উম্মাহর নারীদেরকে বিভ্রান্ত করতে পশ্চিমাদের প্রচেষ্টা হাজার বছরের, যার একটি ফসল হচ্ছে হিজাবী ফেমিনিস্টরা। তারা কুরআন হাদিসের অপব্যাখার মাধ্যমে উম্মাহর নারীদেরকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, কুরআন ৪:৩৪ নিয়ে তাদের অপব্যাখ্যা, আমরা আজকে সেটা নিয়েই কথা বলবো ইংশা-আল্লাহ।
পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক এবং পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব কীভাবে?
সম্পূর্ণ আয়াতটি হলোঃ
ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَآ أَنفَقُواۡ مِنْ أَمْوَٰلِهِمْۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ وَٱلَّٰتِى تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهْجُرُوهُنَّ فِى ٱلْمَضَاجِعِ وَٱضْرِبُوهُنَّۖ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُواۡ عَلَيْهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا
অনুবাদ (বায়ান ফাউন্ডেশন): পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযাতকারিনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাযাত করেছেনে। আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার কর। এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান।
Sahih International: Men are in charge of women by [right of] what Allāh has given one over the other and what they spend [for maintenance] from their wealth. So righteous women are devoutly obedient, guarding in [the husband’s] absence what Allāh would have them guard. But those [wives] from whom you fear arrogance – [first] advise them; [then if they persist], forsake them in bed; and [finally], strike them [lightly]. But if they obey you [once more], seek no means against them. Indeed, Allāh is ever Exalted and Grand.[1]Qur’an 4:34
পুরুষরা শুধুমাত্র নারীদের রক্ষণাবেক্ষণকারী, তত্ত্বাবধায়ক নয়?
অপপ্রচার ১: এই আয়াতের প্রথমাংশ “পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক” অংশটি হিজাবী ফেমিনিস্টরা ও তাদের সিম্পরা দাবি করে থাকে এটি ভুল… বরং “পুরুষরা নারীদের রক্ষণাবেক্ষণকারী” এটা সঠিক।
ঠিক আছে আমরাও মানছি, কারণ তত্ত্বাবধানকারী রক্ষণাবেক্ষণকারীও বটে। কিন্তু না, হিজাবী ফেমিনিস্টরা বলে এর মানে হলো পুরুষরা জাস্ট Bodyguard হিসাবে রক্ষণাবেক্ষণকারী, আর নারীরা যা খুশি তাই করবে, তার উপর পুরুষের নিয়ন্ত্রণ নেই। আমরা এটির খণ্ডন একসাথেই দেখছি পরের অংশে।
আয়াতটি কি শুধুমাত্র বৈবাহিক সম্পর্কের কথা বলছে? আলেমগণের বুঝ কী?
অপপ্রচার ২: আয়াতের “পুরুষকে নারীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে” এই অংশেরও অপব্যাখ্যা করে থাকে। আর হলে এটা নাকি শুধু বৈবাহিক সম্পর্কে প্রযোজ্য।
আসুন এসব অনুবাদের লুকোচুরি খণ্ডন করা যাক সরাসরি আরবি গ্রন্থগুলো থেকেই, যে আমাদের পূর্ববর্তী আলেমগণ আয়াতকে কীভাবে বুঝেছেন, আর কীভাবে মডারেটদের অপব্যাখ্যা খণ্ডিত হয়ে যায়।
সুপ্রাচীন মুফাসসির ইমাম বাঘাবী রহঃ (মৃ ৫১০ অথবা ৫১৬ হিজরি) উক্ত আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেছেন,[2]তাফসীরে বাঘাবী ২/২০৭ https://shamela.ws/book/41/624
قوله تعالى: {الرجال قوامون على النساء} أي: مسلطون على تأديبهن، والقوام والقيم بمعنى واحد، والقوام أبلغ وهو القائم بالمصالح والتدبير والتأديب.
আল্লাহ বলেছেন {الرجال قوامون على النساء}
(স্বামিরা) দায়িত্বপ্রাপ্ত স্ত্রীদের শিষ্টাচার শিখানোর ক্ষেত্রে (قوام কওয়ামুন ও قائم কইমুন এই দুটি শব্দ একই অর্থবোধক তথাপি ) (উক্ত আয়াতের মধ্যে) যে (কওয়ামুন قوام ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা ( কইমুন قائم) শব্দ থেকে ব্যাপক অর্থবোধক,
কারণ স্বামীরা শিষ্টাচার শিক্ষা এবং পরিচালনা ও কোনো সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রধান দায়িত্বশীল।{بما فضل الله بعضهم على بعض} يعني: فضل الرجال على النساء بزيادة العقل والدين والولاية، وقيل: بالشهادة، لقوله تعالى: “فإن لم يكونا رجلين فرجل وامرأتان” (البقرة -٢٨٢) وقيل: بالجهاد، وقيل: بالعبادات من الجمعة والجماعة، وقيل: هو أن الرجل ينكح أربعا ولا يحل للمرأة إلا زوج واحد، وقيل: بأن الطلاق بيده، وقيل: بالميراث، وقيل: بالدية، وقيل: بالنبوة.
