বিজ্ঞান

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি এবং নাস্তিকদের অবাস্তব প্রস্তাবনা

বিজ্ঞানীরা নাকি বলছেন, শূন্য থেকে “কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন” এর মাধ্যমে আমাদের মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে। এটা কী করে সম্ভব? একদম শূন্য থেকে হুট করে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়ে যাওয়া?


আমি শুধু একটি দিক আলোকপাত করব-

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন থেকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড: সম্ভব না অসম্ভব? বাস্তবতা না তত্ত্বসর্বস্ব?

পদার্থবিজ্ঞান আমাদেরকে শিখিয়েছে যে বিগ-ব্যাং থেকে বিশ্বের সূচনা হয়েছে৷ পয়েন্ট অব সিংগুলারিটি বা মহাকর্ষীয় অদ্বৈত বিন্দু তে সংকুচিত মহাবিশ্ব বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে বিস্ফোরিত ও বিস্তৃত হয়, যার ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পর আমাদের মহাবিশ্ব বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ পয়েন্ট অব সিংগুলারিটি এলো কোথা থেকে? এই প্রশ্নের কোনো জবাব আছে কি? জী হ্যাঁ, আছে৷ কোয়ান্টাম থিওরির পর নতুন উদ্ভাবিত ফ্লাকচুয়েশন থিওরি (Fluctuations Theory) এই প্রশ্নের জবাব দিতে সক্ষম৷

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি এবং নাস্তিকদের অবাস্তব প্রস্তাবনা
কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন, সিম্যুলেটেড পিকচার

এখানে শুন্যস্থানের চিত্র দেখানো হয়েছে৷ যাকে আমরা শুন্যস্থান বলে জানি, তা 1,000,000,000,000,000 গুন জুম করে যখন ভিডিও করবেন এবং ভিডিওটি যখন 1 মিলিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন (10²⁴ অর্থাৎ, 1,000,000,000,000,000,000,000,000) গুণ ধীরে চালানো হবে, তখন ভিডিওটিকে এমন দেখবেন৷ সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে Professor Derek Leinweber এই সিমুলেশনটি প্রস্তুত করেন৷

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন কি?

ইতোমধ্যেই একথা জেনে গেছেন যে এই তত্ত্ব অনুসারে, “শূন্যস্থান আসলে শূন্য নয়। তার ভেতর লুকিয়ে আছে শক্তি, যাকে বলা হয় শুন্যতার শক্তি বা ভ্যাকুয়াম শক্তি (Vacuum energy)। সেই শক্তির যোগান দেয় ভার্চুয়াল কণারা। শূন্যস্থানে আসলে সবসময় এই কণা-প্রতিকণা সৃষ্টি আর ধ্বংসের খেলা চলছে (ছবিতে দেখুন)৷ বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রতি মুহূর্তে সব জায়গায় কণা আর প্রতি-কণার জোড়া তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তারা খুব ক্ষণস্থায়ী। জন্মের সাথে সাথেই এরা পরস্পরের সাথে সংর্ঘষ ঘটিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। পড়ে থাকে শক্তি। সেই শক্তিই পরক্ষণে আবার একজোড়া কণা-প্রতিকণা তৈরি করে। এভাবেই প্রকৃতিতে চলছে ভার্চুয়াল কণাদের ভাঙাগড়ার খেলা।”[Abdul Gaffar Rony আব্দুল গাফফার রনি ভাইকে ধন্যবাদ৷]

এই হচ্ছে ফ্লাকচুয়েশন থিওরির সারাংশ৷ এই তত্ত্বের মাধ্যমে শুন্য থেকে সবকিছু সৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা যায়৷ শুন্য স্থানে যদি অনবরত ও স্বতঃস্ফুর্তভাবে ‘ভার্চুয়াল’ কণা ও তার প্রতিকণা সৃষ্টি হতে পারে, তবে শুণ্যস্থান থেকে মহাবিশ্বও সৃষ্টি হতে পারে৷ ফ্লাকচুয়েশন থিওরী অনুসারে কেউ কেউ বলে থাকেন, ‘পয়েন্ট অব সিঙ্গুলারিটি’ বা মহাকর্ষীয় অদ্বৈত বিন্দু এসেছে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে৷ অর্থাৎ, ভার্চুয়াল কণা-প্রতিকণার অনবরত উৎপত্তি ও বিলীন এর কোনো এক পর্যায়ে এমন কোনো কণা (বিন্দু) জন্ম লাভ করে, যটি ছিল মহাকর্ষীয় অদ্বৈত বিন্দু বা পয়েন্ট অব সিংগুলারিটি৷ অতঃপর, পয়েন্ট অব সিংগুলারিটির বিস্ফোরণ হয়, তারপর মহাজাগতিক ইনফ্লেশন (Cosmic Inflation) হয় (দেখুন: মহাজাগতিক স্ফীতিশীলতা – উইকিপিডিয়া); এবং তারপর আরো বিস্ততি হয়৷

