নবুয়্যতের আগে মুহাম্মদ ﷺ কি অন্য ধর্মে ছিলেন?

সকল নবী-রাসূলই নিষ্পাপ, কবিরা গুনাহ থেকে মুক্ত

অমুসলিম প্রোপাগ্যান্ডিস্টদের দাবি নবুয়্যতের আগে নাকি মুহাম্মাদ (সাঃ) মুশরিক/পৌত্তলিক ছিলেন (নাউযুবিল্লাহ)। আসুন তো দেখি!

রাসুল(ﷺ) ছিলেন ইসমাইল(আঃ) এর বংশধর। তিনি ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রচারিত শরিয়তের দ্বীন ইসলামই পালন করতেন। তিনি জীবনে কখনো মূর্তিপূজা করেননি এমনকি মূর্তি স্পর্শও করেননি। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম, তিনি শৈশব থেকেই মূর্তি ঘৃণা করতেন। এক আল্লাহকেই চিনতেন। বিদ্বানগণ এ বিষয়ে একমত যে[1]আরও পড়ুনঃ ইসলামকিউএ প্রশ্নোত্তর নং ৭২০৮, শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ

https://islamqa.info/en/answers/7208/did-the-prophet-peace-and-blessings-of-allaah-be-upon-him-commit-sin
, সকল নবীই নিষ্পাপ ছিলেন। আর শেষনবী মুহাম্মাদ(ﷺ) নবী হওয়ার আগে ও পরে যাবতীয় কুফরী থেকে এবং অহী প্রাপ্তির পরে কবীরা গোনাহের সংকল্প থেকেও নিষ্পাপ ছিলেন। ইচ্ছাকৃতভাবে ছগীরা গোনাহ জায়েয ছিল। তাঁদের এই বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, কুফরী ও কবীরা গোনাহ থেকে তিনি নবুঅত লাভের আগে হ’তেই নিষ্পাপ ছিলেন। যেমনঃ

প্রথম থেকেই ইব্রাহিম (আঃ) এর মতো হজ্ব করতেন

তিনি কুরায়েশদের নিয়ম অনুযায়ী হজ্জের সময় কখনো তাদের সাথে মুযদালিফায় অবস্থান করেননি।[2]জাহেলী যুগে হজ্জ্বকে বিকৃত করা হয়েছিলো। কুরাইশরা যেহেতু উচ্চমর্যাদার ছিলো, তাই তারা অন্য সবার মতো আরাফাহর ময়দানে যেতো না। সংক্ষিপ্তভাবে মুযদালিফায় … See Full Note বরং অন্যদের সাথে আরাফাতে অবস্থান করতেন। তাঁকে সেখানে দেখে একবার জুবায়ের বিন মুত্ব‘ইম আশ্চর্য হয়ে বলে উঠেছিলেন, وَاللهِ مِنَ الْحُمْسِ فَمَا شَأْنُهُ هَا هُنَا ‘আল্লাহর কসম! এ তো হুম্স-দের সন্তান। তার কি হয়েছে যে, সে এখানে অবস্থান করছে?[3]জুবাইর ইবনু মুত‘য়িম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার একটি উট হারিয়ে ‘আরাফার দিনে তা তালাশ করতে লাগলাম। তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম … See Full Note

কখনো মূর্তি স্পর্শ করেন নি

তিনি কখনো মূর্তি স্পর্শ করেননি। একবার তিনি স্বীয় মুক্তদাস যায়েদ বিন হারেছাহকে নিয়ে কা‘বাগৃহ তাওয়াফ করছিলেন। সে সময় যায়েদ মূর্তিকে স্পর্শ করলে তিনি তাকে নিষেধ করেন। দ্বিতীয়বার যায়েদ আরেকটি মূর্তিকে স্পর্শ করেন বিষয়টির নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। তিনি পুনরায় তাকে নিষেধ করেন। এরপর থেকে নবুঅত লাভের আগ পর্যন্ত যায়েদ কখনো মূর্তি স্পর্শ করেননি। তিনি কসম করে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কখনোই মূর্তি স্পর্শ করেননি। অবশেষে আল্লাহ তাকে অহী প্রেরণের মাধ্যমে সম্মানিত করেন।[4]ত্বাবারানী কাবীর হা/৪৬৬৮; হাকেম হা/৪৯৫৬, ৩/২১৬; সনদ ছহীহ

