হুরের বাস্তবতা ও নারীদের সংশয় নিরসন
হুর (حُـور) শব্দ উৎপন্ন (حُـورِيَّـة ,حُورِيّ) স্ত্রীলিঙ্গগত বিশেষণ যার অর্থ উজ্জ্বল সাদা-কালো চোখধারী। আরবিতে হুর (حُور) শব্দটি বহুবচন যার পুংবাচক একবচন হল ‘আহর’ (أحْوَر) ও স্ত্রীবাচক একবচন হল ‘হাউরা’ (حَوْراء) এবং (ازواج) ‘আযওয়াজ’ শব্দটি বহুবচন, এর এক বচন হচ্ছে زوج ‘যওজ’, যার অর্থ হচ্ছে জোড়া, এ শব্দটি স্বামী বা স্ত্রী অর্থে ব্যবহার করা হয়। স্বামীর জন্য স্ত্রী হচ্ছে ‘যওজ’, আবার স্ত্রীর জন্য স্বামী হচ্ছে ‘যওজ’। অর্থাৎ এই শব্দটা দ্বারা নির্দিষ্ট করে স্ত্রী বা স্বামী বুঝায় না বরং দাম্পত্য সঙ্গী বুঝায়। কুরআনে হুর দ্বারা শুধু সুন্দরী তরুণী জান্নাতি নারীকেই বুঝানো হয়েছে এমনটা নাও হতে পারে, কারণ হুর শব্দ দ্বারা পুরুষকেও বুঝানো যেতে পারে, আর কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেন হুরকে জান্নাতিদের দাম্পত্য সঙ্গী করবেন, স্ত্রী বানাবেন বলেন নি। কিন্তু হাদিসে শুধু নারী হুর কেন্দ্রিক হাদিস পাওয়া যায়, অর্থাৎ হুর যে আসলে নারী বা হুর যে স্ত্রী স্ত্রীবাচক শব্দ এই বিষয়েই ইঙ্গিত পাওয়া যায় ও ভাষা গত দিক থেকেও এই শব্দটি স্ত্রী লিঙ্গই মনে হয় বটে। তাই কোরআনের কিছু আয়াতের অনুবাদে বেশিরভাগ মুফাসসিরগণ হুরদেরকে জান্নাতিদের স্ত্রী হিসেবেই অনুবাদ করেছেন, তাই সবাই মনে করে হুর মানে শুধু নারী। কিন্তু কুরআন অনুসারে হুর শুধু নারীই এমনটা শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে বলা সম্ভব না বরং পুরুষও হতে পারে আশা কর যায়, এটার একটা সম্ভবনা রয়েছে, আল্লাহই ভালো জানেন[1]ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির (রহ)। সাধারণত হুর বলতে মানুষ অতিশয় সুন্দরী; জান্নাতের পরী; স্বর্গের অপ্সরী ইত্যাদিকেই বুঝিয়ে থাকে। তাদেরকে হুর এই জন্য বলা হয় যে, দৃষ্টি তাদের রূপ ও সৌন্দর্যকে দেখে হয়রান (মুগ্ধ) হয়ে যাবে।
কুরআনের এই আয়াত গুলোতে একটাতেও নির্দিষ্ট করে নারী হুরের কথা বলা হয় নি, বা নির্দিষ্ট করে নারী হুরের সাথে পুরুষ জান্নাতিদের বিবাহ দেওয়া হবে এই কথাও বলা হয় নি।[2]কুরআন ২:২৫; ৩৬:৫৫-৫৬; ৩৭:৪৮-৫০; ৩৮:৫২; ৪৪:৫৪; ৫২:২০; ৫৫:৫৬, ৫৮, ৭০-৭৮; ৫৬:২২-২৩, ৩৫, ৩৭ এটা মনে করবেন না যে, পুরুষের সাথে পুরুষের আর নারীর সাথে নারীর বিয়ে দেওয়াকে বুঝাচ্ছি, বরং আমি বুঝাতে চাচ্ছি এখানে বলা হয়েছে জান্নাতিদেরকে হুরের সাথে বিবাহ দেওয়া হবে। আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহঃ) বলেছিলেন, “কুরআন ও কুরআনের অনুবাদ এক নয়।” উনার এই কথাটা শতভাগ সত্য, আমরা অনুবাদকেই কুরআন মনে করি, যার কারণে অনেক মুসলিমই কুরআনের বেশ কয়েকটা আয়াতের অনুবাদ পরে ভুল বুঝে থাকে, বাজারে এমনও অনুবাদ আছে যেগুলোতে জঘন্য ভুল করা হয়েছে অনুবাদ করতে যেয়ে। যাইহোক, কুরআনে শুধু দুটি আয়াতেই নির্দিষ্ট করে নারী হুরের কথা পাওয়া যায়।[3]কুরআন ৭৮:৩৩; ৫৬:৩৬
জান্নাতী পুরুষদের জন্য কয়জন হুর রয়েছে?