এখানে উল্লেখ্য যে, ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন একটি বাস্তব ও পরীক্ষালব্ধ ঘটনা, যা আমাদের প্রকৃতিতে অনবরত ঘটে চলেছে৷ অর্থাৎ, শুন্যস্থানে (Vacuum) প্রতিনিয়ত কণা ও তার বিপরীত কণা জন্ম লাভ করছে এবং সাথে সাথেই তারা একে অপরকে নিষ্ক্রিয় করে দিচ্ছে, ঠিক যেমনটি +1 এবং -1 এর যোগ ফল শুণ্য৷ ঠিক তেমনি সমগ্র মহাবিশ্বের যোগফল (ভর ও শক্তি) শুন্য এবং শুন্য থেকে কোনো কিছু উৎপত্তি লাভ করতে স্রষ্টার প্রয়োজন নেই৷ কারণ, মহাবিশ্ব জন্মের আগেও শুন্য ছিল এবং এখনো (যোগফল) শুন্যই আছে!

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে বিশ্বজগত সৃষ্টির এই ব্যাখ্যা কতটুকু গ্রহনযোগ্য? কতটুকু যৌক্তিক?

সহজ কথায়, শুন্যস্থানে (Vacuum) যে শক্তি বিদ্যমান তাকেই শুন্যস্থানের শক্তি[1]Vacuum energy বলে৷ এখন প্রশ্ন হল, এই শুন্যস্থান কতটুকু শক্তি ধারণ করে? সেই পরিমাণ শক্তি কি মহাবিশ্বের সমগ্র ভর তৈরীতে সক্ষম? ভ্যাকুয়াম এনার্জির পরিমাণ হল 10–9 জুল/ ঘন মিটার৷ আপনি যদি একটি খালি বাক্স কল্পনা করেন, যার দৈর্ঘ, প্রস্থ ও উচ্চতা 1 মিটার, তবে বাক্সটির ভিতর 10–9 জুল পরিমাণ শক্তি আছে৷ সুতরাং, শক্তির পরিমাণ এতটাই সামান্য, যে তা থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় কণা অৰ্থাৎ, পয়েন্ট অব সিংগুলারিটি বা মহাকর্ষীয় অদ্বৈত বিন্দু সৃষ্টি হওয়া সম্ভব না৷ কারণ, আকারের দিক থেকে যদিও পয়েন্ট অব সিংগুলারিটি বা মহাকর্ষীয় অদ্বৈত বিন্দুর আকার ছিল 10-35 মিটার, যার আকার ভার্চুয়াল কণা (ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে সৃষ্ট কণা ও প্রতিকণা) এর আকারের সমান বা অনুরূপ হতে পারে; কিন্তু, ভর ও ঘনত্বের দিক থেকে কখনোই তারা সমান, অনুরূপ কিংবা কাছাকাছি হতে পারেনা৷ এমনকি সেটা কল্পনারও বাইরে! কারণ, ভার্চুয়াল কণা বা প্রতিকণার ভর ও ঘনত্ব ফোটনের ভর ও ঘনত্বের সাথে তুলনীয়/কাছাকাছি/অনুরূপ/সমান হতে পারে৷ কিন্তু, পয়েন্ট অব সিঙ্গুলারিটি একটি অতিশয় ক্ষুদ্র বিন্দু হলেও সেটির ভর ও ঘনত্ব অসীম— সমগ্র মহাবিশ্বকে একটি বিন্দুতে সংকুচিত করলে শুণ্য সাইজের অসীম ভর ও ঘনত্বের যে বিন্দুটি পাওয়া যায়৷ সুতরাং, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমেে ফোটন, বড় জোর ইলেক্ট্রন তৈরী হতে পারে; তার চেয়ে বেশি হলে মেনেই নিলাম প্রোটন কিংবা নিউট্রনও তৈরী হতে পারে৷ কিন্তু, তাই বলে অসীম ভরের কোনোকিছু তৈরী হওয়া অসম্ভব!

