উলামারা তারকার মতো

উলামারা তারকার মতো

উলামাদের সম্পর্কে সাইয়্যিদুনা আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

উলামাদের দৃষ্টান্ত ওইসব তারকার মতো যাদের দ্বারা স্থলে ও জলের অন্ধকারে পথের দিশা পাওয়া যায়। আর যখন তারকাসমূহ আলোহীন হয়ে যায় তখন পথচারীর পথ হারানোর সম্ভাবনা থাকে।[1]মুসনাদে আহমদ-৩/১৫৭

এই হাদিসটি সেইসব উচ্চ পর্যায়ের হাদিসের মধ্য হতে যে (হাদীসগুলো) উম্মতের মধ্যে আলেমদের প্রভাব ব্যাখ্যা করে। রাসুল (ﷺ) বলেছেন,

পৃথিবীতে উলামায়ে কেরামদের দৃষ্টান্ত তারকার মতো।

পৃথিবীর উলামায়ে কেরাম এবং আকাশের তারকারাজির মধ্যে এরকম তুলনা দেওয়ার কারণ কি?
আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে তারকারাজির তিনটি উপকারিতা বর্ণনা করেন ।

আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

وَ لَقَدۡ زَیَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنۡیَا بِمَصَابِیۡحَ وَ جَعَلۡنٰهَا رُجُوۡمًا لِّلشَّیٰطِیۡنِ وَ اَعۡتَدۡنَا لَهُمۡ عَذَابَ السَّعِیۡرِ ﴿۵﴾

“আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপপুঞ্জ(তারকারাজি) দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের আযাব।”[2]আল-কুর’আন, সূরা মূলক ৬৭:৫

এই আয়াতে (তারকারাজির) দুইটি উপকারিতার কথা বর্ণিত আছে।

নিম্নে উল্লেখিত আয়াতে তৃতীয় উপকারিতার কথা বর্ণনা করা হয়েছেঃ

وَ  عَلٰمٰتٍ ؕ وَ  بِالنَّجۡمِ  ہُمۡ  یَہۡتَدُوۡنَ
“আর দিক-দিশা প্রদানকারী চিহ্নসমূহ; আর তারকারাজির সাহায্যেও তারা পথনির্দেশ লাভ করে।”[3]সূরা আন-নাহল ১৬:১৬

এটা হলো (তারকারাজির) তৃতীয় উপকারিতা।

যারা সুশোভিত করেন

প্রথম উপকারিতা হলো,
আমি নিকটবর্তী আসমানকে
প্রদীপপুঞ্জ(তারকারাজি) দ্বারা সুশোভিত করেছি।”

আকাশের তারকারাজি হলো তার সৌন্দর্য এবং শোভা। একইভাবে, পৃথিবীর ‘উলামায়ে কেরাম ; তাদেরকে সাধারণত উলামা বলা হয় কিন্তু এখন আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি ‘উলামা’ আল ‘আমিলুন[4]তারা তাদের ইলম অনুযায়ী আমল করে, যারা রব্বানিয়ুন [5]তারা আল্লাহ তা’আলার স্বীকৃতি অর্জন করেছে এবং তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করে, যারা সালিহুন [6]তারা দ্বীনী এবং তাকওয়া বজায় রাখে, তারা হেদায়েতপ্রাপ্ত এবং অন্যদেরকে পথপ্রদর্শন করে – এই শর্তাবলীর উপর ভিত্তি করে আমরা তাদের বলি ‘আলেম বা স্কলার”। যার মধ্যে এসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তিনি হবেন পৃথিবীর মানুষের জন্য সৌন্দর্য ও শোভাবর্ধনের মাধ্যম, যেমন আকাশের তারকারাজি আকাশের সৌন্দর্য ও শোভা বৃদ্ধি করে। পৃথিবীতে এমন আলেমের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ।

যারা শয়তানের বিপক্ষের অস্ত্র

‘উলামায়ে কেরামগন’ হলেন ইসলামী আকীদা, ইসলামী চরিত্র, ইসলামি ইবাদতের পদ্ধতির তত্ত্বাবধায়ক ও সংরক্ষক। তারাই এই পৃথিবীতে ইসলামের প্রহরী। আল্লাহ তায়ালা যেমন তারকারাজিকে শয়তানদের পিছনে প্রেরণ করেন যখনই তারা আসমান থেকে খবর চুরি করতে চায় – ঠিক একইভাবে – পৃথিবীর আলেমগণ ঈমানের প্রহরী ও রক্ষণাবেক্ষনকারী এবং তাদেরকে মানব শয়তানের বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হয়েছে। জ্বীন শয়তানের বিরুদ্ধে তারকাদের প্রেরণ করা হয়, আর ‘উলামা’ যারা ‘আমিলুন ও সালিহুন’ তাদেরকে মানব শয়তানের বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হয়। যখন একজন বিদআতী একটি বিদআতের সূচনা করে, যখন একজন পথভ্রষ্ট তার পথভ্রষ্টতা নিয়ে দাঁড়ায় এবং যখন একজন সংশয়বাদী তার সংশয় ছড়িয়ে দেয়; তখন কে তাদের কন্ঠরোধ করবে?

আলেম, যিনি তার ইলম অনুযায়ী আমল করেন; যিনি সালিহ, অর্থাৎ, দ্বীনী ও সৎকর্মপরায়ণ; যিনি বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী। তিনি এমন একজন যিনি সময়, সম্প্রদায় এবং সমাজ সম্পর্কে সচেতন। তিনিই এই বিদআতী ও পথভ্রষ্টদের মুখোমুখি দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখেন।এটি প্রকৃতপক্ষে প্রচারের আধুনিক ও নতুন উপায়গুলির অবস্থা।

যারা পথ দেখান

তৃতীয় উপকারিতা হচ্ছে,
আর তারকারাজির সাহায্যেও তারা পথনির্দেশ লাভ করে।

এই ‘উলামা’, যারা মানব শয়তানের বিরুদ্ধে প্রেরিত হয়েছেন , তারা হেদায়েতপ্রাপ্ত ও ধার্মিকদের জন্য তারকাস্বরূপ-যারা কল্যাণকে ভালোবাসে। যারা ধার্মিক ও সৎকর্মপরায়ণ ‘উলামাদের’ চারপাশে সমবেত হয় এবং তাদের আলো, হেদায়েত ও জ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

মুসলমানরা, খুব সাম্প্রতিক সময় পর্যন্তও, তাদের ‘উলামা’ এবং আলেমদের সাথে দৃঢ়ভাবে যুক্ত ছিল। কিন্তু… হায়!


লেখাটির মূল উৎসঃ Muslim Skeptic

অনুবাদঃ মাহফুজ আলম

Footnotes

Footnotes
1 মুসনাদে আহমদ-৩/১৫৭
2 আল-কুর’আন, সূরা মূলক ৬৭:৫
3 সূরা আন-নাহল ১৬:১৬
4 তারা তাদের ইলম অনুযায়ী আমল করে
5 তারা আল্লাহ তা’আলার স্বীকৃতি অর্জন করেছে এবং তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করে
6 তারা দ্বীনী এবং তাকওয়া বজায় রাখে
Exit mobile version