ইসলামবিরোধীদের প্রতি জবাব

রাসূল (সাঃ)-এর সাথে উমায়মাহ বিনতে শারাহীলের বিচ্ছেদের বর্ণনা নিয়ে লুকোচুরির সমাপ্তি

মূল ঘটনা

ভূমিকা

আমরা যার ব্যাপারে আজকে কথা বলছি তিনি হলেন একজন জাওনী মহিলা যার সাথে রাসূল (সঃ)-এর বিচ্ছেদ হয়েছিলো। ঐতিহাসিকদের মতে তার নাম উমায়মাহ কিংবা আসমা।

(Islamqa প্রশ্নোত্তর নং 118282 এবং Islamweb ফতোয়া নং 410077 থেকে অনূদীত ও সম্পাদিত)

হাদিসের বর্ণনা থেকে

সিহাহ সিত্তাহর হাদিসে কীরকমভাবে বর্ণিত হয়েছে দেখে নিইঃ

আওযা‘ঈ (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যুহরী (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন্ সহধর্মিণী তাঁর থেকে মুক্তি প্রার্থনা করেছিল? উত্তরে তিন বললেনঃ ‘উরওয়াহ (রহ.) ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, জাওনের কন্যাকে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একটি ঘরে) পাঠানো হল আর তিনি তার নিকটবর্তী হলেন, তখন সে বলল, আমি আপনার থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তো এক মহামহিমের কাছে পানাহ চেয়েছ। তুমি তোমার পরিবারের কাছে গিয়ে মিলিত হও। সহিহুল বুখারী ৫২৫৪, অনুবাদঃ তাওহীদ পাবলিকেশন্স

আবূ উসায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বের হয়ে শাওত নামক বাগানের নিকট দিয়ে চলতে চলতে দু’টি বাগান পর্যন্ত পৌছলাম এবং এ দু’টির মাঝে বসলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা এখানে বসে থাক। তিনি (ভিতরে) প্রবেশ করলেন। তখন নু’মান ইব্ন শারাহীলের কন্যা উমাইমার খেজুর বাগানস্থিত ঘরে জাওনিয়াকে আনা হয়। আর তাঁর খিদমতের জন্য ধাত্রীও ছিল। নবী (সা.) যখন তার কাছে গিয়ে বললেন, তুমি নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ কর। তখন সে বললঃ কোন রাজকুমারী কি কোন বাজারিয়া ব্যক্তির কাছে নিজেকে সমর্পণ করে? রাবী বলেনঃ এরপর তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করলেন তার শরীরে রাখার জন্য, যাতে সে শান্ত হয়। সে বললঃ আমি আপনার থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তিনি বললেনঃ তুমি উপযুক্ত সত্তারই আশ্রয় নিয়েছ। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ হে আবূ উসায়দ! তাকে দু’খানা কাতান কাপড় পরিয়ে দাও এবং তাকে তার পরিবারের নিকট পৌঁছিয়ে দাও।
সহিহুল বুখারী ৫২৫৫, অনুবাদঃ তাওহীদ পাবলিকেশন্স

(ভিন্ন সনদে, বুখারী ৫২৫৫ নং হাদিসের অনুরূপ) সাহল ইবন সা’দ ও আবূ উসায়দ (রাঃ) বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমাইমা বিনতু শারাহীলকে বিবাহ করেন। পরে তাকে তাঁর কাছে আনা হলে তিনি তার দিকে হাত বাড়ালেন। সে এটি অপছন্দ করল। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ উসাইদকে তার জিনিসপত্র গুটিয়ে এবং দুখানা কাতান বস্ত্র প্রদান করে তার পরিবারের নিকট পৌঁছে দেবার নির্দেশ দিলেন।
সহিহুল বুখারী ৫২৫৬, ৫২৫৭, অনুবাদঃ তাওহীদ পাবলিকেশন্স

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরবের এক মহিলার কথা আলোচনা করা হলে, তিনি আবূ উসাইদ সা‘ঈদী (রাঃ)-কে আদেশ দিলেন, সেই মহিলার নিকট কাউকে পাঠাতে। তখন তিনি তার নিকট একজনকে পাঠালে সে আসলো এবং সায়িদা গোত্রের দূর্গে অবতরণ করল। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এসে তার কাছে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দূর্গে তার কাছে প্রবেশ করে দেখলেন, এক স্ত্রীলোক মাথা ঝুঁকিয়ে বসে আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তার সঙ্গে কথাবার্তা বললেন, তখন সে বলে উঠল, আমি আপনার থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তখন তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে পানাহ দিলাম।
তখন লোকেরা তাকে বলল, তুমি কি জান ইনি কে? সে বললঃ না। তারা বললঃ ইনি তো আল্লাহর রাসূল। তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছিলেন। সে বলল, এ মর্যাদা থেকে আমি চিরদিনের জন্য বঞ্চিতা। এরপর সেই দিনই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগিয়ে গেলেন এবং তিনি ও তাঁর সাহাবীগণ অবশেষে বানী সায়িদার চত্বরে এসে বসে পড়লেন। এরপর বললেনঃ হে সাহল! আমাদের পানি পান করাও। সাহল বলেন, তখন আমি তাঁদের জন্য এ পেয়ালাটিই বের করে আনি এবং তা দিয়ে তাঁদের পান করাই। বর্ণনাকারী বলেন, সাহল তখন আমাদের কাছে সেই পেয়ালা বের করে আনলে আমরা তাতে করে পানি পান করি। তিনি বলেছেনঃ পরবর্তীতে ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয তাঁর নিকট হতে সেটি দান হিসাবে পেতে চাইলে, তিনি তাঁকে তা হেবা করে দেন।
সহিহুল বুখারী ৫৬৩৭, অনুবাদঃ তাওহীদ পাবলিকেশন্স; সহিহুল মুসলিম ৩৬/৯, হাদিস নং ২০০৭