অসীম ভরের এমন বিন্দু তৈরী হতে হলে (আনুমানিক) 10¹²² ঘন মিটার জায়াগার (Space) ভ্যাকুয়াম এনার্জী একটি বিন্দুতে জড়ো করতে হবে, এক মুহুর্তের জন্য হলেও৷ কিন্তু, তা অসম্ভব! এইখানে আরো মজার বিষয় আছে৷ পর্যবেক্ষণলব্ধ ফলাফল থেকে দেখা যায়, ভ্যাকুয়াম শক্তির পরিমাণ 10–9 জুল/ ঘন মিটার৷ অথচ, গাণিতিকভাবে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যায় এই শক্তির পরিমাণ 10113 জুল/ ঘন মিটার! সুতরাং, পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের সাথে হিসাবকৃত ফলাফল মিলে না! শুধু তাই নয়, বরং ফলাফল দুইটির আকাশ-পাতাল ব্যাবধান; না, বরং তার চেয়েও বেশি ব্যবধান! এটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে পরীক্ষালব্ধ ফল ও তাত্ত্বিক ফলাফলের ভিতর সবচেয়ে বড় বৈষম্য এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট তাত্ত্বিক পর্যালোচনা (the worst theoritical prediction) হিসেবে বিবেচিত হয়![2]Cosmological constant problem – Wikipedia

Using the upper limit of the cosmological constant, the vacuum energy of free space has been estimated to be 10−9 joules (10−2 ergs) per cubic meter. However, in both quantum electrodynamics (QED) and stochastic electrodynamics (SED), consistency with the principle of Lorentz covariance and with the magnitude of the Planck constant suggest a much larger value of 10113 joules per cubic meter. This huge discrepancy is known as the cosmological constant problem.

গাণিতিকভাবে হিসাবকৃত ফলাফল (10113 জুল/ ঘনমিটার) থেকে প্রাপ্ত এই পরিমাণ শক্তি যদি ভ্যাকুয়াম শক্তি হিসেবে বাস্তবে থাকতো, তবে হয়তো শুণ্য থেকেই পয়েন্ট অব সিঙ্গুলারিটি তথা, বিগ ব্যাং সম্ভব হতো৷ কিন্তু, বাস্তবে এই শক্তি প্রায় 10120 গুণ কম! সুতরাং, কীভাবে সম্ভব?

আবার মনে করুন, না হয় মেনেই নিলাম, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে অসীম ভর ও ঘনত্বের এবং (প্রায়) শুন্য আয়তনের পয়েন্ট অব সিঙ্গুলারিটি মুহুর্তের জন্য তৈরী হয়ে গেলো৷ সেটাই কি যথেষ্ঠ বিগ ব্যাং ঘটানোর জন্য? সেটা যে পরবর্তি মুহুর্তে পয়েন্ট অব সিঙ্গুলারিটির প্রতিকণার (ধরে নিন একটি ধনাত্মক ও অন্যটি ঋণাত্মকপ কণা) সাথে মিলিত হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবেনা, সেটা কীভাবে সম্ভব?

কণা + প্রতিকণা = ০?

কোনো কোনো সায়েন্টিস্ট বলেন, “কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে যে পজেটিভ কণা (পয়েন্ট অব সিঙ্গুলারিটি) তৈরী হয়েছিল, তা থেকে মহাবিশ্বের সকল পদার্থ ও তার ভর তৈরী হয় এবং তার প্রতিকণা তথা নেগেটিভ কণা তৈরী হয়েছিল, তা মহাকর্ষ বল হিসেবে বিদ্যমান৷ ফলে, সকল পদার্থ ও এদের মহাকর্ষ বলের যোগফল শুণ্য৷” অতএব, শুন্য থেকেই বিশ্বভ্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে! আইনস্টাইনের ভর শক্তির সমীকরণ থেকে আমরা জানি, E=mc². অর্থাৎ, পদার্থকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়৷ অনুসিদ্ধান্ত হিসেবে বলা যায়, শক্তি হল পদার্থেরই একটি রূপ৷ সুতরাং, পদার্থকে শক্তির সাথে যোগ করতে বাধা নেই৷ আর, এটিকে কাজে লাগিয়েই অনেকে ধনাত্মক পদার্থ ও ঋণাত্মক মহাকর্ষ যোগ করে থাকেন৷ কিন্তু, এই ধারণাটি কতটুকু যৌক্তিক? আসুন পর্যালোচনা করি…

