ইসলামবিরোধীদের প্রতি জবাব

সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছেতে হলে আমি কেন শাস্তি পাবো?

  • সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছেতে হলে আমি কেন আমার অপরাধের শাস্তি পাবো?
  • ইচ্ছে আর অনুমতি বনাম সন্তুষ্টি, কী পার্থক্য?
  • তাকদীর কি সংশয়পূর্ণ?

মোটামুটি এরকম কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি আজ।

ধাপ ১.১ঃ সূচনা- আল্লাহর অজ্ঞাতসারে কিছুই সংঘটিত হয় না।

“তাঁরই নিকট অদৃশ্যের চাবি রয়েছে; তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জানে না। জলে-স্থলে যা কিছু আছে, তা তিনিই অবগত। তাঁর অজ্ঞাতসারে (বৃক্ষের) একটি পাতাও পড়ে না, মৃত্তিকার অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণা অথবা রসযুক্ত কিম্বা শুষ্ক এমন কোন বস্তু  পড়ে না, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।”[1]কুরআন ৬ঃ৫৯

এখানে সুস্পষ্ট কিতাব বলতে লাওহে মাহফুজকে বোঝানো হয়েছে।[2]তাফসীরে আহসানুল বয়ান (কুরআন ৬ঃ৫৯ এর).

 আমিই তো মৃতকে জীবিত করি আর লিখে রাখি যা তারা অগ্রে প্রেরণ করে এবং যা পিছনে রেখে যায়। আর প্রতিটি বস্তুকেই আমি সুস্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি।[3]কুরআন 36:12

এখানে সেই পুরনো কথাটিই আবার বলি। আল্লাহ হচ্ছেন আলিমুল গায়েব[4]সহিহুল বুখারী ১০৩৯, ৪৬৯৭, ৭৩৮০ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স).। তিনি জানেন ভবিষ্যতে কী ঘটবে, সেই হিসেবেই তিনি তাকদীর লিখে রেখেছেন। আর ঘটনাগুলো স্বাভাবিকভাবেই তাকদীরের সাথে হুবহু মিলে যাবে, অন্যকথায় তাকদীর অনুযায়ী ঘটবে।

আবারও বলছি, আমরা করবো বলে আল্লাহ লিখে রাখেন না (এটি ভাবা কুফর), বরং আমরা কী করবো তা আল্লাহ জানেন বলেই আল্লাহ তা লিখে রাখেন। এবং আল্লাহর জ্ঞান তো মিথ্যে হতে পারে না, তাই তাকদীর অনুযায়ীই সব ঘটে থাকে।

শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মাদানী বলেছেন,

অধিকাংশ আলেমের মতে আয়াতের সঠিক অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সৎকাজের আদেশ দেন, কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ইচ্ছা ও ইখতিয়ারের যেই স্বাধীনতা দিয়েছেন, তারা তার অপব্যবহার করে এবং পাপ কাজে লিপ্ত হয়। আল্লাহর আদেশ লংঘনের ফলে তারা ধ্বংসের হকদার হয় বলেই আল্লাহ তাদেরকে পূর্বের নির্ধারণ ও ফয়সালা অনুযায়ী ধ্বংস করেন; এমনটি নয় যে, আল্লাহর [পছন্দসূচক] আদেশেই পাপ কাজ হয় এবং আল্লাহর হুকুমেই ধ্বংস হয়। কেননা কুরআনের একাধিক আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তাআলা কেবল আনুগত্যের আদেশ করেন। তিনি অন্যায় ও অশ্লীল কাজের আদেশ করেন না এবং অন্যায়, পাপাচার ও সীমালংঘনকে পছন্দও করেন না।[5]ফুটনোট দেখুনঃ http://www.hadithbd.com/books/link/?id=8489

সামনে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।

ধাপ ১.২ঃ তাকদীর

“আর প্রতিটি বস্তুরই ভান্ডারসমূহ রয়েছে আমার কাছে এবং আমি তা অবতীর্ণ করি কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণে।”[6]কুরআন 15:21

