নামাজ না পড়লে কি কেউ কাফের হয়ে যায়?
তিনি বললেন, "বান্দার উপর আল্লাহর অধিকার হল এই যে, বান্দা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার অধিকার হল এই যে, তাঁর সাথে যে কোন কিছুকে শরীক করে না তাকে আযাব না দেওয়া।"(বুখারী হা. ২৮৫৬, মুসলিম হা. ১৫৩)২.
মুআয বিন জাবাল (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার শেষ কথা ’লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।(আহমাদ ২২০৩৪, ২২১২৭, আবূ দাঊদ ৩১১৮, হাকেম ১২৯৯, সহীহুল জামে’ ৬৪৭৯)৩.
আনাস বিন মালিক (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (পরকালে) আল্লাহ বলবেন, সেই ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের কর, যে ’লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার হৃদয়ে যবের দানা পরিমাণ মঙ্গল (ঈমান) আছে। সেই ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের কর, যে ’লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার হৃদয়ে অণু (বা ভুট্টা) পরিমাণ মঙ্গল (ঈমান) আছে। আর সেই ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের কর, যে ’লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার হৃদয়ে গমের দানা পরিমাণ মঙ্গল (ঈমান) আছে। আর সেই ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের কর, যে ’লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার হৃদয়ে গমের দানা পরিমাণ মঙ্গল (ঈমান) আছে।(আহমাদ ৩/২৭৬, তিরমিযী ২৫৯৩, এ হাদীসের মূল রয়েছে সহীহায়নে)৪. কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না,যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা,ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়। [সূরা নিসা-১১৬]৫. তাই আরো আয়াত ও হাদিস বিবেচনা করে লুৎফর রহমান ফরায়েজী বলেছেন,
সুতরাং নামায ছেড়ে দিলেই ব্যক্তি কাফের হবে না। বরং কাফেরদের মত কাজ হয়। যদি কাফের হয়ে যেত তাহলে তার জন্য জান্নাতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদীস আসতো। অথচ নামায ছেড়ে দিলে চিরস্থায় জাহান্নামী হবার কোন হাদীস বা আয়াত বর্ণিত হয়নি। বরং আল্লাহ তাআলা এবং রাসূল সাঃ পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন শিরক ছাড়া আর যত গোনাহই হোক না কেন, আল্লাহ তাআলা তা মাফ করে দিতে পারেন। তবে হ্যাঁ, যদি কেউ নামায পড়া ফরজ নয় মনে করে নামায ছেড়ে দেয়, তাহলে উক্ত ব্যক্তি কাফের। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিংবা নামাযকে তাচ্ছিল্য করে নামায পড়া ছেড়ে দেয় তাহলেও উক্ত ব্যক্তি কাফের। কিন্তু অলসতাবশত নামায ছেড়ে দিলে ব্যক্তি কাফের হয়ে যায় বলাটা কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক ছাড়া আর কিছু নয়।এখন ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার করে বলবেন।
যে মনে করে না সালাত আদায় করা আবশ্যক সে কাফির, এতে কোনো ইখতিলাফ নেই। অলসতাবশতঃ সালাত আদায় না করলে এখানে আলিমগণের তিনটি মত আছেঃ
- কিছু আলেম মনে করেন যে যে ব্যক্তি নামায পরিত্যাগ করবে, তাকে নামায না পড়া পর্যন্ত কারাবদ্ধ করে শেখানো উচিত। (অধিকাংশ হানাফী আলেম)
- অন্যান্য আলেমরা বলেছেন যে যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত সালাত ছেড়ে দেয়, তাকে তওবা করতে হবে। সুতরাং, যদি সে অনুতপ্ত হয়, আমরা তাকে ছেড়ে দিই; অন্যথায়, তাকে হত্যা করা উচিত; যা নির্ধারিত শাস্তি (হদ্দ)। (মালেকী ও শাফেঈ)
- বাকিরা বলেন যে শাসক কিংবা তার নিযুক্ত কারোর উচিত সালাত পরিত্যাগকারীকে তওবা করার আমন্ত্রণ জানানোর জন্য; যদি সে প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে তাকে হত্যা করতে হবে যেহেতু সে মুরতাদ (কাফির) হয়ে যায়। (হাম্বলী)
এ প্রসঙ্গে দেখতে পারেনঃ
- https://islamqa.info/en/answers/194309/
- https://islamqa.info/en/answers/9400/
- https://www.islamweb.net/en/fatwa/83943/
আপনার এই প্রশ্নটি যেন সালাত আদায় না করার অজুহাত হিসেবে না হয়। আর শেষ বিষয়টি হলো, ন্যুনতম ঈমান থাকলেই আল্লাহ তাঁর বান্দাকে জান্নাতে নিবেন, তবে তার গুনাহের পাল্লা ভারি হলে, আগে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করানোর পর।
