ইসলামইসলামবিরোধীদের প্রতি জবাবনারীবাদ

ইসলামে একাধিক বিবাহ

ইসলামে একাধিক বিবাহ নিয়ে বহুজনের মাঝে বহু রকমের মত, চিন্তা, ধ্যান ধারণা দেখতে পাওয়া যায়। সাথে অমুসলিম ও ইসলাম বিদ্বেষীদের অপপ্রচারতো রয়েছেই। এই বিষয়ে এই লিখায় মোটামুটি সকল প্রশ্নের সুস্পষ্ট ও প্রকৃত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, ইনশাআল্লাহ সবার জন্য আশা করি এই লিখাটাই যথেষ্ট হবে।

একাধিক বিবাহ বলতে কয়টি?

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

فَانۡکِحُوۡا مَا طَابَ لَکُمۡ مِّنَ النِّسَآءِ مَثۡنٰی وَ ثُلٰثَ وَ رُبٰعَ ۚ فَاِنۡ خِفۡتُمۡ اَلَّا تَعۡدِلُوۡا فَوَاحِدَۃً

“তবে নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিবাহ কর, কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে —“[1]সুরা নিসা আয়াত ৩

এই আয়াত থেকে বোঝে গেল, আল্লাহ দুই, তিন, চার পর্যন্ত স্বাধীন নারী বিবাহ করার অনুমতি দান করেছেন। চারের বেশি স্বাধীন নারী গ্রহণের সুযোগ নেই। তবে দাসী রাখার কোনো সীমা নেই।[2]ফাতহুল বারি ৯/১৩৯; মুগনী ৯/৪৭২; হাভীউল কাবির ৯/১৬৭; নাসেখ ওয়া মানসুখ ২/১৩৭,১৩৯-১৪০

কেউ কেউ আয়াত থেকে এই বুঝ বের করে যে, দুই, তিন ও চার মোট ৯ হয়। সুতরাং, একজন পুরুষের জন্য ৯ পর্যন্ত নারী বিবাহ করা জায়েজ। অথচ আয়াতের উদ্দেশ্য এটা নয়। একাধিক হাদিস থেকে বিষয়টা বুঝা যায়। এমনকি সুরা ফাতিরে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ فَاطِرِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ جَاعِلِ الۡمَلٰٓئِکَۃِ رُسُلًا اُولِیۡۤ اَجۡنِحَۃٍ مَّثۡنٰی وَ ثُلٰثَ وَ رُبٰعَ ؕ یَزِیۡدُ فِی الۡخَلۡقِ مَا یَشَآءُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ

” সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, ফেরেশতাদেরকে বাণীবাহকরূপে নিযুক্তকারী, যারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার পাখাবিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।”[3]সুরা ফাতির আয়াত ১

এই আয়াত দ্বারা কিন্তু কেউ এটা বোঝে না যে, দুই দুই, তিন তিন ও চার চার মানে মোট ৯ টা পাখা। [4]আহকামুল কুরআন ১/৪০৮-৪০৯; ফাতহুল বারি ৯/১৩৯; মুগনী ৯/৪৭২; হাভীউল কাবির ৯/১৬৬-১৬৭

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

لَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا

“তোমরা কখনও স্ত্রীগণের মধ্যে সুবিচার করতে পারবেনা যদিও তোমরা তা কামনা কর, সুতরাং তোমরা কোন একজনের প্রতি সম্পূর্ণরূপে ঝুকে পড়োনা ও অপরজনকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখোনা এবং যদি তোমরা পরস্পর সমঝতায় আসো ও সংযমী হও তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।”[5]সুরা নিসা আয়াত ১২৯

এই আয়াতের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা পরিপূর্ণ ভাবে একজনের দিকে ঝুঁকে পড়তে নিষেধ করেছেন। আমরা সবার সাথে শতভাগ ইনসাফ করতে পারব না জেনেও আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে একাধিক বিবাহ করতে নিষেধ করেননি। বরং চুপ থেকেছেন আর অন্যত্র অনুমতি দিয়েছেন।[6]মাওসুয়াতুল উসরতী তাহতা রিয়া’য়েতিল ইসলামঃ ৬/৬৮-৬৯

বিঃদ্রঃ তাই, যারা না বুঝে সবার প্রতি (ভালোবাসার) শতভাগ ইনসাফের কথা বলে বা ইনসাফ বলতে আসলে কি বুঝায় তা না বুঝে-একাধিক বিবাহ করাকে নিন্দা করে তাদের বিরুদ্ধে এই আয়াত দলিল।

হাদিসে এসেছে,

فعَنِ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنهما، أَنَّ غَيْلَانَ بْنَ سَلَمَةَ الثَّقَفِيَّ أَسْلَمَ وَلَهُ عَشْرُ نِسْوَةٍ فِي الجَاهِلِيَّةِ، فَأَسْلَمْنَ مَعَهُ، «فَأَمَرَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَتَخَيَّرَ أَرْبَعًا مِنْهُنَّ

“ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, যে সময়ে গাইলান ইবনু সালামা আস-সাকাফী ইসলাম গ্রহণ করেন সে সময়ে তার দশজন স্ত্রী ছিল, যাদের তিনি বিয়ে করেছিলেন জাহিলী যুগের মধ্যে। তার সাথে সাথে তারাও মুসলিম হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে এদের মধ্যে যে কোন চারজনকে বেছে নেয়ার নির্দেশ দেন।”[7]সুনানে তিরমিজি, হাদিস ১১২৮; সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস ১৯৫৩

অন্য হাদিসে এসেছে,

عَنِ الْحَارِثِ بْنِ قَيْسٍ رضي الله عنه، قَالَ: أَسْلَمْتُ وَعِنْدِي ثَمَانُ نِسْوَةٍ، فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «اخْتَرْ مِنْهُنَّ أَرْبَعًا

“হারিস ইবনু কায়িস ইবনু ’উমাইর আল-আসাদী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন আমার আটজন স্ত্রী ছিলো। বিষয়টি আমি নবী (ﷺ) -কে জানালে তিনি বলেনঃ তাদের যে কোনো চারজনকে বেছে নাও।”[8]সুনানে আবি দাউদ, হাদিস ২২৪১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৯৫২

সুতরাং, এসবের ভিত্তিতে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের ওলামাদের মাঝে ইজমা হয়েছে একজন পুরুষের জন্য সর্বোচ্চ ৪ জন স্বাধীনা নারী তার বিবাহ থাকতে পারবে। কেউ মারা গেলে আবার নতুন কাউকে করতে পারবে। তবে সে সংখ্যা ৪-এর বেশি নয়। আর ৯ বলে যে মত আছে তা বাতিল।[9]ফাতহুল বারি ৯/১৩৯; উমদাতুল কারী ২০/৯১; ইযতিযকার ৫/৪৮১; মুহাল্লা ৯/৭; মুগনী ৯/৪৭১-৪৭২; নাসিখ ওয়া মানসুখ ২/১৪০; বিদায়েতুল মুজতাহিদ ২/৫৬

আর অধিকাংশ আলেমদের মতে স্বাভাবিকভাবে একাধিক বিবাহ করা জায়েজ মাত্র, সুন্নাহ নয়। আর না কোরআনে এই ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। বরং সেখানে শুধু জায়েজ হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।[10]নাজমুল ওয়াহহাজ ৭/১০; মুগনিউল মুহতাজ ৪/২০৭; ইনসাফ ১৬/৮; কাশশাফুল কিনা ১১/১৪৮; ফাতাওয়া আলমগীরী ১/৩৪১; নাহরুল ফায়েক ২/১৯৭ তবে জাহেরি মাজহাব ও হাম্বালী মাজহাবের কেউ কেউ মুস্তাহাব বা সুন্নাহ বলেছেন যদি সে হক আদায়ে সক্ষম হয়।[11]মুগনী ৯/৩৪০; বাহরুল মাযহাব ১১/৪৪৩; হাভীউল কাবির ১১/৪১৭; ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৩/২০২

একাধিক বিবাহ করার ক্ষেত্রে ইনসাফ রক্ষা বলতে কি বুঝায়?