আমাদের মুসলিমদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা গেঁথে আছে, সেটা হল মুসলিমরা মনে করে ইসলামে বলা হয়েছে সব জান্নাতি পুরুষ ৭০/৭২ টা হুর পাবে। আসলে হাদিসে জান্নাতে শুধু শহিদদের জন্য ৭০/৭২ টা হুরের কথা বলা হয়েছে, সব জান্নাতি মানুষের জন্য এটা বলা হয়নি।
সহিহ হাদিসে বলা হয়েছে শুধু শহিদদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ৬টি নেয়ামত রয়েছে, তার মধ্যে একটি হল তাদেরকে ৭০/৭২ টি হুরের সাথে বিবাহ দেওয়া হবে।[4]তিরমিযী, ১৬৬৩; ইবন মাজাহ ২৭৯৯; সিলসিলাহ সহীহাহ ৩২১৩; মুসনাদে আহমাদ ৪/১৩১; তা’লীকুর রাগীব ২/১৯৪; আহকামুল জানায়ীজ ৩৫; তাফসীরে আহসানুল বায়ান, সূরা আদ দুখান … See Full Note
কুরআনে সাধারণ জান্নাতী পুরুষদের জন্য হুর দেওয়ার কথা বলার সময় বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে ও হাদিসে সাধারণ জান্নাতি পুরুষদের জন্য ২ জন স্ত্রী থাকবে তা বলা হয়েছে। এই থেকে বুঝা যায় সাধারণ জান্নাতি পুরুষদের জন্য অন্তত দুজন করে স্ত্রী থাকবে। কিন্তু কেউ যদি আরো চায় তাহলে সেটা ভিন্ন কথা, তাকে হয়ত আরো হুর দেওয়া হতে পারে, কারণ জান্নাতে যে যেটা চাইবে আল্লাহ তাকে সেটা দিবেন। আলেমগণের মতে হয়ত প্রধান স্ত্রী দুইজন থাকবে আর তার আমল অনুসারে উপপত্নি থাকতে পারে আরো, যার সংখ্যা হাদিসে স্পষ্ট না।[5]সহিহুল বুখারী ৩২৫৪; সহিহুল মুসলিম ২৮৩৪, ১৮৮; সুনানে তিরমিজি ২৫৩৭; তাফসীরে আহসানুল বায়ান, সূরা আদ দুখান আয়াত ৫৪ এর তাফসির; ফাতহুল বারী, ৬/৩২৫; হাদী আল … See Full Note
এছাড়া সব জান্নাতি ৭২ জন হুর পাবে এই সংক্রান্ত হাদিসগুলো একটাও সহিহ হাদিস না। এই কিছু নাস্তিকদের ধর্মীয় ওয়েব সাইট আছে সেগুলোতে উল্টোপাল্টা কতগুলো দলিল দিয়ে এসব হাদিসকে সত্য প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যারা। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে একটা হাদিসকেও সঠিক উপায়ে সহিহ বলে প্রমাণ করতে পারে নি।
যেমন সুনানে ইবনু মাজাহর ৪৩৩৭ হাদিস, যেখানে বলা হয়েছে, “মহান আল্লাহ যাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন তাদের প্রত্যেককেই বাহাত্তরজন স্ত্রীর/হুরের সাথে বিবাহ দিবেন” কিন্তু হাদিসটি অতিরিক্ত যয়িফ, অর্থাৎ হাদিসটি যয়িফের শেষ স্তরে আর এমন হাদিস কোন মতেই গ্রহণ করা যায় না, হাদিসটি অতিরিক্ত যয়িফ হওয়ার ২টি কারণ রয়েছে।
- ১ম কারণ ইবনু মাজাহ একক ভাবে এই হাদিস বর্ণনা করেছেন।
- ২য় কারণ হাদিসটির সনদের ২ জন রাবীর উপর দুর্বল হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ১. খালিদ বিন ইয়াজিদ বিন আব্দুর রহমান (আবু হাশিম) হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ২. ইয়াজিদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবু মালিক সিকাহ কিন্তু মাঝে মাঝে হাদিস বর্ণনায় ভুল করতেন।[6]http://www.muslimscholars.info/manage.php?submit=scholar&ID=27508 [7]http://hadith.islam-db.com/narrators/8378/%D9%8A%D8%B2%D9%8A%D8%AF-%D8%A8%D9%86-%D8%B9%D8%A8%D8%AF-%D8%A7%D9%84%D8%B1%D8%AD%D9%85%D9%86-%D8%A8%D9%86-%D9%87%D8%A7%D9%86%D8%A6 [8]সিল-সিলাতুজ জয়িফা ৪৪৭৩; তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ১৬৬৩, ৮/১৯৬ নং পৃষ্ঠা; রাবী নং ৭০২২, ৩২/১৮৯ নং পৃষ্ঠা; ফাতহুল বারী, ৬/৩২৫
আরো একটি হাদিস আছে যেখানে বলা হয়েছে, “অতি সাধারণ মর্যাদা সম্পন্ন একজন জান্নাতীরও আশি হাজার খাদিম ও বাহাত্তর জন হুর থাকবে।” কিন্তু এই হাদিসটিও যয়িফ। আবু ইসা তিরমিজী বলেছেন হাদিসটি গরিব ও শুধু একজনের রিওয়ায়াত থেকেই এটি পাওয়া যায়। এছাড়া এই হাদিসের সনদেও ২ জন রাবীতে সমস্যা রয়েছে।[9]তিরমিজী ২৫৬২; মিশকাত ৫৬৪৮; মুসনাদে আহমাদ ১১৭৪১; আবূ ইয়া’লা ১৪০৪; হিদয়াতুর রুওয়াত ৫/২১৪, হা. ৫৫৭৩; য’ঈফ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ২১৮৭; য’ঈফুল জামি … See Full Note
এছাড়া আরো কিছু হাদিস আছে এই সংক্রান্ত কিন্তু সেগুলোও যয়িফ হাদিস। অর্থাৎ প্রতিটা জান্নাতি পুরুষ ৭২ জন করে হুর পাবে এই সংক্রান্ত কোন হাদিস সহিহ বা হাসান পর্যায়ের না।[10]Shaikh Assim al hakeem , islamqa.info , ড. আবু বকর জাকারিয়া , আল-গাজ্জালী, ইহইয়া উলুম আল-দীন, ৯/৬০৮, ৬২০, দার আল-মিনহাজ
জান্নাতে পুরুষরা হুর পাবে, তাহলে নারীরা কি পাবে?
