ইসলামবিরোধীদের প্রতি জবাব

বয়স্ক লোকের স্তন্যপান বিষয়ে বিভ্রান্তি নিরসন

❝যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান?❞

Contents Hide
3 বহু পয়েন্ট ধরে ধরে বয়স্কদের স্তনের দুধ পান করা সক্রান্ত সংশয়ের জবাব

বয়স্ক লোকের স্তন্যপান করা সক্রান্ত বিষয়ে ছড়ানো সংশয়ের জবাব

লেখকঃ আহমাদ বিন সুলাইমান আইয়ুব ও আলোচকদের একটি জামা’আত
অনুবাদঃ সামিঈ আল-হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী

লেখাটির উৎসঃ আহমাদ বিন সুলাইমান আইয়ুব ও আলোচকদের একটি জামা’আতের সম্মিলিতভাবে রচিত গ্রন্থ “মাওসুয়াতু মাহাসিনিল ইসলাম ওয়া রদ্দু শুবহাতিল লাইম“-এর ১১ তম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৮৪ থেকে ৫১২।

সম্পাদনাঃ তাহসিন আরাফাত


সংশয়টির মূল লিখিত বক্তব্য :

ইসলামবিরোধীরা প্রচার করে থাকে ইসলাম বয়স্কদের স্তন্যপান করাকে হালাল করেছে, এবং সেটার দলিল হিসেবে দেখিয়ে থাকে নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলোঃ

  1. সুহলাহ বিনত সুহাইল এর হাদিস
  2. গৃহপালিত প্রাণীর ব্যাপারে আয়েশাহর হাদিস
  3. আয়েশাহর মত ও তার উপর আমল
  4. আলেমদের একাংশের বয়স্কদের স্তনের দুধ পান করার অনুমতি প্রদান। এই হিসেবে বয়স্ক ব্যাক্তি মহিলার স্তন হতে সরাসরি চোষে দুধ পান করবে/করতে পারবে।
  5. অন্যান্য আরো ছোটোখাটো দলিল, যার আলোচনা সামনে আসবে।

উক্ত সংশয়ের উপর আপনার উদ্দেশ্যে আলোচনা ও জবাব পেশ করা হলো, এবং এটি দুইটি প্রধান আলোচ্য বিষয়ের দ্বারা উপস্থাপন করা হবে।

প্রথমত, ভূমিকা, এতে কিছু গুরুত্বপুর্ন বিষয় আলোচনা করা হবে।

দ্বিতীয়ত, নির্দিষ্ট বহু পয়েন্ট ধরে ধরে বয়স্কদের স্তনের দুধ পান করা সক্রান্ত সংশয়ের জবাব প্রদান করা হবে,

  1. স্তন্যপান প্রকৃতপক্ষে শুধুমাত্র দুই বছরের কম বয়সের শিশুদের জন্য প্রমাণিত আছে।
  2. বহু হাদিস ও আছার, যা সমর্থন করে যে স্তন্যপানের খাটি হক্বদার হলো শুধুমাত্র শিশু, এবং বয়স্কদের স্তন্যপান বিয়ে হারাম করেনা।
  3. জুমহুর উলামাগন এই মতের উপর আছেন যে “বয়স্কদের স্তন্যপান বিয়ে হারাম করেনা “।
  4. যদি বয়স্কদের স্তন্যপানের ব্যাপারটি সাধারনভাবে প্রযোজ্য হতো, তাহলে উক্ত কাজ করা সর্বপ্রথম ব্যাক্তি হতো হুমুউ (স্বামীর ভাই)।
  5. আলেমদের মধ্য থেকে যারা বলেছেন যে বয়স্কদের স্তন্যপান সাধারনভাবে বিয়ে হারাম করে তাদের সম্পর্কে। এবং উক্ত মতের পক্ষে তাদের যুক্তিসমূহের বিবরণ ও যুক্তিগুলোর খন্ডন।
  6. এব্যাপারে তাদের উপস্থাপিত অন্যান্য ছোটোখাটো দলিলসমূহের খন্ডন। যেমন : গৃহপালিত প্রাণী সক্রান্ত হাদিস, ইত্যাদি।

এবার বিস্তারিত…

ভূমিকা এবং কিছু গুরুত্বপুর্ন বিষয়

অবশ্যই বয়স্কদের স্তনের দুধ পান করার মাসআলাটি এমন মাসআলাসমূহের অন্তর্ভুক্ত যেগুলো বিভিন্ন দল-মতের প্রচুর মুসলিম ও অমুসলিম মানুষদের মাঝে গণ্ডগোল সৃষ্টি করে দিয়েছে। এর পিছনে বহু কারন আছে, যার একটি কারন হলো আল্লাহ (عزوجل) যেই শরীয়ত নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর নাযিল করেছেন তা সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা। যেসব মুসলিমরা এইধরনের মাসআলাগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানেনা, তারা আলোচ্য মাস’আলাটিকেই অস্বিকার করা আরম্ভ করে এই ভেবে যে এর দ্বারা তারা আল্লাহর দ্বীনের প্রতিরক্ষা করছে।

❝আমরা শরঈ মাসায়েলসমূহকে আমাদের খাটো আক্বল দিয়ে পরিমাপ করতে যাবো, আর তারপর যখন এই ধরনের মাসআলাগুলো বুঝে আসবেনা তখন শুধু সেটাকে অস্বীকার করে মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিবো❞ – এই বিষয়টি সর্বোচ্চ মাত্রার ভ্রষ্টতা।

আমি বলবঃ আমাদের নিকট বহু প্রমাণিত মুলনীতি রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা, জানা ও অনুসরণ করে চলা আমাদের জন্য আবশ্যক। যেমন: আমাদের মানহাজ হলো কুর’আন, সালাফদের বুঝের আলোকে প্রমাণিত সহিহ সুন্নাহ। কাজেই যখন শরীয়তে তথা কুর’আন বা সুন্নাহ তে কিছু বর্ণিত হবে, আমরা তাদের দিকে তাকাবো যারা ওহি নাজিল হওয়ার সমসাময়িক সময়ে বাস করেছিলেন; কেননা ওহির দ্বারা আমল করার ক্ষেত্রে উনারাই মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন, এই ধরনের মাসআলাসমূহের দিক হতে কিইবা তাঁদেরকে বিরত রাখতে পারে?

আমাদের দৃঢ়ভাবে খেয়ালে রাখতে হবে যে উনাদের প্রত্যেকেরই মত গ্রহন করা যায় ও প্রত্যাখ্যান করা যায়, শুধুমাত্র মা’সুম-নিষ্পাপ নবী (ﷺ) এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। “দলিল” সেই জিনিস যা আমাদেরকে সঠিক বিষয়টি জানার জন্য পরিচালিত করে নেতৃত্ব দেয়।

অমুসলিমরাও আল্লাহর দ্বীনের নিন্দা করে কথা বলা আরম্ভ করেছে, এর কারন হলো এই ধরনের শরঈ হুকুম-আহকামগুলো, যেগুলোর মূল মর্ম-তাৎপর্য তারা জানেনা। অতএব,
যেই পয়েন্টগুলো আলোচ্য সংশয়কে খন্ডন করবে, সেগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা শুরুর পূর্বে আমাদের এই ভূমিকার দ্বারা শুরু করাটা জরুরি ছিল।

আল্লাহর অনুমতিতে আমি ‘বয়স্কদের স্তনের দুধ পান করা’ সংক্রান্ত মাসআলার সাথে সম্পৃক্ত অন্য কিছু মাসআলার সম্পর্কেও উল্লেখ করবো। যাতে তারপর সঠিক বিষয়টি আমাদের নিকট সুস্পষ্ট হয় ।

আমি যেসব বিষয় সম্পর্কে বলব তার সংক্ষিপ্ত সূচি এরকমঃ

  1. তাবান্নী (অন্যের পুত্রকে নিজের পুত্র হিসেবে গ্রহন করা) এর মাসআলা। এবং ইসলাম ও জাহিলিয়াত এর যুগে তাবান্নীর দ্বারা গ্রহনকৃত পুত্রের অবস্থা।
  2. কে সেই সালিম? যাকে বয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও স্তনের দুধ পান করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল?
  3. কে সেই স্তনের স্তন্যদানকারিনী মহিলা সুহলাহ? উনার লজ্জাশীলতা ও চারিত্রিক পবিত্রতা সম্পর্কে কি বর্নিত হয়েছে?
  4. উক্ত স্তন্যদানকারিনী মহিলার স্বামী আবু-হুযাইফাহ কে? তিনি কিভাবে “গাইরাত”
    (আত্মসম্মানবোধ ও এসক্রান্ত ঈর্ষা) দ্বারা গুনান্বিত?
  5. উম্মুল মু’মিনীন আয়েশাহ (রাঃ), যিনি বয়স্কদের স্তনের দুধ পানকরাকে জায়েজ বলে ফতোয়া দিয়েছেন। উনার লজ্জাশীলতা ও চারিত্রিক পবিত্রতা, উনি যেসব মহান চারিত্রিক গুনাবলি দ্বারা গুনান্বিত যেগুলো উনাকে উম্মতের ফকিহাহ হওয়ার যোগ্য সাব্যস্ত করে। তাছাড়া উনার ইজতিহাদ সম্পর্কে কি বলা হবে , যদি উনি (এক্ষেত্রে) সঠিক না হয়ে থাকেন?

যারা সত্য জানতে চান তারা আমার কথাগুলোতে ভালোভাবে মনোযোগ দিন, এই ভূমিকাতে আমরা সংক্ষিপ্ত সূচি আকারে যা যা উল্লেখ্য করেছি, অবশ্যই সেগুলোকে আমরা বিস্তারতিভাবে ব্যাখ্যা করব।

তাবান্নী (অন্যের পুত্রকে নিজের পুত্র হিসেবে গ্রহন করা) এর মাসআলা। এবং ইসলাম ও জাহিলিয়াত এর যুগে তাবান্নীর দ্বারা গ্রহনকৃত পুত্রের অবস্থা

কুর’আন তাবান্নী (বাংলা ভাষায় আমরা দত্তক বলে জানি) কে হারাম করেছে, এবং এই জাহেলী প্রথাকে নির্মুল করেছে যা কিনা রোমানদের সূত্র ধরে আরবদের মাঝে প্রচলিত হয়েছিলো। কুর’আনে এটাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে যাতে করে বংশগুলো তাদের প্রকৃত সূত্রে ফিরে আসে এবং যাতে করে পারস্পরিক সম্পর্কে আবদ্ধ থাকার ও একে অপরকে ধরে রাখার খুটির উপর ভিত্তি করে পরিবারের গঠন প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আল্লাহর স্থির করে দেয়া এই নিয়মের সত্যয়নস্বরুপঃ

আর যারা পরে ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং তোমাদের সাথে জিহাদ করেছে, তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত, আর আত্মীয়-স্বজনরা একে অপরের তুলনায় অগ্রগণ্য, আল্লাহর কিতাবে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে মহাজ্ঞানী।[1]সূরা আল-আনফাল : 75

এর হারাম হওয়ার ঘোষণা সূরা আল-আহযাবের শুরুর দিকেও এসেছে, যেখানে আল্লাহ বলেছেন,

আল্লাহ কোন মানুষের অভ্যন্তরে দু’টি হৃদয় সৃষ্টি করেননি। তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের সাথে তোমরা যিহার* কর, তিনি তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি। আর তিনি তোমাদের পোষ্যদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা। আর আল্লাহই সত্য কথা বলেন। আর তিনিই সঠিক পথ দেখান।[2]সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৪

* স্ত্রীকে মায়ের পিঠের সাথে তুলনা করা, ‘তুমি আমার কাছে আমার মায়ের পিঠের ন্যায়’ বলাকেই যিহার বলে।

বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়া ও মিরাসের ক্ষেত্রে তারা (প্রাচিন আরবরা) তাবান্নীর সন্তানকে প্রকৃত সন্তানের অধিকারগুলো দিতো, এটা ভ্রান্ত বাতিল প্রথা, এই অনুপ্রবেশকারী লোকটি কিভাবে প্রকৃত সন্তানের মত হতে পারে যে সে তাবান্নীকারির স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ট হবে অথচ সে মহিলা তার মা নয় ? সে কিভাবে তার কন্যাদের সাথে ঘনিষ্ট হতে পারে অথচ সেই মেয়েগুলো তার বোন নয়?

চাচা ও ভাইদের মধ্যে থেকে যারা বাকি থেকে যায় তাদেরকে বঞ্চিত করে কিসের ভিত্তিতে তাদেরকে (তাবান্নীকৃত সন্তানদের) মিরাসের প্রতিযোগিতায় শামিল করা হয়? বা, থেকে থাকা সত্ত্বেও কেন প্রকৃত সন্তানকে (তাব্বান্নীকৃত সন্তানের বিপরীতে) প্রতিযোগিতা করতে হয়? তাবান্নীকৃত সন্তান কিভাবে তার মা ও বাবাকে ত্যাগ করে এমন কারো সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারে যে কিনা তার পরিবারই নয়? সে কিভাবে অন্যদের পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতে পারে?

এ’সমস্ত ভ্রান্ত বিষয়গুলোর কারনে কুর’আন তাবান্নীকে হারাম করেছে। রাসূল (ﷺ) আমলের মাধ্যমে খুবই ভালোভাবে এব্যাপারটার বাস্তব প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। তিনিই প্রথম ব্যাক্তি যিনি উক্ত প্রথাকে নষ্ট করেছেন; কেননা তিনি মানুষদের জন্য অনুসরনীয় আদর্শ। তিনি আল্লাহর আদেশে নিজ তাবান্নীকৃত সন্তান যাইদ বিন হারিসাহর (রাদ্বিঃ) তালাক্বপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিয়ে করেছেন। আল্লাহ উনার কিতাবে সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি নবি (ﷺ)
কে যায়নাব বিনত জাহশ এর সাথে বিয়ে করিয়েছেন। এবং এই বিয়ের পিছনের হিকমাহ তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন,

অতঃপর যায়্দ যখন তার (যায়নাবের) সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে তোমার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দিলাম যাতে মু’মিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব নারীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মু’মিনদের কোন বিঘ্ন না হয়। আল্লাহর আদেশ কার্যকরী হবেই।[3]সূরা আল-আহযাব : আয়াত 37 এর অংশবিশেষ[4]ইবতালুল কোর’আন লি-আদাতিত তাবান্নী ড/আব্দুল-আযিয সক্বর মিন মাজাল্লাতিশ-শারিয়াহ ওয়াদ-দারাসাতিল ইসলামিয়াহ আল-আদাদ (25/170:172).

এবং তৎকালীন সময়ে তাবান্নীর অন্যান্য বহু ঘটনা কিছু সাহাবিদের মাঝে ছিল যেমনঃ সালিম মাওলা আবি-হুযাইফাহ। সালিম ও উনার অবস্থার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, উনার অবস্থাটি ছিল এক বিশেষ অবস্থা যা নজিরবিহীন। সালিম, আবু-হুযাইফাহর ঘরে লালিত পালিত হয়েছিলেন , এবং তিনি তাবান্নীকৃত সন্তান ছিলেন, এর পূর্বে প্রথমে তিনি আবু-হুযাইফাহর স্ত্রী ছাবিতাহ বিনতে ইয়া’আর আল-আনসারিয়াহ-এর খাদেম ছিলেন, তারপর তিনি (ছাবিতাহ) তাকে (সালিমকে) মুক্ত করে দেন ও আবু-হুযাইফাহ তাকে (সালিমকে) নিজ সন্তান হিসেবে গ্রহন করে নেন। সালিমের কাছে (আবু-হুযাইফাহর ঘরে) প্রবেশ করা ব্যাতিত আর কোনো উপায় ছিলনা। অতঃপর যখন আল্লাহ তাবান্নীকে হারাম করে দেন, তখন এই জটিলতাগুলো সালিমকে (আবু-হুযাইফার ঘরে) প্রবেশ করতে বাধাপ্রদান করছিলো, আবার তাঁকে (আবু-হুযাইফাহর ঘরে) প্রবেশ করতেই হতো, কারণ আবু-হুযাইফাহর ঘর ছাড়া উনার জন্য আর কোনো ঘর ছিলনা। অতঃপর আরেকটা বিষয়, এবং সেটা হচ্ছে “কে সেই সালিম?” এবং আমরা এখন সেটা আলোচনা করবো ইংশা-আল্লাহ।

কে সেই সালিম? যাকে বয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও স্তনের দুধ পান করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল?

সালিম (রহঃ) প্রথম দিকের অগ্রগামী জনপ্রিয় বদরী জ্ঞানী সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত কল্যানকর ব্যাক্তিদের একজন ছিলেন। উনার জন্ম আস্তাখারে। আবু-হুযাইফাহ বিন উতবাহ এর স্ত্রী ছাবিতাহ বিনত ইয়া’আর আল-আনসারিয়াহ তাকে মুক্ত করেছিলেন, ও আবু-হুযাইফাহ তাকে পুত্র (পালকপুত্র) হিসেবে গ্রহন করেছিলেন।[5]সিইরু আ’লামিন নুবালা (1/168).