{بما فضل الله بعضهم على بعض}
অর্থ: আল্লাহ তাদের বুদ্ধি, ধর্ম এবং অভিভাবকত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব/অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং বলা হয়েছিলো, সাক্ষ্যদানের মাধ্যমে,[3]দেখুনঃ কুরআন ২:২৮২ – সম্পাদক জিহাদ দ্বারা, জুমুআ ও জামাতের ইবাদত দ্বারা এবং পুরুষের চারটি বিয়ের অনুমতি দ্বারা [যেদিকে মহিলার শুধুমাত্র একজন স্বামী থাকতে পারবে], পুরুষের হাতে সরাসরি তালাক্বের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে, উত্তরাধিকার দ্বারা, দিয়াত দ্বারা, নবুয়্যতের দ্বারা [ইত্যাদি]।
তাহলে আমরা এখান থেকে পাচ্ছি,
- স্বামীরা স্ত্রীদের শুধুমাত্র ‘রক্ষক’ নয়, পরিচালকও।
- নারীর উপর আল্লাহ পুরুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে, শুধুমাত্র বিয়ের ক্ষেত্রে নয়।
তাফসীরে কুশাইরিতে আছে,
خص الرجال بالقوة فزيد بالحمل عليهم فالحمل على حسب القوة. والعبرة بالقلوب والهمم لا بالنفوس والجثث.
পুরুষদেরকে নির্বাচন করা হয়েছে তাদের শক্তিমত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে, আর তারা যেহেতু শক্তিশালী তাই তাদেরকে [মহিলাদের] দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো / বৃদ্ধি করা হয়েছিলো। ক্বলব্, নফস্, শরীরের ভিত্তিতে নয়।[4]তাফসীরে কুশাইরি ১/৩৩০ https://shamela.ws/book/23629/327
তাফসীরে আল-নাসাফীতে বলা হয়েছে,
{الرجال قوامون على النساء} يقومون عليهن آمرين ناهين كما يقوم الولاة على الرعايا وسموا قواما لذلك
{الرجال قوامون على النساء/পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক} তারা নারীদের আদেশ ও নিষেধ করেন, যেমনভাবে শাসকরা প্রজাদের শাসন করে থাকেন। এ কারণেই তাদেরকে তত্ত্বাবধানকারী/অভিভাবক বলা হয়ে থাকে।[5]তাফসীরে আল-নাসাফী ১/৩৫৪ https://shamela.ws/book/1394/818
তাহলে দেখছেন, এখানে পারিবারিক গঠনেরই বিরোধিতা করছে পশ্চিমা প্রোডাক্ট এই হিজাবী ফেমিনিস্টরা। শাসক তার প্রজাদের সার্বিক দায়দায়িত্বে থাকে, আর শাসকের আদেশ নিষেধ মানার বাধ্যবাধকতা প্রজাদের আছে। তেমনই স্বামী স্ত্রীর সার্বিক দায়দায়িত্বে থাকবে, স্ত্রীরা স্বামীদের মেনে চলবে। অথবা তার অভিভাবককে/দের মেনে চলবে।
তাফসীরে জালালাইনে আছে,
{পুরুষগণ নারীগণের উপর কর্তৃত্বশীল}, তারা নারীদেরকে শিষ্টাচার শিখায়/শাসনের মধ্যে রাখে এবং অপছন্দনীয় কাজ হতে তাদেরকে বিরত রাখে/হাতে রাখে এ কারণে যে, {আল্লাহ তা’আলা তাদের একের উপর অন্যের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন}, তথা জ্ঞান, বুদ্ধি, অভিভাবকত্ব প্রভৃতি বিষয়ে তিনি নারীদের উপর পুরুষদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন…
[কুতুবখানার অনুবাদের সাথে আরবি সামঞ্জস্যকৃত][6]তাফসীরে জালালাইন পৃ ১০৬ https://shamela.ws/book/12876/625
সাহাবী ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই আয়াত সম্পর্কে কী বলেছেন দেখে আসিঃ
ইমাম জারির আত তাবারী বলেছেন, মুছান্না আমাকে বলেছেন, তিনি বলেছেন: আবদুল্লাহ ইবনে সালেহ আমাদেরকে বলেছেন, তিনি বলেছেন: মুয়াবিয়া ইবনে সালেহ বর্ণনা করেছেন, আলী ইবনে আবি তালহার সূত্রে, ইবনে আব্বাসের সূত্রে, তিনি {الرجال قوامون على النساء} এই অংশের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ
