নবী (সা) স্ত্রীর হায়েজ অবস্থায় সহবাস করতেন?

প্রশ্নোত্তর (Q&A)Category: ইসলামনবী (সা) স্ত্রীর হায়েজ অবস্থায় সহবাস করতেন?
  1.  নবী সা নাকি হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করতেন। হায়েজ হইলে তিনি স্ত্রীদের ইযার পড়তে বলতেন। এবং দুই উরুর মাঝে সহবাস করতেন? কারণ আয়েশা রা কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে পাওয়া যায় তার কাপড়ে মনির দাগ লেগে থাকত
2 Answers
Best Answer
Ashraful Nafiz Staff answered 3 weeks ago

এই বিষয়ে আমরা অনেকেই ভুল ব্যাখ্যা দিই, এমনি আমিও দিয়েছিলাম। আল্লাহ মাফ করুক।

যাইহোক চলুন আজকে এই বিধানকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার চেষ্টা করি। এই বিধান সংক্রান্ত হাদিসটি হল -

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ خَلِيلٍ، قَالَ أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ، قَالَ أَخْبَرَنَا أَبُو إِسْحَاقَ ـ هُوَ الشَّيْبَانِيُّ ـ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَسْوَدِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَتْ إِحْدَانَا إِذَا كَانَتْ حَائِضًا، فَأَرَادَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُبَاشِرَهَا، أَمَرَهَا أَنْ تَتَّزِرَ فِي فَوْرِ حَيْضَتِهَا ثُمَّ يُبَاشِرُهَا‏.‏ قَالَتْ وَأَيُّكُمْ يَمْلِكُ إِرْبَهُ كَمَا كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَمْلِكُ إِرْبَهُ‏.‏ تَابَعَهُ خَالِدٌ وَجَرِيرٌ عَنِ الشَّيْبَانِيِّ‏.‏‏

২৯৬। ইসমা’ঈল ইবনু খলীল (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমাদের কেউ হায়য অবস্থায় থাকলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে মিশামিশি করতে চাইলে তাকে হায়যের ইযার পরার নির্দেশ দিতেন। তারপর তার সাথে মিশামিশি করতেন। তিনি [আয়িশা (রাঃ)] বলেনঃ তোমাদের মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মত কাম-প্রবৃত্তি দমন করার শক্তি রাখে কে? খালিদ ও জারীর (রহঃ) আশ-শায়বানী (রহঃ) থেকে এই হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। [সহিহ মুসলিম হাদিস ৩০২, হাদিস ফাইন্ডেশন ২৯৬]

حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ بَكَّارٍ، حَدَّثَنَا مَرْوَانُ، - يَعْنِي ابْنَ مُحَمَّدٍ - حَدَّثَنَا الْهَيْثَمُ بْنُ حُمَيْدٍ، حَدَّثَنَا الْعَلَاءُ بْنُ الْحَارِثِ، عَنْ حَرَامِ بْنِ حَكِيمٍ، عَنْ عَمِّهِ، أَنَّهُ سَأَلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا يَحِلُّ لِي مِنَ امْرَأَتِي وَهِيَ حَائِضٌ قَالَ ‏"‏ لَكَ مَا فَوْقَ الإِزَارِ ‏"‏ ‏.‏ وَذَكَرَ مُؤَاكَلَةَ الْحَائِضِ أَيْضًا وَسَاقَ الْحَدِيثَ ‏.‏

হারাম ইবনু হাকীম থেকে তার চাচার সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার স্ত্রী হায়িয অবস্থায় আমার জন্য কতটুকু হালাল? তিনি বললেন, ইজারের উপরের অংশ তোমার জন্য হালাল। তিনি ঋতুবতী স্ত্রীকে নিয়ে একত্রে পানাহার করার কথাও উল্লেখ করলেন। অতঃপর শেষ পর্যন্ত হাদীস বর্ণনা করেন। [আবু দাউদ ২১২]