একাধিক বিবাহের জন্য রয়েছে দুইটি শর্ত

আদল বা ইনসাফ

আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন,

فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً

“যদি তুমি আশঙ্কা কর যে, তুমি তাদের সাথে ন্যায়বিচার করতে পারবে না, তাহলে বিয়ে কর (কেবল) একজন।”[12]সুরা নিসা আয়াত ৩

এই আয়াতে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছে যদি স্ত্রীদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে না পার, তাহলে একটা করবে। এই ইনসাফ মানে সবাইকে এক‌ই রকম ভালোবাসতে হবে এমন না।[13]আহকামুল কুরআন ১/৪০৯; জামি’ লি আহকামিল কুরআন ৫/২০

এমনকি মুহাম্মদ (ﷺ)-ও তার স্ত্রীদের মধ্যে আয়েশা (রাঃ) আনহা-কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। তাই, তিনি আল্লাহকে বলতেন,

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْسِمُ فَيَعْدِلُ، وَيَقُولُ: اللَّهُمَّ هَذَا قَسْمِي، فِيمَا أَمْلِكُ فَلَا تَلُمْنِي، فِيمَا تَمْلِكُ، وَلَا أَمْلِكُ

“আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফভিত্তিক বণ্টন করে বলতেনঃ ’হে আল্লাহ! এটা আমার পক্ষ থেকে ইনসাফ, যেটুকু আমার সম্ভব হয়েছে। আর যা আপনার নিয়ন্ত্রণে এবং আমার সাধ্যের বাইরে, সেজন্য আমাকে অভিযুক্ত করবেন না।”[14]সুনানে আবি দাউদ, হাদিস ২১৩৪; সুনানে তিরমিজি, হাদিস ১১৪০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৯৭১

সুতরাং, যে জিনিসের ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ নেই সে জিনিসের কারণে তাকে গুনাহগার বা অপরাধী বলা যাবে না। আর মনের এমন বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ পরিপূর্ণরূপে মানুষের হাতে থাকে না।[15]উমদাতুল কারি ২০/১৯৯; আওসাত ৯/২৩

হাদিসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ فَمَالَ إِلَى إِحْدَاهُمَا، جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ مَائِلٌ

“আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুই’জন স্ত্রী থাকা অবস্থায় তাদের একজনের প্রতি ঝুঁকে পড়লো, কিয়ামতের দিন সে পঙ্গু অবস্থায় উপস্থিত হবে।”[16]সুনানে আবি দাউদ, হাদিস ২১৩৩; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৩৯৪২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৯৬৯; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৪১৯৪

আরেক হাদিসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِذَا كَانَ عِنْدَ الرَّجُلِ امْرَأَتَانِ فَلَمْ يَعْدِلْ بَيْنَهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ سَاقِطٌ ‏”

‏আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ যে লোকের নিকট দু’জন স্ত্রী আছে সে লোক যদি তাদের মধ্যে সমতা না রাখে তবে কিয়ামতের দিন সে লোক তার দেহের এক পার্শ্ব ভাঙ্গা অবস্থায় উপস্থিত হবে।[17]সুনানে নাসাঈ, হাদিস ৩৯৪৪; সুনানে তিরমিজি, হাদিস ১১৪১, ১১৪২; ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৯৬৯; সহীহ আল জামি, হাদিস ৭৬১

এ হাদিস দ্বারাও মনের টান উদ্দেশ্য নয়। কেননা, তা শতভাগ মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকে না।[18]আহকামুল কুরআন ১/৪০৯; জামি’ লি আহকামিল কুরআন ৫/২০

তাহলে ইনসাফ বলতে কি বুঝায়? ইনসাফ বলতে দুইটি জিনিস বুঝায়

১। মাদ্দী ইনসাফ বা আসবাবপত্রগত ইনসাফ। যেমন,

وليس على الزوج المساواة بين زوجاته في النفقة والكسوة، وإنما يعطي كلَّ واحدة ما يصلح لمثلها؛ فقد تكون إحداهن ذات منصب وقدر، فلها أن تطلبه بما يجب لمثلها، وليس عليه أن يلحق الدَّنية بها

“খরচ ও কাপড়চোপড় ক্ষেত্রে সমান সমান দেওয়া স্বামীর জন্য জরুরি নয়। বরং প্রত্যেককে সেটুকু যা তার জন্য যথেষ্ট হয়। যেমন, স্ত্রীদের কেউ হয়ত বড় ও সম্মানী ঘরের মেয়ে। তাহলে তার জন্য তার জন্য উপযুক্ত হয় এমন কিছু দাবী করা জায়েজ আছে। এবং স্বামীর জন্য এই অধিকার নেই যে, সে তাকে নিম্নমানের জিনিস দিবে যা তার সাথে যায় না।”[19]তাবসিরা ৫/২০৪৫

২। নির্ধারিত দিনে রাত্রিযাপন। যেমন,

হাদিসে এসেছে,

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ تَزَوَّجَ أَمَّ سَلَمَةَ وَأَصْبَحَتْ عِنْدَهُ قَالَ لَهَا ‏ “‏ لَيْسَ بِكِ عَلَى أَهْلِكِ هَوَانٌ إِنْ شِئْتِ سَبَّعْتُ عِنْدَكِ وَإِنْ شِئْتِ ثَلَّثْتُ ثُمَّ دُرْتُ ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ ثَلِّثْ

“রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যখন উম্মু সালামা (রাঃ) কে বিয়ে করলেন এবং তিনি (উম্মু সালামা) (বাসর রাত যাপনের পরে) রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট থাকা অবস্থায় যখন সকাল হল তখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেন, তোমার প্রতি তোমার স্বামীর কোন অনাদর অনাগ্রহ নেই। তুমি চাইলে তোমার কাছে সাত দিন (একাধারে) অবস্থান করব এবং তুমি চাইলে তিনদিন করব, কিন্তু এরপর (পালা করে থাকবো) পরিক্রমা করব। উম্মু সালামা (রাঃ) বললেন, তিন দিন (অবস্থান) করুন।”[20]সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৪৬০; মিনহাজ শরহে মুসলিম ১০/৪৪

هو أن يبيت عند كل واحدة ليلة، ولا يشترط الجماع، ولا يجوز الدخول على امرأة في غير يومها إلا بإذن الأخرى

” প্রত্যেকের কাছে (তাদের নির্ধারিত রাতে) রাত্রিযাপন করবে। এরজন্য সহবাস শর্ত নয়। এবং এক স্ত্রীর নির্ধারিত দিনে তার অনুমতি ছাড়া অন্য স্ত্রীর সাথে সহবাস করা বৈধ নয়।”

খরচ বহনে সক্ষম হওয়া

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّى يُغْنِيَهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ

“যাদের বিয়ের সম্বল নেই তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যতক্ষণ না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করেন।”[21]সুরা নুর আয়াত ৩৩

অন্য আয়াতে বলেন,

اَسۡکِنُوۡهُنَّ مِنۡ حَیۡثُ سَکَنۡتُمۡ مِّنۡ وُّجۡدِکُمۡ وَ لَا تُضَآرُّوۡهُنَّ لِتُضَیِّقُوۡا عَلَیۡهِنَّ

“তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেখানে তোমরা বসবাস কর সেখানে তাদেরকেও বাস করতে দাও, তাদেরকে সঙ্কটে ফেলার জন্য কষ্ট দিয়ো না।”[22]সুরা তালাক আয়াত ৬

খরচ বহনের সামর্থ্যথাকা ওয়াজিব হওয়ার কারণ কী? ইমাম আবু বকর জাসসাস (রহঃ) লেখেন,

إذا قدر الرجل بماله، وبنيته على نكاح أربع فليفعل، وإذا لم يحتمل ماله ولا بنيته ذلك فليقتصر على ما يقدر عليه، ومعلوم أن كل من كانت عنده واحدة أنه إن أعطاها رضيت، وإن لم يعطها هان ذلك عليها، بخلاف أن تكونعنده أخرى؛ فإنه إذا أمسك عنها اعتقدت أنه يعطي للأخرى، فيقع النزاع، وتذهب وتذهب الألفة

“…যদি তার একজন স্ত্রী থাকে, আর সে তাকে খরচপাতি দেয়,তবে সে খুশি হয়। আর যদি না দেয়, তবে (কিছুটা হলেও) তার জন্য তা মেনে নেওয়া সহজ হয়। কিন্তু তার ব্যতিক্রম যদি হয়? অর্থাৎ তার যদি আরেকজন স্ত্রী থাকে, আর সে যদি একজনের খরচপাতি বন্ধ করে দেয়, তাহলে সে দৃঢ়ভাবে মনে করে যে, সে অন্যজনকে খরচ দিচ্ছে কিন্তু আমাকে দিচ্ছে না। ফলে, ঝগড়া বিবাদ শুরু হয় এবং ভালোবাসা চলে যায়।”[23]আহকামুল কুরআন ১/৪০৯-৪১০; মাওসুয়াতুল উসরা তাহতা রিয়ায়েতিল ইসলামঃ ৬/৮৭

সুতরাং, তাদের ভরণ-পোষণ ও তাদের জন্য বাসস্থান ব্যবস্থা করার সামর্থ্যথাকা স্বামীর জন্য ওয়াজিব।[24]মাবসুত ৫/১৮০-১৮১ আর এটাই চার মাজহাবের ফাতাওয়া।[25]ইজমা ৪৩০; আওসাত ৯/৫৬; ইশরাফ ৫/১৫৭

এছাড়া একাধিক হাদিসে সমর্থনে ব্যাপারটি উল্লেখ করা হয়েছে।[26]সহিহ বুখারি, হাদিস ৫০৬৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস ১২১৮, ১৪০০; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২১৪২; সুনানে নাসাঈ, হাদিস ৯১২৬

একাধিক বিবাহ করা কি ফরজ?

