
হিন্দুশাস্ত্রে সতীদাহ
হিন্দুদের বিশ্বাস করা গ্রন্থগুলোর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় সতীদাহের কিংবা সহমরণের উল্লেখ রয়েছে।
মহাভারতে সতীদাহ
মহাভারতে দেখা যায় রাজা পাণ্ডুর মৃত্যু হলে কুন্তী সহমরণে যেতে চায়, কিন্তু পাণ্ডুর অপর স্ত্রী মাদ্রী কুন্তীকে অনুরোধ করে নিজে সহমরণে যায়। মহাভারত আদিপর্বের ১২৫ অধ্যায়ে আছে,[1]মহাভারত, আদিপর্ব, ১২৫ অধ্যায়, অনুবাদঃ কালীপ্রসন্ন সিংহ
মহাভারত আদিপর্বের ১২৬ অধ্যায়ে আছে,[2]মহাভারত, আদিপর্ব, ১২৬ অধ্যায়, অনুবাদঃ কালীপ্রসন্ন সিংহ
অধ্যায় ৯৫ এ এসেছে,[3]মহাভারত, আদিপর্ব, ৯৫ অধ্যায়, অনুবাদঃ কালীপ্রসন্ন সিংহ
মহাভারতের মৌসলপর্বে বাসুদেবের চার স্ত্রীর দাহের কথা এসেছে,[4]মহাভারত, মৌসলপর্ব, ৭ম অধ্যায়, ভার্স ২৫-৩৬, অনুবাদঃ হরিদাশ সিদ্ধান্তবাগীশ ভট্টাচার্য
শান্তিপর্বের ১৪৮ অধ্যায়েও[5]মহাভারত, শান্তিপর্ব, ১৪৮ অধ্যায়, অনুবাদঃ কালীপ্রসন্ন সিংহ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.289483/page/n519/mode/1up?view=theater সতীদাহের বর্ণনা এসেছে,
রামায়ণে সতীদাহ
অযোধ্যাকাণ্ড
বাল্মিকী অযোধ্যাকাণ্ডের ৬৬ সর্গে এসেছে,
যুদ্ধকাণ্ড বা, লঙ্কাকাণ্ড
যুদ্ধকাণ্ডের সর্গ ৩২-এর বর্ণনায় সীতার সহমরণ প্রবৃত্তি লক্ষণীয়ঃ
উত্তরকাণ্ড
উত্তরকাণ্ডের ১৭ সর্গে বেদবতী রাবণকে বলেন তার বাবা মারা গেলে, তার মা একইসাথে সহমরণে যুক্ত হয়েছিলেনঃ
স্মৃতিশাস্ত্রে সতীদাহ
হিন্দুদের স্মৃতিশাস্ত্রে একাধিক স্থানে সতীদাহের কথা এসেছে। সহমরণে স্বামীসহ স্ত্রীকে ৩৩ কোটি বছর স্বর্গে যাওয়ার লোভ দেখানো হয়েছে।
পরাশরসংহিতায় সতীদাহ
আর্য ধর্মশাস্ত্র পরাশরসংহিতায় আছে,
আর স্বামীর মরণে যিনি সহমৃতা হন, সেই স্ত্রী, মানবদেহে যে সার্দ্ধক্রিকোটীসংখ্যক রোম আছে, তাবৎপরিমিত কাল স্বর্গ ভোগ করিতে থাকেন। ব্যালগ্রাহী যেমন গর্ত্তমধ্য হইতে, সর্পকে বলপূর্বক টানিয়া আনে, তেমনি সহমৃতা নারী মৃতপতিকে উদ্ধার করিয়া তৎসহ স্বর্গসুখ ভোগ করেন।[6]পরাশরসংহিতা ৪/২৮-২৯; ঊনবিংশতি সংহিতা, সংস্করণ-২, পৃ ৩৬২, অনুবাদঃ তর্কানন পঞ্চরত্ন
বিষ্ণুসংহিতায় সতীদাহ
