দাহাহা ও আল আরদ সম্পর্কে প্রশ্ন

প্রশ্নোত্তর (Q&A)Category: ইসলামদাহাহা ও আল আরদ সম্পর্কে প্রশ্ন
বলা সম্ভব না asked 10 months ago
  • ভাইয়া আসসালামু আলাইকুম, একটা বস্তাপচা প্রশ্ন, আরবি জানা কাউকে দিয়ে যদি একটু সমাধান দিতেন, সূরা নাযিয়াত আয়াত ৩০ এ (দাহাহা) যে শব্দটা ইউজ হইছে বিভিন্ন তাফসীর যেমন তাবারী কুরতুবী ইত্যাদিতে একে (সমতল,চ্যাপ্টা) বলা হইছে। এটা একটা বস্তাপচা পুরানো প্রশ্ন ভাইয়া, আমার দরকার নাই এইটা অনুসারে পৃথিবী ডিমের মত নাকি না তা জানার। আমার জানা দরকার আসলেই কি ক্লাসিকাল স্কলারেরা চ্যাপ্টাই মনে করতেন কিনা? (ইমাম কুরতুবী পৃথিবীকে কয়েনের মত মনে করতেন সূরা রাদের তাফসীরে আছে)  আর এই আয়াতটায় এইটা বলারো সুযোগ নাই যে এটা মানুষের দৃষ্টি সাপেক্ষ। কারণ এই আয়াতটা মহাবিশ্ব সৃষ্টির একটা স্টেপ হিসাবে ইউজ হইছে। আমার জানা দরকার যে দাহা হা শব্দটার মূল অর্থ কি। বিভিন্ন তাফসীর সমূহে আমরা دحوا: بسطته দাহাহা অর্থ বাসাতা পাই। বাসাতা অর্থ কোন চাদরকে প্রসারিত করা অর্থাত সমতল কোন কিছুকে প্রসারিত করা,। এখন যুক্তি হিসাবে আপনারা হয়ত বলবেন একটা বেলুনও তো প্রসারিত করা যায় (যেহেতু পৃথিবী গোলাকার) । কিন্তু بسط শব্দটা শুধু চ্যাপ্টা (যেমন চাদর বা কাপড়) কোন জিনিসকে প্রসারণ করার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়৷ ভাইয়া যদি সম্ভব হয় আমি ভিক্ষা চাইতেসি, এরাবিক লিঙ্গুইস্টিকস জানা কেউ যদি উত্তর দিত ভাল হইত। খুব আতংকে আছি ভাইয়া। প্লিজ রাগ হবেন না। আমি দ্বীনের উপর থাকতে চাই। কিন্তু এই জিনিসগুলা আমার মাথা নষ্ট করে ফেলতেস।
  • ২. কুরআনে পৃথিবী বা যমীন বুঝানোর জন্য "আল আরদ" শব্দটা ইউজ হইছে, এবং ভূমি/land/ স্থলভাগ বুঝানোর জন্য الْبَرِّ শব্দটা ইউজ হইছে। অনেক বিভিন্ন জায়গায় "আল আরদ" এর অনুবাদ "ভূমি/land " করে থাকে, কিন্ত আমার জানামতে যখম আরদ শব্দটার আগে আল যুক্ত হয় তখন তা দ্বারা সমগ্র আপেক্ষিক দৃষ্টিতে গোলাকার পৃথিবীই বোঝানো উদ্দেশ্য। কারণ যখন আরদ শব্দটা "আল" বাদে ব্যবহার করা হয় তখনই একমাত্র এই দ্বারা ভূমি বোঝানো হয়। যদি একটু লিংগুইশটিকালি ও গ্রামাটিকালি ডিফেন্ড করতেন বা আমার কোথাও ভুল আছে কিনা পয়েন্ট আউট করতেন. ধন্যবাদ (ইবরাত ব্যবহার করলে ভাল হয়)
2 Answers
Ashraful Nafiz Staff answered 10 months ago

দাহাহার অর্থ উট পাখির ডিম অর্থ করা আমাদের দৃষ্টিতে গ্রহনযোগ্য নয়। কারন এটা নতুন করে অর্থ করা হয়েছে যা আদো গ্রহনযোগ্য না, না সালফে সালেহিনদের বুঝ অনুসারে, না বিজ্ঞান অনুসারে, না প্রাচীন আরবি ভাষা অনুসারে।
অর্থাৎ দাহাহা দিয়ে পৃথিবীকে গোল প্রমাণ করার থিওরি সম্পূর্ণ ভুল।