মুসলিমদের ইজমাহ হলো একাধিক বিবাহ করা জায়িয। তবে এটার বাধ্যবাধকতা নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। যা জানা যায় তা হলো এটি ফরজ কিংবা ওয়াজিব নয়[27]আসনাল মাতালিব ৩/১০৭; মুগনিউল মুহতাজ ৪/২০৩। তবে কেউ যদি হারামে পতিত হওয়ার আশঙ্কা করে সেক্ষেত্রে সে নিজেকে পবিত্র রাখতে বাধ্য। এটাই জুমহুর ফুকাহার মত।[28]আল-মুগনী ৯/৩৪০ https://shamela.ws/book/6910/4723 প্রত্যেক ব্যক্তির অবস্থা এবং বিবাহের প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে বিবাহ বাধ্যতামূলক বা মুস্তাহাব হতে পারে। আর সাধারণ বিবাহের ক্ষেত্রে, ইবনে কুদামাহ (রহঃ) বলেন:[29]প্রাগুক্ত; https://islamqa.info/en/answers/36486/

বিবাহের ক্ষেত্রে, মানুষ তিন শ্রেণীর হয়:

  1. যারা ভয় করে যে তারা বিয়ে না করলে তারা হারাম কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে অধিকাংশ ফুকাহাদের মতে বিবাহ ফরজ, কেননা একজন ব্যক্তিকে নিজেকে পবিত্র রাখতে হবে এবং হারাম বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
  2. যাদের জন্য এটা মুস্তাহাব, তারা যারা ইচ্ছা অনুভব করে কিন্তু তারা নিশ্চিত যে তারা হারাম কাজ করবে না। এ ধরনের লোকদের জন্য নফল ইবাদতে আত্মনিয়োগ করার চেয়ে বিয়ে করা উত্তম, কারণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) বিবাহের নির্দেশ দিয়েছেন এবং উৎসাহিত করেছেন এবং কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিবাহ করেছেন, যেমন তাঁর সাহাবীগণ করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীগণ কেবল তা-ই করেছেন যা সর্বোত্তম। এবং কারণ বিবাহের দ্বারা পরিবেশিত স্বার্থ অনেক, কারণ এটি একজনের দ্বীনী অঙ্গীকার রক্ষা করে, এবং এটি মহিলাকে রক্ষা করে, তার সতীত্ব বজায় রাখে এবং তার যত্ন নেয় এবং সন্তান জন্ম দেয় এবং উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং নবী (ﷺ) [আখেরাতে তাঁর উম্মতের সংখ্যা নিয়ে] গর্বিত, এবং অন্যান্য সুবিধায় কাজে আসে, যার মধ্যে যে কোনো একটি নফল ইবাদত করার সুবিধার চেয়ে বেশি, তাই এটি উত্তম।
  3. যাদের কোন ইচ্ছা [যৌন আকাঙ্ক্ষা] নেই, হয় তাদের ইচ্ছা ছাড়াই সৃষ্টি করা হয়েছিল বা ইচ্ছা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিল কিন্তু এখন তা হারিয়ে ফেলেছে, বার্ধক্য বা অসুস্থতা ইত্যাদির কারণে তারা দুই ধরনের:
    (ক) যাদের জন্য বিয়ে করা মুস্তাহাব, সাধারণ অর্থের কারণে যা বিয়ের নির্দেশ দেয়।
    (খ) যাদের জন্য ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা তাদের জন্য উত্তম, কারণ তারা বিবাহের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে না এবং তারা একটি স্ত্রীকে পবিত্র রাখতে সক্ষম হবে না, যা তার ক্ষতির কারণ হবে এবং এর অর্থ হল যে সে তাকে যত্ন না করেই রাখবে। তার সঠিকভাবে, এবং তিনি দায়িত্ব এবং কর্তব্য গ্রহণ করা হবে যে তিনি পূরণ করতে সক্ষম নাও হতে পারে.

শায়েখ বিন বায (রহঃ) বলেছেন,[30]https://binbaz.org.sa/fatwas/2885/هل-تعدد-الزوجات-مباح-فقط-ام-سنة

النص يقتضي أنها سنة، أقل الأحوال أنها سنة: فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ [النساء:3] أمر، لكن بشرط العدل، والاستقامة.

وأما إذا خاف ألا يعدل لقلة ماله، أو لشيء يعرفه من نفسه من الضعف؛ فلا يتزوج إلا واحدة.

[বহুবিবাহ] এটি একটি সুন্নাহ। কুরআন সূরা আন নিসাঃ৩ অনুযায়ী, কিন্তু ন্যায়বিচার এবং ন্যায়পরায়ণতা শর্তে।

কিন্তু যদি সে আশঙ্কা করে যে, তার অর্থের অভাবের কারণে বা তার নিজের মধ্যে দুর্বলতার কথা জানার কারণে স্ত্রীদের সাথে ন্যায়বিচার করা হবে না; সে যেন একটাই বিয়ে করে।

তিনি অন্যত্র বলেছেন,

الأصل التعدد، والواحدة هي التي يحصل بها عند العجز؛ لأن الله -جل وعلا- قال: وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَى فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً [النساء:3] فدل على أن الأصل هو التعدد، يتزوج ثنتين، أو ثلاثًا، أو أربعًا؛ لأن هذا أقرب إلى إعفاف الرجل، وإلى كثرة النسل، فإذا عجز؛ اكتفى بواحدة، إن خاف أن لا يعدل؛ اكتفى بواحدة مع ما تيسر من الإماء.

ইসলামে বিবাহের মূল নিয়মটিই হলো একাধিক বিবাহ করা। তবে সে যদি অক্ষম হয় কিংবা একজনের প্রতিই সন্তুষ্ট থেকে আর প্রয়োজন অনুভব না করে কিংবা ন্যায্যতা না দিতে পারার আশঙ্কা করে…[তাহলে সে একটিই বিয়ে করবে]।[31]https://binbaz.org.sa/fatwas/1782/هل-الاصل-في-الزواج-التعدد

ইসলামওয়েবের ফাতাওয়ায় বলা হয়েছে যে, এটি সর্বদাই সুন্নাহ। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ওয়াজিব/মুস্তাহাব/জায়েয হতে পারে।[32]https://www.islamweb.net/ar/fatwa/109879/ আব্দুল হামিদ ফাইযী (রহঃ/হাফিঃ) বলেছেন শর্তসাপেক্ষে একাধিক বিবাহ করা সুন্নাহ এবং ফজীলতপূর্ণ।[33]https://www.hadithbd.com/books/link/?id=416

শায়েখ উসাইমীন (রহঃ) বলেছেন,

وعلى هذا فنقول: الاقتصار على الواحدة أسلم، ولكن مع ذلك إذا كان الإنسان يرى من نفسه أن الواحدة لا تكفيه ولا تعفه، فإننا نأمره بأن يتزوج ثانية وثالثة ورابعة، حتى يحصل له الطمأنينة، وغض البصر، وراحة النفس

প্রয়োজন না থাকলে একজন স্ত্রীতে থাকাই নিরাপদ।…[34]https://islamqa.info/ar/answers/228346/ ; https://www.islamweb.net/ar/fatwa/116176/

ইমাম রুইয়ানী (রহঃ) বলেন,

إنما استحب الشافعي الاقتصار على امرأة واحدة؛ ليكون أسلم لدينه، وأبعد من الغرور فربما يقع فيما لا يمكن القيام بواجبه من النفقة، والكسوة، والقَسم

“ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) একটা নারীতে সীমাবদ্ধ থাকাকে মুস্তাহাব মনে করেন। যেন তার দীন নিরাপদ থাকে এবং ধোঁকা থেকে দূরে থাকে। কখনো কখনো সে এমন অবস্থায় পতিত হয় যে, স্ত্রীদের খরচ-পাতি, কাপড়-চোপড় ও স্ত্রীদের মাঝে রাত ইনসাফপূর্ণভাবে রাত কাটাতে সক্ষম হয় না।”[35]বাহরুল মাযহাব ১১/৪৪৩; হাবিউল কাবির ১১/৪১৭; বায়ান ফি মাযহাবি ইমাম শাফেয়ী ১১/১৮৯

আল্লামা জামালুদ্দিন আর রীমী (রহঃ) তার কিতাব আল মাআনিল বাদিয়াহতে বলেছেন হানাফি, শাফেয়ী, মালেকি ও আহমদদের অধিকাংশের মতে একাধিক বিবাহ জায়েজ, কিন্তু মুস্তাহাব নয় এবং শাফেয়ীসহ এই মাজহাবের সকল আলেমের মত হল একাধিক বিবাহ না করা মুস্তাহাব।[36]কিতাবুল মাআনিল বাদিয়াহ ফি মারিফাতিল ইখতিলাফ আহলুল শারিয়াহ ২/১৯৫

