বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

গত পোস্টে আমরা আলোচনা করেছিলাম হিন্দুধর্মগ্রন্থ ও লজিক্যালি বেদগ্রন্থ গুলো কে রচনা করতে পারে। আজকের আর্টিকেলটি পড়ার আগে সেই লেখাটি অবশ্যই পড়ে নেবেনঃ

হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে অল্পসংখ্যক লোক দাবি করে বেদ আগের মতোই এবং সংরক্ষিত আছে। আমরা আজকে মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশের করুণ দিক বিবেচনা করে বেদের পাঠ্যগত বিকৃতি নিয়ে আলোচনা করবো।

বর্তমানে হিন্দুসমাজে প্রচলিত বেদ সংহিতা[1]সংহিতা (সংস্কৃত: संहिता, saṁhitā) (আক্ষরিক অর্থে, “একত্রিত, মিলিত, যুক্ত” এবং “নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও নিয়ম অনুসারে একত্রিত গ্রন্থ বা মন্ত্র-সংকলন). … See Full Note চারটিঃ ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ এবং সামবেদ।

Contents Hide
4 বেদের বিকৃতি

বেদ কি অবিকৃত?

বেদ কি অবিকৃত হিসাবে প্রমাণিত? যারা বেদকে অবিকৃত দাবি করে তারা কি প্রমাণ করে দিয়েছে যে বেদ অবিকৃত? এর উত্তর হলো – না। হিন্দুদের দাবি অনুযায়ী বেদের মন্ত্র[2]https://bn.m.wikipedia.org/wiki/বৈদিক_স্তোত্র গুলোর রচনার প্রথমদিকে একজন থেকে আরেকজন মুখে মুখে মনে রাখতো, চর্চা করতো তারপর একসময় তা লিখা হয়েছিলো।

মৌখিক ধাপ

হিন্দুদের দাবি অনুসারে এই ধাপে বেদের মন্ত্রগুলো গুরুপরম্পরায় একজন থেকে আরেকজন, জেনারেশন বাই জেনারেশন মুখস্ত রাখতো। টেকনিক্যালি এরকমটা হওয়া অসম্ভব নয়। যেমনটা আমরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও দেখেছি।

কিন্তু আমাদের আজকের আলোচনা মূলত বিকৃতি নিয়ে। তাই এখানে প্রশ্ন রইলো আদৌ কি লিখিত ধাপের আগ পর্যন্ত এই গুরুপরম্পরার মৌখিক ধাপের মাধ্যমে সংরক্ষিত ও অবিকৃত ছিলো?

সেটা কি আদৌ কোনো হিন্দু প্রমাণ করতে পেরেছে? উদাহরণস্বরূপঃ ঋগ্বেদের ১ম মণ্ডলের (book), ১ম সুক্তের (hymn/chapter) ১ম মন্ত্রটি (verse) কি অবিকৃতভাবে আমাদের কাছে এসেছে?

এটাকে অবিকৃত প্রমাণ করার জন্য যা না করলেই নয়ঃ

  1. এই মন্ত্রটি লিখিত হিসেবে সংকলন কে করেছেন?
  2. তিনি কার কাছ থেকে পেয়েছেন,…এবং যিনি রচনা করেছেন সে পর্যন্ত।
  3. আগের ধাপের ব্যক্তিবর্গের আদৌ অস্তিত্ব ছিলো কিনা।
  4. তারা সবাই বিশ্বস্ত কি না? ইত্যাদি। [আমাদের কাছে হওয়ার দরকার নেই, অন্তত হিন্দুদের কাছে বিশ্বস্ত হলেই চলবে। তাতে তাদের কাছে এই ধাপ সঠিক হবে]

মূলত কোনো প্রমাণই নেই যে এই দাবিকৃত গুরুপরম্পরায় (লিখিত হওয়ার আগ পর্যন্ত) বেদ অবিকৃতভাবে সংরক্ষিত হয়েছিলো। এটা নিছক হিন্দুদের ধর্মীয় বিশ্বাস। আর একজন হিন্দুধর্মে অনাস্থাশীলের কাছে এই মৌখিক ধাপের মাধ্যমে বেদগ্রন্থগুলোকে লোককথা ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।

লিখিত ধাপ

বলা হয়ে থাকে, তথাকথিত বৈদিক যুগে (১৫০০-৫০০ খ্রিস্টপূর্বের কোনো এক সময়ে) বেদকে লেখ্যরূপ দেওয়া হয়েছিলো।[3]Joshua J. Mark (2020), The Vedas, World History Encyclopedia https://www.worldhistory.org/The_Vedas/ এডউইন ব্রায়ান্ট দেখিএছেন যে সেটা কোনোভাবেই ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বের আগে হওয়া সম্ভবই না।[4]Bryant, Edwin, ‘The Date of the Veda’, The Quest for the Origins of Vedic Culture: The Indo-Aryan Migration Debate (New York, 2001; online edn, Oxford Academic, 1 Nov. 2003), https://doi.org/10.1093/0195137779.003.0013, accessed 24 Nov. 2022. এই কাল্পনিক বৈদিক যুগ নিয়ে আলোচনা করা যাবে আরেকদিন। আজকে বেদেই থাকি। বেদ কখন লেখা হয়েছিলো সেটা স্বয়ং হিন্দুরাও বলতে পারবে না। উক্ত সংখ্যাগত প্রকাশ মূলত ভাষাভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে গবেষকদের একটি অনুমানমাত্র।

আমরা যদি সেই অনুমানটিকেই সঠিক ধরে নিই, তাহলে লেখার যুগ থেকে এখন পর্যন্ত বেদের কোনো মন্ত্র অবিকৃত ও সংরক্ষিত প্রমাণ করার জন্য যা যা না পেশ করলেই নয়ঃ

  1. বেদের মন্ত্রটি কে লিখেছিলো?
  2. লেখার পর থেকে সেটা কবে কীভাবে কাদের কাছ থেকে সংরক্ষিত ছিলো?
  3. তাদের অস্তিত্ব ছিলো কিনা?
  4. তারা বিশ্বস্ত কিনা?
  5. উক্ত লেখা থেকে কেউ অনুলিপি তৈরি করে থাকলে সেটা কে? কবে? সেটা কাদের মাধ্যমে সংরক্ষিত ছিলো?
  6. সর্বপ্রথম লেখা বেদ থেকে বর্তমানে পাওয়া সর্বপ্রাচীন বেদগ্রন্থের সংরক্ষণ প্রমাণ। ইত্যাদি।

প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো প্রমাণই হাজির করতে পারে নি হিন্দুসমাজ।

উপাত্তের অভাব

২০০৬ সালে ইন্ডিয়ার Bhandarkar Oriental Research Institute থেকে সবচেয়ে পুরনো ঋগ্বেদের পাণ্ডুলিপিগুলোর তথ্য ইউনেস্কোতে পাঠানো হয় রেজিস্ট্রির জন্য। নমিনেশন ফর্মে ভারত থেকে পাঠানো তথ্যেই উল্লেখ আছেঃ[5]Rigvedasamhita, Rigvedasamhita-Padapatha and Rigvedasamhitabhashya, Ref No. 2006-58, Nomination Form, page 2-3 and 7, MEMORY OF THE WORLD REGISTER, UNESCO https://en.unesco.org/memoryoftheworld/registry/530

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

হিন্দুদের দাবি অনুযায়ীই এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে পুরনো ঋগ্বেদের অংশবিশেষ হলো ১৪৬৪ সালের। মাত্র কয়েকশ বছর আগের। এর আগের কোনো বেদগ্রন্থের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। আর যেগুলো পাওয়া গেছে সেগুলো শারদা, দেবনগরী এসব লিপিতে লিখা, যেগুলো মাত্র কয়েকশ বছর পুরনো লিপি। সময়ে সময়ে পরিবর্তন ঘটেছে, বৌদ্ধদের জ্ঞান-বিজ্ঞানও চুরির নমুনা দেখিয়েছে ব্রাহ্মণসমাজ, এই বেদগ্রন্থগুলোতেও সেরকম প্রবেশ করানো অসম্ভব নয়। তো এখন ১৫ শতকের আগে একটি বিশাল এভিডেন্স গ্যাপ থাকার কারণে আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক দিকে না গিয়ে বরং হিন্দুদেরই বিভিন্ন বইপত্র থেকে বেদের বিকৃতির অল্প কিছু নমুনা দেখাবো। তার আগে জেনে নিই, হিন্দু গবেষকরা কী বলছেন।

ক্ষেত্রজ পুত্রদের দাবি হলোঃ এর আগে বেদ পাওয়া যায় না মানে এই না যে এর আগে বেদ ছিলো না। এর আগে বেদ গুরুপরম্পরা-শ্রুতির (মৌখিকভাবে) উপর বেইজ করে চলতো, এটা আমরা এড়িয়ে গেছি। আর আমাদের (এই পোস্টলেখক) ধর্মগ্রন্থও কি এর আগে পাওয়া যায়?

প্রথমত, আমরা উপরে একবারও বলি নি যে ১৪৬৪ সালের আগের কোনো বেদের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ না পাওয়া মানে এর আগে বেদ ছিলো না। আমরা মূলত পোস্ট করছি কালের ব্যবধানে ব্রাহ্মণরা তাদের ধর্মগ্রন্থ বেদে কী কী বিকৃতি ঘটিয়েছে সেটা নিয়ে। প্রাচীন কোনো বেদ থাকলে এখনকার বেদের সাথে লাইন বাই লাইন বিকৃতি দেখানো যেতো। সেজন্য আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক দিকে না গিয়ে বরং প্রধানত হিন্দুধর্মে‌র বিভিন্ন গ্রন্থ ও স্কলারদের মত দিয়ে আজকের পোস্ট লিখছি।

দ্বিতীয়ত, বেদ গুরুপরম্পরার উপর ভিত্তি করে এক জেনারেশন থেকে আরেক জেনারেশনে চলতো। এটা হওয়া অসম্ভব নয়। আর আমরা এটা এড়িয়েও যাই নি। বরং এই পোস্টের প্রথমেই উল্লেখ করেছি। সেই অংশ এড়িয়ে গিয়েই ক্ষেত্রজ পুত্ররা চেরিপিকিং ফ্যালাসি করেছে। আচ্ছা যা হোক, এর কোনো প্রমাণ আছে? আমরা উপরেই প্রমাণ চেয়েছি। সেটা দিক। কিন্তু কথা হলো ১৪৬৪ সালের আগ পর্যন্তই কি বেদ মৌখিকভাবে ছিলো?

শখ যেহেতু বেশি তাহলে সহজ একটা চ্যালেঞ্জ করি,

কঠিন হয়ে যায়? আরেকটু সহজ করে দিই,

জরাথ্রুস্ট রুট হয়ে বৌদ্ধ-মুসলিমদের জিনিস কপি পেস্ট করে ধর্মগ্রন্থ লেখা ব্রাহ্মণগণ আর কীই বা প্রমাণ করতে পারবে?

তৃতীয়ত, এই পোস্ট যারা করছে তাদের দ্বীনের কিতাবের ম্যানুস্ক্রিপ্ট কবে কোথায় পাওয়া গেছে সেটা একটু খোঁজ নিয়ে দেখার অনুরোধ। কুফিক স্ক্রিপ্ট তো একাধিক সনদেই প্রমাণিত। লক্ষাধিক হাফিজ এখনো বেঁচে আছে। বর্তমানকাল থেকে একদম রুট পর্যন্ত প্রচুর সংখ্যক  সনদ দেওয়া সম্ভব। এ প্রসঙ্গে কথা বাড়াবো না, এটা আমাদের আজকের বিষয়বস্তু নয়। তবে ক্ষেত্রজ পুত্ররা তাদের গ্রন্থ বাঁচানোর জন্য আরেকজনের দিকে আঙুল তোলে, এটাকে বলে হিপোক্রেসি ফ্যালাসি। আরেকজনেরটা যদি ভুলও হয়ে যায় তাহলে তাদেরটা সঠিক প্রমাণ হয় না।

হিন্দু পণ্ডিতদের বক্তব্য

আমাদের নিয়ে হিন্দুদের অভিযোগের শেষ নেই। আমরা নাকি অপপ্রচার চালাই, ভুল ব্যাখ্যা দেই। অথচ তারাই নিজেদের বিরুদ্ধে গেলে কিছু মানবে না, নিজেদের পক্ষে বললে ম্যাক্স মুলার সাধু, আর নিজেদের মতের বিপক্ষে বললে ম্যাক্স মুলার খ্রিস্টান এজেন্ট। তো সেজন্য আমরা প্রথমেই হিন্দু পণ্ডিতদের বক্তব্য আগে দেখাতে চাই, যে তারা কী বলেন।

দুর্গাদাস লাহিড়ী

দুর্গাদাস লাহিড়ী (১৮৬৩–১৯৩২) তার ঋগ্বেদ ভাষ্যের ভূমিকা অংশে লিখেছেন,

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

যাহা হউক, কাল-বিপর্য্যয়ে বেদের এবং বেদ-ব্যাখ্যার যে বহু বিপর্য্যয় সংঘটিত হইয়াছে, তাহাতে আর কোনই সংশয় নাই। এখন যাহা বেদ বলিয়া পরিচিত, অথবা এখন যাহা বেদের ব্যাখ্যা বলিয়া প্রচারিত তাহা যে বহুরূপে বিকৃত হইয়া আছে, অনেক স্থলেই তাহার পরিচয় পাওয়া যায়।[6]ঋগ্বেদ সংহিতা, পৃ ৫৯ https://archive.org/details/dli.bengal.10689.7915/page/n63/mode/1up অথবা, ঋগ্বেদ সংহিতা, অক্ষয় লাইব্রেরী, ভূমিকা অংশ, তৃতীয় পরিচ্ছেদ: বেদ পরিচয়, অনুচ্ছেদ: বেদ বিষয়ক বিবিধ … See Full Note

ক্ষেত্রজ পুত্রদের দাবি হলোঃ এখানে দূর্গা‌দাস লাহিড়ী বলেছেন বেদের ব্যখ্যা বিকৃত হয়েছে। এটা ঠিক, প্রচলিত ব্যাখ্যা বিকৃত [মনে মনে – এবং আমাদের আর্য‌দসমাজের ব্যাখ্যাই সঠিক]।

আসলে চোখে একটু ভালো করে দেখা উচিৎ, কারণ এখানে দূর্গা‌দাস লাহিড়ী বলেছেন “…বেদের এবং বেদের ব্যাখ্যার…”। সুবিদার্থে‌ হাইলাইট করে দেওয়া হলো।

অন্যত্র, পাঠ বিকৃতির কথাও স্বীকার করেছেন,[7]পৃথিবীর ইতিহাস – প্রথম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী) পৃ ৪৫৫ https://bn.m.wikisource.org/wiki/পাতা:পৃথিবীর_ইতিহাস_-_প্রথম_খণ্ড_(দুর্গাদাস_লাহিড়ী).pdf/৪৬৭

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

ক্ষেত্রজ পুত্রদের দাবিঃ এখানে আমরা মিসকোট করেছি। “বৈদিক-মন্ত্র অনাদিকাল হইতে ইহ-সংসারে প্রচলিত” এবং “মূল মন্ত্র কোন্‌ অনন্তকাল হইতে প্রচলিত – কেহই তাহা নির্ণয় করিতে পারিবেন না” এই অংশ আমরা কোট করি নি। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছি।

আসলে এই দাবি বড়োই হাস্যকর। এটা লাহিড়ীর বিশ্বাস (without any proof), সেটা আমাদেরকে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তার এই বিশ্বাসের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়েছে আগের পোস্টে। সবার উপরে লিংকে দিয়েছিলাম, দেখে নিতে পারেন।

এখানে কথা হলো মূল মন্ত্র কোনগুলো? প্রমাণ সহকারে হাজির করার অনুরোধ।

স্বামী বিবেকানন্দ

স্বামী বিবেকানন্দের (১৮৬৩-১৯০২) নাম শোনে নি এমন বাংলাভাষী হিন্দুধর্মাবলম্বী খুঁজে পাওয়া কঠিন। তিনি বলেছেন,

বেদের বেশিরভাগই হারিয়ে গেছে - স্বামী বিবেকানন্দ
স্বামী বিবেকানন্দের বানী ও রচনা ৮/৪১৭

“…ইহা ছাড়া কিছু নষ্টও হইয়া গিয়াছে,…বেদের বৃহত্তর অংশ এখন আর পাওয়া যায় না…”[8]স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৮ম খণ্ড, গীতা প্রসঙ্গ, গীতা-১, পৃ ৪১৭ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.356542/page/n437/mode/2up

এ প্রসঙ্গে আমাদের নিম্নোক্ত পোস্ট দেখতে পারেনঃ

ক্ষেত্রজঃ স্বামী বিবেকানন্দের সাথে আমাদের মতভেদ থাকতেই পারে, তার মানে এই নয় যে তাঁকে মেনে নিতেই হবে। যারা এই পোস্ট করেছে তাদের স্কলারদের মধ্যে কি মতভেদ নেই?

