রাসূলের (সাঃ) ১১ বিবাহ সংক্রান্ত প্রশ্ন
রাসুল সা. ১১ বিবাহ করেছেন তা কি সঠিক? যৌক্তিক? কারো পক্ষে ১১ বিবাহ করা কতটা যৌক্তিক? অনেকে বলে এতগুলো বিবাহ নাকি রাসূলের নারীলোভিতা প্রমান করে (নাউযুবিল্লাহ)। আবার সাধারন মানুষের জন্য সর্বোচ্চ ৪ বিবাহ জায়েজ, কিন্তু রাসুলের জন্য তার চেয়ে বেশি জায়েজ। এগুলো নিয়ে অনেকে অভিযোগ করে, রাসুলের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে, যদি দয়া করে সমাধান দিতেন
আগে কি সেটা প্রমাণ করা যৌক্তিক নয় যে ১১ বিয়ে অযৌক্তিক? ১১ বিয়ে করা যে অযৌক্তিক সেটা প্রমাণ করতে পারলেইতো একটা কথা ছিল তাই নয় কি?
হয়ত এখন আয়শা রা. এর বিয়ের কথা টানতে পারেন। কিন্তু এই বিষয়ে অনলাইনে বহু উত্তর রয়েছে। [1] এই ছাড়া বাকি একটা নিয়েও কোন প্রশ্ন তোলার মত কোন যৌক্তিক কারণ আছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ নাস্তিকদের নীতি অনুসারে প্রাপ্তবয়স্কদের সম্মতিতে সব কিছুই বৈধ। সেই অনুসারে আপত্তি তোলার কোনো কারণই আর দেখছি না।
ইসলাম অনুসারে কিছু কাজ রাসুলের জন্য খাস করা হয়েছে, যেমন তাহাজ্জুত বাধ্যতামূলক হওয়া, ৪ এর অধিক বিয়ে করা ইত্যাদি কিছু বিষয়। বিভিন্ন সময় এইসব বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল যার কারণে রাসূলকে ১১ বিয়ে করতে হয়েছে, উনার প্রতিটি বিয়ের পিছনে ভ্যালিড কারণ ছিল যেমন খাদিজা রা. প্রথম স্ত্রী ছিলেন, উনার মৃত্যুর পর সন্তানদের দেখা শোনা করার জন্য সাওদা রা. কে বিয়ে করেন, তারপর আল্লাহর আদেশে আয়শা রা. ও হাফসা রা. কে বিয়ে করেন ও ওমর ও আবু বকরের সাথে নিজের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করেন, সাফিয়া রা. কে বিয়ে করার পর দুই গোত্রের যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায়, জুহাইরিয়া রা. কে বিয়ে করার পর জুহাইরিয়ার গোত্রের শতাধিক বন্দি ইসলাম গ্রহণ করে, তার পিতা ইসলাম গ্রহণ করে, পরে জুহাইরিয়া রা, গোত্র রাসূলের বন্ধু হয়ে যায়, জয়নাব রা. কে বিয়ে করে পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করা যায় না এই কুসংস্কার দূর করেন, মায়মূনা বিনতুল হারেছ রা. কে বিয়ে করার পর তার গোত্র রাসূলের সাথে শত্রুতা বহু অংশে কমিয়ে দেয় এইরকম প্রতিটা বিয়ের পিছনে ভ্যালিড কারণ ছিল, ছিল সুদূর প্রসারী হিকমা ও আরো ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা হল আল্লাহর আদেশ। [2]
বাইবেলে বলা হয়েছে শলোমন বা সুলাইমান আ. এর ৭০০ এর উপরে স্ত্রী ছিল, দাযূদ বা দাউদ আ. এর ৮ এর থেকে আরো বেশি বিবাহ করেছিলেন, ইহসাকের পুত্র এষৌর ৪ স্ত্রী ছিল, অবিয এর ১৪ স্ত্রী ছিল, যিরুব্বালের সন্তান ছিল ৭০ টা চিন্তা করেন নিন স্ত্রী কতগুলো ছিল। [3]
আর বাকি থাকে কি? হিন্দু ধর্ম? সেখানেও বহু বিবাহ দেখা যায়। তাদের ভগবান কৃষ্ণারই ১৬ হাজারের বেশি স্ত্রী ছিল। তৃতীয় প্রজাপতি অত্রির ১০ জন স্ত্রী ছিল, সৌভরী মুনির ৫০ স্ত্রী ছিল, মনুর ১০টি স্ত্রী ছিল, জমরাজের ১০ স্ত্রী, রুদ্রের ১১ স্ত্রী, বাসুদেবের ১৪টি স্ত্রী এছাড়া আরো অনেকের কথা উল্লেখ করা সম্ভব। [4]
রাসূলের ১১ বিবাহ যে অযৌক্তিক এটা প্রমাণ করার কি আর কোন উপায় আছে? কোন ভিত্তিতে রাসূলের বিবাহকে অযৌক্তিক বলবেন? হিন্দু ধর্মের ভিত্তিতে? ইহুদি ও খ্রিষ্ট ধর্মের ভিত্তিতে? নাস্তিক্যবাদের ভিত্তিতে? এদের দলিল বা নীতি হতেই রাসূলের বিয়েকে যৌক্তিক প্রমাণিত হয়, তাহলে এদের ভিত্তিতেতো অযৌক্তিক বলার কোন চান্সই নেই। তাহলে কীসের ভিত্তিতে অযৌক্তিক বলবেন?