তবে ইমাম কাযি আল মাওয়ারদি (রহঃ) খুবই সুন্দর আলোচনা করেছেন। উনি বলেছেন,

وذهب ابن داود وطائفة من أهل الظاهر إلى أن الأولى أن يستكمل نكاح الأربع إذا قدر على القيام بهن، ولا يقتصر على واحدة؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم لم يقتصر عليها، واستحب الشافعي أن يقتصر على واحدة وإن أبيح له أكثر؛ ليأمن الجَور بالميل إلى بعضهن أو بالعجز عن نفقاتهن، وأولى المذهبين عندي اعتبار حال الزوج فإن كان ممن تقنعه الواحدة فالأولى أن لا يزيد عليها، وإن كان ممن لا تقنعه الواحدة لقوة شهوته وكثرة جِماعِه فالأولى أن ينتهي إلى العدد المقنع من اثنين أو ثلاث أو أربع؛ ليكون أغنى لبصره، وأعف لفرجه

“—- আমার নিকট দুই মতের অধিকতর উত্তম মত হলো, এটা স্বামীর অবস্থার উপর নির্ভর করে। যদি তাকে স্ত্রী পরিতৃপ্ত করতে পারে, তবে তার জন্য উত্তম আরেকটা না করা। আর যদি স্বামীর কাম চাহিদায় শক্তিশালী ও অধিক সহবাসপ্রবণ হওয়ার কারণে একজন পরিতৃপ্ত করতে না পারে, তাহলে তার জন্য উত্তম হলো, দুই, তিন ও চার এর মধ্যে যে সংখ্যায় সে পরিতৃপ্তি লাভ করে,সে সংখ্যায় থেমে যাওয়া। যেন সে তার দৃষ্টি ও লজ্জা স্থান হেফাজত ও পবিত্র রাখতে পারে।”[37]হাবিউল কাবির ১১/৪১৭

ফাতাওয়া আলমগীরীতে বলা হয়েছে,

إذا كانت للرجل امرأة وأراد أن يتزوج عليها أخرى، وخاف أن لا يعدل بينهما لم يجز له ذلك، وإن كان لا يخاف جاز له، والامتناعُ أولى، ويُؤجر بترك إدخال الغم عليها

“যদি কোনো পুরুষের একজন স্ত্রী থাকে এবং সে আর একটা বিবাহের ইচ্ছা করে, তবে সে তাদের মাঝে ইনসাফ করতে পারবে না বলে ভয় পায়, তাহলে তার জন্য আরেকটা বিবাহ জায়েজ নেই। যদি ভয় না করে,তবে জায়েজ আছে। আর না করাই উত্তম। এবং সে তার স্ত্রীর অন্তরে দুঃখ দেওয়া থেকে বিরত থাকার কারণে সওয়াব পাবে।”[38]ফাতাওয়া আলমগীরীঃ ১/৩৭৪

ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন,

الأولى أن لا يزيد على امرأة واحدة

“উত্তম হলো, একজনের বেশি স্ত্রী না বাড়ানো।[39]শরহুল কাবিরঃ ২০/২৪

ইমাম আলাউদ্দিন আল মারদাওয়ি (রহঃ) বলেন,

ويستحب ايضا : ان لا يزيد على واحدة ، ان حصل بها الاعفاف ، على الصحيح من المذهب

মুস্তাহাব হচ্ছে একের বেশি স্ত্রী না থাকা, যদি এর মাধ্যমেও চরিত্র রক্ষা সম্ভব হয়। এটাই বিশুদ্ধ হাম্বলি মাযহাব।[40]কিতাবুল ইনসাফ ২০/২৫

অন্য মাযহাবে ও অন্য আলেমগণও একি কথা বলেছেন।[41]নাহরুল ফায়েক ২/১৯৭; ইনসাফ ২০/২৫; তাসহিহুল ফুরু ৯/৯০; নাজমুল ওয়াহহাজ ৭/১০; মুগনিউল মুহতাজ ৪/২০৭ ইকনা’ ৩/২৯৬; মায়া’নিল বাদিয়া ২/১৯৫ এছাড়া বহু বিবাহ সবার জন্য সুবিধাজনকও নয়, দুই বিয়ে মানে দ্বিগুন দায়িত্ব ও কর্তব্য, তিন বিয়ে মানে তিনগুণ, চার বিয়ে মানে চারগুণ। শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য না থাকলেতো সে ইসলামে বহু বিবাহ নিয়ে দেওয়া একটি শর্তও পূরণ করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না।

বহুবিবাহ বৈধতার পেছনে হিকমতটা কি?

একাধিক বিবাহ নিয়ে কয়েকদিন আগেও নাস্তিকদের থেকে আবোল-তাবোল যুক্তি পেশ করে ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলত। তাই তো আলেমদের থেকে এই বিষয় এলমি বা গবেষণামূলক অনেক বই লেখা হয়েছে এবং বাস্তবসম্মত উত্তর লেখা হয়েছে। কিন্তু আজ সেসব খোঁড়া যুক্তি মুসলিমদের থেকেও শোনা যাচ্ছে।

আসলে, আল্লাহ কাউকে একাধিক বিবাহ করার আদেশ দিবেন কিন্তু তার জন্য একাধিক নারীর ব্যবস্থা ও পুরুষদের সেই সক্ষমতা দিবেন না-এটা তো হতে পারে না। যদি সম্ভব বা দরকার নাই হতো আল্লাহ আদেশ দিতেন না। অথবা কেবল দুইটা দিতেন। কিন্তু চারটা পর্যন্ত দিয়েছেন-নিশ্চয়ই এর পেছনে যৌক্তিকতা আছে।

দুনিয়াতে কেউ বলল, ‘অমুক দোকান থেকে চাউল ও ডাল পাবি, নিয়ে এসো।’কিন্তু সেখানে সেটা না থাকার পরেও তাকে সেই আদেশ দেওয়াটা হলো মিথ্যা বলা ধোঁকা দেওয়ার শামিল। কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তির হালাত এক না, তাদের সমস্যাও এক না। তাই এসব বিষয় গড়ে উৎসাহ দেওয়া যেমন ক্ষতি, তেমনি গড়ে নিষেধ করাও ক্ষতি।

মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ সত্তা নয়। অর্থাৎ সে নিজের সকল প্রয়োজন ও চাহিদা চাইলেও নিজেই পূরণ করতে পারবে না। বরং তাকে অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হয়। অপরের মাধ্যমে নিজের প্রয়োজন ও সমস্যার সমাধান করতে হবে।

জীবনে চলার পথে মানুষের কেবল জৈবিক প্রয়োজনে বিবাহ করতে হয়- বিষয়টা এমন নয়। বরং এক সময় তার মানসিক সুখ-শান্তির জন্য কাউকে দরকার হয়। অসুস্থ-বিপদে পাশে একজনকে দরকার পড়ে। আস্তে আস্তে শক্তি কমতে থাকে, তখন একটা খুঁটির প্রয়োজন পড়ে। ছেলেমেয়ে তখন সেই খুঁটির কাজে দেয়। বহু কারণেই একাধিক বিয়ে করতে পারে বা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে যেমন, শারীরিক প্রয়োজনীয়তার কারণে, মানসিক কারণে, পারিবারিক কারণে, সামাজিক কারণে, অর্থনৈতিক কারণে, রাজনৈতিক কারণে, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বা সামাজিক বা দলগত বা দেশী বা উম্মাহর বৃহৎ স্বার্থে এবং আরো বহু কারণেই হতে পারে। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাসূল (ﷺ) নিজেই, তিনি ১১ বিয়ে করেছিলেন কিন্তু প্রতিটাই ছিল কোন না কোন কারণে, প্রয়োজনে, প্রতিটার পিছনে বেশ শক্ত, যৌক্তিক কারণ ও হিকমাহ ছিল।

এক কথায় মানুষ নিজের অপূর্ণতা দিন দিন স্পষ্ট ভাবে বুঝতে শুরু করে। এই অভাব বোধ সে প্রকটভাবে অনুভব করে। কিন্তু কোনো পূর্ব আঘাত বা সমাজের নিয়ম-নীতি অথবা অন্যের কষ্টের উপর কিয়াস করে নিজেকে বিবাহ থেকে দূরে রাখে। ভাবে আমি পারব নিজেকে নিজে চালাতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, সে অতিদ্রুত নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারে। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।

তখন সে বুঝতে পারে আল্লাহ এক না বরং একাধিক বিবাহকে বিধিবদ্ধ করেছেন যদি বিষয়টা এত গুরুত্বপূর্ণ না-ই হতো, তবে একাধিকের অনুমতি দিতেন না। একাধিক বিবাহের বৈধতার পেছনে বেশ কিছু যুক্তি উপস্থাপন করা যায় যেমনটা আমাদের এক লেখক আশরাফুল নাফিজ ভাই কিছু উল্লেখ করেছিলেন –

