শিয়াদের তাকিয়াহ বনাম ইসলাম!

শী'আদের অনুসৃত তাক্বিয়্যাহকে ইসলামের পরিভাষায় মুনাফিকী বলা হয়

তাকিয়াহ কী?

তাকিয়াহ রাফিদ্বী শিয়াদের একটি মৌলিক নীতি। আহলুল সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এ বিষয়ে তাদের থেকে ভিন্ন অবস্থান পোষণ করে। তাকিয়াহ এমন একটি বিষয় যা শিয়াদেরকে আল্লাহর সরল পথ থেকে বিচ্যুত করে।

তাদের ধর্মে তাকিয়া মানে মুখে এক আর অন্তরে আরেকটি, যার ভিতরের অবস্থা বাহ্যিক প্রকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এভাবে তারা অন্যায়ভাবে ও শত্রুতার বশবর্তী হয়ে আল্লাহর দ্বীনের সাথে প্রতি মিথ্যা ও প্রতারণাকে সংযুক্ত করে।

শিয়াদের তাকিয়া

তাক্বিয়ার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে শী‘আরা অনেক মিথ্যা ও উদ্ভট কথা সমাজে চালু করেছে।

আবূ ‘আব্দিল্লাহ বলেন,

‘হে আবূ ওমর! নিশ্চয় দ্বীনের দশ ভাগের নয় ভাগ ‘তাক্বিয়ার অন্তর্ভুক্ত, যার ‘তাক্বিয়া’ নেই, তার ধর্ম নেই। আর মদ ও মোজার উপর মাসাহ ব্যতীত সকল বস্তুর মধ্যেই ‘তাক্বিয়া’ আছে’। [1]উছূলুল কাফী, পৃ. ৪৮২

আবূ জা‘ফর বলেন,

‘তাক্বিয়া’ আমার এবং আমার বাপ-দাদাদের ধর্ম। যার ‘তাক্বিয়া’ নেই, তার ঈমান নেই’ [2]প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৮৪

আবূ আব্দিল্লাহ বলেন,

‘তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে ভয় কর এবং তাকে ‘তাক্বিয়া’ দ্বারা ঢেকে রাখ। কারণ যার ‘তাক্বিয়া’ নেই, তার ঈমান নেই’ [3]প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৮৩

আবূ আব্দিল্লাহ বলেন,

‘আমার পিতা বলতেন, ‘তাক্বিয়া’র চেয়ে আমার চক্ষু অধিক শীতলকারী বস্তু আর কী হতে পারে! নিশ্চয় ‘তাক্বিয়া’ হল মুমিনের জান্নাত’[4]প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৮৪

শিয়াদের তাকিয়ার ঐতিহাসিক ও প্রায়োগিক স্বরূপ

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) বলেন,

“রাফিদ্বীরা সবচেয়ে অজ্ঞ দল, মিথ্যাবাদী এবং মানকুল (কুরআন-হাদিস) এবং মা’কুল (যুক্তি/কারণ) এর জ্ঞান থেকে সবচেয়ে দূরে। তারা তাকিয়াকে তাদের ধর্মের অন্যতম স্তম্ভে পরিণত করেছে। তারা আহলে বাইতের(নবী পরিবারের) বিরুদ্ধে এমনসব মিথ্যা কথা বলে থাকে যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানার কথা না। এমনকি তারা জাফর আস-সাদিক থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, ❝তাকিয়াহ আমার দ্বীন এবং আমার বাপ-দাদার ধর্ম।❞ প্রকৃতপক্ষে তাক্বিয়া মুনাফিকের নিদর্শনসমূহের অন্যতম। বস্তুত এটাই প্রকৃত নিফাক বা দ্বিচারিতা।[5]ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ), মাজমু আল-ফাতাওয়া, ১৩/২৬৩

ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) আরো বলেছেন,

“রাফিদ্বীদের ক্ষেত্রে, তাদের শিয়া ধর্মদ্রোহিতার উৎপত্তি মূলত ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলা থেকে, যা তাদের মধ্যে ব্যাপক। তারা নিশ্চিত করেছে, যখন তারা বললো, ❝আমাদের ধর্ম হল তাকিয়াহ।❞ অর্থাৎ মুখে এমন কথা বলা যা তার অন্তরে ভিন্ন এবং এটা আসলে মিথ্যা ও নিফাক। তা সত্ত্বেও, তারা দাবি করে যে তারা (সত্য) বিশ্বাসী, অন্যান্য মুসলিমরা নয়। এবং তারা প্রথম দিকের মুসলিমদেরকে মুরতাদ এবং মুনাফিক হিসাবে বর্ণনা করে, যখন তারাই এই বর্ণনার যোগ্য। যারা বাহ্যিকভাবে নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবি করে তাদের মধ্যেও এমন কোন লোক নেই যারা শিয়াদের চেয়ে মুনাফিকী ও মুরতাদ হওয়ার দিক দিয়ে বেশি কাছাকাছি, এবং তাদের তুলনায় অন্য কোন দলে মুরতাদ ও মুনাফিকদের সংখ্যা বেশি নেই।”[6]মিনহাজ আস-সুন্নাহ আন-নবাবিয়্যাহ, ১/৩০