…ভর্ত্তার মৃত্যু হইলে, ব্রহ্মচর্য্য কিংবা ভর্ত্তার সহগমন বা অনুগমন (স্ত্রীলোকের ধর্ম্ম)। স্ত্রীলোকের পৃথক্ যজ্ঞ, ব্রত এবং উপবাস নাই; কিন্তু পতিকে যে সেবা করে, সেইজন্যই স্বর্গে আদৃতা হয়।[7]বিষ্ণুসংহিতা ৫/১-১৭; ঊনবিংশতি সংহিতা, সংস্করণ-২, পৃ ৬৫-৬৬, অনুবাদঃ তর্কানন পঞ্চরত্ন
দক্ষসংহিতায় সহমরণ প্রথা
ভর্ত্তার মৃত্যু হইলে, যে স্ত্রী স্বামীর চিতারোহণ করে, সেই স্ত্রী সদাচারসম্পন্না হইবে এবং স্বর্গে দেবগণের পূজ্য হইবে। ব্যালগ্রাহী (সাপুড়িয়া) যেমত গর্ত্ত হইতে বল দ্বারা সর্পগণকে উদ্ধার করে, সেইরূপ পতিগামিনী স্ত্রীর পতি যদ্যপি নরকস্থ থাকে, তাহাকেও নিজপূণ্যবলে উদ্ধার করিয়া পতির সহিত (স্বর্গলোকে) সহর্ষে কালযাপন করে।[8]দক্ষসংহিতা ৪/১৭-২১; ঊনবিংশতি সংহিতা, সংস্করণ-২, পৃ ৪৪৩, অনুবাদঃ তর্কানন পঞ্চরত্ন
ব্যাসসংহিতায় সতীদাহ
মৃত ভর্ত্তার সহিত অগ্নিপ্রবেশ করিবে অথবা আজীবন ব্রহ্মচর্য্য করিবে।[9]ব্যাসসংহিতা ৪/২৮-২৯; ঊনবিংশতি সংহিতা, সংস্করণ-২, পৃ ৩৯৬, অনুবাদঃ তর্কানন পঞ্চরত্ন
অত্রিসংহিতায় সহমরণ
স্ত্রীলোক সহমরণ বা অনুমরণ করিতে গিয়া চিতা হইতে পতিত হইলে বা রোগ দ্বারা রজোহীন হইলে “প্রাজাপত্য” ব্রত করিয়া এবং দশজন ব্রাহ্মণ ভোজন করাইয়া শুদ্ধ হইবে।[10]অত্রিসংহিতা, শ্লোক ২০৯; ঊনবিংশতি সংহিতা, সংস্করণ-২, পৃ ১৩, অনুবাদঃ তর্কানন পঞ্চরত্ন
বেদে সতীদাহ
সতীদাহের আভাস বেদেও পাওয়া যায়…
সতিদাহ প্রমাণে ঋগ্বেদের ব্যবহার
ঋগ্বেদে সতীদাহের অনুমোদন কিংবা সুস্পষ্ট নিষিদ্ধতা দেখা যায় না। তবে ঋগ্বেদকে ব্যবহার করা হয়েছে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের দ্বারা, সতীপ্রথাকে জাস্টিফাই করার জন্য। ঋগ্বেদ ১০/১৮/৭[11]ঋগ্বেদ সংহিতা, অনুবাদঃ দুর্গাদাস লাহিড়ী এবং রমেশচন্দ্র দত্ত, অক্ষয় লাইব্রেরি-কলকাতা, ১০ম মণ্ডল, সুক্ত ১৮, ভার্স ৭, পৃ ১৬৫৯ এ আছে,
এখানে ৭ নম্বর ভার্সে ‘অগ্রে’ শব্দকে ‘অগ্নেঃ’ পড়ে বিধবা পোড়ানোর প্রথাকে সমর্থণ দেওয়া হতো।
তবে ৮ নম্বর ভার্সে “তুমি যাঁর নিকট শয়ন করতে গমন করেছো, তিনি গতাসু অর্থাৎ মৃত হয়েছেন…” – অংশ দ্বারা স্ত্রীর সহমরণের একটা ভাব দেখা যায়। আর ঋগ্বেদে ঐ স্ত্রীকে সহমরণে যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
