উম্মে ওয়ালাদ কী? উম্মে ওয়ালাদ বিক্রয় কি বৈধ?

উম্মু ওয়ালাদ কী? উম্মু ওয়ালাদ বিক্রয় বৈধ কি না?

অধিনস্থ দাসী যখন মনিবের সন্তান প্রসব করে তখন তাকে উম্মু ওয়ালাদ বলা হয়।
এক্ষেত্রে তার মুক্তি নিশ্চিত হয়ে যায়, তাকে আর বিক্রয় করা যায় না (যদিনা দাসীটি মারা যায়)।
প্রায় সকল সাহাবায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত। প্রসিদ্ধ চারটি সুন্নি মাজহাবের ইমামগণও এ বিষয়ে একমত।
সুনানে আল-দারাক্বুতনী তে সহিহ সনদে এসেছে,

٤٢٥٠ – حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ الشَّافِعِيُّ , نا الْهَيْثَمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ خَلَفٍ , نا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُطِيعٍ , نا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ هُوَ الْمُخَرِّمِيُّ , نا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ دِينَارٍ , عَنِ ابْنِ عُمَرَ , قَالَ: «نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ بَيْعِ أُمَّهَاتِ الْأَوْلَادِ , لَا يُبَعْنَ وَلَا يُوهَبْنَ وَلَا يُورَثْنَ , يَسْتَمْتِعُ بِهَا سَيِّدُهَا مَا بَدَا لَهُ فَإِذَا مَاتَ فَهِيَ حُرَّةٌ»
ভাবার্থঃ “রাসূল (সা.) কারো সন্তানদের মা-কে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন, তাদেরকে বিক্রি করা যাবে না, উপহারও দেয়া যাবে না, উত্তরাধিকার সূত্রেও পাওয়া যাবে না। মনিব জীবিত অবস্থায় তাকে ব্যবহার করবেন এবং যখন তিনি মারা যাবেন তখন তিনি মুক্ত হবেন।”[1]সুনানে আল-দারাক্বুতনী (আরবি), ৫/২৩৭, হাদিস নং ৪২৫০ https://shamela.ws/index.php/book/9771/3984 ; হাদিসটি সহিহ ও একাধিক সনদে বর্ণিত। দেখুনঃ … See Full Note

তাবারানী শরিফ[2]মু’যাম আল-তাবারানী আল-কবির (আরবি) ৪০৩৯
(প্রকাশনীভেদে ৪১৪৭).
সিলসিলা সহিহা[3]সিলসিলা সহিহা (আরবি) ২৪১৭
আন্তর্জাতিক ১৩০৫
https://www.al-hadees.com/hadees-details/silsila-sahih/1305
তাহক্বীক আলবানী: সহিহ
তে সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ خَوَّاتِ بن جُبَيْرٍ، قَالَ: مَاتَ رَجُلٌ وَأَوْصَى إِلَيَّ فَكَانَ فِيمَا أَوْصَى بِهِ أُمُّ وَلَدِهِ وَامْرَأَةٌ حُرَّةٌ، فَوَقَعَ بَيْنَ أُمِّ الْوَلَدِ وَالْمَرْأَةِ كَلامٌ، فَقَالَتْ لَهَا الْمَرْأَةُ: يَا لَكْعَا! غَدًا يُّؤْخَذُ بِأُذُنِكِ فَتُبَاعِينَ فِي السُّوقِ! فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللهِ صلی اللہ علیہ وسلم ، فَقَالَ: لا تُبَاعُ أُمُّ الولَدِ.
ভাবার্থঃ খাওয়াত ইবনে জুবায়ের (রাঃ) বলেছেন,
যখন এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার সময় আমার কাছে ওসিয়ত করে গেলো, তার উইলে উম্মু-ওয়ালাদ (দাসী) এবং আজাদ স্ত্রীর কথা ছিলো।
উম্মু-ওয়ালাদ এবং আজাদ স্ত্রীর মধ্যে তিক্ত দ্বন্দ্ব দেখা দিল। মহিলাটি বলল, “হে জারজ! তোমাকে কাল কান ধরে বাজারে বিক্রি করা হবে।”
আমি যখন রাসূল (সাঃ) এর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলাম, তখন তিনি বললেন, উম্মে-ওয়ালাদ বিক্রি করা যাবে না।

অর্থাৎ, আমরা দেখতে পাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই নিষেধ করে গেছেন।
মুয়াত্তা ইমাম মালিকে এসেছে,

حَدَّثَنِي مَالِك عَنْ نَافِعٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ قَالَ أَيُّمَا وَلِيدَةٍ وَلَدَتْ مِنْ سَيِّدِهَا فَإِنَّهُ لَا يَبِيعُهَا وَلَا يَهَبُهَا وَلَا يُوَرِّثُهَا وَهُوَ يَسْتَمْتِعُ بِهَا فَإِذَا مَاتَ فَهِيَ حُرَّةٌ.

