এ ধারণাগুলো কিভাবে উদ্ভূত হয়েছিল, কে এগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিল বা এর প্রমাণই বা কি? তা কেউ জানে না।
বেদে পুনর্জন্মের কোন প্রমাণ নেই, বেদে পুনর্জন্ম সম্পর্কে একটি শব্দও নেই এবং এই ধারণাগুলো শুধু পরবর্তীকালে পুরাণের (Puranas) দর্শনগুলোতে উল্লেখিত হয়েছিল।
এটা অসম্ভব নয় যে, এই চিন্তাসমূহ একজন হিন্দু সন্ন্যাসীর মনের মধ্যে জাগ্রত হয়েছিল, যেমনটি পানাহার না করে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার ফলে এক ধরণের কল্পনার উদয় ঘটে, যেভাবে প্রাণ (Prana) সাধনার মধ্যে করা হয়।
জ্ঞাতব্য যে, প্রাণ সাধনার সময়ে পানাহার পরিত্যাগ করে, একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে (ভঙ্গিতে) দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকতে হয়।
এভাবে পানাহার ব্যতীত একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে ঘন্টার পর ঘন্টা এই সম্পূর্ণ নীরবতা, রক্তের গ্লুকোজ হ্রাসের কারণে মস্তিষ্কের আয়নগুলোতে ভারসাম্যহীনতার দিকে নিয়ে যায়, তাই এন্ডোরফিনের অনিয়ন্ত্রিত নিঃসরণ ঘটে এবং প্রকৃত হ্যালুসিনেশন (দৃষ্টিভ্রম) ঘটতে শুরু করে। [৩০]
সুতরাং সন্ন্যাসীরা যা মনে করেন এবং বারবার জন্ম গ্রহণ নিয়ে পুরাণে যা লিখেছেন, তা হ্যালুসিনেশন বা মস্তিষ্কের অসাড়তার কাছাকাছি একটি বিষয় মাত্র।
এটি আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতিবেদন অনুসারে, যেমন ইউএস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি রিসার্চ, যা একটি সরকারি ওয়েবসাইট এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম চিকিৎসা গবেষণা রেফারেন্স অনুসারে, এটি বলে: দীর্ঘ সময় যাবত রক্তে গ্লুকোজ স্বল্পতা হ্যালুসিনেশনের (দৃষ্টিভ্রম) দিকে পরিচালিত করে।[৩১]
ইমাম যাহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন: “জ্ঞান বঞ্চিত উপাসনাকারী ব্যক্তি যখন দুনিয়া বিমুখ হয়, একাগ্রতা অর্জন করে আর ক্ষুধার্ত হয়, ফলমূল ও গোশত [খাওয়া] পরিত্যাগ করে, আর ছোট ছোট রুটির টুকরা খাওয়াতে নিজেকে সীমাবদ্ধ করে, তখন আত্মার বিপদ তাকে পেয়ে বসে, শয়তান তার ভিতরে আসা-যাওয়া করে, তখন তার ধারণা হয় যে, সে গন্তব্যে পৌঁছে গেছে, তাকে সম্বোধন করা হচ্ছে, আর সে আধ্যাতিকতার উচ্চ শিখরে উত্থিত হচ্ছে, তখন শয়তান তার উপরে বিজয়ী হয় এবং তাকে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে।” [৩২]
এ কারণেই ইসলাম এভাবে সংযম সাধনা এবং এ রকম পদ্ধতিতে নিজের আত্মার উপরে কঠোরতা আরোপ করার ব্যাপারে সতর্ক করেছে।
নিজের উপর এ ধরনের কঠোরতা আরোপ সময়ের বিভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা এবং ধর্মকে বিনষ্টের দিকে নিয়ে যায়।
মহিমান্বিত কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿قُلۡ مَنۡ حَرَّمَ زِينَةَ ٱللَّهِ ٱلَّتِيٓ أَخۡرَجَ لِعِبَادِهِۦ وَٱلطَّيِّبَٰتِ مِنَ ٱلرِّزۡقِۚ قُلۡ هِيَ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا خَالِصَةٗ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلۡأٓيَٰتِ لِقَوۡمٖ يَعۡلَمُونَ٣٢﴾ [الأعراف: 32]
“বলুন, আল্লাহ্ নিজের বান্দাদের জন্য যেসব শোভার বস্তু ও উত্তম জীবিকা তৈরী করেছেন তা কে হারাম করল?” সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা তোমাদের নিজেদের উপরে কঠোরতা আরোপ করো না, যাতে আল্লাহ তোমাদের জন্য কঠিন করে দিবেন; কেননা [অতীতে] একদল মানুষ তাদের নিজেদের উপরে কঠোরতা আরোপ করেছিল, সুতরাং তখন আল্লাহও তাদের উপরে কঠিন করে দিয়েছিলেন, আর এগুলো হলো তাদের অবশিষ্ট নির্জনগৃহে ও গীর্জাসমূহে রয়ে গেল।
﴿ثُمَّ قَفَّيۡنَا عَلَىٰٓ ءَاثَٰرِهِم بِرُسُلِنَا وَقَفَّيۡنَا بِعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَ وَءَاتَيۡنَٰهُ ٱلۡإِنجِيلَۖ وَجَعَلۡنَا فِي قُلُوبِ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُ رَأۡفَةٗ وَرَحۡمَةٗۚ وَرَهۡبَانِيَّةً ٱبۡتَدَعُوهَا مَا كَتَبۡنَٰهَا عَلَيۡهِمۡ إِلَّا ٱبۡتِغَآءَ رِضۡوَٰنِ ٱللَّهِ فَمَا رَعَوۡهَا حَقَّ رِعَايَتِهَاۖ فَـَٔاتَيۡنَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنۡهُمۡ أَجۡرَهُمۡۖ وَكَثِيرٞ مِّنۡهُمۡ فَٰسِقُونَ٢٧﴾ [الحديد: 27]
“বৈরাগ্যবাদকে তারাই আবিষ্কার করেছিল, যা আমি তাদের উপরে আবশ্যক করিনি।’’ সূরা আল-হাদীদ: ২৭।[৩৩]
এই কঠোরতা হ্যালুসিনেশন তৈরি করেছিল, যার থেকে বেদ-বিরোধী ধারণাগুলো তৈরি হয়েছিল, যা আজ হিন্দুধর্মের অন্যতম মুলনীতি হিসেবে পরিগণিত।
আর যদি আমরা এর বিপরীতে প্রকৃত মুজেযার ঘটনাগুলো দেখি, যেগুলোর সাহায্যে আল্লাহ তাঁর নবীদের সাহায্য করেন, তাহলে আমরা দেখতে পাব যে, মুজেযা বা অলৌকিক ঘটনাগুলো আকস্মিকভাবে এবং কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই ঘটে থাকে এবং লোকেরা তাদের নিজেদের চোখে দেখে এবং প্রত্যক্ষ করে, আর মানুষ কখনোই তার অনুরূপ করতে পারে না।
এই হল নবীদের ঘটনা এবং হিন্দু মতবাদে বিশ্বাসী সন্ন্যাসীদের ঘটনাগুলোর মধ্যে পার্থক্য।