অথর্ববেদে সতীদাহের আভাস
সূচিপত্র থেকেই খুঁজি,
অথর্ববেদ ১৮/৩/১-৩ এ দেখা যায়[12]অথর্ববেদ ১৮/৩/১, অনুবাদঃ বিজনবিহারী গোস্বামী, প্রকাশনঃ হরফ প্রকাশনী, পৃ ৪৮২,
এখানে সতীদাহ বা, সহমরণে নিষেধ করা হচ্ছে। ❝হে মরণশীল মানুষ, এ স্ত্রী ভূলোক থেকে নির্গত তোমার কাছে অনুমরণের জন্য পুরাতন (স্মৃতি পুরাণাদি প্রসিদ্ধ) ধর্ম অনুপালনের জন্য যাচ্ছে। ❞ – এই অংশ থেকে বোঝা যায়, সতীদাহ প্রথা বেদ থেকেও পুরনো। সতীদাহ হচ্ছে পুরাতন ধর্ম। আর নতুন ধর্মগ্রন্থ বেদে এটা নিষেধ করা হচ্ছে।
পুরাণে সতীদাহ
পুরাণে বিপুলাংশে সতীদাহের কথা পাওয়া যায়।
গরুড়পুরাণ
যে রমণী পতির সহিত অনুমৃতা হয়, তাহাহইলে তাহার শরীরে যতগুলি লোম আছে, ততকাল সে পতির সহিত স্বর্গে বাস করে।[13]গরুড়পুরাণ, পূর্বখণ্ড, অধ্যায় ১০৭, শ্লোক ২৯, অনুবাদঃ রসিকমোহন চট্টোপাধ্যায়
বিষ্ণুপুরাণ
বিষ্ণুপুরাণ অনুসারে কৃষ্ণের ৮ স্ত্রী তার সাথে আগুনে প্রবেশ করে।[14]বিষ্ণুপুরাণ, ৫ম অংশ, অধ্যায় ৩৮, শ্লোক ১-১০, অনুবাদঃ পঞ্চানন তর্করত্ন
স্কন্দপুরাণের দলিল
যে নারী সহমরণোদ্দেশ্যে গৃহ হইতে শ্মশ্বানে সহর্ষে স্বামীর অনুগমন করে, নিঃসন্দেহ, তাহার পদে পদে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়। যেমন আহিতুণ্ডিক সর্পকে বলপূর্বক গর্ত হইতে উত্তোলন করে, সতীও তদ্রুপ পতিকে যমদূতদিগের হস্ত হইতে মোচন করিয়া স্বর্গে লইয়া যান।[15]স্কন্দপুরাণ, কাশীখণ্ড, অধ্যায় ৪, শ্লোক ৭১
শ্রীমদ্ভাগবত-এর দলিল
শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের ৪র্থ স্কন্দে সতীদাহের প্রমাণ মেলে।[16]শ্রীমদ্ভাগবত ৪র্থ স্কন্দ, অধ্যায় ২৮, শ্লোক ৫০, প্রভুপাদ-এর ব্যাখ্যা, বঙ্গানুবাদঃ ভক্তিচারু স্বামী, ইংরেজি অনুবাদঃ http://vanisource.org/wiki/SB_4.28.50
তাৎপর্য অংশে, প্রভুপাদের বক্তব্য লক্ষণীয়। অর্থাৎ, সতীদাহ হচ্ছে বৈদিক প্রথা।
পদ্মপুরাণ
পদ্মপুরাণের উত্তরখণ্ডেও সহমরণ দেখা যায়,
