গৌতম বুদ্ধ কি নিরামিষভোজী ছিলেন?

বৌদ্ধধর্ম ও মাংসভোজন

শিরোনাম দেখে অবাক হচ্ছেন? হওয়ারই কথা। অধিকাংশ লোকই মনে করেন গৌতম বুদ্ধ বা বুদ্ধরা নিরামিষ ভোজী ছিলেন, বুদ্ধরা মাংসাহারী ছিলেন না, মাংস ভোজন করতেন না, বৌদ্ধ ধর্মে আমিষ খাওয়া যায় না ইত্যাদি। কারণ তার দর্শনের মূল কথাই ছিলো ‘জীব হত্যা মহাপাপ’। এ দর্শনের কারণে নাস্তিক সমাজেও তার বেশ কদর আছে।

তবে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, গৌতম বুদ্ধসহ অন্য বুদ্ধরা কি আদৌ নিরামিষ ভোজী ছিলেন? স্বয়ং বৌদ্ধ সমাজেই এ নিয়ে মতভেদ স্পষ্ট। যদি প্রমাণিত হয় বুদ্ধ মাংসাহার করতেন কিংবা একে সমর্থন করতেন তবে তার বাণী হিসেবে প্রচলিত “জীব হত্যা মহাপাপ” কথাটি মুখ থুবড়ে পড়বে। সত্য কথা হচ্ছে, গৌতম বুদ্ধ নিরামিষ ভোজী ছিলেন না, তিনি মাংসাহারী ছিলেন। বুদ্ধদের মাংস খাওয়ার অনেক প্রমান পাওয়া যায় তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে। বৌদ্ধ ধর্মে মাংস খাওয়া জায়েজ আছে, কিন্তু অনেকেই তা জানে না। এ বিষয়ে একজন গবেষকের গবেষণা লব্ধ তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হলোঃ

️বৌদ্ধ ধর্মীয় গবেষকের লিখা

বলা হয় বৌদ্ধধর্মে প্রাণী হত্যা সম্পূর্ণ নিষেধ। কারণ এই ধর্ম অহিংসার ধর্ম। ‘অহিংসা’ আর ‘প্রাণীহত্যা না করা‘ এ দুটোকে সমার্থক করে ফেলা হয়েছে। এর পিছনে যু্ক্তি দেয়া হচ্ছে ত্রিপিটক থেকে, বুদ্ধের শিক্ষা থেকে। যেমন ধম্মপদে বলা হয়েছে-

“ন তেন অরিযো হোতি যেন পাণানি হিংসতি,
অহিংসা সব্বপাণানং অরিযো’তি পবুচ্চতি।”

অর্থঃ যে ব্যক্তি প্রাণীহত্যা করে তা দ্বারা সে আর্য হইতে পারে না। যিনি সকল প্রাণীর প্রতি অহিংসাপরায়ণ তিনিই আর্য বলিয়া কথিত হন।[1]পবিত্র ত্রিপিটক, একাদশ খ-, ধম্মপদ, ১৯ ধার্মিক বর্গ, সূত্র-২৭০, পৃ-১৫১, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, প্রকাশকাল- ২০১৭ইং

আবার জনসাধারণের সংযত জীবনযাপনের জন্য গৌতম বুদ্ধ যে পঞ্চশীলের বিধান দিয়েছেন তাতেও তিনি জীবহিংসা বা হত্যা ও মাদকদ্রব্য সেবন নিষিদ্ধ করেছেন। এমন কি তিনি ধর্মের নামেও এরূপ আচরণ বা কাজ সমর্থন করেন নি।
তারা এ ধরনের উদ্ধৃতিগুলো থেকে এ উপসংহার টানেন, বুদ্ধ প্রাণীহত্যা বা প্রাণীভোজ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছেন। তারা বুদ্ধকে নিরামিষ ভোজী সাব্যস্ত করতে চান। আমরা এ বিষয়টি ত্রিপিটকে বা বুদ্ধের শিক্ষায় অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছি। আমরা বর্তমান যুগের বৌদ্ধদের বক্তব্যের সাথে একমত হতে পারি নি। কারণ গৌতম বুদ্ধ কখনও সম্পূর্ণরূপে প্রাণীহত্যা বা প্রাণীভোজ নিষিদ্ধ করেন নি। নিজেও সম্পূর্ণরূপে নিরামিষ ভোজী ছিলেন না। এটি পরবর্তীতে অন্যায়ভাবে তাঁর প্রতি আরোপ করা হয়েছে। এর অনেক প্রমাণ ত্রিপিটকেই পাওয়া যায়।

শর্ত মেনে মাংস খাওয়ার অনুমতি

জীবক সূত্রে বলা হয়েছে- এক সময় গৌতম বুদ্ধ রাজগৃহ সমীপে কোমারভচ্চ জীবকের আম্রবনে অবস্থান করছিলেন। সেই সময় জীবক কোমারভচ্চ সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন,

“ভন্তে, শোনা যায়-‘শ্রমণ গৌতমোদ্দেশ্যে জীবহত্যা হয়, আর শ্রমণ গৌতম সজ্ঞানে সেই উদ্দেশ্যকৃত মাংস ভোজন করেন, নিমিত্তকর্মের ভাগী হন।’ ভন্তে যাহারা এরূপ বলে : ‘শ্রমণ গৌতমের উদ্দেশ্যে জীবহত্যা হয়, আর শ্রমণ গৌতম সজ্ঞানে সেই উদ্দেশ্যকৃত মাংস ভোজন করেন, নিমিত্তকর্মের ভাগী হন।’ কেমন ভন্তে, তাহারা ভগবান সম্বন্ধে সত্যবাদী, ভগবানকে মিথ্যা দোষারোপ করে না, যুক্তি-ধর্মানুরূপ ঘোষণা করে এবং আপনার যুক্তিসঙ্গত কোনো বাদানুবাদ (বিজ্ঞদের) নিন্দার কারণ নহে তো?”

জীবক যাহারা এইরূপ বলে : ‘শ্রমণ গৌতমের উদ্দেশ্যে (লোকে) প্রাণীহত্যা করে, আর শ্রমণ গৌতম সজ্ঞানে সেই উদ্দেশ্যকৃত মাংস পরিভোগ করেন, নিমিত্তকর্মের ভাগী হন।’ তাহারা আমার সম্বন্ধে সত্যবাদী নহে, তাহারা অসত্য, অভূত কারণে আমাকে অপবাদ করে। জীবক, আমি তিন কারণে মাংস অপরিভোগ্য বলি; যথা : দৃষ্ট, শ্রুত ও পরিশঙ্কিত। জীবক, এই ত্রিবিধ কারণে আমি মাংস অপরিভোগ্য বলি। জীবক, ত্রিবিধ কারণে আমি মাংস পরিভোগ্য বলে বর্ণনা করি; যথা : অ-দৃষ্ট, অ-শ্রুত ও অ-পরিশঙ্কিত। জীবক, এই ত্রিবিধ কারণে আমি মাংস পরিভোগ্য বলি।”