সরাসরি উত্তরে যাওয়ার আগে কয়েকটা কথা বলা দরকার। আল্লাহ ন্যায় বিচারক, কাউকে প্রাপ্যের বেশি কাউকে প্রাপ্যের কম, কারো প্রতি ন্যায় আর কারো প্রতি অন্যায় করেন না। ইসলাম ন্যায্য অধিকারে বিশ্বাসী, সমান অধিকারে না। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,
“আর কিয়ামতের দিন আমি ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। কারো কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা হাযির করব। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।” সূরা আম্বিয়া আয়াত ৪৭
প্রশ্ন দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে আপনারা ধরেই নিয়েছেন যে জান্নাতে পুরুষদের তুলনায় নারীদেরকে কম দেওয়া হবে। অথচ জান্নাতে আল্লাহ পুরুষকে বেশি দিবেন, নারীকে কম দিবেন এমন চিন্তা নিছক বোকামি ছাড়া কিছু না। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “পুরুষগণ যা অর্জন করে, তা তাদের প্রাপ্য অংশ এবং নারীগণ যা অর্জন করে, তা তাদের প্রাপ্য অংশ।”[11]সূরা নিসা আয়াত ৩২ আরেক আয়াতে এসেছে, “নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে আমলকারী কোন নর বা নারীর আমল বিফল করি না; তোমরা একে অপরের অংশ।”[12]সূরা আলে ইমরা আয়াত ১৯৫
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে নেককাজ করবে এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি খেজুর বীচির আবরণ পরিমাণ জুলমও করা হবে না।”[13]সূরা নিসা, আয়াত ১২৪ আল্লাহ সবাইকে তার প্রাপ্য ও ন্যায্য প্রতিদান দিবেন, কুরআনে আছে, “যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।”[14]সূরা নাহল, আয়াত ৯৭ বিস্তারিত আরো পড়তে পারেন[15]Men and Women Are Equal in Reward
এছাড়া মানব জীবনে সবচেয়ে বড় সফলতা কি? এখন যাদের মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে রয়েছে তারা হয়ত দুনিয়াবি জিনিসের কথা বলতে পারে, সেক্সের কথা বলতে পারে, টাকা পয়সার কথা বলতে পারে, ধন-সম্পদ, ফেইমের কথা বলতে পারে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সফলতা অন্য কিছুতে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই বিষয়ে বলেছেন,
জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কেবলমাত্র কেয়ামতের দিনই তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় দেয়া হবে। অতঃপর যাকে আগুন (জাহান্নাম) থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছু নয়।সূরা আলে ইমরান আয়াত ১৮৫
যাইহোক সরাসরি উত্তরে আসা যাক, আমার মাঝে মাঝে মনে হয় এই ধরনের প্রশ্ন করা হবে তাই হয়ত আল্লাহ উত্তর হিসেবে নিচের আয়াত গুলো নাজিল করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন –
আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে। আর সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা কিছু তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা তোমরা দাবী করবে।সূরা হা-মীম-সাজদা আয়াত ৩১
আর যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তারা থাকবে জান্নাতের উদ্যানসমূহে। তারা যা কিছু চাইবে তাদের রবের কাছে তাদের জন্য তা-ই থাকবে। এটাই তো মহা অনুগ্রহ।সূরা আশ-শূরা আয়াত ২২
সেখানে তারা যা চাইবে তা-ই তাদের জন্য থাকবে স্থায়ীভাবে; এটি তোমার রবের ওয়াদা।সূরা ফুরকান আয়াত ১৬
তাদের জন্য সেখানে থাকবে ফলমূল আর তাদের জন্য থাকবে তারা যা কিছু চাইবে।সূরা ইয়াসিন আয়াত ৫৭
স্বর্ণখচিত থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে, সেখানে মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে স্থায়ী।সূরা আয যুখরুফ আয়াত ৭১
কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ওয়াদা করেছেন যে, জান্নাতে যে যা চাইবে আল্লাহ তাকে তাই দিবেন। তাহলে তো এখানেই সব মিটমাট হয়ে যাচ্ছে। আপনার যা মন চাইবে তাই আল্লাহর কাছে চেয়ে নিবেন! এখানে সমস্যাত নেই! আপনার জন্য এর চাইতে বড় কথা, বড় পাওয়া আর কি হতে পারে যে আল্লাহ বলেছেন জান্নাতে আপনি যা চাইবেন তাই আল্লাহ আপনাকে দিবেন! এর বেশি বেশি কিছু কি আর বলার বা জানানোর প্রয়োজন আছে!? আমার দৃষ্টিতেত এই কয়েকটা আয়াতই যথেষ্ট আপনি জান্নাতে কি পাবেন তা উপলব্ধি করার জন্য।
অনেকে নারীদের জন্য পুরুষ হুর থাকবে কিনা সেটা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। কোরআনে বা সহিহ হাদিসে এই বিষয়ে সরাসরি কোন দলিল পাওয়া যায় না। তারপরও এই ক্ষেত্রে ৩ শ্রেণির নারীর (অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত, যার স্বামী চিরস্থায়ী জাহান্নামি) জন্য হুর জাতীয় কিছু থাকবে বলে কিছু ওলামার বক্তব্য পাওয়া যায়, যদিও তাদেরকে ঠিক হুর বলা যায় না, কিন্তু অনেকটা সেরকমই কিছুর ব্যাবস্থা থাকবে হয়ত (আল্লাহই ভালো জানেন)। সহিহ হাদিসে এসেছে রাসূল (সা) বলেছেন, “জান্নাতে অবিবাহিত কেউ থাকবে না।”[16]সহিহ ইবনে হিব্বান ৭৪২০; সহিহ মুসলিম ২৮৩৪; ইমাম নববী, শরহে মুসলিম ১৭/১২১ এই হাদিসের উপর ভিত্তি করেই হয়ত এই বিষয়ে মাসিক আত-তাহরীকে বলা হয়েছে,
তবে জান্নাতী মহিলাদের জন্য অবশ্যই জান্নাতী স্বামী হবেন। যদিও তাদেরকে হুর বলা হবে না।[17]https://at-tahreek.com/article_details/7305