একমাত্র আল্লাহর নামে যবেহকৃত প্রাণীর গোশত খেতেন

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনোই মূর্তির উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত পশুর গোশত কিংবা যার উপরে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, এমন কোন গোশত ভক্ষণ করেননি।

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘বালদাহ’র নিম্নাঞ্চলে যায়দ ইবনু ‘আমর ইবনু নবীাইলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এটি ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অহী অবতীর্ণ হবার পূর্বের ঘটনা। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দস্তরখান বিছানো হল। তাতে গোশত ছিল। তখন যায়দ ইবনু ‘আমর তা থেকে খেতে অস্বীকার করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের দেব-দেবীর নামে যা যবহ কর, তা থেকে আমি খাই না। আমি কেবল খাই যা আল্লাহর নামে যবহ করা হয়েছে।[5]সহিহুল বুখারী ৫৪৯৯

নবুয়্যতের আগেই আব্রুর ইজ্জত

কা‘বা পুনর্নির্মাণ কালে দূর থেকে পাথর বহন করে আনার সময় চাচা আববাসের প্রস্তাবক্রমে তিনি কাপড় খুলে ঘাড়ে রাখেন। ফলে তিনি সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। অতঃপর হুঁশ ফিরলে তিনি পাজামা কঠিনভাবে বেঁধে দিতে বলেন’।[6]সহিহুল বুখারী ৩৬৪, ৩৮২৯; সহিহুল মুসলিম (৩/১৯) হা/340b[7]জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কা‘বা ঘর পুনর্নির্মাণের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আব্বাস (রাঃ) পাথর বহন করছিলেন। … See Full Note[8]জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কা’বা গৃহ পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছিল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আব্বাস  (রাঃ) পাথর … See Full Note যদিও বিষয়টি সে যুগে সে যুগের মানুষদের জন্য কোনো লজ্জাকর বিষয় ছিল না। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) উক্ত হাদীছের আলোচনায় বলেন, ‘এতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ স্বীয় নবী-কে নবুঅতের পূর্বে ও পরে সকল মন্দ কর্ম থেকে হেফাযত করেন’।[9]বুখারী ফাতহসহ হা/৩৬৪-এ ইবনে হাজার (রহঃ) এর-আলোচনা দ্রষ্টব্য।

নবুয়্যত

তাঁর বয়স ৪০ হওয়ার পূর্বে কিছু বিশেষ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হল। তিনি একাকী হেরা গুহায় গভীর ধ্যানে নিমগ্ন থাকতে শুরু করেন অবশেষে ৪০ বছর বয়সে সর্ব প্রথম ওহী প্রাপ্ত হন এবং নবুয়তী জীবন শুরু করেন।[10]ড. আকরাম যিয়া উমারী, সীরাহ নববিইয়াহ ছহীহাহ ১/১১৪-১৭[11]আমরা প্রচলিতভাবে যে ধ্যান বুঝি সেটা নয়। তিনি হেরা গুহায় ইতিকা’ফ করতেন। – বুখারী ৪৯২২-৪৯২৪; আল লুলু ওয়াল মারজান ১০০-১০১। সেখানে ইবাদত করতেন। – … See Full Note

আশা করি এটাই সুস্পষ্ট হয়েছে যে – নবুয়তের পূর্বেও রাসুল (ﷺ) আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের উপরেই ছিলেন; তিনি সে সময় সেই সব নির্দেশনাই পালন করতেন যা পূর্ববর্তী নবী-রাসুলগন আদিষ্ট হয়েছিলেন।