তাঁর ব্যাপারে রাসূল ﷺ বলেছেন,

তোমরা চার ব্যক্তির নিকট হতে কুরআন শিক্ষা কর, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ, সালিম মাওলা আবূ হুযায়ফাহ, উবাই ইবনু কা‘ব ও মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)।[6]সহিহুল বুখারী ৩৭৬০, ৩৭৫৮, সহিহুল মুসলিম ২৪৬৪

আয়েশাহ (রাঃ) হতে বর্নিত,

তিনি (আয়িশাহ রাঃ) বলেছেন কোনো এক রাতে রাসূল ﷺ আমাকে মন্থর মনে করলেন। ফলে তিনি বললেনঃ “তোমাকে কী ধরে রেখেছে? ” তিনি (আয়েশাহ) বললেনঃ নিশ্চয়ই মসজিদে একজন ব্যাক্তি আছে, যার কুর’আন পাঠের আওয়াজ আমার শোনা সবচেয়ে সুন্দর আওয়াজ। অতঃপর তিনি (ﷺ) নিজ রাদা (এমন কিছু যা কাপড়ের উপর দিয়ে পরিধান করা হয়) নিলেন এবং বের হয়ে তাঁকে শ্রবন করলেন। অতঃপর যখন দেখা গেল যে তিনি সালিম মাওলা আবি-হুযাইফাহ, তখন তিনি বললেনঃ ❝সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার উম্মতে তোমার মত ব্যাক্তিকে সৃষ্টি করেছেন।❞[7]হাদিসটি বর্ননা করেছেন : আহমাদ (5/165), ও আল-হাকেম (3/226), এবং তিনি (আল-হাকেম) সেটাকে সহিহ বলেছেন। এবং আয-যাহাবী “আস-সিইর”(1/168) এ বলেছেন এর সনদ জাইয়েদ।

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে,

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (মদিনায়) আগমনের পূর্বে মুহাজিরগণের প্রথম দল যখন কুবা এলাকার কোন এক স্থানে এলেন, তখন আবূ হুযাইফাহ (রাযি.)-এর আযাদকৃত গোলাম সালিম (রাযি.) তাঁদের ইমামাত করতেন। তাঁদের মধ্যে তিনি কুরআন সম্পর্কে অধিক অভিজ্ঞ ছিলেন।[8]সহিহুল বুখারী ৬৯২, ৭১৭৫; সহিহুল মুসলিম ১৪৪৫

সুহলাহ বিনত সুহাইল

সুহলাহ বিনত সুহাইল অনেক পূর্বে মক্কায় ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। তিনি হাবশায় দুইবার হিজরত করেছিলেন এবং প্রতিবারেই উনার স্বামী আবু-হুযাইফাহ বিন উতবাহ উনার সাথে ছিলেন। এবং সেখানে তিনি তার স্বামীর সন্তান মুহাম্মাদ বিন আবি-হুযাইফাহকে জন্ম দেন। একজন মহিলা যিনি আল্লাহর রাস্তায় নিজ ইচ্ছায় উৎসর্গকারী একজন মুহাজির হিসেবে নিজ বাড়িঘর ও পরিবার-পরিজনদের ত্যাগ করেছিলেন, আপনিকি এমন একজন মহিলাকে তার রবের শরীয়তের বিরোধিতা করতে দেখবেন/দেখতে আশা করবেন?

অপরদিকে দুধ-পান সক্রান্ত হাদিসে আছে যে তাবান্নী হারাম হওয়ার পর তিনি রাসূল (ﷺ)-এর নিকট এসে সালিম মাওলা আবি-হুযাইফাহ এর সাথে উনার সাক্ষাত করার হুকুমের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

এবং সেটা উনার লজ্জাশীলতা ও সত্য জানার আগ্রহের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।[9]আত-তাবাকাতুল কুবরা লিইবন সা’দ (8/212).

আবু-হুযাইফাহ বিন উতবাহ

পুরো নামঃ আবু-হুযাইফাহ বিন উতবাহ বিন রাবিয়াহ বিন আব্দ-শামস বিন আব্দ-মানাফ আল-কুরেশী। তিনি ইসলামে ফিরে আসা শুরুর দিকের সাহাবীদের একজন ছিলেন। তিনি হাবশাহ ও মদিনায় হিজরত করেছিলেন। তিনি ইয়ামামাহর যুদ্ধে শহীদ হন। এবং হাবশায় উনার সাথে উনার স্ত্রীও ছিলেন।

তিনি শ্রেষ্ঠ সাহাবিদের একজন ছিলেন। আল্লাহ উনার মধ্যে ভদ্রতা-বিনয় ও শ্রেষ্ঠত্ব একত্রে দিয়েছেন। রাসূল (ﷺ) দারুল-আকরাম এ প্রবেশের পূর্বে তিনি ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। তিনি হাবশায় হিজরতের পরে সেখান থেকে মক্কায় ফিরে এসেছিলেন। এবং মদিনায় হিজরতের আগ-পর্যন্ত তিনি রাসূল (ﷺ) এর সাথে স্থায়ীভাবে বাস করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উনার ও আব্বাদ বিন বিশর আল-আনসারী এর মাঝে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বহু সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন, যার প্রতিটিতেই তিনি রাসূল (ﷺ) এর সাথে ছিলেন। তিনি ইয়ামামার যুদ্ধের দিন শহিদ হয়েছিলেন ও তখন উনার বয়স ৫৩ অথবা ৫৪ বছর ছিলো।[10]আসাদুল গায়াহ (1/1159).

আবু-হুযাইফাহ বহু মহান গুনাবলী দ্বারা গুনান্বিত ছিলেন যার মধ্যে একটা হলো “গাইরাত”, যেমনটা তাবান্নী হারাম হওয়ার সময়ের স্তনের দুধ-পান সক্রান্ত হাদিসে রয়েছে। সালিম আবু-হুযাইফাহর ঘরে প্রবেশ করতেন। সুহলাহ ঘরোয়া পোশাক পরিহিত থাকা অবস্থায় সালিম তার সাথে দেখা করতেন। সুহলাহ আবু-হুযাইফাহর চেহারায় বিতৃষ্ণার ভাব দেখতে পেতেন, এরদ্বারা বুঝা যায় যে তিনি (হুযাইফাহ) আল্লাহর শরীয়তের বিরোধিতা করাকে ঘৃনা করতেন।

এখন প্রশ্ন হলো আপনি কি দেখতে পান যে, এ ধরনের গুনাবলীসম্পন্ন একজন পুরুষ তার স্ত্রী বা সন্তানকে আল্লাহর শরীয়তের বিরুধিতা করার জন্য ছাড় দিয়ে দেয়/দেবে? এব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা সামনে পর্যায়ক্রমে আসবে।

আয়েশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) – যিনি বয়স্কদের স্তন্যপানকে জায়েয বলে ফতোয়া দিয়েছেন

আয়েশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা আস-সিদ্দিকিয়াহ বিনত আস-সিদ্দিক আবি-বকর (রাঃ), তিনি নবী (ﷺ) এর হাতে শিক্ষা গ্রহন করেছেন। তিনি নবুয়তের ঘরে থেকেছেন একজন স্ত্রী হিসেবে, একজন দাঈ হিসেবে, উম্মতের জন্য একজন সংশোধনকারী হিসেবে। তিনি আমাদের জন্য প্রচুর হাদিস বর্ননা করেছেন, নারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ হাদিস বর্ণনাকারী। আল্লাহ উনার ও সকল উম্মুল-মু’মিনীনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন।

বয়স্কদের স্তন্যপান করা সক্রান্ত মাসআলায় তিনি সকল সাহাবীদের বিরোধিতা করেছেন এবং তা উনার (রাঃ) নিকট হতে আসা একটি ইজতিহাদ। তিনি সেই ব্যাক্তি যিনি সুহলাহর হাদিসটিকে আম হিসেবে দেখেছেন, খাস হিসেবে নয়, এবং সে অনুযায়ী তিনি আমল করেছিলেন, উনার ইজতিহাদের জন্য তিনি মা’যুর – ইংশা-আল্লাহ – যদিও উনার বিরোধিতাটি ছিল সঠিকতার জন্য।[11]যাদুল মা’আদ লিইবনিল কাইয়ুম (5/590).

পক্ষান্তরে মানুষদের সাথে উনার সরাসরি সাক্ষাত করার অনুমতি সাব্যস্ত হওয়ার জন্য বয়স্কদের স্তনের দুধপান করাকে মাধ্যম বলে তিনি যে ফতোয়া দিয়েছেন, এ বিষয়টিতে বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে এবং তা প্রত্যাখ্যাত, স্বয়ং উনার সীরাতই এর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়, আপনাদের উদ্দেশ্যে কিছু উদাহরন পেশ করা হলোঃ

  1. উনার নিজের জন্য নিজের হিজাব করাকে আবশ্যক করে নেয়া, এমনকি উনার আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত দেয়া ও রাসূল (ﷺ) এর সুন্নাহ সাহাবিদের নিকট পৌছে দেয়ার বেলাতেও । যদি তিনি মানুষদের সাথে উনার সরাসরি সাক্ষাত করার অনুমতি সাব্যস্ত হওয়ার জন্য বয়স্কদের স্তনের দুধপান করা মাধ্যম হওয়ার ফতোয়াকে গ্রহন করে নিতেন, তাহলে তিনি নিজের জন্য হিজাবকে আবশ্যক করে নিতেন না।
  2. সহিহুল মুসলিমের হাদিসে আছে, ❝ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ….. উরওয়াহ (রহঃ) আয়িশাহ্ (রাযিঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আবূল কু’আয়স এর ভাই আফলাহ একবার তার নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তিনি ছিলেন তার দুধচাচা। এ ছিল পর্দার হুকুম অবতীর্ণ হবার পরবর্তী ঘটনা। তিনি বলেন, আমি তাকে অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। অতঃপর যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন আমি যা করেছি সে সম্পর্কে আমি তাকে অবহিত করলাম। তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমি যেন তাকে (দুধচাচাকে) আমার নিকট আসার অনুমতি দেই।[12]সহিহুল মুসলিম ১৪৪৫এ-জে, হাদিস একাডেমী ৩৪৬৩-৩৪৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪৩৬-৩৪৪৯ আরেক রেওয়ায়েতে আছে রাসূল (ﷺ) বলেছেনঃ ❝তুমি তার থেকে পর্দা করবে না। কেননা দুধ পানের সম্পর্ক দ্বারা ঐসব লোক হারাম হয়ে যায় যারা রক্ত সম্পর্ক দ্বারা হারাম হয়।[13]সহিহুল মুসলিম হাদিস একাডেমী ৩৪৭১, ইফা ৩৪৪৪, আন্তর্জাতিক ১৪৪৫আই [সুন্নাহ.কম]
  3. আমরাহ বিনত আব্দুর-রহমান আল-আনসারিয়াহ হতে বর্নিত যে আয়িশাহ হতে বর্নিত, তিনি বলেছেনঃ উমার ইবনুল-খাত্তাব আমার ঘরে দাফনকৃত থাকা সত্ত্বেও আমি আমার খিমার (ঘোমটাজাতীয় পোশাক) পরিধান করা হতে বিচ্যুত হয়নি ও আমার ঘরে আমি নিজ পোশাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমি আমার ও কবরসমূহের মাঝে দেয়াল তৈরি করেছি কিন্ত তা সত্ত্বেও আমি আমার পোশাকের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া হতে বিরত হইনি। তারা বলেছেনঃ তিনি (আয়েশাহ) আমাদের জন্য রাসূল (ﷺ) এর কবর, আবু-বকরের কবর ও উমার (রাঃ) এর কবরের বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করে দিয়েছেন। এবং এই কবরগুলো আয়েশাহর ঘরের সাহওয়াহতে ছিল।[14]হাদিসটি ইবন সা’দ আত-তাবাকাতুল কাবির (3/277) এ সহিহ সনদে বর্ননা করেছেন।

আমি বলবঃ সুবহানাল্লাহ, আয়েশাহ (রাদ্বিঃ) কবরে দাফন হয়ে যাওয়া ব্যাক্তির কারনে নিজ পোশাক কে আবশ্যক করে নিতেন এবং লজ্জা অনুভব করতেন, এর কারন হলো উনার লজ্জাশীলতা! উনার চরিত্র কতোইনা মহান! তিনি তো উম্মুল-মু’মিনীন আয়েশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা)।

বহু পয়েন্ট ধরে ধরে বয়স্কদের স্তনের দুধ পান করা সক্রান্ত সংশয়ের জবাব

এবার আমাদের মূল আলোচনায় প্রবেশ করি…

প্রকৃতপক্ষে স্তনের দুধ পান করা শুধুমাত্র দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য প্রমানিত

আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

যে ব্যক্তি দুধপান কাল পূর্ণ করাতে ইচ্ছুক তার জন্য মায়েরা নিজেদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’ বৎসরকাল স্তন্য দান করবে। জনকের উপর দায়িত্ব হল ভালভাবে তাদের অন্নবস্ত্রের ব্যবস্থা করা।[15]সূরা আল-বাকারাহ – আয়াত 233 এর অংশবিশেষ

এবার আপনার নিকট উক্ত আয়াতের ব্যাপারে মুফাসসির ও আলেমদের বক্তব্যগুলো উল্লেখ্য করছি।

আল-কুরতুবী (রহঃ) বলেছেনঃ

মালিক রহিমাহুল্লাহু তা’আলা, এবং যারা উনার অনুসরণ করেছেন তারা, ও আলেমদের একটা জাম’আত এই আয়াতটি থেকে বিধান দিয়েছেন যে, বিয়ে হারাম হওয়ার বিধান জারিকারী স্তন্যপান প্রথম দুই বছরের মধ্যে হলে কার্যকর হয়। কেননা দুই বছর বয়স পুর্ণ হয়ার পর স্তনের দুধ পান করার বিষয়টির সময়কাল শেষ হয়ে যায়। দুই বছর বয়সের পর কোনো বিবেচনার যোগ্য স্তনপান হয়না। এটা উনার (মালিকের) মুয়াত্তা গ্রন্থে থাকা উনার (মালিকের) মত।[16]মালিকের বক্তব্যটি আল-মুয়াত্তা (পৃ/471) তে রাদ্বা’আতুস সাগির অধ্যায়ে যেভাবে এসেছে : ❝পক্ষান্তরে যেই স্তনের দুধ পান করা দুই বছর বয়সের পরে সংঘঠিত হয়, এর … See Full Note[17]মুয়াত্তা ইমাম মালিক ১২৭১ ও দেখুন http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=74168[18]মুয়াত্তা মালিক ১২৮০ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=74177[19]মুয়াত্তা মালিক ১২৮১ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=74178

আমি (আল-কুরতুবী) বলবঃ এই খবরটি আয়াত ও অর্থের সাথে আছে, যা বড়দের স্তনপানকে নিষিদ্ধ করে এবং নিশ্চয়ই এতে বড়দের জন্য বিয়ে হারাম করার কোনো ক্ষমতা নেই।[20]তাফসিরুল কুরতুবী (3/162:163).

ইবনুল-কাইইম (রহঃ) বলেছেন :

দুই বছরের মতের পক্ষের আলেমরা বলেছেন যে আল্লাহ বলেছেন, ❝যে ব্যক্তি দুধপান কাল পূর্ণ করাতে ইচ্ছুক তার জন্য মায়েরা নিজেদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’ বৎসরকাল স্তন্য দান করবে।[21]আল-বাকারাহ : 233, তাঁরা বলেছেন : স্তনের দুধ পান করা সমাপ্ত হওয়ার সীমানা হলো দুই বছর, তা ইঙ্গিত দেয় যে সেই দুই বছরের পরের জন্য কোনো নিয়ম নেই, সুতরাং তখন এর সাথে বিয়ে হারাম হয়া সম্পর্কিত হবেনা।[22]যাদুল মা’আদ (5/579).

ইবন কাসির (রহঃ) বলেছেনঃ

এখানে আল্লাহ তা’আলা শিশুর জননীদেরকে লক্ষ্য করে বলেন যে, শিশুদেরকে দুধ পান করানোর পূর্ণ সময় হচ্ছে দু’বছর। এর পরে দুধ পান করলে তা ধর্তব্য নয় এবং এ সময়ে দুটি শিশু একত্রে দুধ পান করলে তারা তাদের পরস্পরের দুধ ভাই বা দুধ বোন হওয়া সাব্যস্ত হবে না। সুতরাং তাদের মধ্যে বিয়ে হারাম হবে না। অধিকাংশ ইমামের এটাই মাযহাব।[23]তাফসীর ইবনে কাছীর ইফাঃ – কুরআন ২:২৩৩ এর তাফসীরের প্রথমাংশ, আরবি ১/৫২২-৫২৩[অতঃপর ইবন কাসির এই মতটিকে জুমহুর উলামা তথা চার ইমাম, সাত ফুকাহা, বড় বড় সাহাবি ও আয়েশা (রাঃ)-কে বাদ দিয়ে রাসূল (ﷺ) অন্য সকল স্ত্রীদের নিকট হতে নক্বল করেছেন তাফসীরের মধ্যে।]

আশ-শাফেঈ (রহঃ) বলেছেনঃ

বড় ও ছোট এর মধ্যকার পার্থক্যের দলিল আল্লাহর কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন ❝যে ব্যক্তি দুধপান কাল পূর্ণ করাতে ইচ্ছুক তার জন্য মায়েরা নিজেদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’ বৎসরকাল স্তন্য দান করবে।
আল্লাহ তা’আলা সম্পূর্ণ দুইটি বছরকে স্তনের দুধ পান করা সমাপ্ত হওয়ার সীমানা বানিয়ে দিয়েছেন। এবং তিনি বলেছেন ❝ফা ইন আরাদা ফিসালান আন তারাদ্বিন মিনহুমা ওয়া তাশাউরিন ফালা জুনাহা আলাইহিমা❞ অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা দুই বছরের পূর্বের ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছেন (কিংবা অনুবাদ হবে এরুপ : ‘আল্লাহ তা’য়ালা দুই বছরের পূর্বের বিষয়ে অধিক জ্ঞানী), তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, দুই বছরের মধ্যের সময়ে দুধ-ছাড়ানোর ক্ষেত্রে আল্লাহ কর্তৃক প্রদানকৃত অনুমতিটির ভিত্তি হচ্ছে এই যে, অবশ্যই দুই বছরের পূর্বে দুধ ছাড়ানোর উপর মাতা ও পিতার ঐক্যমতের দ্বারা সেটা হতে হবে। পিতামাতাকে সন্তানের জন্য চিন্তাভাবনা করে দেখতে হবে, অন্যথায় তা (সময়ের পূর্বে দুধ ছাড়ানো) যাবে না। অর্থাৎ তারা যখন দেখতে পাবেন যে দুই বছরের পূর্বে দুধ-ছাড়ানোটা সন্তানের জন্য তার স্তন্যপানের মেয়াদ পুর্ন করার তুলনায় অধিক উত্তম; এর পিছনে কারণ হতে পারে সন্তানের কোনো অসুস্থতা অথবা তাকে স্তন্যদানকারী মহিলার অসুস্থতা এবং বাচ্চাটি সেই মহিলা ছাড়া আর কারো স্তনের দুধই পান করতে চায়না অথবা এইধরনের কোনোকিছু।

এবং সময়সীমা গত হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহ তার জন্য সেক্ষেত্রে হুকুমের দ্বারা কোনো সীমা নির্ধারন করেন নি, সময়সীমা গত হয়ে যাওয়ার পূর্বে হলে ভিন্ন কথা।

যদি কোনো মন্তব্যকারী বলে : এটা আবার কি? (তাহলে তাকে উত্তরে) বলা হবে : আল্লাহ তা’আলা বলেছেন ❝যদি তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমন করো, তবে তোমাদের জন্য সালাত কসর (সংক্ষিপ্ত) করাতে কোনো গুনাহ নেই❞ এই আয়াত অনুযায়ী তারা মুসাফির অবস্থায় কসর করবে এবং তাদের জন্য কসরের শর্ত হচ্ছে একটি বিশেষ অবস্থা, (এ ব্যাপারটি) ইঙ্গিত দেয় যে উক্ত অবস্থার বাহিরে তাদের জন্য হুকুম হচ্ছে কসর না করা।

এবং আল্লাহ বলেছেন: ❝এবং তালাকপ্রাপ্ত মহিলারা নিজেদের জন্য তিনবার মাসিক হয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে❞, অর্থাৎ যখন তাদের তিনবার মাসিক হয়া গত হয়ে যাবে, তখন তা গত হয়ার পর তাদের জন্য যেই হুকুম হবে, সেটা তাদের জন্য উক্ত মাসিক চলাকালীন সময়ের হুকুম হতে ভিন্ন হবে।[24]আল-উম্ম লিশ-শাফেঈ (5/28).