হানাফি ফীকহের সাইট আহলে হক ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে,
জাহান্নাম থেকে মুক্তির পর স্বামীর সাথে মিলিত হবে জান্নাতী স্ত্রী। আর যদি স্বামী চিরস্থায়ী জাহান্নামি হয়, তাহলে তার এখতিয়ার থাকবে, সে ইচ্ছে করলে অবিবাহিত জান্নাতী পুরুষও বিয়ে করতে পারে, অথবা পুরুষ হুরও বিয়ে করতে পারে।
যে মহিলার বিয়ে হয়নি, তাহলে তার জন্য অনুমতি আছে, সে ইচ্ছে করলে জান্নাতী কোন অবিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে। আর না চাইলে পুরুষ হুর আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করে তার সাথে বিয়ে করিয়ে দিবেন।[18]https://ahlehaqmedia.com/5532-3/
সেই ৩ শ্রেণির নারীদের জান্নাতে স্বামী থাকা নিয়ে ওলামাদের বক্তব্য গুলো হলো –
মাজমাউল ফতোয়াতে ইমাম ইবনে তাহমিয়্যা (রহঃ) বলেন,, “যে মহিলার বিয়ে হয়নি, তাহলে তার জন্য অনুমতি আছে, সে ইচ্ছে করলে জান্নাতি কোন পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে। আর না চাইলে পুরুষ হুর আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করে তার সাথে বিয়ে করিয়ে দেবেন।”[19]মাজমূ’উল ফতোয়া ১৫/৩
শায়েখ উছায়মিন (রহ) বলেছেন, “নারীদের প্রতি পুরুষদের অধিক আসক্তির কারণে কুরআনে পুরুষদের জন্য হুরের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জান্নাতী নারীদের জন্য তাদের স্বামীর ব্যাপারে কুরআন চুপ রয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, তাদের কোন স্বামী থাকবে না। বরং জান্নাতে তাদের স্বামী থাকবে।”[20]ফাতাওয়া উছায়মীন, ২/৫৩, ১৭৮
আরো অনেকেই বলেছেন, অবিবাহিত নারী, তালাক প্রাপ্ত নারী ও যার স্বামী চিরস্থায়ী জাহান্নামি তাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাদের পছন্দ মত কারো সাথে বিবাহ দিবেন।[21]কিতাব দারুস আল শায়েখ আয়েদুল কারণি অনুচ্ছেদ ১৯১ পৃ. ৯; আল-তাদকিরাহ ফি আহওয়াল আল-মাউত ওয়াল-আমির আল-আখিরা ২/২৭৮; ড. আহমেদ নাজিব, “জান্নাতে নারীর সুখ” … See Full Note
হানাফি এক ওয়েব সাইটে এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে,
জান্নাতবাসী মহিলার জন্য তার দীনদার স্বামীকেই দেয়া হবে এবং তাকে জান্নাতের হুরদের সর্দার বানিয়ে দেয়া হবে। মোট কথা, হুরদের চেয়ে দুনিয়ার জান্নাতী মহিলাদের মর্যাদা বেশী হবে। তবে দুনিয়ার কারো সঙ্গে বিবাহ হওয়ার পূর্বে যে মহিলার ইন্তিকাল হয়, তাকে দুনিয়ার পুরুষদের মধ্যে হতে যে কোন কাউকে বেছে নেয়ার অধিকার দেয়া হবে। যাকে সে পছন্দ করবে, তার সঙ্গেই সেখানে তার বিবাহ হবে। যদি সে কাউকে পছন্দ না করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা বিশেষ পুরুষ হুর সৃষ্টি করে উক্ত মহিলাকে তার সঙ্গে বিবাহ দিবেন। উল্লেখ্য প্রায় সমস্ত আলেমদের মত হল যে জান্নাতের মধ্যে সকলের সব ধরনের খাহেশ পূর্ণ করা হবে সত্য, কিন্তু পুণ্যবান মুমিন মহিলাদের ফিতরতের মধ্যে যেহেতু একাধিক স্বামীর কোন খাহেশই থাকে না, বরং সেই নারীরা এটাকে দোষণীয় মনে করে এবং এটাকে তারা মেয়েদের নষ্ট চরিত্র বা চরিত্রহীনতা বলে বিশ্বাস করে। সুতরাং এই কারণে তাদের একাধিক স্বামী থাকবে না বা তারা একাধিক স্বামী চাইবে না, বরং নারীরা একটি স্বামীতেই সন্তুষ্ট থাকবে।[22]ফাতাওয়া রহীমিয়া, ৫/২৯০; কানযুল উম্মাহ্, ১৪/৪৭৮; আপকে মাসায়িল আওর উনকা হল, ১/৩৪৬; ফাতাওয়া আব্দুল হাই, ১/১০৪; রুহুল মা’আনী ২৫/১৩৬
এখানে ওলামাদের দেওয়া যুক্তিটা অনেক বেশি শক্তিশালী ও যৌক্তিক।
এখন আরো একটা প্রশ্ন আসতে পারে যে, আল্লাহত ওয়াদা করেছেন যা চাইবে তাই দেওয়া হবে। তাহলে কোন নারী যদি একাধিক হুর চায় তাহলে সে কি পাবে!? এখন এই প্রশ্নের আলোকে আরো একটা প্রশ্ন করা যায় তা হল – জান্নাতে হারাম জিনিস চাইলে পাবে কিনা। সেটা ভিন্ন এক টপিক কিন্তু সংক্ষেপে কিছু না বললেই নয়
আমরা সবাই জানি যে জান্নাতে যাবে শুধু মুমিন নারী-পুরুষ। আর আল্লাহ যা হালাল করেছেন মানুষের জন্য তা মুমিন নারী-পুরুষ আঁকড়ে ধরে ও যা হারাম করেছেন তা বর্জন করে। আল্লাহ যা হারাম করেছেন যেমন বিকৃত যৌনাচার, বিকৃত মনমানসিকতা, হারাম বিনোদন, খাবার ইত্যাদি সেগুলো গ্রহণ করতে চাওয়া, বা সেগুলোর আশা করা, সেগুলো পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, সেগুলো নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভোগা মুমিন নর-নারীর কাছে বিকৃত মনমানসিকতার সরূপ। আর এসব বিকৃত মনমানসিকতা, চিন্তা চেতনা মুমিনদের ফিতরাতের বাহিরে। আর জান্নাতে বিকৃত মনমানসিকতা, বিকৃত কামিতা বা প্যারাফিলিয়া থাকবে না কারণ আল্লাহ সেখানে আমাদের মস্তিষ্ক বিকৃত হতে দিবেন না। সেখানে যাবার পর আমাদের দুনিয়াবী নোংরা মন মানসিকতা বাকি থাকার কথা নয়। পবিত্র স্থানে পবিত্র মনোবৃত্তিই কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। সেহেতু দুনিয়াবী নোংরা ইচ্ছে ও আকাঙ্ক্ষাও সেখানে বাকি থাকার কথা নয়। জান্নাতে কোন প্রকার অবৈধ কামনা বাসনা মানুষের মধ্যে থাকবে না, যা চাওয়া পাওয়া থাকবে সব বৈধ বিষয়েই থাকবে, মানুষ যা চাইবে সব বৈধ বিষয়েই চাইবে।[23]banuri.edu.pk , islamqa.info , জান্নাতে হারাম কিছু কি চাওয়া যাবে?