শিয়াদের নীতির ব্যাখ্যায় ‘আল-মাউসুয়াহ আল-মুয়াসারাহ ১/৫৪’-এ বলা হয়েছে,

“তাকিয়াহঃ তারা – মানে ইমামী শিয়ারা – এটিকে তাদের ধর্মের একটি মৌলিক নীতি হিসাবে বিবেচনা করে।  যে ব্যক্তি তা ত্যাগ করবে তার অবস্থান সালাত ত্যাগকারীর মত। এটি ওয়াজিব এবং ইমাম (মাহদী) আবির্ভূত না হওয়া পর্যন্ত তা থেকে বিরত থাকা নাজায়েজ। যে ব্যক্তি ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে তা ত্যাগ করবে, সে আল্লাহর দ্বীন ও ইমামিয়্যার দ্বীন ত্যাগ করেছে।”[7]আল-মাউসুয়াহ আল-মুয়াসারাহ ১/৫৪

ডক্টর নাসির ইবনে আবদুল্লাহ আল-কাফারি বলেছেন:

“আল-মুফিদ তাদের মতে তাকিয়াহকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এই বলে যে, ‘তাকিয়াহ মানে সত্যকে গোপন করা, বিশ্বাসকে গোপন করা, একজনের থেকে ভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে নিজের সত্য বিশ্বাসকে গোপন করা এবং প্রকাশ্যে না দেখানো, যা ধর্মীয় বা পার্থিব দিক থেকে নেতিবাচক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

এভাবে আল-মুফিদ তাকিয়াহকে সংজ্ঞায়িত করেছেন, যারা তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন তাদের ক্ষতির ভয়ে বিশ্বাসকে লুকিয়ে রাখা – যেমন আহলে সুন্নাহ, (যেমনটি সাধারণত হয় যখন তারা এই শব্দটি ব্যবহার করে)। অন্য কথায়, এর অর্থ হল আহলে সুন্নাহর মাযহাব অনুসরণ করার বাইরে বাইরে অভিনয় করা (যাকে তারা মিথ্যা বলে মনে করে), এবং রাফেদী মাযহাবকে গোপন করা, যা তারা সত্য বলে বিশ্বাস করে।

তাই কিছু সুন্নি মনে করে যে, যারা এই আকীদা মেনে চলে তারা মুনাফিকদের চেয়েও নিকৃষ্ট, কারণ মুনাফিকরা বিশ্বাস করে যে, তারা যা কুফর গোপন করছে তা মিথ্যা, এবং তারা ভয়ে মুসলমান হওয়ার বাহ্যিক প্রদর্শন করে। কিন্তু এই লোকদের ক্ষেত্রে তারা মনে করে যে তারা যা গোপন করছে তা সত্য এবং তাদের পথই রাসূল ও ইমামদের পথ।”[8]উসুল মাযহাব আশ-শিয়াহ আল-ইমামিয়া, ২/৮০৫

ইসলাম ও আহলুল সুন্নাহ ওয়াল জামা’আর দৃষ্টিতে তাকিয়াহ

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

‘তাক্বিয়া মুনাফিকের নিদর্শনসমূহের অন্যতম। বস্তুত এটাই প্রকৃত নিফাক বা দ্বিচারিতা।’[9]ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ২৬৩

যেমন আল্লাহ বলেন,

‘আর মুনাফিকদেরকেও জেনে নেয়া। তাদেরকে বলা হয়েছিল; এসো, ‘আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর, কিংবা (কমপক্ষে) নিজেদের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা কর’। তখন তারা বলল, ‘যদি আমরা জানতাম যুদ্ধ হবে, তাহলে অবশ্যই তোমাদের অনুসরণ করতাম’। তারা ঐ দিন ঈমানের চেয়ে কুফরীরই নিকটতম ছিল, তারা মুখে এমন কথা বলে যা তাদের অন্তরে নেই, যা কিছু তারা গোপন করে আল্লাহ তা বিশেষরূপে জ্ঞাত আছেন।[10]আল ক্বুরআন, সূরা আলে ‘ইমরান ৩:১৬৭