আমি (লেখক) বলবঃ

আল-বুখারী উক্ত আয়াতটিকে এই বিষয়টির প্রমাণস্বরুপ উদ্ধৃত করেছেন যে দুই বছর বয়সের পর কোনো স্তন্যপান নেই, যেখানে তিনি কিতাবুন-নিকাহ তে একটি অধ্যায় এনে সেটার নাম দিয়েছেন ‘তাদের ব্যাপারে অধ্যায় যারা আল্লাহর বক্তব্য {হাওলাইনি কামিলাইনি লিমান আরাদা আই ইউতিম্মার রাদ্বা’আহ} এর কারনে বলেছেন যে দুই বছরের পর কোনো স্তন্যপান নেই ’। অতঃপর তিনি আয়েশাহর (রাঃ) হাদিস উল্লেখ্য করেছেন যে ❝স্তনপান তো হয় ক্ষুধার কারণে।❞[25]সহিহুল মুসলিম ইফাবা 3475 http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=13086[26]ফাতহসহ আল-বুখারী (9/50), এবং তাদের (ইসলামবিরোধীদের) একটি আপত্তির ব্যাপারে সামনে আলোচনা আসবে এবং তা (আপত্তিটি) হচ্ছে আল-বুখারী কেন স্তনপানের ব্যাপারকে … See Full Note

এবং এই আয়াতেও {এবং মায়েরা তাদের সন্তানদের স্তনপান করাবে } এব্যাপারে ইঙ্গিত আছে যে বড়দের স্তনপান বিয়ে হারাম করবেনা।

ইবনুল-কাইইম (রহঃ) বলেছেনঃ

তারা বলেছেন এবং এটাই হলো স্তনের জন্য নির্দিষ্ট সময়কাল (মেয়াদ) যার ব্যাপারে তিনি বলেছেনঃ স্তনের মধ্যে অর্থাৎ স্তন্যপানের সময়ের মধ্যে যা হয়েছে তা ব্যাতিত অন্য কোনো স্তনপান নেই। এবং এই ভাষারীতিটি আরবদের নিকট পরিচিত। আরবরা বলে যে অমুকে স্তনের মধ্যে মারা গেছে অর্থাৎ স্তন্যপানের সময়ের মধ্যে দুধ-ছাড়ানোর পূর্বে মারা গেছে, এবং এ থেকেই সেই হাদিসটি এসেছে যা ইমাম মুসলিম বর্ননা করেছেন যে ❝আমর ইবনু সাঈদ (রাযিঃ) বলেন, যখন ইবরাহীম (রাযিঃ) মৃত্যুবরণ করেন তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ইবরাহীম আমার পুত্র, দুধ পান করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। তার জন্য দুধপিতা ও দুধমাতা রয়েছে, যারা জান্নাতে তাকে দুধ পান করার সময়-সীমা পর্যন্ত দুধ পান করাবে।[27]সহিহুল মুসলিম ২৩৬১, হাদিস একাডেমী ৫৯২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮১৯, ইসলামিক সেন্টার ৫৮৫৪ এবং তারা বলেছেন ; এবং সেটা আরো জোরদার হয় তাঁর (ﷺ) এই বক্তব্য ❝যা খাদ্যনালী ভেদ করেছে ও স্তনপানের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দুধ ছাড়ানোর পূর্বে হয়েছে তা ব্যাতিত অন্য কোনো স্তন্যপান নেই❞ এর দ্বারা।[28]সহিহ, সেটার তাখরিজ সেটার জায়গায় আসবে।

এবং এগুলো হচ্ছে বিয়ে-হারামকারী স্তন্যপানের জন্য নির্দিষ্ট তিনটি বৈশিষ্ট্য, আর এটা (সবার) জানা যে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তির স্তন্যপান করা উক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্য হতে মুক্ত।[29]যাদুল মা’আদ (5/580).

হাদিস ও আছার সমূহ যা সুদৃঢ় করে যে স্তন্যপান প্রকৃতপক্ষে শিশুদের জন্য, এবং বয়স্কদের স্তন্যপান বিয়ে হারাম করেনা

দলিল ১

‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে এলেন। সে সময় এক লোক তার কাছে বসা ছিল। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারায় ক্রোধের ভাব প্রকাশ পেল, যেন তিনি এ ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এ আমার ভাই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যাচাই করে দেখ, তোমাদের ভাই কারা? কেননা দুধের সম্পর্ক কেবল তখনই কার্যকরী হবে যখন দুধই হল শিশুর প্রধান খাদ্য।[30]সহিহুল বুখারী ৫১০২, ২৬৪৭[31]সমার্থক বর্ণনা ভিন্ন শব্দেঃ সহিহুল মুসলিম ১৪৫৫ – হাদিস একাডেমী ৩৪৯৮ – ইফা ৩৪৭৫

আল-হাফেয (ইবন হাজার আল-আসকালানী) আল-ফাতহ তে (অর্থাৎ ফাতহুল বারিতে) বলেছেনঃ

এবং অর্থটি হলো “তোমরা মহিলারা গভীরভাবে চিন্তা করে দেখবে যে যা তার (দুধপানের দ্বারা সম্পর্কিত পুরুষের) পক্ষ হতে সংঘটিত হয়েছে, সেটা স্তন্যপানের জন্য নির্ধারিত সময় ও স্তন্যপানের মেয়াদের মধ্যে সংঘটিত হয়ার শর্ত পূরণ করা সহিহ স্তন্যপান কিনা,” কেননা যেই হুকুমটি স্তন্যপানের কারনে সৃষ্টি হয় সেটা তখনিই প্রযোজ্য হবে যখন স্তন্যপানটি শর্ত অনুযায়ী সংঘটিত হবে। আল-মুহাল্লাব বলেছেন: এর অর্থ হচ্ছে এবং তোমরা মহিলারা লক্ষ্য করবে যে এই ভ্রাতৃত্বের সূত্র কি? স্তন্যপানের দ্বারা বিয়ে হারাম হয়া তখনিই প্রযোজ্য হয় যখন তা শিশু বয়সে ক্ষুধাজনিত স্তন্যপানের চাহিদা পুরন হওয়ার আগ পর্যন্ত সংঘটিত হবে। এবং আবু-উবাইদ বলেছেন: এর অর্থ হচ্ছে যে যে ব্যাক্তি ক্ষুধার্ত হয় ও তার খাবার হিসেবে স্তনের দুধ থাকে যা তাকে পরিতৃপ্ত করে, যেখানে কিনা স্তনের দুধ পান করা ব্যাতিত (তার জন্য) অন্য কোনো খাদ্য থাকেনা।

এবং তাঁর (ﷺ) বক্তব্য “স্তনপান তো হয় ক্ষুধার কারণে।” এর মধ্যে বিচার-বিবেচনা ও চিন্তাতে গভীর মনোযোগ দেয়ার একটি কারণের ব্যাখ্যা রয়েছে। কেননা স্তন্যপান সম্পর্ক প্রমান ও সাব্যস্ত করে, স্তন্যপানকারীকে মাহরাম করে দেয়। এবং তাঁর (ﷺ) বক্তব্য “ক্ষুধার কারনে” অর্থাৎ যেই স্তন্যপানের দ্বারা বিয়ে হারাম সাব্যস্ত হয় ও মেলামেশা করা হালাল হয়, সেটা তখনই প্রযোজ্য হবে যখন স্তন্যপানকারী দুধ-পানের দ্বারা ক্ষুধা নিবারনকারী ছোট্ট শিশু হবে; কেননা তার পাকস্থলী দুর্বল হয় এবং সেটার জন্য দুধই যথেস্ট হয়, এবং এর দ্বারা শিশুটির মাংস উৎপন্ন হয় ফলে সে স্তন্যদানকারিনীর একটা অংশের অনুরুপ বিষয়ে পরিণত হয়, অতঃপর সে (শিশুটি) তার (স্তন্যদানকারিনীর) সন্তানদের সাথে মাহরাম হিসেবে শরিক হয়। সুতরাং মনে হচ্ছে যে রাসূল (ﷺ) বলেছেন : ক্ষুধার ক্ষেত্রে প্রয়োজন পূরণকারী কিংবা ক্ষুধার দরুন খাওয়ানো বাদে অন্য কোনো স্তন্যপান বিবেচ্য নয়, আল্লাহর বক্তব্য ❝আতা’আমাহুম মিন জু’ — ক্ষুধায় খাদ্য দিচ্ছেন❞[32]সূরা কুরাইশ : আয়াত 4 হতে এর মতো।[33]ফাতহুল বারী লিইবন হাজার (9/51-52).

ইবনুল-কাইইম (রহঃ) বলেছেনঃ

যদি বয়স্কদের স্তন্যপান বিয়ে হারাম করতো, তবে নবি (ﷺ) আয়েশাহকে বলেছেন – এবং তখন তাঁর (ﷺ) চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি আয়েশাহর (ﷺ) সহিত তাঁর দুধভাইয়ের সাক্ষাত করাকে এটা দেখার পর অপছন্দ করলেন যে তিনি (আয়েশাহর রা. দুধভাই) একজন বয়স্ক লোক – ❝তোমরা মহিলারা লক্ষ্য রাখবে যে কারা তোমাদের ভাই❞, সুতরাং যদি বড়দের স্তন্যপান বিয়ে হারাম করতো, তাহলে তার (আয়েশাহর দুধভাইয়ের) ও একটি ছোট বাচ্চার মাঝে কোনো পার্থক্য থাকতো না। এবং যখন তিনি (ﷺ) সেটা অপছন্দ করলেন এবং বললেন ❝তোমরা মহিলারা লক্ষ্য রাখবে যে কারা তোমাদের ভাই❞, অতঃপর বললেন ❝কেননা স্তন্যপান তো হয় ক্ষুধার কারনে❞,এবং মর্মের দিক দিয়ে এমনটা হয়ার আশংঙ্কা এর অন্তর্ভুক্ত হয় যে হয়তো স্তন্যপানের সময়কালের মধ্যে তথা ক্ষুধার সময়কালের মধ্যে সে স্তন্যপান করেনি, যার ফলে বিয়ে হারাম হয়নি, সুতরাং সে (আয়েশাহর দুধভাই) মোটেও (আয়েশাহর রা.) ভাই হবেনা।[34]যাদুল মা’আদ (5/580).

আবু-উবাইদ বলেছেনঃ

তাঁর (ﷺ). বক্তব্য ❝স্তন্যপান তো হয় ক্ষুধার কারনে❞, তিনি (ﷺ) বলছেন: একজন ব্যাক্তি যখন ক্ষুধার্ত হবে এবং তাকে পরিতৃপ্তকারী খাদ্যটি হবে দুধ এবং প্রকৃতপক্ষে সে হবে একজন দুগ্ধপায়ী ছোট্ট শিশু। পক্ষান্তরে যাকে (অন্যান্য) খাবার তার ক্ষুধা হতে পরিতৃপ্তি প্রদান করে, তাকে যদি তোমরা স্তনের দুধ পান করাও ;তবুও সেটা (বিয়ে হারামকারী) স্তন্যপান হবেনা।[35]গারিবুল হাদিস লি’আবি উবাইদ আল-হারাওই (1/287).

দলিল ২

উম্মু সালামাহ হতে বর্নিত তিনি বলেছেন যে,

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : “যা খাদ্যনালী ভেদ করেছে ও স্তন্যপানের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দুধ ছাড়ানোর পূর্বে হয়েছে তা ব্যাতিত অন্য কোনো স্তন্যপান নেই।”[36]হাদিসটি বর্ননা করেছেন আত-তিরমিযী (1152, 1662), এবং ইবন হিব্বান (4225), এবং ইবন আবি-শায়বাহ (3/388), এবং আন-নাসাঈ (5465), ইবনু মাজাহ ১৯৪৬। ইবন হাজার এটাকে ফাতহুল বারিতে … See Full Note

এ হাদীস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অন্যান্যরা আমল করার কথা বলেছেন। তাদের মতে, কোন শিশু দুই বছরের কম বয়সে দুধ পান করলেই বিয়ের সম্পর্ক স্থাপন হারাম হবে। কিন্তু দুই বছরের পর দুধ পান করলে বিয়ের সম্পর্ক স্থাপন হারাম হবে না।

দলিল ৩

ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্নিত যে তিনি বলেছেনঃ

যাকে শিশুবয়সে স্তন্যপান করানো হয়েছে সে ব্যাতিত অন্য কারো জন্য স্তন্যপান গ্রহণযোগ্য নয়, বড়দের জন্য কোনো স্তন্যপান নেই।[37]সহিহ। হাদিসটি মালিক আল-মুয়াত্তা (হাদিস 1394) এবং তাঁর (মালিকের) নিকট হতে আব্দুর-রাজ্জাক নিজ মুসান্নাফে (13905), এবং আল-বায়হাকী ‘আস-সুনানুল কুবরা’ (7/461) এ, এবং … See Full Note

দলিল ৪

‘আবদুল্লাহ ইবন দীনার (রহঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলিয়াছেনঃ

বয়স্কদের দুধ পানের বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য “দারুল কাযা” (বিচারালয় ইহা ছিল উমর ফারুক (রাঃ)-এর ঘর, তাহার শাহাদতের পর তাহার ঋণ পরিশোধ করার জন্য এই ঘর বিক্রি করা হয়, তাই ইহাকে দারুল কাযা বলা হয়)-এর নিকট এক ব্যক্তি আসিল। আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)-এর নিকট তখন আমি উপস্থিত ছিলাম। আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) বলিলেনঃ এক ব্যক্তি উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট আসিয়া বলিলেন, আমার এক দাসী ছিল। আমি উহার সহিত সঙ্গম করিতাম – আমার স্ত্রী ইচ্ছাপূর্বক উহাকে দুধ খাওয়াইয়া দেয়, তারপর আমি সেই দাসীর নিকট (সঙ্গমের উদ্দেশ্যে) প্রবেশ করিলাম। আমার স্ত্রী বলিল থাম। উহার সাথে সংগত হইও না আল্লাহর কসম, আমি উহাকে দুধ পান করাইয়াছি। উমর (রাঃ) বলিলেন তোমার স্ত্রীকে শাস্তি দাও, তারপর দাসীর নিকট গমন কর, দুধ পান করানো ছোটদের বেলায় গ্রহণযোগ্য হইয়া থাকে।[38]http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=74177 সহিহ। হাদিসটিকে আল-বায়হাকী আস-সুনানুল কুবরা (7/462) তে বর্ননা করেছেন ও বলেছেন : এবং এটা মাওকুফরুপে সহিহ। এবং সাঈদ বিন মানসুর নিজ সুনানে (980) … See Full Note

দলিল ৫

একজন লোক ইবন মাসউদের (রাঃ) নিকট এসে বললেন : আমার স্ত্রী আমার সাথে ছিলো এবং তার (স্তনের) দুধ তার স্তনে জমে আটকে গিয়েছিলো, সুতরাং আমি তা চোষে নিয়ে মুখ থেকে ফেলে দিতে থাকি। অতঃপর আমি আবু-মুসার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করি, তিনি উত্তরে বলেন : ‘সে তোমার জন্য হারাম হয়ে গিয়েছে ‘। একথা শোনে ইবন মাসউদ (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন, আমরাও দারিয়ে গেলাম, অতঃপর তিনি আবু-মুসার (রাঃ) নিকট এসে পৌছালেন, এবং তাঁকে জিজ্ঞাস করলে ‘আপনে কি ফতোয়া দিয়েছিলেন?’ উত্তরে তিনি (আবু-মুসা) যা ফতোয়া দিয়েছিলেন তা উল্লেখ্য করলেন। অতঃপর ইবন মাসউদ (রাঃ) লোকটির হাত ধরে বললেন : এই যে স্তন্যপানকারী, খেয়াল করছো তো? অবশ্যই গ্রহনযোগ্য স্তন্যপান তো তাই, যা কিনা মাংস ও রক্ত গঠনে ভূমিকা রাখে। ফলে আবু-মুসা (রাঃ) বললেন : এই জ্ঞানী লোকটি (ইবন মাসউদ) তোমাদের পিছনে থাকলে আমাকে কোনোকিছু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেনা।[39]সহিহ। হাদিসটিকে মালিক আল-মুয়াত্তা (হাদিস 1404) এ বর্ননা করেছেন, এবং সাঈদ বিন মানসুর আস-সুনানে (987), এবং আব্দুর-রাজ্জাক ভিন্ন সুত্রে আল-মুসান্নাফে (7/463), … See Full Note[40]সমার্থক http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=74178

দলিল ৬

ইয়াহয়া ইবন সাঈদ (রহঃ) বলেনঃ

আমি সাঈদ ইবন মুসায়্যাব (রহঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি স্ত্রীলোকদের সন্তানদের দুধ পান করানো তখন গ্রহণযোগ্য হইবে যখন উহারা দোলনাতে থাকে এবং যাহা গোশত ও রক্ত সৃষ্টি করে। ইবন শিহাব (রহঃ) বলিতেনঃ রাযাআত [দুধ পান করান] অল্প হউক বেশি হউক উহা হারাম করিবে। আর রাযা’আত পুরুষের পক্ষের আত্মীয়তাও হারাম করিবে।[41]http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=74175 হাদিসটি আব্দুর-রাজ্জাক (হাদিস নং 13907) বর্ননা করেছেন, এবং মালিক আল-মুয়াত্তাতে (1400) , এবং সাঈদ বিন মানসুর আস-সুনানে (977) প্রথম অংশটি এবং ইবন … See Full Note

দলিল ৭

আশ-শু’বী হতে বর্নিত, তিনি বলেছেন : যেকোনো ধরনের সুউত বা উজুর বা স্তন্যপান প্রথম দুই বছরের আগে সংঘটিত হলে তা বিবাহ হারাম করে। আর যা (যেই স্তন্যপান) প্রথম দুই বছরের পরে হয়, তা বিবাহ হারাম করেনা।[42]আব্দুর-রাজ্জাক হাদিসটি বর্ননা করেছেন (7/463) এবং বলেছেন : এবং মানুষজন এই অনুযায়িই আমল করে, এবং সাঈদ বিন মানসুর ‘আস-সুনানে’ (973).