আমরা এ কথা কখনোই বলি নি যে শুধু স্বামী বিবেকানন্দ বলেছে বলেই তার কথা সরাসরি মেনে নিতে হবে। আমরা শুধু দেখালাম, আমাদের আজকের পোস্টের কথা হিন্দু পণ্ডিতরাও আগে বলে গেছে। আর পোস্টকারীদের স্কলারদের মধ্যে এমন মতভেদ নেই যে “এটা আমাদের ধর্মগ্রন্থ কিনা”, “এটা হারিয়ে গেছে কিনা”।

বেদের বিকৃতি

এ বিষয়ের আগে মহাভারতের একটি কাহিনি শোনাই আসেন। যদিও মহাভারত একটি কাল্পনিক কাহিনি, তবুও অন্ধবিশ্বাসী হিন্দুরা একে নিজেদের ইতিহাসগ্রন্থ ও সত্য মনে করে।

মহাভারতের শান্তিপর্বে একটি হাস্যরসাত্মক ঘটনার বর্ণনা রয়েছে।

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

অনন্তর সেই রজ ও তমোগুণাবলম্বী মহাবলপরাক্রান্ত গদাধারী অসুরদ্বয় ঐ পদ্মমধ্যে ভ্রমণ করিতে করিতে দেখিল, উহার মধ্যে ভগবান্ ব্রহ্মা সৰ্ব্ব প্রথমে মনোহর বেদের সৃষ্টি করিতেছেন। ব্রহ্মাকে বেদসৃষ্টি করিতে দেখিয়া তাহাদের মনে ঈর্ষার সঞ্চার হইল। তখন তাহারা কমলযোনির নিকট হইতে সেই বেদ গ্রহণপূৰ্ব্বক সমুদ্রমধ্যে গমন করিয়া রসাতলে প্রবেশ করিল। বেদ অপহৃত হইলে পদ্মযোনি ব্রহ্মা নিতান্ত কাতর হইয়া নারায়ণকে কহিলেন, “ভগবন্! বেদ আমার দিব্যচক্ষু ও উৎকৃষ্ট বল, বেদ আমাদের তেজ ও উপাস্য বস্তু। এক্ষণে মধুকৈটভনামক দানবদ্বয় বলপূৰ্ব্বক উহা অপহরণ করিয়াছে। বেদবিরহে আমি লোকসমুদয় অন্ধকারময় দেখিতেছি। বেদ ব্যতীত আমি কিরূপে লোক সৃষ্টি করিব? ফলতঃ বেদ বিনষ্ট হওয়াতে আমার যারপরনাই দুঃখ উপস্থিত ও হৃদয় অতিশয় সন্তপ্ত হইয়াছে। আজ কোন্ ব্যক্তি সেই বেদসমুদয় আনয়ন করিয়া আমাকে এই শোকসাগর হইতে উদ্ধার করিবে?”[9]মহাভারত, শান্তিপর্ব, অধ্যায় ৩৪৮, অনুবাদঃ কালীপ্রসন্ন সিংহ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.290443/page/n604/mode/1up

দেখলেন কাণ্ড? ব্রহ্মা প্রথমে বেদ সৃষ্টি করলো। তারপর অসুরেরা সেই বেদ চুরি করে পালিয়ে গিয়ে ব্রহ্মাকে কাঁদিয়ে দিলো!

বেদ চুরি হয় কীভাবে? এই কাহিনি অনুসারে নিশ্চয়ই ব্রহ্মা কোনো বস্তুগত বেদ সৃষ্টি করেছিলেন? কিংবা, বেদ যদি ব্রহ্মার স্মৃতিতেই থাকবে, তাহলে অসুরেরা বেদ চুরি করে সাগরে ঝাপ দিলো কীভাবে? আবার এও হতে পারে স্রষ্টা ব্রহ্মার স্মৃতিশক্তি দুর্বল, কারণ এরকম ঘটনা ব্রহ্মার একবার ঘটে নি, কে স্ত্রী আর কে মেয়ে সরস্বতী, সেটাও ব্রহ্মা বেমালুম ভুলে যান!

কোনো গোবর থেকে বিশুদ্ধ মাথায় চিন্তা করলে বোঝা যাবে এটা আসলে কল্পকাহিনি ছাড়া কিছুই না। এই কাহিনিই আসলে বোঝায়, অনেক আগে থেকেই বেদ নিরাপত্তাহীন ছিলো, কিংবা দেবতা ব্রহ্মার নিজেরই স্মৃতির সমস্যা ছিলো, তাহলে মানুষের তো আরো সমস্যা থাকবে? তারা কীভাবে উক্ত বেদকে অবিকৃত রাখবে?

বেদগ্রন্থ কয়টি?

প্রচলিতভাবে আমরা জানি বেদগ্রন্থ হচ্ছে চারটিঃ ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ, সামবেদ। কিন্ত অথর্ববেদকে অনেক স্থানেই বেদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি, আবার অনেকক্ষেত্রে পুরাণকেও বেদ বলা হয়েছে। আবার অথর্ববেদকে দুটি মিলিয়ে ৫টি বেদ বলা হয়েছে। হিন্দুসমাজ আজও সন্দেহাতীত হয়ে বলতে পারে নি তাদের বেদ সংহিতা কয়টি।

৩টি বেদ

এর উল্লেখ রয়েছে ছান্দোগ্য উপনিষদে,

বেদের উৎপত্তি ও রচনা বিভ্রাট

সেই প্রজাপতি এই তিন দেবতাকে অর্থাৎ তাঁহাদের উদ্দেশে তপস্যা করিয়াছিলেন ও তপ্যমান সেই তিন দেবতার রস অর্থাৎ সার গ্রহণ করিয়াছিলেন, অগ্নি হইতে ঋগবেদ, বায়ু হইতে যজুর্ব্বেদ ও আদিত্য হইতে সামবেদকে উদ্ধৃত করিয়াছিলেন।[10]ছান্দোগ্য উপনিষদ, ৪র্থ প্রপাটক, খন্ড ১৭, শ্লোক ১-২, বসুমতী সাহিত্য মন্দির, পৃ ৩৫৪ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.357820/page/n380/mode/1up

শতপথ ব্রাহ্মণও একই কথা বলে,

2. He heated these three worlds, and from them, thus heated, three lights (gyotis) were produced–Agni (the fire), he who blows here (Vâyu), and Sûrya (the sun).

তিনি এই তিনটি জগতকে উত্তপ্ত করেছিলেন, এবং তাদের থেকে, এইভাবে উত্তপ্ত, তিনটি আলো (জ্যোতিস) উৎপন্ন হয়েছিল – অগ্নি (আগুন), যিনি এখানে প্রবাহিত হোন (বায়ু), এবং সূর্য্য (সূর্য)।

3. He heated these three lights, and from them, thus heated, the three Vedas were produced–the Rig-veda from Agni, the Yagur-veda from Vâyu, and the Sâma-veda from Sûrya

তিনি এই তিনটি আলো-কে উত্তপ্ত করেছিলেন, এবং এইভাবে উত্তপ্ত হয়ে তিনটি বেদ তৈরি হয়েছিল – অগ্নি থেকে ঋগ্বেদ, বায়ু থেকে যজুর্বেদ এবং সূর্য্য থেকে সামবেদ।[11]শতপথ ব্রাহ্মণ ১১/৫/৮/১-৩, Satapatha Brahmana Part V (SBE44), Julius Eggeling tr. https://www.sacred-texts.com/hin/sbr/sbe44/sbe44032.htm

শতপথ ব্রাহ্মণের অন্য জায়গাতেও একই কথা আছে।[12]শতপথ ব্রাহ্মণ ১২/৩/৩/২ https://www.sacred-texts.com/hin/sbr/sbe44/sbe44055.htm

মনুসংহিতাতেও ৩টি বেদের কথাই আছে!

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

সেই ব্রহ্মা যজ্ঞসমূহ সম্পাদনের জন্য অগ্নি, বায়ু ও সূর্য এই তিনটি দেবতা থেকে যথাক্রমে ঋক্, যজুঃ ও সামসংজ্ঞক সনাতন তিনটি বেদ দোহন করেছিলেন।[13]মনুসংহিতা ১/২৩, অনুবাদঃ মানবেন্দু বন্দোপাধ্যায়, শ্রীবলরাম প্রকাশনী, পৃ ৪

এই শ্লোকে যদিও ৩টি বেদের কথা আছে, অথর্ববেদ নামক কিছুর স্বীকার করা হয় নি, সংস্কৃততেও নেই, তবুও আর্যসমাজীদের গুরু দয়ানন্দ সরস্বতী, যিনি ইতোমধ্যেই অনুবাদে জালিয়াতির জন্য বিখ্যাত, তিনি কী অনুবাদ করেছেন দেখা যাকঃ[14]সত্যার্থ-প্রকাশঃ, ৭ম সমুল্লাস, পৃ ২১৬, সংস্করণ-৫ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.357387/page/n244/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

অন্য কোনো অনুবাদক এই সংস্কৃত শ্লোকে অঙ্গিরা/অথর্ববেদ পেলো না। কিন্তু বৈদাঙ্গিক নৈরুক্তিক বেদভাষ্যকার এখানে ৪টি বেদ আবিষ্কার করে ফেলেছেন।

আপনাদের সংশয় নিরসনের স্বার্থে আরো কয়েকজনের অনুবাদ দিচ্ছি। চৈতালী দত্তের অনুবাদঃ

তিনি যজ্ঞকর্ম সিদ্ধির জন্য অগ্নি থেকে সনাতন ঋগবেদ,বায়ু থেকে যজুর্বেদ, ও সূর্য থেকে সামবেদ উদ্ধার করিলেন।

সুরেশচন্দ্রের অনুবাদ,

ব্রহ্ম অগ্নি, বায়ু ও সূর্য থেকে যজ্ঞসিদ্ধির জন্য শাশ্বত ঋক্, যজু ও সাম বেদ দোহন করেছিলেন।

ভরতচন্দ্র শিরোমণির অনুবাদ,

তিনি যজ্ঞকার্য্য সিদ্ধির নিমিত্ত অগ্নি হইতে সনাতন ঋক বেদ, বায়ু হইতে যজুর্ব্বেদ এবং সূর্য্য হইতে সামবেদ উদ্ধৃত করিলেন।[15]https://bn.m.wikisource.org/w/index.php?title=চিত্র%3Aমনুসংহিতা_%28যদুনাথ_ন্যায়পঞ্চানন_ও_ভরতচন্দ্র_শিরোমণি%29.pdf&page=21

ক্ষেত্রজ পুত্রদের দাবিঃ এখানে দয়ানন্দ সরস্বতী মনুসংহিতার অনুবাদ দেন নি বরং একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

এই যদি হয় তাহলে মেনে নিতে হবে যে তার সত্যার্থ‌ প্রকাশ বইয়ের সকল কোটেশনের নিচে যে অনুবাদের মতো দিয়েছেন তিনি, সেগুলো তার নিজস্ব ব্যাখ্যা মাত্র। কিন্তু উপরের সমস্যাটারই সমাধান হয় নি, কারণ যেখানে অথর্ববেদের উল্লেখই করা হয় নি সেই মনুসংহিতার ভার্স‌ দিয়ে তিনি প্রশ্নের উত্তর লিখেছেন নিজের বইয়েঃ[16]https://archive.org/details/satyarthprakashl00dayauoft/page/n252/mode/1up?view=theater

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

তাহলে এই জালিয়াতি কোথায় যাবে?

তাছাড়া মনুসংহিতার অন্যান্য জায়গাতেও তিনটিই বেদ!

ত এব হি ত্ৰয়ো লোকাস্ত এব ত্রয় আশ্ৰমাঃ। ত এব হি ত্ৰয়ো বেদাস্ত এবোক্তাস্ত্রয়োহয়ঃ৷৷

তাঁরাই ত্রিভুবন, তিন আশ্রম, বেদত্রয় ও অগ্নিত্ৰয়।[17]মনুসংহিতা ২/২৩০, অনুবাদঃ সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স

ত্রৈবিদ্যেভ্যস্ত্ৰয়ীং বিদ্যাদ্ দণ্ডনীতিঞ্চ শাশ্বতীম্। আন্বীক্ষিকীঞ্চাত্মবিদ্যাং বার্তারম্ভাংশ্চ লোকতঃ ৷৷

ত্রিবেদজ্ঞ ব্যক্তিগণ থেকে (ঋক্, যজু ও সাম এই) ত্রয়ী, সনাতন দণ্ডনীতি, তর্কশাস্ত্র, ব্রহ্মবিদ্যা এবং (কৃষক বণিক আদি) জনগণের কাছ থেকে কৃষি, পশুপালন ও বাণিজ্যাদি (জীবিকার উপায় রাজা)  শিখবেন।[18]মনুসংহিতা ৭/৪৩, সুরেশচন্দ্র

সৰ্ব্বের্যামপ্যভাবে তু ব্রাহ্মণা রিক্থভাগিনঃ ।  ত্রৈবিদ্যাঃ শুচয়ো দাস্তাস্তথা ধর্মো ন হীয়তে ৷

(উক্ত) সকল উত্তরাধিকারীর অভাবে ত্রিবেদজ্ঞ, পবিত্র, জিতেন্দ্রিয় ব্রাহ্মণগণ (মৃত ব্যক্তির) সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন এভাবে ধর্মহানি হয় না।[19]মনুসংহিতা ৯/১৮৮, সুরেশচন্দ্র

গীতাও তিনটি বেদের কথাই বলে,

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

তিন বেদে কথিত সকাম অনুষ্ঠানকারী এবং সোমরস পানকারী যে-সব নিষ্পাপ ব্যক্তি যজ্ঞ দ্বারা (ইন্দ্রের রূপে) আমার পূজা করে স্বর্গপ্রাপ্তি কামনা করেন, তাঁরা পুণ্যফলস্বরূপ ইন্দ্রলোক লাভ করে সেখানে দেবতাদের দিব্যভোগসমূহ উপভোগ করে থাকেন।[20]শ্রীমদভগবদ্‌গীতা ৯/২০, সাধক-সঞ্জীবনী, গীতা প্রেস

ঋগ্বেদেও ৩টি বেদের কথা আছে,

তস্মাদ্যজ্ঞাৎ সর্বহুত ঋচঃ সামানি জজ্ঞিরে। ছন্দাংসি জঞিরে তস্মাদ্যজুস্তস্মাদজায়ত।

সেই সৰ্ব্ব হোমসম্বলিত যজ্ঞ হইতে ঋক্সামসমূহ উৎপন্ন হলো, ছন্দ সকল তথা হইতে আবির্ভূত হলো, যজুও তাহা হইতে জন্ম গ্রহণ করলো।[21]ঋগ্বেদ ১০/৯০/৯, অনুবাদঃ দুর্গাদাস লাহিড়ী ও রমেশচন্দ্র দত্ত, অক্ষয় লাইব্রেরি, কলকাতা, পৃ ১৮০২-১৮০৩

“From that victim, in whom the universal oblation was offered, the ṛccas and sāmans were produced;from him the metres were born; from him the yajus. was born.”[22]Rig Veda 10.90.9, Tr. Wilson https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc839607.html

শুক্লযজুর্বেদও একই মন্ত্র আছে,

সেই সর্বহুত যজ্ঞপুরুষ হতে ঋক্‌গুলিসামাগান উৎপন্ন হয়েছে। গায়ত্রী প্রভৃতি ছন্দরাশি তা হতেই উৎপন্ন হয়েছে এবং যজুর্বেদও তা হতে উৎপন্ন হয়েছে।[23]শুক্ল যজুর্বেদ ৩১/৭, অনুবাদঃ দুর্গাদাস লাহিড়ী (মহীধর ভাষ্য অনুযায়ী), অক্ষয় লাইব্রেরি, কলকাতা

ছন্দাংসি মানেই অথর্ববেদ?

অনেকে আগের মন্ত্রের ‘ছন্দাংসি’ কে অথর্ববেদ বলার চেষ্টা করে। কিন্তু এটা প্রকৃতপক্ষে অস্পষ্ট, আবার যজুর্বেদে মহীধরভাষ্যে গায়ত্রীকেও সেই ছন্দ বলা হচ্ছে। ঋগ্বেদেও গায়ত্রী মন্ত্র পাওয়া যায়, যেমনঃ ঋগ্বেদ ১০/৬২।[24]Staal, F. (1986). The Sound of Religion. Numen, 33(1), 33–64. https://doi.org/10.2307/3270126 তাই এই ‘ছন্দাংসি’ থেকে স্পষ্টভাবে অথর্ববেদ প্রমাণিত হচ্ছে না। ছন্দ সম্পর্কে দয়ানন্দ সরস্বতীর মত একই।[25]সত্যার্থ-প্রকাশঃ, ৭ম সমুল্লাস, পৃ ২২০, সংস্করণ-৫ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.357387/page/n248/mode/1up দূর্গা‌দাস লাহিড়ীও ছন্দাংসি শব্দের অর্থ এরকম করেছেন।[26]https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.477588/page/n190/mode/1up?view=theater&q=%E0%A6%9B%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A6%BF

এই ভার্সে‌র ‘ছন্দাংসি’-র অর্থ নিয়ে হিন্দু সমাজই একমত নয়, যোগীরাজ  বসু লিখেছেন,[27]যোগীরাজ বসু (১৯৫৭), বৈদিক সাহিত্যের ইতিহাস, পৃ ৩ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.457476/page/n16/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

গেরুয়া পোশাকধারীদের মতে, এখানে ছন্দাংসি বলতে গায়ত্রী মন্ত্র এসব হলে পুনরক্তি হয়ে যায়। তাই এর অথর্ববেদই হবে। আর এটাই ঋগ্বেদ থেকে অথর্ববেদের প্রমাণ।

আসলে এই দাবি সার্কু‌লার রিজনিং ফ্যালাসি ছাড়া কিছুই না। কারণ এখানে ঋগ্বেদ দিয়ে অথর্ববেদ নয়, বরং ঋগ্বেদে অথর্ববেদ নামক কিছুর অস্তিত্ব আছে কিনা সেটা দাবি করা হচ্ছে। নিরুক্তে বেদের মন্ত্রকেই ছন্দ বলা হচ্ছে,[28]নিরুক্ত ৭/১২/২, অমরেশ্বর ঠাকুর আলাদা করে কোনো অথর্ববেদকে বোঝায় না। আর বেদে যেখানে প্রচুর পরস্পরবিরোধিতাই পাওয়া যায় সেখানে একই বাক্যে একই সাথে পুনরক্তি পাওয়া অস্বাভাবিক নয়, একজনে হাতে তো আর মোডিফাই হয়ে আসে নি!