এই ত্রিদোষ বর্জিত হলে মাছ, মাংস খেতে কোন আপত্তি নেই।[2]পবিত্র ত্রিপিটক, পঞ্চম খন্ড, মধ্যমনিকায়, দ্বিতীয় খ-, মধ্যম পঞ্চাশ সূত্র, গৃহপতি-বর্গ, জীবক সূত্র, সূত্র ৫১-৫২, পৃ-৫১৯-২০, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, … See Full Note

দেখুন, বলা হয়েছে ত্রিবিধ কারণে মাংস খাওয়া যাবে। অর্থাৎ মাংস খেতে বারণ নেই শুধু কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। নিজের হত্যাকৃত না হলে, আর সন্দেহ মুক্ত মাংস হলে সেটা খাওয়া যাবে। এমন মাংস ভোজন থেকে তিনি বিরত থাকতে বলেন নি, আর নিজেও বিরত ছিলেন না। সে ক্ষেত্রে গৌতম বুদ্ধকে শুধুমাত্র নিরামিষ ভোজী কিভাবে বলা যায়?
এছাড়া ত্রিপিটকের সুত্তনিপাতের আমগন্ধ সূত্রে পাখির মাংস ভোজন আমগন্ধ নয় বলা হয়েছে। এছাড়া লোভ ছাড়া প্রাণসংহারী যারা নয় তাদেরকেও আমগন্ধ নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[3]পবিত্র ত্রিপিটক, খ- একাদশ, পৃ-৪৭৬-৭৮, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, প্রকাশকাল- ২০১৭ইং কিছু বৌদ্ধ পন্ডিতের এই বিষয়ে ভিডিও বা ল্যাকচারও শুনে দেখতে পারেন।[4]Dr F. Dipankar Mahathera , দলাই লামা , Dr. Arunjyoti Bhikkhu , বাথোয়াইনমং

বৌদ্ধ ধর্মে প্রাণিজ আমিষ খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল না

মাছ মাংস ভোজন যে বৌদ্ধধর্মে কখনও নিষিদ্ধ ছিল না এর আরও জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায় বিনয়পিটকের চূলবর্গে। একবার বুদ্ধ রাজগৃহে অবস্থানকালে দেবদত্ত পাঁচটি প্রস্তাব নিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হন। এর মাঝে পঞ্চম প্রস্তাবটি ছিল-

“সাধু, ভন্তে, ভিক্খু… যাবজীবং মচ্ছ-মংসং ন খাদেয্যুং বজ্জং নং ফুসেয্যা’তি”

অর্থাৎ হে ভন্তে, ভগবান.. ভিক্ষুগণ আজীবন মাছ, মাংস ভোজন করা হতে বিরত থাকুক। যে মাছ, মাংস ভোজন করবে, সে দোষী হবে। তজ্জন্য সংঘ তাকে বর্জন করবে।”

গৌতম বুদ্ধ এটা শুনার পর বললেন, “হে দেবদত্ত, এসব নিষ্প্রয়োজন।”[5]পবিত্র ত্রিপিটক, তৃতীয় খ-, চূলবর্গ,সংঘভেদক অধ্যায়, পাঁচটি বিষয় প্রার্থনাবিষয়ক কথা, সূত্র-৩৪৩, পৃ-৪২৯-৪৩০, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, প্রকাশকাল- ২০১৭ইং

ত্রিপিটকে আরো বলা আছে যে,

আমি এইরূপ শুনিয়াছি। এক সময় ভগবান রাজগৃহ সমীপে কোমারভচ্চ (কুমার পোষিত) জীবকের আম্রবনে অবস্থান করিতেছিলেন। সেই সময় জীবক কোমারভচ্চ যেখানে ভগবান আছেন তথায় উপস্থিত হইলেন। উপস্থিত হইয়া ভগবানকে অভিবাদন করিয়া একপ্রান্তে উপবেশন করিলেন। একপ্রান্তে উপবিষ্ট জীবক ভগবানকে বলিলেন :

৫১. ভন্তে, শোনা যায় : ‘শ্রমণ গৌতমোদ্দেশ্যে জীবহত্যা হয়, আর শ্রমণ গৌতম সজ্ঞানে সেই উদ্দেশ্যকৃত মাংস ভোজন করেন, নিমিত্তকর্মের ভাগী হন।’ ভন্তে, যাহারা এরূপ বলে : ‘শ্রমণ গৌতমের উদ্দেশ্যে জীবহত্যা হয়, আর শ্রমণ গৌতম সেই উদ্দেশ্যকৃত মাংস ভোজন করেন, নিমিত্তকর্মের ভাগী হন।’ কেমন ভন্তে, তাহারা ভগবান সম্বন্ধে সত্যবাদী, ভগবানকে মিথ্যা দোষারোপ করে না, যুক্তি-ধর্মানুরূপ ঘোষণা করে এবং আপনার যুক্তিসঙ্গত কোনো বাদানুবাদ (বিজ্ঞদের) নিন্দার কারণ নহে তো?”

৫২. “জীবক, যাহারা এইরূপ বলে : ‘শ্রমণ গৌতমের উদ্দেশ্যে (লোকে) প্রাণিহত্যা করে, আর শ্রমণ গৌতম সজ্ঞানে সেই উদ্দেশ্যকৃত মাংস পরিভোগ করেন, নিমিত্তকর্মের ভাগী হন।’ তাহারা আমার সম্বন্ধে সত্যবাদী নহে, তাহারা অসত্য, অভূত কারণে আমাকে অপবাদ করে। জীবক, আমি তিন কারণে মাংস অপরিভোগ্য বলি; যথা : দৃষ্ট, শ্রুত ও পরিশঙ্কিত। জীবক, এই ত্রিবিধ কারণে আমি মাংস অপরিভোগ্য বলি। জীবক, ত্রিবিধ কারণে আমি মাংস পরিভোগ্য বলে বর্ণনা করি; যথা : অ-দৃষ্ট, অ-শ্রুত, ও অ-পরিশঙ্কিত। জীবক, এই ত্রিবিধ কারণে আমি মাংস পরিভোগ্য বলি।[6]ত্রিপিটক, সূত্রপিটক, মধ্যমনিকায়, মধ্যম পঞ্চাশ সূত্র, গৃহপতিবর্গ, জীবক সূত্র, শ্লোক ৫১-৫৩

একই বিষয় আরো কয়েক স্থানে এসেছে, যেমন,

ভন্তে, এই কারণে উত্তম হবে যে,

১) ভিক্ষুগণ আজীবন অরণ্যে বাস করুক। যে গ্রামে কিংবা গ্রামের নিকটবর্তী বিহারে বাস করবে, সে দোষী হবে। তজ্জন্য সংঘ তাকে বর্জন করবে।

২) ভিক্ষুগণ আজীবন ভিক্ষাজীবী হোক। যে (গৃহীর) নিমন্ত্রণ গ্রহণ করবে তথা নিমন্ত্রণে প্রদত্ত ভোজন গ্রহণ করবে, সে দোষী হবে। তজ্জন্য সংঘ তাকে বর্জন করবে।