জুমহুর উলামাদের মতে বড়দের স্তন্যপান বিবাহ হারাম করেনা

ইবন কুদ্দামাহ বলেছেনঃ

সুতরাং অবশ্যই স্তন্যপানের দ্বারা বিবাহ হারাম হয়ার শর্ত হলো যে সেটাকে প্রথম দুই বছরের মধ্যে হতে হবে। এবং এটাই সিংহভাগ আহলুল-ইলমদের বক্তব্য। উমার, আলি, ইবন উমার, ইবন মাসউদ, ইবন আব্বাস, আবু-হুরাইরাহ (রাঃ) এবং আয়েশাহ বাদে নবির (ﷺ) বাকি সকল স্ত্রী হতে এমনটা বর্ণিত আছে। এবং অনুরুপ সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছেন আশ-শু’বী, ইবন শুবরুমাহ, আল-আওযাঈ, আশ-শাফেঈ, ইসহাক, আবু-ইউসুফ, মুহাম্মদ ও আবু-ছাওর।[43]আল-মুগ্বনী লিইবন কুদ্দামাহ (9/201).

আন-নববী (রহঃ) বলেছেনঃ

এই মাসআলাতে উলামাদের মতভেদ হয়েছে। আয়েশাহ ও দাউদ বলেছেন : স্তনপানজনিত সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে। অপরদিকে সাহাবীগন, তাবেঈগন, ও উলামাউল আমসার এর মধ্যে হতে সকল উলামাগন বলেছেন : দুই বছরের মধ্যে না হলে সম্পর্ক সাব্যস্ত হবেনা,[44]এই মতটির ব্যাপারে সামনে বিস্তারিত আলোচনা আসবে। তবে আবু-হানিফাহ (বছরের পরিমানের ক্ষেত্রে) দ্বিমত করেছেন।[45]শারহুন নববী আলা মুসলিম (5/289).

আল-কাসানী বলেছেনঃ

যদি কথা আসে বিবাহ হারামকারী স্তন্যপানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে, তাহলে বিবাহ হারামকারী স্তন্যপান হচ্ছে তা, যা শিশুকালে সংঘটিত হয়। পক্ষান্তরে যা বয়স্ক অবস্থায় সংঘটিত হয়, আয়েশাহ (রাঃ) হতে যেই মত বর্নিত আছে তা বাদ দিলে প্রায় সকল আলেম ও সকল সাহাবি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এর নিকট তা (বয়স্ক অবস্থায় হওয়া স্তন্যপান) বিবাহ হারাম করেনা। অতঃপর তিনি (আল-কাসানী) রহিমাহুল্লাহ প্রত্যেক দলের দলিলসমূহ উল্লেখ্য করেছেন এবং জুমহুরদের সিদ্ধান্তকে পছন্দ করেছেন।[46]বাদাইউস সানায়েঈ (4/5).

ইবন হাজার বলেছেনঃ

জুমহুরগন বয়সে ছোট বাচ্চা হওয়াকে বিবাহ হারামকারী স্তন্যপানের ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনেন।[47]ফাতহুল বারী (9/52)। আরো দেখুন : যাদুল মায়াদ (5/577),আল-উম্ম লিশশাফেঈ (5/28), জামিয়ু আহকামিন নিসা লিশশায়খ মুস্তফা আল-আদাওই (3/76),আওনুল মাবুদ শারহু সুনানে আবি-দাউদ … See Full Note অতঃপর তিনি এর পক্ষের দলিলসমূহ উল্লেখ্য করেছেন।

যদি বয়স্কদের স্তনপানের ব্যাপারটি সাধারনভাবে প্রযোজ্য হতো, তাহলে উক্ত কাজ করার জন্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যাক্তি হতো হুমুউ (প্রাথমিক অর্থ : ‘স্বামীর ভাই’)

যদি বড়দের স্তনপান কার্যকর হতো, তাহলে নবিকে (ﷺ) যখন হুমুউ বা, হামো (الحمو) প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো তখন তিনি অবশ্যই বলতেন যে ‘তার ভাইয়ের স্ত্রী (ভাবি) তাকে নিজ স্তনের দুধ পান করিয়ে দিবে, যাতে করে সে (হুমুউ) তার (ভাইয়ের স্ত্রীর/ভাবির) সাথে সাক্ষাত করতে পারে এবং তাকে (ভাইয়ের স্ত্রীকে) নিজের মাহরামের অন্তর্ভুক্ত একজন ব্যাক্তিতে পরিণত করে নিতে পারে। ‘ অথচ – তিনি (ﷺ) বলেছেন,

মহিলাদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনসার জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! হুমুউ/দেবরের ব্যাপারে কী হুকুম? তিনি উত্তর দিলেন, দেবর হচ্ছে মৃত্যুতুল্য।[48]সহিহুল বুখারী ৫২৩২, মুসলিম ৩৯/৮, হাঃ ২১৭২, আহমাদ ১৭৩৫২

http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=29796

আন-নববী (রহঃ) বলেছেন যে,

আল-লাইস বিন সাদ বলেছেনঃ হুমুউ হলো স্বামীর ভাই, এবং স্বামীর এই ধরনের অন্যান্য নিকটাত্মীয়গন, যেমন : চাচার চেলে (চাচাতো ভাই) ও এরকম অন্যান্যরা। ভাষাবিদরা এব্যাপারে একমত হয়েছেন যে হুমুউরা হলো একজন মহিলার স্বামীর নিকটাত্মীয়গন, যেমন : স্বামীর পিতা, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, চাচাতো ভাই, ও এই ধরনের অন্যান্যরা।

অতঃপর তিনি (আন-নববী) বলেছেনঃ

পক্ষান্তরে তাঁর (ﷺ) বক্তব্য ‘হুমুউ হলো মৃত্যু’ এর অর্থ এই যে অন্যান্যদের তুলনায় একজন হুমুউকে অধিক ভয় পাওয়া হয়, এবং অকল্যাণ বেশিরভাগক্ষেত্রে তার দ্বারাই সংঘটিত হয়। এবং এক্ষেত্রে ফিতনার পরিমান বেশি কেননা সে (হুমুউ) কোনো অস্বীকৃতির সম্মুখিন হয়া ব্যাতিত উক্ত মহিলার নিকট উপস্থিত হতে পারে এবং তার (মহিলার) সহিত নির্জনে সাক্ষাত করতে পারে, তবে একজন অপরিচিত ব্যাক্তির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। এবং এখানে হুমুউ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো স্বামীর পুর্বপুরুষগন (যেমন : বাপ, দাদা, দাদার দাদা) ও সন্তানেরা বাদে অন্যান্য নিকটাত্মীয়গন।[49]শারহু সহিহ মুসলিম লিনওওই (7/410).

আলেমদের মধ্য থেকে যারা বলেছেন যে বয়স্কদের স্তন্যপান সাধারনভাবে বিয়ে হারাম করে এবং উক্ত মতের পক্ষে তাদের দলিলসমূহের বিবরন ও খন্ডন

সালাফ ও খালাফদের একটি দল হতে এমনটা প্রমাণিত আছে যে তারা বলেছেন বড়দের স্তন্যপান সাধারনভাবে বিবাহ হারাম করে।

ইবনুল-কাইইম বলেছেনঃ

এবং এই মতটি আয়েশাহ (রাঃ) হতে প্রমাণিত। এবং আলি বিন আবি-তালিব[50]ইবন আব্দিল-বার আত-তামহিদে বলেছেন : ‘এবং আলি (রাঃ) হতে এমনটা বর্নিত আছে, কিন্ত তা (বর্ননাটি) সহিহ নয়। এবং বিশুদ্ধ কথা হলো এই যে দুধ ছাড়ানোর বয়সের পরে … See Full Note,উরওয়াহ ইবনুয-যুবাইর, আতা বিন আবি-রাবাহ হতে বর্ণিত। এবং এটা আল-লাইস বিন সাদ ও আবু-মুহাম্মদ ইবন হাযমের মত।[51]যাদুল মা’আদ লিইবনিক কাইয়িম (5/579), এবং আরো দেখুন নাইলুল আওতার লিশশাওকানী (7/112).

ইবন হাযম বলেছেনঃ

বড়দের স্তন্যপান বিবাহ হারাম করবে, এমনকি যদি স্তন্যপানকারী বৃদ্ধ হয় তবুও। ঠিক যেভাবে ছোট শিশুদের স্তনপান বিবাহ হারাম করে। (বড়দের স্তন্যপান ও ছোট শিশুদের স্তন্যপানের মাঝে) কোনো পার্থক্য নেই।[52]আল-মুহাল্লা লিইবন হাযম (10/19).

উক্ত মতের পক্ষে তাঁদের উপস্থাপিত দলিলসমূহ নিম্নরুপঃ

দলিল ১

আয়েশাহ হতে বর্নিত সুহলাহ বিনত সুহাইলের হাদিস

তিনি (আয়েশাহ) বলেছেন :

সুহায়ল এর কন্যা সাহলাহ নবী (ﷺ) এর নিকট হাযির হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার সাথে সালিমের দেখা সাক্ষাৎ করার কারণে আমি আবূ হুযায়ফার মুখমণ্ডলে অসন্তুষ্টির আলামত দেখতে পাচ্ছি অথচ সালিম হল তার হালীফ (পোষ্য পুত্র)। নবী (ﷺ) বললেনঃ তুমি তাকে দুধপান করিয়ে দাও। তিনি বললেন, আমি কেমন করে তাকে দুধপান করাব, অথচ সে একজন বয়স্ক পুরুষ। এতে রসূলুল্লাহ (ﷺ) মুচকি হাসি দিলেন এবং বললেন, আমি জানি যে, সে একজন বয়স্ক পুরুষ।

আরেক রেওয়ায়েতে আছেঃ

আয়িশাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ হুযায়ফার মুক্তদাস সালিম (রহঃ) আবূ হুযায়ফাহ্ ও তার পরিবারের সাথে একই ঘরে বসবাস করত। একদা সুহায়লের কন্যা (হুযায়ফার স্ত্রী) রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে বলল, সালিম বয়স্ক পুরুষের স্তরে পৌছে গেছে, সে বুঝে লোকে যা বুঝতে পারে অথচ সে আমাদের নিকট প্রবেশ করে থাকে। আমি ধারণা করি এ কারণে আবূ হুযায়ফার মনে অভিযোগের ভাব সৃষ্টি হয়েছে। নবী (ﷺ) তাকে বললেন, তুমি তাকে দুধপান করিয়ে দাও, তুমি তার জন্য হারাম হয়ে যাবে এবং আবূ হুযায়ফার মনের অভিযোগ দূরীভূত হবে। অতঃপর তিনি তার (আবূ হুযায়ফার) নিকট ফিরে এসে বললেন, আমি তাকে (সালিমকে) দুধপান করিয়েছি। তাতে আবূ হুযায়ফার মনের অসন্তোষ দূর হয়ে যায়।

আরেক রেওয়ায়েতে আছেঃ

যে ইবন আবি-মুলাইকাহ বলেছেন যে আল-কাসিম বিন মুহাম্মদ বিন আবি-বকর তাকে বর্ননা করেছেন যে আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, সুহায়ল ইবনু আমর এর কন্যা সাহলাহ নবী (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! সালিম আবূ হুযায়ফার মুক্তদাস আমাদের সাথে একই ঘরে থাকে; অথচ সে বয়স্ক ও জ্ঞান সম্পন্ন পুরুষের স্তরে পৌছে গেছে। তিনি বললেন, তুমি তাকে দুধপান করিয়ে দাও, তাতে তুমি তার প্রতি হারাম হয়ে যাবে। রাবী (ইবনু আবূ মুলায়কাহ) বলেন, অতঃপর আমি এক বছর বা প্রায় এক বছর কাল ভয়ে উক্ত হাদীস বর্ণনা করিনি। অতঃপর কাসিমের সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম, আপনি আমার নিকট এতদিন এমনি এক হাদীস বর্ণনা করেছেন যা আমি অদ্যাবধি কারোর নিকট বর্ণনা করিনি। তিনি বললেন, তা কোন হাদীস? তখন আমি তাকে ঐ হাদীসখানার বিষয়ে অবহিত করলাম। তখন তিনি বললেন, তুমি তা আমা হতে এ সূত্রে বর্ণনা কর যে, আয়িশাহ্ (রাযিঃ) আমাকে সে সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

আরেক রেওয়ায়েতে আছেঃ

যায়নাব বিনতু উম্মু সালামাহ (রাযিঃ) আয়িশাহ (রাযিঃ) কে বললেন, তোমার নিকট বালিগ হওয়ার নিকটবর্তী ছেলে প্রবেশ করে থাকে, কিন্তু আমার নিকট ঐ ধরনের ছেলের প্রবেশ করাকে পছন্দ করি না। রাবী বলেন, “আয়িশাহ (রাযিঃ) বললেন, তোমার জন্য কি রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মধ্যে সুন্দর আদর্শ বিদ্যমান নেই? তিনি আরো বললেন, একদা আবূ হুযায়ফার স্ত্রী আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! সালিম আমার নিকট প্রবেশ করে থাকে, অথচ সে একজন বয়স্ক পুরুষ এবং এজন্য আবূ হুযায়ফার অন্তরে কিছুটা অসন্তোষভাব বিদ্যমান। তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তুমি তাকে তোমার দুধ পান করিয়ে দাও যাতে সে তোমার নিকট প্রবেশ করতে পারে।

আরেক রেওয়ায়েতে আছেঃ

যাইনাব বিনত আবি-সালামাহ বলেন যে আমি নবির (ﷺ) স্ত্রী উম্মু সালামহকে বলতে শুনেছি যে তিনি আয়েশাহকে বললেন : আল্লাহর কসম আমি পছন্দ করি না যে, যে ছেলে দুধপানের সম্পর্ক থেকে মুক্ত আমাকে দেখুক। তিনি বললেন, কেন? একদা সুহায়ল এর কন্যা সাহ্‌লাহ রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কসম আমার নিকট সলিমের প্রবেশ করার কারণে আমি আবূ হুযায়ফার মুখমণ্ডলে অসন্তোষের লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন, তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তাকে তোমার দুধপান করিয়ে দাও। সাহলাহ্ বললেন, সে (সালিম) তো দাড়ি বিশিষ্ট। তিনি বললেন, তুমি তাকে দুধ পান করিয়ে দাও, তাতে আবূ হুযায়ফার মুখমণ্ডলের মলিনতা দূর হয়ে যাবে। সাহলার বর্ণনা, আমি আল্লাহর কসম করে বলছি যে, তারপরে আমি আবূ হুযায়ফার চেহারায় মলিনতা আর দেখতে পাইনি

আরেক রেওয়ায়েতে আছেঃ

উম্মু সালামাহ্ (রাযিঃ) বলতেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সকল সহধর্মিণী দুধপান সম্পর্কের দ্বারা কাউকে তাদের নিকট প্রবেশ করতে নিষেধ করেন এবং তারা আয়িশাহ্ (রাযিঃ) কে বলেন, আল্লাহর কসম আমরা এটাকে (প্রাপ্ত বয়সে দুধপান দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হওয়াকে) একটি বিশেষ অনুমতি মনে করি যা রসূলুল্লাহ (ﷺ) কেবল সালিমের জন্য দিয়েছিলেন। অতএব এ ধরনের দুধপানের মাধ্যমে কেউ আমাদের নিকট প্রবেশ করতে পারবে না এবং আমাদের প্রতি দৃষ্টিপাতও করতে পারবে না।

[53]এই বর্ননাগুলোর প্রত্যেকটিকেই ইমাম মুসলিম (রহঃ) তাঁর সহিহাইনে ‘বাবু রাদ্বায়াতিল কাবির’ অধ্যায়ে বর্ননা করেছেন।

এবং আবু-দাউদের নিকট লম্বা প্রেক্ষাপটসহ নবির (ﷺ) স্ত্রী আয়েশাহ (রাঃ) হতে বর্ননা আছে যেঃ