রেবতী বলভদ্রদেহ আলিঙ্গনপূর্ব্বক অগ্নিতে প্রবেশ করিলেন এবং তথায় দেহলাভান্তে দিব্য বিমানে আরোহণপূর্ব্বক ভর্ত্তৃস্থান দিব্য সঙ্কর্ষণ-লোক প্রাপ্ত হইলেন। অনন্তর প্রদ্যুমের সহিত রুক্ম্পুত্রী ও অনিরুদ্ধের সহিত ঊষা অগ্নিপ্রবেশ করিলেন। এইরীপে সমঅস্ত যাদবরমণীই স্ব স্ব ভর্ত্তৃদেহ পুজা করিয়া অগ্নিতে প্রবেশ করিলেন।[17]পদ্মপুরাণ ৬/২৫২/৮৯-৯০, অনুবাদঃ পঞ্চানন তর্করত্ন, নবভারত পাবলিশার্স
দেবী ভাগবত পুরাণ
দেবী ভাগবত পুরাণেও সতীদাহের, অপ্সরার কথা এসেছে,[18]দেবীভাগবতম্, ৩/১৫/১০-১৩, অনুবাদঃ পঞ্চানন তর্করত্ন, নবভারত পাবলিশার্স
সতীদাহ বা, সহমরণ প্রথার ইতিহাস
সতীদাহ প্রথার উৎপত্তি ও বিকাশ
ঐতিহাসিকদের মতে সতীদাহ প্রথা ঠিক কবে আরম্ভ হয়েছিলো তা বলা যায় না।[19]সুধীরকুমার মিত্র, হুগলি জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ – ১, সতীদাহ অংশ, পৃ ১৯৭ Wendy Doniger উল্লেখ করেছেন[20]The Hindus : an alternative history by Wendy Doniger, Print: 2009, Page 611 https://archive.org/details/hindusalternativ0000doni/page/611/mode/1up, খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর ঐতিহাসিক ডায়োডরাস সিকুলাস (Diodorus Siculus)-এর বিষয়ক লেখায়ও সতীদাহ প্রথার বিবরণ পাওয়া যায়। মধ্য প্রদেশের এরানে সতীদাহের স্মৃতিস্বরূপ Sati Stone পাওয়া গেছে, যা ৫১০ খ্রিস্টাব্দের দিকের।
শাস্ত্রী রাও শকুন্তলাও এটি উল্লেখ[21]Women In The Sacred Laws (1959) by Shastri Rao Shakuntla, page 129 https://archive.org/details/dli.ernet.536771/page/129/mode/1up করেছেন,
ঐতিহাসিক সিকুলাসের বর্ণনানুসারে খ্রিস্টপূর্ব ৩১৬ সালে একজন ভারতীয় সেনা ইরানে মৃত্যুবরণ করে। এখন তার দুই স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয় কে সতী হয়ে তাদের স্বামীর সাথে নিজেকে জ্যান্ত দাহ করবে।[22]The Cambridge history of India by Rapson, Edward James, 1861-1937, Volume I, page 415 https://archive.org/details/cambridgehistory01rapsuoft/page/n459/mode/1up ম্যাকেডোনিয়ান ও গ্রিকরা সমাধান দেয় ছোট স্ত্রীর পক্ষ ধরে, কারণ বড় স্ত্রীর একজন সন্তান ছিলোঃ
বিধবারা স্বেচ্ছায় আগুনে ঝাঁপ দিতো নাকি জোর করা হতো?
