হিন্দুমতে দেহে বীর্যের উৎপত্তিস্থল
অনলাইনে হিন্দুদের বহু অপপ্রচার শোনা যায় যে কুরআনে নাকি বীর্যের উৎপত্তি সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হয়েছে আগেই[1]এখানে দেখুন, পাশাপাশি আজকে আমরা জানবো হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী বীর্যের উৎপত্তি দেহের কোন জায়গায় হয়?
দয়ানন্দ উরফে মূল শঙ্কর ত্রিবেদী তার সত্যার্থ প্রকাশ বইয়ে হিন্দুশাস্ত্রের রেফারেন্স টেনে লিখেছেন,
অঙ্গাদঙ্গাৎ সম্ভবসি হৃদয়াদধিজায়সে। আত্মা বৈ পুত্রনামাসি সজীব শরদঃ শতম্।।
हे पुत्र! तू अङ्ग-अङ्ग से उत्पन्न हुए वीर्य से उत्पन्न और हृदय से उत्पन्न होता है…[2]Satyarth Prakash (Hindi), page 135
“হে পুত্র! তু অঙ্গ-অঙ্গ সে উত্পন্ন হুএ বীর্য সে উত্পন্ন ঔর হৃদয় সে
উত্পন্ন হতা হয়”হে পুত্র! তুমি আমার প্রত্যেক অঙ্গজাত বীর্য্য হইতে ও হৃদয় হইতে উৎপন্ন হইয়াছে,…[3]দয়ানন্দ সরস্বতী, সত্যার্থ প্রকাশ (বাংলা অনুবাদ), সমুল্লাস – ৪, পৃ ১২৫, সংস্করণ – ৫
এখানে তিনি এই শ্লোকটি রেফারেন্স হিসাবে এনে অর্থ করেছেন ও মেনেছেন যে পুত্র জন্ম নেয় শরীরের প্রত্যেক অঙ্গজাত বীর্য থেকে এবং হৃদয় থেকে।
আমরা যদি যাস্কের নিরুক্ত দেখি,[4]নিরুক্ত ৩/৪, স্কন্দস্বামী ও দূর্গাদাসের ভাষ্যসহ, অনুবাদঃ অমরেশ্বর ঠাকুর
অর্থাৎ, এখান থেকে আমরা দু’টি তথ্য পেলামঃ
- বীর্য উৎপন্ন হয় শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ থেকে।
- যৌনসহবাস চলা কালে বীর্য হৃদয় থেকে নাড়ীর ভিতর দিয়ে দিয়ে আসে।
বৈদিক শাস্ত্রের এ অদ্ভুত জ্ঞান হিন্দু ধর্মগ্রন্থ লেখকরা কার কাছ থেকে ধার করেছে জানা নাই। তবে এটা হাসির খোরাকই জোগায় বটে। যাস্কের নিরুক্তে আরো বলে,
এখান থেকে আমরা জানলামঃ
- যেহেতু বীর্যই সন্তানরূপে জন্মগ্রহণ করে, তাই বীর্যের ভিত্তিতে বলা যায় সন্তানই পিতার প্রত্যেক অঙ্গ থেকে উৎপন্ন এবং হৃদয় থেকে বের হওয়া।
এই একই শ্লোক হিন্দুধর্মগ্রন্থের অনেক জায়গায় রয়েছেঃ
- শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/৯/৪/৮
- বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৬/৪/৮-৯
- কৌষিতকি উপনিষদ ২/৭
- অষ্টাঙ্গহৃদয়, উত্তরস্থান ১/৩
- আশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র ১/১৫/৯
- গোভিল গৃহ্যসূত্র ২/৮/২১-২৫
- ভবিষ্য পুরাণ ৪/১২৮/৪০
- মহাভারত, আদিপর্ব, অধ্যায় ৮৮, শ্লোক ৬৩
- মহাভারত, আদিপর্ব, অধ্যায় ৬৮, শ্লোক ৬২
- মানব গৃহ্যসূত্র ১/১৮/৬
এখানে অঙ্গাদঙ্গাৎ শব্দটি যে উৎপত্তি বোঝাচ্ছে সে সম্পর্কে বৈয়াকরণ সিদ্ধান্তকৌমুদী লিখেছেন,[5]সিদ্ধান্তকৌমুদী, ১/৪/৩০, ৫৯৩, বাংলা অনুবাদঃ অযোধ্যানাথ সান্নাল শাস্ত্রী, পৃ ২৫৮ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.455663/page/n275/mode/2up