আবদুল্লাহ ইব্নু উমার (রা) থেকে বর্ণিতঃ:
উমার ইব্নু খাত্তাব (রা) বলেছেন, যে ক্রীতদাসী তার কর্তার ঔরসে সন্তান জন্মাইয়াছে, সে কর্তা উহাকে বিক্রয় করতে পারবে না, আর পারবে না উহাকে দান করতে, কেউ উহার স্বত্বাধিকারও লাভ করবে না, মনিব তাকে উপভোগ করবে যখন মনিবের মৃত্যু হবে ক্রীতদাসী তখন আযাদ হবে।[4]মুয়াত্তা ইমাম মালিক ১৪৬৫ (বাংলা অনুবাদ, ihadis)
আন্তর্জাতিকঃ ৩৮:৬ https://www.alim.org/hadith/muwatta/38/6 ; সহিহ

আল যুরক্বানী বলেছেন, “উমর (রাঃ), তাবেঈদের বেশিরভাগ, চার ইমাম, এবং ইসলামিক আইনজ্ঞদের অধিকাংশই এ ব্যাপারে একমত। যখন উমর (রাঃ) তাদের (উম্মু ওয়ালাদদের) বিক্রয় করতে নিষেধ করেন তখন এটা ঐক্যমতের ভিত্তিতেও নিষিদ্ধ হয়।”[5]শারহ্ আল-যুরক্বানী ১৫০৯
উম্মু ওয়ালাদ মুক্তি সম্পর্কে আরো হাদিস দেখুন,

হাদিসে এসেছে,

عن عمر بن الخطاب – رضي الله عنه – قال: إذا ولدت أم الولد من سيدها فقد عتقت , وإن كان سقطا.
ওমর বিন আল-খাত্তাবের (রাঃ) কর্তৃত্বে যিনি বলেছেন: যদি উম্মে ওয়ালাদ সন্তান জন্ম দেয়, তবে সে মুক্তি পাবে, যদিও তা গর্ভপাত হয়।[6]কিতাব আলজামি আলসাহীহ লিলসুনান ওয়ালমাসানিদ ২৪/২৯০; ইরওয়া ১৭৭১; সহিহ

দাসী যদি মনিবের সন্তান প্রসব করে, এটি সুস্থ জীবিত হোক কিংবা মৃত, এটি মনিবের মৃত্যুর পর দাসীর মুক্তির নিশ্চয়তা দেয়। সন্তানটি কেমন হবে সেই নিয়ে ইবনে রুশদ রহঃ (মৃত্যু ৫৯৫) উল্লেখ করেছেন,

“ইমাম মালিক বলেছেন, দাসীর প্রসব করা যেকোনো কিছুই, এমনকি তা ভ্রুণ কিংবা রক্তপিন্ড হলেও।
ইমাম আল শাফিঈ (শাফেঈ মাজহাবের প্রধান ইমাম) বলেছেন, শারীরিক উপস্থিতি ও শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলো (যেমন হাত পায়ের আকৃতি) প্রকাশ হওয়া দরকার।”

ইবনে রুশদ এটাও উল্লেখ করেছেন যে,

“ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, গর্ভাবস্থায়ও দাসীকে বিক্রয় করা নিষিদ্ধ।”[7]Bidayat al-Mujtahid- The Distinguished Jurist’s Premier
[ইংরেজি অনুবাদ] ২য় খণ্ড, পৃ ৪৭৫-৪৭৬ https://archive.org/details/learnislampdfenglishbookthedistinguishedjuristsprimervol.2bidayatalmujtahid/page/n479/mode/1up

উম্মে ওয়ালাদের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে বিভিন্ন ফিক্বহী বিষয় জানার জন্য দেখতে পারেন,

ফুকাহায়েকেরামের মতে,
রাসূল (সাঃ) জীবনের শেষদিকে উম্মু ওয়ালাদ ও সন্তানদের বিক্রয় করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন।[8]মাজমূ শারহ্ আল মুহাযযাব ৯/২৪৩
আইনজ্ঞদের অধিকাংশ একমত হয়েছেন যে, উম্মু ওয়ালাদদের বিক্রয় করা যাবে না, বন্ধক রাখা যাবে না, উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া যাবে না। তবে মালিকের মৃত্যুর পর উম্মু ওয়ালাদ মুক্ত হয়ে যায়।[9]جمهور الفقهاء – وعليه أكثر التابعين على أن السيد لا يجوز له في أم ولده التصرف بما ينقل الملك، فلا يجوز بيعها، ولا وقفها، ولا رهنها، ولا تورث، بل تعتق بموت السيد من كل المال ويزول الملك عنها. মাউসু’আহ আল … See Full Note
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত হাদিস দু’টিতে আপাতদৃষ্টিতে মানুষ বৈপরীত্য দেখতে পারে।
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে জীবিত থাকা অবস্থায় আমরা আমাদের যুদ্ধবন্দিনী ক্রীতদাসী ও উম্মু ওয়ালাদ বিক্রয় করতাম। আমরা এটিকে দুষণীয় মনে করতাম না।[10]ইবনু মাজাহ 2517 (ihadis).