অর্থাৎ, সাধারণত নারীদের জোরপূর্বক দাহ করা হতো, আর কিছু নারীরা স্বেচ্ছায় দাহ করতো। নারীরা যাতে চিতা থেকে পালাতে না পারে সেজন্য ভারী বাঁশ দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। আর কিছু নারী স্বেচ্ছায় আগুনে ঝাপ দিতো, সেটা ছিলো তাদের ধর্মীয় কারনে, স্বামীর সাথে স্বর্গে বাস করতে পারবে, যেমনটা হিন্দু শাস্ত্রে লেখা রয়েছে।[23]The Hindus : an alternative history by Wendy Doniger, Print: 2009, Page 612-613 https://archive.org/details/hindusalternativ0000doni/page/612/mode/1up
মুসলিম শাসনামলে সতীদাহ
হাজার বছরের মুসলিমশাসনামলে সতীদাহের গতিপথ কীরকম ছিলো? তা জানাতে আমরা একাধিক ঐতিহাসিকের বর্ণনা উল্লেখ করছি।
ইবনে বতুতার বর্ণনা (১৩২৫-১৩৫৪)
বিখ্যাত ভ্রমণকারী ইবনে বতুতার বর্ণনা থেকেই শোনা যাক,[24]The Travels of Ibn Battuta, A.D. 1325-1354 Volume III Edited by H.A.R. GIBB, page 614-616 https://archive.org/details/travels-of-ibn-battuta/The%20Travels%20of%20Ibn%20Battuta-1325%E2%80%931354-Volume-III/
সুলতানি শাসনামলে সুলতানরা গভর্নর নিয়োগ দিতেন, যাতে জোরপূর্বক সতীদাহ না হয়। নারীর ইচ্ছা এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সতীদাহ সম্ভব ছিলো না সে সময়।
দে থেভেনতের বর্ণনা (১৬৬৩-১৬৬৭)
De Thevenot একজন ইয়োরোপীয় ভ্রমণকারী ছিলেন। তার এবং ড. ক্যারেরির ভ্রমণকাহিনী উঠে এসেছে Indian Travels of Thevenot and Careri বইতে। আমরা সেখান থেকেই দেখাচ্ছি। তিনি বিধবা পোড়ানোর বিভিন্ন বর্ণনার পর সারাংশ হিসেবে যা লিখেছেন,[25]Indian Travels of Thevenot and Careri, pg 120 https://archive.org/details/indiantravelsoft0000unse/page/120/mode/1up
…মহিলারা খুশি যে মুসলিমরা (মুহাম্মদীয়/মাহোমেটানস্) ইন্ডিয়ার শাসক হয়েছে, তাদের ব্রাহ্মণদের অত্যাচার থেকে উদ্ধার করার জন্য… …যাইহোক, গ্রেট মুঘল এবং অন্যান্য মুসলিম রাজকুমারগণ, তাদের গভর্নরদের এই অবমাননাকে দমন করার জন্য তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করার আদেশ দিয়েছিলেন, যতটা তাদের ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে…
তার সময় মুঘল শাসকগন ব্যবস্থা করেছিলেন যে, সতীদাহের জন্য তাদের থেকে অনুমতি নিতে হবে। তো এই অনুমতি নেওয়ার জটিলতার কারণেই অনেক নারী জীবন্ত আগুন থেকে রক্ষা পেতো, সাথে সাথে গোত্রে সম্মানহানি থেকেও।
আসুন এই বই থেকে আরও কিছু তথ্য দেখা যাক।[26]ibid, pg 249-250
যেসব হিন্দু মহিলা সতী হতে রাজি না হতো হিন্দুসমাজে কী অবস্থা হতো তার বর্ণনা আছে।
যখন থেকে মুসলিমরা ইন্ডিয়ার শাসক হলো, তারা এই অমানুষিকতাকে মেনে নেয় নি, যেটা ব্রাহ্মণরা নিজেদের স্বার্থে করতো…
উক্ত বইয়ের নোটস্[27]ibid, pg 363 এ উল্লেখ করা আছে,
উইলিয়াম ফৌস্টারের সংকলিত বর্ণনা (১৫৮৩-১৬২৯)
ফৌস্টার তার ‘Early Travels in India’ তে এডওয়ার্ড টেরির (১৬১৬-১৬১৯) বর্ণনা উল্লেখ করেছেন,[28]Early travels in India, 1583-1619 : Foster, William, Sir, 1863-1951 https://archive.org/details/earlytravelsinin00fostuoft পৃ ৩২৩
অন্যত্র উইলিয়াম হকিন্সের ( ১৬০৮-১৬১৩) বর্ণনা উল্লেখ করেছেন,[29]ibid, page 119
অর্থাৎ, সম্রাট জাহাঙ্গীর হিন্দু বিধবাদের আর্থিক সাহায্য করতেন যাতে মৃত স্বামীর চিতায় শুয়ে আত্মহত্যা না করে।
আকবরনামায় আবু ফজলের বর্ণনা
