খ্রিস্টানদের নাজাত বিশ্বাসে নাকি রক্তে – বাইবেল কী বলে?

আলহামদুলিল্লাহ, সকল প্রশংসা এক মাত্র মহান আল্লাহর জন্য। আমরা আজ যে বিষয়ে জানবো তা আপনারা উপরের শিরোনাম দেখেই বুঝেছেন সম্ভবত। আমরা মূল আলোচনায় প্রবেশ করি।

আমাদের আজ আলোচনার বিষয় হচ্ছে, খ্রিস্টানদের নাজাত যিশুকে বিশ্বাসের মাধ্যমে নাকি রক্তের মাধ্যমে। আমাদের এ বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারন বিশ্বের প্রায় ২২০ কোটি খ্রিস্টান এটা বিশ্বাস করে যে, যিশুর রক্তের মাধ্যমে তাদের নাজাত। এখন এটা কি আদৌ সত্যি?
আসুন আমরা দেখি, নাজাত, সম্পর্কে খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল আমাদের কি বলে। যেই মানুষ সম্পর্কে তারা দাবি করে যে তার রক্তের মাধ্যমেই নাজাত, সেই মানুষ – যিশু নিজে নাজাতের ব্যাপারে কী বলেছে এবং যিশুর যে সকল শিষ্যরা যিশু নবুওয়ত পাওয়ার পর থেকে যিশুকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে ছিলো তারা নাজাত সম্পর্কে কী বলেছে এ সবকিছু আজ আমরা লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইংশা আল্লাহ।

যিশু কী প্রচার করতো বিশ্বাস নাকি রক্ত?

তো আসুন আমরা প্রথমে দেখবো যিশু নবুয়্যত পাওয়ার পর থেকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া আগ পর্যন্ত নাজাত বা অনন্ত জীবন সম্পর্কে মানুষের কাছে কি প্রচার করেছিলেন। যিশু মানুষের মধ্যে বিশ্বাস প্রচার করতোঃ

যে বিশ্বাস করে ও বাপ্তাইজিত হয়, সে পরিত্রাণ পাবে, কিন্তু যে বিশ্বাস করে না, তার শাস্তি হবে।[1]মার্ক 16:16 BCV

তবু যতজন তাঁকে গ্রহণ করল, যারা তাঁর নামে বিশ্বাস করল, তাদের তিনি ঈশ্বরের সন্তান হওয়ার অধিকার দিলেন।[2]যোহন 1:12 BCV

তারা তখন জিজ্ঞাসা করল, “ঈশ্বরের কাজ করতে হলে আমাদের কী করতে হবে?” যীশু উত্তর দিলেন, “ঈশ্বরের কাজ হল এই: তিনি যাঁকে পাঠিয়েছেন, তোমরা তাঁকে বিশ্বাস করো।”[3]যোহন 6:28‭-‬29 BCV

কিন্তু আমি যদি তা করি, তোমরা আমাকে বিশ্বাস না করলেও, সেই অলৌকিক কাজগুলিকে বিশ্বাস করো, যেন তোমরা জানতে ও বুঝতে পারো যে, পিতা আমার মধ্যে ও আমি পিতার মধ্যে আছি।”[4]যোহন 10:38 BCV

যীশু তখন উচ্চকণ্ঠে বললেন, “কোনো মানুষ যখন আমাকে বিশ্বাস করে তখন সে শুধু আমাকেই নয়, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকেও বিশ্বাস করে।[5]যোহন 12:44 BCV

“তোমাদের হৃদয় যেন উদ্বিগ্ন না হয়। ঈশ্বরকে বিশ্বাস করো, আমাকেও বিশ্বাস করো।[6]যোহন 14:1 BCV

তো আমরা দেখলাম যিশু কিন্তু মানুষের কাছে বার বার বিশ্বাস প্রচার করতো, মানে যিশু কে বিশ্বাস করতে হবে ও পিতা বা ঈশ্বর কেও বিশ্বাস করতে হবে এটাই সে প্রচার করতো। কিন্তু এখানে রক্তের কারবার কোত্থেকে আসলো আমরা বুঝি না!