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

দাঁড়ান, ছন্দাংসির ব্যাখ্যা এখনো শেষ হয় নি। সায়নাচার্য‌ এর বেদ অনুক্রমণিকার এক জায়গায় ছন্দাংসিকে যজুর্বেদ বলা হচ্ছেঃ[29]https://archive.org/details/dli.bengal.10689.7915/page/n73/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

আবার ত্রৈলোক্যনাথ ভট্টাচার্য এর অনুবাদ করেছেন এরূপ, সাথে লিখে দিয়েছেন যে এখানে অথর্ববেদ নেইঃ[30]সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস, খণ্ড ১, পৃ ১৭ https://archive.org/details/dli.bengal.10689.9199/page/n33/mode/1up?view=theater

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

অ্যাপোলোজিস্টদের দাবিঃ গোপথ ব্রাহ্মণের পূর্বভাগ ১/২৯ এ বলা হয়েছে –
“অথর্বণাং চন্দ্রমা দৈবতং তদেব জ্যোতিঃ সর্বাণি ছন্দাংসি আপস্থানম্”
অর্থাৎ অথর্ববেদের চন্দ্রমা দেবতা, তিনি জ্যোতি, সমস্ত প্রকারের ছন্দ এবং জলের স্থান।

প্রথমেই এই দাবিটি সার্কুলার রিজনিং ফ্যালাসিতে পড়ে যাচ্ছে, কারণ এখানে তারা ঋগ্বেদ দিয়ে অথর্ববেদ প্রমাণ করতে চাইছে, সেখানে কীভাবে তারা অপ্রমাণিত (এই স্টেপে) অথর্ববেদের অন্তর্গত ব্রাহ্মণ গোপথ ব্রাহ্মণের রেফারেন্স টানে?

দ্বিতীয়ত, গোপথ ব্রাহ্মণের পূর্বভাগ ১/২৯ এ অন্য বেদগুলোর জন্যেও এই ছন্দ শব্দ ব্যবহার হয়েছে[31]https://archive.org/details/gopatha-brahmana-english-translation-with-notes-and-introduction-www.frommuslims.com/page/30/mode/1up?view=theater সেখানে কীভাবে নির্দিষ্ট করে অথর্ববেদ দাবি করছে তারাই জানে।

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

অথর্ববেদ ত্রয়ীর মধ্যে পড়ে?

এই বিষয়টাতে হিন্দুসমাজ একমত নয়।

৪ বেদের অনুসারী অ্যাপোলোজিস্টদের দাবি,

/* পূর্বমীমাংসা ২/১/৩৫-৩৭ এ বলা হচ্ছে বেদের মন্ত্র তিন প্রকার তাই বেদকে ত্রয়ী বলা হয়। সর্বানুক্রমনীবৃত্তির ভূমিকায়ও ষড়্গুরুশিষ্য বলেছেন,

विनियोक्तव्यरूपश्च त्रिविधः सम्प्रदर्श्यते । ऋग यजः सामरूपण मोड|| The form to be assigned is also displayed in three ways.  Rig Yajah Samarupana Mode||

তাই বেদকে ত্রয়ী বলা হয়। */

কয়েকটি কারণে এই যুক্তি দুর্বল।

  1. এখানে কোথাও বলা নেই যে এই তিনপ্রকার মন্ত্রের কারণেই বেদকে ত্রয়ী বলা হয়।
  2. পূর্বমীমাংসার রেফারেন্সের পরবর্তী শ্লোক উল্লেখ করতে ভয় কোথায়? ৩৮ নং শ্লোকে বেদের মন্ত্রের আরেকটি প্রকারও উল্লেখ করা হচ্ছে,[32]Purva Mimamsa Sutra Of Jaimini With The Original Commentary In English, 2/1/38, page 168 https://archive.org/details/dli.ernet.170066/page/168/mode/1upবেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়
  3. তাছাড়া এই মন্ত্রের ‘প্রকার’ ছাড়াও আমরা দেখেছি, বেদ তিনটিই সৃষ্টি করা হয়েছে বৈদিক মিথোলজি অনুযায়ী। আমরা পূর্বে বেদের সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করছি। ‘সংখ্যা’ আর ‘প্রকার’ এক জিনিস না।

অ্যাপোলোজিস্টদের ক্লেইম হলোঃ এখানে ‘নিগদ’ হলো অথর্ববেদের নিজস্ব শৈলী। চার বেদের মধ্যে ৩ প্রকার মন্ত্র ছাড়াও অথর্ববেদের মধ্যে নিজস্ব যে মন্ত্র রয়েছে তাই ‘নিগদ’।

এই দাবির পক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তবে অথর্ববেদকে আলাদা করে নিগদ বলা হলে উপরে পূর্বমীমাংসা থেকে ত্রয়ী প্রমাণ করার দাবি নিজে নিজেই খণ্ডিত হয়ে গেলো! কিন্তু মজার কাহিনি কী জানেন এই নিগদকে যজুর্বেদের মধ্যেই গণনা করা হচ্ছে। এর উল্লেখ আছে পূর্বমীমাংসার একই অধ্যায়ের ৪০ নং ভার্সে‌ঃ[33]https://archive.org/details/dli.ernet.170066/page/169/mode/1up?view=theater

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

এমনটা উল্লেখিত হয়েছে ভাগবত পুরাণেঃ[34]শ্রীমদ্ভাগবত ১২/৬/৫২, প্রভুপাদ ভাষ্য, ভক্তিচারু স্বামী কর্তৃক বঙ্গানুবাদ, ইস্কন হতে প্রকাশিত

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

অ্যাপোলোজিস্টদের আরেকটি দাবি হলো,

অথর্ববেদ ১৫/৬/৮ এ লেখা রয়েছে,
“তমৃচশ্চ সামানি চ যজুংষি চ ব্রহ্ম চ” এখানে ঋগ, যজু এবং সামের সাথে ব্রহ্মের নাম এসেছে ।

এই কথা গোপথব্রাহ্মণ ৫/১৫ তে এই প্রকারে লেখা রয়েছে,
“ঋগ্বেদ এব ভর্গো যজুর্বেদ এব মহঃ সামবেদ এষ যশো ব্রহ্মবেদ এব সর্ব”

এটাও সার্কুলার রিজনিং ফ্যালাসি। অথর্ববেদ দিয়ে অথর্ববেদ প্রমাণ!

যাহোক অথর্ববেদ ১৫/৬/১২ তে রয়েছে,

ইতিহাসস্য চ বৈ স পুরাণস্য চ গাথানাং চ নারাশংসীনাং চ প্রিয়ং ধাম ভবতি য এবং বেদ।

তিনি বৃহতী দিকে গমন করলে পুরাণ, ইতিহাস ও মনুষ্যের প্রশংসাত্মক গাথাসমূহ তাকে অনুসরণ করে।[35]https://www.ebanglalibrary.com/101146/%e0%a7%a7%e0%a7%ab%e0%a5%a4%e0%a7%a7-%e0%a6%aa%e0%a6%9e%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a6%a6%e0%a6%b6-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%a3%e0%a7%8d%e0%a6%a1-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a5%e0%a6%ae-%e0%a6%85/

অথচ, পুরাণ থেকে রেফারেন্স দিলে অন্যদিকে দৌড় দেয়।

রামায়ণে অথর্ববেদ?

যেখানে সেখানে বেদ খোঁজা পাজিতদের দাবি, রামায়ণ আদিকাণ্ড ১/১৫/২ এ বলা আছে,

ইষ্টিং তেহহং কারিষ্যামি পুত্রীয়াং পুত্রকায়নাৎ। অথর্ব্‌ব শিরসি প্রৌক্তৈমন্ত্রৌঃ সিদ্ধাং বিধানতঃ

অর্থা‌ৎ, রামায়ণের সময়েও অথর্ববেদ ছিলো।

প্রথমত, রামায়ণ দিয়ে অথর্ববেদ প্রমাণ করতে চাওয়া বড়োই হাস্যকর। যেখানে আপনি নিজেই প্রমাণ করতে পারবেন না যে রামায়ণ ১০ শতকের আগে লেখা হয়েছে। এবং অবিকৃত আছে। বর্তমানে ভারতে রামায়ণের প্রায় তিনশো স্বীকৃত ভার্শন আছে।

দ্বিতীয়ত, এখানে অথর্ব শিরসি দিয়ে সুস্পষ্টভাবে অথর্ববেদ বোঝায় না।

আনন্দ গুরুজ তার বইয়ে এ সম্পর্কে লিখেছেন,[36]The society of the Ramayana
by Guruge, Ananda W. P., (1928), page 307 https://archive.org/details/trent_0116402264364/page/307/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

We may note also that a later verse in the Balakanda of the BE attributes to Rsyasrnga the performance of rite according to the mantras expounded for the Atharvashirsha , which according to the Brahmanas is the name of a brick used in building the sacrificial alter.

কেদারনাথ মজুমদার লিখেছেন,[37]আর্য্যাবর্ত্ত (দ্বিতীয় বর্ষ – দ্বিতীয় খণ্ড), পৃ ৮৩২ – লিংক

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

আবার কেউ কেউ অথর্বশিরসিকে অথর্ব উপনিষদ অনুবাদ করেছেন।[38]বেদান্তদর্শন, ৩ অ, ৩ পা, পৃ ১২০ https://archive.org/details/dli.bengal.10689.7990/page/n655/mode/1up[39]বেদার্থ‌সংগ্রহ, পৃ ১১৭ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.301896/page/n123/mode/1up

অথর্ববেদ কি ত্রয়ী – মহাভারত বনাম কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র?

অ্যাপোলোজিস্টিক ক্লেইমঃ

মহাভারত শান্তিপর্ব অধ্যায় ২৩৫ শ্লোক ১ এ রয়েছে ত্রয়ীবিদ্যা অথর্ববেদেও আছে।

এ প্রসঙ্গে আমাদের কিছু বলার নেই (রামায়ণের ক্ষেত্রে যা বলেছিলাম, তা এখানেও বলা যায়, মহাভারতকে প্রামাণ্য ধরে অথর্ববেদ প্রমাণ করতে হলে যে মহাভারতকে প্রাচীন এবং অবিকৃত প্রমাণ করতে হবে, পাশাপাশি মহাভারতের অন্যান্য জিনিসপত্রও বিশ্বাস করতে হবে হিন্দুদের)। আসলে হিন্দুধর্মগ্রন্থ এর লেখকরাই একমত নয় যে অথর্ববেদ ত্রয়ীর মধ্যে পড়ে কিনা।

অথর্ববেদ ত্রয়ীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে ত্রৈলোক্যনাথ লিখেছেন,[40]সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস, খণ্ড ১, পৃ ১৭

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

যা হোক, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে লিখা রয়েছে যে ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ ও সামবেদই হচ্ছে ত্রিবেদ, এগুলো থেকে অথর্ববেদ আলাদা।[41]কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ৩/১ বাংলা লিংক, ইংরেজি লিংক

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

এটা হওয়া সম্ভব যে “কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র” যে ব্রাহ্মণ রচনা করেছে সেই সময়ের আরও পরে মহাভারতের ঐ শ্লোক রচনা/মোডিফাই করেছে অন্য ব্রাহ্মণ।

৪টি বেদ

এর পক্ষে বিস্তর আলোচনার দরকার হচ্ছে না। এটা হিন্দুসমাজে বেশি জনপ্রিয় অবস্থান। ৪টি বেদের কথাও পাওয়া যায় হিন্দুধর্মগ্রন্থে।[42]বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২/৪/১০, অনুবাদঃ মহেশচন্দ্র বেদান্তরত্ন (১৯২৮), পৃ ১১৬-১১৭, প্রকাশকঃ সীতানাথ তত্ত্বভূষণ[43]শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/৫/৪/১০ – সংস্কৃত উইকিসোর্স[44]মুন্ডকোপনিষৎ ২/১/৬, উপনিষদ, স্বামী লোকেশ্বরানন্দ, ই-বুক এডিশন, পৃ ২৯০, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড[45]মুন্ডক উপনিষদ ১/১/৫

৫টি বেদ

গোপথ ব্রাহ্মণে ৫টি আলাদা রকমের বেদের কথা বলা হচ্ছে যেগুলোকে সাধারণত উপবেদ বলা হয়ে থাকে,

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

From these (quarters) being toiled over, heated, thoroughly heated, he (the Brahman) crested the five Vedas – Sarpa Veda, Pisaca Veda, Asura Veda, Itihisa Veda and Purana Veda.[46]গোপথ ব্রাহ্মণ ১/১/১০, অনুবাদঃ হুকুম চাঁদ পাটেল https://archive.org/details/gopatha-brahmana-english-translation-with-notes-and-introduction-www.frommuslims.com/page/11/mode/1up

আবার গোপথ ব্রাহ্মণ ক্লাসিকাল ৫ বেদের কথাও বলেঃ ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ, অঙ্গিরাসবেদ।[47]গোপথ ব্রাহ্মণ ১/২/২৪, ১/৩/৩

বৃহদারণ্যক উপনিষদ দেখি চলুন,[48]বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২/৪/১০, অনুবাদঃ মহেশচন্দ্র বেদান্তরত্ন (১৯২৮), পৃ ১১৬-১১৭, প্রকাশকঃ সীতানাথ তত্ত্বভূষণ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

সংস্কৃত ‘অথর্বাঙ্গিরস’ শব্দ নিয়ে একটু কথা চালাচালি আছে সেটা একটু পড়েই দেখবো। তবে অথর্ববেদ আর অঙ্গিরাসবেদ নামে দুইটি আলাদা বেদের অস্তিত্ব পাওয়া যায় হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে।

শতপথ ব্রাহ্মণের এক জায়গায় ১০-১১টি বেদের কথা এসেছে।[49]শতপথ ব্রাহ্মণ ১৩/৪/৩/১-১৫ https://www.sacred-texts.com/hin/sbr/sbe44/sbe44104.htm শতপথ ব্রাহ্মণে একদম স্পষ্টভাবেই অথর্ববেদ ও অঙ্গিরাসবেদকে আলাদা বলা হয়েছে। Atharvan এবং Angiras দু’জন আলাদা ঋষি, তাদের সাথে এই দুটো বেদকে সংযুক্ত করা হয়েছে এখানে।

তাহলে এখন অঙ্গিরাসবেদ কোথায়? কোথায় হারালো?

উল্লেখ্য, শ্রীমদ্ভাগবততে পুরাণশাস্ত্রকে ৫ম বেদ বলা হয়েছে।[50]শ্রীমদ্ভাগবত ৩/১২/৩৪-৩৯, গীতা প্রেস

হিন্দুধর্মের ধর্মগ্রন্থগুলোর লেখকগণও একমত নয় বেদ কয়টি ও কী কী এটা নিয়ে।

শাখা বিভ্রাট

বেদ বহু শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত। শাখা-প্রশাখা নিয়েও হিন্দু পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। দয়ানন্দ সরস্বতীর মতে বেদের শাখা রয়েছে ১১২৭টি, সর্বানুক্রমণীতে ১১৩৭। আর পতাঞ্জলি তার মহাভাষ্যে লিখেছেন ১১৩১টি – ঋগ্বেদের ২১টি, অথর্ববেদের ৯টি, যজুর্বেদের ১১১টি (কৃষ্ণ যজুর্বেদের ৮৬টি, শুক্ল যজুর্বেদের ১৫টি), সামবেদের ১০০০টি। কিন্তু বর্তমানে এগুলো বেশিরভাগই হারিয়ে গেছে। এই ১১৩১টি থেকে বর্তমানে ১০-১২টি পাওয়া যায়। যেমনঃ

আসুন শাখা সম্পর্কে হিন্দুদের একাধিক মত দিয়েই এই ঘটনা বিচার করি।

[ক] বেদের শাখাগুলো গাছের ডালের মতো, এবং বেদেরই অংশ। সবগুলোই বেদ।

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়
বেদ ও শাখা-প্রশাখা

এই মতের দ্বারা প্রমাণিত হয় বেদের ৯৮.৯% ই হারিয়ে গেছে।

[খ] বেদের শাখাগুলো মূলত বেদের ব্যাখ্যা। এটা বলেছেন দয়ানন্দ সরস্বতী তার সত্যার্থ প্রকাশ বইয়েঃ[51]সত্যার্থ প্রকাশ, ৭ম সমুল্লাস, পৃ-২১৯ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.357387/page/n247/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

ঠিক আছে বেদের ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলো হারিয়ে গেলে বেদের কিছু আসে যাবে না। কিন্তু, বর্তমানে যে বেদসংহিতা আপনি পাচ্ছেন, সেগুলো মূলত কোনো একটা শাখারই। যেমন আমাদের হাতে এখন আছে ঋগ্বেদ (শাকালসংহিতা)[52]বৈদিক গবেষণা, খণ্ড ১, পৃ ৭, [শুক্ল]যজুর্বেদ (বাজসেনীয় সংহিতা), [কৃষ্ণ]যজুর্বেদ (তৈত্তিরীয় সংহিতা) ইত্যাদি। যেহেতু আপনি যেটা বেদ বলে পাচ্ছেন, সেটা প্রকৃতপক্ষে বেদ নয়, বেদের ব্যাখ্যান।

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

তাহলে আসল বেদসংহিতা কোথায়?

[গ] বেদের শাখাগুলো মূলত বেদসংহিতার একেকটা ভার্শন। বাইবেলের হাজার হাজার ভার্শনের মতো বেদেরও ভার্শন তৈরি করা হয়েছে যুগ যুগ ধরে। এক ভার্শনের সাথে আরেক ভার্শনের বহু বৈপরীত্য বিদ্যমান।

এখানে এক অনিশ্চয়তা  দাঁড়ায়। বেদের ৯৯% ভার্শনই হারিয়ে গেছে। তাহলে আসল বেদসংহিতা কোথায়?

