মুহাম্মদ (ﷺ) কি আয়িশা (রাঃ) কে কখনো প্রহার করেছিলেন?

নিম্নোক্ত হাদিসটির অংশবিশেষ দেখিয়ে নাস্তিকান্ধরা দাবি করে থাকে মুহাম্মদ (ﷺ) নাকি আয়িশা (রাঃ)-কে প্রহার করেছেন! তাদের প্রচার প্রচারণা তারা বিভিন্ন ব্লগ এবং কমেন্টযোদ্ধাদের (ফুট সোলজার) মাধ্যমে আমাদের কাছে উপস্থাপন করছে!

…আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোক এবং ঘটনাটির বর্ণনা দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমিই সেই (ছায়ামূর্তি) যা আমি আমার সামনে দেখছিলাম? আমি বললাম, হ্যাঁ। আয়েশা (রাঃ) বললেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বক্ষে একটি মুষ্ঠাঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি ধারণা করেছ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর যুলুম করবে? আয়েশা (রাঃ) বললেন, লোক যতই গোপন করুক না কেন, আল্লাহ্ তা নিশ্চিত জানেন।…[1]সুনান নাসাঈ (ইফাঃ), হাদিস নং ২০৪১, ৩৯৬৫, ৩৯৬৬

[অন্য ভার্শনেঃ]

…তখন তিনি আমার বুকে একটি ধাক্কা মারলেন, তাতে আমি ব্যাথা পেলাম।…[2]সহিহুল মুসলিম (ইফাঃ) ২১২৮

এখান থেকে নাকি প্রমাণ হচ্ছে যে, রাসূল (ﷺ) আয়েশা (রাঃ) কে প্রহার করতেন! কত বড় মিথ্যা ও অপব্যাখামূলক প্রচার! হাদিস সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তি মাত্রই তাদের জালিয়াতি ধরে ফেলতে পারবেন। রাসুল (সঃ) এর অভ্যেস ছিলো কারো মনে সাহস বা ভরসা জোগাতে তাঁর বুকে হাত দিয়ে আঘাত করা। এরূপ কয়েকটি হাদিস নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

এক

জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,…আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালাম যে, আমি ঘোড়ার উপর স্থির থাকতে পারি না। তখন তিনি আমার বুকে হাত দ্বারা আঘাত করলেন। এমন কি আমি আমার বুকে তাঁর আঙ্গুলের ছাপ দেখতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য দু‘আ করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! তাকে ঘোড়ার পিঠে স্থির রাখ এবং তাকে পথপ্রদর্শক ও সুপথপ্রাপ্ত করুন।’…[3]সহিহুল বুখারী ৩০৭৬ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=27415

দুই

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আবুল মুনযির! তোমার কাছে আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি আবার বলেন, হে আবুল মুনযির! তোমার কাছে আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ? আমি বললাম, ‘‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম’’ (আয়াতুল কুরসী)। তখন তিনি আমার বুকে (হালকা) আঘাত করে বলেনঃ হে আবুল মুনযির! তোমার জ্ঞান আনন্দদায়ক হোক।[4]সহিহুল মুসলিম (ইফাঃ) ১৭৫৮, সুনানে আবু দাউদ ১৪৬০, রিয়াদুস সালেহীন ১০২৬

তিন

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইয়ামানে পাঠান। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে পাঠাচ্ছেন, অথচ আমি একজন যুবক মাত্র। আমি লোকেদের মধ্যে মীমাংসা করবো, অথচ বিচার কী জিনিস তাই আমি জানি না। রাবী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাতে হাত দিয়ে আমার বুকে আঘাত করে বলেনঃ ‘‘ইয়া আল্লাহ! আপনি তার অন্তরে হেদায়াত দান করুন এবং তার জিহবাকে (বাকশক্তিকে) সুস্থির রাখুন’’। আলী বলেন, এরপর পক্ষদ্বয়ের মধ্যে বিচার করতে আমি কখনো সন্দেহে পতিত হইনি।[5]সুনানে ইবনু মাজাহ ২৩১০, তাহক্বীক আলবানীঃ সহিহ, দারুসসালামঃ যঈফ

এই হাদিসগুলো পড়ে বোঝা যায় নাস্তিকরা আয়েশা (রাঃ) এর হাদিস নিয়ে কত বড় অপব্যাখ্যা করে মানুষকে বোকা বানায়।

আয়েশা (রাদ্বিঃ) এটাকে প্রহার হিসেবে গণ্য করেন নি। কারণ রাসুল (সাঃ) এর উদ্দেশ্য আয়েশা (রাঃ)-কে ব্যাথা দেয়া ছিলো না।

আয়েশা (রাঃ) এর নিজের বর্ণিত হাদিসঃ

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও তাঁর কোন খাদেমকে অথবা তাঁর কোন স্ত্রীকে মারপিট করেননি এবং নিজ হাতে অপর কাউকেও প্রহার করেননি।[6]সুনানে ইবনু মাজাহ ১৯৮৪, সহিহুল মুসলিম (ইফাঃ) ৫৮৪২

তাছাড়া স্ত্রী প্রহার কোনোদিন বুকে করা হয় নাকি? পুরো দাম্পত্য জীবনে মাত্র ১ টা ধাক্কা (তাও আবার প্রহারের উদ্দেশ্যে ছাড়াই) কখনো প্রহার বলে গণ্য হতে পারে না। মুহাম্মাদ (সঃ) গালিগালাজও করেন নি, চড়ও মারেন নি, কিলও দেন নি, লাথিও দেন নি – আয়েশা (রাঃ) নিজেই এর সাক্ষ্য দিয়েছেন। সুতরাং, এটি প্রহারের অন্তর্ভুক্ত নয়।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুনঃ ইসলামকিউএ ফতোয়া ১৬৪২১৬

https://islamqa.info/en/answers/164216

Footnotes

Footnotes
1 সুনান নাসাঈ (ইফাঃ), হাদিস নং ২০৪১, ৩৯৬৫, ৩৯৬৬
2 সহিহুল মুসলিম (ইফাঃ) ২১২৮
3 সহিহুল বুখারী ৩০৭৬ http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=27415
4 সহিহুল মুসলিম (ইফাঃ) ১৭৫৮, সুনানে আবু দাউদ ১৪৬০, রিয়াদুস সালেহীন ১০২৬
5 সুনানে ইবনু মাজাহ ২৩১০, তাহক্বীক আলবানীঃ সহিহ, দারুসসালামঃ যঈফ
6 সুনানে ইবনু মাজাহ ১৯৮৪, সহিহুল মুসলিম (ইফাঃ) ৫৮৪২
Exit mobile version