আমরা অনেক মুসলিমই প্রথম হাদিসটির ব্যাখ্যা করি এখানে মিশামিশি মানে স্বাভাবিক চলাফেরা, কথা বার্তা, স্পর্শ, খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে।

কিন্তু আরবিতে এই মিশামিশির জন্য যে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তার প্রকৃত অনুবাদ অনুসারে এটা দ্বারা সহবাস বা যৌনতা কেন্দ্রিক বিষয় বুঝায়। এছাড়া তেমন কোন আলেম উপরে উল্লিখিত ব্যাখ্যার মত কিছু ব্যাখ্যা করেছেন কিনা সেটাও আমার খুঁজে পাই নি।

২য় হাদিসটি নিয়ে ভালো মতভেদ রয়েছে তবুও আলবানি (রহ) সহিহ বলেছেন, যেহেতু এই হাদিস সহিহ হাদিসের সমার্থক সেহেতু দলিল হিসেবে গ্রহণ করাই যায়।

চলুন এই বিধান নিয়ে বিস্তারিত কথা বলার আগে কাফেরদের শিখানো কিছু কৌশল, তাদের কিছু দর্শন সম্পর্কে জেনে নিই।

যৌনতা নিয়ে কাফেরদের ফ্যান্টাসি হয়তো সবচেয়ে বেশি, তাদের কাছে পাওয়া যায় না এমন কলাকৌশল আদৌ দুনিয়ায় আছে কিনা আমার জানা নেই, বিশেষ করে হিন্দুদের কিছু শাস্ত্রেতো বিস্তারিত ভেঙ্গে ভেঙ্গে কৌশল বর্ণনা করা হয়েছে। যাইহোক কাফের মতহলে বিখ্যাত কিছু যৌন আচরণের কয়েকটি হল -

Homosexuality, Oral, ‍Anal, Incest,  Mammary intercourse, Bestiality, Necrophilia, Fraterism, Pedophilia, Exhibitionism, sadism, fetishism, masochism ইত্যাদি ইত্যাদি

যৌন বিকৃতি কত প্রকার ও কি কি এটা সঠিকভাবে বলা মুশকিল, আবার অন্যদিকে ভারতের এক গবেষণায় ৫৪৯ রকমের যৌন বিকৃতির তালিকা পাওয়া গেছে। যদিও অনেকের মতে এসব যৌনবিকৃতি নয়। ['Forensic and Medico-legal Aspects of Sexual Crimes and Unusual Sexual Practices', By Anil Aggrawal] ২০১৩ সালের ১৮ মে যুক্তরাষ্ট্রের এপিএ 'ডায়াগনস্টিক এ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়্যাল অব মেন্টাল ডিসঅর্ডার্স-৫' (ডিএসএম-৫) নামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং ওখানে মাত্র ৮ প্রকারের যৌন উত্তেজনাকে যৌন বিকৃতির তালিকাভুক্ত করা হয়েছিলো। [American Psychiatric Association, "Paraphilic Disorders", Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (Fifth addition)। American Psychiatric Publishing। page 685–686]

এই হতে বুঝা যায় তাদের কাছে বাকিগুলো বিকৃত যৌনাচার নয় বরং সেগুলো বিভিন্ন প্রকারের ফ্যান্টাসি যা অবৈধ কিছু নয়। বহু উদ্ভট উদ্ভট ফ্যান্টাসিই দেখা যায় যেগুলোকে বিকৃত যৌনাচার বা প্যারাফিলিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। উপরে উল্লেখ করা নামগুলোর সবগুলোকেই বিকৃত যৌনাচার হিসেবে মনে করা হয় না, কিছু একদম বৈধ, কিছু উপরে উপরে নিষিদ্ধ, কিছু সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ আবার কিছুতো অতীতে বিকৃতি ছিল কিন্তু বর্তমানে ম্যাজিক্যালি স্বাভাবিক যৌনাচারে পরিণত হয়েছে, যেমন সমকামিতা। যাইহোক এসবের ইতিহাস অনেক বড়, তাই সেই দিকে না যাই।