পুরুষ নারীর মুখ্য নির্দেশ দাতা। মহান আল্লাহর আনুগত্য ও পুরুষের তাবেদারী করার জন্য মহান আল্লাহ্ নারীদেরকে যা আদেশ করেছেন, তা মেনে চলার জন্য নির্দেশ দাতা হিসাবে পুরুষই প্রধান। আর নারী যেন পুরুষের পরিবারবর্গের সকলের সাথে সদাচরণ করে এবং পুরুষের ধন-সম্পদ সংরক্ষণ করে। আল্লাহ্ তা’আলা পুরুষকে তার ধন-সম্পদ ব্যয় ও কর্মকাণ্ডে নারীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।[7]তাফসীরে তাবারী, জামিউল বায়ান ৬/৬৮৭…(ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ অনুবাদ ৭/২২৭) https://shamela.ws/book/7798/11138#p1; তাফসির ইবনে আবী হাতিম (3/939); হাদিসের মানঃ হাসান – কিতাব … See Full Note
তবুও পশ্চিমা বিভ্রান্ত মাথাগুলো আল্লাহর বিধান মেনে নেবে না, সঠিক বিধান না মানার অজুহাত খুঁজবে।
মামুন হামুউশ (রহঃ) বলেছেন,
এই আয়াতে: পুরুষের জন্য তার পরিবার এবং তার ছেলের/সন্তানের ব্যাপারে নেতৃত্বের প্রমাণ…পুরুষটি মহিলার অভিভাবক এবং তার মনিব, তার উপর শাসক…[8]কিতাব আলতাফসির আলমামুন ইলা মানহাজ আলতানযিল ওয়ালসাহিহ আলমাসনুন ২/২৩৩ https://shamela.ws/book/147666/922
মুহাম্মদ ইসমাইল আল-মুকাদ্দাম (হাফিঃ) বলেছেন,
(الرجال قوامون) অর্থাৎঃ পুরুষরা কর্তৃত্বশীল/শাসক[9]https://www.almaany.com/ar/dict/ar-ar/%D9%85%D8%B3%D9%84%D8%B7/।
(কাওয়ামুন/قوامون) হচ্ছে কওয়ামের বহুবচন, যা স্বার্থ, শৃঙ্খলা ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে: পুরুষরা এই জিনিসগুলির জন্য দায়িত্ববান।
(নারীদের উপর/على النساء) অর্থাৎ, অভিভাবকত্বের বিষয়টি একটি সাংগঠনিক বিষয়, এটি কোনো উত্তেজনাকর বিষয় নয়, এবং এর অর্থ এই নয় যে পুরুষ নারীর উপর অত্যাচারী এবং তাকে অত্যাচার-নিপীড়ন করবে, তবে আল্লাহ যা পার্থক্য করেছেন এবং যা দিয়ে তিনি পুরুষকে নারীর উপর প্রাধান্য দিয়েছেন, তার দ্বারাই পুরুষকে অভিভাবকত্বের অধিকার দিয়েছেন, যার অর্থ: এর বিষয়গুলি পরিচালনার জন্য দায়ী, মেষপাল যেমন রাখালের আদেশ অনুসরণ করে এবং এই আদেশটিও সেরকমই।[10]তাফসীরে আমহামদ ইসমাঈলী আল-মুক্বাদাম ৩৩/৬ https://shamela.ws/book/37041/591
মোহাম্মদ মাহমুদ হেগাজী (রহঃ) ব্যাখ্যা করেছেন,
কাওয়ামুন অর্থ তাদের কাজ সম্পূর্ণ যত্নের সাথে তত্ত্বাবধায়ন করা।
(قانِتاتٌ القنوت) অর্থ হলো স্থিরতা ও আনুগত্য [পুরুষের প্রতি নারীর]।[11]তাফসীরে মাহমুদ হেগাজী ১/৩৬৯ https://shamela.ws/book/23589/364
বিখ্যাত মুফাসসির ইবনু কাছীর রহঃ বলেছেন,
সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেছেন: {الرجال قوامون على النساء) অর্থ: পুরুষই নারীর তত্ত্বাবধায়নকারী, অর্থাৎ সে তার মনিব, তার বড়, তার বিচারক এবং তার শাসনকারী (সোজাকারী) যদি সে বাঁকা হয়।
{بما فضل الله بعضهم على بعض}
পুরুষ স্ত্রীর উপর মর্যাদাবান। এ কারণেই নবুওয়াত পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। অনুরূপভাবে শরীয়তের নির্দেশ অনুসারে খলীফা একমাত্র পুরুষই হতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “ঐ সব লোক কখনও মুক্তি পেতে পারেন না যারা কোন নারীকে তাদের শাসনকত্রী বানিয়ে নেয়।” (সহীহ বুখারী ৪৪২৫, ৭০৯৯) এরূপভাবে বিচারপতি প্রভৃতি পদের জন্যেও শুধু পুরুষেরাই যোগ্য। নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা লাভের দ্বিতীয় কারণ এই যে, পুরুষেরা নারীদের উপর তাদের মাল খরচ করে থাকে, যে খরচের দায়িত্ব কিতাব ও সুন্নাহ তাদের প্রতি অর্পণ করেছে। যেমন মোহরের খরচ, খাওয়া পরার খরচ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ। সুতরাং জন্মগতভাবেও পুরুষ স্ত্রী অপেক্ষা উত্তম এবং উপকারের দিক দিয়েও পুরুষের মর্যাদা স্ত্রীর উপরে। এ জন্যেই স্ত্রীর উপর পুরুষকে নেতা বানানো হয়েছে।