এখন ঋগ্বেদের শাকাল শাখার ভার্শনটা পাওয়া যায়। তাহলে আসল ঋগ্বেদ কোনটা? দয়ানন্দ সরস্বতীর মুরিদরা তাদের পীরের বিরুদ্ধে গিয়ে দাবি করছে শাকাল ‘শাখার’ ঋগ্বেদই আসল ঋগ্বেদ। তাদের কাছে কয়েকটি প্রশ্নঃ

  1. শাকাল শাখার প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত অবিকৃত থাকার কোনো প্রমাণ আছে কি?
  2. কোনো প্রমাণিত অবিকৃত হিন্দুধর্মগ্রন্থ থেকে কি প্রমাণ করা সম্ভব যে শাকাল শাখার ঋগ্বেদই আসল সংকলিত ঋগ্বেদ?

অ্যাপোলোজিস্টদের আরেকটি দাবি হচ্ছে ভিন্ন শাখার পাঠ গুলোতে তেমন অর্থগত পার্থক্য নেই।

অর্থগত পার্থক্য আমরা দেখাবো সমস্যা নেই। কিন্তু এতো এতো ভ্যারিয়েশনের পদপাঠ পাচ্ছেন, মূল বেদের পাঠ কোথায়?

‘বেদ’ নামটিই বেদের কোনো মন্ত্রে নেই

এই যে আমরা বেদ নিয়ে আলোচনা করছি। কিন্তু কোনো বেদগ্রন্থেই বলা হচ্ছে না যে সেটা বেদ। ঋগ্বেদে লেখা নেই যে সেটা ঋগ্বেদ। বরং অন্যান্য গ্রন্থে এগুলোর নাম লেখা হয়েছে ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ ইত্যাদি।

এখান থেকে একটা অনিশ্চয়তা প্রকাশ পায়, এগুলো আসলে বেদ তো? নাকি বাইবেলের মতো কিছু ছু-মান্তারকে বেদ শিরোনাম দিয়ে কোনো বইয়ে সংকলিত করা হয়েছে!

বেদের একটি হারানো মন্ত্রঃ অগ্নি-পূষার সম্মিলিত হবি বেদে আছে?

নিরুক্তে রয়েছে,

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

অথাপ্যাগ্নাপৌষ্ণং হবির্নতুসংস্তবঃ ||৬||

অগ্নি ও পূষার সম্মিলিত হবির কথা বেদে আছে;……[53]নিরুক্ত ৭/৮/৬, অনুবাদঃ অমরেশ্বর ঠাকুর, ৩য় অংশ, পৃ ৮৬১ https://www.frommuslims.com/?p=17734

ইংরেজি অনুবাদও দেখিয়ে দিচ্ছিঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

There is a joint oblation offered to, but no joint panegyric addressed to, Agni and Visņu in the ten books (of the Rgveda).[54]Nirukta 7.8, Tr. Lakhsman Sarup, page 117 https://archive.org/details/nighantuniruktao00yaskuoft/page/117/mode/1up

আপনি এইবার আমাকে বেদের এমন একটা মন্ত্র দেখান যেখানে অগ্নি আর বিষ্ণুকে একত্রে হবি/উৎসর্গ করা হচ্ছে।

পাবেন না। কারণ এমন কোনো মন্ত্রই এখন আর বেদে নেই। নিরুক্তের লেখক যাস্ক যখন নিরুক্ত লিখছিলেন, তখন তা বেদে ছিলো। এখন সেই মন্ত্র হারিয়ে গেছে।

আরেকটু স্পষ্ট করে দিই, নিরুক্তের দাবি অনুযায়ীঃ

আমরা এই সম্মিলিতভাবে এই দুইজন দেবতাকে হবি করার কথা বেদের কোথায় আছে সেটাই জানতে চাচ্ছি। এখানে সম্মিলিত দিয়ে বোঝাচ্ছে যে, এই দু’জন আলাদা সত্ত্বা। পূষা হলো সূর্যদেবতার একটি রূপ, যেখানে অগ্নি আলাদা দেবতা।

অনেকে সামবেদের একটি সূক্ত দেখিয়ে সম্মিলিত হবির কথা বলতে পারেনঃ[55]সামবেদ সংহিতা, পূর্বার্চিক, ছন্দ আর্চিক, মন্ত্র ৭৩-৮১  https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.457693/page/n30/mode/1up?view=theater

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

কিন্তু এখানে সম্মিলিত হবি নয়, বরং পূষার রূপ ধারী অগ্নিকে উদ্দেশ্য করা হচ্ছে। তাছাড়া লক্ষণ স্বরূপের ভাষ্য অনুযায়ী এখানে ঋগ্বেদের কথা বলে হচ্ছে, আর উপরের ছবি সামবেদের। তর্কের খাতিরে একসাথে ধরে নিলে দেখা যাচ্ছে স্তুতিও করা হচ্ছে (স্তব)। কিন্তু নিরুক্তের কথা অনুযায়ী, সেটা থাকার কথা নয়, এভাবে উল্টোই আরও বেদের বিকৃতির প্রমাণ পাওয়া যায়। এমনকি ঋগ্বেদেও এই দুইজনের সহস্তুতির কথা পাওয়া যায়ঃ[56]ঋগ্বেদ ১০/১৭/৩

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

বেদের আরেকটি হারানো মন্ত্রঃ দিনে দুই বেলা খাবার?

মহাভারতে উল্লেখ আছে যে, “বেদে বলা আছে মানুষ দৈনিক দুইবার খাবে। একবার দিনে, আরেকবার রাতে, এর মাঝখানে খাবে না।”[57]মহাভারত, শান্তিপর্ব, ১৮৬/১০, খণ্ড ৩৪, পৃ ১৭৯৪, অনুবাদঃ হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীস

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

খুব জানতে ইচ্ছা করে বেদের সেই মন্ত্রটি এখন কোথায় যেখানে বলা হয়েছে যে, মানুষ ২ বেলা খাবে।

উল্লেখ্য, এর বিপরীতে কৃষ্ণ যজুর্বেদে পাওয়া যায় যে মনু দিনে তিনবার খাওয়া দাওয়া করতো।[58]কৃষ্ণযজুর্বেদ, তৈত্তিরীয় সংহিতা ৬/২/৫ https://www.sacred-texts.com/hin/yv/yv06.htm

Morning, midday, evening, were the times of Manu’s drinking, the symbol of the sacrifice of cooked food, (serving) for prosperity.

সামবেদ কিংবা ঋগ্বেদের হারানো একটি মন্ত্রঃ অঙ্গাদঙ্গাৎ সম্ভবসি…

প্রটেস্টেন্ট হিন্দু স্কলার দয়ানন্দ সরস্বতী তার সত্যার্থ প্রকাশ নামক বইয়ে একটি মন্ত্রকে সামবেদের মন্ত্র বলে দাবি করেছেন,[59]সত্যার্থ প্রকাশ, সংস্করণ-২, পৃ ৮৮, সমুল্লাস-৪

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

অঙ্গাদঙ্গাৎ সম্ভবসি হৃদয়াদধিজায়সে। আত্মা বৈ পুত্রনামাসি সজীব শরদঃ শতম্‌।।

বাজারে থাকা সামবেদের কোনো কপিতেই এই মন্ত্রটি খুঁজে পাওয়া যায় নি। খুব সম্ভবত দয়ানন্দের কাছে থাকা সামবেদের পাণ্ডুলিপিতে মন্ত্রটি ছিলো। বর্তমানের আধুনিক সংস্করণগুলোতে “ইহা সামবেদের বচন” লাইনটি গায়েব করে দিয়েছে আর্যসমাজীরা। কিন্তু যদি আসল হিন্দি বইটি দেখেন তাহলে এই কথাটি জ্বলজ্বল করে দেখতে পারবেন।

এই মন্ত্রটিকেই আবার নিরুক্তে ঋক-মন্ত্র হিসাবে লেখা রয়েছে। তবে সেটা ঋগ্বেদে পাওয়া যাচ্ছে না আর। সেটা অন্য জায়গায় ট্রান্সফার হয়ে গেছে। সেটা বাংলা অনুবাদক স্পষ্ট করে দিয়েছেন,[60]নিরুক্ত ৩.৪.৮-৯, পৃ ৩৪৫, অমরেশ্বর ঠাকুর এবং তিনি ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন যে এখানে এটি ঋগ্বেদের মন্ত্র নয়। যার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে এই অনুবাদকের সময়ের আগেই এই মন্ত্র ট্রান্সফার হয়ে গিয়েছিলো।

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

ঋগ্বেদে প্রক্ষিপ্ত সুক্ত এবং মন্ত্র

হিন্দুদের মতে ‘প্রক্ষিপ্ত’ এর সংজ্ঞা হলোঃ

কোনো গ্রন্থ বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন যুগের লেখকরা ‘স্বাভিপ্রায়ানুযায়ী’ পরিবর্তন বা সংযোজন করলে এইসব সংগতিবিহীন পাঠকে বিশেষজ্ঞরা ‘প্রক্ষিপ্ত’ বলে থাকে।[61]যুক্তিবাদীর চোখে রাম ও রামায়ণ, অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ০১. গোড়ার কথা : ইতিহাস ও ধর্মকথার দ্বন্দ্ব – Google Books

এক কথায়, নতুন ঢোকানো জিনিস বা পরিবর্তন করা জিনিস। আপনি কি জানেন স্বয়ং ঋগ্বেদেই প্রক্ষিপ্ত একটি সুক্ত আছে? আমার কথা নয়, হিন্দু পণ্ডিতদেরই কথা এটি। ঋগ্বেদের ১০ম মণ্ডলের ৯০ তম সুক্তটি এবং শুক্লযজুর্বেদের ৩১তম অধ্যায়টি পুরুষসুক্ত নামে পরিচিত। গবেষকদের মতে এটি প্রক্ষিপ্ত। রমেশচন্দ্র দত্ত তার ঋগ্বেদের অনুবাদে সেটা উল্লেখ করেছেনঃ[62]ঋগ্বেদ ১০ম মণ্ডল, সুক্ত ৯০, পৃ ১২৬৫-১২৬৬, অনুবাদঃ রমেশচন্দ্র দত্ত, প্রকাশকঃ শ্রীলক্ষীকান্ত পাত্র https://www.frommuslims.com/?p=8966

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

(১) এই প্রসিদ্ধ সূক্তকে পুরুষসুক্ত কহে। ঈশ্বর কেবল এক, এই বিশ্বভুবন তাঁহারই অন্তর্গত, এই বিশ্বাস এই সূক্তে প্রকটিত হয়। ইহা অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালে রচিত।

(২) এই সূক্তটি কত আধুনিক, তাহা এই ঋকের দ্বারা কতক প্রকাশ হইতেছে। ইহার রচনাকালে ঋক, সাম ও যজুর্বেদের মন্ত্রগুলি পৃথক পৃথক করা হইয়াছে।

(৩) ঋগ্বেদ রচনা কালের অনেক পর এই অংশ রচিত হইয়া ঋগ্বেদের ভিতর প্রক্ষিপ্ত হইয়াছে, তাঁহার সন্দেহ নাই। ঋগ্বেদের অন্য কোনও অংশে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র এই চারি জাতির উল্লেখ নাই, এই শব্দগুলি কোন স্থানে শ্রেণী বিশেষ বুঝাইবার জন্য ব্যবহৃত হয় নাই। ঋগ্বেদ রচনা কালে আর্য্যদিগের মধ্যে জাতি বিভাগ ছিলনা। ঋগ্বেদে এই কুপ্রথার একটি প্রমান সৃষ্টি করিবার জন্য এই অংশ প্রক্ষিপ্ত হইয়াছে। ব্যাকরণবিৎ পণ্ডিতগণ প্রমাণ করিয়াছেন যে এই পুরুষ সূক্তের ভাষাও বৈদিক ভাষা নহে। অপেক্ষাকৃত আধুনিক সংস্কৃত।

(৪) বিশ্বজগতের নিয়ন্তাকে বলিস্বরুপ অর্পণ করা, এ অনুভবটি ঋগ্বেদের সময়ের নহে, ঋগ্বেদে আর কোথাও পাওয়া যায় না, ইহা অপেক্ষাকৃত আধুনিক সময়ের অনুভব। “It was evidently produced at a period when the ceremonial of sacrifice was largely developed. Penetrated with a sense of the sanctity and efficacy of the rite, and familiar with all its details, the priestly poet to whom we owe this hymn has thought it no profanity torepresent the supreme Purushia himself as forming the victim.”- Muir’s Sanskrit Texts, vol. V (1884), p. 373.

এই পুরুষসূক্তের ব্যাপারে হিন্দুদের নিজেদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে, তবে প্রাচীন বুদ্ধ টেক্সট দেখে বোঝা যায়, এসব কথাবার্তা সরাসরি তখন বেদের মধ্যে নাও থাকতে পারে, সেটা ব্রাহ্মণদের প্রচার ছিলো, পরে হয়তো বেদে এড হয়ে থাকতে পারে। এ সম্পর্কে দেখতে পারেনঃ

যা হোক ঋগ্বেদ এর ব্রাহ্মণগ্রন্থ ঐতেরেয় ব্রাহ্মণ অনুসারে ঋগ্বেদের একাধিক মন্ত্রের মাঝখানে অন্য পদ প্রক্ষিপ্ত করে আহুতি দিলেই কাজ হয়! [63]ঐতরেয় ব্রাহ্মণ, অধ্যায় ৩৭, খণ্ড ৭, বাংলা লিংক , ইংরেজি লিংক

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

শাকল্য শাখার ঋগ্বেদের পাঠ্যগত বিকৃতি

ইন্টারনেট আর্যরা দাবি করে শাকল্য শাখার ঋগ্বেদ আসল, ও অবিকৃত। কিন্তু যাস্ক মুনি তার উল্টো কথাই বলছেন![64]নিরুক্ত ৬/২৮/৬-১১, অনুবাদঃ অমরেশ্বর ঠাকুর

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

এখানে নিরুক্তের লেখক যাস্ক বলছেন যে “বায়ঃ” (vāyo) শব্দটি হচ্ছে এক শব্দে। কিন্তু শাকল্য “বায়ঃ” শব্দটিকে “বা” এবং “য়ঃ” দুটো আলাদা শব্দে বিভক্ত করেন। এবং তাতে অর্থের বিকৃতি হয়। ভাষ্যকারও দেখিয়েছেন এরকম পদভাগ ব্যকরণবিরুদ্ধ। ফলে যা দাঁড়ায়ঃ

  1. শাকল্য যেহেতু কোনোকিছু বিভক্ত করেছেন, তাহলে সেটা আর আদি থাকে না।
  2. শাকল্য ভুলভাবে পদবিভাগ করেছেন।
  3. আমাদের কাছে শাকালসংহিতা ছাড়া অন্য ঋগ্বেদ অবশিষ্ট নেই।
  4. সুতরাং, এই ঋগ্বেদ অবিকৃত নয়।

কিন্তু এখন আমাদের হাতে তো শাকালসংহিতা (শাকল্য শাখার ঋগ্বেদসংহিতা) ছাড়া অন্য কোনো ঋগ্বেদ সংহিতার ভার্শন নেই! আহা! সকল ভার্শন সম্পূর্ণ বা, আংশিকভাবে হারিয়ে গেছে (শাখা সম্পর্কে একটি মত) আর যেটা পাচ্ছি, সেটা স্বয়ং শাকল্যই বিকৃত করে দিয়েছেন! শাকল্যের পর আর কে কে বিকৃত করেছে কে জানে!

ঋগ্বেদের ১০ মণ্ডলের মন্ত্রটিতে শাকল্য এই বিকৃতি ঘটিয়েছেন,[65]ঋগ্বেদ ১০/২৯/১ https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc838824.html

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

वने॒ न वा॒ यो न्य॑धायि चा॒कञ्छुचि॑र्वां॒ स्तोमो॑ भुरणावजीगः । यस्येदिन्द्र॑: पुरु॒दिने॑षु॒ होता॑ नृ॒णां नर्यो॒ नृत॑मः क्ष॒पावा॑न् ॥

এছাড়াও ঋগ্বেদের বহু জায়গায় এই “বা য়োঃ করেছেন শাকল্য।[66]Rig Veda 6.52.2 https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc834281.html[67]Rig Veda 6.3.8 https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc833713.html[68]Rig Veda 2.28.10 https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc831376.html[69]Rig Veda 1.54.7 https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc829565.html[70]Rig Veda 2.23.7 https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc831307.html

ক্ষেত্রজ পুত্রদের দাবিঃ এখানে এটা অক্ষয় লাইব্রেরীর সমস্যা। সেখানে তারা এই সমস্যাটি রেখে দিয়েছে। আমারা নিরুক্তের কথা মানি, আমাদের আর্য‌সমাজের প্রকাশিত বেদ এখুন ঠিক “বায়ঃ” শব্দটিই আছে। আর শাকল্য যেভাবে পড়িয়েছেন এটা তার ব্যাপার, তাতে মুল বেদের কোনোরকম কোনো হানি হয় না।

প্রথম কথা হলো, মূল বেদ তারা কোথায় পেলো? ঋগ্বেদ বলতে তো বর্তমানে শাকাল শাখার পদপাঠ (শাকাল শাখার ঋগ্বেদ সংহিতা ভার্শন)-ই বোঝায়। এমনকি ক্ষেত্রজ পুত্ররা এক সময় শাকালসংহিতাকে আসল ঋগ্বেদ বলে আর বিপদে পড়লে পাশ কেটে যায়।

দ্বিতীয় কথা হলো, এই ভুল আর্য‌সমাজের বেদেও আছে। তুলসীরামের বেদ দেখা যাকঃ[71]Rig veda (Tulsi Ram), vol IV, pg 549 https://elibrary.thearyasamaj.org/book/rig-veda–volume-iv#book_reader/552

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

দেখা যাচ্ছে সংহিতা আর পদপাঠ সমানভাবেই বিকৃত হয়েছে। ব্রহ্মমুনি অবশ্য শাকল্যের এই ভুলটা সংশোধন করেছেন। তাতে তার বেদকে মুল বেদ বলার কিছু নাই, বরং শাকল্যের সংহিতার আপডেইট বলা যায়।

কিন্তু আমাদের কথা সেটা না, বরং আমরা বলেছি তাহলে শাকাল সংহিতায় এরকম ভুল আরও কতো সে করে থাকতে পারে! আবার সেই কত আগেই এসব ভুল ঢুকিয়ে থাকলে এর পরের বামুনগুলা ঢোকায় নি  এটা ভাবা যায়?