আমরা আরো কিছু পয়েন্ট দেখি যে যিশুকে বিশ্বাস করার কারনে একজন মহিলার পাপ ক্ষমা হয়েছিলোঃ

যীশু সেই নারীকে বললেন, “তোমার বিশ্বাসই তোমাকে পরিত্রাণ দিয়েছে, শান্তিতে চলে যাও।”[7]লূক 7:50 BCV

তখন তিনি তাকে বললেন, “কন্যা, তোমার বিশ্বাসই তোমাকে সুস্থ করেছে। শান্তিতে ফিরে যাও।”[8]লূক 8:48 BCV

তো আমরা দেখতে পেলাম একজন মহিলা যিশু কে শুধু মাত্র বিশ্বাস করার কারনে তার পাপ ক্ষমা হয়েছে। কিন্তু মহিলা রক্ত কি জিনিস জানতই না।

যিশুর চোখে অনন্ত জীবনের জন্য কি দরকার – বিশ্বাস নাকি রক্ত?

এবার আসুন আমরা একটা জিনিস দেখবো সেটা হলো, নাজাত বা অনন্ত জীবন, এই অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য কি করতে হবে বা যিশু কি করতে বলেছে। অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য বিশ্বাস দরকার রক্তের নাঃ

যেন যারা তাঁকে বিশ্বাস করে তারা প্রত্যেকেই অনন্ত জীবন পায়। “কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করলেন যে, তিনি তাঁর একজাত পুত্রকে দান করলেন, যেন যে কেউ তাঁকে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।[9]যোহন 3:15‭-‬16 BCV

পুত্রকে যে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন লাভ করেছে; কিন্তু পুত্রকে যে অমান্য করে, সে জীবন দেখতে পাবে না, কারণ ঈশ্বরের ত্রুোধ তার উপর নেমে আসে।”[10]যোহন 3:36 BCV

“আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যে আমার বাক্য শোনে এবং যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁকে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন লাভ করেছে। সে বিচারে দোষী সাব্যস্ত হবে না, কারণ সে মৃত্যু থেকে জীবনে পার হয়েছে।[11]যোহন 5:24 BCV

কারণ আমার পিতার ইচ্ছা এই, পুত্রের দিকে যে দৃষ্টিপাত করে তাঁকে বিশ্বাস করে, সে যেন অনন্ত জীবন লাভ করে। আর শেষের দিনে আমি তাকে উত্থাপিত করব।”[12]যোহন 6:40 BCV

বিশ্বাস করলে অনন্ত জীবন এ সম্পর্কে আরো রেফারেন্সঃ

তো দেখুন আমি আপনাদের সামনে কত গুলো রেফারেন্স উপস্থাপন করলাম যে যিশু বলেছে ‘বিশ্বাস করলেই’ নাজাত, বিশ্বাস করলেই অনন্ত জীবন, বিশ্বাস করলেই সে নূর পাবে। দেখুন এখানে আমি (লেখক) রক্তের কোনো প্রকার গন্ধ পাচ্ছি না।

তো আসুন আমরা বিশ্বাস সম্পর্কে আরো কিছু রেফারেন্স দেখি। তার আগে আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে যে এখানে বিশ্বাস দিয়ে কি বোঝানো হচ্ছে। আপনারা এটা বুঝতে না পারলে সব কিছু গুলিয়ে ফেলবেন।
আমি বিশ্বাস দিয়ে এখানে, ‘যিশুর উপর ইমান ও ঈশ্বরের উপর ইমান’ আনা বুঝাচ্ছি। কারন যিশু বার বার বলেছে তোমরা আমার উপর বিশ্বাস করো, যেটা আমরা বাইবেলের ভাষায় বললে আমার উপর ইমান আনা বুঝাচ্ছে যিশু।
এবার আসুন আমাদের মূল আলোচনায় চলে যাই…

  1. পবিত্র আত্মাকে পেতে হলে সবকিছুর আগে বিশ্বাস দরকার।[13]যোহন 7:39
  2. যিশুকে যারা বিশ্বাস করবে বা তার প্রতি ইমান আনবে তার বিচার হবে না।[14]যোহন 8:24
  3. অনন্ত জীবন পেতে হলে ঈশ্বরের বিধান মানতেই হবে।[15]মথি 8:24

এবারও দেখুন যিশু নাজাতের সম্পর্কে কত কিছু বললো কিন্তু আমাদের খ্রিস্টান ভাইয়েরা রক্ত ধরে বসে রয়েছে।

যিশুকে বিশ্বাস না করলে শাস্তি

তো এখন আসুন আমরা দেখি কেউ যদি যিশু কে বিশ্বাস না করে বা তার প্রতি ইমান না আনে তার কি অবস্থা হবে এ সম্পর্কে যিশু বলেঃ