১. মানুষ বিয়ে করেও হারাম রিলেশন করে, হারাম শারীরিক সম্পর্ক করে, যাকে বিয়ে করেছে তাকে হয়তো পছন্দ করতো না, বা সে অন্য আরেক জনকেও পছন্দ করে এই ক্ষেত্রে হারামকে গ্রহণ করার তুলনায় হালাল ভাবে বিয়ে করে নেওয়াই উত্তম। আর কোন স্ত্রী যদি নিজের স্বামীকে প্রকৃত অর্থে ভালোবাসে তাহলেতো সে চাইবে না যে তার স্বামী হারামে লিপ্ত হয়ে জাহান্নামে যাক, বরং সে নিজেই তার স্বামীকে হারাম থেকে বের করার চেষ্টা করবে, যদি সেটার একমাত্র উপায় বিয়ে হয় তাহলে সেটাই করবে, যদি দ্বীনদার স্ত্রী হয় ও স্বামীকে সত্যিকারের ভালোবাসে তাহলে।

২. বিগত সব কালের মত আমাদের এই যুগেও বিশ্বব্যাপী প্রতিদিনের সংঘর্ষ-সংঘাত, যুদ্ধ-বিগ্রহ, দুর্ঘটনা-দুর্বিপাকে নারীর চাইতে পুরুষ মারা যাচ্ছে অধিক হারে। মানব প্রজনন বিজ্ঞানও বলে পুরুষের চাইতে নারী ভ্রূণের জন্মহার, স্থায়িত্ব সবই বেশি। আজ প্রায় সব দেশেই পুরুষের তুলনায় নারীদের গড় আয়ু বেশি, সংখ্যার দিক দিয়েও নারীর সংখ্যাও বেশি। খুব সাম্প্রতিক উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশে ২০২২ এর জনশুমারির রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশেই পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লক্ষ বেশি। বিষয়টার গুরুত্ববহ উল্লেখ দেখা যায় রসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদিসেও। কেয়ামত পূর্ব বিশ্ব পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছেন, “পুরুষের সংখ্যা কমবে আর নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাবে, এমনকি, পঞ্চাশ জন নারীর পরিচালক হবে একজন পুরুষ।”[42]বুখারি ৫৫৭৭; মুসলিম ২৬৭১। আপদকালীন ভবিষ্যতের স্পষ্ট ইঙ্গিতবহ এই হাদিস এবং আল্লাহ কর্তৃক এক বিয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ দ্বারা এটাই প্রমাণ হয় যে একজন যোগ্য পুরুষের চারটি পর্যন্ত বিয়ের অনুমতিটা শুধুমাত্র এমনিই নিজের খেয়াল খুশির জন্য দেওয়া হয়নি।

গোটা বিশ্বের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নারীদের সংখ্যা পুরুষদের সংখ্যার চেয়ে বেশি। যদি প্রত্যেক পুরুষ শুধু একজন নারীকে বিয়ে করে, তাহলে তার অর্থ এই দাঁড়াবে যে বহু নারীকে স্বামী ছাড়াই থাকতে হবে, যা তার ওপর এবং সমাজের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করবে। এটি তার জীবনকে সংকীর্ণ করার পাশাপাশি তাকে বিপথগামিতার দিকে পরিচালিত করতে পারে। এবং এর মাধ্যমে সমাজে অনাচারের পথ প্রশস্ত হতে পারে। কোন পুরুষ একাধিক বিবাহ না করলে বাকী নারীদের কী হবে? তালাক প্রাপ্ত নারী, বিধবা নারী, এতিম নারী ইত্যাদি নারীদের কী হবে?

৩. পুরুষদের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যাদের মধ্যে প্রবল শারীরিক চাহিদা বিদ্যমান, যাদের জন্য একজন স্ত্রী যথেষ্ট নাও হতে পারে, অর্থাৎ তারা হাইপারসেক্সুয়াল হয়ে থাকে। যার কারণে সে বার বার স্ত্রীর কাছে যেতে চায় কিন্তু স্ত্রীর পক্ষেতো সমসময়, প্রতিবার স্বামীর ডাকে সাড়া দেওয়া সম্ভব না। যদি এমন একজন ব্যক্তির জন্য একাধিক স্ত্রী গ্রহণের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং তাকে বলা হয় যে তোমার জন্য একাধিক স্ত্রী রাখা অনুমোদিত নয়, তাহলে এটি তার জন্য কঠিন কষ্টের কারণ হবে এবং তার জৈবিক চাহিদা তাকে হারাম পথে পরিচালিত করবে।

৪. একজন স্ত্রী হয়তো বন্ধ্যা হতে পারে বা কোন রোগ বা বিপদের সম্মুখীন হওয়ার ফলে বন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। অথচ একজন স্বামীর সন্তানের আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, আর এর একমাত্র উপায় হলো অন্য একজন স্ত্রীকে বিয়ে করা।

৫. নারী সব সময় এমন থাকে না যে স্বামী তার সঙ্গে সহাবস্থানে থাকতে পারে। প্রথম কারণ, প্রত্যেক নারীর জন্য মাসের কোনো এক সময় এমন অতিবাহিত হয় যখন তাকে পুরুষ থেকে দূরে থাকতে হয় যা ঋতুস্রাব (হায়েজ) এর সময়। দ্বিতীয়ত, গর্ভকালীন অবস্থা, নারীকে নিজ ও নিজের সন্তানের স্বাস্থ্য রক্ষার তাগিদে কয়েক মাস ধারে স্বামীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হয়। কারণ যখন তিনি গর্ভবতী হন তখন একটা সময় পর স্বামী-স্ত্রী মিলিত হওয়া সন্তানের জন্য ক্ষতিকারক হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আবার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কয়েক মাস পর্যন্ত দূরে থাকতে হয় কারণ যখন নারী সন্তান প্রসব করেন তখন তার সর্বোচ্চ ৪০ দিন পর্যন্ত রক্তপাত (নিফাস) হয়।[43]https://www.hadithbd.com/books/detail/?book=168&chapter=14696 হায়েজ ও নিফাসের সময় সহবাস করা হারাম, এছাড়াও অনেক সময় স্ত্রী অসুস্থ হতে পারে, শারীরিক ভাবে সহবাসের অনুপযুক্ত হতে পারে যখন তার সাথে সহবাস তার জন্য ক্ষতিকর হবে, এরূপ হলে তার সাথে সহবাস বৈধ নয়।[44]মুগনি আল মুহতাজ ৪/৩৭৩; কিতাবুল উম্ম ৫/২০৩ এসব সময় নারীর জন্য কুদরতি প্রক্রিয়ায় স্বামীর সংস্পর্শ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এই সময়গুলোতে স্বামী কি করবে যদি সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে? যদি কোনো পুরুষের কামভাব চরমে পৌঁছে যায়, তাহলে একাধিক স্ত্রী ছাড়া তার জন্য কী-ই বা উপায় থাকে? সাধারণভাবে পুরুষদের কাম উত্তেজনা বেশি থাকে ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম, কিন্তু অপর দিকে নারী ঠিক এর বিপরীত, যার কারণে নারীদের তেমন সমস্যা হয় না। এমন যদি হয় তাহলে পুরুষ স্ত্রীর সাথে হারামে লিপ্ত হবে নাকি পরকীয়ার হারামে লিপ্ত হবে? তার কাছে হারাম থেকে বাঁচতে ২টো পথই খোলা থাকে, ১ম ধৈর্য ধরা, ২য় তা করতে না পারলে আরেক বিয়ে করা। এমন অবস্থায় ২য় স্ত্রী না থাকলে ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সে স্বাভাবিক ভাবেই অন্যভাবে নিজের উত্তেজনা মিটানোর চেষ্টা করবে যা ইসলাম সমর্থিত নয়।

৬. বহু সংসারে দেখা যায় স্ত্রী ভালো হয় না, গৃহে অশান্তি করে, মানসিক শান্তি পাওয়া যায় না, বহু চেষ্টা করেও এসব থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। কোন কারণে অকারণে সেই স্ত্রীকে তাকাল দেওয়াও হয়তো সম্ভব না হতে পারে। এমতাবস্থায় স্বামীর নিকট দ্বিতীয় বিয়েই একমাত্র পথ থাকে অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও শান্তি পাওয়ার।

যা বুঝাতে চেষ্টা করেছি আশা করি তা এই আলোচনার মাধ্যমে বুঝাতে পেরেছি। একাধিক বিবাহের বৈধতা যদি দেওয়া না হত তাহলে যেমন অসংখ্য পুরুষের উপর এটা অন্যায় ও জুলুমে পরিণত হত তেমনই একাধিক বিবাহ করা যদি সুন্নত বা ওয়াজিব বা ফরজ হত তাহলেও বহু মানুষের জন্য তা নেগেটিব ইম্পেক্টও তৈরি করতে পারতো বা অনেকের জন্য তা বিরাট সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারতো। ইসলামের বহু বিবাহের এই বিধান যে সকল দিক থেকেই সামঞ্জস্যপূর্ণ তা আশা করি এই আলোচনা হতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

শায়েখ ইবনে বাযও (রহঃ) এই সম্পর্কিত বেশকিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।[45]https://binbaz.org.sa/fatwas/18399/ترك-تعدد-الزوجات-سبب-في-كثرة-العوانس-في-البيوت

নারীদের একাধিক বিবাহ নিষিদ্ধ কেন?