এছাড়া আপনারা যদি খুঁজতে যান তাহলে দেখবেন মাসিক চলাকালীন সময়ে সহবাসের ক্ষতি নিয়ে যে কিছু গবেষণা রয়েছে তার বেশির ভাগেই বলা রয়েছে এর কোন ক্ষতিকর দিক নেই। যেগুলোতে ক্ষতিকর দিক রয়েছে এমন গবেষণাও অনেকে নাছক করে দিয়েছে বিভিন্ন যুক্তি, কুযুক্তি, প্রমাণ, পক্ষপাতিত্ব, ধর্মবিরোধিতা, মুসলিমদের গবেষণা ভালো বা সঠিক না ইত্যাদির আলোকে।

সেহেতু তাদের কাছে আর ঋতু অবস্থায় সহবাস খারাপ হওয়ার কারণ থাকছে না, হয়তো কনসেন্ট এর মারপেঁচ টানবে কিন্তু সেটা ভিন্ন টপিক তাই তা নিয়ে আলোচনা করছি না। সেহেতু কীসের ভিত্তিতে ঋতু অবস্থায় সহবাস করলে তারা এটাকে অন্যায়, খারাপ দৃষ্টিতে দেখবে?

কিন্তু তারপরও ইসলাম ঋতু অবস্থায় সহবাসকে সুস্পষ্ট হারাম করেছে, বিজ্ঞান একে খারাপ বলুক আর নাই বলুক না কেন। সেহেতু এই অবস্থায় যোনি পথে সহবাস পুরো উম্মাহর ঐক্য মতে হারাম। [সূরা বাকারা আয়াত ২২২; তিরমিযী ১৩৫; আবু দাউদ ২৫৮, ২৬৪; ইবনে কুদামাহ আল-মুগনি, ১/৪১৫; আল-লাজনাহ আল-দাইমাহ, ৫/৩৯৫]

কিন্তু ঋতুমতী স্ত্রীর নাভির উপরে ও হাঁটুর নিচে চুম্বন, আলিঙ্গন, স্পর্শ ইত্যাদির মাধ্যমে অন্তরঙ্গ হওয়া এটা পণ্ডিতদের ঐকমত্য অনুযায়ী জায়েয। [দেখুন শারহ মুসলিম আল-নওয়াবী, এবং আল-মুগনি, ১/৪১৪]

সামনের বা পিছনের রাস্তা ছাড়াও নাভি এবং হাঁটুর মধ্যবর্তী অঞ্চলের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া জায়েয কিনা তা নিয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম আবু হানিফাহ, ইমাম মালিক এবং শাফেঈ এর মত ছিল যে এটা হারাম এবং ইমাম আহমাদ এর মত ছিল যে এটা জায়েজ; শেষোক্ত মতটি বেশ কিছু হানাফী, মালেকী এবং শাফি’দের দ্বারাও সমর্থন করা হয়েছে। আল-নাওয়াবী বলেছেন: "এই মতের প্রমাণ শক্তিশালী এবং এটি পছন্দের দৃষ্টিভঙ্গি।"

আমরা যদিও কাফেরদের স্ট্যান্ডার্ড, আইডিওলজিতে বিশ্বাসী না, তাদের মতাদর্শ, দর্শনের ভিত্তিতে ভালো খারাপ নির্ণয় করি না তবুও তাদের স্ট্যান্ডার্ড অনুসারেই দেখার চেষ্টা করি  ইসলামের এই বিধানটি কতটুকু সঠিক বা বেঠিক।

ওরাল বলেন, বা এনাল বলেন বা মামমারি যেটাই চিন্তা করেন না কেন কোনোটাই কিন্তু কাফেরদের দৃষ্টিতে অবৈধ হওয়ার কোন কারণ রাখে না। তাদের মতে এগুলোর কোনোটাতেই ক্ষতিকর কিছু নেই, বিকৃতির কিছু নেই, অনৈতিক কিছুও নেই। যদিও এনাল নিয়ে কিছু নেগেটিব রিসার্চও পাওয়া যায় তবুও এটা কোন সেক্যুলার কান্ট্রিতেই আমার জানা মতে অন্যায় নয়।