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বাক্‌রের যুগে উম্মু ওয়ালাদ বাঁদীদেরকে বিক্রি করেছি। পরবর্তীতে ‘উমারের (রাঃ) যুগে তিনি আমাদের বারণ করায় আমরা বিরত হই।[11]আবু দাউদ 3954 (ihadis).

আলেম-ওলামাগণ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ইসলামের প্রথমদিকে উম্মু ওয়ালাদ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা ছিলো না। পরবর্তীতে নিষিদ্ধ করা হয়।
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ সহ কয়েকজন ব্যাপারটি জানতেন না।[12]মাজমূ শারহ্ আল মুহাযযাব ৯/২৪৩ https://shamela.ws/book/2186/4708
আবু বকর (রাঃ) এর দু’বছরের শাসনামলে তাঁর নজরে এ বিষয়টি আসে নি। ওমর (রাঃ) এ বিষয়টি নজরে আসার পর জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ কে অবহিত করেন। ওমর (রাঃ) তার শাসনামলে এরুপ কিছু বিষয়ের সমাধান করেন রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশনানুযায়ী।[13]ফাতহ আল-কাদির আল-মানাউই, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮৫

এবং আল্লাহই ভালো জানেন।

Footnotes

Footnotes
1 সুনানে আল-দারাক্বুতনী (আরবি), ৫/২৩৭, হাদিস নং ৪২৫০
https://shamela.ws/index.php/book/9771/3984 ; হাদিসটি সহিহ ও একাধিক সনদে বর্ণিত।
দেখুনঃ http://hadith.islam-db.com/single-book/542/%D8%B3%D9%86%D9%86-%D8%A7%D9%84%D8%AF%D8%A7%D8%B1%D9%82%D8%B7%D9%86%D9%8A/0/3726

http://hadith.islam-db.com/single-book/542/%D8%B3%D9%86%D9%86-%D8%A7%D9%84%D8%AF%D8%A7%D8%B1%D9%82%D8%B7%D9%86%D9%8A/0/3728

2 মু’যাম আল-তাবারানী আল-কবির (আরবি) ৪০৩৯
(প্রকাশনীভেদে ৪১৪৭).
3 সিলসিলা সহিহা (আরবি) ২৪১৭
আন্তর্জাতিক ১৩০৫
https://www.al-hadees.com/hadees-details/silsila-sahih/1305
তাহক্বীক আলবানী: সহিহ
4 মুয়াত্তা ইমাম মালিক ১৪৬৫ (বাংলা অনুবাদ, ihadis)
আন্তর্জাতিকঃ ৩৮:৬ https://www.alim.org/hadith/muwatta/38/6 ; সহিহ
5 শারহ্ আল-যুরক্বানী ১৫০৯
6 কিতাব আলজামি আলসাহীহ লিলসুনান ওয়ালমাসানিদ ২৪/২৯০; ইরওয়া ১৭৭১; সহিহ
7 Bidayat al-Mujtahid- The Distinguished Jurist’s Premier
[ইংরেজি অনুবাদ] ২য় খণ্ড, পৃ ৪৭৫-৪৭৬ https://archive.org/details/learnislampdfenglishbookthedistinguishedjuristsprimervol.2bidayatalmujtahid/page/n479/mode/1up
8 মাজমূ শারহ্ আল মুহাযযাব ৯/২৪৩
9 جمهور الفقهاء – وعليه أكثر التابعين على أن السيد لا يجوز له في أم ولده التصرف بما ينقل الملك، فلا يجوز بيعها، ولا وقفها، ولا رهنها، ولا تورث، بل تعتق بموت السيد من كل المال ويزول الملك عنها.
মাউসু’আহ আল ফিক্বাইয়াহ (4/166)
https://shamela.ws/book/11430/2326
10 ইবনু মাজাহ 2517 (ihadis).
11 আবু দাউদ 3954 (ihadis).
12 মাজমূ শারহ্ আল মুহাযযাব ৯/২৪৩ https://shamela.ws/book/2186/4708
13 ফাতহ আল-কাদির আল-মানাউই, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮৫
Exit mobile version