মনে করুন, (তাদের কথা অনুসারে) মহাবিশ্বের ভর M এবং মহাবিশ্বে ক্রিয়াশীল মহাকর্ষ বলের থেকে প্রাপ্ত শক্তি H. অতএব, তাদের ভাষ্যমতে

Mc²=–H [Mc²= সমগ্র মহাবিশ্বের ভর থেকে প্রাপ্ত শক্তি]

বা, Mc²+H= 0

এখন, যদি মহাবিশ্বের কোনো বস্তু, মনে করুন পৃথিবীর সমগ্র ভরকে যদি শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়, তবে উৎপন্ন শক্তির পরিমাণ –E=mc², যেখানে m হল পৃথিবীর ভর৷ [শক্তিকে যেহেতু ঋণাত্মক হিসেবে ধরা হয়েছে, তাই H এবং E এর পূর্বে (–) ঋণাত্মক চিহ্ন যোগ করা হয়েছে]৷ কিন্তু, পৃথিবীর ভরকে শক্তিতে রূপান্তরিত করার ফলে মহাবিশ্বের ভর কমে গিয়ে হয় M–m. আবার, –E=mc² পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হওয়ার ফলে মহাবিশ্বে মোট শক্তির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় (–H) + (–E)= –H–E;

কিন্তু, আমরা জানি, কণা ও তার বিপরীত কণার পরিমাণ সর্বদা সমান এবং এদের সমষ্টি শুন্য (0). শক্তির বেলায় ও একই কথা প্রযোজ্য৷ ধনাত্মক রাশির পরিমাণ ঋণাত্মক রাশি থেকে কম বা বেশি হতে পারেনা৷ পৃথিবীকে যদি শক্তিতে রুপান্তরিত করা হয়, তখন, ধনাত্মক রাশির পরিমাণ কমে যায় এবং ঋণাত্মক শক্তির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে সমীকরণ দাঁড়ায়ঃ

(M–m)c²= –(H+E)

বা, Mc²–mc²= –H–E

বা, Mc²–mc²= Mc²+mc²

বা, 2mc²=0

বা, m=0

কিন্তু, পৃথিবীর ভর m= 0 হওয়া অসম্ভব৷ সুতরাং, (M–m)c²= –(H+E) হওয়াও অসম্ভব৷ এবং, পূর্বে যেগুলো ধরে নিয়ে হিসাব করা হয়েছে, সেগুলোও বাস্তবে অসম্ভব! যেমন আমরা ধরে নিয়েছি Mc²=–H এবং পৃথিবীর ভর থেকে উৎপন্ন ঋণাত্মক শক্তি mc²=–E, এগুলোও বাস্তবে সম্ভব হতে পারেনা! অর্থাৎ, শক্তি ভরের ঋণাত্মক রূপ হতে পারেনা৷ সুতরাং, এই পদ্ধতিতেও শুণ্য থেকে মহাবিশ্ব উৎপন্ন হতে পারেনা!

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে নতুন বিগব্যাং হচ্ছে না

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন ঘটবার জন্য কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম বা কোয়ান্টাম শুণ্যস্থান দরকার৷ যা বর্তমান মহাবিশ্ব জুড়েই বিস্তৃত৷ সুতরাং, সমগ্র মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত এই ফ্লাকচুয়েশন ঘটে চলেছে৷ এই প্রক্রিয়ায় যদি পয়েন্ট অব সিঙ্গুলারিটি একবার উৎপন্ন হয় এবং তা থেকে বিগ ব্যাং হয়, তাহলে মহাবিশ্বের ভিতরে সমগ্র স্থানে যে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন ঘটে চলেছে, তা থেকে আবার কেন সেরকম অসীম ভর ও ঘনত্বের কোনো বিন্দু পুণরায় তৈরী হচ্ছেনা এবং তা থেকে মহাবিশ্বের ভিতরেই কেন নতুন কোনো বিগ ব্যাং ঘটছেনা?