আর নারীলোভীতার কথা বলছেন! নারীলোভীদের আচরণের সাথে মুহাম্মদ ﷺ এর আচরণের কোনো মিল নেই। চাইলেই আপনি নারীলোভী পুরুষদের চরিত্র, আচার, আচরণ, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি খুঁজে রাসূল ﷺ এর চরিত্র, আচার, আচরণ, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদির সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন।
মুহাম্মদ ﷺ এর চরিত্র সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন :--
“নিশ্চয়ই আপনি এক মহান চরিত্রের অধিকারী।” [সূরা ক্বালাম আয়াত ৪]
“হে মুহাম্মদ! আমি তোমাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।” [সূরা আম্বিয়া আয়াত ১০৭]
“আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সর্তককারীরূপে প্রেরণ করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা উপলব্ধি করে না।” [সূরা সাবা আয়াত ২৮]
তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ [সূরা আল-আহজাব, আয়াত ২১]
ইবনে আবি শাইবা, দুরূসুস সিরাত, সিরাতে মুগলতাই এছাড়া আরো কিছু সিরাতের কিতাবে উল্লেখ আছে যে মুশরিকদের পক্ষ থেকে উতবাহ ইবনে রাবিআ, নবী মুহাম্মদ ﷺ কে সম্পদ দেওয়ার, নেতা বানানোর এবং সুন্দরি নারীর প্রলোভন দেয় যাতে তিনি ইসলামের দাওয়াত দেয়া বন্ধ করে দেয় কিন্তু নবী মুহাম্মদ ﷺ তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। আরেক যায়গায় তিনি পরিষ্কার শব্দে বলেন, আমার এক হাতে সূর্য ও অন্য হাতে চাঁদ এনে দিলেও আমি এ সত্য প্রচার থেকে বিরত হব না। [5]
সাহল ইবন সা’দ ও আবূ উসায়দ (রা) বর্ণনা করেন, তাঁরা বলেন যে, নবী ﷺ উমাইমা বিনতু শারাহীলকে বিবাহ করেন। পরে তাকে তাঁর কাছে আনা হলে তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করলেন তার শরীরে রাখার জন্য, যাতে সে শান্ত হয়। সে বললঃ আমি আপনার থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তিনি ﷺ বললেনঃ তুমি উপযুক্ত সত্তারই আশ্রয় নিয়েছ।। তাই নবী ﷺ আবূ উসাইদকে তার জিনিসপত্র গুটিয়ে এবং দু-খানা কাতান বস্ত্র প্রদান করে তার পরিবারের নিকট পৌঁছে দেবার নির্দেশ দিলেন। [6]
শুধু এই দুই একটা উদাহরণ থেকেই প্রমাণিত হয় তিনি কোন ধরনের চরিত্রের মানুষ ছিলেন। বিস্তারিত জানতে আরো দেখুন [2]
কাফেররা অনেকগুলো মেয়ের বা ছেলের সাথে বিয়ে ছাড়া রাত কাটালে সমস্যা হয় না কিন্তু বিশ্বনবী বহু বিবাহ করায় সমস্যা তাই না? কাফেররা একটা মেয়েকে প্রেগনেন্ট করে পরে সেটা অস্বীকার করে সেই মেয়ের জীবন নষ্ট করলে সমস্যা হয় না কিন্তু আমাদের নবী বিবাহ করে সেই নারীগুলাকে সম্মান, মর্যাদা, অধিকার সব কিছু দেওয়ায় সমস্যা তাই না? কাফেররা যেখানে পারে যার সাথে পারে তার মাধ্যমে নিজেদের কামনা মিটায় তাতে সমস্যা হয় না কিন্তু আমাদের নবী বিবাহ করে সেই নারীদেরকে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ায় সমস্যা হয়ে গেছে তাই না? কাফেররা অবৈধ ভাবে অবৈধ কাজ করলে সমস্যা হয় না কিন্তু মহানবী বৈধভাবে বিবাহ করায় সমস্যা? এগুলা ভণ্ডামি নয়তো আর কি!
তথ্যসূত্রঃ-
[1] https://www.frommuslims.com/পেডোফিলিয়ার-অপবাদ/
[2] বিস্তারিত জানতে পড়ুন - https://islamicauthors.com/article/121 ;
https://uncovertrue.blogspot.com/2020/03/author-aminur-rashid.html ;
https://www.hadithbd.com/books/detail/?book=15§ion=459 ;
https://ahlehaqmedia.com/5230-2/ ;
https://muhammadsaifurbd.wordpress.com/2019/06/16/রাসূল-সাঃ-এর-একাধিক-বহু-বি/ ;
https://alihasanosama.com/marriages-of-the-holy-prophet/ ;
https://rijwanrafiqi.com/নবীজির-সা-আখলাক।/ ;
https://omukderkotha1.blogspot.com/2022/02/blog-post_21.html ;
https://omukderkotha1.blogspot.com/2019/07/blog-post_37.html
[3] https://islamicauthors.com/article/393 ;
https://www.gotquestions.org/Bengali/Bengali-polygamy.html ;
https://sarkersanjid.wordpress.com/2015/07/06/বাইবেলে-বহু-বিবাহ/
[4] https://vedkabhed.com/?s=polygamy
[5] ইবনে হিশাম ১ম খণ্ড ২৬৫-২৬৬পৃঃ
[6] সহিহ বুখারি হাদিস ৫২৫৫-৫২৫৭
Please login or Register to submit your answer