মুরতাদ হত্যা কেন?
মানুষ শুধু এতটুকুই জানে মুরতাদকে হত্যা করা হয়, কিন্তু এর বিস্তারিত বিধান জানে না বিধায় ভুল বুঝে বসে।
মুরতাদকে তওবার সুযোগ দেওয়া হয়। কারো কারো মতে ৩ দিন, কেউ ৭ দিন কেউ ১৫ দিনের কথা বলেছেন, কেউ ১ মাসের কথাও বলেছেন। [1] শরিয়া আদালতে মুরতাদ হওয়ার কারন জানতে চাওয়া হয়, ইবনে কুদামাসহ আরো কিছু ওলামা বলেন ধর্মত্যাগ হয় যদি সংশয়ের কারনে তাহলে তার সকল সংশয়ের সমাধান দিতে হবে, তারপরও সে ফিরে না আসলে তারপর শাস্তি, [2] এমন হলে মনে হয় না কেউ সংশয় দুর হওয়ার পরও জাহিল থাকবে। যদি জাহিলই থেকে যায় তাহলেতো নিজের কোপাল নিজেই সেচ্ছায় পুড়ল সে, এখানেতো আর কারো দোষ নেই। আর যদি কোন অমুসলিমকে জোর করে মুসলিম বানানো হয়ে থাকে বা সে কোন চাপে পড়ে, কারো ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করে এবং সে পরে আবার নিজের ধর্মে ফিরে যায় সে ক্ষেত্রেতো তাকে আর শাস্তিও দেওয়া হয় না, [3] আবার পাগল বা মানসিক দিক থেকে অসুস্থ ও নাবালেগকেও ইরতিদাদের শাস্তি দেওয়া হয় না। [4] আবার অমুসলিমদের সাথে যদি এই মুরতাদ হওয়া ব্যক্তির বিষয়ে কোন চুক্তি থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রেও তাকে সরাসরি শাস্তি দেওয়া যায় না। [5] যতটুকু জানি শাস্তি দেওয়া যদি তার চাইতে বড় ফিতনার কারণ হয় তাহলে আদালত শাস্তি স্থগিত রাখতে পারে। [6] আবু হানিফা ও জাফরি ফিকাহ পন্ডিতগণ বলেছেন যে ধর্মত্যাগী নারীদের হত্যা করা হবে না। পুরুষ ধর্মত্যাগীকে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে, একজন মহিলা মুরতাদকে নির্জন কারাবাসে রাখা হবে যতক্ষণ না সে তওবা করে এবং ইসলামে ফিরে আসে। [7] আর কারো যদি তারপরও ধর্মত্যাগ করতে হয় তাহলে সে যেখানে শরিয়া আইন নেই সেখানে চলে গিয়ে তারপর ধর্মত্যাগ করলেই হয়। এরকম আইনতো নেই যে তাকে অন্য দেশ থেকে ধরে এনে শাস্তি দিতে হবে। আর এই অপরাধের শাস্তি দেওয়ার অধিকারতো সাধারণ জনগণের নেই, আদালত ছাড়া। [8]
ইসলামে শাস্তিগুলোর বিস্তারিত আলাপ আলোচনা ফকিহগণ করে গিয়েছেন। কখন কোন কন্ডিশনে কার কারনে কোন প্রেক্ষাপটে কি হতে পারে না পারে, কমবে না বাড়বে, কাকে দিবে, কেন হবে ইত্যাদি সব বিষয়ে।
এই আইন নিয়ে আপত্তি তোলা কেমন যেন ঠিক বুদ্ধিমানের কাজ মনে হয় না। কারন এই শাস্তি রাখা প্রয়োজন, মুলত এই শাস্তি রাখার পিছনে মূল কারন হল দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিয় ও ধর্মীয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, এই ক্ষেত্রে এই আইনের ব্যপক গুরুত্ব রয়েছে। [9] যারা মুরতাদ হত্যার পক্ষে না তারাও বলেন ইসলামের বিরুদ্ধে মুরতাদ কোন কাজ করলে তখন তাকে হত্যাা করা যেতে পারে। [10] আর ধর্মত্যাগ করার পর কেউতো ইসলাম বিরোধী কিছু করে না বা করবে না এমন সাধারণত ঘটে না। যেমন একটা উদাহরণ দিই।
মামলুক আমলে ধর্মত্যাগ বা অন্য ধরনের ধর্মদ্রোহিতার জন্য লোকেদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এমন ষাটটি মামলার সাম্প্রতিক গবেষণায় অনুরূপ ফলাফল পাওয়া গেছে। তাদের ধর্মত্যাগ ঘোষণা করার জন্য যাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল তারা ছিল মূলত খ্রিস্টান যারা ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিল এবং তারপরে এটি ত্যাগ করার একটি প্রকাশ্য প্রদর্শনী করেছিল, এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অনেক কিছু বলেছিল। পরবর্তী ক্ষেত্রে, তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার আগে তাদের ধর্মত্যাগ প্রত্যাহার করার অসংখ্য সুযোগ দেওয়া হয়েছে। [11]