হাদিসে এসেছে,

আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুনায়র এবং যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে রয়েছে সে সত্যিকার মুনাফিক; যার মধ্যে উক্ত চারটির একটিও থাকে সে তা না ছাড়া পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকীর একটি স্বভাব রয়ে যায়। (১) সে কথা বললে মিথ্যা বলে, (২) চুক্তি করলে তা ভঙ্গ করে, (৩) ওয়াদা করলে খেলাফ করে এবং (৪) ঝগড়া করলে কটূক্তি করে। রাবী সুফিয়ানের বর্ণনায় হাদিসটিতেخَلَّةٌ শব্দের স্থলেخَصْلَةٌ রয়েছে, (উভয় শব্দের অর্থ একই)।[11]সহিহুল মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বাংলাদেশ হাদিস নং ১১৪, হাদিস একাডেমী ১১৩, আন্তর্জাতিক 58

শুধুমাত্র যে সময় বৈধ

উল্লেখ্য যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাময়িক সত্য গোপন করা যায়। যেমন আল্লাহ বলেন,

মু’মিনগণ যেন মু’মিনগণ ছাড়া কাফিরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করে, মূলতঃ যে এমন করবে আল্লাহর সাথে তার কোন কিছুরই সম্পর্ক নেই, তবে ব্যতিক্রম হল যদি তোমরা তাদের যুলম হতে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর। আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন এবং আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তন।[12]আল-ক্বুরআন, সূরাহ আলে ইমরান ৩:২৮

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

‘আল্লাহ তা‘আলা ঐ লোকদেরকে অনুমতি দেন, যারা কোন শহরে কোন সময় অবিশ্বাসীদের অনিষ্ট হতে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে সাময়িকভাবে তাদের সঙ্গে মৌখিক বন্ধুত্ব স্থাপন করে কিন্তু তাদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা রাখে না। আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘কোন কোন গোত্রের সাথে আমরা প্রশস্ত বদনে মিলিত হই, কিন্তু আমাদের অন্তর তাদের প্রতি অভিশাপ দেয়। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘শুধু মুখে বন্ধুত্ব প্রকাশ করতে হবে, কিন্তু কাজে-কর্মে এরূপ অবস্থাতেও কখনও তাদের সহযোগিতা করা যাবে না’।[13]তাফসীর ইবনু কাছীর, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩০

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

কোন ব্যক্তি তার ঈমান গ্রহণের পর আল্লাহকে অবিশ্বাস করলে এবং কুফরীর জন্য তার হৃদয় খুলে দিলে তার উপর আল্লাহর গযব পতিত হবে আর তার জন্য আছে মহা শাস্তি, তবে তার জন্য নয় যাকে (কুফরীর জন্য) বাধ্য করা হয় অথচ তার দিল ঈমানের উপর অবিচল থাকে।[14]সূরা আন-নাহল ১৬:১০৬

তবে উক্ত আয়াতের অর্থ এই নয় যে, প্রাণ বাঁচানোর জন্য কুফরী কথা বলা বাঞ্ছনীয়। বরং এটি নিছক একটি ‘রুখছাত’ তথা সুবিধা দান ছাড়া আর অন্য কিছুই নয়। যদি অন্তরে ঈমান অক্ষুণ্ণ  রেখে মানুষ বাধ্য হয়ে এ ধরনের কথা বলে, তাহলে তাকে কোন জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে না।

ইবনে আল ক্বাইয়্যিম (রহঃ) বলেছেন,

“তাকিয়াহ হল একজন বান্দা তার বিশ্বাসবিরুদ্ধ কথা বলে, তাকিয়াহ না করলে তার উপর যে ক্ষতি হতে পারে তার ভয়ে।”[15]আহকাম আহলে আধ-ধীম্মাহ, ২/১০৩৮

(أحكام أهل ضدهمة, أ/١٠٣٨).