ঋগ্বেদ বনাম সামবেদ

যখন লোকমুখে প্রচলিত বেদের মন্ত্রগুলো লিখিত করা হলো তখন নানাবিধ বিকৃতি হয়েছিলো। যেমন ধরুনঃ

কথ্যরূপ লেখ্যরূপ
এক লোক তার বিয়ের আসরে বলছে, “আমিগো বর! খাওয়া দাওয়া করি বেশি বেশি।” এক লোক তার বিয়ের আসরে বলছে, “আমি গোবর খাওয়া দাওয়া করি বেশি বেশি।”

এরকম শব্দের ভাঙা-একত্রিকরণেও অর্থের বিকৃতি দেখা যায়। ঋগ্বেদ ও সামবেদের এমন একটা উদাহরণ যাস্ক মুনি তার নিরুক্তে এনেছেন,[72]নিরুক্ত ৪/৪/১-২, অনুবাদঃ অমরেশ্বর ঠাকুর

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

অর্থাৎ, একই শব্দকে এক খণ্ডে “মেহন” হিসাবে রেখেছেন শাকল্য। আর এটাকে আলাদা হিসেবে “মে ইহ ন” সামবেদে রেখেছেন গর্গ। এবং তাতে অর্থই পাল্টে গেছে। ঋগ্বেদের মন্ত্রটি ও অনুবাদ নিম্নরূপঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

যদিন্দ্র চিত্র মেহনাস্তি ত্বাদাতমদ্রিবঃ।  রাধস্তন্নো বিদদ্বস উভয়াহস্ত্যা ভর॥

হে বজ্রধর ইন্দ্র। আপনার রূপ অতি বিচিত্র; হে ধনাধিপতি। মহামূল্য ধন আপনারই দেয়, অতএব আপনি তা উভয় হস্তে আমাদের প্রদান করুন।[73]ঋগ্বেদ ৫/৩৯/১, অনুবাদঃ রমেশচন্দ্র দত্ত, অক্ষয় লাইব্রেরি – কলকাতা, পৃ ৮৫৯

এবার এই শ্লোকটিই আমরা সামবেদে দেখি চলুনঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

যদিন্দ্র চিত্র ম ইহ নাস্তি ত্বাদাতমদ্রিবঃ।  রাধস্তন্নো বিদদ্বস উভয়াহস্ত্যা ভর॥

হে ইন্দ্র, যে কাম্য পূজনীয় ধন আছে (অথবা যে কাম্যধন আমার গৃহে নেই) সেই ধন আমাদের দেওয়া তোমার কর্তব্য। হে বজ্রধারী, হে ধনাধিপতি সেই ধন তোমার উভয় হস্তে আমাদের প্রদান কর।[74]সামবেদ, উত্তরার্চিক, মন্ত্র নং ১১৭২, (অধ্যায় ৮, খণ্ড ৬, সুক্ত ১৪, মন্ত্র ১), অনুবাদঃ পরিতোষ ঠাকুর, হরফ প্রকাশনী, পৃ ১১৩

অথবা, [কৌথুম শাখা] উত্তরার্চিক, ৪/২/১৪/১

একই অনুবাদ করেছেন দুর্গাদাস লাহিড়ী (পরিতোষ ঠাকুরের দ্বিতীয় অনুবাদ),[75]সামবেদ সংহিতা, [রানানিয়া শাখা] উত্তরার্চিক, অধ্যায় ৮, খণ্ড ৬, সুক্ত ১৪, মন্ত্র ১, অনুবাদঃ দুর্গাদাস লাহিড়ী, অক্ষয় লাইব্রেরি – কলকাতা, পৃ ৪৯৭

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

এখন ঋগ্বেদ আর সামবেদের এই অবস্থা দেখে কয়েকটি পয়েন্টেই আসা যায়,

ভাবুন, ভাবুন।

অ্যাপোলোজিস্টিক ক্লেইমঃ সামবেদ আর ঋগ্বেদ দুইটা আলাদা। তাই এরকম আলাদা হওয়াতে সমস্যা নেই।

হ্যা কিন্তু, সামবেদের প্রায় অর্ধেক মন্ত্রই ঋগ্বেদ থেকে নেওয়া। তেমনই একটি মন্ত্র এটি, সেজন্যই নিরুক্তে ঋগ্বেদের মন্ত্র উল্লেখ করে তারপর সামবেদ ও ঋগ্বেদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আর আসলে এই বিপরীত দুটোকে কীভাবে প্রামাণ্য বিশ্বাস করে বসেছে হিন্দুসমাজ তারাই জানে। নিজের বাপ শ্বশুরও সঠিক, নিজের বাপ দয়ানন্দও সঠিক।

পদপাঠ নিয়েই যে সংহিতা বানানো হয় এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এটি, যে শাকল্য আর গর্গ‌ এই দুজন পদবিন্যাসই এখন বেদের মূল মন্ত্ররূপে পাঠ করানো হচ্ছে। আর্যসমাজী তুলসীরামের বেদেও মূল মন্ত্রের পাঠ এটিঃ[76]Sama Veda, Tulsi Ram, pg. 500 https://elibrary.thearyasamaj.org/book/sama-veda#book_reader/540

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

যজুর্বেদের ভেতরে উপনিষদ

বেদকে হিন্দুধর্মে শ্রুতি বলা হয়, আর আর্যসমাজের বিশ্বাসানুসারে উপনিষদকে শ্রুতি-স্মৃতি কোনোটাই বলা হয় না (তবে কিছু কিছু হিন্দু উপনিষদকেও শ্রুতি বলে থাকে)। এখন কোনো উপনিষদ যদি কোনো বেদে ঢুকে যায়, তাহলে সেই বেদগ্রন্থকে হিন্দুরা কী বলবে?

জী হ্যা, ঈশোপনিষদ ঢুকে গেছে শুক্লযজুর্বেদের ভেতর। যজুর্বেদের ৪০ তম অধ্যায়টি আর ঈশোপনিষদ একই।

ঈশা উপনিষদের শুরু

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

শুক্লযজুর্বেদ [মাধ্যন্দিন শাখা] ৪০ অধ্যায়ের প্রথম মন্ত্রঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

তবে এখানেও হুবহু ঘটে নি।

এরূপ সিদ্ধান্ত থেকে কয়েকটা পয়েন্টেই আসা যায়,

  1. যজুর্বেদ উপনিষদ ঢোকার কারণে বিকৃত।
  2. যজুর্বেদ যদি ঈশ্বরের বাণী হয়, আর উপনিষদ যদি মানবলিখিত হয় দুটোর সংমিশ্রণকে অবিকৃত বলা যাচ্ছে কি?
  3. ঈশোপনিষদের মন্ত্রসংখ্যা আর যজুর্বেদের সে অধ্যায়ের মন্ত্রসংখ্যা এক না, আবার এসেছেও উল্টোপাল্টা আকারে। তাই বলা যায় যজুর্বেদ সঠিক, উপনিষদ বিকৃত।
  4. উপনিষদ সঠিক, যজুর্বেদ বিকৃত।
  5. দুটোই বিকৃত।

ব্রাহ্মণগ্রন্থের অনুপ্রবেশ এবং যজুর্বেদের বিকৃতি

আর্যসমাজীরা দাবি করে থাকে কৃষ্ণযজুর্বেদের মন্ত্রের অংশে ব্রাহ্মণগ্রন্থের অনুপ্রবেশ ঘটায় সেই শাখা বিকৃত। আসল যজুর্বেদ হচ্ছে মাধ্যন্দিন শাখার [শুক্ল]যজুর্বেদ, এবং তা অবিকৃত। কেমন অবিকৃত তা আমরা দেখেইছি আগে। এখন ব্রাহ্মণগ্রন্থের অনুপ্রবেশও দেখি চলেন।

উপনিষদ নয়, ব্রাহ্মণগ্রন্থও ঢুকে গিয়েছে যজুর্বেদে। শুক্ল যজুর্বেদের [মাধ্যন্দিন শাখা] ২৪ তম অধ্যায়টি পুরোটিই একটি ব্রাহ্মণগ্রন্থ, আর অধ্যায় ৩০ এর ৭-১৫ নং মন্ত্র মূলত একটি ব্রাহ্মণগ্রন্থের অংশ।

  1. আর্যসমাজের মতে ব্রাহ্মণগ্রন্থ বেদ নয়। তাহলে বেদে ব্রাহ্মণগ্রন্থ ঢুকে বেদকে আর অবিকৃত রাখে নি।
  2. বৈষ্ণবদের মতে ব্রাহ্মণগ্রন্থও বেদ। তাহলে প্রচুর ব্রাহ্মণগ্রন্থ হারিয়ে গিয়ে বেদ আর অবিকৃত থাকে নি।

দেবতারাই শুক্লযজুর্বেদ বিকৃত করেছে

মাধ্যন্দিন শাখার [শুক্ল]যজুর্বেদের একটি ব্রাহ্মণগ্রন্থ শতপথ ব্রাহ্মণেই আছে,[77]শতপথ ব্রাহ্মণ ৪/২/৩/৭-৮ https://sacred-texts.com/hin/sbr/sbe26/sbe2647.htm

7. He draws it without (reciting) a puroruk; for the puroruk is a song of praise, since the puroruk is a Rik, and the song of praise is Rik; and the libation is Sâman; and what other (formula) he mutters, that is Yagus. Formerly these same (puroruk verses) were apart from the Riks, apart from the Yagus, and apart from the Sâmans.

8. The gods said, ‘Come, let us place them among the Yagus: thus this science will be still more manifold.’ Accordingly they placed them among the Yagus, and thenceforward this science was still more manifold.

ব্রাহ্মণগ্রন্থ ও বেদ

পূর্বমীমাংসাতে ব্রাহ্মণগ্রন্থকে বেদের অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে। মন্ত্রগুলো বেদের প্রথমাংশ, আর ব্রাহ্মণগ্রন্থগুলোকে বেদের শেষাংশ বলা হয়েছে,[78]Purva Mimamsa Sutra Of Jaimini With The Original Commentary In English, 2/1/32-33, page 163-164 https://archive.org/details/dli.ernet.170066/page/163/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

32. The name Mantra is applied to those that serve the purpose of denoting things connected with prescribed actions.

33 To the rest of the Veda the name ‘Brâhmaņa’ is applied.

সুতরাং ব্রাহ্মণগ্রন্থের হারিয়ে যাওয়া মানে বেদের বিশাল অংশ হারিয়ে যাওয়া! বেশিরভাগ ব্রাহ্মণগ্রন্থ হারিয়ে গেছে।

ঋগ্বেদের ১৫ হাজার মন্ত্র

পণ্ডিত রাম গোবিন্দ ত্রিবেদী তার ঋগ্বেদ অনুবাদের ভূমিকা অংশে উল্লেখ করেছেন,

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

ऋग्वेद के एक मन्त्र (पृष्ठ १४०३. मन्त्र ८ ) से ज्ञात होता है कि इसमें सब १५००० मन्त्र हैं; परन्तु गणना करने पर १०४६७ ही मन्त्र पाये जाते हैं। संभव है, वैदिक साहित्य की पुस्तकों की एक विशाल राशि जैसे नष्ट हो गई और वेद-धर्म-द्रोहियों के द्वारा विनष्ट कर दी गई, उसी तरह मन्त्र भी, कई कारणों से, नष्ट हो गये ।

ঋগ্বেদের একটি মন্ত্র থেকে জানা যায় (পৃষ্ঠা ১৪০৩. মন্ত্র ৮) সব মিলিয়ে ১৫০০০ মন্ত্র রয়েছে;  কিন্তু গণনা করলে মাত্র ১০৪৬৭টি মন্ত্র পাওয়া যায়।  এটা সম্ভব যে, বেদ-ধর্মদ্রোহীদের দ্বারা যেমন বিপুল পরিমাণ বৈদিক সাহিত্যের পুস্তক ধ্বংস ও বিনষ্ট হয়েছিল, তেমনি বিভিন্ন কারণে মন্ত্রগুলিও ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।[79]https://archive.org/details/Rigveda.In.Hindi.by.Ramgovind.Trivedi_201512/page/n23/mode/1up

তিনি যেই মন্ত্রটির কথা বলছেন সেই মন্ত্রটি হলো ঋগ্বেদ ১০ মণ্ডলের ১১৪ সুক্তের ৮ নং মন্ত্র। তার করা অনুবাদই দেখাইঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

पन्द्रह सहस्र उक्थ मन्त्र हैं । द्यावापृथिवी के समान ही उकथ भी वृहत् हैं । स्तोत्र की महिमा सहस्र प्रकार की है। जैसे स्तोत्र असीम है, जैसे ही वाक्य भी।

পনের হাজার উকথা মন্ত্র আছে।  পৃথিবীর মতো উকথাগুলোও বিশাল।  স্তোত্রের মহিমা হাজার রকমের।  স্তোত্র যেমন অসীম, বাক্যও তেমনি।[80]https://archive.org/details/Rigveda.In.Hindi.by.Ramgovind.Trivedi_201512/page/n1553/mode/1up

রমেশচন্দ্র দত্তের অনুবাদঃ

পঞ্চদশ সহস্র উকথ আছে; দ্যাবাপৃথিবী যত বৃহৎ, উকথও তত বৃহৎ। স্তোত্রের মহিমা সহস্র প্রকার, স্তোত্র যেরূপ অসীম, বাক্যও তদ্রূপ অসীম।

এই মন্ত্রে রমেশচন্দ্র দত্ত ম্যাক্স মুলারের একটি তথ্য ফুটনোটে দিয়েছেনঃ

“As early as about 600 B. C. we find that in the theological schools of India every verse, every word, every syllable, of the (Rig) Veda had been counted. The number of varses as computed in treatises of that date varies from 10,402 to 10,622 : that of the words is 153,826; that of the syllables, 432,000.”[81]Max Muller’s Selected Essays, vol. II (1881), p. 119.

অর্থাৎ, রমেশচনদ্র দত্তও বেদের মন্ত্র হারিয়ে যাওয়ার কথাই নির্দেশ করেছেন। তাদের বুঝও একই।

বেদের ১ লক্ষ শ্লোক

বিষ্ণুপুরাণে আছে বেদের ১ লক্ষ শ্লোকঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

পরাশর কহিলেন, ঈশ্বর হইতে আবির্ভূত ঋক্ যজুঃ প্রভৃতি ভেদসমন্বিত বেদ, লক্ষ শ্লোক পরিমিত।[82]বিষ্ণুপুরাণ ৩/৪/১

The original Veda, in four parts, consisted of one hundred thousand stanzas;…[83]https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/vishnu-purana-wilson/d/doc115981.html

এখন সবগুলো বেদ মিলিয়ে এর অর্ধেকও পাবেন না। এতো শ্লোক গেলো কই?

আবার একজন অ্যাপোলোজিস্ট যুক্তি দিয়েছে বেদে তো শ্লোক নেই, মন্ত্র আছে। তো তাহলে পুরো এক লক্ষ শ্লোকই হাওয়া? যেহেতু পাওয়া যায় না?

উল্লেখ্য, অনেক হিন্দুধর্ম‌গ্রন্থে শ্লোক শব্দ দিয়ে বেদের মন্ত্র বুঝিয়েছে।[84]যেমনঃ শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪।৭।২।১১-১৩

দ্বাপরযুগে বেদ বিকৃতি

এর উল্লেখ আছে মৎস্যপুরাণে,[85]মৎস্যপুরাণ ১৪৪/১০-১৫ https://bn.m.wikisource.org/wiki/পাতা:মৎস্যপুরাণম্‌_(পঞ্চানন_তর্করত্ন).pdf/৪৭০

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

পূর্ব্বকালে চারিপাদযুক্ত একমাত্র বেদ প্রতিষ্ঠিত ছিল। উহা জনগণের আয়ুর অল্পতা নিবন্ধন পুনঃপুনঃ নানাকারে পরিবর্তিত হইয়া দ্বাপরযুগে সংক্ষিপ্ত ও বিভক্ত হইয়াছে। আবার ঋষিপুত্রগণ স্ব স্ব দৃষ্টিবিভ্রম বশতঃ উহাকে নানাপ্রকারে প্রকটিত করিয়াছেন। তাঁহারা মহর্ষিগণের ঋক্‌যজুঃ সাম সংহিতামধ্যে ব্রাহ্মণভাগের বিন্যাস এবং স্বরক্রমের বিপর্য্যয় করিয়া উহাকেও রূপান্তর প্রাপিত করিয়াছেন। স্থানে স্থানে অভ্যাস-দোষে, অল্পাল্প বিকৃতি এবং দৃষ্টিভেদ নিবন্ধন বেদের ব্রাহ্মণভাগ, কল্পসূত্র, ভাষ্যবিদ্যা এবং আরও বিবিধ বিষয় তাহাদের অন্তঃকরণে সম্যক পরিস্ফুট হয় নাই।

কশ্যপের ১০০০ সুক্ত

কাত্যায়নের সর্বানুক্রমণিতে ঋগ্বেদের ৯৯তম সুক্ত প্রসঙ্গে কাত্যায়ন লেখেন,[86]https://archive.org/details/katyayana-sarvanukramani-saunaka-anuvakanukramani/page/n36/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

जातवेदस एका जातवेदस्यमेतदादीन्येकभूयांसि सूक्तसहस्रमेतकश्यपा।

জাতবেদসা এক জাতবেদস্যমেতাদাদিনেকভূয়ানসি সুক্তসহস্রমেতাকাশ্যপা।

Jatavedasa is one of the Jatavedasyas, and Kaśyapa has one thousand Suktas, beginning with this.