তারপর, অনেকে বাবল (Bubble) থিওরী, পটেটো থিওরী দিচ্ছেন৷ Bubble theory অনুসারে আমাদের মহাবিশ্ব তৈরীর জন্য যে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম দরকার তা অন্য কোনো মহাবিশ্বের শুণ্যস্থান থেকে প্রাপ্ত৷ সেই অন্য কোনো মহাবিশ্ব তৈরীর জন্য যে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম দরকার এবং কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন দরকার, সেটাও অন্য কোনো মহাবিশ্ব থেকে প্রাপ্ত৷ ফলে সামগ্রিক রূপটি আসলে নিম্নরূপ দেখায়ঃ

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি এবং নাস্তিকদের অবাস্তব প্রস্তাবনা
বাবল থিওরির অনুমেয় ভিজুয়াল ভিউ

কিন্তু, তেমনটাই যদি হতো, তবে আমাদের মহাবিশ্বের ভিতরও বিগ ব্যাং ঘটতে দেখা যেত৷ কিন্তু, সেরকম কিছু ঘটার প্রমাণ বিজ্ঞানীরা পাননি৷ হ্যাঁ, তবে সুপারনোভা তারা লক্ষ করেছেন৷ তবে তা বিগ ব্যাং নয়৷

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন কি “Something from Nothing” কে স্বীকৃতি দেয়?

নাস্তিকদের মূল বিষয়ে, তথা গোড়ায় গলদ: কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন কি “Something from nothing!” এই মতবাদকে স্বীকার করে নেয়? আসুন পর্যালোচনা করা যাকঃ

পদার্থবিজ্ঞান আমাদের বলে যে, শুন্যস্থান (Vacuum) একেবারেই শুন্য (Absolutely nothing) না৷ মহাবিশ্বের শুন্যস্থান বলতে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়ামকে (Quantum Vacuum) বুঝায়৷ আর একেবারেই শুন্য বলতে ‘কিছুই না’ (Absolutely nothing) বুঝায়, যেখানে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়ামও অনুপস্থিত৷ খুব সম্ভবত, আমাদের মহাবিশ্বের বাইরে এমন Absolutely nothing বিদ্যমান, যেখানে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন কিংবা ভ্যাকুয়াম এনার্জী অনুপস্থিত৷

আগেই বলেছি, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন ঘটার জন্য কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম দরকার এবং সেটা হল মহাবিশ্বে বিদ্যমান শুন্যস্থান৷ এই শুন্যস্থান (Space) বা ভ্যাকুয়ামে (Vacuum) রয়েছে ভ্যাকুয়াম এনার্জী, যার ফলে এখানে কোয়ন্টাম ফ্লাকচুয়েশন হওয়া সম্ভব৷ কিন্তু, যখন কিছুই ছিলনা, অর্থাৎ, যেখানে ভ্যাকুয়াম এবং ভ্যাকুয়াম এনার্জী, সবই অনুপস্থিত (Absent), সেখানে কি কোনো ধরণের ফ্লাকচুয়েশন হওয়া সম্ভব? কিংবা, সেরকম অবস্থা থেকে কি বিগ ব্যাং হওয়া সম্ভব? বিগ ব্যাং থিওরি অনুসারে সময় (Time), স্থান (Space), মহাকর্ষ (Gravity) সবকিছুই একটি বিন্দুতে কেন্দ্রিভুত ছিল৷ তাহলে সেই বিন্দুর বাইরে যেটা থাকে সেটাই হল ‘কিছুই না’ বা Absolutely nothing. কারণ, Vacuum কিংবা Space বিগ ব্যাং এর পরই জন্ম লাভ করেছে৷

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি এবং নাস্তিকদের অবাস্তব প্রস্তাবনা
পরম শূণ্যতা এবং ভ্যাকুয়াম শূণ্যতা (অনুমেয় চিত্র)

ছবিতে বিগ ব্যাং শুরুর (0 তম সেকেন্ডের) অবস্থার একটা প্রতিকী ছবি দেখানো হয়েছে, বোঝার সুবিধার্থে৷

