বিবেকানন্দের চোখে ‘ম্যাক্স মুলার’
বর্তমান প্রোটেস্টেন্ট হিন্দুদের একটি সাধারণ অভিযোগ হল মুসলিমরা বেদ উদ্ধৃত করার সময় ম্যাক্স মুলার এবং রাল্ফ গ্রিফিথের অনুবাদ ব্যবহার করে। হিন্দুত্ববাদীরা এই পণ্ডিতদের এবং তাদের অনুবাদকে ‘খ্রিস্টান এজেন্ট’, ‘প্রতারক’, ‘ভুয়া অনুবাদ’, ‘পক্ষপাতদুষ্ট ইন্দোলজিস্ট’, ‘ম্লেচ্ছ’ ইত্যাদি উপাধি দেয়।
মুলার এবং গ্রিফিথের উপর তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি তাদের নিজের স্বামী বিবেকানন্দের মাধ্যমে তাদের জন্ডিসযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি খণ্ডন করব যিনি ম্যাক্স মুলারকে সায়ানা আচার্যের (চার বেদের ভাষ্যকার) পুনর্জন্ম বলে অভিহিত করেছেন।
“বেদবেদান্তসিদ্ধ পন্ডিত এদেশে দেখা যায় না!”[1]স্বামী বিবেকানন্দ বাণী ও রচনাবলি ৯/৩৯-৪০ https://archive.org/details/dli.bengal.10689.19919/page/n51/mode/2up
এ কথার অর্থ কি হিন্দু ভাইয়েরা বলতে পারবেন?
“ম্যাক্সমুলর নিজেই ভূমিকায় লিখেছেন যে, তিনি ২৫ বৎসর কাল কেবল Manuscript (পাণ্ডুলিপি) লিখেছেন ; তারপর ছাপাতে ২০ বৎসর লেগেছে! ৪৫ বৎসর একখানা বই নিয়ে এইরূপ লেগে পড়ে থাকা সামান্য মানুষের কাজ নয়। এতেই বোঝ ; সাধে কি আর বলি তিনি সায়ন!”[2]স্বামী বিবেকানন্দ বাণী ও রচনাবলি ৯/৩৯-৪০ https://archive.org/details/dli.bengal.10689.19919/page/n51/mode/2up
উপরের কথাগুলো থেকে যা বুঝা গেল :
- ম্যাক্স মুলারের মত একজন বেদের পন্ডিত ভারতবর্ষে দেখা যেত না! অর্থাৎ ম্যাক্স মুলার বেদের পন্ডিত ; স্বামী বিবেকানন্দ এটা বলেছেন
- তিনি ৪৫ বৎসর একটি বই নিয়ে পড়ে থেকেছেন। এই দুইটি গুণ সায়নাচার্যের মধ্যেও আছে। যার জন্য স্বামী বিবেকানন্দ ম্যাক্স মুলারকে সায়নাচার্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এখনও কি হিন্দু ভাইয়েরা সায়ন আচার্য এবং ম্যাক্স মুলারের অনুবাদকে অস্বীকার করবেন? আপনারা স্বামীজির থেকেও বেদ বেশি বুঝেন?
স্বামী বিবেকানন্দ ম্যাক্স মুলারের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেন!
“অধ্যাপক ম্যাক্সমুলার একজন অসাধারণ ব্যক্তি।আমি দিন কয়েক পূর্বে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে গিয়েছিলাম।প্রকৃতপক্ষে বলা উচিত, আমি তাহার প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদন করিতে গিয়েছিলাম।”[3]স্বামী বিবেকানন্দ বাণী ও রচনাবলি ১০/১৭৭-১৮১ https://archive.org/details/dli.bengal.10689.12379
“যদিও তিনি একজন পৃথিবী আলোড়নকারী পন্ডিত ও দার্শনিক……………..আর ভারতের উপর তাঁহার কি অনুরাগ! যদি আমি সে শতাংশের একাংশও থাকিত,তাহা হইলে আমি ধন্য হইতাম……..ম্যাক্সমুলার একজন ঘোর বৈদান্তিক।”[4]স্বামী বিবেকানন্দ বাণী ও রচনাবলি ১০/১৭৭-১৮১ https://archive.org/details/dli.bengal.10689.12379
“আমি তাঁহাকে বলিয়াছিলাম ‘আপনি কবে ভারতে আসিতেছেন? ভারতবাসীর পূর্বপুরুষগণের চিন্তারাশি আপনি যথার্থভাবে লোকের সমক্ষে প্রকাশ করিয়াছেন,সুতরাং ভারতের সকলেই আপনার শুভাগমনে আনন্দিত হইবে।’ বৃদ্ধ ঋষির মুখ উজ্জ্বল হইয়া উঠিল, তাঁহার নয়নে এক বিন্দু অশ্রু স্ফুরিত হইল, ‘তাহা হইলে আমি আর ফিরিব না ; আমাকে সেখানেই সমাহিত করিতে হইবে।'[5]স্বামী বিবেকানন্দ বাণী ও রচনাবলি ১০/১৭৭-১৮১ https://archive.org/details/dli.bengal.10689.12379
বোঝাই যাচ্ছে ম্যাক্সমুলারের অনেক প্রশংসা করেন।এত প্রশংসার পরও কি হিন্দুরা বলবে মুলার খ্রিষ্টানদের এজেন্ট? এখন আপনারাই বলুন যে বেদের ভুল অনুবাদ করে, তার প্রশংসা কিভাবে স্বামী বিবেকানন্দ করতে পারেন? তাহলে কি তিনি বেদ বুঝতেন না, কিবোর্ড গুরুদের কাছে শিখতে হবে বেদ?
Footnotes
⇧1, ⇧2 | স্বামী বিবেকানন্দ বাণী ও রচনাবলি ৯/৩৯-৪০ https://archive.org/details/dli.bengal.10689.19919/page/n51/mode/2up |
---|---|
⇧3, ⇧4, ⇧5 | স্বামী বিবেকানন্দ বাণী ও রচনাবলি ১০/১৭৭-১৮১ https://archive.org/details/dli.bengal.10689.12379 |