নিশ্চয়ই আবূ হুযায়ফা ইবন উতবা ইবন রাবী’আ ইবন আবদি শামস সালেমকে পালক পুত্র হিসাবে লালনপালন করেন এবং তার সাথে তার ভ্রাতুষ্পুত্রী হিনদা বিনতুল ওয়ালীদ ইবন রাবী’আর বিবাহ দেন। আর সে ছিল একজন আনসার মহিলার আযাদকৃত গোলাম। যেমন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যায়িদকে পালক পুত্র হিসাবে লালনপালন করেন। জাহিলিয়াতের যুগের প্রথা ছিল, কাউকে পালক পুত্র হিসাবে লালন-পালন করা হলে লোকেরা তাকে তার সাথে সম্পর্কিত করে ডাকতো এবং সে তার উত্তরাধিকারীও হতো। অতঃপর কুরআনের এই আয়াত নাযিল হলঃ ’’তোমরা তাদের ডাকবে তাদের প্রকৃত পিতার সাথে সম্পর্কিত করে, তারা তোমাদের দীনী ভাই এবং তোমাদের আযাদকৃত গোলাম।’’ কাজেই, তোমরা তাদেরকে তাদের পিতার সহিত সম্পর্কিত করবে। আর যদি কারো পিতৃ পরিচয় জানা না যায়, তবে সে দীনী ভাইও আযাদকৃত হবে।অতঃপর সাহলা বিনতু সুহাইল ইবন উমার আল্-কুরায়শী আল্-আমিরী যিনি আবূ হুযায়ফার স্ত্রী ছিলেন, আগমন করেন এবং বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমরা সালেমকে আমাদের পুত্র হিসাবে গণ্য করি। আর সে আমার সাথে এবং আবূ হুযায়ফার সাথে আমাদের ঘরে (আমাদের সন্তান হিসাবে) লালিত পালিত হয়েছে। আর সে আমাকে একই বস্ত্রের মধ্যে দেখেছে। আর আল্লাহ্ তা’আলা এদের সম্পর্কে যা নাযিল করেছেন, তা আপনি বিশেষভাবে অবগত। এখন তার সম্পর্কে আপনি কী নির্দেশ দেন?নবী করীম (ﷺ) তাকে বলেন, তাকে পাঁচবার তোমার দুধ পান করাও তাতে তুমি তার দুধ-মাতা হিসাবে পরিগণিত হবে। অতঃপর তিনি তাকে পাঁচবার দুধ পান করান এবং তিনি তার দুধ মা হিসাবে গণ্য হন। এই কারণেই আয়েশা (রাঃ) তাঁর বোনের ও ভাইয়ের মেয়েদের ও ছেলেদেরকে পাঁচবার দুধ পান করাতে নির্দেশ দিতেন যারা তাকে ভালবাসতেন, যাতে তিনি তাদের সাথে দেখা করতে পারেন।কিন্তু উম্মে সালামা (রাঃ) ও নবী করীম (ﷺ) এর অন্যান্য স্ত্রীগণ এ বয়সে দুগ্ধ পানকারীগণকে নিজেদের নিকট উপস্থিত হতে বাধা দিতেন, বরং তারা ছোট বেলার দুধ পান করাকেই প্রাধান্য দিতেন (বয়স্ক ব্যক্তির নয়)। আর আমরা আয়েশা (রাঃ) সম্পর্কে বলতাম, আল্লাহর শপথ! আমাদের জানা নেই, সম্ভবত এটা (সালেমের ব্যাপারটি) নবী করীম (ﷺ) এর তরফ হতে বিশেষভাবে অনুমদিত ছিল, যা অন্যদের জন্য নয়।[54]সহিহ। সুহলাহর হাদিসটি মুসলিম বর্ননা করেছেন (1453,1454), এবং আল-বুখারী এর কিছু অংশ বর্ননা করেছেন (5088)।এবং আবু-দাউদ বিস্তারিত প্রেক্ষাপটসহ বর্ননা করেছেন (2051), এবং … See Full Note

দলিল ২

তাঁরাও নবির (ﷺ) বক্তব্য ‘স্তনপান তো হয় ক্ষুধার কারনে’ দ্বারা দলিল দেন। তাঁরা বলেন : ইহা আমাদের দলিল, কেননা একজন বয়স্ক ব্যাক্তিও ছোট শিশুর মত স্তনের দুধ পান করার দ্বারা নিজের ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে।[55]ইবনুল-কাইয়ুম এটা ‘যাদুল মা’আদ’ (5/583) এ উল্লেখ্য করেছেন এবং ইবন হাযম এরদ্বারা দলিল দিয়েছেন, যেমনটা আল-মুহাল্লা (10/23,24) তে আছে।

দলিল ৩

তাঁরা আয়েশাহর (রাঃ) আমল দ্বারা দলিল দিয়েছেন, যেমনটা সুহলাহর হাদিসে পূর্বে উল্লেখ্য করা হয়েছে।

ইবন হাযম (রহঃ) বলেছেনঃ

এটা সহিহ যে যদি একজন ব্যাক্তি আয়েশাহর (রাঃ) বোনদের মধ্য হতে কোনো একজনের দ্বারা প্রাপ্তবয়স্ক থাকা অবস্থাতে বিবাহ হারাম সাব্যস্তকারি স্তন্যপান করতেন, তাহলে তিনি আয়েশাহর (রাঃ) সাথে দেখা করতে পারতেন। এবং আমরা আল্লাহর সত্যতার সাক্ষ্য দেই।আমরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে আল্লাহ তা’আলা এমন কেও নন যে তিনি রাসূলের (ﷺ) এমন একটি গোপন বিষয়কে বৈধ করবেন যেটাকে তারা লঙ্ঘন করবে যাদের জন্য তা হালাল না। সুতরাং আমাদের সিদ্ধান্ত ও বিশ্বাস হলো এই যে বয়স্কদের স্তন্যপান দ্বারা বিবাহ হারাম হবে। (নবি ﷺ এর) বাকি সকল স্ত্রীদের কর্তৃক এই স্তন্যপানের দরুন সাক্ষাত করাতে অস্বীকৃতি জানানোর মধ্যে এমন কিছুই নেই যা (এই মতটিকে) অস্বীকার করে। কেননা যেই ব্যাক্তির জন্য উনাদের সহিত সাক্ষাত করা হালাল, সেই ব্যাক্তিকে উনাদের সহিত সাক্ষাত না করতে দেয়াটাও উনাদের জন্য বৈধ ছিলো।[56]আল-মুহাল্লা লিইবন হাযম (10/24) এবং এটা ইবনুল-কাইয়ুম যাদুল মা’আদে (5/584) উল্লখ্য করেছেন।

দলিলগুলোর জবাব

সুহলাহর হাদিসের বিধান হয় মানসুখ নাহয় খাস

যদি কথা আসে সুহলাহর হাদিসের, তাহলে সেক্ষেত্রে অনেকভাবে জবাব দেয়া যায়ঃ

হাদিসটি মানসুখ, ইবনুল-কাইইম তা উল্লেখ করেছেন।

ইবনুল-কাইইম বলেছেনঃ

তাঁরা বলেছেন : যদি কথা আসে সুহলাহর সালিমকে স্তন্যপান করানোর হাদিসের, এটা ছিলো প্রথম হিজরির ঘটনা। কেননা সালিমের ঘটনাটি আল্লাহর বক্তব্য ‘উদউহুম বিয়াবাইহিম‘ (সূরা আল-আহযাব : আয়াত ৫ হতে) এর কারণে সংঘটিত হয়েছিলো, এবং ইহা নাজিল হয়েছিলো প্রথম হিজরিতে। পক্ষান্তরে যেসব হাদিসে (স্তন্যপান গ্রহনযোগ্য বিবেচ্য হয়ার জন্য) শিশু হওয়া ও দুধ ছাড়ানোর সময় হয়নি এমন দুধের বাচ্চা হওয়া কে শর্ত বানানো হয়েছে, সেগুলো ইবন আব্বাস ও আবু-হুরাইরাহর রেওয়ায়েতের অন্তর্ভুক্ত। ইবন আব্বাস তো বিজয়ের পূর্বে মদিনায় এসেছিলেন, আর আবু-হুরাইরাহ তো যে বছর খায়বার বিজয় হয়েছিল সেই বছরে ইসলাম গ্রহন করেছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নাই যে তাদের উভয়েই মদিনাতে এসেছিলেন সালিম কর্তৃক আবু-হুযাইফাহর স্ত্রী স্তনের দুধ পানকৃত হয়ার ঘটনাটি সংঘটিত হয়ার পর।[57]যাদুল মা’আদ (5/581).

আল-হাযিমী কিছু শাফেঈদের বক্তব্য নক্বল করে বলেছেনঃ

সালিমের ঘটনাটি হিজরির শুরু দিকের সময়গুলোতে সংঘটিত হয়েছে, কেননা তা উক্ত আয়াতের নাজিল হওয়াকে অনুসরণ করে সংঘটিত হয়েছে, আর উক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে হিজরির শুরুর দিকের সময়গুলোতে ; এটা প্রমান করে যে আয়েশাহর হাদিসটি মানসুখ। এবং দ্বিতীয় হুকুমটি পরবর্তীকালে নতুন নতুন ইসলাম গ্রহন করা সাহাবিরা বর্ননা করেছেন, যেমন : আবু-হুরাইরাহ, ইবন আব্বাস ও এছারাও আরো অনেকে। কাজেই এর মানসুখ হয়াটা একদম সুস্পষ্ট, এতে কোনো অস্পষ্টতা নেই।[58]আল-ই’তিবার ফিন নাসিখ ওয়াল মানসুখ (445), এবং আরো দেখুন নাইলুল আওতার (7/112).

নিম্নে উল্লেখিত কথাগুলোর দ্বারা উক্ত মানসুখ হয়ার দাবিটির বিরুদ্ধে পালটা জবাব জবাব দেয়া হয় –

ইবনুল-কাইইম বলেছেনঃ

উনারা শুধুমাত্র মানসুখ হয়ার দাবি করেছেন, এরপক্ষে প্রমান নিয়ে আসেন নি। অবশ্যই উনাদের জন্য এমনটা সম্ভব না যে তারা নিশ্চিতভাবে এই হাদিস ও সেই হাদিসগুলোর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান জেনে যাবেন। যদি এই মতের পক্ষের ব্যাক্তিরা তাদের দাবিকে উল্টিয়ে ফেলে দাবি করতেন যে সেই হাদিসগুলো সুহলাহর হাদিসের দ্বারা মানসুখ হয়ে গেছে, তাহলে এটাও তাদের কৃত মুল দাবিটির অনুরুপই হতো।

পক্ষান্তরে উনারা বলেছেন যে অবশ্যই সেটা নাকি প্রথম হিজরির ঘটনা যখন কিনা আল্লাহর বক্তব্য ‘উদউহুম বিয়াবাইহিম‘ (আল-আহযাব : ৫) নাজিল হয়েছিলো আর আবু-হুরাইরাহ ও ইবন আব্বাসের (রাঃ) রেওয়ায়েত সেই ঘটনার পরে বর্নিত হয়েছে।

বিভিন্নভাবে এর জবাব দেয়া যায়:

এক. উনারা দুজন রাসূল (ﷺ) হতে শ্রবণ স্পষ্ট করেন নি যে, তাঁরা তা রাসূল (ﷺ) হতেই শ্রবণ করেছেন। এমনকি ইবন আব্বাস (রাঃ) তো রাসূল (ﷺ) হতে ২০ টার বেশি হাদিস শ্রবণই করেন নি, তিনি সবই সাহাবিদের (রাঃ) থেকে নিয়েছেন।

দুই. নবির (ﷺ) স্ত্রীদের মধ্য হতে একজনও এমনটা বলে আয়েশাহর (রাঃ) বিরুদ্ধে যুক্তি দেন নি, তাঁরা (নবির স্ত্রীরা) ছাড়াও অন্য কেউই এমনটা করেন নি। বরং তাঁরা হাদিসটির ক্ষেত্রে ধরে নিয়েছেন যে হাদিসটি সালিমের জন্য খাস নির্দিষ্ট বিশেষ ও অন্য কারোর উপর সেটা প্রযোজ্য হবেনা।

তিন. আয়েশাহ (রাঃ) নিজেই এটা ও এটা বর্ননা করেছেন। সুহলাহর হাদিস মানসুখ হয়া সত্ত্বেও আয়েশাহ (রাঃ) সেটা গ্রহন করে নাসিখকে ত্যাগ করবেন কিংবা উনার নিকট সুহলাহর ঘটনাটি আগে সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারটি অজানা থাকবে অথচ তিনি নিজেই সেটার রাবী; এদু’টো কথাই অসম্ভব ও খুবই দূরের ব্যাপার।

চার. আয়েশাহ (রাঃ) মাসআলাটি পরীক্ষা করেছেন, এবং তিনি সে অনুযায়ী আমল করতেন, এবং সেটার পক্ষে বিতর্ক করতেন, এবং সেটা অনুসরণ করার জন্য নিজ সঙ্গীদের আহবান করতেন, সুতরাং সেটার জন্য উনার সর্বোচ্চ মনোযোগ ছিল, তাহলে এমনটা কিভাবে হতে পারে যে এটা মানসুখ হুকুম হবে এবং এর দ্বীনের অংশ হওয়াটা সম্পূর্ণরূপে বাতিল হয়ে গিয়েছে, এবং (মানসুখ হয়ার) ব্যাপারটা তাঁর ও নবির অন্যান্য স্ত্রীদের নিকট অজানা ছিলো, যার ফলে উনাদের একজনও এমনটা উল্লেখ্য করেন নি? [যে তা মানসুখ][59]যাদুল মায়াদ লিইবনিল কাইইম  (5/586,587), নাইলুল আওতার লিশশাওকানী (7/112), এবং সুবুলুস সালাম লিসসান’আনী  (3/289).

২. সুহলাহর হাদিসটি খাস, এবং ইহাই উম্মু-সালামাহ ও উনার পক্ষের অন্যান্য নবির (ﷺ) স্ত্রীদের মত। এবং এটা জুমহুরদেরও মত।

ইবন আব্দিল-বার, ইবন আবি-মুলাইকাহর রেওয়ায়েত উল্লেখ্য করার পরে বলেছেন যে তিনি (ইবন আবি-মুলাইকাহ) হাদিসটি এক বছর বা তার কাছকাছি সময়ের মধ্যেই ত্যাগ করে দিয়েছিলেন, এবং তিনি ভয়ে উক্ত হাদিসটি বর্ননা করতেন না।

এবং এটা পরিষ্কার করে দেয় যে ইহা এমন একটি হাদিস, যেটাকে তিনি (ইবন আবি-মুলাইকাহ) অনেক আগেই ত্যাগ করেছিলেন ও তিনি এরদ্বারা আমল করতেন না। এবং জুমহুরগন উক্ত হাদিসকে তার সার্বিকতা অনুযায়ী গ্রহন করেন নি, বরং তাঁরা হাদিসটিকে তার নির্দিষ্টতা অনুযায়ী গ্রহন করেছেন, আল্লাহু আ’লাম।[60]আত-তামহিদ লিইবন আব্দিল-বার (8/260).

ইবনুল-কাইইম এই দৃষ্টিভংগিটি উল্লেখ্য করে বলেন :

এবং এটা হচ্ছে উম্মু-সালামাহ ও তাঁর সাথের অন্যান্য নবীর (ﷺ) স্ত্রীদের মাসলাক ও তাঁদের মাসলাক যারা (এক্ষেত্রে) এনাদের (আয়েশাহ বাদে নবীর বাকি সব স্ত্রীদের ) অনুসরণ করেছেন। এবং এই মাসলাকটা পূর্বে উল্লেখিত মাসলাকটির চেয়ে অধিক শক্তিশালি।[61]যাদুল মায়াদ লিইবনিল কাইইম (5/587).

আশ-শাওকানী বলেছেনঃ

জুমহুররা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে স্তন্যপানের হুকুম হলো যে তা তখনই বিবাহ হারামকারী সম্পর্ক সাব্যস্ত করবে যখন তা শিশুবয়সে হবে, এবং তাঁরা সালিমের ঘটনার ব্যাপারে জবাব দিয়েছেন যে তা খাস নির্দিষ্ট।[62]নাওলুল আওতার লিশশাওকানী (7/112).

আশ-শাফেঈ বলেছেনঃ

যখন এটা সালিমের বেলায় ঘটেছিলো, তা আসলে খাস ছিলো। আর খাস শুধুমাত্র তখনই হয় যখন তা আমের হুকুম হতে খারিজ হয়ে যায়। এবং যেহেতু খাস আমের হুকুম হতে খারিজ হয়ে যায়, সুতরাং খাস হচ্ছে গাইরে আম। তাহলে অবশ্যই বড়দের স্তনপান বিবাহ হারাম করেনা।[63]আল-উম্ম লিশশাফেঈ (5/28), এবং আরো দেখুন : তাফসিরু ইবন কাসির (1/523), বাদাইয়ুস সানায়েঈ লিলকাসানী (4/5-6), সুবুলুস সালাম লিসসান’আনী (3/289).

*হতে পারে হাদিসটি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে একধরনের (বিশেষ) ছাড়, তাদের জন্য ; যারা কিনা সালিমের মত (জটিল) পরিস্থিতিতে পতিত হয়েছেন।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ, ইবনুল-কাইইম ও আশ-শাওকানী এই মাসলাকটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

ইবনুল-কাইইম বলেছেনঃ

বড়দের স্তন্যপান ছাড় হিসেবে গ্রহনযোগ্য হবে তাদের জন্য, যাদের কিনা গায়রে মাহরাম মহিলাদের সহিত (নিয়মিত) সাক্ষাত করা ও মহিলাটির পর্দাকে জটিল বানিয়ে দেয়া ব্যতীত আর কোনো উপায় নেই, যারা নিরুপায়; উদাহরনস্বরুপ : খালিদের সহিত আবু-হুযাইফাহর স্ত্রীর পরিস্থিতি। সুতরাং এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হওয়া একজন বড় ব্যাক্তিকে যদি মহিলাটি বিশেষ প্রয়োজনবশত স্তনপান করায়, তাহলে তার (বড় ব্যাক্তিটির) স্তন্যপান করা কার্যকর হবে। পক্ষান্তরে যাদের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি থাকবেনা, তাদের বেলায় শিশুকালের স্তনপান ব্যাতিত অন্যকিছু কার্যকর হবেনা।

যেসমস্ত হাদিস বড় বয়সে স্তন্যপানকে নিষিদ্ধ করে, সেগুলো হয় সাধারণভাবে প্রযোজ্য ছিলো এবং সুহলাহর হাদিস এসে একে কিছু শর্তের দ্বারা সীমাবদ্ধ করেছে। আর নাহয় সকল সময়ের জন্যই আম ছিলো, এবং সার্বিকতা হতে এই নির্দিষ্ট অবস্থাটির জন্য নির্দিষ্টকরণ সংঘটিত হয়েছে। এবং এটা মানসুখ হওয়া কিংবা শুধুমাত্র একজন নির্দিষ্ট ব্যাক্তির জন্য খাস হওয়ার দাবির চেয়ে অধিক উত্তম মত, এবং দুইপক্ষের সকল হাদিসের উপর আমল করার অধিক নিকটবর্তী। এবং শরীয়তের মুলনিতীগুলো এর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। আল্লাহই তাওফিকদানকারী…[64]যাদুল মায়াদ লিইবনিল কাইইম (5/593), এবং দেখুন : মাজমুয়ুল ফাতাওয়া (34/60) , নাইলুল আওতার লিশশাওকানী (7/113).