“যার অধিকারে রয়েছে আসমান ও যমীনের মালিকানা; আর তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং সার্বভৌমত্বে তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তা নিপুণভাবে নিরূপণ করেছেন।”[7]কুরআন 25:2

“আর আল্লাহ ইচ্ছা না করলে তোমরা ইচ্ছা করবে না; নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রাজ্ঞ।”[8]কুরআন 76:30

“আর তোমরা ইচ্ছা করতে পার না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ ইচ্ছা করেন।”[9]কুরআন 81:29

ধাপ ২ঃ আল্লাহর ইচ্ছার প্রকারভেদ

আহলুল সুন্নাহদের আকীদা অনুসারে,

আল্লাহর ইচ্ছা দুই প্রকারঃ

১. ইরাদা কওনিয়্যা বা সৃষ্টিগত ইচ্ছা (প্রাকৃতিক সিস্টেম্যাটিক)

২. ইরাদা শার’ঈয়া বা পছন্দগত ইচ্ছা (যা আমাদের আদেশ করা হয়েছে)[10]‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদা’ – শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন (রহঃ).[11]শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া – ড. সালিহ আল ফাওযান http://www.hadithbd.com/books/link/?id=8489

ধাপ ৩ঃ মানুষের (এবং জ্বীনের) কাজ আল্লাহর ইচ্ছার কোন দিকে? নিয়ন্ত্রণ বনাম বাধ্য করা।

মহাবিশ্বের সব সংগঠিত কাজ(ভালো মন্দ নিরপেক্ষ সবকিছুই-কারণ এগুলো সৃষ্টি) ইরাদা কওনিয়্যার অন্তর্ভুক্ত। তিনি না চাইলে কোনো কাজই হবে না। এখানে মানুষ ও জ্বীনজাতি বাদে বাকি সবাই নিয়ন্ত্রিত(আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান তাই বলে)।  এখানে মানুষ ও জ্বীনজাতির স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। তাদের সামনে ভালো ও খারাপ দুটো অপশন থাকে, তারা নিজের ইচ্ছায় যেকোনো একটা বেছে নেয়। এটা তাদের “দায়”।

তারা যেই কাজই করুক ভালো কিংবা খারাপ তাতে আল্লাহ ইচ্ছা না দিলে তা সংগঠিত হবে না।

এখানে মানুষকে যান্ত্রিকভাবে কাজ সম্পাদন করার অনুমতি দেওয়ার নামই আল্লাহর ইচ্ছে। তাকে যেই যেই অপশনটা দেওয়া হয়েছে সেটার কোনোটাতেই বাঁধা দেন না। তাকে কাজ করবার শক্তি ও সক্ষমতা প্রদান করেন, আর তাকে স্বাধীনতা দেন কাজ বেছে নেওয়ার। সে যেই কাজই করুক তাতে আল্লাহর অনুমতি(সিস্টেম্যাটিক) থাকে(শুনতে অবাক লাগতে পারে, সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)।

মানুষের যেই কাজগুলো আল্লাহর দেওয়া আদেশের সাথে মিলে যায় সেগুলো পছন্দগত ইচ্ছার অংশ হয়ে যাবে।

যেমনঃ উমার (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহণ।

“আর যদি তোমার রব চাইতেন, তবে যমীনের সকলেই ঈমান আনত। তবে কি তুমি মানুষকে বাধ্য করবে, যাতে তারা মুমিন হয় ?”[12]কুরআন 10:99

এখানেই স্পষ্ট যে বাধ্য করা হয় না।

আরেকটা রূপক উদাহরণ দিলে স্পষ্ট হবে আশা করি।

কোনো স্কুলের MCQ পরীক্ষা চলছে(জীবন)।

শিক্ষক দেখছে ও গার্ড দিচ্ছে(আল্লাহ সবই দেখেন ও জানেন)।

এক ছাত্র একাধিক অপশনের মাঝে একটিতে বৃত্তভরাট করছে (ভালো ও খারাপের একাধিক অপশনের মাঝে নিজেরটা বেছে নিচ্ছে)।