সম্রাট আকবরকে নিয়ে বিখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ ‘আকবরনামা’-তে আবু ফজল বর্ণনা করেছেন,[30]Akbarnama, Vol 3, Chapter LXX, pg 595, Tr. H. Beveridge, The Asiatic Society https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.55650
অর্থাৎ, সব শহর ও জেলায় সম্রাট আকবর লোক নিয়োগ দিয়েছিলেন, যাতে জোর করে নারীদের না পোড়ানো হয়।
ভিনসেন্ট স্মিথের কোটেশন
ভিনসেন্ট স্মিথ তার ‘Akbar The Great Mughal’ বইতে আকবরনামায় বর্ণিত ঘটনা কোট করেছেন। সম্রাট আকবর নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহমরণ প্রথা রদ করে দিয়েছিলেন। তার অনুমতি ছাড়া সতীদাহ অসম্ভব ছিলো। একটি সতীদাহ বন্ধ করার ঘটনাও এসেছে,[31]AKBAR THE GREAT MOGUL 1542-1605 BY VINCENT A. SMITH, C.I.E, page 163 https://archive.org/details/cu31924024056503
ট্রাভের্নিয়ারের বর্ণনা
ট্রাভের্নিয়ার উল্লেখ করেছেন, মুসলিম গভর্নররা সহজে সতীদাহের অনুমতি দিতো না।[32]Travels in India by Jean-Baptiste Tavernier, Book III, Page 210 – Google Books
উইলিয়াম মুরক্রফট এবং জর্জ ট্রেবেকের বর্ণনা
সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৬৯ সালে সতীদাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেন, জোর করে হোক, আর স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা হোক।[33]Travels in the Himalayan Provinces of Hindustan and the Panjab: In …, Volume 2 By William Moorcroft, George Trebeck, page 131 – Google Books
একজন হিন্দু ঐতিহাসিকের চোখে সতীদাহের পূর্ণ ইতিবৃত্ত
সুধীরকুমার মিত্র লিখেছেন[34]সুধীরকুমার মিত্র, হুগলি জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ – ১, সতীদাহ অংশ, পৃ ১৯৭-২১৫,
বর্তমান বিশ্বে সতীদাহ
বর্তমান বিশ্বেও সতীদাহের বিষবাষ্প থেমে নেই।
On way to perform ‘sati’, woman dragged from pyre (Nov 20, 2018)
Maharashtra: Woman’s body found from husband’s pyre (April 1, 2015)
(9 Sep 2009) Indian women still commit ritual suicides
(14 October 2008) Relatives arrested after widow burns to death on funeral pyre
(22 August 2006) India wife dies on husband’s pyre
(22 September 2006) Brothers arrested for throwing 95 year-old mother on funeral pyre
শঙ্করাচার্যের সমর্থন
বর্তমানকালের হিন্দু পণ্ডিতেরাও সতীদাহের সমর্থক। যেমনঃ শঙ্করাচার্য।
নিউজঃ Shankaracharya of Puri hits out at women and harijans (April 30, 1988)
আরো জানতে এই ভিডিয়োটি দেখুন,
স্বামী বিবেকানন্দের সমর্থন
স্বামী বিবেকানন্দও সতীদাহ সমর্থক ছিলেন,[35]ট্রিবিউন পত্রিকায় বিবেকানন্দের বক্তৃতার রিপোর্ট, এপ্রিল ১, ১৮৯৪; স্বামীজীর বাণী ও রচনা, ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৫২
ফ্যাক্ট চেক
Fact Check: সতীদাহ শুরু হয়েছিলো মুসলিমদের কারণে
বর্তমানে কিছু হিন্দুত্ববাদী দাবি করছে, মুসলিমদের (!!!!) হাত থেকে জাত বাঁচাতে নাকি রাজপুত নারীরা স্বেচ্ছায় সহমরণ গ্রহণ করে, আর সেখান থেকে এই প্রথা।
এই দাবিটি মিথ্যা। একে তো এর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই, তার উপর আমরা দেখিয়েছি, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সালের দিকেও সতীদাহ প্রচলিত ছিলো।
সতীদাহ প্রথা বিলোপ করেন কে?