৩) ভিক্ষুগণ আজীবন পাংশুকুল চীবর পরিধান করুক। যে গৃহী প্রদত্ত চীবর পরিধান করবে, সে দোষী হবে। তজ্জন্য সংঘ তাকে বর্জন করবে।

৪) ভিক্ষুগণ আজীবন গাছতলায় বাস করুক। যে আচ্ছাদিত স্থানে বাস করবে, সে দোষী হবে। তজ্জন্য সংঘ তাকে বর্জন করবে।

৫) ভিক্ষুগণ আজীবন মাছ, মাংস ভোজন করা হতে বিরত থাকুক। যে মাছ, মাংস ভোজন করবে, সে দোষী হবে। তজ্জন্য সংঘ তাকে বর্জন করবে। এবার ভগবান বললেন, হে দেবদত্ত, এসব নিষ্প্রয়োজন। যেই ভিক্ষু অরণ্যে বাস করতে ইচ্ছা করে, সে অরণ্যে বাস করুক আর যেই ভিক্ষু গ্রামে বাস করতে ইচ্ছা করে, সে গ্রামে বাস করুক। যেই ভিক্ষু ভিক্ষান্ন সংগ্রহ করতে ইচ্ছা করে, সে ভিক্ষাচর্যা করুক আর যেই ভিক্ষু নিমন্ত্রণ গ্রহণের ইচ্ছা করে, সে নিমন্ত্রণের ভোজন গ্রহণ করুক।[7]ত্রিপিটক, বিনয়পিটক, চূলবর্গ, ৭নং সংঘভেদক অধ্যায়, ২য় পরিচ্ছেদ, ৫টি বিষয়ে প্রার্থনা, শ্লোক ৩৪৩

একটি ঘটনা বলি গৌতম বুদ্ধের মাংস খাওয়ার। ভানদাগামায় কিছুদিন অবস্থান করে সেখানকার ভিক্ষুদের নির্দেশনা দেওয়ার পর আনন্দ কে নিয়ে ধীরে ধীরে উত্তরে হস্তিগামা, আম্বাগামা, জাম্বুগামা ও ভোগানাগামা (এগুলোর সবই কোনও চিহ্ন না রেখে হারিয়ে গেছে) হয়ে পাবায় এসে কুন্ডু নামের এক স্বর্ণকারের বাগিচায় অবস্থান গ্রহণ করলেন। বুদ্ধকে শ্রদ্ধা জানালেন কুন্ডু, মনোযোগ দিয়ে নির্দেশনা শুনলেন, তারপর এক অসাধারণ ভোজে নিমন্ত্রণ করলেন তাঁকে যেখানে কিছু সুকারামাদ্দাভা(‘শূকরের নরম মাংস), খাবারটা আসলে কী ছিল নিশ্চিত নয় কেউ। কোনও কোনও ভাষ্যকার বলেন এটা ছিল বাজারের শূকরের মাংস (বুদ্ধ কখনও তাঁর জন্যে বিশেষভাবে হত্যা করা কোনও প্রাণীর মাংস খাননি), অন্যরা যুক্তি দেখিয়েছেন, এটা হয় কুচিকুচি করে কাটা শূয়োরের মাংস বা শূয়োরের খাবার সুগন্ধী ব্যাঙের ছাতা ছিল। কারও মতে এটা ছিল বিশেষ ধরনের প্রাণী যা মারা গিয়ে পরিনিব্বানা লাভ করতে পারেন ভেবে কুন্ডু এ খাবার তাঁর জীবন অনির্দিষ্ট কাল বিলম্বিত করবে বলে ভেবেছিলেন। সে যাই হোক, বুদ্ধ সাকারামাদ্দাভা খাওয়ার জন্যে জোর করলেন; অন্য ভিক্ষুদের টেবিলের অন্যান্য খাবার খেতে বললেন। খাবার শেষে কুন্ডুকে বুদ্ধ বললেন অবশিষ্ট খাবারটুকু মাটি চাপা দিতে, যেহেতু আর কেউ এমনকি দেবতাও  এটা হজম করতে পারবে না।[8]বুদ্ধ, মূলঃ ক্যারেন আর্মস্ট্রং, অনুবাদঃ শওকত হোসেন, রোদেলা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ১৫৪-১৫৫

চিকিৎসায় আমিষ গ্রহণের অনুমতি

ত্রিপিটকে অসুস্থ হলে প্রাণিজ আমিষ খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যেমনঃ

৬২২. “যদি ভিক্ষু অসুস্থ হয়, তাহলে পীড়িতাবস্থায় পরিভোগ্য পাঁচ প্রকার ভৈষজ্য পরিভোগ করতে পারবে। যথা : ঘৃত, মাখন, তেল, নবনীত ও গুড়। এই পাঁচ প্রকার ভৈষজ্য প্রতিগ্রহণ করে সপ্তাহকাল পর্যন্ত নিজের নিকট জমা রাখতে পারবে। তবে, তদতিরিক্ত জমা রাখলে, ‘নিস্সগ্গিয় পাচিত্তিয়’ অপরাধ হবে।”

৬২৩. ‘যানি খো পন তানি গিলানানং ভিক্খূনং পটিসাযনীযানি ভেস্সজ্জানীতি’ বলতে পঞ্চবিধ ভৈষজ্যের মধ্যে ঘৃত বললে গরু, মহিষ, অজ প্রভৃতির; যেগুলোর মাংস কপ্পিয় (খাওয়ার যোগ্য), তেমন প্রাণীর দুগ্ধ হইতে উৎপন্ন ঘৃত।
[9]ত্রিপিটক, বিনয় পিটক, পরাজিকা, ৪নং নিস্সগ্গিয় অধ্যায়, ভৈষজ সম্পর্কীয় শিক্ষাপদ, শ্লোক ৬২২-৬২৩

আরেক স্থানে অসুস্থ ভিক্ষুগণকে প্রাণিজ আমিষ খাওয়ার অনুমতি দেওয়ার দৃশ্য ফুটে উঠেছে।

২৬২. সেই সময় পীড়িত ভিক্ষুগণের চর্বিমিশ্রিত ভৈষজ্যের প্রয়োজন হইয়াছিল। ভিক্ষুগণ ভগবানকে এই বিষয় জানাইলেন। (ভগবান কহিলেন) ভিক্ষুগণ, আমি অনুজ্ঞা করিতেছি : চর্বিমিশ্রিত ভৈষজ্য সেবন করিবে।”

