উম্মে হানি ও মেরাজ বিষয়ক প্রশ্ন

প্রশ্নোত্তর (Q&A)Category: ইসলামউম্মে হানি ও মেরাজ বিষয়ক প্রশ্ন
ভাই, মেরাজ কি সত্যই উম্মে হানির ঘর হইতে হইছিল? কারণ তাফসীরে আবু বকর যাকারিয়ায় সূরা তাওবার ২৮ নাম্বার আয়াতেও অইটাই লিখা আছে অইখানে বোঝানো হইছে সূরা বনি ইসরাইলের ১ নাম্বার আয়াতে মসজিদুল হারাম বলতে শুধু কাবার চত্ব্রকে বোঝানো হয়নাই বরঞ্চ ইবরাহীম আ কর্তৃক নির্ধারিত সীমানাকেই বুঝানো হইছে এবং উম্মে হানির ঘরও কাবার আঙিনার মধ্যেই ছিল। ভাই আমি জানি উম্মে হানির বর্ণনা গুলায় ভেজাল আছে এবং এগুলা ত্রুটিপূর্ণ কিন্তু যেহেতু ইবনে হাজার আসকালানী, সালেহ আল মুনাজ্জিদ ও ড আবু বকর যাকারিয়ার মতন সহীহ আকিদার আলেমগণ এই হাদিস সমূহ হইতে দলিল দেন যে উম্মে হানির ঘরেই তিনি ছিলেন তখন কতিপয় প্রশ্ন আসলেই উত্থাপিত হয়। প্রথমত তাইলে তো কাফের মুশরিকদের কথা সত্য হয়, রাসূল সা নিজের স্ত্রী সাওদা রা থাকা স্বত্তেও কেন উম্মে হানির ঘরে কেন ছিলেন?, দ্বিতীয়ত, বর্ননা গুলা দেখা যায় হাবশী দাসীও উম্মে হানির ঘরে ছিল,  কিন্তু এখানে ইসলাম বিরোধীরা বলতে চাইবে দাসীর কথিত অপকর্ম ফাস করার সাহস ছিল না তৃতীয়ত সহীহ কতিপয় হাদিসেও আসছে রাসুলুল্লাহ একটা ঘরেই শুয়ে ছিলেন যেটার ছাদ খুলে গিয়েছিল আবার সহীহ হাদিসেই আছে রাসূলুল্লাহ হাতিমে শুয়েছিলেন। ইবনে হাজার আসকালানীও এই হাদিস সমূহের সমন্বয়ে বলেছেন রাসূলুল্লাহ প্রথমত উম্মে হানির কক্ষেই ছিলেন। তাইলে ভাই একটু বলুন আমরা কিভাবে বিষয়টা দেখতে পারি? তৃতীয়ত এংগেল টানা হয়, রাসূলুল্লাহ খাদিজা রা কে বিবাহ করবার আগে উম্মে হানিকে বিবাহ প্রস্তাব দিয়েছিলেন যেটা তার চাচা আবু বকর তিনি আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল না হওয়াতে নাকচ করে দেন, তিনি হিজরতের পরেও প্রস্তাব দিয়েছিলেন যার জন্য তিনি সূরা আহযাবের 50 নাম্বার আয়াত রচনা করেন (নাউযুবিল্লাহ)।  এখন ভাই কাইন্ডলি যদি বিষয়গুলা দেখতেন ভাল হইত। 
1 Answers
Ashraful Nafiz Staff answered 7 months ago

উম্মে হানির গৃহ হতে মেরাজ করার হাদিস এটা যে সহিহ নয়, সহিহ, হাসানতো তো দূরের কথা নরমাল যয়িফও নয় বরং এটা যে অতিরিক্ত দূর্বল তা প্রমানিত [https://response-to-anti-islam.com/show/মিরাজের-ঘটনায়-রাসুল(ﷺ)-ও-উম্মে-হানী(রা.)-এর-উপর-ইসলামবিরোধীদের-নোংরা-অপবাদের-জবাব-/222 ; https://islamqa.info/ar/answers/306287/]
এখন প্রশ্ন হল কেন অনেকে অতিরিক্ত দূর্বল হওয়া সত্ত্বেও এইটাকে নিজের কিতাবে উল্লেখ করেছেন ও অনেকে একে ঐতিহাসিক সত্য ঘটনা হিসেবে মনে করেন।

এর প্রথমত একটা কারন হল মেরাজ সুনির্দিষ্ট কোথা থেকে হয়েছে এই বিষয়ে একটাও গ্রহনযোগ্য হাদিস নেই। কোন হাদিসে বিস্তারিত ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় নেই। ২য় এই কারনে কিছু ওলামা যেমন সম্ভবত সর্বপ্রথম ৮ শত হিজরিতে ইবনে হাজার আসকালানী (রহ) এই বিষয়ে সবগুলো হাদিসকে একত্র করে সমন্বয় করার চেষ্টা করেছেন। [https://response-to-anti-islam.com/show/মিরাজের-যাত্রা-শুরুর-স্থান-নিয়ে-হাদিসে-কি-স্ববিরোধিতা-আছে--/220]

