হিন্দুধর্ম

সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার – ইসলাম বনাম হিন্দুধর্ম

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে নারীর অধিকার (ইসলাম ও হিন্দুইজম একটি তূলনামূলক পর্যালোচনা)


আসসালামু আলাইকুম
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম,
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ মানুষের অধিকার। নারী এবং পুরুষ উভয়ের এই অধিকার রয়েছে। উত্তরাধিকার সম্পদ সঠিকভাবে বণ্টন না করা  সীমালংঘন এর অন্তর্ভুক্ত। আর পিতার মৃত্যুর পর বোনদের কোনো অংশ না দিয়ে সমুদয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিজেরা ভোগ করা  অতি নিকৃষ্ট কাজ এবং বেইনসাফি। বেশিরভাগ বোনরাই লজ্জা অথবা ভাইয়ের খোটা শোনার ভয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি দাবী করেননা। আর কেউ দাবী করলে তকে নানান কথা শোনতে হয় যেমন পিতার অংশ নিয়ে কি চিরতরে সম্পর্ক শেষ করে দিতে চাচ্ছ? আর কি কখনো বেড়াতে আসবে না? অর্থাৎ পিতার অনুপস্থিতিতে ভাইদের বাড়িতে বেড়ানোর অযুহাত দিয়ে তাদের পিতার সম্পত্তি  থেকে বঞ্চিত করা। অথচ এ বিষয়ে কুরআন সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে,

‘মাতা-পিতা ও নিকটাত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদের অংশ আছে এবং মাতা-পিতা ও নিকটাত্মীয়দের সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে, কম হোক বা বেশি হোক। এ অংশ সুনির্ধারিত।’[1]সুরা নিসা, আয়াত : ৭

আরেকটা কথা ক্লিয়ার করে রাখতে চাচ্ছি যে ইসলামে নারীপুরুষের মধ্যে সম্পত্তিবন্টন করা হয় ইনসাফের ভিত্তিতে, সমতার ভিত্তিতে নয়। ইসলামের সম্পত্তির বিষয়টা অনেক বিস্তৃত। তাই এখানে আলোচনা করলাম না। আমাদের আলোচনা মূল বিষয়েই সীমাবদ্ধ রাখলাম।

হিন্দুধর্মে সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার

এবার আসি হিন্দু ধর্মে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বন্টন বিষয়ক আলোচনায়।

যজুর্বেদঃ নারীর কোনো উত্তরাধিকার নেই

হিন্দু ধর্মে মেয়েদের উত্তারাধিকার সম্পদে কোনো অংশ নেই। ইসলাম বা অন্যান্য ধর্মের প্রভাবে হিন্দুরা তাদের ধর্মকে সংস্কার করার প্রয়োজন অনুভব করে । তবে হিন্দু সংস্কারক ধর্ম গুরুরা এমন কোনো শ্লোক পেতে ব্যার্থ হয়েছেন যেটা দ্বারা প্রমান হয় যে পিতার সম্পত্তিতে নারীদের অধিকার রয়েছে।
আসুন আমরা দেখি হিন্দুদের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদে কি বলা হয়েছে। বেদে উল্লেখ আছে,

সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার - ইসলাম বনাম হিন্দুধর্ম

Woman are powerless,have no inheritance
নারীরা ক্ষমতাহীন,তাদের কোনো উত্তরাধিকার  প্রাপ্তি নেই।”[2]কৃষ্ণযজুর্বেদ ৬:৫:৮:১-২, অনুবাদঃ Arthur Berriedale Keith

কিছু প্রোটেস্টেন্ট হিন্দু আবার এখানে জলঘোলা করতে পারে যে, এখানে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের কথা বলা হয় নি, অনুবাদ ঠিক নেই ব্লা ব্লা ব্লা। তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আর্য আইনশাস্ত্র।