আল মাউসূয়া আল-ফিক্বাইয়্যাহতে এসেছে,

অধিকাংশ সুন্নী আলেমদের অভিমত হল যে, তাকিয়া সংক্রান্ত মূল নীতি হল ‘এটি নিষিদ্ধ’;  এটা শুধুমাত্র প্রয়োজনের ক্ষেত্রে জায়েয, এবং শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পরিমাণে অনুমোদিত।  আল-কুরতুবী বলেন: তাকিয়া সম্পর্কে মূল নীতি হল যে মৃত্যু ভয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা বা চরম ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলে তা জায়েয নয়এবং আমরা যতদূর জানি এর বিপরীতে কোনো বর্ণনা নেই সাহাবাদের মধ্যে মুআয ইবনে জাবাল থেকে এবং তাবেয়ীনদের মধ্যে মুজাহিদ থেকে বর্ণনা ছাড়া।[16]মাওযূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ আল-কুয়েতিয়া, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ১৮৬-১৮৭

আমরা একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে,

শিয়াদের তাকিয়াহ বনাম ইসলাম!
‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় মুসলিম যুবককে হত্যা করলো হিন্দুত্ববাদীরা

উক্ত ঘটনার[17]https://m.dailyinqilab.com/article/320078[18]https://www.odhikar.news/international/74253[19]https://www.bbc.com/bengali/news-48935484.amp[20]https://amp.abc.net.au/article/11244552 পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সেই যুবকের জন্য হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের থেকে বাঁচার জন্য তার বিশ্বাসের বিপরীতে ‘জয় শ্রীরাম’ বলা জায়েজ ছিলো। ইসলামের পরিভাষায় এটিই তাকিয়াহ, যা বাধ্য হয়ে বলতে হয়।

আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতাআ’লা বলেছেন,

বল, আমার প্রতি যে ওয়াহী করা হয়েছে তাতে মানুষ যা আহার করে তার কিছুই নিষিদ্ধ পাই না মৃত, প্রবহমান রক্ত ও শূকরের মাংস ছাড়া। কারণ তা অপবিত্র অথবা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবহ করা ফাসিকী কাজ। তবে যে ব্যক্তি নিরুপায় হয়ে পড়ে কিন্তু সে নাফরমান ও সীমালঙ্ঘনকারী নয়, তাহলে তোমার প্রতিপালক বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[21]ক্বুরআন, সূরা আল-আন’আম, ৬:১৪৫

আরো বলেছেন,

নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি হারাম করেছেন মৃত-জীব, রক্ত এবং শূকরের মাংস এবং সেই জন্তু যার প্রতি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম নেয়া হয়েছে, তবে যে ব্যক্তি নিরুপায় হয়ে পড়ে কিন্তু সে নাফরমান ও সীমালঙ্ঘনকারী নয়, তার উপর কোন গুনাহ নেই, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।[22]ক্বুরআন, সূরাহ আল বাকারাহ, ২:১৭৩

তাকিয়ার ব্যাপারে আলেমদের সতর্কতা,

তাকে(যে তাকিয়াহ করছে) তার উদ্দেশ্যের প্রতিও মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং তার উদ্দেশ্য থাকা উচিত যে সে শুধুমাত্র প্রয়োজনে হারাম কিছু করছে;  সে জানে এটা হারাম, কিন্তু সে শুধুমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ছাড়ের সদ্ব্যবহার করছে।  যদি সে এটা করে, ব্যাপারটাকে হালকাভাবে নেয় এবং মনে করে যে এতে দোষের কিছু নেই, তাহলে সে গুনাহের মধ্যে পড়বে।” [23]আল-মাওসুআহ আল-ফিকহিয়াহ, ১৯১-২০০

ইসলামে তাকিয়াহ বনাম শিয়াধর্মে তাকিয়াহ

উপরের আলোচনার সারাংশ হিসেবে ইসলাম ও শিয়াদের তাকিয়াহতে বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করা যায়।

তাকিয়াহর ক্ষেত্র

ইসলাম শুধু অবিশ্বাসীদের সাথেই তাকিয়াহ করার অনুমতি দেয়, নিজের ক্ষতি রোধ করার স্বার্থে।[24]কুরআন ৩:২৮

অন্যদিকে শিয়ারা উলটো বিশ্বাসীদের সাথেই তাকিয়াহ করে, করে আসছে।

তাকিয়াহর বৈধতা

ইসলামে তাকিয়াহ শুধুমাত্র অতি প্রয়োজনে ‘বৈধ’ বা ‘জায়েজ‘, করা যাবে। এটা শুধুমাত্র আল্লাহ-প্রদত্ত ছাড়। কেউ মহাবিপদে পড়লেও সে চাইলে তাকিয়াহ না করেও থাকতে পারবে। তাকে শুধু অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে শী’আদের কাছে, তাকিয়াহ হলো তাদের ধর্মের মূল স্তম্ভ। এটি ওয়াজিব। এটি ছাড়া আর সালাত ছেড়ে দেওয়া নাকি সমান।[25]উসূল মাজহাব আশ-শিয়াহ আল-ইমামিয়্যাহ,২/৮০৬-৭

