যজুর্বেদ ২৯/১৯ – দয়ানন্দের জালিয়াতি

প্রোটেস্টেন্ট ধারার হিন্দুরা নিজেদের মতের পক্ষে নেওয়ার জন্য হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর অর্থের বিকৃতি করে থাকে, আজ আমরা তেমনই একটি নমুনা দেখতে চলেছি। আমরা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর একটি বিকৃতি দেখবো। তা হলো যজুর্বেদঃ ২৯.১৯। মন্ত্রটির সংস্কৃত হচ্ছে নিম্নরূপঃ

অনুত্বা রথোऽঅনু মর্য়োऽঅর্বন্ননু গাবোऽনু ভগঃ কনীনাম্ ।
অনু ব্রাতাসস্তব সখ্যমীয়ুরনু দেবা মমিরে বীর্য়ং তে ॥ ১ঌ ॥

হিন্দুধর্মের প্রোটেস্টেন্ট ধারার আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী এ মন্ত্রের ভাষ্য করতে গিয়েও বিকৃত সাধন করেছে আসুন দেখি। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর বিকৃত ভাষ্যঃ

পদার্থঃ- হে (অর্বন্) অশ্বতুল্য বর্ত্তমান বিদ্বন্ ! (তে) আপনার (কনীনাম্) শোভায়মান মনুষ্যদিগের মধ্যে বর্ত্তমান (দেবাঃ) বিদ্বান্ (ব্রাতাসঃ) মনুষ্য (অনু, বীর্য়ম্) বল-পরাক্রমের অনুকূল (অনু, মমিরে) অনুমান করিবে এবং (তব) আপনার (সখ্যম্) মিত্রতাকে (অনু, ঈয়ুঃ) অনুকূল প্রাপ্ত হউক (ত্বা) আপনার (অনু) অনুকূল (রথঃ) বিমানাদি যান (ত্বা) আপনার (অনু) অনুকূল বা পিছনে আশ্রিত (মর্য়ঃ) সাধারণ মনুষ্য (ত্বা) আপনার (অনু) অনুকূল বা পিছনে (গাবঃ) গাভি এবং (ত্বা) আপনার (অনু) অনুকূল (ভগঃ) ঐশ্বর্য্য হইবে ॥ ১ঌ ॥

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী উক্ত মন্ত্রের যে শব্দ বিকৃত করেছে তাহলো (দেবাঃ) শব্দ। কারন তিনি (দেবাঃ) শব্দের অর্থ করেছে, বিদ্বান, যা কিনা হিন্দুধর্মীয় গ্রন্থ নিরুক্ত বিরোধী ও সাথে সাথে অন্য আর্যসমাজেরই আরো কিছু ব্যক্তির ভাষ্য বিরোধী। কারন নিরুক্ত কোথায় (দেবাঃ) মানে বিদ্বান অর্থ করে নাই এ অর্থ স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর নিজের পক্ষ থেকে আমদানি করা। তো আসুন আমরা দেখবো নিরুক্ত (দেবাঃ) অর্থ কি করেছেঃ

  1. দেবঃ মানে দ্যুতিমান।[1]নিরুক্তঃ ১.২.১.২৬.১
  2. দেবঃ মানে স্বয়ং দেবতা।[2]নিরুক্তঃ ১.২.১.২৬.৫, নিরুক্তঃ ২.৪.১৯.১, নিরুক্তঃ ২.৫.৪.১৫, নিরুক্তঃ ৩.৬.৮.১৯, নিরুক্তঃ ৩.৬.৮.২০, নিরুক্তঃ ৩.৬.২৮.১৩, নিরুক্তঃ ৩.৬.৩১.১

দেখুন আমরা উপরে (দেবঃ) এর দুইটি অর্থ পেলাম। আর উক্ত দুইটি অর্থের মধ্যে (দেবাঃ) মানে দেবতা এটাই সব চাইতে বেশি এসেছে নিরুক্তে । কিন্তু স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী যে ভাষ্য করেছে (দেবাঃ) এর তাহলো, বিদ্বান, তা তার নিজের বানানো অর্থ। আর দুঃখের সাথে বলতেই হয় আমরা নিরুক্ত ঘেটে কোথায় (দেবাঃ) মানে, বিদ্বান, অর্থ পেলাম না। তবে হ্যা যজুর্বেদঃ ২৯.১৯ এর (দেবাঃ) শব্দের সঠিক ভাষ্য প্রদান করেছে ক্লাসিক্যাল হিন্দু পণ্ডিতরা। আচার্য সায়ন সরাসরি (দেবাঃ) মানে দেবতা করেছে দেখুনঃ

হে অশ্ব রথ সেবক মনুষ্য ইত্যাদি, গাভী এবং কন্যাগণের সৌভাগ্য সব তোমারই পশ্চাতে অনুবর্তন করে। মনুষ্যগণের সঙ্ঘ তোমারই মিত্রতা আকাঙ্ক্ষা করে। দেবতাগণও তোমার বীর্য ও বলের অনুমান করে।[3]যজুর্বেদঃ ২৯.১৯, অনুবাদকঃ শ্রীদূর্গাদাস লাহিড়ী

বিজনবিহারী গোস্বামীর অনুবাদঃ[4]শুক্ল ও কৃষ্ণযজুর্বেদ সংহিতা, পৃ ২১২

যজুর্বেদ ২৯/১৯ - দয়ানন্দের জালিয়াতি

তো দেখুন আমনা সুস্পষ্ট ভাবে দেখতে পেলাম আচার্য সায়ন সরাসরি (দেবাঃ) মানে দেবতা করেছে কিন্তু স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী বিকৃতির মাধ্যমে (দেবাঃ) কে বানিয়ে দিয়েছে বিদ্বান মনুষ্য।

আরেক জন আর্যসমাজী পণ্ডিত জয়দেব শর্মা তার নিজের ভাষ্যে (দেবাঃ) এর অর্থ করেছেন “देवगण” মানে দেবগন।

এখানে মূলত অশ্বমেধ যজ্ঞের কথা বলা হচ্ছে যেখানে বলি দেওয়া ঘোড়ার গুণগান গাওয়া হচ্ছে, যা ধামাচাপা দিতে আর্যসমাজীদের প্রচেষ্টা নতুন নয়।

Footnotes

Footnotes
1 নিরুক্তঃ ১.২.১.২৬.১
2 নিরুক্তঃ ১.২.১.২৬.৫, নিরুক্তঃ ২.৪.১৯.১, নিরুক্তঃ ২.৫.৪.১৫, নিরুক্তঃ ৩.৬.৮.১৯, নিরুক্তঃ ৩.৬.৮.২০, নিরুক্তঃ ৩.৬.২৮.১৩, নিরুক্তঃ ৩.৬.৩১.১
3 যজুর্বেদঃ ২৯.১৯, অনুবাদকঃ শ্রীদূর্গাদাস লাহিড়ী
4 শুক্ল ও কৃষ্ণযজুর্বেদ সংহিতা, পৃ ২১২
Exit mobile version