আর ওলামাগণের বুঝ ও মত হচ্ছে নারীদের একাধিক স্বামী থাকবে না, কারণ এটা যেহেতু ফিতরাতের বহির্ভূত সেহেতু তারা একাধিক স্বামী চাইবে না। এছাড়া কোরআনে ও সহিহ বা হাসান হাদিসে জান্নাতে নারীদের জন্য একাধিক স্বামী থাকার পক্ষে কোন প্রকার দলিল আমরা পাই না। আল্লাহ আমাদেরকে যা জানান নি আখিরাত সম্পর্কে সেগুলো গায়েবের বিষয়, তাই আমরা এই ক্ষেত্রে নিশ্চুপ থাকাটাই সবচেয়ে নিরাপদ। কারণ আখিরাতে কে কি চাইবে, কে কি চাইবে না, আল্লাহ কি দিবেন, কি দিবেন না এগুলো সম্পর্কে আল্লাহই একমাত্র সবচেয়ে ভালো জানেন।
সাধারণত স্বামী ও স্ত্রী এক সাথে জান্নাতে থাকতে পারবে যদি তারা দুজনই জান্নাতি হয় তাহলে।[24]সূরা আর-রাদ আয়াত ২৩; সূরা আয-যুখরুফ আয়াত ৭০ কিন্তু যদি পৃথিবীতে স্বামী মারা যাওয়ার কারণে স্ত্রী একের অধিক বিবাহ করে, আর সব স্বামীই যদি জান্নাতি হয় তাহলে সেই নারী শেষের ঘরের স্বামীর সাথে জান্নাতে থাকবে।[25]ত্বাবরানী, আল-আওসাত, ৩/২৭৫, নং ৩১৩০, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪/২৭০; তারিখে ইবনে আসাকির ১৯/১৯৩; বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ৭/৬৯–৭০; খতিব বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ … See Full Note আবার যয়িফ হাদিস হতে এই বিষয়ে একটি মত রয়েছে যে কিছু আলেমগণ বলেছেন তালাক প্রাপ্ত নারী জান্নাতে সেই স্বামীর সাথে থাকবে যে স্বামী তার সাথে ভালো ব্যবহার করেছে, আরেক বর্ণনায় পাওয়া যায় সে নারীটিকে এখতিয়ার দেয়া হবে যে, যাকে ইচ্ছে বাছাই করে নিতে।[26]তাবরানী, মুজামুল কাবীর ২৩/২২২, ৩৬৭; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৭/১১৯; রুহুল মা’আনী ২৫/১৩৬; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া, ৩/৪৩০; আল মুফাসসাল ফি আয়াত লা ইকরা ফিদ্দিন … See Full Note কিন্তু বেশির ভাগের মত হল তালাক প্রাপ্ত নারী ও পুরুষকে এক করা হবে না জান্নাতে, কারণ তালাকের মাধ্যমে পার্মানেন্টলি বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
যাইহোক, হুর ও মানব নারী দুটো আলাদা সৃষ্টি, তাই এই দুটোর মধ্যে পার্থক্যতো থাকবেই এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সাধারণত জান্নাতি নারীরা হুরদের চাইতেও বেশি সুন্দর ও বেশি প্রিয় হবে ও অনেক গুণের অধিকারী হবে, অর্থাৎ তারা হুরদের চাইতে সব দিক দিয়ে সেরা হবে। দুনিয়ার জান্নাতি নারীরা সর্বোচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন স্থানে ও প্রধান কর্তৃত্বের অবস্থানে থাকবে এবং হুর তাদের অনুসারী হবে অনেকটা দাসীদের মত।[27]কিতাব আল কুতুফ আল দানিয়া ১/৩০; কিতাব দারুস লিল শায়েখ মোহাম্মদ হাসান অনুচ্ছেদ ৪৫ পৃ. ৯-১০; কিতাব সূরা আল ওয়াকিয়াহ ওয়া মানুহাজহা ফাল আকাইদ, পৃ. ৬০; মুহাম্মদ … See Full Note তাই হুরের প্রতি হিংসা বা ঈর্ষান্বিত হওয়া আসলে যৌক্তিক ও বিবেকসম্পন্ন কোন কাজ বলে আমার মনে হয় না।
কোরআনের উক্ত আয়াত ছাড়াও আরো আয়াত ও হাদিস আছে যেখানে জান্নাতে কি কি থাকবে তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। জান্নাতে আরো কি থাকবে জানেন? সেটা বলার আগে একটা আয়াত পেশ করি, কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন,
“অচিরেই তোমার রব তোমাকে এরূপ দান করবেন যাতে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।”সূরা আদ দুহা আয়াত ৫
চিন্তা করে দেখেছেন, কুরআনে আল্লাহ উক্ত ৫/৬ আয়াতে এত বড় পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন জান্নাতিদের প্রাপ্তি সম্পর্কে তারপরও আপনারা প্রশ্ন করেন যে জান্নাতে নারীরা কি পাবে! জান্নাতে আমাদের চিন্তা থেকেও অনেক অনেক বেশি থাকবে, তার অল্প কিছু উদাহরণ হল –