ইসলামে একাধিক বিবাহ নিয়ে আলোচনা হলে এই প্রশ্ন আসবে না এটা চিন্তা করাটা বর্তমান সময়ে খুব কষ্টসাধ্য। কারণ বর্তমানে ইসলামের বিরুদ্ধে ফিতনাগুলো যত বড় আকারে রয়েছে, কাজ করছে তা আগে ছিল না।

যাইহোক islamqa.info এ এই প্রশ্নের ‍উত্তরে বলা হয়েছে,

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। প্রথমতঃ এ বিষয়টি আল্লাহর প্রতি ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত। পৃথিবীর সকল ধর্মমতে- কোন নারীর জন্য স্বামী ছাড়া অন্য কারো সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া জায়েয নেই। এই ধর্মগুলোর মধ্যে কোন কোনটি আসমানি ধর্ম; যেমন- ইসলাম ধর্ম, অবিকৃত ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্ম। আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাবী হচ্ছে- তাঁর বিধিবিধান ও শরিয়তকে মেনে নেওয়া। কারণ আল্লাহ তাআলা ভাল জানেন কোনটি মানুষের জন্য কল্যাণকর। কোন কোন শরয়ী হুকুমের রহস্য আমরা বুঝতে পারি। আবার কোন কোন শরয়ী হুকুমের রহস্য আমরা বুঝতে পারি না। পুরুষের জন্য একাধিক স্ত্রী গ্রহণ জায়েয হওয়া এবং নারীর জন্য একাধিক স্বামী গ্রহণ নাজায়েয হওয়ার বেশ কিছু কারণ জ্ঞানবান সকলেই জানেন। আল্লাহ তাআলা নারীকে গর্ভ ধারণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। পুরুষ গর্ভধারণ করে না। সুতরাং কোন নারী যদি (একাধিক পুরুষের সহবাসের পর) গর্ভধারণ করে তাহলে সন্তানের পিতৃ পরিচয় জানা যাবে না। এতে করে বংশধারায় তালগোল লেগে যাবে, পরিবারগুলো ভেঙ্গে পড়বে, শিশুরা বাস্তুহারা হয়ে পড়বে এবং নারী তার সন্তানাদি লালনপালন ও ভরণপোষণের ভার বইতে না পেরে ভেঙ্গে পড়বে। এভাবে এক পর্যায়ে নারীরা স্থায়ী বন্ধ্যাত্বও গ্রহণ করতে পারে। যার ফলে মানব বংশ বিলীন হয়ে যাবে। এছাড়া আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে সাব্যস্ত হয়েছে, এইডসের মত দুরারোগ্য ব্যাধিগুলোর প্রধান কারণ হচ্ছে- কোন নারীর একাধিক পুরুষের সাথে মিলিত হওয়া। নারীর গর্ভাশয়ে বহু রকমের বীর্য একত্রিত হওয়ার ফলে এ ধরনের দুরারোগ্য রোগের কারণ ঘটে। এ কারণেই তো আল্লাহ তাআলা তালাক প্রাপ্ত নারী বা যে নারীর স্বামী মারা গিয়েছে তার উপর ইদ্দত পালন করা ফরজ করেছেন। যাতে করে কিছুকাল এভাবে (সঙ্গমহীন) থাকার মাধ্যমে তার গর্ভাশয় ও এর আশপাশের স্থানগুলো আগের স্বামীর বীর্য ও সঙ্গমের আলামত থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়ে যায়।[46]https://islamqa.info/bn/answers/10009/

আমাদের এক লেখক আতিকুর রহমান যিনি Asief Mehedi নামেও পরিচিত, তিনি নারী বহুগামিতা নিয়ে ফেইথ এন্ড থিওলজিতে আলোচনা করেছিলেন। উনার লিখা হতে কিছু নিচে উল্লেখ করছি।

Nancy E. Levine and Joan B. Silk নামে দুজন গবেষক Current Anthropology নামক জার্নালে তাদের প্রকাশিত ২৬ পৃষ্ঠার ঢাউস সাইজের রিসার্চ পেপারে দেখিয়েছেন কেন নারীর বহুগামিতা কোনো সেইন্স মেইক করেনা। polyandry নিয়ে সোশিওবায়লজিক্যাল, নৃতাত্ত্বিক এবং বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের আলোকে দেখিয়েছেন কিভাবে নারী বহুগামিতা ব্যর্থ হয়। এছাড়াও গবেষকেরা তিব্বত, নেপালের নৃ গোষ্ঠী Nyinba নামক polyandry সোসাইটিকে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন বহু স্বামীর মধ্যে যথাযথ ভ্রাতৃত্ববোধ, যোগ্যতা এগুলো ঠিক থাকেনা যার দলে polyandry marriage প্রায়শই অস্থিরতা দেখা দেয় এবং সংসার ভেঙ্গে পড়ে। আরও বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন।[47]Levine, N. E., & Silk, J. B. (1997). Why polyandry fails: sources of instability in polyandrous marriages. Current Anthropology, 38(3), 375-398. https://doi.org/10.1086/204624

তাছাড়াও সেক্স ড্রাইভ অনুযায়ী নারী পুরুষের তুলনায় কম অ্যাক্টিভ সেক্ষেত্রে এই দিক থেকেও polyandry অপ্রয়োজনীয়। আমেরিকান নিউরোসাইন্টিস্ট Dr. Louenn Brizendine তার বই “The Femail Brain” ও বলেন, মানুষের সেক্সুয়াল ডিজায়ার নির্ভর করে ‘টেস্টোস্টেরন’ হরমোনের উপর যা এক ধরনের ‘অ্যান্ড্রোজেন। পুরুষদের এই হরমোন তৈরীর আলাদা অঙ্গই আছে যা হল টেষ্টিস বা অণ্ডকোষ। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন তৈরী হওয়ার কোন অঙ্গ নেই । যতটুকু যৌন তাড়না নারীদের আছে তা তাদের এড্রেনাল কর্টেক্স এর জোনা ফ্যাসিকুলাটা থেকে নি:সৃত এন্ড্রোজেন এর কারণে। এজন্য নারীদের যৌন চাহিদা পুরুষের তুলনায় অনেক কম।[48]Brizendine, L. (2006). The female brain. Broadway Books. Page: 89 একজন সেক্সুয়ালি অ্যাক্টিভ নারীর দিনে সর্বোচ্চ যতো বার যৌন তাড়না জাগ্রত হতে পারে তার চাইতে একজন পুরুষ যে সেক্সুয়ালী সবচেয়ে লেস অ্যাক্টিভ তারও দিনে অনেক বেশীবার যৌন চিন্তা জাগ্রত হতে পারে।[49]Brizendine, L. (2006). The female brain. Broadway Books. Page: 5 তাছাড়াও মাল্টি টাস্কিং একজন মেয়েকে সেক্স্যুয়ালী অ্যাক্টিভ হতে বাধা দেয়।[50]Brizendine, L. (2006). The female brain. Broadway Books. page: 82

এছাড়াও polyandry নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত যে সমস্যাটি দেখা দেয় তা হলো পিতৃ পরিচয়। যদি একজন নারী একাধিক পুরুষের সাথে ইন্টারকোর্স করে তবে অবশ্যই একাধিক পুরুষের স্পার্ম রিডিউস হবে সেক্ষেত্রে আসল পিতা নির্ণয় কিভাবে হবে? অনেকে বলে থাকে নি:সৃত স্পার্মের সকল শুক্রাণু তো আর নিষিক্ত হবে না, কেবল একটি শুক্রাণুই নিষিক্ত হবে সেক্ষেত্রে একাধিক পুরুষের মধ্যে সবার ডিএনএ র সাথে বাচ্চার ডিএনএ মিলিয়ে দেখলেই হয়ে যাবে আসলেই কি তাই? কোনো রুচিসম্মত মানুষ কি আসলেই তা করবে? এটি কি অপমানজনক নয় একজন পুরুষের জন্য? অবশ্যই তাই।

কেবল একটি শুক্রাণু নিষিক্ত হয়েই যে জাইগোট তৈরি হয় এমন কিন্তু নয়, একাধিক শুক্রাণুর মাধ্যমেও জাইগোট তৈরি হতে পারে একে পলিস্পার্মি বলা হয়। পলিস্পার্মি বলতে এমন কোনো ডিম্বাণুকে বোঝানো হয় যা একাধিক শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়েছে। ডিপ্লয়েড জীবের ক্রোমোজোমে সাধারণত দুটি অনুলিপি থাকে যার একটি আসে পিতা থেকে, অপরটি আসে মাতা থেকে। অন্যদিকে পলিস্পার্মি সংঘটিত কোষে দুইয়ের অধিক ক্রোমোজোমের অনুলিপি বিদ্যমান। এক্ষেত্রে একটি অনুলিপি ডিম্বাণু থেকে আসে এবং অবশিষ্টগুলো আসে একাধিক শুক্রাণু হতে। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে একাধিক স্পার্ম নিষিক্ত ঘটিয়ে নরমাল ভাবেই জাইগোট তৈরি করতে পারে।[51]https://doi.org/10.1098/rspb.2015.1682 যাইহোক পূর্বের গবেষণাসমূহ অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে দেখা গেলেও এটা প্রমাণিত যে মানুষের মধ্যেও এই পলিস্পার্মি ঘটে থাকে।[52]https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/12811738/