দাহা এর ধাতু "দাহউন" মানে নিছকই আয়তন/অঞ্চল বৃদ্ধি করা বা কোনোকিছুকে সৃষ্টি করা বা কোনোকিছুকে বিন্যাস্ত করা। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো "রকম" এর প্রসারণ উদ্দেশ্য হয়না, বরং যেকোনো রকম এর প্রসারণই উদ্দেশ্য হতে পারে।

প্রাচীন ভাষাবিদরা উট পাখির সাথে সম্পর্কিত একটা অর্থ করেছেন, কিন্তু তা উট পাখির ডিম নয় এবং আপনি দাহাহার যেইরকম প্রসারণের অর্থ করছেন সেরকম কোন আলেম এমনকি কোন ভাষাবিদগণদের কেউই এমন অর্থও করেন নি। মানে এর দ্বারা শুধু চাদর বা কাপর বা সমতল কিছুকে প্রসারণ করাকে বুঝানোর অর্থ যেটা আপনি করছেন।
দাহউন কে সংজ্ঞায়িত করা হয় "بسط" দ্বারা।

(دَحَوَ) الدَّالُ وَالْحَاءُ وَالْوَاوُ أَصْلٌ وَاحِدٌ يَدُلُّ عَلَى بَسْطٍ وَتَمْهِيدٍ

https://shamela.ws/book/21710/841

আর بسط দ্বারা সাধারণভাবে যেকোনো ধরণের বিস্তৃতী অর্থাৎ অঞ্চল বৃদ্ধি উদ্দেশ্য হয়।

(بَسَطَ) الْبَاءُ وَالسِّينُ وَالطَّاءُ أَصْلٌ وَاحِدٌ، وَهُوَ امْتِدَادُ الشَّيْءِ، فِي عِرَضٍ أَوْ غَيْرِ عِرَضٍ

https://shamela.ws/book/21710/245

প্রাচিন ব্যাকরণবিদ বা ভাষাবিদগণ ‘দাহউন’ এর একটি অর্থ করেছেন এমন স্থান যেখানে উট পাখি নিজের সুবিধা মত মাটিকে খুরে নরম বা গর্ত বা ডিম পাড়ার পর রাখার মত উপযোগী করে ডিম পাড়ে। অন্য বহু প্রাণীদের ক্ষেত্রেও এই শব্দ ব্যবহার হয় যেখানে তারা তাদের নিজেদের বসবাসের (ভূমির সাথে সংযুক্ত বাসস্থান) স্থানকে নিজের সুবিধামত থাকার জন্য বানিয়ে সেখানে থাকে। অর্থাৎ এর দ্বারা বসবাসের উপযোগী সম্প্রসারণ বুঝায়। এর জন্য পৃথিবীকে সমতল হওয়া মাধ্যতামূলক নয়।

বিস্তারিত দেখতে পারে -

https://shamela.ws/book/9757/1598
https://shamela.ws/book/13631/778
https://shamela.ws/book/83/1116
https://shamela.ws/book/21568/264
https://shamela.ws/book/23235/4624

কিছু কথা না বললেই নয়, কোরআন পৃথিবীর আকার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে কিছু বলে না, কুরআন এই ক্ষেত্রে নিউট্রাল পয়েন্টে রয়েছে বলে আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়। কিন্তু কোরআন যে সুস্পষ্ট করে গোল বা সমতল বলে না এতে কম বেশি প্রায় ভাষাবিদ ও মুফাস্সিরগণ আশা করি সহমত পোষন করতে পারেন। কিন্তু কেন আল্লাহ সুস্পষ্ট করে কুরআনে পৃথিবীর আকার সম্পর্কে কিছু বলেন নি সেটা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। হয়তো এটা নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে তাই, হয়তো পৃথিবী প্রকৃত অর্থে সম্পূর্ণ গোলাকৃতির নয় তাই, সেটা আল্লাহই ভালো জানেন।