রাসূল (সা) কি এই তিনটার একটাও করেছে বা এসব বৈধ সরাসরি আদেশ করেছেন? না, এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং পায়ুপথে সহবাস করার উপর জমহুর ওলামা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন বহু হাদিসের ভিত্তিতে যা মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত। [আবু দাউদ ৩৯০৪; তিরমিযি ১৩৫, ১১৬৫; আবু দাউদ ২১৬২; ইবনু মাজাহ ১৯২৪; দারেমী ১১৪০; সিলসিলা ছহীহাহ ৩৩৭৭-৩৩৭৮; সুনানুল কুবরা, ছহীহাহ ৮৭৩; ছহীহুল জামে‘ ১৯২১; আল মুগনী ৭/৩৩২; যাদুল মাআদ ৪/২৬১; শরহু মাআনিল আসার ৩/৪৩; আললিকা আশশাহরী ১৪/৫৯] মুখমৈথনকেও বহু আলেমই মাকরুহ সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু তারপরও ইসলামে যদি এই বিধান থাকতো তাহলে কি কাফেরদের দৃষ্টিতে খারাপ কিছু হত? হতো না ঠিক কিন্তু হয়তো এমন কিছু যদি থাকতো তাহলে এতদিনে কাফেরদের এই এখন যে মতবাদ বা আদর্শ তা ভিন্ন হয়ে যেত ও ইসলামের বিরোধিতা করার জন্য সেই মত প্রচার প্রসার করা হত যা ইসলামের বিরুদ্ধে যেতে পারে। এটাই হয়ে আসছে এতদিন যাবত।

যাইহোক হাদিসে হায়েজের সময় মিলনের যে বিধান রয়েছে কাপড়ের উপর দিয়ে সেটা হল মূলত Frotteurism.

এখন প্রথমত রাসূল (সা) উনার কোন স্ত্রী আপত্তি জানালে তাদেরকে জোর করবেন এমন চরিত্রের ছিলেন না, আমরা বেশ কয়েকটি হাদিসেই দেখেছি যেখানে তিনি নিজের বিয়ে নতুন করা স্ত্রীকে যেতে দিয়েছেন যারা উনার কাছে আসতে চায় নি। ২য়ত এই এই বিধানে স্ত্রী যৌনিতে প্রবেশের দ্বারা সরাসরি সহবাস করা হয় না যা স্বাভাবিক ভাবে আমরা বুঝি সেহেতু কোরআনের আয়াতের বিরোধিতা হল না যার ধরুন স্ত্রীর কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনাটাও থাকলো না।

তাহলে এখন সকলের কাছে প্রশ্ন এই বিধান নিয়ে কীসের ভিত্তিতে কি কারণে উলটা পালটা আপত্তি তোলা হয়? নিজের নফসকে বা হৃদয়কে ভিত্তি করে? সবার নফস ও হৃদয়তো আর এক না, তাহলে?

নীতি নৈতিকতা, ভালো মন্দের মানদণ্ড কি, সেটার ভিত্তিতে কি করে এই বিধান নিয়ে আপত্তি তোলা হয় তা নিয়ে যদি প্রশ্ন তুলি তাহলেতো এই প্রশ্নের অস্তিত্বও পাওয়া যাবে না। তবুও বিষয়টা বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় এত লম্বা আলোচনা টেনেছি, শুধু মোরালিটির কনসেপ্টটা টেনে চুপ না থেকে।

আল্লাহই ভালো জানেন।

Tahsin Arafat Staff answered 1 week ago
মহিলাদের মাসিক অবস্থায় শুধুমাত্র ভ্যাজাইনাল এন্ট্রান্স নিষিদ্ধ। এ ছাড়া বাকিভাবে স্বামী নিজের চাহিদা পূরণ করে নিবে স্ত্রীর কাছ থেকে।
Back to top button