অন্য জায়গা রয়েছে। (আরবী) অর্থাৎ তাদের উপর (স্ত্রীদের) পুরুষদের মর্যাদা রয়েছে।’ (২:২২৮) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ আয়াতের ভাবার্থ এই যে, নারীদেরকে পুরুষদের আনুগত্য (স্বীকার করতে হবে এবং তাদের কাজ হচ্ছে সন্তানাদির রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং স্বামীর মালের হিফাযত করা ইত্যাদি।……
[ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদের সাথে আরবির আংশিক সামঞ্জস্যকৃত][12]তাফসীরে ইবনে কাছীর… ২/২৯২ https://shamela.ws/book/8473/1170
আবু আল-ইয়ামান আল-উলায়মি রহঃ (মৃত্যু ৯২৮ হিজরি) বলেছেন,
{الرجال قوامون على النساء} مسلطون على تأديبهن
অর্থাৎ, নারীদের শাসন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পুরুষদের।[13]কিতাব ফাতহুল রহমান ফি তাফসির আল কুরআন ২/১২২ https://shamela.ws/book/14404/682
ইবনে নুরুল দীন রহঃ (মৃ ৮২০ হিজরি) বলেছেন,
[قوامون]؛ أي: مسلطون على تأديبهن.
والقوام والقيم بمعنى واحد، وهو القائم بالمصالح والتدبير والتأديب.
[কাওকামুন]; অর্থাৎ: তারা শৃঙ্খলাবদ্ধ।
এবং শক্তি এবং মূল্যবোধের একটি অর্থ রয়েছে, যা স্বার্থ, ব্যবস্থাপনা এবং শৃঙ্খলার তত্ত্বাবধায়ক।[14]তাফসীরে ইবনে নুরুল দীন ২/৩৭৯ https://shamela.ws/book/14827/821
ওয়াহবা বিন মুস্তাফা আল-জুহাইলী উক্ত আয়াতের তাফসীর “নারীর উপর পুরুষের অভিভাবকত্ব এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি” পরিচ্ছদে এনেছেন।[15]তাফসীরে আল-জুহাইলী ৫/৫২ https://shamela.ws/book/22915/1413
পুরুষরা ভরনপোষন দেবে, আর নারীরা স্বেচ্ছাচারিতা করবে?
সম্পূর্ণ আয়াতটি আমরা আরেকবার দেখাই,
ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَآ أَنفَقُواۡ مِنْ أَمْوَٰلِهِمْۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ وَٱلَّٰتِى تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهْجُرُوهُنَّ فِى ٱلْمَضَاجِعِ وَٱضْرِبُوهُنَّۖ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُواۡ عَلَيْهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا
অনুবাদ (বায়ান ফাউন্ডেশন): পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযাতকারিনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাযাত করেছেনে। আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার কর। এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান। – (কুরআন ৪/৩৪)
অপপ্রচার ৩: ফেমিনিস্ট ও সিম্পদের দাবি “যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে” মানে ভরনপোষণ দিবে স্বামী আর যা খুশি করবে স্ত্রী। কথাটি আংশিক সত্য কিন্তু এই কথাটি আয়াতের আগের অংশের উপর নির্ভরশীল। পুরুষরা মাহর ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয় এর ফলে যা খুশি তাই নয় বরং উলটো স্বামীর অনুগত থাকতে হবে।
উক্ত অংশের ব্যাখ্যা কী?