শিক্ষক অলরেডি তাদেরকে এই টপিকগুলো পড়িয়ে দিয়েছেন(আল্লাহ নবী-রাসূল প্রেরণের মাধ্যমে আমাদের সঠিক জিনিসটা শিক্ষা দিয়েছেন, আর খারাপ জিনিস থেকে সতর্ক করেছেন)।

শিক্ষক দেখতে পেলেন তার ছাত্র ভুল উত্তর দাগাতে যাচ্ছে (না জানার কারণে অথবা শিক্ষকের পড়াশুনোকে গ্রহণ না করার ফলে। মূলার্থে, আল্লাহর দেওয়া শিক্ষাকে গ্রহণ না করার ফলে পথভ্রষ্ট হচ্ছে)

এখন তিনি সন্তুষ্ট হতেন (পরের ধাপগুলো দেখুন) যদি তার ছাত্র ঠিকটা দাগাতো (আল্লাহর সঠিক পথ অন্বেষণকারীদের পছন্দ করেন)।

এখন শিক্ষক ভাবলেন তাকে দিয়ে সঠিকটা দাগাই, এই পরীক্ষার রুম আমার নিয়ন্ত্রনে (আল্লাহ সব সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ করেন)।

তবে এখানে শিক্ষক সেই ছাত্রকে বাধ্য করলেন না সঠিকটা দাগাতে (আল্লাহও বাধ্য করেন না)।

কারণ পরীক্ষাটির নিয়মানুসারেই ছাত্র তার ইচ্ছামতো দাগাতে পারবে, সেই অনুমতি তার আছে(এই অনুমতিটাই আল্লাহর ইচ্ছে, আর জীবন নামক পরীক্ষাটা আল্লাহর বানানো।)

ধাপ ৪ঃ ইচ্ছা বনাম সন্তুষ্টি

“অচিরেই মুশরিকরা বলবে, ‘আল্লাহ যদি চাইতেন, আমরা শিরক করতাম না এবং আমাদের পিতৃপুরুষরাও না এবং আমরা কোন কিছু হারাম করতাম না’। এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, যে পর্যন্ত না তারা আমার আযাব আস্বাদন করেছে। বল, ‘তোমাদের কাছে কি কোন জ্ঞান আছে, যা তোমরা আমাদের জন্য প্রকাশ করবে? তোমরা তো শুধু ধারণার অনুসরণ করছ এবং তোমরা তো কেবল অনুমান করছ’।”[13]কুরআন 6:148

“আর যারা শিরক করেছে, তারা বলল, যদি আল্লাহ চাইতেন তবে আমরা তাকে ছাড়া কোন কিছুর ইবাদাত করতাম না এবং আমাদের পিতৃপুরুষরাও না। আর তার বিপরীতে তো আমরা কোন কিছু হারাম করতাম না। এমনিই করেছে, যারা তাদের পূর্বে ছিল। সুতরাং স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া ছাড়া রাসূলদের কি কোন কর্তব্য আছে?”[14]কুরআন 16:35

“তারা আর বলে, ‘পরম করুণাময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের(মূর্তি দেব দেবী) ইবাদাত করতাম না’, এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা শুধু মনগড়া কথা বলছে।”[15]কুরআন 43:20

আচ্ছা দেখুন, যেখানে শিরক আল্লাহ সহ্য করেন না। এর কোনো ক্ষমা নেই। সেখানে আল্লাহই কি নিজে পছন্দ করে বান্দাদেরকে দিয়ে শিরক করাবেন? এখানে তো আল্লাহর সন্তুষ্টি নেই, বরং অসন্তোষ। সুতরাং অপরাধমূলক কাজ যে শুধুমাত্র সৃষ্টিগত অনুমতির ইচ্ছের মাধ্যমেই বান্দা করে তা প্রমাণ হলো। আর সব কাজ যে আল্লাহর পছন্দনীয় নয় তাও বোঝা যায়।

এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে, “আমি অপরাধ করি আল্লাহর ইচ্ছেতে, আল্লাহ চাইলেই আমাকে অপরাধ হতে বিরত রাখতে পারতেন, আমার কোনো দায় নেই।” এরূপ দাবি নস্যাৎ করে। এগুলো শুধুমাত্র অনুমান, কোনো দলিল নেই এই দাবির।