Source
নয়ন চৌধুরীর লেখা (Response-to-anti-islam থেকে)

Footnotes

Footnotes
1 আরও পড়ুনঃ ইসলামকিউএ প্রশ্নোত্তর নং ৭২০৮, শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ

https://islamqa.info/en/answers/7208/did-the-prophet-peace-and-blessings-of-allaah-be-upon-him-commit-sin

2 জাহেলী যুগে হজ্জ্বকে বিকৃত করা হয়েছিলো। কুরাইশরা যেহেতু উচ্চমর্যাদার ছিলো, তাই তারা অন্য সবার মতো আরাফাহর ময়দানে যেতো না। সংক্ষিপ্তভাবে মুযদালিফায় অবস্থান করতো।

এ সম্পর্কে সহিহুল বুখারী ১৬৬৪ এবং ১৬৬৫ দেখা যেতে পারে

3 জুবাইর ইবনু মুত‘য়িম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার একটি উট হারিয়ে ‘আরাফার দিনে তা তালাশ করতে লাগলাম। তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ‘আরাফায় উকূফ করতে দেখলাম এবং বললাম, আল্লাহর কসম! তিনি তো কুরায়শ বংশীয়। এখানে তিনি কী করছেন?

সহিহুল বুখারী (তাওহীদ পাব্লিকেশন্স) হা/১৬৬৪; সহিহুল মুসলিম (১৫/২১) হা/১২২০; সহিহুল বুখারী ১৬৬৫ ও দেখুন

4 ত্বাবারানী কাবীর হা/৪৬৬৮; হাকেম হা/৪৯৫৬, ৩/২১৬; সনদ ছহীহ
5 সহিহুল বুখারী ৫৪৯৯
6 সহিহুল বুখারী ৩৬৪, ৩৮২৯; সহিহুল মুসলিম (৩/১৯) হা/340b
7 জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কা‘বা ঘর পুনর্নির্মাণের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আব্বাস (রাঃ) পাথর বহন করছিলেন। ‘আব্বাস (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, তোমার লুঙ্গিটি কাঁধের ওপর দিয়ে নাও। তিনি তা করলে মাটিতে পড়ে গেলেন এবং তাঁর উভয় চোখ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল। তখন তিনি বললেনঃ আমার লুঙ্গি দাও এবং তা বেঁধে নিলেন।

সহিহুল বুখারী ১৫৮২

8 জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কা’বা গৃহ পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছিল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আব্বাস  (রাঃ) পাথর বয়ে আনছিলেন। ‘আব্বাস (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, তোমার লুঙ্গিটি কাঁধের উপর রাখ, পাথরের ঘর্ষণ হতে তোমাকে রক্ষা করবে। (লুঙ্গি খুলতেই) তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। তাঁর চোখ দু’টি আকাশের দিকে নিবিষ্ট ছিল। তাঁর চেতনা ফিরে এল, তখন তিনি বলতে লাগলেন, আমার লুঙ্গি, আমার লুঙ্গি। তৎক্ষণাৎ তাঁর লুঙ্গি পরিয়ে দেয়া হল।

৩৮২৯, সহিহুল মুসলিম 340a

9 বুখারী ফাতহসহ হা/৩৬৪-এ ইবনে হাজার (রহঃ) এর-আলোচনা দ্রষ্টব্য।
10 ড. আকরাম যিয়া উমারী, সীরাহ নববিইয়াহ ছহীহাহ ১/১১৪-১৭
11 আমরা প্রচলিতভাবে যে ধ্যান বুঝি সেটা নয়। তিনি হেরা গুহায় ইতিকা’ফ করতেন। – বুখারী ৪৯২২-৪৯২৪; আল লুলু ওয়াল মারজান ১০০-১০১।

সেখানে ইবাদত করতেন। – বুখারী ৪৯৫৩

Exit mobile version