ভল্লুকের চর্বি, মৎস্যের চর্বি, শিশুমারের চর্বি, শূকরের চর্বি, গর্দভের চর্বি, সকালে (পূর্বাহ্ণে) প্রতিগ্রহণ করিয়া, সকালে পাক করিয়া এবং সকালে সংমিশ্রিত করিয়া তৈলবৎ সেবন করিবে। ভিক্ষুগণ, যদি বিকালে প্রতিগ্রহণ করিয়া, বিকালে পাক করিয়া এবং বিকালে সংমিশ্রিত করিয়া তাহা সেবন করে তাহা হইলে তিনটি ‘দুক্কট’ অপরাধ হইবে। ভিক্ষুগণ, যদি সকালে প্রতিগ্রহণ করিয়া, বিকালে পাক করিয়া এবং বিকালে সংমিশ্রিত করিয়া তাহা সেবন করে তাহা হইলে দুইটি ‘দুক্কট’ অপরাধ হইবে। ভিক্ষুগণ, যদি সকালে প্রতিগ্রহণ করিয়া, সকালে পাক করিয়া এবং বিকালে সংমিশ্রিত করিয়া তাহা সেবন করে তাহা হইলে (একটি) ‘দুক্কট’ অপরাধ হইবে। ভিক্ষুগণ, যদি সকালে প্রতিগ্রহণ করিয়া সকালে পাক করিয়া এবং সকালে সংমিশ্রিত করিয়া তাহা সেবন করে তাহা হইলে অপরাধ হইবে না।[10]ত্রিপিটক, বিনয়পিটক, মহাবর্গ, ভৈষজ স্কন্ধ শ্লোক ২৬২

যেসব মাংস নিষিদ্ধ

মানুষ, হাতি, ঘোরা, কুকুর, সিংহ, বাঘ, ভাল্লুক, চিতা, নেকড়ে, সাপ ইত্যাদির মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। এই বিষয়ে ত্রিপিটকে বলা আছে,

২৮০. ভগবান গৌতম এই নিদানে, এই প্রকরণে ভিক্ষুসংঘকে সমবেত করাইয়া ভিক্ষুগণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “হে ভিক্ষুগণ, উপাসিকা সুপ্রিয়ার নিকট কে মাংস যাচ্ঞা করিয়াছিলে?” ভগবান এরূপ জিজ্ঞাসা করিলে সেই ভিক্ষু ভগবানকে কহিলেন, “প্রভো, আমি উপাসিকা সুপ্রিয়ার নিকট মাংস যাচ্ঞা করিয়াছিলাম।” “ভিক্ষু, মাংস আনিয়াছিল কি?” “ভগবান, আনিয়াছিল।” “ভিক্ষু, তুমি তাহা আহার করিয়াছ কি?” “হ্যাঁ ভগবান, আমি তাহা আহার করিয়াছি।” “ভিক্ষু, তুমি বিচার করিয়া দেখিয়াছিলে কি?” “না, ভগবান, আমি বিচার করিয়া দেখি নাই।”

বুদ্ধ ভগবান তাহা নিতান্ত গর্হিত বলিয়া প্রকাশ করিলেন : “মূর্খ, তুমি কেন বিচার না করিয়া মাংস আহার করিয়াছ? তুমি যে মনুষ্য মাংসই আহার করিয়াছ! তোমার এই কার্যে যে যে অপ্রসন্নদিগের মধ্যে প্রসন্নতা উৎপন্ন হইবে না।”

২৮১.১. মনুষ্য এবং হস্তীআদির মাংস অভক্ষ্য, এইভাবে নিন্দা করিয়া, ধর্মকথা উত্থাপন করিয়া, ভিক্ষুগণকে আহ্বান করিলেন, “হে ভিক্ষুগণ, মনুষ্যের মধ্যে এমন শ্রদ্ধা, প্রসন্নতাসম্পন্ন লোক আছে যে তাহারা স্বীয় দেহ পর্যন্ত পরিত্যাগ করিয়াছে।

“হে ভিক্ষুগণ, মনুষ্য মাংস ভক্ষণ করিতে পারিব না; যে করিবে তাহার ‘থুল্লচ্চয়’ অপরাধ হইবে।

হে ভিক্ষুগণ, বিচার না করিয়া কোনো মাংস ভক্ষণ করিতে পারিবে না; যে করিবে তাহার ‘দুক্কট’ অপরাধ হইবে।”

২৮১.২. সেই সময়ে রাজার হস্তী মরিতেছিল। দুর্ভিক্ষের কারণে লোকে হস্তীমাংস ভক্ষণ করিতেছিল এবং ভিক্ষান্ন সংগ্রহে বিচরণ করিবার সময় ভিক্ষুদিগকে হস্তীমাংস দিতেছিল। ভিক্ষুগণ হস্তীমাংস ভক্ষণ করিতে লাগিলেন। (তদ্দর্শনে) জনসাধারণ “কেন শাক্যপুত্রীয় শ্রমণগণ হস্তীমাংস ভক্ষণ করিতেছে? হস্তী যে রাজার অঙ্গবিশেষ। যদি এই বিষয়ে রাজা জানিতে পারেন তাহা হইলে তাহাদের প্রতি সন্তুষ্ট হইবেন না।” এই বলিয়া আন্দোলন, নিন্দা এবং প্রকাশ্যে দুর্নাম প্রচার করিতে লাগিল। ভিক্ষুগণ ভগবানকে এই বিষয় জানাইলেন। (ভগবান কহিলেন)

“হে ভিক্ষুগণ, হস্তীমাংস ভক্ষণ করিতে পারিবে না; যে করিবে তাহার ‘দুক্কট’ অপরাধ হইবে।”

২৮১.৩. সেই সময়ে রাজার অশ্ব মরিতেছিল। লোকে দুর্ভিক্ষের কারণে অশ্বমাংস ভক্ষণ করিতেছিল এবং ভিক্ষুগণ ভিক্ষান্ন সংগ্রহে বিচরণ করিবার সময় তাহাদিগকে অশ্বমাংস দিতেছিল। ভিক্ষুগণ অশ্বমাংস ভক্ষণ করিতে লাগিলেন। (তদ্দর্শনে) জনসাধারণ ‘কেন শাক্যপুত্রীয় শ্রমণগণ অশ্বমাংস ভক্ষণ করিতেছে? অশ্ব যে রাজার অঙ্গবিশেষ। যদি রাজা এই বিষয় জানিতে পারেন তাহা হইলে তাহাদের প্রতি সন্তুষ্ট হইবেন না’ এই বলিয়া আন্দোলন, নিন্দা এবং প্রকাশ্যে দুর্নাম প্রচার করিতে লাগিল। ভিক্ষুগণ ভগবানকে এই বিষয় জানাইলেন। (ভগবান কহিলেন)

“হে ভিক্ষুগণ, অশ্বমাংস ভক্ষণ করিতে পারিবে না; যে করিবে তাহার ‘দুক্কট’ অপরাধ হইবে।”