আল্লাহ কখনো ডাবল স্ট্যান্ডার্ড গ্রহণ করেন না, তিনি মুনাফিকদের বিপক্ষেও আয়াত নাজিল করেছেন। তো তিনি যদি ইরাদা শারঈয়্যার মাধ্যমেই অপরাধ করিয়ে থাকেন তাহলে তো তিনি পাপীদের শাস্তি দিতেন না। কারণ, শরিয়তের একটি নিয়মানুসারে বলা যায়, আপনাকে কেউ জোর করে মদ্যপান করিয়ে দিলে আপনার শাস্তি হবে না, হবে তখনই যখন আপনি বাধ্য নন, স্বেচ্ছায় করেন। বাকিগুলোও তেমনই, শাস্তি দিবেন কারণ আপনি যান্ত্রিকভাবে বাধ্য নন।

ধাপ ৫ঃ তাহলে আপনার অন্যায়ে প্রাপ্ত শাস্তি কি তাকদীরের অন্তর্ভুক্ত নয়?

এক চোরকে আমীরুল মুমিনীন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর দরবারে উপস্থিত করা হলো। তিনি যখন চোরের হাত কাটার ফায়ছালা প্রদান করলেন, তখন চোর বলতে লাগল, আপনি কি জানেন না সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়ে থাকে?

সুতরাং চুরি করা আমার তাকদীরে ছিল বলেই চুরি করেছি। চোর পাপ কাজের উপর তাকদীর দিয়ে দলীল পেশ করল। উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তখন বললেন, তুমি তাকদীর অনুযায়ী চুরি করেছো আর আমি আল্লাহর তাকদীরের ফায়ছালা অনুযায়ীই তোমার হাত কেটে ফেলবো। সুতরাং চোরের হাত কেটে ফেলা হলো। এতে আমরা জানতে পারলাম যে, আল্লাহ তা‘আলা নির্ধারণ করেছেন যে, চোরের হাত কাটা হবে। তিনি যদি চোরের হাত কাটার ইচ্ছা না করতেন (হাত কাটার আদেশ না দিতেন) তাহলে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কখনোই চোরের হাত কাটতেন না।

ধাপ ৬ঃ মানুষের কাজের দায়ভার কার (এবং স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ)

“আর যে ব্যক্তি তার নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং বিশ্বাসীদের পথ ভিন্ন অন্য পথ অনুসরণ করবে, তাকে আমি সেদিকেই ফিরিয়ে দেব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা কত মন্দ আবাস!”[16]কুরআন 4:115

আপনাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, তবুও আপনি নিজের ইচ্ছায় বিপথ গ্রহণ করেন।

“যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা বলে, তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত বধির ও মূক। যাকে ইচ্ছা আল্লাহ বিপথগামী করেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি সরল পথে স্থাপন করেন।”[17]কুরআন 6:39

আপনি আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করেন, আবার তাঁর আয়াতের অপব্যাখ্যা দিয়ে নিজের অপরাধের দায় আল্লাহর উপর চাপাতে চান – ডাবল স্ট্যান্ডার্ড! আপনার চাওয়ার কারণেই আপনাকে বিপথগামী করা হয় (এখানে ইচ্ছা মানেও সিস্টেম্যাটিক ইচ্ছা)

“নিশ্চয় আল্লাহ কোন কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।”[18]কুরআন 13:11

ব্যাখ্যাঃ ঐ

“আর বল, ‘সত্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। সুতরাং যে ইচ্ছা করে সে যেন ঈমান আনে এবং যে ইচ্ছা করে সে যেন কুফরী করে। নিশ্চয় আমি যালিমদের জন্য আগুন প্রস্ত্তত করেছি, যার প্রাচীরগুলো তাদেরকে বেষ্টন করে রেখেছে। যদি তারা পানি চায়, তবে তাদেরকে দেয়া হবে এমন পানি যা গলিত ধাতুর মত, যা চেহারাগুলো ঝলসে দেবে। কী নিকৃষ্ট পানীয়! আর কী মন্দ বিশ্রামস্থল!”[19]কুরআন 18:29