সতীদাহ প্রথা সম্পূর্ণভাবে প্রথম বিলোপ করেন সম্রাট আওরঙ্গজেব।
চলুক সত্যফাঁসের আন্দোলন…
Footnotes
⇧1 | মহাভারত, আদিপর্ব, ১২৫ অধ্যায়, অনুবাদঃ কালীপ্রসন্ন সিংহ |
---|---|
⇧2 | মহাভারত, আদিপর্ব, ১২৬ অধ্যায়, অনুবাদঃ কালীপ্রসন্ন সিংহ |
⇧3 | মহাভারত, আদিপর্ব, ৯৫ অধ্যায়, অনুবাদঃ কালীপ্রসন্ন সিংহ |
⇧4 | মহাভারত, মৌসলপর্ব, ৭ম অধ্যায়, ভার্স ২৫-৩৬, অনুবাদঃ হরিদাশ সিদ্ধান্তবাগীশ ভট্টাচার্য |
⇧5 | মহাভারত, শান্তিপর্ব, ১৪৮ অধ্যায়, অনুবাদঃ কালীপ্রসন্ন সিংহ https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.289483/page/n519/mode/1up?view=theater |
⇧6 | পরাশরসংহিতা ৪/২৮-২৯; ঊনবিংশতি সংহিতা, সংস্করণ-২, পৃ ৩৬২, অনুবাদঃ তর্কানন পঞ্চরত্ন |
⇧7 | বিষ্ণুসংহিতা ৫/১-১৭; ঊনবিংশতি সংহিতা, সংস্করণ-২, পৃ ৬৫-৬৬, অনুবাদঃ তর্কানন পঞ্চরত্ন |
⇧8 | দক্ষসংহিতা ৪/১৭-২১; ঊনবিংশতি সংহিতা, সংস্করণ-২, পৃ ৪৪৩, অনুবাদঃ তর্কানন পঞ্চরত্ন |
⇧9 | ব্যাসসংহিতা ৪/২৮-২৯; ঊনবিংশতি সংহিতা, সংস্করণ-২, পৃ ৩৯৬, অনুবাদঃ তর্কানন পঞ্চরত্ন |
⇧10 | অত্রিসংহিতা, শ্লোক ২০৯; ঊনবিংশতি সংহিতা, সংস্করণ-২, পৃ ১৩, অনুবাদঃ তর্কানন পঞ্চরত্ন |
⇧11 | ঋগ্বেদ সংহিতা, অনুবাদঃ দুর্গাদাস লাহিড়ী এবং রমেশচন্দ্র দত্ত, অক্ষয় লাইব্রেরি-কলকাতা, ১০ম মণ্ডল, সুক্ত ১৮, ভার্স ৭, পৃ ১৬৫৯ |
⇧12 | অথর্ববেদ ১৮/৩/১, অনুবাদঃ বিজনবিহারী গোস্বামী, প্রকাশনঃ হরফ প্রকাশনী, পৃ ৪৮২ |
⇧13 | গরুড়পুরাণ, পূর্বখণ্ড, অধ্যায় ১০৭, শ্লোক ২৯, অনুবাদঃ রসিকমোহন চট্টোপাধ্যায় |
⇧14 | বিষ্ণুপুরাণ, ৫ম অংশ, অধ্যায় ৩৮, শ্লোক ১-১০, অনুবাদঃ পঞ্চানন তর্করত্ন |
⇧15 | স্কন্দপুরাণ, কাশীখণ্ড, অধ্যায় ৪, শ্লোক ৭১ |
⇧16 | শ্রীমদ্ভাগবত ৪র্থ স্কন্দ, অধ্যায় ২৮, শ্লোক ৫০, প্রভুপাদ-এর ব্যাখ্যা, বঙ্গানুবাদঃ ভক্তিচারু স্বামী, ইংরেজি অনুবাদঃ http://vanisource.org/wiki/SB_4.28.50 |
⇧17 | পদ্মপুরাণ ৬/২৫২/৮৯-৯০, অনুবাদঃ পঞ্চানন তর্করত্ন, নবভারত পাবলিশার্স |
⇧18 | দেবীভাগবতম্, ৩/১৫/১০-১৩, অনুবাদঃ পঞ্চানন তর্করত্ন, নবভারত পাবলিশার্স |
⇧19 | সুধীরকুমার মিত্র, হুগলি জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ – ১, সতীদাহ অংশ, পৃ ১৯৭ |