২৮১.৪. সেই সময়ে লোকে দুর্ভিক্ষের কারণে কুকুরের মাংস ভক্ষণ করিতেছিল এবং ভিক্ষুগণ ভিক্ষান্ন সংগ্রহে বিচরণ করিবার সময় তাহাদিগকে কুকুরের মাংস দিতেছিল। ভিক্ষুগণ কুকুরের মাংস ভক্ষণ করিতে লাগিলেন। (তদ্দর্শনে) জনসাধারণ “কেন শাক্যপুত্রীয় শ্রমণগণ কুকুরের মাংস ভক্ষণ করিতেছে? কুকুর যে জুগুপ্সিত এবং ঘৃণার্হ!” এই বলিয়া আন্দোলন, নিন্দা এবং প্রকাশ্যে দুর্নাম প্রচার করিতে লাগিল। ভিক্ষুগণ ভগবানকে এই বিষয় জানাইলেন। (ভগবান কহিলেন)

“হে ভিক্ষুগণ, কুকুরের মাংস ভক্ষণ করিতে পারিবে না; যে করিবে তাহার ‘দুক্কট’ অপরাধ হইবে।

২৮১.৫. সেই সময়ে লোকে দুর্ভিক্ষের কারণে অহিমাংস ভক্ষণ করিতেছিল এবং ভিক্ষুগণ ভিক্ষান্ন সংগ্রহে বিচরণের সময় তাহাদিগকে অহিমাংস দিতেছিল। ভিক্ষুগণ অহিমাংস ভক্ষণ করিতে লাগিলেন। (তদ্দর্শনে) জনসাধারণ “কেন শাক্যপুত্রীয় শ্রমণগণ অহিমাংস ভক্ষণ করিতেছে? অহিমাংস যে জুগুপ্সিত ও ঘৃণার্হ!” এই বলিয়া আন্দোলন, নিন্দা এবং প্রকাশ্যে দুর্নাম প্রচার করিতে লাগিল। নাগরাজ সুস্পর্শ ভগবানের নিকট উপস্থিত হইলেন; উপস্থিত হইয়া ভগবানকে অভিবাদন করিয়া একান্তে দণ্ডায়মান হইলেন। একান্তে দণ্ডায়মান হইয়া নাগরাজ সুস্পর্শ ভগবানকে কহিলেন, “প্রভো, (বুদ্ধশাসনের প্রতি) শ্রদ্ধা এবং প্রসন্নতাহীন নাগও আছে, তাহারা সামান্য কারণেও ভিক্ষুগণকে পীড়ন করিতে পারে, অতএব প্রভো, আর্যগণ অহিমাংস ভক্ষণে বিরত থাকুন।” ভগবান নাগরাজ সুস্পর্শকে ধর্মকথায় প্রবুদ্ধ, সন্দীপ্ত, সমুত্তেজিত এবং সম্প্রহৃষ্ট করিলেন। নাগরাজ সুস্পর্শ ভগবানের ধর্মকথায় প্রবুদ্ধ, সন্দীপ্ত, সমুত্তেজিত এবং সম্প্রহৃষ্ট হইয়া, ভগবানকে অভিবাদন করিয়া তাহার পুরোভাগে দক্ষিণ পার্শ্ব রাখিয়া প্রস্থান করিলেন। অনন্তর ভগবান এই নিদানে, এই প্রকরণে ধর্মকথা উত্থাপন করিয়া ভিক্ষুগণকে আহ্বান করিলেন :

“হে ভিক্ষুগণ, অহিমাংস ভক্ষণ করিতে পারিবে না; যে করিবে তাহার ‘দুক্কট’ অপরাধ হইবে।”

২৮১.৬. সেই সময়ে শিকারীগণ সিংহ হত্যা করিয়া সিংহের মাংস ভক্ষণ করিতেছিল এবং ভিক্ষান্ন সংগ্রহে বিচরণের সময় ভিক্ষুগণকে সিংহমাংস দিতেছিল। ভিক্ষুগণ সিংহমাংস ভক্ষণ করিয়া অরণ্যে বাস করিতে লাগিলেন। সিংহ সিংহের গন্ধে আকৃষ্ট হইয়া ভিক্ষুগণকে বধ করিতে লাগিল। ভিক্ষুগণ ভগবানকে এই বিষয় জানাইলেন। (ভগবান কহিলেন)

“হে ভিক্ষুগণ, সিংহমাংস ভক্ষণ করিতে পারিবে না; যে করিবে তাহার ‘দুক্কট’ অপরাধ হইবে।”

২৮১.৭. সেই সময়ে শিকারীগণ ব্যাঘ্র হত্যা করিয়া ব্যাঘ্রমাংস ভক্ষণ করিতেছিল এবং ভিক্ষান্ন সংগ্রহে বিচরণের সময় ভিক্ষুগণকে ব্যাঘ্রমাংস দিতেছিল। ভিক্ষুগণ ব্যাঘ্রমাংস ভক্ষণ করিয়া অরণ্যে বাস করিতে লাগিলেন। ব্যাঘ্র ব্যাঘ্রের গন্ধে আকৃষ্ট হইয়া ভিক্ষুগণকে বধ করিতে লাগিল। ভিক্ষুগণ ভগবানকে এই বিষয় জানাইলেন। (ভগবান কহিলেন)

“হে ভিক্ষুগণ, ব্যাঘ্রমাংস ভক্ষণ করিতে পারিবে না; যে করিবে তাহার ‘দুক্কট’ অপরাধ হইবে।”

২৮১.৮. সেই সময়ে শিকারীগণ দ্বীপী (চিতাবাঘ) হত্যা করিয়া দ্বীপীমাংস ভক্ষণ করিতেছিল এবং ভিক্ষান্ন সংগ্রহে বিচরণের সময় ভিক্ষুগণকে দ্বীপীমাংস দিতেছিল। ভিক্ষুগণ দ্বীপীমাংস ভক্ষণ করিয়া অরণ্যে বাস করিতে লাগিলেন। দ্বীপী দ্বীপীর গন্ধে আকৃষ্ট হইয়া ভিক্ষুগণকে বধ করিতে লাগিল। ভিক্ষুগণ ভগবানকে এই বিষয় জানাইলেন। (ভগবান কহিলেন)

“হে ভিক্ষুগণ, দ্বীপীমাংস ভক্ষণ করিতে পারিবে না; যে করিবে তাহার ‘দুক্কট’ অপরাধ হইবে।”

২৮১.৯. সেই সময়ে শিকারীগণ ভল্লুক হত্যা করিয়া ভল্লুকের মাংস ভক্ষণ করিতেছিল এবং ভিক্ষান্ন সংগ্রহে বিচরণের সময় ভিক্ষুগণকে ভল্লুকের মাংস দিতেছিল। ভিক্ষুগণ ভল্লুকের মাংস ভক্ষণ করিয়া অরণ্যে বাস করিতে লাগিলেন। ভল্লুক ভল্লুকের গন্ধে আকৃষ্ট হইয়া ভিক্ষুগণকে বধ করিতে লাগিল। ভিক্ষুগণ ভগবানকে এই বিষয় জানাইলেন। (ভগবান কহিলেন)

“হে ভিক্ষুগণ, ভল্লুকের মাংস ভক্ষণ করিতে পারিবে না; যে করিবে তাহার ‘দুক্কট’ অপরাধ হইবে।”