বৌধায়ন ধর্মসূত্র

আর্যদের প্রসিদ্ধ চারটি ধর্মসূত্রের একটি হলো বৌধায়ন ধর্মসূত্র, হিন্দুদের দাবিমতে যা যজুর্বেদের তৈত্তিরীয় শাখার অনুসারীদের দ্বারা খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ বছর পূর্বে রচিত।[3]বৌধায়ন সূত্র – ইংরেজি উইকিপিডিয়া সেখানে “নারীদের উত্তরাধিকার” অংশে একই কথা এসেছে[4]Baudhayana Dhrmasutra 2.2.3.41-46, Dharmasutras: The Law Codes of Apastamba, Gautama, Baudhayana and Vasistha, অনুবাদঃ Patrick Olivelle, পৃ ২৫৫, Google Books বেদের উদ্ধৃতি দিয়ে,

সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার - ইসলাম বনাম হিন্দুধর্ম
বৌধায়ন ধর্মসূত্র 2.2.3.41-46

ঋগ্বেদ ৩/৩১/২

আরো বর্ণিত আছে ঋগ্বেদে,

সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার - ইসলাম বনাম হিন্দুধর্ম

ঔরসপুত্র দুহিতাকে পৈতৃক ধন দেন না। তিনি তাকে ভর্তার প্রণয়ের আধার করেন। যদি পিতামাতা পুত্র কন্যা উভয়েই উৎপাদন করেন তা হলে তাদের মধ্যে একজন উৎকৃষ্ঠ ক্রিয়া কর্ম করেন, এর অন্যজন সম্মানিত হন ।[5]ঋগ্বেদ ৩:৩১:২, অনুবাদঃ রমেশচন্দ্র দত্ত[6]ঋগ্বেদ ৩:৩১:২, পৃ ৬৩৮-৬৪০, অক্ষয় লাইব্রেরী

রমেশচন্দ্র দত্ত উক্ত মন্ত্রের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ❝পুত্র থাকলে কন্যা সম্পত্তি পায় না।[7]প্রাগুক্ত, শেষাংশ

যজুর্বেদঃ মনুর সম্পত্তি ভাগ

হিন্দু আইন Mitākṣarā এবং দয়াভাগা আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। একটি হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের প্রধানকে বলা হয় কর্তা। সচরাচর কর্তা একজন পুরুষ হোন। কর্তার  মৃত্যুর পর  জ্যৈষ্ঠপুত্র সব সম্পদ নেন( মনুস্মৃতি অনুসারে)। যদিও কর্তা বেচে থাকা অবস্থাও সম্পদের বন্টন হতে পারে যেমনটা মনু নিজে তার সন্তানদের মধ্যে সম্পদ বন্টন করেছেন জীবিত থাকা অবস্থায়।
এটা বর্ণিত আছে যজুর্বেদে,

সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার - ইসলাম বনাম হিন্দুধর্ম

“মনুর বহু পুত্রের মধ্যে নাভানেদিষ্ঠ নামক কনিষ্ঠ বালক পুত্রটি ব্রহ্মচর্য-পালনের দ্বারা বেদাধ্যয়ন করতে অন্যত্র গমন করেছিলেন। ইতিমধ্যে (তদানীং) মনু তার জ্যেষ্ঠ পুত্রগণের মধ্যে স্বকীয় সকল ধন বিভাগ করে দিয়েছিলেন, অর্থাৎ অধ্যয়নরত বালক পুত্রটিকে ভাগরহিত করে দিয়েছিলেন।”[8]কৃষ্ণযজুর্বেদ ৩:১:৯, অনুবাদঃ বিজনবিহারী গোস্বামী

তাছাড়াও…

হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী একজন নারী কেবল মাত্র তখনই পৈত্রিক সম্পত্তি পেতে পারে যখন তার কোনো ভাই থাকবেনা এবং পিতা তাকে নিযুক্ত করে গেলে[9]গৌতম ধর্মসূত্র ২৮:১৮-২০, তারপরও যদি ওই মহিলার ছেলে হয় তাহলে মহিলার ছেলেই নানার রেখে যাওয়া সম্পত্তি লাভ করে।
হিন্দুশাস্ত্রানুযায়ী কোনো ভ্রাতৃহীন কুমারীকে বিয়ে করা উচিত না।[10]প্রাগুক্ত[11]নিরুক্ত ৩:৫ কারণ তখন ছেলে তার মায়ের বাবার অর্থাৎ, তার নানার উত্তরাধিকারী হয়ে যাবে।

FACT CHECK: ঋগ্বেদ ৩/৩১/১ এ কি নারী-পুরুষের সমানাধিকার?