দেখা যায় ১০০ জনে ৯৯ জনই ইসলামবিরোধী, বিদ্বেষী কর্মকান্ড ও প্রচারনা শুরু করে, বুঝে না বুঝে অসংখ্য প্রোপাগান্ডা, অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়। যা কারন হয় আরো বহুজনের গোমরাহির দিকে চলে যাওয়ার। একজন মুসলিমকে অপব্যাখ্যা, প্রোপাগান্ডা, মিথ্যাচার ও বাতিল মতবাদের মাধ্যমে চিরস্থায়ী জাহান্নামি বানানোর চেষ্টা করার চাইতে বড় অপরাধ আর কিই বা হতে পারে! প্রকাশ্যে এই আইনের কারনে দেখা যাবে দুজনকে শাস্তি দিলে যারা এসবের সাথে লিপ্ত তাদের আরো ৫০জন প্রকাশ্যে তাদের মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডা ছেড়ে দিবে। যারা গোপনে করছে তাদের দুজনকে এই শাস্তি দিলে দেখা যাবে যারা গোপনে করছে তাদের আরো ৫০ জন এসব ইসলাম বিদ্বেষী, বিরোধী কর্মকান্ড গোপনে করাও ছেড়ে দিবে।
আপনি স্বাধীনতার কথা বললেন, বিষয়টা বুঝার রয়েছে। বাংলাদেশের জাতিয়তাবাদ, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতার ও জনগণের জন্য হুমকিসরুপ কোন কর্মকান্ড ও তার সাথে জড়িত ব্যক্তিকে রাষ্ট্র দমন করার অধিকার রাখে, এই ক্ষেত্রে বলা হয় না স্বাধীনতার কথা। কারন এইসক ক্ষেত্রে স্বাধীনতার বুলি আনা অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই না। তেমনই শরিয়া আইনে মুসলিম জাতিয়তাবাদ, সার্বভৌমত্ব, স্থিতিশীলতা, গোমরাহিরোধ ও ষড়যন্ত্র রোধে এসবের বিরুদ্ধে এই আইন রাখারও অধিকার রাখে। এই ক্ষেত্রেও স্বাধীনতার কথা বলাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
তথ্যসূত্রঃ
[1] আবু দাউদ ৪৩০৫, মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদীস ২৯৫৮৮, কানযুল উম্মাল হাদীস ১৪৭৫, মুয়াত্তা মালিক ১৪২০; সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২২৯০; ইবনে হাজম, আল-মুহাল্লা, ১১/১৯১
[2] ইবনে কুদামাহ, আল-মুগনি, ৯/১৮; ইবনে হাজম, আল-মুহাল্লা, ১১/১৯১
[3] ইব্রাহিম, আর., ডিবেটিং দ্যা অফ আইডিয়াস, পৃ ৬৮; জে.টি. মুনরো, হিস্পানো-আরবি কবিতা, পৃ. ৬৯
[4] ইবন মাজাহ ২৫৪১; মিশকাত ৩২৮৭-৩২৮৮; সুনানে আবু দাউদ ৪৩৯৮-৪৪০৬, ৪৩৪৬-৫১; তিরমিজি ৪৩৫১; আহমাদ ২৪১৭৩, ২৪১৮২, ২৪৫৯০, দারেমী ২২৯৬, ইরওয়াহ ২৯৭; বায়হাকী ফিস সুনান ৭/২৩৯, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ৪/৩৬৫
[5] সহীহ বুখারি হাদিস ২৭০০
[6] সহীহ বুখারী ৭৩৫২; সহীহ মুসলিম ১৭১৬; আল-হুকম ফি’ল-সাতওয়াল-ইখতিতাফ ওয়া মুশকিরাত, পৃ. ১৯২-১০৪; আব্দুল আল-রাজ্জাক আল-সানানি, আল-মুসান্নাফ, ১১ তম খণ্ড অথবা আল মাকতাব আল ইসলামি পাবলিকেশন, ১০/১৭১; আবু বকর মুহাম্মাদ বিন জাফর আল-নারশাখী, তারিখ বুখারা, পৃ. ৭৩
[7] শারহ আদ-দুর-এল-মুখতার, ১/৪৮৩; 'আল হিদায়া ২/৫৮৫ এর আইনুল হিদায়া তাফসীর ;‘ইসলামী আইনে অপরাধ ও শাস্তি’ পৃষ্ঠা ৬৪ ও ৬৫
[8] বিধিবদ্ধ ইসলামী আইনের ভাষ্য (ই'ফা), খণ্ড ১, ধারা ৭২, পৃষ্ঠা ২৭৮
[9] সৈয়দ আমীর আলী, মহম্মদ আইন, ২/৩২; ইলামুল মুওয়াক্যিইন ২/৮৪; দ্য কোরান: একটি এনসাইক্লোপিডিয়া, পৃষ্ঠা ৫২৬-২৭
[10] ফোর্ট, ডি. এফ., পাকিস্তানে ধর্মত্যাগ এবং ব্লাসফেমি, আন্তর্জাতিক আইনের কনন জার্নাল, খন্ড ১০, পৃ. ২৭-৪১; স্যামুয়েল মেরিনাস জুয়েমার, "ধর্মত্যাগের আইন"। মুসলিম বিশ্ব, ১৪ (৪): ৩৬–৩৭, অধ্যায় ২; ফরিদেহ কাজেমী, ”লিঙ্গ, ইসলাম, এবং রাজনীতি”, সামাজিক গবেষণা, খণ্ড. ৬৭, নং ২, পৃ. ৪৫৩-৭৪; ইব্রাহিম হাসান, `সমসাময়িক ইসলামিক চিন্তাধারার ব্ল্যাকওয়েল সঙ্গী', পৃষ্ঠা ১৬৭-৬৯
[11] আমালিয়া লেভানোনি, "মামলুক আমলে মিশর ও সিরিয়ায় তাকফির," ইসলামে অবিশ্বাসের অভিযোগে, সংস্করণ। ক্যামিলা আদাং, হাসান আনসারি, মারিবেল ফিয়েরো এবং সাবিন শ্মিটকে, পৃ ১৫৬, ১৬৩-৬৫, ১৭০
Please login or Register to submit your answer