আমি (লেখক) বলব : এই পর্যায়ে, যারা এই মতটি অনুযায়ী মত দিবেন, তাঁদের জন্য এটা জরুরি যে তাঁরা যেন সেইসমস্ত নীতিগুলোকে বিবেচনায় আনেন যেগুলোকে উক্ত মতের পক্ষের আলেমরা উল্লেখ্য করেছেন ও সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন ; যাতে করে উক্ত মতটি ও এর নির্ভরযোগ্যতার গভীরতা অনুধাবন করা যায়।

এই মাসআলাটির নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষজ্ঞ আলেমদের একটি দল দ্বারা করা যেতে পারে যাদের কাছে মাসআলাটি উপস্থাপন করা হয়েছে, সুতরাং অবশ্যই মাসআলাটির অবস্থা হবে সালিমের অবস্থার মত, এরসাথে সালিমের অবস্থার নীতিগুলোও বিদ্যমান থাকবে, এর উপর (এই মতপ্রদানকারী আলেমরা) একমত হয়েছেন। কাজেই (এমন পরিস্থিতি হলে) স্তন্যপানকে একটি ইসলামী শরঈ সমাধানের মত বলে মত দেয়াতে কোনো বাধাদানকারী বিষয় নেই, নির্দিষ্টভাবে তখন যখন অন্যান্য কোনো শরঈ সমাধান সামনে আসবেনা এবং মাসআলাটির শুধুমাত্র (এই) একটি সমাধানই থাকবে, যদি এরকম পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটে, সেক্ষেত্রে পুর্বদৃষ্টান্তের উপর কিয়াস না করে মাসআলাটিকে আহলুল-ইলমদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে, অবশ্যই প্রত্যেকটা অবস্থাকে সম্পুর্ন এককভাবেই সেরকম হতে হবে, প্রত্যেকটা অবস্থাকে আলাদা আলাদা করে বিশ্লেষণ করতে হবে, এবং মুলনীতিটি সালিমের অবস্থা অনুযায়ী হবে।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপুর্ন মাসআলা আছে, এবং তা হচ্ছেঃ

এই ধরনের দুর্লভ অবস্থাসমূহের ক্ষেত্রে যদি ইবন তাইমিয়াহ ও উনার পক্ষে অবস্থানকারীদের মত অনুযায়ী ফতোয়া দেয়া হয়, তাহলে এখানে স্তন্যপানের ধরন টা কিরূপ?

এটা কি এমন যে, স্তন্যপানকারী স্তন মুখে নিয়ে চোষণ করবে? নাকি স্তন্যপানকারীর নিকট স্তন্যদানকারিনীর কিছু দুধ একটি পাত্রে করে দেয়া হবে, অতঃপর সে (স্তন্যপানকারী) এই দুধটি পান করবে, সে (স্তন্যদানকারিনী) তার (স্তন্যপানকারীর) উপর হারাম হয়ার আগ পর্যন্ত পাচবারের হিসাব অনুযায়ী ?

আমাদের জন্য এই সংশয় উদ্রেককারী গুরুত্বপুর্ন মাসআলাটির সঠিক জবাব জানাটা জরুরি।

বিবাহ হারামকারী স্তন্যপানের ধরন

যার বিশেষ প্রয়োজন আছে তার জন্য বড়দের স্তনপানকে বৈধ বলে মত দেয়ার মানেই এইনা যে তাকে প্রত্যক্ষভাবেই স্তন হতে দুধপান করতে হবে, কেননা সুহলাহর ক্ষেত্রে অবশ্যই এমনটা ঘটেনি।

ইবন আব্দিল-বার বলেছেনঃ

বড়দের স্তনপান এইভাবেই হয় যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে যে তার (স্তন্যপানকারীর) জন্য দুধ দোহন করা হয় এবং সেটা তাকে (স্তন্যপানকারীকে) পান করানো হয়। অপরদিকে যদি কথা আসে স্তন্যপানকারী কর্তৃক (স্তন্যদানকারিনী) মহিলার স্তনে মুখ লাগিয়ে (দুধ) চোষণ করার যেমনটা শিশুরা করে থাকে, তাহলে না, কেননা সেই কাজটা উলামাদের একটা জামাতের নিকট হারাম[65]আত-তামহিদ লিইবন আব্দিল-বার (8/257).

আন-নববী বলেছেনঃ

আল-কাদ্বী বলেছেন ‘সম্ভবত তিনি (সুহলাহ) তার (সালিমের) জন্য (নিজ স্তনের দুধ) দোহন করে দিয়েছিলেন এবং তারপর তিনি (সালিম) তা তাঁর (সুহলাহর) স্তনের সংস্পর্শে না এসেই পান করেছিলেন, এবং (এরদ্বারা) তাদের দুজনের (সালিম ও সুহলাহর) ত্বক একে অপরকে স্পর্শ করেনি’। এটাই হলো আল-কাদ্বী হুসাইনের প্রদানকৃত বক্তব্য, এবং এমনটা গ্রহনযোগ্য যে তিনি (আল-কাদ্বী হুসাইন) প্রয়োজনবশত তার (সালিমের) (সুহলাহর স্তন) চোষণ করাকে বাস্তবে ঘটেনি এমন বিষয় হিসেবে গন্য করেছেন, যেমনটা প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় স্তন্যপানের ক্ষেত্রে খাস করা হয়।[66]শারহুন নববী আলা সহিহ মুসলিম (5/289).

অতঃপর অবশ্যই নস (হাদিসের মাতানসমূহ) এটা স্পষ্ট করেনি যে (সালিম কর্তৃক সংঘটিত হয়া) উক্ত স্তন্যপানটি স্তনের সহিত সংস্পর্শ ঘটার মাধ্যমে হয়েছিলো, আবার হাদিসের প্রসঙ্গ আবু-হুযাইফাহর ঘরে প্রবেশ করা সক্রান্ত জটিলতার সাথে সম্পর্কিত। তাহলে এটা কিভাবে হতে পারে যে প্রত্যক্ষ স্তনপান সন্তোষজনক হবে?

ইবন কুতাইবাহ বলেছেনঃ

এবং সালিম তাঁর (সুহলাহর) সাথে সাক্ষাত করতেন, ফলে তিনি (সুহলাহ) আবু-হুযাইফাহর চেহারায় বিতৃষ্ণার ছাপ দেখতে পেলেন, যদি উক্ত সাক্ষাত জায়েয না হতো তাহলে তিনি (সালিম) তাঁর (সুহলাহর) সহিত সাক্ষাত করতেন না, এবং অবশ্যই আবু-হুযাইফাহ (প্রত্যক্ষভাবে) তাঁকে (সালিমকে) (সুহলাহর সহিত সাক্ষাত করতে) নিষেধ করতেন।রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর (সুহলাহর) জন্য তাঁর (সালিমের) সহিত জায়গা করে দিতে চেয়েছিলেন, যেখানে কিনা তিনি (আবু-হুযাইফাহ) তাঁদের দুজনের (সালিম ও সুহলাহর) মিলিত হওয়াকে এবং তাঁদের দুজনের নির্জনে মিলিত হওয়াকে নিষিদ্ধ করাকে অপছন্দ করেছিলেন। তাঁর (সালিমের) (সুহলাহর সহিত) সাক্ষাত করার দরুন আবু-হুযাইফাহর মধ্যে যেই বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়েছিলো, রাসূল (ﷺ) এই বিতৃষ্ণাটিকে বিলুপ্ত করতে ও তাঁর (আবু-হুযাইফাহর) মন ভালো করতে চেয়েছিলেন, ফলে তিনি (ﷺ) তাঁকে (সুহলাহকে) বললেন : “তাকে (সালিমকে) স্তন্যপান করিয়ে দাও।

এমনটা বর্ণিত হয়নি যে ‘তোমার স্তন (সালিমের) মুখে দাও যেভাবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে করা হয়’, বরং তিনি (ﷺ) বুঝাতে চেয়েছেন যে ‘সালিমের জন্য তোমার (স্তনের) দুধ হতে কিছু দোহন করো, অতঃপর তা সালিমের নিকট প্রেরন করো, যাতে করে সে (সালিম) তা পান করতে পারে।’ এছাড়া অন্যভাবে জায়েজ হবে না; কেননা সালিমের জন্য তাঁর (সুহলাহর) স্তনের দিকে তাকানো ও (সুহলাহর দ্বারা) প্রত্যক্ষ স্তনপান ঘটা হালাল হবেনা, অতএব কিভাবে তাঁর (সালিমের) জন্য এমন একটা কাজ বৈধ হতে পারে যা কিনা তাঁর জন্য হালালই না, এবং একইসাথে যা কিনা যৌন-উত্তেজনা হতে নিরাপদ নয়?

যে বিষয়গুলো এই তা’ওইলটির পক্ষে ইঙ্গিত দেয়, সেগুলোর মধ্যে এই বিষয়টাও অন্তর্ভুক্ত যে তিনি (সুহলাহ) বলেছেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমি কিভাবে তাকে স্তন্যপান করাবো অথচ সে একজন বয়স্ক ব্যাক্তি? ফলে নবি (ﷺ) হাসলেন এবং বললেন : ‘সে যে বয়স্ক ব্যাক্তি, তা কি আমি জানিনা?’ এবং এই স্থানে তাঁর (ﷺ) হাসাটা হচ্ছে এই ব্যাপারটির পক্ষে প্রমাণ যে তিনি (ﷺ) এই স্তন্যপানের দ্বারা সেই ব্যাপারটার জন্য কোমলতা প্রদর্শন করেছেন, যা কিনা তিনি (আবু-হুযাইফাহ) (সালিম ও সুহলাহর) মিলিত হওয়া ও নির্জনে সাক্ষাত করাকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে চেয়েছেন, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ যে : সালিমের সুহলাহর সহিত সাক্ষাত করেছিলেন এই অবস্থাতে যে তিনি (সালিম) সুহলাহর জন্য মাহরাম ছিলেন, কিংবা এই স্তন্যপান এমন একটা বিষয়কে হালাল করেছে যা নিষিদ্ধ ছিলো, অথবা এর দ্বারা (উক্ত স্তনপানের দ্বারা) সালিম তাঁর (সুহলাহর) (রাযাঈ) সন্তানে পরিনত হয়েছিলেন।…[67]তা’ওইলু মুখতালিফিল হাদিস লিইবনি কুতাইবাহ (308, 309).

এমনটা বর্ণিত হয়েছে যে, সুহলাহ নিজ (স্তনের দুধ) একটি পাত্রে দোহন করে রাখতেন, ফলে সালিম (সেই পাত্র হতে) প্রতিদিন করে মোট পাচদিন তা পান করেন।[68]এই বর্ননাটি ইবন সাদ ‘আত-তাবাকাত'(8/212) গ্রন্থে নিয়ে এসেছেন, যা কিনা মুহাম্মদ বিন উমার আল-ওয়াকিদির রিওয়ায়াতের অন্তর্ভুক্ত। এবং এই মুহাম্মদ হলেন … See Full Note

ইবন আব্দিল-বার বলেছেনঃ

উলামারা এ ব্যাপারে ইজমাহতে উপনীত হয়েছেন যে স্তন্যপানকারী বাচ্চা (স্তনের) দুধ হতে যা পান করে, তদ্বারা বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম সাব্যস্ত হয়, যদি সে (স্তন্যপানকারী বাচ্চা) তা স্তন হতে চোষণ না করে, তবুও।[69]আল-ইস্তিযকার লিইবনে আব্দিল-বার (18/274).

আমি (লেখক) বলব : কিন্ত এই মাসআলাটির ব্যাপারে আহলুল-ইলমদের মাঝে মতভেদ আছে।

ইবন তাইমিয়াহ বলেছেনঃ

“কিন্ত উজুরের[70]উজুর: এটা হচ্ছে স্তন হতে ভিন্ন কোনো স্থান হতে যেমন পাত্র বা এইধরনের কোনোকিছু হতে (স্তনের) দুধ প্রবাহিত হয়ে শিশুর মুখে যাওয়া। সুউত : নাক দিয়ে প্রবাহিত … See Full Note ব্যাপারে মতভেদ করার পর উলামাগন সুউতের ব্যাপারেও মতভেদ করেছেন। সুউত হলো যা তার (শিশুর) নাকে প্রবেশ করে, এবং উজুর হলো যা স্তন্যপান ছাড়াই তার (শিশুর) কাছে এসে যায়, অধিকাংশ উলামাদের মতে সুউত বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম করে, এবং এটাই ইমাম আহমদ হতে বর্নিত দুইটি রেওয়ায়েতের মধ্যে অধিক প্রসিদ্ধ।”[71]মাজমুয়ুল ফাতাওয়া লিইবনে তাইমিয়াহ (34/55), তাতাম্মাতুল মাজমু লিনববী (18/219).

এবং তিনি (ইবন তাইমিয়্যাহ) এক্ষেত্রে অধিকাংশের মতটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং অধিকাংশের মতটি হচ্ছে যে এর দ্বারা বিয়ে হারাম হয়ে যায়, তিনি ইবন মাসউদ (রাঃ) এর বক্তব্য ‘যেই স্তন্যপানের দরুন হাড় বিস্তৃত হয়েছে ও মাংস গঠিত হয়েছে তা ব্যাতিত অন্য কোনো স্তন্যপান নেই ’ দ্বারা দলিল দিয়েছেন, এবং বলেছেনঃ

কেননা এইক্ষেত্রেও (উজুরের/সুউতের ক্ষেত্রেও) তার (শিশুর) নিকট দুধ পৌছায় ঠিক যেভাবে স্তন্যপানের দ্বারা পৌছায়, এবং এরদ্বারাও মাংস গজায় ও হাড় বিস্তৃত হয় ঠিক যেভাবে স্তন্যপানের দ্বারা হয়। কাজেই এটাকেও তাহরিমের ক্ষেত্রে সমান হিসেবে গ্রহন করা ওয়াজিব।[72]আল-মুগ্বনী লিইবনে কুদ্দামাহ (9/195), আশ-শারহুল কাবির লিলখিরাকী (9/202).

ইবন হাজার বলেছেনঃ

এবং তিনি এর দ্বারা এই ব্যাপারটির পক্ষে দলিল দিয়েছেন যে কোনো স্তন্যদানকারিনীর দুধ দ্বারা খাদ্যদান অভিন্নভাবে বিবাহ হারাম করে, সেটা পান করে হতে পারে কিংবা অন্য যেকোনোভাবে খাওয়া হতে পারে, এমনকি যদি উজুর সুউত ছারদ ইত্যাদি ইত্যাদি উল্লেখিত সেই হিসাব-সক্রান্ত শর্ত অনুযায়ী সংঘটিত হয় তাহলেও বিবাহ হারাম হবে, কেননা সেটা ক্ষুধা নিবারন করে, এবং এ ব্যাপারটি উল্লেখিত সকল বিষয়গুলোর মধ্যেই বিদ্যমান আছে, কাজেই ইহা খবর ও অর্থের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ন।[73]ফাতহুল বারী (9/148).

আশ-শাফেঈ বলেছেনঃ

উজুর হলো স্তন্যপানের অনুরুপ, এবং একইভাবে সুউত, কেননা মূল হলো পেট।[74]আল-উম্ম লিশশাফেঈ (5/38).

আল-কাসানী বলেছেনঃ

স্তন্যপানের দ্বারা বিবাহ হারাম হওয়ার ব্যাপারটির ক্ষেত্রে স্তন হতে দুধ পান করা, সুউত হওয়া, উজুর হওয়া এসবই সমান হিসেবে গন্য। কেননা বিবাহ হারাম করার ক্ষেত্রে প্রভাবক বিষয়টি হলো স্তনের দুধকে খাদ্য হিসেবে গ্রহন করা, এর দ্বারা মাংস গজানো, হাড় বিস্তৃত হয়া এবং ক্ষুধা নিবারণ করা। কেননা এর দ্বারা আংশিক (সম্পৃক্ততা) সাব্যস্ত হয়। এবং ইহা সুউত ও উজুর দ্বারাও হতে পারে, কেননা সুউতের বেলায় তা মাথার ভিতর ও মুখে পৌছায়, ফলে এরদ্বারা খাদ্যপ্রাপ্ত হয় ও ক্ষুধা নিবারণ হয়, এবং উজুরের বেলায় তা পেটে পৌছায় ও খাদ্য হিসেবে প্রাপ্ত হয়।[75]বাদাইয়ুস সানায়ে লিলকাসানী (4/9).

অপরদিকে যারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে (বিবেচ্য বিশুদ্ধ বিবাহ হারামকারী) স্তন্যপান পাত্র হতে (স্তনের দুধ) পান করার মাধ্যমে কিংবা উজুরের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়না, তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছেন ইবন হাযম, এবং (এটা) হানাফিদের মধ্যকার একটি মত।

এবং এক্ষেত্রে তাদের দলিল হলো রাদ্বায়ার (স্তনপানের) ব্যাপকভাবে ও বহুল প্রচলিত অর্থ।[76]দেখুন : আল-মুহাল্লা লিইবনে হাযম (10/7).