তাফসীরে ইবনে কাসীর আরেকবার দেখাই চলুন,
নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা লাভের দ্বিতীয় কারণ এই যে, পুরুষেরা নারীদের উপর তাদের মাল খরচ[16]এর অর্থ মাহর ও ভরণপোষণ তাফসীরে বাঘাবী ২/২০৭ https://shamela.ws/book/41/624 করে থাকে, যে খরচের দায়িত্ব কিতাব ও সুন্নাহ তাদের প্রতি অর্পণ করেছে। যেমন মোহরের খরচ, খাওয়া পরার খরচ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ। সুতরাং জন্মগতভাবেও পুরুষ স্ত্রী অপেক্ষা উত্তম এবং উপকারের দিক দিয়েও পুরুষের মর্যাদা স্ত্রীর উপরে। এ জন্যেই স্ত্রীর উপর পুরুষকে নেতা বানানো হয়েছে।[17]তাফসীরে ইবনে কাসীর (৪:৩৪, ইফাবা).
তাহলে আয়াতে উল্লেখিত শাস্তি কাদের জন্য?
ফেমিনিস্টদের জন্য প্রশ্ন অবাধ্যতার জন্য কে কাকে শাস্তি দিবে? স্বামীর কথা মানতে যদি বাধ্যই না থাকতো, তাহলে কেন স্বামীর কথা না শুনলে প্রথমে সদুপোদেশ, তারপর বিছানা আলাদা করা, তারপর প্রহারের বিধান দেওয়া হয়েছে। এই সবকিছু দ্বারাই কি মডারেট ও ফেমিনিস্টদের কথা ভুল প্রমাণিত হচ্ছে না?
জাযাকাল্লাহু খাইর…
Footnotes
⇧1 | Qur’an 4:34 |
---|---|
⇧2 | তাফসীরে বাঘাবী ২/২০৭ https://shamela.ws/book/41/624 |
⇧3 | দেখুনঃ কুরআন ২:২৮২ – সম্পাদক |
⇧4 | তাফসীরে কুশাইরি ১/৩৩০ https://shamela.ws/book/23629/327 |
⇧5 | তাফসীরে আল-নাসাফী ১/৩৫৪ https://shamela.ws/book/1394/818 |
⇧6 | তাফসীরে জালালাইন পৃ ১০৬ https://shamela.ws/book/12876/625 |
⇧7 | তাফসীরে তাবারী, জামিউল বায়ান ৬/৬৮৭…(ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ অনুবাদ ৭/২২৭) https://shamela.ws/book/7798/11138#p1; তাফসির ইবনে আবী হাতিম (3/939); হাদিসের মানঃ হাসান – কিতাব আলসাহিহ আলমাসবুর মিন আলতাফসির বিয়ালমাথুর [হাকামত বশীর ইয়াসিন] ২/৪২ https://shamela.ws/book/22912/538 |
⇧8 | কিতাব আলতাফসির আলমামুন ইলা মানহাজ আলতানযিল ওয়ালসাহিহ আলমাসনুন ২/২৩৩ https://shamela.ws/book/147666/922 |
⇧9 | https://www.almaany.com/ar/dict/ar-ar/%D9%85%D8%B3%D9%84%D8%B7/ |
⇧10 | তাফসীরে আমহামদ ইসমাঈলী আল-মুক্বাদাম ৩৩/৬ https://shamela.ws/book/37041/591 |
⇧11 | তাফসীরে মাহমুদ হেগাজী ১/৩৬৯ https://shamela.ws/book/23589/364 |
⇧12 | তাফসীরে ইবনে কাছীর… ২/২৯২ https://shamela.ws/book/8473/1170 |
⇧13 | কিতাব ফাতহুল রহমান ফি তাফসির আল কুরআন ২/১২২ https://shamela.ws/book/14404/682 |
⇧14 | তাফসীরে ইবনে নুরুল দীন ২/৩৭৯ https://shamela.ws/book/14827/821 |
⇧15 | তাফসীরে আল-জুহাইলী ৫/৫২ https://shamela.ws/book/22915/1413 |
⇧16 | এর অর্থ মাহর ও ভরণপোষণ তাফসীরে বাঘাবী ২/২০৭ https://shamela.ws/book/41/624 |
⇧17 | তাফসীরে ইবনে কাসীর (৪:৩৪, ইফাবা). |