গবেষণায় দেখা গেছে ১০% স্বতঃস্ফূর্ত এবোর্শন (ভ্রূণ স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠার আগেই ভ্রূণ মরে যায়) ঘটে থাকে কেবল পলিস্পার্মির কারণে।[53]Cheeseman, L., Boulanger, J., Bond, L. et al. Two pathways regulate cortical granule translocation to prevent polyspermy in mouse oocytes. Nat Commun 7, 13726 (2016). https://doi.org/10.1038/ncomms13726। অর্থাৎ একাধিক সঙ্গমে একাধিক ভিন্ন স্পার্ম এর ফলে ভ্রূণ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। polyandry র এক্সিস্টেন্সিয়াল রিস্ক এবং অন্যান্য রিস্ক ফ্যাক্টর নিয়ে জানতে রয়্যাল সোসাইটির এই গবেষণাপত্রটি যথেষ্ট।[54]Holman, L., & Kokko, H. (2013). The consequences of polyandry for population viability, extinction risk and conservation. Philosophical Transactions of the Royal Society B: Biological Sciences, 368(1613), 20120053. https://doi.org/10.1098/rstb.2012.0053

এতো রিস্ক ফ্যাক্টর থাকার পরেও পলিস্পার্মির কারণে এমন টুইন ও পাওয়া গেছে যাদের মধ্যে মায়ের ডিএনএ শতভাগ এক কিন্তু বাবার ডিএনএ দুজনের মধ্যেই অর্ধেক৷ সবাই বাকি অর্ধেক ডিএনএ অন্য কোনো পুরুষের (who knows) এদেরকে বলা হয় সেমি আইডেন্টিক্যাল টুইন।[55]Gabbett, M. T., Laporte, J., Sekar, R., Nandini, A., McGrath, P., Sapkota, Y., … & Fisk, N. M. (2019). Molecular support for heterogenesis resulting in sesquizygotic twinning. New England Journal of Medicine, 380(9), 842-849.Doi: 10.1056/NEJMoa1701313

polyandry র ফলে এমন সেমি আইডেন্টিক্যাল টুইন জন্ম নিলেও এদের সম্পর্কে তেমন জানা যায়না কারণ polyandry বেশি প্রচলিত কিছু Ethnic group এ এবং সেখানকার ডেইটা উপর কেউ গবেষণা করেনা বললেই চলে। কেননা মানুষের মধ্যে পলিস্পার্মি নিয়ে এখনো তেমন গবেষণা হয়নি বললেই চলে।[56]Xia, P. Biology of Polyspermy in IVF and its Clinical Indication. Curr Obstet Gynecol Rep 2, 226–231 (2013). https://doi.org/10.1007/s13669-013-0059-2

সেক্ষেত্রে যদি polyandry বাড়তে থাকে তবে পলিস্পার্মির ঘটনা বাড়বে এবং ভ্রূণের মৃত্যু ঝুকিও বেড়ে যাবে। অপরদিকে যদি পলিস্পার্মির মাধ্যমে সেমি আইডেন্টিক্যাল টুইন জন্মও নেয় তবে ডিএনএ টেস্ট এর মাধ্যমে “কে আসল বাবা” এটি নির্ণয় করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সামগ্রিকভাবে নারীর বহুগামিতার নৃতাত্ত্বিক, সমাজতাত্ত্বিক বা পরিবেশগত কোনো সুবিধা নেই বরং জীবন বিলুপ্তির মতো উচ্চঝুকি রয়েছে। অপরদিকে পিতার পরিচয় নির্ধারণ এখানে অন্যতম বাধা যার সমাধান নেই। সার্বজনীনভাবে নারীর বহুগামিতা অযৌক্তিক এবং অপ্রয়োজনীয়, ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়।

মূল লেখা লিখেছেন মুফতি Abdur Rohman (হাফিযাহুল্লাহ)

আমরা ফ্রম মুসলিমস্‌ টিম, সংগ্রাহক হিসেবে উস্তাদের বহু বিবাহ নিয়ে সকল লিখা একত্র করে আরো কিছু লেখকের লিখা হতে অল্প কিছু তথ্য সহ সম্পাদন, সংযোজন, পরিমার্জন করেছি।  

    Footnotes

    Footnotes
    1, 12সুরা নিসা আয়াত ৩
    2ফাতহুল বারি ৯/১৩৯; মুগনী ৯/৪৭২; হাভীউল কাবির ৯/১৬৭; নাসেখ ওয়া মানসুখ ২/১৩৭,১৩৯-১৪০
    3সুরা ফাতির আয়াত ১
    4আহকামুল কুরআন ১/৪০৮-৪০৯; ফাতহুল বারি ৯/১৩৯; মুগনী ৯/৪৭২; হাভীউল কাবির ৯/১৬৬-১৬৭
    5সুরা নিসা আয়াত ১২৯
    6মাওসুয়াতুল উসরতী তাহতা রিয়া’য়েতিল ইসলামঃ ৬/৬৮-৬৯
    7সুনানে তিরমিজি, হাদিস ১১২৮; সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস ১৯৫৩
    8সুনানে আবি দাউদ, হাদিস ২২৪১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৯৫২
    9ফাতহুল বারি ৯/১৩৯; উমদাতুল কারী ২০/৯১; ইযতিযকার ৫/৪৮১; মুহাল্লা ৯/৭; মুগনী ৯/৪৭১-৪৭২; নাসিখ ওয়া মানসুখ ২/১৪০; বিদায়েতুল মুজতাহিদ ২/৫৬
    10নাজমুল ওয়াহহাজ ৭/১০; মুগনিউল মুহতাজ ৪/২০৭; ইনসাফ ১৬/৮; কাশশাফুল কিনা ১১/১৪৮; ফাতাওয়া আলমগীরী ১/৩৪১; নাহরুল ফায়েক ২/১৯৭
    11মুগনী ৯/৩৪০; বাহরুল মাযহাব ১১/৪৪৩; হাভীউল কাবির ১১/৪১৭; ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৩/২০২
    13, 18আহকামুল কুরআন ১/৪০৯; জামি’ লি আহকামিল কুরআন ৫/২০
    14সুনানে আবি দাউদ, হাদিস ২১৩৪; সুনানে তিরমিজি, হাদিস ১১৪০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৯৭১
    15উমদাতুল কারি ২০/১৯৯; আওসাত ৯/২৩
    16সুনানে আবি দাউদ, হাদিস ২১৩৩; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ৩৯৪২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৯৬৯; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৪১৯৪
    17সুনানে নাসাঈ, হাদিস ৩৯৪৪; সুনানে তিরমিজি, হাদিস ১১৪১, ১১৪২; ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৯৬৯; সহীহ আল জামি, হাদিস ৭৬১
    19তাবসিরা ৫/২০৪৫
    20সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৪৬০; মিনহাজ শরহে মুসলিম ১০/৪৪
    21সুরা নুর আয়াত ৩৩
    22সুরা তালাক আয়াত ৬
    23আহকামুল কুরআন ১/৪০৯-৪১০; মাওসুয়াতুল উসরা তাহতা রিয়ায়েতিল ইসলামঃ ৬/৮৭
    24মাবসুত ৫/১৮০-১৮১
    25ইজমা ৪৩০; আওসাত ৯/৫৬; ইশরাফ ৫/১৫৭
    26সহিহ বুখারি, হাদিস ৫০৬৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস ১২১৮, ১৪০০; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২১৪২; সুনানে নাসাঈ, হাদিস ৯১২৬
    27আসনাল মাতালিব ৩/১০৭; মুগনিউল মুহতাজ ৪/২০৩
    28আল-মুগনী ৯/৩৪০ https://shamela.ws/book/6910/4723
    29প্রাগুক্ত; https://islamqa.info/en/answers/36486/
    30https://binbaz.org.sa/fatwas/2885/هل-تعدد-الزوجات-مباح-فقط-ام-سنة
    31https://binbaz.org.sa/fatwas/1782/هل-الاصل-في-الزواج-التعدد
    32https://www.islamweb.net/ar/fatwa/109879/
    33https://www.hadithbd.com/books/link/?id=416
    34https://islamqa.info/ar/answers/228346/ ; https://www.islamweb.net/ar/fatwa/116176/
    35বাহরুল মাযহাব ১১/৪৪৩; হাবিউল কাবির ১১/৪১৭; বায়ান ফি মাযহাবি ইমাম শাফেয়ী ১১/১৮৯
    36কিতাবুল মাআনিল বাদিয়াহ ফি মারিফাতিল ইখতিলাফ আহলুল শারিয়াহ ২/১৯৫
    37হাবিউল কাবির ১১/৪১৭
    38ফাতাওয়া আলমগীরীঃ ১/৩৭৪
    39শরহুল কাবিরঃ ২০/২৪
    40কিতাবুল ইনসাফ ২০/২৫
    41নাহরুল ফায়েক ২/১৯৭; ইনসাফ ২০/২৫; তাসহিহুল ফুরু ৯/৯০; নাজমুল ওয়াহহাজ ৭/১০; মুগনিউল মুহতাজ ৪/২০৭ ইকনা’ ৩/২৯৬; মায়া’নিল বাদিয়া ২/১৯৫
    42বুখারি ৫৫৭৭; মুসলিম ২৬৭১
    43https://www.hadithbd.com/books/detail/?book=168&chapter=14696
    44মুগনি আল মুহতাজ ৪/৩৭৩; কিতাবুল উম্ম ৫/২০৩
    45https://binbaz.org.sa/fatwas/18399/ترك-تعدد-الزوجات-سبب-في-كثرة-العوانس-في-البيوت
    46https://islamqa.info/bn/answers/10009/
    47Levine, N. E., & Silk, J. B. (1997). Why polyandry fails: sources of instability in polyandrous marriages. Current Anthropology, 38(3), 375-398. https://doi.org/10.1086/204624
    48Brizendine, L. (2006). The female brain. Broadway Books. Page: 89
    49Brizendine, L. (2006). The female brain. Broadway Books. Page: 5
    50Brizendine, L. (2006). The female brain. Broadway Books. page: 82
    51https://doi.org/10.1098/rspb.2015.1682
    52https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/12811738/
    53Cheeseman, L., Boulanger, J., Bond, L. et al. Two pathways regulate cortical granule translocation to prevent polyspermy in mouse oocytes. Nat Commun 7, 13726 (2016). https://doi.org/10.1038/ncomms13726
    54Holman, L., & Kokko, H. (2013). The consequences of polyandry for population viability, extinction risk and conservation. Philosophical Transactions of the Royal Society B: Biological Sciences, 368(1613), 20120053. https://doi.org/10.1098/rstb.2012.0053
    55Gabbett, M. T., Laporte, J., Sekar, R., Nandini, A., McGrath, P., Sapkota, Y., … & Fisk, N. M. (2019). Molecular support for heterogenesis resulting in sesquizygotic twinning. New England Journal of Medicine, 380(9), 842-849.Doi: 10.1056/NEJMoa1701313
    56Xia, P. Biology of Polyspermy in IVF and its Clinical Indication. Curr Obstet Gynecol Rep 2, 226–231 (2013). https://doi.org/10.1007/s13669-013-0059-2
    Show More
    5 1 vote
    Article Rating
    Subscribe
    Notify of
    guest
    6 Comments
    Oldest
    Newest Most Voted
    Inline Feedbacks
    View all comments
    Fahim Khan
    4 months ago