কিন্ত এই মতটিকে বেশকিছু আপত্তি দ্বারা সমালোচনা করা হয়েছে :

১. এটা জুমহুর উলামাদের সিদ্ধান্তের বিরোধী, এবং তাঁদের (জুমহুরদের) সিদ্ধান্তটিই দলিলসমূহের প্রামাণিকতার দিক দিয়ে বিশুদ্ধ সঠিক, যা আমরা (পূর্বে) উল্লেখ্য করেছি ।

২. ভাষাশাস্ত্রে রাদ্বায়াহ (স্তন্যপান) : একজন তার মাকে রাদ্বায়াহ (ক্রিয়া) করলো সামিয়া ও দ্বারাবা এর মতো (বাব সক্রান্ত) রাদ্বয়ান (ধাতু-১), এবং তাহরিককৃত হয় রাদ্বায়ান (ধাতু-২) ও রাদ্বায়াহ (ধাতু-৩), অতপর তিনি (আল-ফিরুজাবাদী) এই পর্যন্ত বলেছেন যে : (একজন তার মাকে রাদ্বায়াহ করলো) অর্থাৎ সে তার (মায়ের) স্তন ইমতাস (চোষণ) করল,[77]আল-কামুসুল মুহিত (2/969). এবং তিনি (আল-ফিরুজাবাদী) ‘মাসাসতাহু’ (আপনি সেটাকে ইমসাত বা মাসস বা চোষণ করলেন) কথাটির বিষয়ে বলেছেন যে ইহা ‘আপনি সেটাকে কোমলভাবে পান করলেন ‘ অর্থের জন্য ব্যবহৃত হয়।[78]আল-কামুসুল মুহিত (1/856).

এবং এ কারণে নিশ্চয়ই রাদ্বায়ার জন্য ইবনু হাযমের প্রদানকৃত সংজ্ঞাটি রাদ্বায়ার উক্ত ভাষাসম্পর্কিত সংজ্ঞার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, যাতে করে তিনি নুসুসের অর্থের ক্ষেত্রে এতেই (উক্ত ভাষাসম্পর্কিত সংজ্ঞাতেই) স্থির থেকেছেন এবং রাদ্বায়ার (উক্ত সংজ্ঞার)  সীমানাসমুহ অতিক্রম করেন নি।[79]যাদুল মায়াদ (5/589), এই হাদিসটির অর্থের ব্যাপারে আহলুল-ইলমদের বক্তব্য পুনরায় দেখে নিতে পারেন, যেব্যাপারে এই আলোচনাটিতে পুর্বে বিস্তারিত কথাবার্তা গত … See Full Note

আমি (লেখক) বলব : পক্ষান্তরে এই ব্যাপারে ভাষাগত অর্থেরও ভিন্নতা আছে।

৩. রাদ্বায়ার (স্তন্যপানের) পারিভাষিক অর্থ হলো “একটি বিশেষ্য যা একজন বাচ্চার পেটে বহু শর্তসাপেক্ষে কোনো একজন মহিলার দুধ অর্জিত হয়া কিংবা তা (দুধ) হতে যা অর্জিত হয় তা অর্জিত হয়া বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, এবং সেজন্য অবশ্যই রাদ্বায়া পান করার দ্বারা অর্জিত হয়, এক্ষেত্রে স্তন চোষণ করা কোনো শর্ত হিসেবে প্রযোজ্য হয়না”

ক্ষুধার কারণে বয়ষ্কদের দুধপান নয়

যদি কথা আসে তাঁদের “অবশ্যই স্তন্যপানতো হয় ক্ষুধার কারণে” হাদিস দ্বারা এই বলে দলিল দেয়া প্রসঙ্গে যে নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই (স্তনের দুধ) পান করা বড়দের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে ঠিক যেভাবে ছোটদের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে, তাহলে এই কথাটি প্রকৃতপক্ষে সঠিক নয়।

ইবনুল কাইইম বলেছেনঃ

এবং আপনাদের বক্তব্য ‘নিশ্চয়ই স্তন্যপান একজন বয়স্ক ব্যাক্তির ক্ষুধা অপসারণ করে ঠিক যেভাবে তা একজন ছোটো শিশুর ক্ষুধা অপসারণ করে‘ একটি বাতিল বক্তব্য। কেননা একজন দাড়ীওয়ালা ব্যাক্তির পরিতৃপ্ত হয়া ও ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য স্তন্যপান একমাত্র মাধ্যম না, তবে শিশুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন, অবশ্যই তার (শিশুর) জন্য স্তনের দুধের সমস্তরের কিছুই নেই এবং এর দ্বারাই তার ক্ষুধা নিবারণ হয়, এবং প্রকৃতপক্ষে একজন বয়স্ক ব্যাক্তি দুধের প্রতি মোটেও ক্ষুধার্ত হয়না। এবং যে বিষয়টা এটাকে সুস্পষ্ট করে তা হচ্ছে এই যে তিনি (ﷺ) ক্ষুধার বাস্তবিক শাব্দিক অর্থে বোঝাতে চান নি, তিনি তো সেটার প্রত্যাশিত সময় ও কাল বোঝিয়েছেন, এবং কোনো সন্দেহ নেই যে সেটা শৈশবকালেরই সময়।[80]যাদুল মায়াদ (5/589), এই হাদিসটির অর্থের ব্যাপারে আহলুল-ইলমদের বক্তব্য পুনরায় দেখে নিতে পারেন, যেব্যাপারে এই আলোচনাটিতে পুর্বে বিস্তারিত কথাবার্তা গত … See Full Note

আয়িশা (রাঃ) এর বক্তব্য ও বর্ণনা?

যদি কথা আসে তাঁদের আয়েশাহ (রাঃ) এর বক্তব্য ও বর্ণনা দ্বারা দলিল দেয়া প্রসঙ্গে, তাহলে এতে আসলে কোনো দলিল নেই।

আল্লাহ উম্মুল-মু’মিনিন এর প্রতি সন্তুষ্ট হোক, যদিও তিনি মনে করেছেন যে এই স্তন্যপানের দ্বারা মাহরামত্ব সাব্যস্ত হয়, কিন্ত তবুও নবীর (ﷺ) বাকি সকল স্ত্রীরা এক্ষেত্রে তাঁর বিরোধিতা করেছেন, এবং তাঁরা (বাকি স্ত্রীরা) এই স্তন্যপানের দ্বারা এই সংরক্ষিত পর্দা অতিক্রম করা ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন হুমুউ কর্তৃক সাক্ষাতকৃত হওয়াকে গ্রহনযোগ্য মনে করেন নি। মুলত এটি একটা ইজতিহাদের মাসআলা, একদল একটা সাওয়াবের দ্বারা মা’জুর এবং আরেকদল দুইটা সাওয়াবের দ্বারা মা’জুর।

এই দুই দলের মধ্যকার অধিকতর ভাগ্যবান দলটি দুইটি সাওয়াব পাবেন, যারা কিনা এই ক্ষেত্রটিতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঠিক হুকুমটা অর্জন করতে পেরেছেন, যারা এই স্তন্যপানের দ্বারা পর্দা ভেদ করে সাক্ষাত করাকে বৈধ বলেছেন ও যারা এটাকে অবৈধ বলেছেন, তাদের প্রত্যেকেই সাওয়াব অর্জনের দ্বারা কৃতকার্য, মুজতাহিদের কাজ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টী ও রাসূলের (ﷺ) অনুসরণের উদ্দেশ্যে তাঁর (আল্লাহর) হুকুম বাস্তবায়ন করা।

এবং এই দুই দলের জন্য রয়েছে দুজন সম্মানীত নবীদের আদর্শ – দাউদ (আঃ) ও সুলাইমান (আঃ), যাদের দুজনকে আল্লাহ তায়ালা হিকমত ও হুকুম দানের মাধ্যমে প্রসংশিত করেছেন, এবং তাঁদের দুজনের একজনের মধ্যে হুকুমতের খাস বিশেষ বোঝ ছিলো।[81]যাদুল মায়াদ (5/590).

আমি (লেখক) বলব : পক্ষান্তরে, ভূমিকাতে কল্যাণের প্রতি আয়েশাহর (রাঃ) আকর্ষণ, তাঁর
চরিত্রের শ্রেষ্ঠত্ব, তাঁর কর্তৃক সন্দেহ-সংশয় পরিহার করে চলা , ইত্যাদি অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে।

এব্যাপারে তাদের উপস্থাপিত অন্যান্য ছোটোখাটো দলিলসমূহের খন্ডন

এখন ছোটখাটো কিছু যুক্তি-দলিল দেখা হবে। যেমনঃ গৃহপালিত প্রাণি সংক্রান্ত হাদিস, ইত্যাদি।

[আমি (অনুবাদক আল-ইনফিরাদী) বলব – এই ষষ্ঠ পয়েন্টটিতে মূল লেখকগণ এ বিষয়ে উপস্থাপন করা অন্যান্য কিছু তুচ্ছ যুক্তির খন্ডন করেছেন, সেই যুক্তিগুলো প্রচন্ড দুর্বল, ভিত্তিহীন ও আলোচনার অযোগ্য হওয়ায় শুধু শুধু সেই যুক্তিগুলোর খন্ডন অনুবাদ করে লেখাটাতে অনর্থক মুল্যহীন দৈর্ঘ যুক্ত করবোনা। যদি কেউ তবুও এই পয়েন্টের আলোচনা নিয়ে কৌতূহলী হয়ে থাকেন, তাহলে আমি পরামর্শ দিবো যে আমি একদম শুরুতেই লেখাটার উৎসের রেফারেন্স দিয়ে রেখেছি, সেখান থেকে গিয়ে এই অংশটি পড়ে নিন।] [মূল লেখা সমাপ্ত]

অনুবাদকের প্রদানকৃত সংক্ষিপ্ত পরিশিষ্ট

ভূমিকাঃ

এই সংক্ষিপ্ত পরিশিষ্টতিতে আমি উপরে গত হয়ে যাওয়া বিস্তারিত লম্বা আলোচনার উপর নির্ভর করে কিছু সংক্ষিপ্ত কথা বলব।

দুধপান করানোর ফতোয়া

আলেমদের একটা অতি-ক্ষুদ্র-দল বয়স্কদের স্তন্যপান করাকে হালাল ও বিবাহ সম্পর্ক হারামকারী বলে ফতোয়া দিয়েছেন। তবে এটা প্রায় ৯৮% আলেমদের মতের বিরোধী। হাতেগোনা কয়েকজন বাদে বাকি সকল সালাফ ও খালাফ ও বর্তমানকালের আলেমদের ফতোয়া অনুযায়ী বয়স্কদের স্তন্যপান বিবাহ হারাম করেনা। তাছাড়া যারা এটাকে হালাল ও বিবাহ হারামকারী বলে ফতোয়া দিয়েছেন, দালিলিকভাবে হিসাব করলে তাঁরা এক্ষেত্রে সম্পুর্ণ ভুল।

দুধপান বিষয়ক হাদিস-সমূহ

এমন বহু সহিহ হাদিস ও আছার রয়েছে, যেখানে স্পষ্ট করা আছে যে সাধারনক্ষেত্রে স্তন্যপান শুধুমাত্র ২ বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য প্রযোজ্য।

হাদিস বর্ণনায় ভীতি কেন?

ইবনু-আবি-মুলাইকা উক্ত হাদিসটি বর্ণনার ক্ষেত্রে ভীত ছিলেন। আমি বলব: ইবনু-আবি-মুলাইকাহ উক্ত হাদিস বর্ণনা না করলেও কিছু আসতো যেতো না, উনার উক্ত হাদিস বর্ণনা করার ক্ষেত্রে ভীত হওয়াতেও কিছু আসে যায়না, কেননা সাহাবি-তাবেঈদের যুগে উক্ত হাদিসে বর্ণিত কাহিনি এমনিতেই তখনকার জ্ঞানীমহলে প্রসিদ্ধ ও প্রচলিত ছিলো। বহু সাহাবি ও তাবেঈ আলেমরা এই ঘটনা জানতেন। এটা এমন কোনো জিনিস ছিলোনা যা জানার জন্য ইবনু-আবি-মুলাইকাই একমাত্র মাধ্যম।

পাত্র ব্যবহার না করে সরাসরি স্তন্যপান

গুগুল ট্রান্সলেশন বট অজ্ঞ মুর্খদের জন্যই দলিল হতে পারে, অন্যথায় সবাই এটা জানে যে গুগুলের ট্রান্সলেশনে ভুল থাকাটা স্বাভাবিক। আর কোনো গ্রন্থের কোনো হাদিসের কোথাও স্তনপানের বেলায় স্পষ্ট করে ‘চোষণ’ করার কথা বলা হয়নি, বরং এটা হাদিসের অনুবাদকদের কারসাজী, কিছু অনুবাদকরা নিজেদের পক্ষ হতে নির্দিষ্টভাবে ‘প্রত্যক্ষ চোষণ’ বলে দিয়েছেন।

পক্ষান্তরে শাব্দিকভাবে ‘রাদ্বায়াহ’ কথাটি দ্বারা নিছক স্তনের দুধ পান করা বোঝায়, এই পান যেকোনোভাবেই হতে পারে, এরজন্য এমন কোনো শর্ত নেই যে তা চোষণ করে হতে হবে।[82]দেখুন : ইবনু-ফারিসের ‘মাকাইসুল লুগাহ’ (2/400).

এ মর্মে বর্ণিত হয়া কোনো হাদিসেই স্তনপানের ধরন বা পদ্ধতি বর্ণিত হয়নি, স্পষ্ট করা হয়নি। এর বিপরীতে হাদিসটিতে এমন বহু ইঙ্গিতবাচক বিষয় আছে যা দ্বারা ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে উক্ত স্তনপান হয়েছিলো পরোক্ষভাবে দোহন করে পাত্রে দেয়ার মাধ্যমে। এবং বহু বড় বড় মুহাদ্দিসরা এটাই বলেছেন যে উক্ত স্তনপান ঘটেছিলো পরোক্ষভাবে।

তাছাড়া বিশুদ্ধ মত হচ্ছে সালিমের জন্য এটা জায়েজই নয় যে তিনি সরাসরি স্তন চোষে পান করবেন, বয়স্কদের বেলায় এইভাবে স্তনপান করা হারাম। বিকল্প উপায় থাকা সত্ত্বেও সালিম হারাম পদ্ধতিতে স্তনপান করবেন, ইহা সম্ভব না।

জিনগত ইসলামবিদ্বেষীর মতে রাসূলের (ﷺ) মুচকি হাসাটা এক্ষেত্রে ইঙ্গিত দেয় যে স্তনপানটি সরাসরি প্রত্যক্ষভাবে হয়েছিলো, অথচ হাদিসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিয়ে চরম অভিজ্ঞ ও নিজের সারা জীবন খরচ করে দেয়া মুহাদ্দিস ইবনু-কুতাইবাহর বুঝ অনুযায়ী এর দ্বারা উলটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে উক্ত স্তনপান পরোক্ষভাবে ঘটেছিলো।

কাজটি কি শুধুমাত্র সাহলাহর জন্য?

কাজটি শুধুমাত্র সাহলাহরই জন্য, কিংবা মতান্তরে সাহলাহর মত যারা নিরুপায় তাদের জন্য (নিরুপায় হলে তো মদ খাওয়ার মত হারাম জিনিসও করা যায়)।

রাসূল (ﷺ) বলেছেন : “যা খাদ্যনালী ভেদ করেছে ও স্তন্যপানের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দুধ ছাড়ানোর পূর্বে হয়েছে তা ব্যাতিত অন্য কোনো স্তন্যপান নেই।”

এই হাদিসটি সার্বিক ব্যাপকার্থে আম। অপরদিকে সুহলাহর হাদিসটি একজন নির্দিষ্ট ব্যাক্তি প্রসঙ্গে এসেছে । সুতরাং এ দুই হাদিসের উপর ভিত্তি করে এমন বলাটা অবশ্যই সঠিক হবে যে সার্বিকভাবে এই কাজ কারো জন্যই প্রযোজ্য না, তবে সাহলাহর জন্য এক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় ছিলো। আলেমদের একটা ক্ষুদ্র অংশের মতে এটা সালিমের মত নিরুপায় পরিস্থিতিতে পতিত হওয়া ব্যাক্তিদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।

রাসূল (ﷺ) কাজটি কবে নিষিদ্ধ করলেন?

নবি (ﷺ) হতে একটা সার্বিকভাবে প্রযোজ্য হাদিস বর্ণিত আছে যেখানে দুই বছরের পরের স্তনপানকে নিষেধ করা হয়েছে , আবার সুহলাহ-সালিমের হাদিসটি আছে। সুহলাহ-সালিম ও সার্বিকভাবে প্রযোজ্য হাদিসটির মাঝে সামঞ্জস্য করে বলা যায় যে সার্বিকভাবে নিষিদ্ধ তবে সুহলাহ-সালিমের জন্য বিশেষ ছাড় ছিলো।

এই কাজটি ইতিমধ্যে সার্বিকভাবে নিষিদ্ধ করা আছে, এই সার্বিকতাকে দূর করার মতো কোনো দলিল নেই, সুহলাহর হাদিসের মধ্যে উক্ত সার্বিকতাকে দূর করার ক্ষমতা নেই।

তাছাড়া কতবার দুধপান করলে হুরমত সাব্যস্ত হয় এরসাথে বড়দের স্তন্যপানকে গুলিয়ে ফেলা মুলত মুর্খতা, কেননা স্তন্যপানের পরিমাণ শিশুদের জন্য প্রযোজ্য হয়।

দশ ঢোক কে পাচ ঢোক করে নাযিল হয়া নতুন আয়াতটি কিভাবে কবে মানসুখ হলো? যদি মানসুখই হয় রাসূলের মৃত্যুর পর কেন তা অনেকে কুরআনের অংশ হিসেবে তিলাওয়াত করতো?

উত্তরঃ এই আয়াতটির তেলাওয়াত-পাঠ রহিত, হুকুম বহাল; এটা রহিত হয়েছিলো অনেক দেরিতে, তাই মানুষজনের নিকট তাৎক্ষণিকভাবে এর রহিত হওয়ার সংবাদ পৌঁছেনি। যার ফলে অনেকে না জেনে এটাকে গায়রে মানসুখ হিসেবে পাঠ করতো, অতঃপর সকলের নিকট এর মানসুখ হয়ার খবর পৌছায় এবং সবাই এব্যাপারে ইজমায় উপনিত হোন যে উক্ত আয়াতটি মানসুখ।[83]দেখুন : শারহুন নববী আলা মুসলিম(10/29).