মুমিন নারী-পুরুষ পাবে অগণিত রিযিক[28]সূরা মুমিন আয়াত ৪০, বহু প্রাসাদ যার উপর নির্মিত আরো প্রাসাদ, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত হয়, জান্নাতে যেখানে ইচ্ছে সেখানে বসবাসের সুযোগ[29]সূরা আয-যুমার আয়াত ২০, ৭৮ , যদি জান্নাতী সন্তান জন্মের বাসনা করে, তবে গর্ভধারণ, প্রসব, শিশুর দুধ ছাড়ানো এবং যৌবনে পদার্পণ সব এক মুহূর্তের মধ্যে হয়ে যাবে।[30]তিরমিযী ২৫৬৩, চিরদিন সুস্থ থাকবে, কখনো রোগাক্রান্ত হবে না, চিরদিন জীবিত থাকবে, কখনো মরবে না চিরদিন সুখী থাকবে কখনো দুর্দশাগ্রস্ত হবে না এবং চিরদিন যুবক থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না, নিয়ামত প্রাপ্ত হবে, হতভাগা হবে না, যৌবন কখনও ফুরিয়ে যাবে না, কাপড়ও কখনও ছিড়ে যাবে না।[31]মুসলিম ২৮৩৭; মুসনাদে আহমাদ ২/৩০৪, ৩০৫; সহিহ ইবন হিব্বান ১৬/৩৯৬ মু’মিনরা আসনে বসে থাকবে ও তাদের উপরে সুশীতল ছায়া থাকবে[32]সূরা ইয়াসীন আয়াত ৫৬; সূরা আন-নিসা আয়াত ৫৭ আল্লাহ জান্নাতে মানুষ থেকে বিদ্বেষ, হিংসা, ঈর্ষা, শক্রতা, ঘৃণা, দুঃখ, কষ্ট, ক্লান্তি ইত্যাদি দূর করে দেবে[33]সূরা হিজর আয়াত ৪৭; সূরা আরাফ আয়াত ৪৩; সূরা ফাতির আয়াত ৩৪-৩৫; সহীহ বুখারী ২৪৪০, সোনার ও রূপার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে, পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।[34]সূরা হজ্জ আয়াত ২৩; সূরা ইনসান আয়াত ২১, তাদের খিদমত করার জন্য থাকবে তাদের খাদেম ছেলেরা যারা এমন সুন্দর যেমন ঝিনুকে লুকানো মোতি তারা সবসময় বালকই থাকবে।[35]সূরা আত-তূর আয়াত ২৪; সূরা আল-ইনসান আয়াত ১৯ আরো থাকবে হুর[36]কুরআন ২:২৫; ৩৬:৫৫-৫৬; ৩৭:৪৮-৫০; ৩৮:৫২; ৪৪:৫৪; ৫২:২০; ৫৫:৫৬, ৫৮, ৭০-৭৮; ৫৬:২২-২৩, ৩৫, ৩৭, জান্নাতিদের জন্য পান করার এমন পানীয় থাকবে যা অনেক সুস্বাদু, তার মধ্যে ক্ষতিকর কিছু নেই, মাথাব্যথা হবে না, এসব খেলে উলটা পালটা কথা বা উলটা পালটা কাজও করবে না, তাতে নেশাগ্রস্তও হবে না ও মাতলামি করবে না।[37]সূরা সাফফাত ৪৫-৪৭; সূরা মুহাম্মাদ আয়াত ১৫; সূরা ইনসান আয়াত ৫-৬; সূরা ওয়াকিয়াহ আয়াত ১৭-১৯; সূরা তুর আয়াত ২৩ পরিবারের লোকজন ও বন্ধু যারা যারা জান্নাতি হতে তারা এক সাথে থাকতে পারবে।[38]সূরা গাফির আয়াত ৮; সূরা তুর আয়াত ২১; সুরা আয-যুখরুফ, ৭০
জান্নাতে কি কি থাকবে বা কি কি দেওয়া হবে তা সম্পর্কে আল্লাহ মানুষকে সাধারণ কিছু ধারণা দেওয়ার জন্যই কিছু উদাহরণ পেশ করেছেন, না হয় জান্নাতে বাস্তবে আরো কি কি আছে সেটা কেউ কল্পনায়েও চিন্তা করতে পারবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআনে আরো বলেছেন –
“অতএব কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ!”সূরা সাজদা আয়াত ১৭
হাদীসে কুদসীতে উদ্ধৃত হয়েছে যে, নবী ﷺ বলেছেনঃ
“আল্লাহ বলেন, আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য আমি এমনসব জিনিস তৈরী করে রেখেছি যা কখনো কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন মানুষ কোনদিন তা কল্পনাও করতে পারে না।”[39]বুখারী ৪৭৭৯; মুসলিম ১৮৯, ২৪২৪
আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,
‘‘অন্য কোনো কিছুই জান্নাতবাসীদের নিকট মহান আল্লাহর দর্শন লাভের চেয়ে অধিক প্রিয় হবে না।’’[40]মুসলিম ১৮১; তিরমিযী ২৫৫২, ৩১০৫; আহমাদ ১৮৪৫৬, ১৮৪৬২, ২৩৭০৪; ইবনে মাজাহ ১৮৭