    বেশ ভালো লেখা। তবে…
    স্বামীর ঘরে বৈষম্য কেন?

    ১। মাদ্দী ইনসাফ বা আসবাবপত্রগত ইনসাফ। যেমন, وليس على الزوج المساواة بين زوجاته في النفقة والكسوة، وإنما يعطي كلَّ واحدة ما يصلح لمثلها؛ فقد تكون إحداهن ذات منصب وقدر، فلها أن تطلبه بما يجب لمثلها، وليس عليه أن يلحق الدَّنية بها “খরচ ও কাপড়চোপড় ক্ষেত্রে সমান সমান দেওয়া স্বামীর জন্য জরুরি নয়। বরং প্রত্যেককে সেটুকু যা তার জন্য যথেষ্ট হয়। যেমন, স্ত্রীদের কেউ হয়ত বড় ও সম্মানী ঘরের মেয়ে। তাহলে তার জন্য তার জন্য উপযুক্ত হয় এমন কিছু দাবী করা জায়েজ আছে। এবং স্বামীর জন্য এই অধিকার নেই যে, সে তাকে নিন্মমানের জিনিস দিবে যা তার সাথে যায়

    Tahsin Arafat
    Reply to  Fahim Khan
    4 months ago

    সমান মানেই সুষম নয়।

    Fahim Khan
    Reply to  Tahsin Arafat
    4 months ago

    যে লোক এর সাথে বিয়ে হয়েছে স্টেটাস হবে তো তার অবস্থার উপর ভিত্তি করে, এখানে, কার বাবার টাকা বেশি ছিল তার উপর ভিত্তি করে তাকে আসবাব দিবে কেন?
    এরকম হলে, যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তার অবস্থাটা চিন্তা করছেন?

    On behalf of the authors
    Reply to  Fahim Khan
    4 months ago

    ইসলামে কুফুর বিধান রয়েছে তা কি জানা রয়েছে? আপনি সম্ভবত ফ্রম মুসলিমস এরই একজন লেখক, লেখকদের কাছ থেকে এমন মুর্খতাপূর্ণ মন্তব্য আমরা কেউই আশা করি না।

    প্রথমত স্বামীর জন্য উচিৎ হল তার নিজের স্টেটাসের কাউকে বিয়ে করা, তার চাইতে উপরের কাউকে নয়। তারপরও যদি উচ্চ বিত্ত্বে কোন নারীকে বিবাহ করে তাহলে স্বামীর জন্য এটা বৈধ নয় সেই স্ত্রীকে গরিবদের মত পড়তে বাধ্য করবে। একজন নিম্ন বিত্ত্বের মেয়ে স্বামীর অবস্থার কথা চিন্তা করে নিজেকে খুব সহজে মানিয়ে নিতে পারবে যা একজন উচ্চ বিত্ত্বের নারীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

    বিধানটা এই কারনে এমন দেওয়া হয়েছে। দয়া করে মন্তব্য করার পূর্বে নিজেই বিবেক দিয়ে একটু চিন্তা করে দেখবেন।

    স্বামীকে বলা হয় নি গরিবকে গরিবের মত কাপড়-ছোপড়, আসবাবপত্র দিতে হবে, বলা হয়েছে যতটুকু দিলে যথেষ্ট হবে ততটুকু দেওয়া বাধ্যতামূলক। তার যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে সে দুজনইকেই দুটো সমান সমান রাজপ্রাসাদ বানিয়ে দিয়ে সেখানে রানী বানিয়ে রাখতে পারে, এতে কোন অপত্তি নেই। একজন বড় ঘরের স্ত্রীর বেশি লাগবে এটা যেমন কমন সেন্স এর বিষয় একজন নিম্নবিত্ত্ব স্ত্রী কম দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারবে এটাও কমন সেন্স এর বিষয়। তাই কেউ যদি সেই লেভেলের সামর্থ্যবান না হয় তাহলে সে সেভাবে বিষয়গুলোকে হেন্ডেল করার চেষ্টা করবে, কিন্তু তার মানে এই নয় ইচ্ছাকৃত বৈষম্য করবে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও, নিয়ত যদি হয় বৈষম্যের, হীনতা প্রকাশের, একজনকে অবমূল্যায়ন করা ও অপরজনকে বেশি মুল্যায়ন করার তাহলে যে তা বৈধ হবে না সেটাও কমন সেন্স এর বিষয়।

    নারী-পুরুষের সমতার একটা কনসেপ্টও আছে, বিষয়টা নিয়ে সংক্ষেপে বলা সম্ভব না তারপরও দুটো কথা বলি। এই সমতার মানে হল নারী নির্যাতন, ধর্ষণের মত মামলা পুরুষ নির্যাতন নিয়েও বানানাতে হবে, নারীর গর্ভকালীর বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাও পুরুষদেরকে দিতে হবে। না হয় তা সমতার নামে মসকারী ছাড়া আর কিছুই না।

    আশা করি সমতা কি বুঝতেই পেরেছেন। ইসলাম সবসময়, সব ক্ষেত্রে ন্যায় অধিকারের কথা বলে, অবস্থা ভেধে সেই ন্যায্যা অধিকার সমান অধিকারের রূপেও হতে পারে। ন্যায্যাতা কি ও সমতা কি তা যদি ভালো করে বুঝেন তাহলে এই টপিকে আর কোন প্রশ্ন আশা করি আপনার থাকবে না।

    বলবনা
    বলবনা
    Reply to  On behalf of the authors
    4 months ago

    সমস্যাটা আপনাদের এমন রাইটার রাখছেন যারা মানহায গোপণকারী ও ভ্রষ্ট আকিদার স্যাকুলার আলেমদের ফলো করে। এরকম সেকুলার টাইপের রাইটার দের না রাখাটাই বেটার।

    Ashraful Nafiz
    Reply to  বলবনা
    4 months ago

    না ভাই তিনি সেকুলার বা মডরেট টাইপের কেউ না। আমাদেরই পরিচিত, কোন অমুসলিম প্রশ্ন করলে কেমন করতে পারতো সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই প্রশ্নটা করেছেন তিনি। তাই ভুল বুঝবেন না।

    Back to top button