সেই কারণেই আমি তোমাদের বলেছি, তোমাদের পাপেই তোমাদের মৃত্যু হবে; আমি নিজের বিষয়ে যা দাবি করেছি, যে আমিই তিনি, তোমরা তা বিশ্বাস না করলে অবশ্যই তোমাদের পাপে তোমাদের মৃত্যু হবে।”[16]যোহন 8:24 BCV

যে বিশ্বাস করে ও বাপ্তাইজিত হয়, সে পরিত্রাণ পাবে, কিন্তু যে বিশ্বাস করে না, তার শাস্তি হবে।[17]মার্ক 16:16 BCV

যে ব্যক্তি তাঁকে বিশ্বাস করে না, তার বিচার ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে, কারণ ঈশ্বরের একজাত পুত্রের নামে সে বিশ্বাস করেনি।[18]যোহন 3:18 BCV

দেখুন যিশু কিন্তু একবারও বললো না যে যারা আমার রক্তে বিশ্বাস করবে না তাদের এটা হবে, তাদের ওটা হবে। কিন্তু যিশু সরাসরি বলতাছেন যারা আমাকে বিশ্বাস করবে না ঈশ্বর তাদের শাস্তি দিবেন। তো আমরা যিশুর কথা থেকেই বুঝতে পারি এখানে রক্তের কোন কারবার নেয় বরং সব কারবার হলো এক মাত্র বিশ্বাস বা ইমান।

শিষ্যরা কী প্রচার করতো – বিশ্বাস নাকি রক্ত?

এখন আসুন আমরা এবার যিশুর শিষ্যদের দেখি তারা কি প্রচার করতো যিশুকে আসমানে উঠিয়ে নেয়ার পরে। যিশুর শিষ্যরা একমাত্র প্রচার করতো বিশ্বাস। যে যিশুকে বিশ্বাস করতে হবে ও পিতা কে বিশ্বাস করতে হবে। রেফারেন্সঃ

তো আমরা দেখতে পেলাম প্রেরিতরাও বা শিষ্যরাও যিশুর মতো শুধু বিশ্বাস প্রচার করতো যে তোমরা প্রভু যিশুর উপর বিশ্বাস করো বা ইমান আনো আর এ সব বাদ দিয়ে খ্রিস্টানরা রক্তের মাধ্যমে নাজাত বলে বলে চিৎকার করে।

শিষ্যদের চোখে নাজাত বা অনন্ত জীবনের জন্য কি দরকার – বিশ্বাস নাকি রক্ত?

এবার আসুন আমরা আরো দেখি যে যিশুর শিষ্যদের চোখে নাজাত কিসে আছে, রক্তের মাধ্যমে নাকি শুধু যিশুকে বিশ্বাস করার মাধ্যমে।

শিষ্যদের চোখে নাজাত শুধু মাত্র বিশ্বাসে বা ইমানেঃ

  1. বিশ্বাস করলে ক্ষমা পাওয়া যাই।[19]প্রেরিতঃ ১০.৪৩
  2. বিশ্বাস করলে রেহায় বা নাজাত পাওয়া যাই।[20]প্রেরিতঃ ১৩.৩৯
  3. বিশ্বাস করলে পাপের গুনাহ মাফ হয়।[21]প্রেরিতঃ ১৬.৩১
  4. বিশ্বাস করলে পবিত্র আত্মা পাওয়া যাই।[22]প্রেরিতঃ ১৯.১-২
  5. বিশ্বাস করলে ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়া যাই।[23]গালাতীয়ঃ ৩.২২
  6. বিশ্বাস করলে নির্দোষ হওয়া যাই।[24]রোমীয়ঃ ৩.২২, ৩.২৬, ৪.৫
  7. বিশ্বাস করলে কেউ নিরাশ হবে না।[25]রোমীয়ঃ ৯.৩৩, ১০.১১
  8. বিশ্বাস করলে ঈশ্বরের প্রিয় হওয়া যাই।[26]রোমীয়ঃ ১০.৪

তো দেখুন আমরা যিশুর শিষ্যদের কথা থেকেও পরিস্কার যে নাজাত বা অনন্ত জীবন হলো যিশুর প্রতি বিশ্বাস করার কারনে বা ইমান আনার জন্য।