আল্লাহ যদি পৃথিবীকে গোল বলে দিতেন তাহলে হয়তো এখন অনেকে ভুল বের করে দাবি করতো যে বিজ্ঞান বলে পৃথিবী বাস্তবে সম্পূর্ণ গোল নয়, আমরা ভূ-পৃষ্ঠ ও সমূদ্রের তলদেশের জমিকে বিবেচনায় আনলে পৃথিবী আসলেই সম্পূর্ণ গোল নয়, সেহেতু কোরআনে ভুল রয়েছে। মস্তিষ্কহীনগণ এই অভিযোগও আনতে পারতো। তাদের কাছে কুরআন যাই বলুক না কেন সেটাতেই সমস্যা, যদিও তারা তাদের বার বার পরিবর্তন হওয়া বিজ্ঞান দিয়েও আজ পর্যন্ত কুরআনকে ভুল প্রমানিত করতে পারে নি।

যাইহোক অনেকে বিভিন্ন ভাবে ব্যখ্যা করে কুরআন পৃথিবীকে অনেকটা গোলাকৃতির ইঙ্গিত করে বলে মতামত দিয়েছেন, যেমন পাগড়ির ব্যখ্যাটা ইবনে তাইমিয়া (রহ) প্রথম করেছিলেন সম্ভবত, তারপর ইবনে হাজম (রহ) কিছু আয়াতের ভিত্তিতে পৃথিবী গোল এই মত দিয়েছিলেন। তারপর ইমাম আহমদের অনুসারীদের ২য় প্রজন্ম, আলবানী (রহ), ইবনুল কায়্যিম (রহ), উসাইমীন (রহ), আত-তাহির বিন আশুর (রহ), ইবনুল খাতিব (রহ), আবু আল-ফারাজ ইবনে আল-জাওজি (রহ), আবু মুহাম্মদ ইবনে হাজিম (রহ), শেখ আল-শানকীতি (রহ), ইমাম আবু ইয়ালা (রহ), ইমাম ফখরুদ্দীন রাযি (রহ), শেইখ বিন বায (রহ)  সহ আরো বহুজনই পৃথিবী গোল হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

On behalf of the authors answered 10 months ago

আরবী ভাষা সম্পর্কে আপনার প্রচুর ভুল দেখা যাচ্ছে। আল শব্দটা খুব কমন, এটা নিয়ে আপনি যে অনুবাদ করছেন তা দেখে আসলেই বিস্মিত হতে হচ্ছে। আরবি ভাষায় নির্দিষ্টতা (definite) করে কিছু বোঝাতে শব্দের আগে ‘আল’ শব্দটা যোগ করা হয়। আল শব্দটি অনেকটা ইংরেজি ব্যাকরন article "The" এর মত ব্যবহৃত হয়। এই শব্দ ব্যবহার হওয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে গোলাকার বা সমতল পৃথিবী বুঝায় না।

আর কুরআনে পৃথিবী বা যমীন, তা বুঝানোর জন্য ارص (আরদ) বা الارض (আল আরদ) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।  আরবিতে 'ارض' শব্দটির অর্থ মাটি, ভূমি, জমিন, পৃথিবী ইত্যাদি। 'পৃৃৃৃথিবী' বাংলা শব্দ৷ কাজেই কুরআনে সরাসরি 'পৃথিবী' শব্দের উল্লেখ থাকবেনা, এটাই স্বাভাবিক। যেটা উল্লেখ থাকবে তা হল 'পৃৃৃৃথিবী' এর আরবী প্রতিশব্দ অর্থাৎ, ارص (আরদ) বা 'الارض' (আল আরদ)।

এখন কোন আরদ বা আল আরদ দিয়ে সমতল পৃথিবীকে বুঝাবে নাকি গোলাকার পৃথিবীকে বুঝাবে নাকি পুরো পৃথিবীকে বুঝাবে নাকি পৃথিবীর কোন একটা অংশকে বুঝাবে নাকি মাটিকে বুঝাবে নাকি ভূমিকে বুঝাবে নাকি কোন নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডকে বুঝাবে নাকি পায়ের নিচে যে অংশটুকু আছে তাকে বুঝাবে নাকি অন্য কিছু বুঝাবে এই সব কিছুই কোরআনে কোন প্রেক্ষাপটে বা ইংরেজিতে আপনারা যাকে কনটেক্স বলেন সেটাতে বলা হয়েছে তার উপর নির্ভর করবে।

Back to top button