এটার উপর ভিত্তি করেই মূলত অনেকে উম্মে হানির ঘটনাকেও গ্রহনযোগ্য মনে করা শুরু করে। কিন্তু ৮০০ হিজরির পূর্বে কেউ এই কাজ করেছিল কিনা আমার জানা নেই। যারাই এই ঘটনাকে সত্য মনে করে বা এটাকে দলিল হিসেবে নেয় বিশেষ করে সমন্বয়টার ভিত্তিতে তারা বেশির ভাগই ৮শত হিজড়ির পরের সময়কার মানুষ। সম্ভবনার উপর সমন্বয় করার চেষ্টা করতেই পারে, কিন্তু তার মানে এই না যে এটা সত্য হয়ে গেল। বরং ৮শত হিজরির আগের ও পরের অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামদের মতে মসজিদুল হারাম হতে মিরাজ হয়েছিল এটাই বিশুদ্ধ মত, তাদের কিতাবাতিদে উনারা মসজিদুল হারাম হতে মিরাজ হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন বার বার। উম্মে হানির গৃহ হতে মিরাজ হয়েছিল এই মতকে ৮শত হিজড়ির আগে খুব একটা কেউ গ্রহন করেছেন বলে আমি খুজে পাইনি।

তারপরও যারা সমন্বয় করা বিষয়টাকেও গ্রহনযোগ্য মনে করেন তাদের মতে এটা হতেই পারে। কারন রাসূল নিজের চাচা বা চাচাতো বোনের বাসায় থাকলে তা অস্বাভাবিক কিছুই না কারন এটা বর্তমান কালচারেও নিজেদের কাজির ভাই বোনদের বাসায় ঘুরতে যাওয়া স্বাভাবিক, এছাড়া তারা দুজনই ছোট বেলা থেকে এক সাথেই বড় হয়েছিলেন, আবার হাদিস হতেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে উম্মে হানির ঘরে রাসূল উম্মে হানির সাথে রাসূল একা ছিলেন না, হাদিস হতে এও স্পষ্ট তিনি যে উম্মে হানির গৃহে ছিলেন তা অন্য লোকেরাও জানতো এবং তিনি যে লুকিয়ে উম্মে হানির গৃহে ছিলেন না তা স্পষ্টই, এমনিতেই হাদিস দূর্বল আবার উম্মে হানির গৃহে আরো লোকজনও ছিল হাদিস মোতাবেক সেহেতু রাসূলের সাথে উনার স্ত্রী থাকলেও থাকতে পারে কারন হাদিসে রাসূলের স্ত্রী ছিল না বা রাসূল একা ছিলেন এমন কিন্তু বলা হয় নি, আবার রাসূলের মেরাজের ঘটনা সত্য ও নবূয়তের প্রমানও যে রাসূল দিয়েছিলেন সেটাও হাদিসের শেষের দিকে পাওয়া যায়। হাদিস সত্য হলেও এই গুলো বিবেচনায় আনলে স্পষ্টতই প্রমানিত হয় নাস্তিকদের প্রচার কোন কিছুরই আসলে ভিত্তি নেই।

আপনি একটা কথা বলেছেন “সূরা বনি ইসরাইলের ১ নাম্বার আয়াতে মসজিদুল হারাম বলতে শুধু কাবার চত্ব্রকে বোঝানো হয়নাই বরঞ্চ ইবরাহীম আ কর্তৃক নির্ধারিত সীমানাকেই বুঝানো হইছে এবং উম্মে হানির ঘরও কাবার আঙিনার মধ্যেই ছিল।” এই যে কথাটি বললেন তা আপনি যদি শুধু আয়াতের উপর নির্ভর করে এই দাবিটি করেন তাহলে তা আপনার ভুল। কারন অধিকাংশ মুফাস্সিরগন এই জাতীয় তাফসির করেন নি। [https://tafsir.app/17/1] আগের অল্প সল্প যারা উম্মে হানির হাদিসটিকে গ্রহন করেছিল তারা সম্ভবত আপনি যা বলেছেন সেই জাতীয় একটি ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছিল কোরআনের আয়াতের সাথে হাদিসটিকে খাপে খাপ করে মিলানোর জন্য। তাই কোরআনের আয়াতে মুসজিদুল হারাম বলতে কতটুকু বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে একটা মতভেদ সৃষ্টি হয়েছিল।

যাইহোক যারা এই সমন্বয় করা ঘটনাকে গ্রহন করে তাদের যুক্তি যতই ভালো, সুন্দর, যৌক্তিক হোক না কেন, আমাদের কাছে এটা গ্রহনযোগ্য নয়, এই ঘটনা কোন মতেই সত্য বলে গ্রহন করার উপযুক্ত নয়। কারন ১. হাদিস জয়িফ জিদ্দান ২. এই হাদিস উম্মে হানির মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহন করার ঐতিহাসিক সত্য ঘটনার সরাসরি বিরুদ্ধে যায়। [https://bn.wikipedia.org/wiki/উম্মে_হানি_বিনতে_আবি_তালিব#মক্কা_বিজয়ের_দিন_ও_ইসলাম_গ্রহণ ; https://en.wikipedia.org/wiki/Fakhitah_bint_Abi_Talib#Conversion_to_Islam]

এছাড়া উম্মে হানিকে বিয়ে করার প্রস্তাবের যে কথাটা বললেন তা সত্য, কিন্তু বিয়ে করার প্রস্তাব মক্কা বিজয়ের পর দেওয়ার ঘটনা সত্য, অনেকে দাবি করে নবুয়ত পাওয়ার আগেও নাকি রাসূল প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তাদের এই দাবির পক্ষের হাদিসটি সহিহ নয়। [https://at-tahreek.com/article_details/3040]

আরো পড়তে পারেন - https://azabulhaque.com/রাসুল-সাঃ-এবং-হযরত-উম্মে-হ/

Back to top button