আল্লাহু আলেম।
বিষয়টা ইখতিলাফি।
ইখতিলাফি বিষয়গুলো সাধারণত উত্তর না দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি আমরা। তবে বিষয়টা ইখতিলাফি হলেও সেন্সেটিবও বটে, তাই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি।
হানাফি, শাফেয়ী, মালেকি ওলামাদের মতে কোন ওজর বসত, অলসতা বসত নামাজ না পড়লে কাফের হয়ে যাবে না। কিন্তু না পড়ার পাশাপাশি যদি তাকে পড়তে বলার পরও সে পড়বে না, পড়ার প্রয়োজন নেই, না পড়লে সমস্যা নেই, বা অবজ্ঞা অস্বীকার এই জাতীয় মনোভাব রাখে বা মন্তব্য করে তাহলে তা সুস্পষ্ট কুফুরি এইটার বিষয়ে সকলে একমত এবং বুঝানোর পরও যদি সে এর উপর অটল থাকে তাহলে সে কাফির হিসেবে গণ্য হবে এতেও সকলে একমত।
কিন্তু সালাত পড়তে হবে, না পড়লে কবিরা গুনা, না পড়লে শাস্তি রয়েছে, আজাব ভোগ করতে হবে, না পড়ার কারণে অনুশোচনা রয়েছে, নিজে যে ভুল করছে তার স্বীকার করছে, অনুতপ্ত-অনুশোচনা বোধ করছে এমন হলে তার উপর কাফির ফতুয়া আরোপ করা যাবে না এটাই এই ৩ মাজহাবের ওলামাদের মত। কারণ বহু কিছুকে কুফুরি বলা হয়েছে কিন্তু সবগুলোতেই আক্ষরিক অর্থে কাফির হয়ে যাওয়ার মত বা দ্বীন হতে খারিজ এমন কুফুরিকে হিসেবে বুঝানো হয় নি, তাই সালাত না পড়লেই কাফির হওয়ার বিষয়টাকেও সেই ওলামাগণ সেই আক্ষরিক অর্থে দ্বীন হতে খারিজ চিরস্থায়ী জাহান্নামি কাফির হিসেবে গ্রহণ করেনি। তাদের মতে অলসতা বা অন্য অগুরুত্বপূর্ণ ওজর বসত সালাত না পড়া বড় কুফুরির মত গুণা, কোন সন্দেহ নেই, এর কারণে জাহান্নামের কঠিন হতে কঠিনতর আজাব ভোগ করতে হবে, সালাত ত্যাগকারীর পরিনতি ভয়াভহ কিন্তু চিরস্থায়ী জাহান্নামি হওয়ার মত কাফির হয়ে যায় না এতে।
বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন - নামায না পড়লে কেউ ক|ফি*র হয় না
- নামায না পড়লে ব্যক্তি কাফির হয়ে যায়?
- বেস্বলাতি কাফির তবে চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়
- https://www.drkhalilurrahman.com/14396/article-details.html
- https://www.banuri.edu.pk/bayyinat-detail/شریعت-اسلامیہ-میں-نماز-کی-قضاء-کا-حکم
- https://www.alkawsar.com/bn/article/3033/
- সূরা আন-আম ১২৮; সূরা হুদ আয়াত ১০৮ এর তাফসির সমূহ
আমি হানাফি মাযহাবের অনুসরণ করি, তাই হয়ত আমি বলব এই ওলামাই হকের উপর রয়েছে, কিন্তু হয়ত সালাফি কোন লেখক এসে বলতে পারেন যে, ‘না এই ওলামাগণের মত সঠিক নয়’। এখানে আমরা কেউই মুহাদ্দিস, মুজতাহিদ নই, আমরা দাঈ মাত্র, তাই আমাদের মত কারো মতামতের উপর ভিত্তি করে এই ধরনের বিষয়ে কোন মতকে সঠিক বা বেঠিক হিসেবে গ্রহণ করা বিবেক সম্মত কাজ হবে বলে মনে হয় না। আপনি চাইলে উভয় পক্ষের দলিলগুলোই দেখতে পারেন ও তারপর আপনার কাছে যেটা সঠিক মনে হবে দলিলের আলোকে সেটাই গ্রহণ করতে পারেন।
ওলামাগণ দলিলকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বুঝেছেন বিধায় এই দুটি মতের সৃষ্টি ও ইখতিলাফ তৈরি হয়েছে। কিন্তু ইখতিলাফ থাকতেই পারে, এটাই প্রাকৃতিক যে কিছু না কিছু বিষয়ে ইখতিলাফ থাকবেই। কিন্তু আমাদের উচিত ছিল নিয়মিত সালাত আদায় করা, তাহলে সালাত আদায় না করলে কাফের হয়ে যাবে কিনা এইটা নিয়ে চিন্তিত হতে হতো না, এই ইখতিলাফ নিয়ে মাথা ঘামাতে হতো না, ভয় পেতে হতো না। হাম্বলিদের মতে সালাত না পড়া কুফুরি, কিন্তু দেখুন আরবদের কেউ এই ফতুয়া নিয়ে মাথাও ঘামায় না, কারণ তারা সবাই নিয়মিত সালাত আদায় করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা তা না করে এই ইখতিলাফের মধ্যে কোনটা সঠিক সেই চিন্তায় বিভোর হয়ে রয়েছি, তর্ক-বিতর্ক করছি, ঝগড়া-ফাসাদ করছি।
মুমিনের বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত ছিল সবসময় নিরাপদটাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, যে কাজটা করলে আমি নিরাপদ থাকতে পারব সেটাই করা কিন্তু আমরা সে দিকে না ঝুঁকে বরং ভিন্ন আঙ্গিকে দ্বীনকে বিচার করতে চলেছি। অথচ সাহাবাগণ জিহাদের ময়দানেও সালাত ত্যাগ করেন নি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুক
Please login or Register to submit your answer