২৮১.১০. সেই সময়ে শিকারীগণ তরক্ষু (নেকড়ে বাঘ) হত্যা করিয়া তরক্ষুর মাংস ভক্ষণ করিতেছিল এবং ভিক্ষান্ন সংগ্রহে বিচরণের সময় ভিক্ষুগণকে তরক্ষুমাংস দিতেছিল। ভিক্ষুগণ তরক্ষুমাংস ভক্ষণ করিয়া অরণ্যে বাস করিতে লাগিলেন। তরক্ষু তরক্ষুগন্ধে আকৃষ্ট হইয়া ভিক্ষুগণকে বধ করিতে লাগিল। ভিক্ষুগণ ভগবানকে এই বিষয় জানাইলেন। (ভগবান কহিলেন)

“হে ভিক্ষুগণ, তরক্ষুমাংস ভক্ষণ করিতে পারিবে না; যে করিবে তাহার ‘দুক্কট’ অপরাধ হইবে।”[11]ত্রিপিটক, বিনয় পিটক, মহাবর্গ, অভক্ষ্য মাংস শ্লোক ২৮০-২৮১

একই প্রাণী খাওয়া থেকে বিরত থাকার দিক নির্দেশনা পাওয়া যায় আরো অনেক যায়গায়। যেমন,

শ্রমণ গৌতম বীজ ও উদ্ভিদের বিনাশ হইতে প্রতিবিরত। তিনি একাহারী, রাত্রি ও বিকাল ভোজনে প্রতিবিরত। তিনি নৃত্য-গীত-বাদ্য-সম্বলিত প্রদর্শনী গমনে বিরত। তিনি মাল্য, গন্ধ ও বিলেপনের ধারণ, মণ্ডন ও বিভূষণ হইতে বিরত। তিনি উচ্চ ও বৃহৎ শয্যার ব্যবহারে বিরত। তিনি স্বর্ণ ও রৌপ্যের গ্রহণ হইতে বিরত। কুক্কুট ও শূকর গ্রহণে বিরত। তিনি হস্তী, গো, অশ্ব ও অশ্বী গ্রহণে বিরত। তিনি অপক্ব শস্যের গ্রহণ হইতে বিরত। তিনি অপক্ব মাংসের গ্রহণ হইতে বিরত। তিনি স্ত্রীলোক ও কুমারীর গ্রহণ হইতে বিরত। তিনি ক্রীতদাসী ও ক্রীতদাসের গ্রহণে বিরত। তিনি মেষ ও ছাগের গ্রহণে বিরত। তিনি কর্ষিত ও অকর্ষিত ভূমির গ্রহণ হইতে বিরত। তিনি দূত ও সংবাদবাহকের কর্ম হইতে বিরত। তিনি ক্রয় ও বিক্রয় হইতে বিরত। তিনি তুলা, কংস ও মান-সম্বন্ধিত প্রবঞ্চনা হইতে বিরত। তিনি উৎকোচ, বঞ্চনা ও শাঠ্যরূপ বক্রগতি হইতে বিরত। তিনি ছেদন, বধ, বন্ধন, দস্যুতা, লুণ্ঠন ও আক্রমণ হইতে বিরত। সংসারাসক্ত মনুষ্য তথাগতের প্রশংসা কীর্তনকালে এইরূপ বলিয়া থাকে।[12]ত্রিপিটক, সূত্রপিটক, দীর্ঘনিকায়, শীলস্কন্ধ বর্গ, ব্রহ্মাজাল সূত্র, শ্লোক-১০

উপরোক্ত উদ্ধৃতি থেকে প্রমাণিত গৌতম বুদ্ধ সব ধরণের প্রাণীহত্যা বা মাংস ভোজন নিষিদ্ধ করেন নি। করলে দেবদত্তকে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিতেন। বলতেন- দেব দত্ত ঠিক বলেছে, “আজ থেকে মাছ, মাংস ভোজন নিষেধ, যে এটা করবে সে দোষী সাব্যস্ত হবে। এ জন্য তাকে সংঘ থেকে বহিষ্কার করা হবে।” কিন্তু তিনি তা করেন নি। এর অর্থ হলো তাঁর দৃষ্টিতে সকল প্রকার মাছ ও প্রাণীর মাংস ভোজন নিষিদ্ধ নয়।

তবে হ্যাঁ, তিনি কোন কোন প্রাণী ভোজন নিষিদ্ধ করেছিলেন। এরও জোরালো প্রমাণ ত্রিপিটকে বিদ্যমান। যেমন উপরে রেফারেন্স প্রমাণ পাই। একইভাবে মহাবর্গের ভৈষজ্যখন্ধকে হাতি, ঘোড়া, কুকুর, সাপ, সিংহ, বাঘ, চিতাবাঘ, ভালুক, নেকড়ে বাঘ ও মানুষের মাংসকে অখাদ্য বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে উপরে রেফারেন্সও প্রমাণ পাই আমরা।

সব প্রাণীর মাংস ভোজন নিষিদ্ধ হলে কয়েকটি বিশেষ প্রাণীর নাম আলাদাভাবে নিষিদ্ধ বলে উল্লেখ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। এগুলোকে আলাদা করে চিহ্নিত করার প্রয়োজন ছিল না। সব প্রাণীর মধ্যে এগুলোও অর্ন্তভুক্ত। কোন প্রাণীই ভোজ্য না হলে এগুলোও ভোজ্য নয় এটাই স্বাভাবিক। তাই, কয়েকটি বিশেষ প্রাণীর নাম আলাদা উল্লেখ এটাই সাব্যস্ত করে সব প্রাণী নয় এই বিশেষ প্রাণীগুলোই ভোজ্য হিসেবে নিষিদ্ধ ছিল। এ জন্যই তিনি দেবদত্তের কথা অনুমোদন করেন নি। মাছ, মাংসে ঢালাও ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন নি উপরের রেফারেন্স প্রমাণ পাই আমরা।

আবার মহাবর্গের ভৈষজ্যখন্ধকেই ভিক্ষুদের পক্ষে ত্রিদোষ বর্জিত, মৃত মৎস্য ও পশুর মাংস নিষিদ্ধ নয় বলা হয়েছে।[13]পবিত্র ত্রিপিটক, দ্বিতীয় খ-, মহাবর্গ, ভৈষজ্য-স্কন্ধ, অভক্ষ্য মাংস, পৃ-১০১৯, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, প্রকাশকাল- ২০১৭ইং তাই, নিঃসংকোচে বলা যায়, গৌতম বুদ্ধ কখনও মাংস ভোজনের বিরোধী ছিলেন না। আর মাংস ভোজন করলে, প্রাণী হত্যা করতেই হবে। এক্ষেত্রে সব প্রাণী হত্যা কিভাবে নিষিদ্ধ হয়! হতেই পারে না। গৌতম বুদ্ধ হয়তো নির্বিচারে প্রাণী হত্যা বা অতি বাড়াবাড়িকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। অন্য কিছু নয়। এটাকেই পরবর্তীতে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিজ্ঞ পাঠক! ব্রহ্মজাল সূত্রে এটাও পরিষ্কার বলা হয়েছে গৌতম বুদ্ধ সব ধরনের মাংস নয়, বিশেষ ধরনের মাংস ভোজন থেকে বিরত থাকতেন। যেমন বলা হয়েছে,

