সহজাত প্রবৃত্তি ও লালসা প্রতিরোধের মূল হচ্ছে স্বভাবজাত ও ধর্মীয় নির্দেশিত পদ্ধতি। আর মুসলিম ব্যক্তির জন্য অপরিহার্য যে, সে যেভাবে ইলাহী অহী (ঐশৗ বাণী) আদেশ করেছে ঠিক অনুরূপ পদ্ধতিতে লালসাকে পরিশীলিত করবে।
যার মধ্যে রয়েছে: বৈধ বিবাহ, চোখ অবনমিত করা, আরো রয়েছে: প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা, আরো রয়েছে: পাপে লিপ্ত হলে আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সতর্কতা।
আবার মানুষ যখন ভুল করে ও তার আত্মা দুর্বল হয়, তার জন্য তাওবার পদ্ধতিও রয়েছে।
কিন্তু হিন্দুধর্মে, আমরা একজন হিন্দু ব্যক্তিকে দেখতে পাই, যে ‘মোক্ষ’ অর্জন করতে চায়, সে তার স্ত্রী, সন্তান এবং পেশা ছেড়ে পথেঘাটে এবং নির্জন (পরিত্যক্ত) স্থানে ঘুমায়, তার খাবারের জন্য ভিক্ষা করে, এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এইভাবে তার দেহ পোড়াতে থাকে। এটা কী নিজেকে পরিশীলিত করার কোন সঠিক উপায়?
হিন্দু সন্ন্যাসীরা, যাদের সংখ্যা আজ ভারতে ৫০ লক্ষ ছাড়িয়েছে, তারা কেবল তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা ব্যক্তিদের ধ্বংস করে ক্ষান্ত হয় না;বরং তারা নিজেরাই তাদের খাওয়ানো এবং যত্ন নেওয়ার জন্য অন্যদের প্রতি মুখাপেক্ষি।
ইসলাম মানব আত্মাকে সর্বোত্তম ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপায়ে পরিশুদ্ধ ও পরিশীলিত করেছে।
যাদের দায়িত্ব গ্রহণ করা হয় তাদের অধিকারের ক্ষেত্রে ত্রুটিকে ইসলাম অপরাধ সাব্যস্ত করেছে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: [যার অর্থ] “মানুষের গুনাহের জন্য এতটুকু যথেষ্ট, সে যাদের ভরণপোষণ করে তাদের হক নষ্ট করে ।”[৫৯]
অতপর ইসলাম সিদ্ধান্ত দিয়েছে, দুনিয়া পরিত্যাগ না করে সৎকাজ এবং প্রবৃত্তির বিরোধিতা করে আত্মার সংশোধন ও পরিশুদ্ধ করবে। ইসলামে একজন ব্যক্তিকে হিন্দুধর্মের মত এভাবে দেহকে কষ্ট দেয়ার প্রয়োজন ছাড়াই তার সমাজে বসবাস, সমাজ বিনির্মাণ এবং একই সময়ে সে আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ পেতে পারে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَأَمَّا مَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ وَنَهَى ٱلنَّفۡسَ عَنِ ٱلۡهَوَىٰ٤٠ فَإِنَّ ٱلۡجَنَّةَ هِيَ ٱلۡمَأۡوَىٰ ٤١﴾ [النازعات: 40-41]
“আর যে তার রবের অবস্থানকে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিজকে বিরত রাখে। সুতরাং জান্নাতই তার আবাসস্থল।” সূরা আন-নাযি‘আত, আয়াত: ৪০-৪১।
সুতরাং আল্লাহকে ভয় করা এবং সৎকাজ করাই হচ্ছে জান্নাতের পথ। যদিও তুমি কোন অট্টালিকাতে বাস কর।
সুতরাং অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা শরীরকে পোড়ানো বা বিনষ্ট করাকে আবশ্যক করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿فَلَا ٱقۡتَحَمَ ٱلۡعَقَبَةَ١١ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا ٱلۡعَقَبَةُ ١٢ فَكُّ رَقَبَةٍ١٣ أَوۡ إِطۡعَٰمٞ فِي يَوۡمٖ ذِي مَسۡغَبَةٖ١٤ يَتِيمٗا ذَا مَقۡرَبَةٍ ١٥ أَوۡ مِسۡكِينٗا ذَا مَتۡرَبَةٖ١٦ ثُمَّ كَانَ مِنَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡمَرۡحَمَةِ١٧ أُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلۡمَيۡمَنَةِ ١٨﴾ [البلد: 11-18]
“তবে সে তো বন্ধুর গিরিপথে প্রবেশ করেনি।” (১১) আর কিসে আপনাকে জানাবে— বন্ধুর গিরিপথ কী?” (১২) “এটা হচ্ছে দাস মুক্ত করা। (১৩) অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে খাদ্যদান করা। (১৪) ইয়াতীম আত্মীয়কে। (১৫) অথবা দারিদ্র-নিষ্পেষিত নিঃস্বকে। (১৬) তারপরে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যারা ঈমান এনেছে, আর পরষ্পরকে উপদেশ দিয়েছে ধৈর্য্য ধারণের, আরো পরষ্পর উপদেশ দিয়েছে দয়া-অনুগ্রহের। (১৭) তারাই সৌভাগ্যশীল। (১৮)” সূরা আল-বালাদ, আয়াত: ১১-১৮।
সুতরাং যতক্ষণ না তুমি জান্নাত লাভে ধৈন্য না হবে, তোমার দায়িত্ব হলো, দাস মুক্ত করবে, গরীবদের খাওয়াবে, উত্তম কাজ করবে আর মানুষকে উত্তম কাজের উপদেশ দেবে।
এভাবে তুমি নাজাত পাবে।
তুমি এভাবে পরিত্রাণ পাবে না যে, তুমি মানুষ থেকে দূরে থেকে তোমার বাকী জীবন ভিক্ষা করে কাটিয়ে দিবে।