অন্য ধর্মেও যেমন হিন্দু, খ্রিষ্টান ও ইহুদি ধর্মে স্বর্গে হুর দেওয়া হবে এমন বর্ণনা পাওয়া যায়। আবার এই হুর নিয়ে নাস্তিকদের আলাদাই আজব ও উদ্ভট আচরণ লক্ষ করা যায়। তারা ইহকালে হাজার নারীর সাথে সহবাসকে খারাপ মনে করে না বরং সেটাকে নিজেরদের আনন্দ, ভোগ, স্বাধীনতা, উপভোগ, সাধারণ বিষয় ইত্যাদি মনে করে অথচ পরকালে হুরের কথা নিয়ে হাসি তামাসা করে। তাদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয় হুর না দিয়ে কি দিলে তারা খুশি হত, তখন আবার তাদের কাছ থেকে যৌক্তিক ও বাস্তব সম্মত উত্তর পাওয়া যায় না। এই নামধারী নাস্তিক যারা প্রকৃত পক্ষে ইসলাম বিদ্বেষী তাদের সব বিষয়েই এই মুনাফিকি অর্থাৎ ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আচরণ লক্ষ করা যায়।
আবার অনেক নারী জানতে চায় যদি তারা আল্লাহর কাছে চায় আল্লাহ যাতে তাদের স্বামীকে হুর না দেয় তাহলে কি তা হবে কিনা। এর একটু সহজ ও সোজা উত্তর হচ্ছে তারা এমনটা জান্নাতে চাইবেই না। কারণ এমনটা কোন মানুষ তখনই চাইতে পারে যখন তার মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ ইত্যাদি থাকবে কিন্তু জান্নাতেত আর এসব থাকবে না, যার কারণে কোন নারী তার স্বামীর অপর স্ত্রী বা হুরের প্রতি ঈর্ষা বা হিংসাবোধ করবে না, আর এমন ত্রুটিযুক্ত আচরণ যখন জান্নাতে থাকবেই না তাহলে সেখানে তার স্বামীকে যাতে হুর না দেওয়া হয় সেটাতো কোন নারী চাইবে না।
আল্লাহ তা’আলা, আমাদের সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।
Footnotes
⇧1 | ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির (রহ) |
---|---|
⇧2, ⇧36 | কুরআন ২:২৫; ৩৬:৫৫-৫৬; ৩৭:৪৮-৫০; ৩৮:৫২; ৪৪:৫৪; ৫২:২০; ৫৫:৫৬, ৫৮, ৭০-৭৮; ৫৬:২২-২৩, ৩৫, ৩৭ |
⇧3 | কুরআন ৭৮:৩৩; ৫৬:৩৬ |
⇧4 | তিরমিযী, ১৬৬৩; ইবন মাজাহ ২৭৯৯; সিলসিলাহ সহীহাহ ৩২১৩; মুসনাদে আহমাদ ৪/১৩১; তা’লীকুর রাগীব ২/১৯৪; আহকামুল জানায়ীজ ৩৫; তাফসীরে আহসানুল বায়ান, সূরা আদ দুখান আয়াত ৫৪ এর তাফসির; শায়খ ওয়ালীদ আল-ফিরিয়ান, ইসলাম প্রশ্নোত্তর, ফতোয়া নং ৮৫১১; শায়খ জিব্রিল হাদ্দাদ, সুন্নিপথ ডট কম, প্রশ্ন আইডি: ৪৮২৮; মুফতি ইব্রাহিম দেশাই, জিজ্ঞাসা-ইমাম, প্রশ্ন নং ৭০০৭, অক্টোবর ২৯, ২০০২; ইসলাম ওয়েব ডট নেট, ফতুয়া নং ৪১৩১৭০; ইসলাম কিউ এ ডট অর্গ, ফতুয়া নং ৩১৬৪৩ |
⇧5 | সহিহুল বুখারী ৩২৫৪; সহিহুল মুসলিম ২৮৩৪, ১৮৮; সুনানে তিরমিজি ২৫৩৭; তাফসীরে আহসানুল বায়ান, সূরা আদ দুখান আয়াত ৫৪ এর তাফসির; ফাতহুল বারী, ৬/৩২৫; হাদী আল আরওয়াহ, পৃ. ১২৫, ১৫৭, ২৩২; মাজমু‘আল-ফাতাওয়া, ৬/৪৩২; আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়াহ, ২০/৩৪১; তারহ আত-তাতরিব ফি শারহ আত-তাকরিব, ৮/২৭০; আত-তাখউইফ মিন আন-নার, পৃ. ২৬৮; দুরুস লি’শ-শাইখ ‘আব্দুল-আযীয ইবনে বায, ৪/২১; ইবনে বাজের ফতোয়া নূর ‘আলা আদ-দারব, ৪/৩৫১; শায়খ জিব্রিল হাদ্দাদ, সুন্নিপথ ডট কম, প্রশ্ন আইডি: ৪৮২৮; ইসলাম ওয়েব ডট নেট, ফতোয়া নং ২৮৭০১৭ |
⇧6 | http://www.muslimscholars.info/manage.php?submit=scholar&ID=27508 |
⇧7 | http://hadith.islam-db.com/narrators/8378/%D9%8A%D8%B2%D9%8A%D8%AF-%D8%A8%D9%86-%D8%B9%D8%A8%D8%AF-%D8%A7%D9%84%D8%B1%D8%AD%D9%85%D9%86-%D8%A8%D9%86-%D9%87%D8%A7%D9%86%D8%A6 |
⇧8 | সিল-সিলাতুজ জয়িফা ৪৪৭৩; তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ১৬৬৩, ৮/১৯৬ নং পৃষ্ঠা; রাবী নং ৭০২২, ৩২/১৮৯ নং পৃষ্ঠা; ফাতহুল বারী, ৬/৩২৫ |
