হাদিসের ব্যাখ্যা “সালাতে বান্দা যখন সিজদা করে তখন তার এবং কিবলার মাঝখানে আল্লাহ তা’য়ালা থাকেন।”

প্রশ্নোত্তর (Q&A)Category: হাদিসহাদিসের ব্যাখ্যা “সালাতে বান্দা যখন সিজদা করে তখন তার এবং কিবলার মাঝখানে আল্লাহ তা’য়ালা থাকেন।”
Shahriar Arnob asked 10 months ago

আস সালামু 'আলাইকুম, এমন কিছু হাদিস পড়েছিলাম যেখানে বলা হয়েছিল যখন সালাতে বান্দা যখন সিজদা করে তখন তার এবং কিবলার মাঝখানে আল্লাহ তা'য়ালা থাকেন। এটাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে জানানো যাবে কি?

1 Answers
Best Answer
Tahsin Arafat Staff answered 10 months ago

শায়েখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) উল্লেখ করেছেন,
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব হলো কোনো প্রকার পরিবর্তন, পরিবর্দ্ধন, অস্বীকার কিংবা দৃষ্টান্ত পেশ করা ছাড়াই আল্লাহর নাম ও গুণাবলীতে বিশ্বাস স্থাপন করা।
কুরআনের [এবং ওহীর] কোনো শব্দকে বিনা দলীলে প্রকাশ্য অর্থ থেকে সরিয়ে অন্য অর্থে ব্যবহার করাই কুরআন-সুন্নাহর বিরোধীতা করার নামান্তর এবং আল্লাহ সম্পর্কে বিনা দলীলে কথা বলা ছাড়া অন্য কিছু নয়। আল্লাহর ব্যাপারে বিনা ইলমে কথা বলা হারাম। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

﴿قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡيَ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُواْ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهِۦ سُلۡطَٰنٗا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٣٣﴾ [الاعراف: ٣٣]
“আপনি বলে দিন, আমার রব কেবল অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন- যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন গুনাহ, অন্যায়, অত্যাচার, আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার পক্ষে কোনো দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি এবং আল্লাহ সম্পর্কে এমন কথা বলাও হারাম, যে সম্পর্কে তোমাদের কোনো জ্ঞান নেই”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩৩]

আল্লাহ আরো বলেন,

﴿وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسۡ‍ُٔولٗا ٣٦﴾ [الاسراء: ٣٦]
“যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তর এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে”। [সূরা ইসরা, আয়াত: ৩৬] যারা আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর অপব্যাখ্যা করে, তাদের কাছে শরী‘আতের কোনো জ্ঞান নেই। এমন কি তারা সুস্থ বিবেক সম্পন্নও নয়।

— উদ্ধৃতি সমাপ্ত, ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম by শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ), প্রশ্ন ২৯ থেকে খণ্ডিতাংশ

এবার আসি আপনার প্রশ্ন প্রসঙ্গে। আপনার প্রথমেই মনে রাখতে হবে আল্লাহ তা'আলা আমাদের মতো নন।

কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সব শোনেন, সব দেখেন। – কুর'আন ৪২:১১

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) বলেছেন,

আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টিকুল থেকে আলাদা, তাদের অনুরূপ নয়, তাদের উপর যা ঘটা বৈধ তাঁর উপর তা বৈধ নয়। – মাজমূউল ফাতওয়া ৫/৩০৭

তাই আল্লাহর কোনো কিছুকে দলিলবিহীনভাবে আমাদের কল্পনা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। বরং আল্লাহ যা বলেছেন তার ব্যাখ্যা তিনি ও তার রাসূলই দিয়েছেন, আর যেগুলোর ব্যাখ্যা দেন নি, সেগুলোকে ব্যাখ্যাহীনভাবেই বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহ মালুম, সেটা কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে। সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
আপনার আলোচ্য হাদিসটি হলোঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হর দিকের দেওয়ালে থুথু দেখে তা পরিষ্কার করে দিলেন। অতঃপর লোকদের দিকে ফিরে বললেনঃ যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে সে যেন তার সামনের দিকে থুথু না ফেলে। কেননা, সে যখন সালাত আদায় করে তখন তার সামনের দিকে আল্লাহ তা‘আলা থাকেন। – সহিহুল বুখারী ৪০৬