ইবনে আল-মুনধীর (রহঃ) বলেছেন, ❝তারা (মুসলিম আলেমগণ) একমত হয়েছেন যে, কাউকে যদি অবিশ্বাসী হতে জোর করা হয়, আর সে মুখে অবিশ্বাস করার কথা জানায় মৃত্যুভয়ে, কিন্তু অন্তরে ঠিকই বিশ্বাসী থাকে, তাহলে সে অবিশ্বাসী নহ।❞

ইবনে বাত্তাল (রহঃ) বলেছেন, ❝তারা (মুসলিম আহলুল সুন্নাহ ওয়াল জামা’আর আলেমগণ) সর্বসম্মতিক্রমে একমত হয়েছেন যে, কাউকে যদি অবিশ্বাসী হওয়ার জন্য বল প্রয়োগ করা হয়, আর সে বিপরীতভাবে নিজের মৃত্যুকে (তাকিয়াহ না করে) বেঁছে নেয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার।

এদিকে শী’আ স্কলাররা কী বলে শুনি চলুন…

শী’আ স্কলার ইবনে বাবাওয়্যাহ বলেছেন,

তাকিয়াহর ব্যাপারে আমাদের বিশ্বাস হলো, এটি বাধ্যতামূলক। যে এটি ত্যাগ করে সে তার মতো, যে সালাত ত্যাগ করে।[26]আল-ই’তিক্বদাত, পৃ ১১৪

আস-সাদিক (শী’আদের একজন ইমাম) বলেছেন,

তুমি যদি বলো, “যে তাকিয়াহ ছেড়ে দিলো, সে যেনো সালাত ছেড়ে দিলো”, তাহলে তুমি সঠিক।[27]জামি আল-আখবার, পৃ ১১০[28]বিহারুল আনোয়ার, ৭৫/৪১৪,৪১২


আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের শী’আ ফিৎনা থেকে রক্ষা করুক। আমিন।

Source
মাসিক আল-ইখলাস, আগস্ট, ২০২১, প্রশ্ন নং ১৭ইসলামকিউএ প্রশ্নোত্তর নং 178975

Footnotes

Footnotes
1 উছূলুল কাফী, পৃ. ৪৮২
2, 4 প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৮৪
3 প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৮৩
5 ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ), মাজমু আল-ফাতাওয়া, ১৩/২৬৩
6 মিনহাজ আস-সুন্নাহ আন-নবাবিয়্যাহ, ১/৩০
7 আল-মাউসুয়াহ আল-মুয়াসারাহ ১/৫৪
8 উসুল মাযহাব আশ-শিয়াহ আল-ইমামিয়া, ২/৮০৫
9 ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ২৬৩
10 আল ক্বুরআন, সূরা আলে ‘ইমরান ৩:১৬৭
11 সহিহুল মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বাংলাদেশ হাদিস নং ১১৪, হাদিস একাডেমী ১১৩, আন্তর্জাতিক 58
12 আল-ক্বুরআন, সূরাহ আলে ইমরান ৩:২৮
13 তাফসীর ইবনু কাছীর, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩০
14 সূরা আন-নাহল ১৬:১০৬
15 আহকাম আহলে আধ-ধীম্মাহ, ২/১০৩৮

(أحكام أهل ضدهمة, أ/١٠٣٨).

16 মাওযূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ আল-কুয়েতিয়া, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ১৮৬-১৮৭
17 https://m.dailyinqilab.com/article/320078
18 https://www.odhikar.news/international/74253
19 https://www.bbc.com/bengali/news-48935484.amp
20 https://amp.abc.net.au/article/11244552
21 ক্বুরআন, সূরা আল-আন’আম, ৬:১৪৫
22 ক্বুরআন, সূরাহ আল বাকারাহ, ২:১৭৩
23 আল-মাওসুআহ আল-ফিকহিয়াহ, ১৯১-২০০
24 কুরআন ৩:২৮
25 উসূল মাজহাব আশ-শিয়াহ আল-ইমামিয়্যাহ,২/৮০৬-৭
26 আল-ই’তিক্বদাত, পৃ ১১৪
27 জামি আল-আখবার, পৃ ১১০
28 বিহারুল আনোয়ার, ৭৫/৪১৪,৪১২
Exit mobile version