এখন কল্পনা করুন, ঠিক একই রকম একটা ছবি, যেখানে মাঝখানের সাদা বিন্দুটি অর্থাৎ, অদ্বৈত বিন্দুটিও নেই৷ চিত্রটি তখন সম্পূর্নরূপে কালো হবে, যেখানে কোনো শুন্যস্থান (Space) নেই, কোনো ভ্যাকুয়াম (Vacuum) নেই, কোনো ভ্যাকুয়াম এনার্জি (Vacuum energy) ও নেই! অর্থাৎ, একেবারেই খালি/ শুণ্য (Absolutely nothing)৷ সবকিছুই সেখানে অনুপস্থিত (Absent). এমতাবস্থায় আপনি মহাবিশ্বের উৎপত্তির ব্যাখ্যা করুন, দেখি কেমন পারেন! কারণ, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন তো আমাদের মহাবিশ্বের ভিতরকার ঘটনা৷ মহাবিশ্বের বাইরে কিংবা, মহাবিশ্বের অনুপস্থিতিতে তা কীভাবে ঘটতে পারে? সুতরাং, Something from nothing যাদের স্লোগান, সেই ‘nothing’ আসলে প্রকৃত ‘nothing’ বা ‘Absolute nothing’ নয়৷ বরং, আমরা vacuum বা শুন্যস্থানকে যে ‘nothing’ বা empty space মনে করে এসেছি , ‘Something from nothing’ বলতে তারা আসলে সেই ‘nothing’ কে বুঝিয়ে থাকে,যেখানে ভ্যাকুয়াম এনার্জী ও কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন উভয়ই বিদ্যমান৷ বস্তুত Absolutely nothing থেকে কোনো কিছুই (something/anything) উৎপন্ন তে পারেনা৷ অর্থাৎ, একটা সময় কোনোকিছু (Something) অনুপস্থিত (absent) বা অনস্তিত্ত্বশীল (Non-existant) ছিল, কোনোভাবেই তা অস্তিত্ব (Existant) প্রকাশ করতে পারেনা; যদি না কোনো স্রষ্টা সেটিকে অস্তিত্ব দান না করেন৷ নাস্তিকদের অধিনায়ক Lawrence Krauss আরো একটা কথা বলে থাকেন, “Nothing is something.” গাণিতিক পদ্ধতিতে “Something from nothing” বাক্যটিতে nothing= something বসিয়ে পাই “Something from something”!

অর্থাৎ, কিছু হতে হলে অবশ্যই কিছু দরকার৷ আর যদি ”nothing’ শব্দটি ব্যবহার করতেই হয়, তবে তাদের স্লোগানটিকে সংস্কার করে “Something from what we knew to be nothing.” বলা যেতে পারে৷ কারণ, আমরা যেটাকে শুণ্য বলে জেনে এসেছি, সেটা আসলেই শুণ্য ছিলনা৷ কাজেই, সেখান থেকে যদি সমগ্র বিশ্বভ্রহ্মাণ্ডও সৃষ্টি হয়, তবে সেটা প্রকৃত nothing বা Absolutely nothing থেকে সৃষ্টি হয়নি, বরং Something থেকেই সৃষ্টি হল৷

অতঃপর, যে সকল বিজ্ঞানীগণ জীবনভর পরিশ্রম করে বিজ্ঞানের তত্ত্বগুলি আবিষ্কার করছেন, তাদেরকে শ্রদ্ধা জানাই৷ তাদের তত্ত্বগুলিকে আক্রমণ করা এবং ভূল প্রমাণ করা আমার উদ্দেশ্য ছিলনা৷ বরং, আমার উদ্দেশ্য ছিল নাস্তিক্যবাদ যে আসলেই ভিত্তিহীন, অসার মতবাদ ও ধ্যানধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত, সেটা প্রমাণ করা৷


লেখাটির মূল উৎসঃ কীভাবে প্রমাণ হয় যে স্রষ্টা তথা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে? এ নাঈমুল মুশফিক (Naimulmusfiq Naim) এর উত্তর থেকে সংগৃহীত এবং ঈষৎ পরিমার্জিত।

    Show More
    5 2 votes
    Article Rating
    Subscribe
    Notify of
    guest
    0 Comments
    Inline Feedbacks
    View all comments
    Back to top button