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) বলেছেন,

যদি কেউ বলে: {এবং আপনি যেখানেই থাকুন না কেন তিনি আপনার সাথে আছেন}। এবং তার উক্তি, আল্লাহর দোয়া ও শান্তি তাঁর উপর বর্ষিত হোক: {তোমাদের কেউ যখন নামাজের জন্য দাঁড়ায়, তখন আল্লাহ তার মুখের সামনে থাকেন) ইত্যাদি কথাগুলো কুর'আনে ‘আল্লাহ আরশের উপর’ এই কথার বিপরীত, তাহলে তারা ভুল করবে। এর অর্থ তাই, যা বাহ্যত মনে হয়। আল্লাহ তাঁর আরশের উপর এবং তিনি তাঁর বান্দার সামনে। এই বর্ণনা সৃষ্টজীবের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য- যখন একজন লোক আকাশের দিকে এবং চাঁদ-সূর্যের দিকে তাকায়, তখন চাঁদ -সূর্য তার উপরে এবং একইসাথে তার সামনে। – মাজমূউল ফাতওয়া ৫/১০১-১০৫ https://shamela.ws/book/7289/1962

শাইখ ইবনে উসাইমীন বলেন-

আল্লাহ তা'আলা ইবাদতকারীর সামনে আছেন তার দলীল হলো- রাসূল সাঃ এর কথা তোমাদের কেউ সালাতরত থাকলে সামনের দিকে থুথু ছিটাবে না। কারণ, আল্লাহ তার সামনে থাকেন।'
এর মাধ্যে সামনের দিককে আল্লাহর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত করা হচ্ছে, এমন পদ্ধতিতে যা তাঁর মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং তাঁর মহত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। এদুটিকে দুইভাবে সমন্বয় করা যায়-
১. সৃষ্টবস্তুর মাধ্যমে এদুটোর মাঝে সমন্বয় করা যায়। যেমনঃ সূর্যোদয়ের সময়, এটা পূর্বে মুখ করা একজন ব্যক্তির সামনে থাকে যদিও এটা আকাশে। কাজেই, সৃষ্টবস্তুর ক্ষেত্রে বিষয়টা সমন্বয় করা গেলে, স্রষ্টার ক্ষেত্রে এটা আরো যথাযথভাবে সমন্বয় করা যায়।
২. যদি দুটোকে সৃষ্টির ক্ষেত্রে সমন্বয় করা না-ও যেতো তার মানে এই নয় যে স্রষ্টার ক্ষেত্রে সমন্বয় করা যাবে না। কারণ, আল্লাহর অনুরূপ তো কিছুই নেই।

দেখুন, সৃষ্টির মধ্যেই আলাদা ব্যাপার সমন্বয় করা যায়, তাহলে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ব্যাপারে কেন যাবে না? আল্লাহ তা'আলা আরশের উপর (সমস্ত সৃষ্টিকূলের উপর), এবং সালাতে আমার সামনে থাকেন। আল্লাহ তা'আলা কুরআনে বলেছেন,

আর পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। সুতরাং তোমরা যে দিকেই মুখ ফিরাও, সে দিকেই আল্লাহর চেহারা। নিশ্চয় আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। – কুর'আন ২:১১৫

কুরআনে আরো আছে,

আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সর্বদা রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, তাঁরই। কে সেই ব্যক্তি যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর নিকট সুপারিশ করে? তিনি লোকদের সমুদয় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অবস্থা জানেন। পক্ষান্তরে মানুষ তাঁর জ্ঞানের কোনকিছুই আয়ত্ত করতে সক্ষম নয়, তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছে করেন সেটুকু ছাড়া। তাঁর কুরসী আকাশ ও পৃথিবী পরিবেষ্টন করে আছে এবং এ দু’য়ের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না, তিনি উচ্চ মর্যাদাশীল, মহান। – কুরআন ২:২৫৫

সৃষ্টিজগতের এই আরশ আমাদের পরিবেষ্টিত করে থাকে। এবং আরশের থেকে আলাদাভাবে এবং উপরে আল্লাহ তা'আলা। তাই যেদিকেই নির্দেশ করি না কেন, সবদিকেই আল্লাহ তা'আলার সত্ত্বা। তাহলে…

[যে বিষয়ে আমাদের জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে আমরা ব্যাখ্যা দিতে পারবো না। ততটুকু মুসলিম হিসেবে ব্যাখ্যাহীনভাবেই বিশ্বাস করতে হবে।
আল্লাহই ভালো জানেন।]

Back to top button
FromMuslims We would like to show you notifications for the latest updates.
Dismiss
Allow Notifications