শৌণক ঋষি লিখেছেন,[87]বৃহদ্দেবতা ৩/১৩০/B https://archive.org/details/brhaddevataattri01saunuoft/page/35/mode/1up , ইংরেজি অনুবাদঃ https://archive.org/details/brhaddevataattr02saunuoft/page/116/mode/2up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

जातवेदस्यं सूक्तसहस्रमेक ऐन्द्रात्पूर्वं कश्यपार्षे वदन्ति । जातवेदसे सूक्तमाद्यं तु तेषाम् एकभूयस्त्वं मन्यते शाकपूणिः ॥ १३० ॥

জাতবেদস্য সুক্তসহস্রমেক অয়ন্দ্রপুর্বম কাশ্যপর্শে বদন্তি।  জাতভেদসে সূক্তমাদয়ং তু তেশম্ একভূয়স্ত্বম্ মান্যতে শাকপুনিঃ

Some say that the thousand hymns addressed to Jata-vedas (which come) before (the hymn) addressed to Indra (i. 100) have Kaśyapa as their seer: the first hymn of these is ‘For Jatavedas’ (jatavedase: i.99). Śākapūṇi thinks that they increase by one (in the number of their stanzas).

কারো মতে ইন্দ্রকে সম্বোধিৎ সূক্ত (ঋ. ১.১০০) এর পূর্বে আগত জাতবেদস্‌ কে সম্বোধিত এক সহস্র সূক্তের ঋষি কশ্যপ হন; এর মধ্যে প্রথম সূক্ত ‘জাতবেদসে’ (ঋ. ১.৯৯)। শাকপূণির মতে এর মধ্যে একটির বৃদ্ধি হয়।

ষড়্গুরুশিষ্য স্কন্দস্বামীর ভাষ্যের ব্যাখ্যায় লিখেছেন,

पूर्वात् पूर्वा सहस्रस्य सूक्तानामेक भूयसाम् । जातवेदस इत्याद्यं कश्यपार्षस्य सुश्रुमः ॥ इति स यो वृषीयान्ता वेदमह यास्त्वखिल सूक्तगाः । ऋचस्तु पंच लक्षाः स्युः सैकोनशतपंचकम् ॥

পূর্বাত্ পূর্বা সহস্রস্য সুক্তানমেক ভূয়স্যম্। জাতবেদ ইত্যাদি কাশ্যপর্শস্য সুশ্রুমঃ ॥ ইতি সায়ো বর্ষীয়ন্ত বেদমাহ যস্ত্বখিল সূক্তগঃ। ঋচস্তু পঞ্চ লক্ষঃ স্যুঃ সৈকনশতপঞ্চকম্ ॥

অর্থাৎ, এগুলোতে ৫,০০,৫০০টি মন্ত্র ছিলো।

এখন ঋগ্বেদে কি কশ্যপের ১০০০ সুক্ত বিদ্যমান? ১% ও পাওয়া যাবে না!

আর্যসমাজীদের একজন দেখলাম লিখলো, “এগুলো খিল সুক্ত, আর খিল সুক্ত বেদ নয়। এগুলো হারিয়ে গেলেই কি আর না গেলেই কি!”

এগুলো যে খিলসুক্ত সেটা কোনো ধর্ম‌গ্রন্থে লেখা নাই, ষড়গুরুশিষ্য এই মন্ত্রগুলোর বিলুপ্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তার কমেন্টারিতে দাবি করেছেন এগুলো খিল সুক্ত।

কিন্তু যা হোক, বেদগুলোতে তো অন্য খিল সুক্তও পাওয়া যাচ্ছে! যেমনঃ সৌপর্ণ সুক্ত, স্ত্রীসুক্ত, রাত্রিসুক্ত, বালখিল্য সুক্ত, পবমানি সুক্ত, ব্রহ্ম সুক্ত, কর্ত্যা সুক্ত, শিবসংকল্প সুক্ত, সঞ্জনা সুক্ত।[88]https://dharmawiki.org/index.php/Khila_Suktas_(खिलसूक्तानि)# কুন্তাপ সুক্তও অথর্ববেদের একটি খিলসুক্ত।

[এ সম্পর্কে পড়ুন বিস্তারিত এখানে[89]Parmeshwar Solanki (1995), Tulsi Prajna https://jainqq.org/explore/524582/74]

বেদে খিলসূক্ত থাকার ব্যাপারে স্কলারদের মতামতঃ

মহানামব্রত ব্রহ্মচারী লিখেছেন,[90]বেদ বেদান্ত – উত্তরখণ্ড – বেদ বিচিন্তন, পৃ ১৬৫ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.456851/page/n220/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

শুক্ল যজুর্বেদের ২৬ থেকে ৩৫ অধ্যায় খিল সূক্তঃ[91]গোপালচন্দ্র দত্ত, সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস, খণ্ড – ১, পৃ ১৯ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.301253/page/n24/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

অথর্ববেদের খিল কাণ্ড,[92]প্রাগুক্ত, পৃ ২৪

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

বালখিল্য সুক্তের ব্যাপারে,[93]ত্রৈলোক্যনাথ, সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস, খণ্ড-১, পৃ ৭৭ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.289995/page/n91/mode/1up?view=theater

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

সামবেদে খিলশ্রুতি আছে, এটা গোপথ ব্রাহ্মণ বলছেঃ[94]গোপথ ব্রাহ্মণ ১/১/২৯ https://archive.org/details/gopatha-brahmana-english-translation-with-notes-and-introduction-www.frommuslims.com/page/31/mode/1up?view=theater

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

বালখিল্য সুক্ত খিল না হওয়ার ব্যাপারে হিন্দু কিছু অ্যাপোলোজিস্ট যুক্তি দেখায় যে এই সুক্তের ঋষি আছে, তবে সুক্তগুলোরও যে ঋষি কশ্যপ আছে সেটা বেমালুম ভুলে যায়।

বেদে রামনাম-হরিনাম কোথায়?

এ প্রসঙ্গে ১৬ শতকে তুলসীদাসের রচিত রামায়ণ (রামচরিতমানস) গ্রন্থটি দেখি চলুন। তুলসী রামায়ণের বালকাণ্ডে রয়েছে,[95]শ্রীরামচরিতমানস, বালকাণ্ড, দোহা ২৭ এর চৌপাই ১, গীতা প্রেস, পৃ 43-45 https://www.ramcharitmanas.iitk.ac.in/content/2127

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

এখন কথা হলো, তুলসীদাসের সময়ের বেদে রামনাম জপার কথা সম্ভবত উল্লেখ ছিলো। কিন্তু এখন আমরা কোনো বেদেই আর সেটা পাচ্ছি না!

লঙ্কাকাণ্ডে রয়েছে,[96]শ্রীরামচরিতমানস, লঙ্কাকাণ্ড, দোহা ৪৮ এর চৌপাই ৪, গীতা প্রেস, পৃ 1106-1107 https://www.ramcharitmanas.iitk.ac.in/content/2648

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

কেউ কি আমাকে দেখাতে পারবেন যে বর্তমানে বাজারে যেই বেদ পাওয়া যায় সেই বেদের কোন জায়গাটায় রামচন্দ্রের যশঃকীর্তন করা হয়েছে?

তুলসী রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে রয়েছে,[97]শ্রীরামচরিতমানস, উত্তরকাণ্ড, সোরঠা ৮৯ ক, গীতা প্রেস, পৃ 1342-1343 https://www.ramcharitmanas.iitk.ac.in/content/2789

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

বেদ থেকে ‘সুস্পষ্ট মত’ দেখাতে পারবেন কেউ হরিনামের পক্ষে? নেই? কই তুলসীদাস তো লিখলো আছে! হারিয়ে গেছে?

ঋগ্বেদ ও সামবেদ – সংখ্যা নিয়ে আরেক ঝামেলা!

যাস্কের নিরুক্তে লেখা আছে,[98]নিরুক্ত ৭/১২/৫

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

এখান থেকে আমরা যে পয়েন্ট পাচ্ছিঃ

কিন্তু, ঋগ্বেদের মন্ত্রসংখ্যা সাড়ে দশ হাজার, আর সামবেদের দুই হাজার। তাহলে সামবেদের বাকি মন্ত্রগুলো গেলো কই?

এখন এ বিষয়টার ব্যাখ্যা নিরুক্তের স্কন্দস্বামী আর দূরগাচার্য্যে‌র ভাষ্যেই দেওয়া আছে। বলা আছে ঋক আর সাম মন্ত্র একই, ঋকমন্ত্রে সুর দিয়ে গান করলেই সেটা সাম হয়ে যায়। সে হিসাবে ঋক সংখ্যা আর সাম সংখ্যা সমান।

কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে দেখা যায় সামবেদে পাওয়া ঋক মন্ত্রগুলোতে ঋগ্বেদ থেকে প্রচুর পার্থক্য রয়েছে, এটা সকল হিন্দু পণ্ডিতই স্বীকার করেন। একই মন্ত্রের ভিন্ন শব্দ পাওয়া যায়। এটাও বিকৃতি নির্দেশ করে যদি ঋক = সাম হয়।

সাধারণ হিন্দু স্কলারদের মতে সামবেদের ৭৫টি মন্ত্র নিজস্ব, আর বাকিগুলো ঋগ্বেদ থেকে সংকলিত। এই ৭৫টি মন্ত্র সামবেদের বিকৃতি নির্দেশ করে। আর আর্যসমাজীদের মতে সামবেদের সবগুলো মন্ত্রই নিজস্ব। সেটা আরো সমস্যার। এ ছাড়াও আর্যসমাজীদের মতে সামবেদের ৪৫০টি মন্ত্রে সামগান প্রযোজ্য হয় না, অথচ আমরা দেখলাম নিরুক্ত অনুযায়ী সামগান প্রযোজ্য হওয়ার কারণেই মন্ত্রকে সাম বলা হচ্ছে, তাহলে এই ৪৫০টি মন্ত্র কি প্রক্ষিপ্ত?

সাম্প্রতিক সময়ে বেদের বিকৃতি

এতোক্ষণ তো গেলো হিন্দুধর্মের ক্লাসিক্যাল টেক্সট ও পণ্ডিতদের মত। কিন্তু গত দু’শ বছরেও বেদের বিকৃতি কম হয় নি। চলুন দেখা যাক।

যজুর্বেদ ৯/২০

[শুক্ল]যজুর্বেদ ৯ম অধ্যায়ের ২০ নম্বর মন্ত্রে আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা দয়ানন্দ সরস্বতীর নিজের করা হিন্দি ভাষ্য দেখুনঃ[99]https://archive.org/details/JRZx_yajurveda-with-bhasha-bhashya-swami-dayanand-saraswati-vol.-1-arya-pratinidhi-sabha/page/n294/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

মন্ত্রটি হলোঃ

आ॒पये॒ स्वाहा॑ स्वा॒पये॒ स्वा॒हा॑ऽपि॒जाय॒ स्वाहा॒ क्रत॑वे॒ स्वाहा॒ वस॑वे॒ स्वा॒हा॑ह॒र्पत॑ये॒ स्वाहाह्ने॑ मु॒ग्धाय॒ स्वाहा॑ मु॒ग्धाय॑ वैनꣳशि॒नाय॒ स्वाहा॑ विन॒ꣳशिन॑ऽआन्त्याय॒नाय॒ स्वाहाऽनन्त्या॑य भौव॒नाय॒ स्वाहा॒ भुव॑नस्य॒ पत॑ये॒ स्वाहाऽधि॑पतये॒ स्वाहा॑॥२०॥

এখানে আমার জানামতে যজুর্বেদের মন্ত্রটি “स्वाहा॑” শব্দের সাথে সাথেই শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু দয়ানন্দ সরস্বতীর ভাষ্যের শেষে নতুন শব্দ “गम्यात्” (গম্যত) ধরে পদের অর্থ করা হয়েছে। এই শব্দ আর্যসমাজের বেদে কীভাবে আসলো?

  1. হতে পারে দয়ানন্দের কাছে যেই বেদের পান্ডুলিপি ছিলো সেখানে এই শব্দ ছিলো। কিন্তু পাশাপাশি অন্যদের কাছেরটায় ছিলো না। যজুর্বেদ ইতোমধ্যেই বিকৃত।
  2. হতে পারে, রমাবাঈয়ের সাথে প্রেমলীলার কল্পনা করতে করতে নতুন এই শব্দ কখন যে বসিয়ে দিয়েছেন, নিজেরই খেয়াল নেই। (Jokes apart)

দয়ানন্দ পুত্রদের দাবি, আমরা ৫০ বছর আগের একটা পিডিএফ থেকে অপপ্রচার করছি। এটা প্রিন্টিং মিসটেইক ছিলো। ২০০৮ সালে শুদ্ধ ভার্শন বের করেছে আর্যসমাজ। আমরা কেন সেটা দিচ্ছি না? কারণ আমরা জানি যে সেটা দিয়ে আমরা অপপ্রচার করতে পারবো না।

প্রথমত, এটা খুবই হাস্যকর দাবি যে আমাদেরকে ২০০৮ সালের প্রকাশিত বেদ থেকে দেখাতে হবে। কারণ দয়ানন্দ সরস্বতীর যজুর্বেদ ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছে ১৮৭৮-১৮৮৯ সময়কালে। আর দ্বেড়শ বছর ধরে আর্যসমাজ হতে প্রকাশিত বেদেই এই ভুল থাকে? এর থেকে বড় হাস্যকর লজিক আর কী হতে পারে? ১৯২৪ সালের পিডিএফ থেকে দেখুনঃ[100]য়জুর্বেদ ভাষ্যম্‌ (১৯২৪), PDF Page 335

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

এমনকি ২০০৮ এর তথাকথিত শুদ্ধ ভার্শন থেকেই দেখাইঃ[101]Yajurved – Hindi Bhashya, pg 423 https://elibrary.thearyasamaj.org/book/yajurved–hindi-bhashya#book_reader/426

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

২০২১ সালের বাংলা অনুবাদঃ[102]যজুর্বেদ ভাষ্য, দয়ানন্দ সরস্বতী, বঙ্গানুবাদঃ সতীশ চন্দ্র, প্রকাশকঃ আর্য‌ সাহিত্য প্রচার ট্রাস্ট – দিল্লি, প্রিন্টঃ ২০২১, অধ্যায় ৯, মন্ত্র ২০, পৃ … See Full Note

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

যজুর্বেদ অধ্যায় ২৫-এ মন্ত্র কয়টি?

গায়ত্রী পরিবার প্রকাশিত যজুর্বেদের ২৫ নং অধ্যায়ে ৪৭টি মন্ত্র রয়েছে। “४७” বা ৪৭ তম মন্ত্রতেই এই অধ্যায় শেষঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

বিজনবিহারী গোস্বামীর সংকলনেও ৪৭টি মন্ত্রঃ[103]যজুর্বেদ সংহিতা, পৃ ১৯৬, হরফ প্রকাশনী

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

গ্রিফিথের ভাষ্যেও ৪৭টি মন্ত্র।[104]https://sacred-texts.com/hin/wyv/wyvbk25.htm দুর্গাদাস লাহিড়ীর ভাষ্যেও ৪৭টি মন্ত্র।[105][শুক্ল]যজুর্বেদ সংহিতা, অক্ষয় লাইব্রেরি, কলকাতা, ২৫/৪৭

কিন্তু আর্যসমাজের যজুর্বেদে অতিরিক্ত আরেকটি মন্ত্র দেখা যায়। তাদের বেদে অধ্যায়টি শেষ হয়েছে “४८” বা ৪৮ নং মন্ত্রের মাধ্যমে। দেখুন দয়ানন্দ ভাষ্যঃ[106]https://archive.org/details/JRZx_yajurveda-with-bhasha-bhashya-swami-dayanand-saraswati-vol.-1-arya-pratinidhi-sabha/page/n939/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

আর্যসমাজের তুলসি রাম শর্মা, দেবি চাঁদ, মাতা সবিতা যোশী সবার অনুবাদেই ৪৮টি মন্ত্র দেখা যায়।

এখন বলুন, বেদ কি অবিকৃত?

গেরুয়া ঝাণ্ডাধারীদের মতে, দয়ানন্দ সরস্বতী যজুর্বেদ ভাষ্যের ভূমিকাতেই লিখেছেন যে যজুর্বেদের ২৫ অধ্যায়ের মন্ত্রসংখ্যা ৪৭, তাই ৪৮ বানানো তার উদ্দেশ্য নয়।

কিন্তু বানানো তো হয়ে গেছে। জালিয়াতি স্বীকার করে নিয়ে বেদকে বাঁচাতে দোষ কোথায়?

দয়ানন্দ ভক্তদের দাবি, তিনি মূলত ৪৭ নং মন্ত্রটিকেই দু’ভাগ করে বিন্যস্ত করেছেন।

তা দেখা গেছে, কিন্তু সাথে অতিরিক্ত অংশও মূল মন্ত্রে এড করেছেনঃ

আসল মন্ত্র যেখানে শেষ হয়েছেঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

কিন্তু দয়ানন্দের বেদের শেষাংশঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

তার মন্ত্রে “স নো বোধি শ্রুধী হবমুরুষ্যা ণো অঘায়তঃ সমস্মাৎ” অংশটি অতিরিক্ত এসেছে।

নিয়োগপ্রেমীগণঃ না এটা দয়ানন্দজি আকাশ থেকে আনেন নাই। এটা মুল সংস্কৃত তে অর্থ সম্পূর্ণ করার জন্য শেষে মূল মন্ত্রের সাথে নোট/টীকা হিসেবে সংযুক্ত আছে, সংস্কৃত উইকিসোর্সে এটা থার্ড ব্র্যাকেট [] দিয়ে উল্লেখ আছে। দয়ানন্দজি সেটাকে পাঠ হিসেবে নিয়েছেন।

আমাদের কাছে তাদের প্রশ্ন যে উক্ত অংশটি কি মূল মন্ত্রের অংশ? যদি না হয় সেটিকে দয়ানন্দ সরস্বতী মূল মন্ত্র হিসেবে নিয়ে প্রচার করে জালিয়াতি করেছেন। এমনকি সেটা যে মন্ত্র না সেটা কোথাও লিখেন নি, না কোনো ফুটনোট। (খুব জানতে ইচ্ছে করে থার্ড ব্র্যাকেট সংস্কৃত ভাষায় ছিলো?)

