে যাক বা অসুস্থ হয়ে যাক বা মরে যাক তার সাথে পাখা পাঠানো বা না পাঠানোর সম্পর্ক কি? আল্লাহর নিশ্চয়ই কোন কারণেই পাখি পাঠিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করেছেন! সেটা হতে পারে একটা দ্রষ্টান্ত রাখার জন্য, হতে পারে আল্লাহর সামনে যে তারা অতি তুচ্ছ সেটা নমুনা দেখানোর জন্য। অনেক কিছুই হতে পারে, সূরা ফিল পড়ে দেখুন আশা করি বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

Back to top button
FromMuslims We would like to show you notifications for the latest updates.
Dismiss
Allow Notifications