“তিনি (গৌতম বুদ্ধ) অপক্ক শস্যের গ্রহণ হইতে বিরত। তিনি অপক্ক মাংসের গ্রহণ হইতে বিরত।[14]পবিত্র ত্রিপিটক, চতুর্থ খ-, দীর্ঘনিকায়, প্রথম খন্ড, শীলস্কন্ধ বর্গ, ব্রহ্মজাল সূত্র, সূত্র-১০, পৃ-৫১, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, প্রকাশকাল- ২০১৭ইং

এখন আপনারা চিন্তা করেন, গৌতম বুদ্ধ অপরিপক্ক শস্য গ্রহণ হতে বিরত ছিলেন। এর অর্থ তিনি কি সব ধরণের শস্য গ্রহণ থেকে বিরত ছিলেন? তিনি কি ভাত, রুটি যা কিনা পরিপক্ক শস্য চাল ও গম থেকে উৎপন্ন হয় তা গ্রহণ থেকে বিরত ছিলেন? কখনও না। তাহলে বলা হয়েছে, তিনি অপক্ক মাংসের গ্রহণ হতে বিরত, অর্থাৎ তিনি সব ধরণের মাংস গ্রহণ থেকে নয় এক ধরনের মাংস গ্রহণ থেকে বিরত থাকতেন। তাই, ঢালাও ভাবে বলা, তিনি সব প্রাণী হত্যা ও ভোজনের বিরোধী ছিলেন, এটা মোটেও সঠিক নয়।

এজন্য তিনি যে যুগে আগমন করেছিলেন সে যুগের প্রেক্ষাপটও জানা দরকার। ঐ যুগে হিন্দুদের মাঝে বা হিন্দুশাস্ত্রে ব্যাপক প্রাণী নিধনের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন মহাভারতে উল্লেখ আছে, ইন্দ্রগ্রস্থের সভাগৃহ নির্মাণ হলে মহারাজা যুধিষ্ঠির ‘ঘৃত, ও মধুমিশ্রিত পায়স, ফল-মূল, বরাহ ও হরিণের মাংস, তিলমিশ্রিত অন্ন প্রভৃতি দ্বারা দশসহস্র ব্রাহ্মণকে ভোজন করালেন।’ (মহাভারত)

তখন শ্রাদ্ধের উদ্দেশ্যে মাংস নিবেদন করা হতো। এছাড়া বেদবিধান অনুসারে যজ্ঞে নানাবিধ পশুবলির প্রথা ছিল। শুধুমাত্র ইন্দ্রদেবতাই তাঁর এক বারের ভোজে ১০টি বৃষ ও ৩০০টি মহিষের মাংস ভক্ষণ করতেন। (কারুচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়, দেববাণী) অন্য দেবতারাও কম যেতেন না। এছাড়া বিভিন্ন পূজায় পশু বলি হতো। যেমন শ্যামপূজা ইত্যাদি।

প্রাণী হত্যা ও ভোজন না করার আদেশ ডালাও ভাবে গৌতম বুদ্ধের নয়

কিন্তু ভারতবর্ষ একটি কৃষি প্রধান এলাকা ছিল। কৃষিকাজে গৃহপালিত পশু চাষের কাজে ব্যবহার হতো। তাছাড়া দুধ, ঘি, মাখন ইত্যাদির জন্যও এর বিকল্প ছিল না। তাই কিছু গৃহপালিত পশুকে নির্বিচারে নিধন থেকে রক্ষা করা হয়তো তখন সময়ের দাবি ছিল। যেমন আজকাল বন্য প্রাণী (সুন্দরবনের হরিণ), অতিথি পাখি ও প্রজনন মৌসুমে মা মাছকে (ইলিশ) রক্ষা করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তখন এগুলো বাহ্যত শিকার করা ও খাওয়া বৈধ হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু সাময়িক অবৈধ হয়ে যায়। এমনই কোন প্রদক্ষেপ হয়তো গরু, মহিষের ক্ষেত্রে বুদ্ধ নিয়েছিলেন। যেমন সুত্তনিপাত এর ব্রাহ্মণধম্মিক সূত্রে বলা হয়েছে, আগে ব্রাহ্মণরা আগে গরুর মাংস খেত। সে বিষয়ে এক ব্রাহ্মণের সাথে গৌতম বুদ্ধ বললেন-

“মাতাপিতা-ভ্রাতা ও অপর আত্মীয়স্বজনের ন্যায় গরু আমাদের সকলের পরম মিত্র, যাহাদের হইতে ঔষধি অর্থাৎ দুগ্ধ, দধি, ছানা, ননী, ঘৃত প্রভৃতি উৎপন্ন হয়। ইহারা অন্নদাতা, বলদাতা, সৌন্দর্য তথা সুখদাতা। অতএব পরম হিতকারীরূপে জানিয়া প্রাচীনেরা গোহত্যা করিতেন না। গোহত্যা করা অনুচিত”[15]পবিত্র ত্রিপিটক, ক্ষুত্র নিকায়া, একাদশ খন্ড, সুত্তনিপাত, ক্ষুদ্র-বর্গ, ব্রাহ্মণ ধার্মিক সূত্র, সূত্র ২৯৮-৯৯, পৃ-৪৯০, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, … See Full Note

বিষয়টি স্পষ্ট, কিছু প্রাণীকে তাদের উপকারিতার দিক বিবেচনা করে হত্যা করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। যেমন উপরে উল্লেখ করা হয়েছে- গরু, মহিষ হত্যার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এর বহুবিদ উপকারের কথা বিবেচনা করে। তদ্রুপ কিছু প্রাণীকে তাদের উপকারিতার দিক বিবেচনা করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। যেমন শুকুর, হাতি, ঘোড়া, কুকুর, সাপ, সিংহ, বাঘ, চিতাবাঘ, ভালুক, নেকড়ে বাঘ ইত্যাদি। তাই, কোন একটি বা দুইটি প্রাণীকে তাদের বিবিধ উপকারের কথা দৃষ্টিপটে রেখে বধ না করার নির্দেশ দেয়া, আর কোন প্রাণীকে প্রয়োজনের তাগিদে হত্যা বা ভোজন না করা কখনও এক কথা নয়।

আর ত্রিপিটক থেকে এটারও প্রমাণ পাওয়া যায় প্রাণী হত্যার ঢালাও নিষেধাজ্ঞা গৌতম বুদ্ধের নয়, এটা কোন রাজার আদেশ ছিল। যেমন মহাসুদর্শন সূত্রান্তে বলা হয়েছে-