এতক্ষণ দেখলাম পিতার বীর্যের কথা, কিন্তু বাল্মীকি রামায়ণে এই শ্লোকটি আবার মহিলাদের কথার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে,[6]বাল্মীকি রামায়ণ, অযোধ্যাকাণ্ড, সর্গ ৭৪, শ্লোক ১৪, অনুবাদঃ উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, পৃ ২৩২ https://bn.wikisource.org/s/75fh
তবে এখানে একটা সমস্যা আছে, হিন্দুধর্মে কোথাও বলা নেই যে মহিলাদের বীর্য আছে, সব জায়গায় বলা আছে যে পুরুষের বীর্য আর মহিলাদের মাসিকের রক্ত মিলে বাচ্চা হয়। এ প্রসঙ্গে আমরা আগে লিখেছিলামঃ
তাহলে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই শ্লোক আনার অর্থ কী? এখানে অনুবাদক উপেন্দ্রনাথ অর্থ মেলানোর জন্য ফুটনোটে লিখেছেন,
কারণ বাল্মীকি রামায়ণের এই শ্লোক বেদ ও বেদাঙ্গের বিরুদ্ধে যায়, যেখানে এই শ্লোক পিতার ক্ষেত্রে আনা হয়েছে এবং পিতৃধনের আলোচনা করা হয়েছে। রামায়ণের লেখক সম্ভবত সে বিষয়ে জানতো না। সে কারণে উপেন্দ্রনাথ স্ত্রীদের রক্তকেই বীর্য হিসাবে উপস্থাপন করে এই রামায়ণের শ্লোকের জাস্টিফিকেশন করছে।
যাই হোক, দেহের প্রত্যেক অঙ্গ থেকে যে বীর্য উৎপন্ন হয় না, এবং হিন্দুশাস্ত্র যে এ বিষয়ে ভুল সেটা আমাদের অনেক আগেই হীরেন্দ্রনাথ দত্ত লিখে গেছেন, প্রায় একশো বছর আগে,[7]কর্ম্মবাদ ও জন্মান্তর, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, প্রিন্ট ১৯২৫, পৃ ১৮৮-১৯০ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.324376/page/n194/mode/1up
পাঠক, আশা করি বুঝতেই পারছেন যে আমরা এখানে নিজেদের মনগড়া কোনো দাবি করি নি, বরং হিন্দুদেরই মতে হিন্দুধর্মগ্রন্থের একটি ভুল উপস্থাপন করলাম মাত্র!
Footnotes
⇧1 | এখানে দেখুন |
---|---|
⇧2 | Satyarth Prakash (Hindi), page 135 |
⇧3 | দয়ানন্দ সরস্বতী, সত্যার্থ প্রকাশ (বাংলা অনুবাদ), সমুল্লাস – ৪, পৃ ১২৫, সংস্করণ – ৫ |
⇧4 | নিরুক্ত ৩/৪, স্কন্দস্বামী ও দূর্গাদাসের ভাষ্যসহ, অনুবাদঃ অমরেশ্বর ঠাকুর |
⇧5 | সিদ্ধান্তকৌমুদী, ১/৪/৩০, ৫৯৩, বাংলা অনুবাদঃ অযোধ্যানাথ সান্নাল শাস্ত্রী, পৃ ২৫৮ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.455663/page/n275/mode/2up |
⇧6 | বাল্মীকি রামায়ণ, অযোধ্যাকাণ্ড, সর্গ ৭৪, শ্লোক ১৪, অনুবাদঃ উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, পৃ ২৩২ https://bn.wikisource.org/s/75fh |
⇧7 | কর্ম্মবাদ ও জন্মান্তর, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, প্রিন্ট ১৯২৫, পৃ ১৮৮-১৯০ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.324376/page/n194/mode/1up |
বীগগাণময় হেদূ ধর্ম। এরা কখনো নিজেদের গ্রন্থও পড়ে দেখে নাই।