একটি সমস্যা ও তার সমাধান

সমস্যাঃ
এখানে আমাদের খ্রিস্টান ভাইরা দাবি করতে পারে যে কিন্তু বাইবেলের নতুন নিয়মের অনেক জায়গায় সাধু পৌল বলেছেঃ
“যারা এ কথা বিশ্বাস করবে না যে যিশু মৃতদের মধ্যে থেকে জীবিত হয়েছে এ কথা যারা বিশ্বাস করবে না তাদের নাজাত নাই…” – (রোমীয়ঃ ১০.৯)
বা, আমাদের রক্তে বিশ্বাস করতে বলেছে সাধু পৌল – (কলশীয়ঃ ১.২০)। তো এখন আপনারা কী বলবেন।

সমাধানঃ আমরা এটাই বলবো যে, সেটা আমাদের উপরে ছেড়ে না দিয়ে এটা আপনারাই ঠিক করুন যে আপনারা কার কথা মানবেন। কারন ধর্মটাও আপনাদের আর ধর্মগ্রন্থটাও আপনাদের। আর আমাদের কাজ হচ্ছে শুধু মানুষের সামনে সত্যকে পরিস্কার ভাবে তুলে ধরা। আমরা বলবো আপনাদের সমস্যা সমাধানের জন্য যে আপনাদের বাইবেলের মধ্যে দুইটি দল যেমনঃ

  1. প্রথম দল যারা রক্ত প্রচার করতো না যদিও বাইবেলের অন্য জায়গায় পাওয়া যায় তারা রক্ত প্রচার করতো এটা সম্পন্ন বৈপরীত্য।
  2. দ্বিতীয় দল যারা রক্ত ছাড়া আর কিছুই বুঝতো না।

তো এখন আমাদের প্রশ্ন, আপনারা কার কথা মানবেন? কারন যিশু সব সময় বিশ্বাস প্রচার করতো বা ইমান। রেফারেন্সঃ

তেমনি যিশুর শিষ্যরাও সব সময় বিশ্বাস প্রচার করতো। রেফারেন্সঃ

কিন্তু পৌল এদের বিরুদ্ধে গিয়ে কি প্রচার করতে শুরু করলো যে রক্ত, রক্ত, রক্ত। এ কথা বলার কারনে আমি মনে করি সাধু পৌল সরাসরি যিশুর বিরুদ্ধে কথা বলেছে।
এক দিকে যিশু ও তার শিষ্যরা বিশ্বাস প্রচার করতো কিন্তু আরেক দিকে পৌল,রক্ত, রক্ত, বলে চিৎকার করতো এটা সম্পূর্ণ বৈপরীত্য।
এখন আপনারা কোনটা মানবেন এটা আপনাদের দায়িত্ব। আপনারা যদি এখন যিশু ও তার শিষ্যদের কথা মানতে যান তো সাধু পৌল মিথ্যাবাদী বলে প্রমানিত হবে ও তার এ সব ভাওতাবাজি সম্পূর্ণ বাতিল বলে গন্য হবে। আর যদি আপনারা সাধু পৌলের কথা মেনে বিশ্বাস করেন যে রক্তের মাধ্যমে নাজাত তাহলে যিশু ও তার শিষ্যরা মিধ্যাবাদী বলে প্রমানিত হবে ও তার সব কথা বাতিল বলে গন্য হবে। কারন রাত ও দিন যেমন এক না,আলো ও অন্ধকার যেমন এক না, সাদা ও কালো যেমন এক না, তেমনি ভাবে যিশু ও তার শিষ্যদের কথা ও সাধু পৌলের কথা কখনো এক না বরং পরস্পর বিরোধী।

Footnotes

Footnotes
1, 17 মার্ক 16:16 BCV
2 যোহন 1:12 BCV
3 যোহন 6:28‭-‬29 BCV
4 যোহন 10:38 BCV
5 যোহন 12:44 BCV
6 যোহন 14:1 BCV
7 লূক 7:50 BCV
8 লূক 8:48 BCV
9 যোহন 3:15‭-‬16 BCV
10 যোহন 3:36 BCV
11 যোহন 5:24 BCV
12 যোহন 6:40 BCV
13 যোহন 7:39
14 যোহন 8:24
15 মথি 8:24
16 যোহন 8:24 BCV
18 যোহন 3:18 BCV
19 প্রেরিতঃ ১০.৪৩
20 প্রেরিতঃ ১৩.৩৯
21 প্রেরিতঃ ১৬.৩১
22 প্রেরিতঃ ১৯.১-২
23 গালাতীয়ঃ ৩.২২
24 রোমীয়ঃ ৩.২২, ৩.২৬, ৪.৫
25 রোমীয়ঃ ৯.৩৩, ১০.১১
26 রোমীয়ঃ ১০.৪
Exit mobile version