ব্যাখ্যাঃ ঐ। আপনাকে বাধ্য করা হয় নি এখানেও প্রমাণ করে।

“অতঃপর এদের প্রত্যেককে নিজ নিজ পাপের কারণে আমি পাকড়াও করেছিলাম; তাদের কারো উপর আমি পাথরকুচির ঝড় পাঠিয়েছি, কাউকে পাকড়াও করেছে বিকট আওয়াজ, কাউকে আবার মাটিতে দাবিয়ে দিয়েছি আর কাউকে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ এমন নন যে, তাদের উপর যুলম করবেন বরং তারা নিজেরা নিজদের ওপর যুল্‌ম করত।”[20]কুরআন 29:40

আল্লাহ সন্তুষ্টভাবে কারো প্রতি জুলুম করেন না। নিজের ইচ্ছাতেই আপনি জুলুম করার এবং পাওয়ার পথ বেছে নেন। আর ব্যাখ্যাঃ ঐ

“মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।”[21]কুরআন 30:41

আপনার কর্মফল!

“যে সৎকর্ম করে সে তার নিজের জন্যই তা করে। আর যে অসৎকর্ম করে তা তার উপরই বর্তাবে। তোমার রব তাঁর বান্দাদের প্রতি মোটেই যালিম নন।”[22]কুরআন 41:46

“অবশ্যই আমি তাকে পথ প্রদর্শন করেছি, হয় সে শোকরকারী অথবা অকৃতজ্ঞ।”[23]কুরআন 76:3

“নিশ্চয় তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা বিভিন্ন প্রকারের।সুতরাং যে দান করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে,আর উত্তমকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে,আমি তার জন্য সহজ পথে চলা সুগম করে দেব।আর যে কার্পণ্য করেছে এবং নিজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করেছে,আর উত্তমকে মিথ্যা বলে মনে করেছে,আমি তার জন্য কঠিন পথে চলা সুগম করে দেব।আর তার সম্পদ তার কোন কাজে আসবে না, যখন সে অধঃপতিত হবে।নিশ্চয় পথ প্রদর্শন করাই আমার দায়িত্ব।”[24]কুরআন 92:4 to 92:12

“আর যখন তারা কোন অশ্লীল কাজ করে তখন বলে, ‘আমরা এতে আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি এবং আল্লাহ আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন’। বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না’?”[25]কুরআন 7:28

“আর আল্লাহ চান তোমাদের তাওবা কবূল করতে। আর যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরা প্রবলভাবে (সত্য পথ থেকে) বিচ্যুত হও।”[26]কুরআন 4:27

“আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাদের পরবর্তীরা লড়াই করত না, তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ আসার পর। কিন্তু তারা মতবিরোধ করেছে। ফলে তাদের মধ্যে কেউ ঈমান এনেছে, আর তাদের কেউ কুফরী করেছে।”[27]কুরআন 2:253

“অতঃপর তিনি তাকে অবহিত করেছেন তার পাপসমূহ ও তার তাকওয়া সম্পর্কে।নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে।এবং সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তা (নাফস)-কে কলুষিত করেছে।সামূদ জাতি আপন অবাধ্যতাবশত অস্বীকার করেছিল।”[28]কুরআন 91:8 to 91:11

এই আয়াতগুলো আপনার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি প্রমাণ করে। আপনি নিজেই নিজের কাজের কারণে সেই কাজ অনুযায়ী পথের দিশা পান।

ধাপ ৭ঃ নিজে থেকে ইচ্ছা করলে সেই কাজ তার জন্য সহজ হয়ে যায়!