আর যদি প্রকৃতপক্ষেই সেটা মূল মন্ত্রের অংশ হয়, তাহলে দয়ানন্দ ও তার ভক্তরা ব্যতীত বাকি সকল প্রকাশনী বেদ বিকৃত করে প্রকাশ করেছে।

যজুর্বেদ ২৬/২৬

যজুর্বেদের ২৬ অধ্যায়ের ২৬তম মন্ত্রটিতে একই শব্দ গায়ত্রী পরিবার আর আর্যসমাজের বেদে আলাদা। গায়ত্রী পরিবারের বেদঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

रक्षोहा विश्वचर्षणिरभि योनिमयोहते द्रोणे सधस्थमासदत् ॥ २६ ॥

বিজনবিহারী গোস্বামীর বেদে দেখুনঃ[107]যজুর্বেদ সংহিতা, ২৬/২৬, পৃ ১৯৯, অনুবাদঃ বিজনবিহারী গোস্বামী, হরফ প্রকাশনী

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

এখানে “योनिमयोहते/যোনিময়োহতে” শব্দটিকে আর্যসমাজের যজুর্বেদে “योनि॒मपो॑हते/যোনিমপোহতে” লেখা হয়েছে।

একই মন্ত্রে দয়ানন্দ সরস্বতীর বেদ দেখুনঃ[108]https://archive.org/details/JRZx_yajurveda-with-bhasha-bhashya-swami-dayanand-saraswati-vol.-1-arya-pratinidhi-sabha/page/n953/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

र॒क्षो॒हा वि॒श्वच॑र्षणिर॒भि योनि॒मपो॑हते। द्रोणे॑स॒धस्थ॒मास॑दत्॥२६॥

না না, কোনো প্রিন্টিং মিসটেইক না। এবারও একই যুক্তি খাটে না, দ্বেড়শ বছর ধরে প্রিন্টিং মিসটেইক হই না।

আবার এই একই মন্ত্রটির আরেকটা ঝামেলা দেখা যায় আর্যসমাজের সামবেদে…

সামবেদ বনাম যজুর্বেদ – যোনিমপোহতে সমস্যা

আলোচ্য যজুর্বেদ ২৬/২৬ এর মন্ত্রটিই সামবেদের উত্তরার্চিকের ৬৯০ নং মন্ত্র। এটি নিয়ে আর্যসমাজেই ঝামেলা বেঁধে গেছে! আর্যসমাজের মন্ত্রটি হলোঃ

रक्षोहा विश्वचर्षणिरभि योनिमयोहते । द्रोणे सधस्थमासदत् ॥६९०॥

এখানে কিন্তু “योनिमयोहते/যোনিময়োহতে” শব্দ! (রামনাথ বেদালঙ্কার ভার্শন)[109]https://archive.org/details/saam-veda-ramnath-1286p-2012yr/page/627/mode/1up

पदार्थ – (रक्षोहा) काम, क्रोध, लोभ, मोह आदि राक्षसों का विनाशक, (विश्वचर्षणिः) विश्वरूप परमात्मा का दर्शन करानेवाला ब्रह्मज्ञानरूप सोम (योनिम्) शरीर-स्थिति इत्यादि के कारणभूत, (सधस्थम् अभि) जिसमें सब ज्ञानेन्द्रियों से उपलब्ध ज्ञान एकत्र स्थित होते हैं, उस आत्मा को लक्ष्य करके अर्थात् आत्मा में जाने के लिए (योहते) यम-नियम आदि रूप लोहे के हथौड़ों से ताड़ित अर्थात् संस्कृत (द्रोणे) मनरूप द्रोणकलश में (आ असदत्) आकर स्थित होता है ॥२॥

তবে এখানে রামনাথ বিদ্যালঙ্কার তার সংস্কৃত ভাষ্যের ফুটনোটে উল্লেখ করেছেন যে দয়ানন্দের পাঠে “যোনিমপোহতে” রয়েছে,

टिप्पणीः –
१. ऋ० ९।१।२, य० २६।२६, यजुषि ‘योनि॒मपो॑हते’ इति पाठः। २. दयानन्दर्षिणा यजुर्भाष्येऽयमपि मन्त्रो विद्वत्पक्षे व्याख्यातः।

অর্থাৎ, দয়ানন্দের যজুর্বেদে যে “যোনিমপোহতে” ছিলো সেটাই তিনি উল্লেখ করলেন। রামনাথের থেকে অবশ্য ইন্টারনেট আর্য‌রা বেশি বুঝে গেছে। তাদের মতে গত দ্বেড়শ বছরের ভুল ২০০৮ সালের ভার্শনে সংশোধন করা হয়েছে। কী হাস্যকর!

দয়ানন্দ সরস্বতী অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু করে নি। এরকম সুকাজ তিনি ঋগ্বেদেও করেছেন। যোগীরাজ বসু দয়ানন্দের কাজ সম্পর্কে লিখেছেন,[110]বেদের পরিচয়, পৃ ১৪৯-১৫০ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.457476/page/n162/mode/1up?view=theater

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

যাহোক, একই মন্ত্রটি ঋগ্বেদ ৯/১/২ তে রয়েছে। এখানেও আর্যসমাজ “যোনিমপোহতে” রেখেছে, আর গায়ত্রী পরিবার “যোনিময়োহতে” রেখেছে। আবার কিছু আর্যসমাজী অনুবাদক “যোনিময়োহতে” রেখেছেন।

যজুর্বেদ ৩৯/৫

যজুর্বের অধ্যায় ৩৯ এর ৫ম মন্ত্রটি দেখি চলুন। গায়ত্রী পরিবার ভার্শন (২০১০ প্রিন্ট)-[111]https://archive.org/details/yajurved-hindi-translation-shri-ram-sharma-acharya/page/n354/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

এখানে “विष्यन्दमाने/বিষ্যন্দমানে” শব্দটিকে আর্যসমাজের বেদে “विष्पन्दमाने/বিস্পন্দমানে” করে দেওয়া হয়েছে।

একই মন্ত্রের দয়ানন্দ সরস্বতীর বেদ দেখি চলুনঃ[112]https://archive.org/details/JRZx_yajurveda-with-bhasha-bhashya-swami-dayanand-saraswati-vol.-1-arya-pratinidhi-sabha/page/n1210/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

না প্রিন্টিং মিসটেইক না। দয়ানন্দ সরস্বতী তার বেদের “বিস্পন্দমানে” শব্দের অনুবাদ করেছেনঃ

 (विष्पन्दमाने) विशेषकर प्राप्त हुए समय में / বিশেষাকার প্রাপ্ত হুই সামায় মে

আর এদিকে মহীধর ভাষ্য অনুযায়ী “বিষ্যন্দমানে” শব্দটির অনুবাদ করেছেন সত্যাব্রত সামশ্রমীঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয় বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

ক্ষেত্রজপুত্রদের দাবি হলো, এখানে “বিষ্পন্দ্যমানে” শব্দটিই সঠিক, সেটা তাদের একজন গুরু সেটা প্রমাণ করেছেন।

আসলে হাতে অরিজিনাল বেদ না থাকলে বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে প্রমান করার চেষ্টা করতে হয় যে সেই মন্ত্রটি কি সেটা বের করার জন্য। যা হোক, আসুন ২০০৮ সালের আর্যসমাজ এর কথিত শুদ্ধ ভার্শন দেখা যাকঃ[113]https://elibrary.thearyasamaj.org/book/yajurved–hindi-bhashya#book_reader/1911

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

দেখুন আর্যসমাজ এর কথিত শুদ্ধ ভার্শনেই তারা “বিষ্পন্দমানে” শব্দটিকে “বিষ্যন্দমানে” বানিয়ে ছেড়েছে, আবার তারাই চিৎকার করে যে এখানে “বিষ্পন্দমানে” ই হবে!

একই কাজ করা হয়েছে ২০২১ এর বাংলা অনুবাদেঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

যা হোক, দয়ানন্দ কাহিনি থেকে ফিরে আসি। আমরা আগে দেখেছিলাম রাম শর্মা আচার্য এর বেদে রয়েছে “বিষ্যন্দমানে”, কিন্তু মজার কথা হলো, ১৯৬০ এবং ১৯৬৫ সালের প্রিন্টে অন্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বেদে আবার “বিষ্পন্দমানে” রয়েছে! ১৯৬০ প্রিন্টঃ[114]https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.403031/page/n548/mode/1up?q=विष्पन्दमाने&view=theater

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

১৯৬৫ সালে সংস্কৃত সংস্থান, বেরেলি থেকে প্রকাশিত বেদঃ[115]https://archive.org/details/YajurVedaPt.SriRamSharmaAcharya/page/n552/mode/1up?view=theater

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

যজুর্বেদ ১৩/৫৮

যজুর্বেদ ১৩/৫৮ তে দেখা যাচ্ছে গায়ত্রী পরিবারের মন্ত্রে দু’টি শব্দ রয়েছে যেগুলো আর্যসমাজের বেদে নেই। গায়ত্রী পরিবারের বেদঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

এবার দয়ানন্দ সরস্বতীর বেদ দেখুনঃ[116]https://archive.org/details/JRZx_yajurveda-with-bhasha-bhashya-swami-dayanand-saraswati-vol.-1-arya-pratinidhi-sabha/page/n483/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

इ॒यमु॒परि॑ म॒तिस्तस्यै॒ वाङ्मा॒त्या हे॑म॒न्तो वा॒च्यः प॒ङ्क्तिर्है॑म॒न्ती प॒ङ्क्त्यै नि॒धन॑वन्नि॒धन॑वतऽ आग्रय॒णऽ आ॑ग्रय॒णात् त्रि॑णवत्रयस्त्रि॒ꣳशौ त्रि॑णवत्रयस्त्रि॒ꣳशाभ्या॑ शाक्वररैव॒ते वि॒श्वक॑र्म॒ऽ ऋषिः॑ प्र॒जाप॑तिगृहीतया॒ त्व॒या वाचं॑ गृह्णामि प्र॒जाभ्यः॑ लोकं ताऽ इन्द्रम्

অথর্ববেদ ২০/১২৭/৩

গায়ত্রী পরিবার ও আর্যসমাজ উভয়ের অথর্ববেদেই ২০/১২৭/৩ এ এই মন্ত্রটি এসেছেঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

কিন্তু ২য় শব্দটি আবার আরেকজনের বেদে উল্টে গেছে। আর্যসমাজেরই একজন পণ্ডিত রাজা রাম শাস্ত্রীর অথর্ববেদে অন্য শব্দঃ

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

অর্থাৎ, “इ॒षाय॑/ইষায়” শব্দটি “ऋषय॑/রিষায়” হয়ে গেলো! না প্রিন্টিং মিসটেইক নয়। এটা ম্যানুস্ক্রিপ্ট ভ্যারিয়েশন, একাধিক পাঠই পাওয়া যায়। গ্রিফিথ তার অনুবাদে “রিষায়” থেকে ঋষি/Rishi অনুবাদ করেছেন।[117]https://sacred-texts.com/hin/av/av20127.htm

ঋগ্বেদ ১/৫১/৮ – উত শূদ্র উর্তায়ে?

দয়ানন্দ সরস্বতী তার সত্যার্থ প্রকাশ বইয়ে একটি মন্ত্রকে ঋগ্বেদের মন্ত্র হিসাবে দাবি করেছেন,[118]সত্যার্থ প্রকাশ, ২০১৭ সংস্করণ, পৃ ১৭০, সমুল্লাস-৮

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

কিন্তু শেষের তিনটি শব্দ ঋগ্বেদের ঐ মন্ত্রে খুঁজে পাওয়া যায় নি, এমনকি দয়ানন্দের নিজের ঋগ্বেদেও না।[119]https://archive.org/details/BeBc_rigveda-with-bhashya-by-maharshi-dayananda-saraswati-mandal-1-vol.-1-arya-pratinidhi-sabha/page/n327/mode/1up?view=theater

অথর্ববেদ ৪/১১/১ – দয়ানন্দের সাথে মেলে?

দয়ানন্দ সরস্বতী একই বইয়ে আরেকটি মন্ত্রকে ঋগ্বেদের মন্ত্র বলে দাবি করে বসেছেন,[120]সত্যার্থ প্রকাশ, সংস্করণ-৫, সমুল্লাস-৮

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

মজার ব্যাপার হলো এই মন্ত্রটি বর্তমানে পাওয়া ঋগ্বেদের কোথাও নেই। পঞ্চম সংস্করণে ঋগ্বেদ আর অথর্ববেদ থেকে হালকা প্রমাণের চেষ্টা করেছিলো আর্যসমাজীরা, সেই নোট আবার কিন্তু নতুন সংস্করণগুলোতে ঢেকে দেওয়া হয়,

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

অর্থাৎ, আর্যসমাজীরা এই মন্ত্র পুরোপুরিভাবে কোনো বেদেই খুঁজে পায় নি চেষ্টা করেও। হতে পারে দয়ানন্দের কাছে ছিলো। এমন অনেকগুলো উদাহরণ দেখানো যাবে এই বই থেকে।

অন্যান্য গবেষকদের বিশ্লেষণ

মরিস বুমফিল্ড

মরিস বুমফিল্ড তার অথর্ববেদের ভূমিকা অংশে লিখেছেন,

The nineteenth book is a late addendum, in general very corrupt; its omission (with the exception of hymns 26, 34, 35, 38, 39, 53, and 54) does not detract much from the general impression left by the body of the collection. The seventeenth book consists of a single hymn of inferior interest. Again, books XV and XVI, the former entirely Brahmanical prose, the latter almost entirely so, are of doubtful quality and chronology. Finally, books XIV and XVIII contain respectively the wedding and funeral stanzas of the Atharvan, and are largely coincident with corresponding Mantras of the tenth book of the Rig-veda: they are, granted their intrinsic interest, not specifically Atharvanic.[121]https://www.sacred-texts.com/hin/sbe42/av001.htm

ম্যাকডোনেল

ড. এ.এ. ম্যাকডোনেল অথর্ববেদ সম্পর্কে লিখেছেন,

The last two books are manifestly late additions. Book XIX. consists of a mixture of supplementary pieces, part of the text of which is rather corrupt. Book XX., with a slight exception, contains only complete hymns addressed to Indra, which are borrowed directly and without any variation from the Rigveda. The fact that its readings are identical with those of the Rigveda would alone suffice to show that it is of later date than the original books, the readings of which show considerable divergences from those of the older Veda. There is, however, more convincing proof of the lateness of this book. Its matter relates to the Soma ritual, and is entirely foreign to the spirit of the Atharva-veda. It was undoubtedly added to establish the claim of the Atharva to the position of a fourth Veda, by bringing it into connection with the recognised sacrificial ceremonial of the three old Vedas. This book, again, as well . as the nineteenth, is not noticed in the Praticakhya of the Atharva-veda. Both of them must, therefore, have been added after that work was composed.Excepting two prose pieces (48 and 49) the only original part of Book XX. is the so-called kuntapa hymns (127-136).[122]A History of Sanskrit Literature, A. A. Macdonell, Printed in 1900, page 188

তিনি যে ছয়টি মন্ত্রের কথা বলছেনঃ ঋগ্বেদ ৭/৫৯/১২, ১০/২০/১, ১০/১২১/১০, ১০/১৯০/১-৩

উইটনি

উইটনিও তার অথর্ববেদের অনুবাদে একই কথা বলেছেন। এবং অথর্ববেদের ২০ তম মণ্ডলটি অনুবাদ করেন নি প্রক্ষিপ্ত বলে, বরং লিখেছেন,[123]https://archive.org/details/atharvavedasamhi02whituoft/page/1009/mode/1up

বেদের বিকৃতি ও বিপর্যয়

মজার ব্যাপার হলো আর্যসমাজী স্বামী সত্যপ্রকাশ সরস্বতীও এই অংশ অনুবাদ করেন নি!