“রাজা মহাসুদর্শন এইরূপ কহিলেনঃ “প্রাণীহত্যা করিবে না। অদত্তের গ্রহণ করিবে না। পরিমিতরূপে ভোজন কর।”[16]পবিত্র ত্রিপিটক, চতুর্থ খ-, দীর্ঘনিকায়, দ্বিতীয় খন্ড, মহাসুদর্শন সূত্রান্ত, সূত্র-১০, পৃ-৩৪৫, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, প্রকাশকাল- ২০১৭ইং

ত্রিপিটকে বর্ণিত হয়েছে এ রাজা পূর্বের বা অতীতের ছিলেন। এমন রাজা শুধু পূর্বে নয়, বৌদ্ধধর্মে পরেও এসেছিলেন। যেমন সম্রাট অশোক। তিনি আদেশ জারি করে ভারতবর্ষে গরু হত্যা বা প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ করেছিলেন। যার বিবরণ প্রথম গিরিলিপিতে পাওয়া যায়। যেমন বলা হয়েছে-

এই ধর্মলিপি দেবপ্রিয় রাজা প্রিয়দর্শী উৎকীর্ণ করাইলেন। এই স্থানে (পাটলিপুত্রে) কোনও পশুকে বলি দিয়া তাহার দেহ লইয়া হোম করিবে না; অথবা কোন রূপ সমাজ (ধর্মোৎসব) করিবে না। দেবপ্রিয় প্রিয়দর্শী রাজা সমাজে অনেক দোষ দেখিয়া থাকেন। কিন্তু একটি এরূপ সমাজ আছে, যাহাকে দেবপ্রিয় প্রিয়দর্শী রাজা উপকারক মনে করেন। পূর্বে দেবপ্রিয় প্রিয়দর্শী রাজার রন্ধনশালায়, তাঁহার ব্যঞ্জন প্রস্তুতের জন্য প্রত্যহ বহু শত সহস্র প্রাণী হত্যা হইত। তবে, সম্প্রতি, এই ধর্ম্মলিপি লিখনের সময়ে, তিনটি মাত্র প্রাণীকে ব্যঞ্জন প্রস্তুতের জন্য নিহত করা হয়ঃ- দুইটি ময়ুর ও একটি মৃগ। সে মৃগও নিত্য নিহত হয় না। পশ্চাৎ আর এ তিনটি প্রাণীও হত্যা করা হইবে না।[17]চতুর্দশ গিরিলিপি, অশোক অনুশাসন, পৃ-৫২, লেখক বীচারুচন্দ্র বসু

তাই, উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত, গৌতম বুদ্ধ সব প্রাণী হত্যা বা ভোজনের বিরোধী ছিলেন না। আর তিনি নিরামিষ ভোজীও ছিলেন না। আর তিনি এমন কোন শিক্ষাও দেন নি। এমন কোন শিক্ষাও তাঁর হতে পারে না।


লেখকঃ হাবিব

সম্পাদনাঃ আশরাফুল নাফিজ

Footnotes

Footnotes
1 পবিত্র ত্রিপিটক, একাদশ খ-, ধম্মপদ, ১৯ ধার্মিক বর্গ, সূত্র-২৭০, পৃ-১৫১, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, প্রকাশকাল- ২০১৭ইং
2 পবিত্র ত্রিপিটক, পঞ্চম খন্ড, মধ্যমনিকায়, দ্বিতীয় খ-, মধ্যম পঞ্চাশ সূত্র, গৃহপতি-বর্গ, জীবক সূত্র, সূত্র ৫১-৫২, পৃ-৫১৯-২০, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, প্রকাশকাল- ২০১৭ইং
3 পবিত্র ত্রিপিটক, খ- একাদশ, পৃ-৪৭৬-৭৮, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, প্রকাশকাল- ২০১৭ইং
4 Dr F. Dipankar Mahathera , দলাই লামা , Dr. Arunjyoti Bhikkhu , বাথোয়াইনমং
5 পবিত্র ত্রিপিটক, তৃতীয় খ-, চূলবর্গ,সংঘভেদক অধ্যায়, পাঁচটি বিষয় প্রার্থনাবিষয়ক কথা, সূত্র-৩৪৩, পৃ-৪২৯-৪৩০, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, প্রকাশকাল- ২০১৭ইং
6 ত্রিপিটক, সূত্রপিটক, মধ্যমনিকায়, মধ্যম পঞ্চাশ সূত্র, গৃহপতিবর্গ, জীবক সূত্র, শ্লোক ৫১-৫৩
7 ত্রিপিটক, বিনয়পিটক, চূলবর্গ, ৭নং সংঘভেদক অধ্যায়, ২য় পরিচ্ছেদ, ৫টি বিষয়ে প্রার্থনা, শ্লোক ৩৪৩
8 বুদ্ধ, মূলঃ ক্যারেন আর্মস্ট্রং, অনুবাদঃ শওকত হোসেন, রোদেলা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ১৫৪-১৫৫
9 ত্রিপিটক, বিনয় পিটক, পরাজিকা, ৪নং নিস্সগ্গিয় অধ্যায়, ভৈষজ সম্পর্কীয় শিক্ষাপদ, শ্লোক ৬২২-৬২৩
10 ত্রিপিটক, বিনয়পিটক, মহাবর্গ, ভৈষজ স্কন্ধ শ্লোক ২৬২
11 ত্রিপিটক, বিনয় পিটক, মহাবর্গ, অভক্ষ্য মাংস শ্লোক ২৮০-২৮১
12 ত্রিপিটক, সূত্রপিটক, দীর্ঘনিকায়, শীলস্কন্ধ বর্গ, ব্রহ্মাজাল সূত্র, শ্লোক-১০
13 পবিত্র ত্রিপিটক, দ্বিতীয় খ-, মহাবর্গ, ভৈষজ্য-স্কন্ধ, অভক্ষ্য মাংস, পৃ-১০১৯, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, প্রকাশকাল- ২০১৭ইং
14 পবিত্র ত্রিপিটক, চতুর্থ খ-, দীর্ঘনিকায়, প্রথম খন্ড, শীলস্কন্ধ বর্গ, ব্রহ্মজাল সূত্র, সূত্র-১০, পৃ-৫১, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, প্রকাশকাল- ২০১৭ইং
15 পবিত্র ত্রিপিটক, ক্ষুত্র নিকায়া, একাদশ খন্ড, সুত্তনিপাত, ক্ষুদ্র-বর্গ, ব্রাহ্মণ ধার্মিক সূত্র, সূত্র ২৯৮-৯৯, পৃ-৪৯০, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, প্রকাশকাল- ২০১৭ইং
16 পবিত্র ত্রিপিটক, চতুর্থ খ-, দীর্ঘনিকায়, দ্বিতীয় খন্ড, মহাসুদর্শন সূত্রান্ত, সূত্র-১০, পৃ-৩৪৫, ত্রিপাসো বাংলাদেশ প্রকাশিত, প্রকাশকাল- ২০১৭ইং
17 চতুর্দশ গিরিলিপি, অশোক অনুশাসন, পৃ-৫২, লেখক বীচারুচন্দ্র বসু
Exit mobile version