 “আল্লাহ কাউকে সৎপথে পরিচালিত করার ইচ্ছা করলে, তিনি তার হৃদয়কে ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন এবং কাউকে বিপথগামী করার ইচ্ছা করলে, তিনি তাঁর হৃদয়কে অতিশয় সংকীর্ণ করে দেন; তার কাছে ইসলাম অনুসরণ আকাশে আরোহণের মতই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। যারা বিশ্বাস করে না, আল্লাহ তাদের উপর এরূপে অপবিত্রতা (শয়তান অথবা আযাব) নির্ধারিত করেন।”[29]কুরআন 6:125

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বাক্বী’তে একটি জানাযার আমার হাযির ছিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও এসে বসলেন এবং তাঁর সঙ্গে আমরাও বসলাম। তাঁর সঙ্গে একটি কাঠ ছিল যা দিয়ে তিনি যমীন খুঁড়ছিলেন। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মাথা তুলে বলেনঃ কোন সৃষ্টিই এরূপ নেই যার বাসস্থান লিখিত হয়নি। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তবে আমাদের সেই লেখার উপর আমরা কি নির্ভর করব না? যে আমাদের মাঝে ভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত সে তো সৌভাগ্যসুলভ কাজই করবে, আর যে হতভাগ্যদের দলভুক্ত সে তো দুর্ভাগ্যের কর্মই করবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বরং তোমরা ‘আমাল করতে থাক। কারণ যাকে যে ‘আমালের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সেটাই তার জন্য সহজসুলভ করে দেয়া হয়েছে। যে লোক ভাগ্যবানদের দলভুক্ত তার জন্য সৌভাগ্যসুলভ ‘আমালই সহজতর করা হয়েছে এবং যে লোক হতভাগ্যদের দলভুক্ত তার জন্য দুর্ভাগ্যজনক কাজই সহজতর করা হয়েছে। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেনঃ “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা ভাল তা সঠিক মনে করে গ্রহণ করলে তার জন্য আমি সুগম করে দিব সহজ পথ। আর কেউ কৃপণতা করলে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, আর যা ভাল তা অস্বীকার করলে আমি তার জন্য সুগম করে দিব কঠোর পথ “-(সূরা লাইল ৫-১০)[30]জামে’ আত তিরমিজিঃ ৩৩৪৪ (সহিহ).

অর্থাৎ আপনার জন্য কোন পথ (ভালো নাকি মন্দ) অনুসরণ করা সহজ হবে তা আপনার কাজেই ঠিক হয়ে যায়।

ধাপ ৮ঃ নিজ দোষের দায় তাকদীরের উপর চাপানো (একটি সাদামাটা যুক্তি)

আপনি কোনো কাজ (ধরলাম অপরাধ)  করলে সেটা সম্পাদিত হওয়ার পরেই জানতে পারেন আপনার তাকদীরে এটা লেখা ছিলো। তাই আপনি তাকদীরকে দোষারোপ করতে পারেন না। কারণ এইটা জানার আগে, আপনি নিজের ইচ্ছানুযায়ীই কাজটা করেছেন।

~

জাজাকাল্লাহ খাইরান।

    Footnotes

    Footnotes
    1কুরআন ৬ঃ৫৯
    2তাফসীরে আহসানুল বয়ান (কুরআন ৬ঃ৫৯ এর).
    3কুরআন 36:12
    4সহিহুল বুখারী ১০৩৯, ৪৬৯৭, ৭৩৮০ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স).
    5ফুটনোট দেখুনঃ http://www.hadithbd.com/books/link/?id=8489
    6কুরআন 15:21
    7কুরআন 25:2
    8কুরআন 76:30
    9কুরআন 81:29
    10‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদা’ – শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন (রহঃ).
    11শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া – ড. সালিহ আল ফাওযান http://www.hadithbd.com/books/link/?id=8489
    12কুরআন 10:99
    13কুরআন 6:148
    14কুরআন 16:35
    15কুরআন 43:20
    16কুরআন 4:115
    17কুরআন 6:39
    18কুরআন 13:11
    19কুরআন 18:29
    20কুরআন 29:40
    21কুরআন 30:41
    22কুরআন 41:46
    23কুরআন 76:3
    24কুরআন 92:4 to 92:12
    25কুরআন 7:28
    26কুরআন 4:27
    27কুরআন 2:253
    28কুরআন 91:8 to 91:11
    29কুরআন 6:125
    30জামে’ আত তিরমিজিঃ ৩৩৪৪ (সহিহ).
    0 0 votes
    Article Rating
    Subscribe
    Notify of
    0 Comments
    Oldest
    Newest Most Voted
    Inline Feedbacks
    View all comments
    Back to top button