উপসংহার

উপসংহারে তেমন কিছুই বলার নাই। হিন্দুদের একটি বিশেষ সম্প্রদায় যে দাবি করে বেদগ্রন্থগুলো এখনো অবিকৃত, এটা নিতান্তই তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসমাত্র।

Footnotes

Footnotes
1 সংহিতা (সংস্কৃত: संहिता, saṁhitā) (আক্ষরিক অর্থে, “একত্রিত, মিলিত, যুক্ত” এবং “নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও নিয়ম অনুসারে একত্রিত গ্রন্থ বা মন্ত্র-সংকলন). http://www.sanskrit-lexicon.uni-koeln.de/scans/MWScan/tamil/index.html
2 https://bn.m.wikipedia.org/wiki/বৈদিক_স্তোত্র
3 Joshua J. Mark (2020), The Vedas, World History Encyclopedia https://www.worldhistory.org/The_Vedas/
4 Bryant, Edwin, ‘The Date of the Veda’, The Quest for the Origins of Vedic Culture: The Indo-Aryan Migration Debate (New York, 2001; online edn, Oxford Academic, 1 Nov. 2003), https://doi.org/10.1093/0195137779.003.0013, accessed 24 Nov. 2022.
5 Rigvedasamhita, Rigvedasamhita-Padapatha and Rigvedasamhitabhashya, Ref No. 2006-58, Nomination Form, page 2-3 and 7, MEMORY OF THE WORLD REGISTER, UNESCO https://en.unesco.org/memoryoftheworld/registry/530
6 ঋগ্বেদ সংহিতা, পৃ ৫৯ https://archive.org/details/dli.bengal.10689.7915/page/n63/mode/1up

অথবা, ঋগ্বেদ সংহিতা, অক্ষয় লাইব্রেরী, ভূমিকা অংশ, তৃতীয় পরিচ্ছেদ: বেদ পরিচয়, অনুচ্ছেদ: বেদ বিষয়ক বিবিধ প্রসঙ্গ

7 পৃথিবীর ইতিহাস – প্রথম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী) পৃ ৪৫৫ https://bn.m.wikisource.org/wiki/পাতা:পৃথিবীর_ইতিহাস_-_প্রথম_খণ্ড_(দুর্গাদাস_লাহিড়ী).pdf/৪৬৭
8 স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৮ম খণ্ড, গীতা প্রসঙ্গ, গীতা-১, পৃ ৪১৭ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.356542/page/n437/mode/2up
9 মহাভারত, শান্তিপর্ব, অধ্যায় ৩৪৮, অনুবাদঃ কালীপ্রসন্ন সিংহ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.290443/page/n604/mode/1up
10 ছান্দোগ্য উপনিষদ, ৪র্থ প্রপাটক, খন্ড ১৭, শ্লোক ১-২, বসুমতী সাহিত্য মন্দির, পৃ ৩৫৪ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.357820/page/n380/mode/1up
11 শতপথ ব্রাহ্মণ ১১/৫/৮/১-৩, Satapatha Brahmana Part V (SBE44), Julius Eggeling tr. https://www.sacred-texts.com/hin/sbr/sbe44/sbe44032.htm
12 শতপথ ব্রাহ্মণ ১২/৩/৩/২ https://www.sacred-texts.com/hin/sbr/sbe44/sbe44055.htm
13 মনুসংহিতা ১/২৩, অনুবাদঃ মানবেন্দু বন্দোপাধ্যায়, শ্রীবলরাম প্রকাশনী, পৃ ৪
14 সত্যার্থ-প্রকাশঃ, ৭ম সমুল্লাস, পৃ ২১৬, সংস্করণ-৫ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.357387/page/n244/mode/1up
15 https://bn.m.wikisource.org/w/index.php?title=চিত্র%3Aমনুসংহিতা_%28যদুনাথ_ন্যায়পঞ্চানন_ও_ভরতচন্দ্র_শিরোমণি%29.pdf&page=21
16 https://archive.org/details/satyarthprakashl00dayauoft/page/n252/mode/1up?view=theater
17 মনুসংহিতা ২/২৩০, অনুবাদঃ সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স
18 মনুসংহিতা ৭/৪৩, সুরেশচন্দ্র
19 মনুসংহিতা ৯/১৮৮, সুরেশচন্দ্র
20 শ্রীমদভগবদ্‌গীতা ৯/২০, সাধক-সঞ্জীবনী, গীতা প্রেস
21 ঋগ্বেদ ১০/৯০/৯, অনুবাদঃ দুর্গাদাস লাহিড়ী ও রমেশচন্দ্র দত্ত, অক্ষয় লাইব্রেরি, কলকাতা, পৃ ১৮০২-১৮০৩
22 Rig Veda 10.90.9, Tr. Wilson https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc839607.html
23 শুক্ল যজুর্বেদ ৩১/৭, অনুবাদঃ দুর্গাদাস লাহিড়ী (মহীধর ভাষ্য অনুযায়ী), অক্ষয় লাইব্রেরি, কলকাতা
24 Staal, F. (1986). The Sound of Religion. Numen, 33(1), 33–64. https://doi.org/10.2307/3270126
25 সত্যার্থ-প্রকাশঃ, ৭ম সমুল্লাস, পৃ ২২০, সংস্করণ-৫ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.357387/page/n248/mode/1up
26 https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.477588/page/n190/mode/1up?view=theater&q=%E0%A6%9B%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A6%BF
27 যোগীরাজ বসু (১৯৫৭), বৈদিক সাহিত্যের ইতিহাস, পৃ ৩ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.457476/page/n16/mode/1up
28 নিরুক্ত ৭/১২/২, অমরেশ্বর ঠাকুর
29 https://archive.org/details/dli.bengal.10689.7915/page/n73/mode/1up
30 সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস, খণ্ড ১, পৃ ১৭ https://archive.org/details/dli.bengal.10689.9199/page/n33/mode/1up?view=theater
31 https://archive.org/details/gopatha-brahmana-english-translation-with-notes-and-introduction-www.frommuslims.com/page/30/mode/1up?view=theater
32 Purva Mimamsa Sutra Of Jaimini With The Original Commentary In English, 2/1/38, page 168 https://archive.org/details/dli.ernet.170066/page/168/mode/1up
33 https://archive.org/details/dli.ernet.170066/page/169/mode/1up?view=theater
34 শ্রীমদ্ভাগবত ১২/৬/৫২, প্রভুপাদ ভাষ্য, ভক্তিচারু স্বামী কর্তৃক বঙ্গানুবাদ, ইস্কন হতে প্রকাশিত
35 https://www.ebanglalibrary.com/101146/%e0%a7%a7%e0%a7%ab%e0%a5%a4%e0%a7%a7-%e0%a6%aa%e0%a6%9e%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a6%a6%e0%a6%b6-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%a3%e0%a7%8d%e0%a6%a1-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a5%e0%a6%ae-%e0%a6%85/
36 The society of the Ramayana
by Guruge, Ananda W. P., (1928), page 307 https://archive.org/details/trent_0116402264364/page/307/mode/1up
37 আর্য্যাবর্ত্ত (দ্বিতীয় বর্ষ – দ্বিতীয় খণ্ড), পৃ ৮৩২ – লিংক
38 বেদান্তদর্শন, ৩ অ, ৩ পা, পৃ ১২০ https://archive.org/details/dli.bengal.10689.7990/page/n655/mode/1up
39 বেদার্থ‌সংগ্রহ, পৃ ১১৭ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.301896/page/n123/mode/1up
40 সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস, খণ্ড ১, পৃ ১৭
41 কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ৩/১ বাংলা লিংক, ইংরেজি লিংক
42, 48 বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২/৪/১০, অনুবাদঃ মহেশচন্দ্র বেদান্তরত্ন (১৯২৮), পৃ ১১৬-১১৭, প্রকাশকঃ সীতানাথ তত্ত্বভূষণ
43 শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/৫/৪/১০ – সংস্কৃত উইকিসোর্স
44 মুন্ডকোপনিষৎ ২/১/৬, উপনিষদ, স্বামী লোকেশ্বরানন্দ, ই-বুক এডিশন, পৃ ২৯০, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড
45 মুন্ডক উপনিষদ ১/১/৫
46 গোপথ ব্রাহ্মণ ১/১/১০, অনুবাদঃ হুকুম চাঁদ পাটেল https://archive.org/details/gopatha-brahmana-english-translation-with-notes-and-introduction-www.frommuslims.com/page/11/mode/1up
47 গোপথ ব্রাহ্মণ ১/২/২৪, ১/৩/৩
49 শতপথ ব্রাহ্মণ ১৩/৪/৩/১-১৫ https://www.sacred-texts.com/hin/sbr/sbe44/sbe44104.htm
50 শ্রীমদ্ভাগবত ৩/১২/৩৪-৩৯, গীতা প্রেস
51 সত্যার্থ প্রকাশ, ৭ম সমুল্লাস, পৃ-২১৯ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.357387/page/n247/mode/1up
52 বৈদিক গবেষণা, খণ্ড ১, পৃ ৭
53 নিরুক্ত ৭/৮/৬, অনুবাদঃ অমরেশ্বর ঠাকুর, ৩য় অংশ, পৃ ৮৬১ https://www.frommuslims.com/?p=17734
54 Nirukta 7.8, Tr. Lakhsman Sarup, page 117 https://archive.org/details/nighantuniruktao00yaskuoft/page/117/mode/1up
55 সামবেদ সংহিতা, পূর্বার্চিক, ছন্দ আর্চিক, মন্ত্র ৭৩-৮১  https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.457693/page/n30/mode/1up?view=theater
56 ঋগ্বেদ ১০/১৭/৩
57 মহাভারত, শান্তিপর্ব, ১৮৬/১০, খণ্ড ৩৪, পৃ ১৭৯৪, অনুবাদঃ হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীস
58 কৃষ্ণযজুর্বেদ, তৈত্তিরীয় সংহিতা ৬/২/৫ https://www.sacred-texts.com/hin/yv/yv06.htm
59 সত্যার্থ প্রকাশ, সংস্করণ-২, পৃ ৮৮, সমুল্লাস-৪
60 নিরুক্ত ৩.৪.৮-৯, পৃ ৩৪৫, অমরেশ্বর ঠাকুর
61 যুক্তিবাদীর চোখে রাম ও রামায়ণ, অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ০১. গোড়ার কথা : ইতিহাস ও ধর্মকথার দ্বন্দ্ব – Google Books
62 ঋগ্বেদ ১০ম মণ্ডল, সুক্ত ৯০, পৃ ১২৬৫-১২৬৬, অনুবাদঃ রমেশচন্দ্র দত্ত, প্রকাশকঃ শ্রীলক্ষীকান্ত পাত্র https://www.frommuslims.com/?p=8966
63 ঐতরেয় ব্রাহ্মণ, অধ্যায় ৩৭, খণ্ড ৭, বাংলা লিংক , ইংরেজি লিংক
64 নিরুক্ত ৬/২৮/৬-১১, অনুবাদঃ অমরেশ্বর ঠাকুর
65 ঋগ্বেদ ১০/২৯/১ https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc838824.html
66 Rig Veda 6.52.2 https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc834281.html
67 Rig Veda 6.3.8 https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc833713.html
68 Rig Veda 2.28.10 https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc831376.html
69 Rig Veda 1.54.7 https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc829565.html
70 Rig Veda 2.23.7 https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc831307.html
71 Rig veda (Tulsi Ram), vol IV, pg 549 https://elibrary.thearyasamaj.org/book/rig-veda–volume-iv#book_reader/552
72 নিরুক্ত ৪/৪/১-২, অনুবাদঃ অমরেশ্বর ঠাকুর
73 ঋগ্বেদ ৫/৩৯/১, অনুবাদঃ রমেশচন্দ্র দত্ত, অক্ষয় লাইব্রেরি – কলকাতা, পৃ ৮৫৯
74 সামবেদ, উত্তরার্চিক, মন্ত্র নং ১১৭২, (অধ্যায় ৮, খণ্ড ৬, সুক্ত ১৪, মন্ত্র ১), অনুবাদঃ পরিতোষ ঠাকুর, হরফ প্রকাশনী, পৃ ১১৩

অথবা, [কৌথুম শাখা] উত্তরার্চিক, ৪/২/১৪/১

75 সামবেদ সংহিতা, [রানানিয়া শাখা] উত্তরার্চিক, অধ্যায় ৮, খণ্ড ৬, সুক্ত ১৪, মন্ত্র ১, অনুবাদঃ দুর্গাদাস লাহিড়ী, অক্ষয় লাইব্রেরি – কলকাতা, পৃ ৪৯৭
76 Sama Veda, Tulsi Ram, pg. 500 https://elibrary.thearyasamaj.org/book/sama-veda#book_reader/540
77 শতপথ ব্রাহ্মণ ৪/২/৩/৭-৮ https://sacred-texts.com/hin/sbr/sbe26/sbe2647.htm
78 Purva Mimamsa Sutra Of Jaimini With The Original Commentary In English, 2/1/32-33, page 163-164 https://archive.org/details/dli.ernet.170066/page/163/mode/1up
79 https://archive.org/details/Rigveda.In.Hindi.by.Ramgovind.Trivedi_201512/page/n23/mode/1up
80 https://archive.org/details/Rigveda.In.Hindi.by.Ramgovind.Trivedi_201512/page/n1553/mode/1up
81 Max Muller’s Selected Essays, vol. II (1881), p. 119.
82 বিষ্ণুপুরাণ ৩/৪/১
83 https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/vishnu-purana-wilson/d/doc115981.html
84 যেমনঃ শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪।৭।২।১১-১৩
85 মৎস্যপুরাণ ১৪৪/১০-১৫ https://bn.m.wikisource.org/wiki/পাতা:মৎস্যপুরাণম্‌_(পঞ্চানন_তর্করত্ন).pdf/৪৭০
86 https://archive.org/details/katyayana-sarvanukramani-saunaka-anuvakanukramani/page/n36/mode/1up
87 বৃহদ্দেবতা ৩/১৩০/B https://archive.org/details/brhaddevataattri01saunuoft/page/35/mode/1up , ইংরেজি অনুবাদঃ https://archive.org/details/brhaddevataattr02saunuoft/page/116/mode/2up
88 https://dharmawiki.org/index.php/Khila_Suktas_(खिलसूक्तानि)#
89 Parmeshwar Solanki (1995), Tulsi Prajna https://jainqq.org/explore/524582/74
90 বেদ বেদান্ত – উত্তরখণ্ড – বেদ বিচিন্তন, পৃ ১৬৫ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.456851/page/n220/mode/1up
91 গোপালচন্দ্র দত্ত, সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস, খণ্ড – ১, পৃ ১৯ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.301253/page/n24/mode/1up
92 প্রাগুক্ত, পৃ ২৪
93 ত্রৈলোক্যনাথ, সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস, খণ্ড-১, পৃ ৭৭ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.289995/page/n91/mode/1up?view=theater
94 গোপথ ব্রাহ্মণ ১/১/২৯ https://archive.org/details/gopatha-brahmana-english-translation-with-notes-and-introduction-www.frommuslims.com/page/31/mode/1up?view=theater
95 শ্রীরামচরিতমানস, বালকাণ্ড, দোহা ২৭ এর চৌপাই ১, গীতা প্রেস, পৃ 43-45 https://www.ramcharitmanas.iitk.ac.in/content/2127
96 শ্রীরামচরিতমানস, লঙ্কাকাণ্ড, দোহা ৪৮ এর চৌপাই ৪, গীতা প্রেস, পৃ 1106-1107 https://www.ramcharitmanas.iitk.ac.in/content/2648
97 শ্রীরামচরিতমানস, উত্তরকাণ্ড, সোরঠা ৮৯ ক, গীতা প্রেস, পৃ 1342-1343 https://www.ramcharitmanas.iitk.ac.in/content/2789
98 নিরুক্ত ৭/১২/৫
99 https://archive.org/details/JRZx_yajurveda-with-bhasha-bhashya-swami-dayanand-saraswati-vol.-1-arya-pratinidhi-sabha/page/n294/mode/1up
100 য়জুর্বেদ ভাষ্যম্‌ (১৯২৪), PDF Page 335
101 Yajurved – Hindi Bhashya, pg 423 https://elibrary.thearyasamaj.org/book/yajurved–hindi-bhashya#book_reader/426
102 যজুর্বেদ ভাষ্য, দয়ানন্দ সরস্বতী, বঙ্গানুবাদঃ সতীশ চন্দ্র, প্রকাশকঃ আর্য‌ সাহিত্য প্রচার ট্রাস্ট – দিল্লি, প্রিন্টঃ ২০২১, অধ্যায় ৯, মন্ত্র ২০, পৃ ২৫৩-২৫৪
103 যজুর্বেদ সংহিতা, পৃ ১৯৬, হরফ প্রকাশনী
104 https://sacred-texts.com/hin/wyv/wyvbk25.htm
105 [শুক্ল]যজুর্বেদ সংহিতা, অক্ষয় লাইব্রেরি, কলকাতা, ২৫/৪৭
106 https://archive.org/details/JRZx_yajurveda-with-bhasha-bhashya-swami-dayanand-saraswati-vol.-1-arya-pratinidhi-sabha/page/n939/mode/1up
107 যজুর্বেদ সংহিতা, ২৬/২৬, পৃ ১৯৯, অনুবাদঃ বিজনবিহারী গোস্বামী, হরফ প্রকাশনী
108 https://archive.org/details/JRZx_yajurveda-with-bhasha-bhashya-swami-dayanand-saraswati-vol.-1-arya-pratinidhi-sabha/page/n953/mode/1up
109 https://archive.org/details/saam-veda-ramnath-1286p-2012yr/page/627/mode/1up
110 বেদের পরিচয়, পৃ ১৪৯-১৫০ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.457476/page/n162/mode/1up?view=theater
111 https://archive.org/details/yajurved-hindi-translation-shri-ram-sharma-acharya/page/n354/mode/1up
112 https://archive.org/details/JRZx_yajurveda-with-bhasha-bhashya-swami-dayanand-saraswati-vol.-1-arya-pratinidhi-sabha/page/n1210/mode/1up
113 https://elibrary.thearyasamaj.org/book/yajurved–hindi-bhashya#book_reader/1911
114 https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.403031/page/n548/mode/1up?q=विष्पन्दमाने&view=theater
115 https://archive.org/details/YajurVedaPt.SriRamSharmaAcharya/page/n552/mode/1up?view=theater
116 https://archive.org/details/JRZx_yajurveda-with-bhasha-bhashya-swami-dayanand-saraswati-vol.-1-arya-pratinidhi-sabha/page/n483/mode/1up
117 https://sacred-texts.com/hin/av/av20127.htm
118 সত্যার্থ প্রকাশ, ২০১৭ সংস্করণ, পৃ ১৭০, সমুল্লাস-৮
119 https://archive.org/details/BeBc_rigveda-with-bhashya-by-maharshi-dayananda-saraswati-mandal-1-vol.-1-arya-pratinidhi-sabha/page/n327/mode/1up?view=theater
120 সত্যার্থ প্রকাশ, সংস্করণ-৫, সমুল্লাস-৮
121 https://www.sacred-texts.com/hin/sbe42/av001.htm
122 A History of Sanskrit Literature, A. A. Macdonell, Printed in 1900, page 188
123 https://archive.org/details/atharvavedasamhi02whituoft/page/1009/mode/1up
Exit mobile version