ঋগ্বেদ ৩/৩১/১, রমেশচন্দ্রের অনুবাদঃ

পুত্রহীন পিতা সমর্থ জামাতাকে সম্মানিত করে শাস্ত্রানুশাসনক্রমে দুহিতা জাত পৌত্র প্রাপ্ত হন। অপুত্ত পিতা দুহিতার গর্ভ হতে বিশ্বাস করে প্রসন্নমনে শরীর ধারণ করেন।

রমেশচন্দ্র দত্ত এর ফুটনোটে লিখেছেনঃ

পূর্বকালে পুত্র না হলে কন্যার বিবাহ দিবার সময় জামাতার সাথে এরূপ বন্দোবস্ত করা হত যে, ঐ কন্যার পুত্র কন্যার পিতা রহবে এবং দৌহিত্র হয়েও পৌত্রের কার্য করবে[12]https://www.ebanglalibrary.com/23205/ঋগ্বেদ-০৩।৩১/

এখানে বলা হয়েছে, পুত্রহীন পিতার কথা। অর্থাৎ, ছেলে না থাকলে মেয়ের জামাইয়ের সাথে বন্দোবস্ত করতে হবে যে, মেয়ের গর্ভে ছেলে হলে সেই উত্তরাধিকার লাভ করবে। (তবুও মেয়ে পাবে না)

সায়নাচার্যও একই মত দিয়েছেনঃ

The sonless father: śāsadvahniḥ; the latter is said to be the father of a daughter only, not of a son, because he conveys away (vahati, prāpayati) his property through his married daughter into another family; śāsad, śāsti, he stipulates, that this daughter’s son, his grandson, duhitur naptyam, shall be his son, a mode of affiliation recognized by law; and relying on an heir thus obtained, and one who can perform his funeral rites, he is satisfied.[13]https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc831847.html

উইলসনের অনুবাদঃ

“The sonless father, regulating (the contract), refers to his grandson, (the son) of his daughter, and relying on the efficiency of the rite, honours (his son-in-law) with valuable gifts; the father, trusting to the impregnation of the daughter, supports himself with a tranquil mind.”

গ্রিফিথের অনুবাদঃ

WISE, teaching, following the thought of Order, the sonless gained a grandson from his daughter. Fain, as a sire, to see his child prolific, he sped to meet her with an eager spirit.

পন্ডিত জয়দেব শর্মা (আর্যসমাজী) ঋগ্বেদ ৩:৩১:১-এ লিখেছেন,

সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার - ইসলাম বনাম হিন্দুধর্ম

वह अपने नाना की जायदाद का ही हकदार हो

নাতি তার পিতামহের সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকারী হবেন।

ভাগবত পুরাণ

পুরানে বর্ণিত আছে যে,

সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার - ইসলাম বনাম হিন্দুধর্ম

যেহেতু সত্রাজিতের কোনও পুত্র ছিল না, তাই তার কন্যার পুত্রগণের তার উত্তরাধিকার গ্রহণ করা উচিত। তাদের জল ও পিণ্ড প্রদান ও মাতামহের ঋণ মোচন এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য অবশিষ্ট যা কিছু, তা নিজেদের জন্য গ্রহণ করা উচিত।[14]ভাগবত পুরান ১০:৫৭:৩৭, অনুবাদঃ প্রভুপাদ

অর্থাৎ, ঋগ্বেদের উক্ত মন্ত্রানুসারে ছেলে মেয়ের সমান উত্তরাধিকার লাভ গুড়ে বালি।

মনুসংহিতা

মনুসংহিতায় আছে,

ভার্য্যা[15]ভার্য্যা/ভার্যা অর্থ স্ত্রী, পুত্র ও দাস ইহারা অধন, যাহা উপার্জন করিবে, ইহারা যাহার, তাহারই সে ধন।[16]মনুসংহিতা ৮:৪১৬