ইসলামের মুলনীতিতে সাহাবি-তাবেঈদের ইজমাহ অকাট্য দলিল হিসেবে গন্য। যেহেতু ইজমাহ হয়েছে, সুতরাং অবশ্যই উক্ত আয়াতটি রাসূল (ﷺ) এর জীবদ্দশাতেই রহিত হয়েছিলো।

অপরদিকে, ছাগল কর্তৃক আয়াতের কাগজ খেয়ে নেয়া সক্রান্ত হাদিসটি যইফ শায অগ্রহনযোগ্য।[84]দেখুন : মাওসুয়াতু মাহাসিনিল ইসলাম ওয়া রদ্দু শুবহাতিল লাইম (11/507-509), https://islamqa.info/ar/175355

আর যদি বাস্তবে ছাগল সেই কাগজ খেয়ে ফেলতোও, তাতেও বিন্দুমাত্র কিছু আসতো যেতো না। কেননা সাহাবিদের সময়ে স্মরনশক্তিই ছিলো কুরআন সংরক্ষণের মূল ও প্রধান মাধ্যম, হাজার হাজার সাহাবি কুরআনের সবগুলো আয়াত মুখস্থ করে রাখতেন। লিখে রাখাটা তখন জাস্ট সহায়তাকারী দুধভাতের মতো ছিলো। পরবর্তীতে উমর (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) এসে কুরআনকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য লিখে নেয়ার ব্যবস্থা করেন।

উপসংহার

এই লেখাটিতে আমার প্রদানকৃত সংক্ষিপ্ত পরিশিষ্ট সমাপ্ত হলো, আশা করি পাঠক এই পরিশিষ্টটির সাহায্যে উপকৃত হবেন।

    Footnotes

    Footnotes
    1সূরা আল-আনফাল : 75
    2সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৪
    3সূরা আল-আহযাব : আয়াত 37 এর অংশবিশেষ
    4ইবতালুল কোর’আন লি-আদাতিত তাবান্নী ড/আব্দুল-আযিয সক্বর মিন মাজাল্লাতিশ-শারিয়াহ ওয়াদ-দারাসাতিল ইসলামিয়াহ আল-আদাদ (25/170:172).
    5সিইরু আ’লামিন নুবালা (1/168).
    6সহিহুল বুখারী ৩৭৬০, ৩৭৫৮, সহিহুল মুসলিম ২৪৬৪
    7হাদিসটি বর্ননা করেছেন : আহমাদ (5/165), ও আল-হাকেম (3/226), এবং তিনি (আল-হাকেম) সেটাকে সহিহ বলেছেন। এবং আয-যাহাবী “আস-সিইর”(1/168) এ বলেছেন এর সনদ জাইয়েদ।
    8সহিহুল বুখারী ৬৯২, ৭১৭৫; সহিহুল মুসলিম ১৪৪৫
    9আত-তাবাকাতুল কুবরা লিইবন সা’দ (8/212).
    10আসাদুল গায়াহ (1/1159).
    11যাদুল মা’আদ লিইবনিল কাইয়ুম (5/590).
    12সহিহুল মুসলিম ১৪৪৫এ-জে, হাদিস একাডেমী ৩৪৬৩-৩৪৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪৩৬-৩৪৪৯
    13সহিহুল মুসলিম হাদিস একাডেমী ৩৪৭১, ইফা ৩৪৪৪, আন্তর্জাতিক ১৪৪৫আই [সুন্নাহ.কম]
    14হাদিসটি ইবন সা’দ আত-তাবাকাতুল কাবির (3/277) এ সহিহ সনদে বর্ননা করেছেন।
    15সূরা আল-বাকারাহ – আয়াত 233 এর অংশবিশেষ
    16মালিকের বক্তব্যটি আল-মুয়াত্তা (পৃ/471) তে রাদ্বা’আতুস সাগির অধ্যায়ে যেভাবে এসেছে : ❝পক্ষান্তরে যেই স্তনের দুধ পান করা দুই বছর বয়সের পরে সংঘঠিত হয়, এর কম বা বেশি পরিমান কিছুকেই হারাম সাব্যস্ত করেনা, বরং ইহা শুধু খাবারের পর্যায়ের।
    17মুয়াত্তা ইমাম মালিক ১২৭১ ও দেখুন http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=74168
    18মুয়াত্তা মালিক ১২৮০ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=74177
    19মুয়াত্তা মালিক ১২৮১ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=74178
    20তাফসিরুল কুরতুবী (3/162:163).
    21আল-বাকারাহ : 233
    22যাদুল মা’আদ (5/579).
    23তাফসীর ইবনে কাছীর ইফাঃ – কুরআন ২:২৩৩ এর তাফসীরের প্রথমাংশ, আরবি ১/৫২২-৫২৩
    24আল-উম্ম লিশ-শাফেঈ (5/28).
    25সহিহুল মুসলিম ইফাবা 3475 http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=13086
    26ফাতহসহ আল-বুখারী (9/50), এবং তাদের (ইসলামবিরোধীদের) একটি আপত্তির ব্যাপারে সামনে আলোচনা আসবে এবং তা (আপত্তিটি) হচ্ছে আল-বুখারী কেন স্তনপানের ব্যাপারকে কিতাবুন-নিকাহর অধীনে রেখেছেন?
    27সহিহুল মুসলিম ২৩৬১, হাদিস একাডেমী ৫৯২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮১৯, ইসলামিক সেন্টার ৫৮৫৪
    28সহিহ, সেটার তাখরিজ সেটার জায়গায় আসবে।
    29, 34যাদুল মা’আদ (5/580).
    30সহিহুল বুখারী ৫১০২, ২৬৪৭
    31সমার্থক বর্ণনা ভিন্ন শব্দেঃ সহিহুল মুসলিম ১৪৫৫ – হাদিস একাডেমী ৩৪৯৮ – ইফা ৩৪৭৫
    32সূরা কুরাইশ : আয়াত 4 হতে
    33ফাতহুল বারী লিইবন হাজার (9/51-52).
    35গারিবুল হাদিস লি’আবি উবাইদ আল-হারাওই (1/287).
    36হাদিসটি বর্ননা করেছেন আত-তিরমিযী (1152, 1662), এবং ইবন হিব্বান (4225), এবং ইবন আবি-শায়বাহ (3/388), এবং আন-নাসাঈ (5465), ইবনু মাজাহ ১৯৪৬। ইবন হাজার এটাকে ফাতহুল বারিতে উল্লেখ্য করেছেন এবং আত-তিরমিযি ও ইবন হিব্বান হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন  (9/52)। ইবন হাযম (রহঃ) এই হাদিসটিকে ইনকিতা (বিচ্ছিন্নতা) দ্বারা ক্রুটিপুর্ন সাব্যস্ত করেছেন, ফাতিমাহ বিনতু আল-মুনযির এর কারনে যিনি কিনা উম্মু সালামাহর সাথে শৈশবকালে থাকা অবস্থায়  সাক্ষাত করেছিলেন (10/21)।  ইবনুল-কাইয়ুম যাদুল মা’আদ (5/590) এ বলেছেন :”ফাতিমাহ বিনতু আল-মুনযিরের কারনে হাদিসটির ইনকিতা থাকা জরুরি নয়, যিনি কিনা উম্মু সালামাহর সাথে শৈশবকালে থাকা অবস্থায়  সাক্ষাত করেছিলেন। অবশ্যই (এমন হয় যে) কমবয়সী ব্যাক্তি খুব ভালোভাবেই বহু জিনিস বুঝতে ও মুখস্থ করতে পারে। মাহমুদ ইবনুর-রাবিঈ তো সাত বছর বয়সী শিশু থাকা অবস্থাতেই মুজ্জাহ বুঝতে পেরেছিলো, যেমনটা বুখারির হাদিসে আছে, এমনকি এরচেয়ে কম বয়সীরাও বুঝতে পারে। আপনারা বলেছেন যে উম্মু সালামাহর মৃত্যুর সময় ফাতিমাহ কমপক্ষে একজন এগারো বছর বয়সী মেয়ে ছিলেন, আর এটা যথেস্ট-ভালো বয়স“।  এবং এটিকে আল-আলবানী আল-ইরওয়া (হাদিস 2150) এ সহিহ সাব্যস্ত করেছেন। আবু ঈসা আত তিরমিজি (রহঃ) হাদিসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।
    37সহিহ। হাদিসটি মালিক আল-মুয়াত্তা (হাদিস 1394) এবং তাঁর (মালিকের) নিকট হতে আব্দুর-রাজ্জাক নিজ মুসান্নাফে (13905), এবং আল-বায়হাকী ‘আস-সুনানুল কুবরা’ (7/461) এ, এবং ইবন আবি-শায়বাহ (3/389), এবং সাঈদ বিন মানসুর নিজ সুনানে (985),এবং আশ-শাফেঈ আল-উম্ম (5/29) এ।
    38http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=74177

    সহিহ। হাদিসটিকে আল-বায়হাকী আস-সুনানুল কুবরা (7/462) তে বর্ননা করেছেন ও বলেছেন : এবং এটা মাওকুফরুপে সহিহ। এবং সাঈদ বিন মানসুর নিজ সুনানে (980) হাদিসটিকে বর্ননা করেছেন,এবং হাদিসটিকে আব্দুর-রাজ্জাক (13903) বর্ননা করেছেন, এবং ইবন হাযম আল-মুহাল্লা (10/19) তে, এবং শায়খ মুস্তফা আল-আদাওই জামিয়ু আহকামিন নিসা (3/73) তে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।

    39সহিহ। হাদিসটিকে মালিক আল-মুয়াত্তা (হাদিস 1404) এ বর্ননা করেছেন, এবং সাঈদ বিন মানসুর আস-সুনানে (987), এবং আব্দুর-রাজ্জাক ভিন্ন সুত্রে আল-মুসান্নাফে (7/463), আত-তাবারী তাফসিরে (2/492)। এবং শায়খ মুস্তফা আল-আদাওই জামিয়ু আহকামিন নিসা (3/72) এ বলেছেন : ইবন মাসউদ ও আবু-মুসা হতে সহিহ
    40সমার্থক http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=74178
    41http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=74175

    হাদিসটি আব্দুর-রাজ্জাক (হাদিস নং 13907) বর্ননা করেছেন, এবং মালিক আল-মুয়াত্তাতে (1400) , এবং সাঈদ বিন মানসুর আস-সুনানে (977) প্রথম অংশটি এবং ইবন আবি-শায়বাহ (3/389)।

    42আব্দুর-রাজ্জাক হাদিসটি বর্ননা করেছেন (7/463) এবং বলেছেন : এবং মানুষজন এই অনুযায়িই আমল করে, এবং সাঈদ বিন মানসুর ‘আস-সুনানে’ (973).
    43আল-মুগ্বনী লিইবন কুদ্দামাহ (9/201).
    44এই মতটির ব্যাপারে সামনে বিস্তারিত আলোচনা আসবে।
    45শারহুন নববী আলা মুসলিম (5/289).
    46বাদাইউস সানায়েঈ (4/5).
    47ফাতহুল বারী (9/52)। আরো দেখুন : যাদুল মায়াদ (5/577),আল-উম্ম লিশশাফেঈ (5/28), জামিয়ু আহকামিন নিসা লিশশায়খ মুস্তফা আল-আদাওই (3/76),আওনুল মাবুদ শারহু সুনানে আবি-দাউদ (6/48-49),আত-তামহিদ লিইবন আব্দিল-বার (8/260), মায়ালিমুস সুনান লিলখাত্তাবী (2/550).
    48সহিহুল বুখারী ৫২৩২, মুসলিম ৩৯/৮, হাঃ ২১৭২, আহমাদ ১৭৩৫২

    http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=29796

    49শারহু সহিহ মুসলিম লিনওওই (7/410).
    50ইবন আব্দিল-বার আত-তামহিদে বলেছেন : ‘এবং আলি (রাঃ) হতে এমনটা বর্নিত আছে, কিন্ত তা (বর্ননাটি) সহিহ নয়। এবং বিশুদ্ধ কথা হলো এই যে দুধ ছাড়ানোর বয়সের পরে কোনো স্তনপান নেই ‘।
    51যাদুল মা’আদ লিইবনিক কাইয়িম (5/579), এবং আরো দেখুন নাইলুল আওতার লিশশাওকানী (7/112).
    52আল-মুহাল্লা লিইবন হাযম (10/19).
    53এই বর্ননাগুলোর প্রত্যেকটিকেই ইমাম মুসলিম (রহঃ) তাঁর সহিহাইনে ‘বাবু রাদ্বায়াতিল কাবির’ অধ্যায়ে বর্ননা করেছেন।
    54সহিহ। সুহলাহর হাদিসটি মুসলিম বর্ননা করেছেন (1453,1454), এবং আল-বুখারী এর কিছু অংশ বর্ননা করেছেন (5088)।এবং আবু-দাউদ বিস্তারিত প্রেক্ষাপটসহ বর্ননা করেছেন (2051), এবং ইবন হাজার সেটার (আবু-দাউদের উক্ত বর্ননাটির) সনদকে আল-ফাতহ (9/53) এ সহিহ বলেছেন, এবং তিনি (আবু-দাউদ) হাদিসটিকে উরওয়াহ ইবনুয-যুবাইর হতে মুরসালরুপেও বর্ননা করেছেন (1402), কিন্ত ইবন আব্দিল-বার আত-তামহিদে (8/250) বলেছেন : এই হাদিসটি হচ্ছে এই ব্যাপারটার পক্ষের প্রমান যে উরওয়াহ আয়েশাহ ও নবির (সা) সকল স্ত্রীদের সাথে সাক্ষাত করেছেন, এবং তিনি সুহলাহ বিনত সুহাইলের সাথেও সাক্ষাত করেছেন, এবং হাদিসটি উসমান বিন উমার মালিক হতে অবিচ্ছিন্ন সনদ ও সংক্ষিপ্ত লফযে বর্ননা করেছেন।
    55ইবনুল-কাইয়ুম এটা ‘যাদুল মা’আদ’ (5/583) এ উল্লেখ্য করেছেন এবং ইবন হাযম এরদ্বারা দলিল দিয়েছেন, যেমনটা আল-মুহাল্লা (10/23,24) তে আছে।
    56আল-মুহাল্লা লিইবন হাযম (10/24) এবং এটা ইবনুল-কাইয়ুম যাদুল মা’আদে (5/584) উল্লখ্য করেছেন।
    57যাদুল মা’আদ (5/581).
    58আল-ই’তিবার ফিন নাসিখ ওয়াল মানসুখ (445), এবং আরো দেখুন নাইলুল আওতার (7/112).
    59যাদুল মায়াদ লিইবনিল কাইইম  (5/586,587), নাইলুল আওতার লিশশাওকানী (7/112), এবং সুবুলুস সালাম লিসসান’আনী  (3/289).
    60আত-তামহিদ লিইবন আব্দিল-বার (8/260).
    61যাদুল মায়াদ লিইবনিল কাইইম (5/587).
    62নাওলুল আওতার লিশশাওকানী (7/112).
    63আল-উম্ম লিশশাফেঈ (5/28), এবং আরো দেখুন : তাফসিরু ইবন কাসির (1/523), বাদাইয়ুস সানায়েঈ লিলকাসানী (4/5-6), সুবুলুস সালাম লিসসান’আনী (3/289).
    64যাদুল মায়াদ লিইবনিল কাইইম (5/593), এবং দেখুন : মাজমুয়ুল ফাতাওয়া (34/60) , নাইলুল আওতার লিশশাওকানী (7/113).
    65আত-তামহিদ লিইবন আব্দিল-বার (8/257).
    66শারহুন নববী আলা সহিহ মুসলিম (5/289).
    67তা’ওইলু মুখতালিফিল হাদিস লিইবনি কুতাইবাহ (308, 309).
    68এই বর্ননাটি ইবন সাদ ‘আত-তাবাকাত'(8/212) গ্রন্থে নিয়ে এসেছেন, যা কিনা মুহাম্মদ বিন উমার আল-ওয়াকিদির রিওয়ায়াতের অন্তর্ভুক্ত। এবং এই মুহাম্মদ হলেন হাদিসের ক্ষেত্রে মাতরুক (পরিতাজ্য),ইবন হাজারের তাহযিবুত তাহযিবে (7/342:346) এ তার জীবনী দেখুন।
    69আল-ইস্তিযকার লিইবনে আব্দিল-বার (18/274).
    70উজুর: এটা হচ্ছে স্তন হতে ভিন্ন কোনো স্থান হতে যেমন পাত্র বা এইধরনের কোনোকিছু হতে (স্তনের) দুধ প্রবাহিত হয়ে শিশুর মুখে যাওয়া। সুউত : নাক দিয়ে প্রবাহিত হওয়া
    71মাজমুয়ুল ফাতাওয়া লিইবনে তাইমিয়াহ (34/55), তাতাম্মাতুল মাজমু লিনববী (18/219).
    72আল-মুগ্বনী লিইবনে কুদ্দামাহ (9/195), আশ-শারহুল কাবির লিলখিরাকী (9/202).
    73ফাতহুল বারী (9/148).
    74আল-উম্ম লিশশাফেঈ (5/38).
    75বাদাইয়ুস সানায়ে লিলকাসানী (4/9).
    76দেখুন : আল-মুহাল্লা লিইবনে হাযম (10/7).
    77আল-কামুসুল মুহিত (2/969).
    78আল-কামুসুল মুহিত (1/856).
    79, 80যাদুল মায়াদ (5/589), এই হাদিসটির অর্থের ব্যাপারে আহলুল-ইলমদের বক্তব্য পুনরায় দেখে নিতে পারেন, যেব্যাপারে এই আলোচনাটিতে পুর্বে বিস্তারিত কথাবার্তা গত হয়েছে।
    81যাদুল মায়াদ (5/590).
    82দেখুন : ইবনু-ফারিসের ‘মাকাইসুল লুগাহ’ (2/400).
    83দেখুন : শারহুন নববী আলা মুসলিম(10/29).
    84দেখুন : মাওসুয়াতু মাহাসিনিল ইসলাম ওয়া রদ্দু শুবহাতিল লাইম (11/507-509), https://islamqa.info/ar/175355
    Show More
    0 0 votes
    Article Rating
    Subscribe
    Notify of
    guest
    0 Comments
    Inline Feedbacks
    View all comments
    Back to top button