⇧9 | তিরমিজী ২৫৬২; মিশকাত ৫৬৪৮; মুসনাদে আহমাদ ১১৭৪১; আবূ ইয়া’লা ১৪০৪; হিদয়াতুর রুওয়াত ৫/২১৪, হা. ৫৫৭৩; য’ঈফ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ২১৮৭; য’ঈফুল জামি ২৬৬; ফাতহুল বারী, ৬/৩২৫; সালাহউদ্দীন ইউসুফ, রিয়াদুস সালিহীন, নাওয়াবীর তাফসীর, অধ্যায় ৩৭২ |
⇧10 | Shaikh Assim al hakeem , islamqa.info , ড. আবু বকর জাকারিয়া , আল-গাজ্জালী, ইহইয়া উলুম আল-দীন, ৯/৬০৮, ৬২০, দার আল-মিনহাজ |
⇧11 | সূরা নিসা আয়াত ৩২ |
⇧12 | সূরা আলে ইমরা আয়াত ১৯৫ |
⇧13 | সূরা নিসা, আয়াত ১২৪ |
⇧14 | সূরা নাহল, আয়াত ৯৭ |
⇧15 | Men and Women Are Equal in Reward |
⇧16 | সহিহ ইবনে হিব্বান ৭৪২০; সহিহ মুসলিম ২৮৩৪; ইমাম নববী, শরহে মুসলিম ১৭/১২১ |
⇧17 | https://at-tahreek.com/article_details/7305 |
⇧18 | https://ahlehaqmedia.com/5532-3/ |
⇧19 | মাজমূ’উল ফতোয়া ১৫/৩ |
⇧20 | ফাতাওয়া উছায়মীন, ২/৫৩, ১৭৮ |
⇧21 | কিতাব দারুস আল শায়েখ আয়েদুল কারণি অনুচ্ছেদ ১৯১ পৃ. ৯; আল-তাদকিরাহ ফি আহওয়াল আল-মাউত ওয়াল-আমির আল-আখিরা ২/২৭৮; ড. আহমেদ নাজিব, “জান্নাতে নারীর সুখ” সাইয়েদ আল ফাওয়াইদ, 25-2-2017 খ্রি.; দারুল উলুম দেওবন্দ, ফতোয়াঃ ৯৪২=৮৬৬, 6842 |
⇧22 | ফাতাওয়া রহীমিয়া, ৫/২৯০; কানযুল উম্মাহ্, ১৪/৪৭৮; আপকে মাসায়িল আওর উনকা হল, ১/৩৪৬; ফাতাওয়া আব্দুল হাই, ১/১০৪; রুহুল মা’আনী ২৫/১৩৬ |
⇧23 | banuri.edu.pk , islamqa.info , জান্নাতে হারাম কিছু কি চাওয়া যাবে? |
⇧24 | সূরা আর-রাদ আয়াত ২৩; সূরা আয-যুখরুফ আয়াত ৭০ |
⇧25 | ত্বাবরানী, আল-আওসাত, ৩/২৭৫, নং ৩১৩০, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪/২৭০; তারিখে ইবনে আসাকির ১৯/১৯৩; বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ৭/৬৯–৭০; খতিব বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ ৯/৩২৮; বুসীরী, ইতহাফুল খিয়ারাতুল মাহারাহ, ৪/৩৭ নং ৩২৬৪; ইবনে হাজার, আলমাতালিবুল আলিয়া ২/১১০; জামে‘ ছাগীর ৬৬৯১; আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীস আস-সাহীহা ৩/২৭৫ |
⇧26 | তাবরানী, মুজামুল কাবীর ২৩/২২২, ৩৬৭; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৭/১১৯; রুহুল মা’আনী ২৫/১৩৬; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া, ৩/৪৩০; আল মুফাসসাল ফি আয়াত লা ইকরা ফিদ্দিন ২/২৭৯; আল তাদকিরাত বি আহওয়াল মাওতা ওয়াউমুরিল আখিরাহ, পৃ. ৯৯৩; আল জান্নাতু ওয়ান নার, ৭ম সংস্করণ, পৃ. ২৪৮ |
⇧27 | কিতাব আল কুতুফ আল দানিয়া ১/৩০; কিতাব দারুস লিল শায়েখ মোহাম্মদ হাসান অনুচ্ছেদ ৪৫ পৃ. ৯-১০; কিতাব সূরা আল ওয়াকিয়াহ ওয়া মানুহাজহা ফাল আকাইদ, পৃ. ৬০; মুহাম্মদ আব্দুল গাফ্ফার, কিতাব শারহে উসুলে এতেকাদ আহলে সুন্নাত লিল আলকাইয় অনুচ্ছেদ ৫৪ পৃ. ১৫; আরশীফ মুলতাক্বা আহলিল হাদীস-২, ৬৪/৭৯ |
⇧28 | সূরা মুমিন আয়াত ৪০ |
⇧29 | সূরা আয-যুমার আয়াত ২০, ৭৮ |
⇧30 | তিরমিযী ২৫৬৩ |
⇧31 | মুসলিম ২৮৩৭; মুসনাদে আহমাদ ২/৩০৪, ৩০৫; সহিহ ইবন হিব্বান ১৬/৩৯৬ |
⇧32 | সূরা ইয়াসীন আয়াত ৫৬; সূরা আন-নিসা আয়াত ৫৭ |
⇧33 | সূরা হিজর আয়াত ৪৭; সূরা আরাফ আয়াত ৪৩; সূরা ফাতির আয়াত ৩৪-৩৫; সহীহ বুখারী ২৪৪০ |
⇧34 | সূরা হজ্জ আয়াত ২৩; সূরা ইনসান আয়াত ২১ |
⇧35 | সূরা আত-তূর আয়াত ২৪; সূরা আল-ইনসান আয়াত ১৯ |
⇧37 | সূরা সাফফাত ৪৫-৪৭; সূরা মুহাম্মাদ আয়াত ১৫; সূরা ইনসান আয়াত ৫-৬; সূরা ওয়াকিয়াহ আয়াত ১৭-১৯; সূরা তুর আয়াত ২৩ |
⇧38 | সূরা গাফির আয়াত ৮; সূরা তুর আয়াত ২১; সুরা আয-যুখরুফ, ৭০ |
⇧39 | বুখারী ৪৭৭৯; মুসলিম ১৮৯, ২৪২৪ |
⇧40 | মুসলিম ১৮১; তিরমিযী ২৫৫২, ৩১০৫; আহমাদ ১৮৪৫৬, ১৮৪৬২, ২৩৭০৪; ইবনে মাজাহ ১৮৭ |
Cool ♥️