এটা স্পষ্ট যে বেদ অনুযায়ী হিন্দু ধর্মে নারীদের  উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদে কোনো অধিকার নেই। এমনকি যে নারীর কোনো ভাই নেই সেও পিতার সম্পদের ভাগ পাবেনা যদি তার পুত্র সন্তান থাকে।

একটু ইতিহাসকথন

১০০০ বছর আগে আল বিরুনী (রহঃ) ভারত সফরের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন,[17]Alberuni’s India: An Account of the Religion, Philosophy, Literature, Geography, Chronology, Astronomy, Customs, Laws and Astrology of India about AD 1030, by Muhammad Biruni, Muḥammad ibn Aḥmad Bīrūnī Cambridge University Press, May 24, 2012, pg 164, Google Books

সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার - ইসলাম বনাম হিন্দুধর্ম

অর্থাৎ, কন্যা তার ভাইয়ের ১/৪ অংশ পেতো। কিন্তু তাও, তার পেছনে এবং তার যৌতুকের পেছনে চলে যেতো।

হিজড়া নারীদের সম্পদের অধিকার ও উত্তরাধিকার

হিজড়া নারী এবং পুরুষ উভয়েই সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত।[18]Āpastamba Dharma Śāstra, II, vi, 14, 1[19]Gautama D. Ś., xxviii, 43[20]Vāsiṣṭha D. Ś., xvii, 53 et seq. হিজড়া দের সম্পর্কে এই পোস্ট পড়তে পারেনঃ

Read More…
হিজড়াদের প্রতি হিন্দুধর্মের বর্বরতা

দেখুন, যাচাই করুন, বাছুন।

জাযাকল্লাহু খইরান।

Footnotes

Footnotes
1 সুরা নিসা, আয়াত : ৭
2 কৃষ্ণযজুর্বেদ ৬:৫:৮:১-২, অনুবাদঃ Arthur Berriedale Keith
3 বৌধায়ন সূত্র – ইংরেজি উইকিপিডিয়া
4 Baudhayana Dhrmasutra 2.2.3.41-46, Dharmasutras: The Law Codes of Apastamba, Gautama, Baudhayana and Vasistha, অনুবাদঃ Patrick Olivelle, পৃ ২৫৫, Google Books
5 ঋগ্বেদ ৩:৩১:২, অনুবাদঃ রমেশচন্দ্র দত্ত
6 ঋগ্বেদ ৩:৩১:২, পৃ ৬৩৮-৬৪০, অক্ষয় লাইব্রেরী
7 প্রাগুক্ত, শেষাংশ
8 কৃষ্ণযজুর্বেদ ৩:১:৯, অনুবাদঃ বিজনবিহারী গোস্বামী
9 গৌতম ধর্মসূত্র ২৮:১৮-২০
10 প্রাগুক্ত
11 নিরুক্ত ৩:৫
12 https://www.ebanglalibrary.com/23205/ঋগ্বেদ-০৩।৩১/
13 https://www.wisdomlib.org/hinduism/book/rig-veda-english-translation/d/doc831847.html
14 ভাগবত পুরান ১০:৫৭:৩৭, অনুবাদঃ প্রভুপাদ
15 ভার্য্যা/ভার্যা অর্থ স্ত্রী
16 মনুসংহিতা ৮:৪১৬
17 Alberuni’s India: An Account of the Religion, Philosophy, Literature, Geography, Chronology, Astronomy, Customs, Laws and Astrology of India about AD 1030, by Muhammad Biruni, Muḥammad ibn Aḥmad Bīrūnī Cambridge University Press, May 24, 2012, pg 164, Google Books
18 Āpastamba Dharma Śāstra, II, vi, 14, 1
19 Gautama D. Ś., xxviii, 43
20 Vāsiṣṭha D. Ś., xvii, 53 et seq.

ইন্দো আর্য

❝গোবর খেলে করোনা সারে।❞ – গোবেদ ১/৬৯/৬৯ করোনা থেকে বাঁচতে গোবর খেয়েছিলাম। গোরুর কৃপায় এখন আমার HIV পজিটিভ।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
Back to top button
FromMuslims We would like to show you notifications for the latest updates.
Dismiss
Allow Notifications