⇧20 | The Hindus : an alternative history by Wendy Doniger, Print: 2009, Page 611 https://archive.org/details/hindusalternativ0000doni/page/611/mode/1up |
⇧21 | Women In The Sacred Laws (1959) by Shastri Rao Shakuntla, page 129 https://archive.org/details/dli.ernet.536771/page/129/mode/1up |
⇧22 | The Cambridge history of India by Rapson, Edward James, 1861-1937, Volume I, page 415 https://archive.org/details/cambridgehistory01rapsuoft/page/n459/mode/1up |
⇧23 | The Hindus : an alternative history by Wendy Doniger, Print: 2009, Page 612-613 https://archive.org/details/hindusalternativ0000doni/page/612/mode/1up |
⇧24 | The Travels of Ibn Battuta, A.D. 1325-1354 Volume III Edited by H.A.R. GIBB, page 614-616 https://archive.org/details/travels-of-ibn-battuta/The%20Travels%20of%20Ibn%20Battuta-1325%E2%80%931354-Volume-III/ |
⇧25 | Indian Travels of Thevenot and Careri, pg 120 https://archive.org/details/indiantravelsoft0000unse/page/120/mode/1up |
⇧26 | ibid, pg 249-250 |
⇧27 | ibid, pg 363 |
⇧28 | Early travels in India, 1583-1619 : Foster, William, Sir, 1863-1951 https://archive.org/details/earlytravelsinin00fostuoft পৃ ৩২৩ |
⇧29 | ibid, page 119 |
⇧30 | Akbarnama, Vol 3, Chapter LXX, pg 595, Tr. H. Beveridge, The Asiatic Society https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.55650 |
⇧31 | AKBAR THE GREAT MOGUL 1542-1605 BY VINCENT A. SMITH, C.I.E, page 163 https://archive.org/details/cu31924024056503 |
⇧32 | Travels in India by Jean-Baptiste Tavernier, Book III, Page 210 – Google Books |
⇧33 | Travels in the Himalayan Provinces of Hindustan and the Panjab: In …, Volume 2 By William Moorcroft, George Trebeck, page 131 – Google Books |
⇧34 | সুধীরকুমার মিত্র, হুগলি জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ – ১, সতীদাহ অংশ, পৃ ১৯৭-২১৫ |
⇧35 | ট্রিবিউন পত্রিকায় বিবেকানন্দের বক্তৃতার রিপোর্ট, এপ্রিল ১, ১৮৯৪; স্বামীজীর বাণী ও রচনা, ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৫২ |
সুন্দর হইছে