ঐতিহাসিকদের মতে তার নাম

সেই স্ত্রীলোকের নাম নিয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন, এবং সাত রকম মত পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগ আলেমের মতে সবচেয়ে সঠিক হলো, সেই স্ত্রীলোকের নাম উমায়মাহ বিনতে আন-নু’মান ইবনে শারহীল (যেমনটা সহিহুল বুখারীর ৫২৫৫নং হাদিসে আবু উসায়েদ রাযিঃ-এর বর্ণনায় উল্লেখিত হয়েছে)।
পাশাপাশি সেই স্ত্রীলোকের নাম ‘আসমাও বলা হয়ে থাকে। সীরাতে ইবনে হিশামে আসমা বিনতে নু’মান বলা হয়েছে। তবে সেখানে সেই বিচ্ছেদের অন্যরকম বর্ণনা উল্লেখিত হয়েছে, যার সনদগুলো দুর্বল, এবং সহিহ হাদিস দ্বারা সেগুলো খণ্ডিত হিয়ে যায়।

‘আল্লাহর কাছে পানাহ চাই’ বলার কারণ

সেই জাওনি মহিলা কেন বলেছিলো “আমি আল্লাহর কাছে আপনার থেকে পানাহ চাই”?
নিম্নোলিখিত পয়েন্টগুলোর দ্বারা এটার উত্তর দেওয়া যায়ঃ

রাসূলকে চিনতে না পারা

সেই স্ত্রীলোকটি রাসূল (সাঃ)-কে চিনতে পারে নি।
উপরের সর্বশেষ হাদিসটি (সহিহুল বুখারী ৫৬৩৭) তে সেটা দেখা গিয়েছে।
তখন লোকেরা তাকে বলল, তুমি কি জান ইনি কে? সে বললঃ না। তারা বললঃ ইনি তো আল্লাহর রাসূল। তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছিলেন। সে বলল, এ মর্যাদা থেকে আমি চিরদিনের জন্য বঞ্চিতা।

সহিহুল বুখারীর কালজয়ী ব্যাখ্যাকার আল-হাফিয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেছেন,[1]ফাতহুল বারী ৯/৩৫৮ https://shamela.ws/book/1673/5327

وقال غيره : يحتمل أنها لم تعرفه صلى الله عليه وسلم ، فخاطبته بذلك .

وسياق القصة من مجموع طرقها يأبى هذا الاحتمال .

نعم سيأتي في أواخر الأشربة من طريق أبي حازم ، عن سهل بن سعد – فذكر الرواية الأخيرة ، ثم قال : –

فإن كانت القصة واحدة فلا يكون قوله في حديث الباب : ( ألحقها بأهلها ) ، ولا قوله في حديث عائشة : ( الحقي بأهلك ) تطليقا ، ويتعين أنها لم تعرفه .

وإن كانت القصة متعددة – ولا مانع من ذلك – فلعل هذه المرأة هي الكلابية التي وقع فيها الاضطراب ” انتهى.

“فتح الباري”
অন্যরা বলেছেনঃ হতে পারে সেই মহিলা তাঁকে চিনতে পারে নি, তাই ঐ কথাগুলো বলেছে।
যদিও কাহিনিটির প্রসঙ্গের সবগুলো বর্ণনা একসাথে বিবেচনা করলে মনে হয় এই সম্ভাবনাটি সম্ভব নয়।
অতঃপর তিনি বললেন,
যদি এই সমস্ত বর্ণনা শুধুমাত্র ‘একটি’ ঘটনার কথা বলে, রাসূলের (সাঃ) বলা কথা গুলি ‘তুমি তোমার পরিবারের কাছে গিয়ে মিলিত হও’ এবং আয়িশা রাযিঃ বর্ণিত হাদিসে ‘তাকে তার পরিবারের নিকট পৌঁছিয়ে দাও’- এগুলো তালাক্ব/বিবাহবিচ্ছেদ হিসেবে গণ্য হবে না। এটা অবশ্যই হতে পারে যে, সেই মহিলাটি জানতো না তিনি কে ছিলেন।
তবে এটি যদি ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি কিংবা ঘটনার কথা বলে তাহলে এরকম হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই – খুব সম্ভবত সেই মহিলাটি কিলবিয়া মহিলা হয়ে থাকবে যার সম্পর্কে আলেমগণ এবং ঐতিহাসিকগণ মতভেদ করেছেন।

অথবা, সে কৌশলের স্বীকার হয়েছিলো

কিছু আলেমগণ বলেছেন, সে আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়েছিলো কারণ রাসূল (সাঃ)-এর স্ত্রীদের মধ্যে থেকে কেউ তার উপর কৌশল খাটিয়েছিলো, তাকে বলেছিলো এই কথাগুলো রাসূল (সাঃ) পছন্দ করবেন। তাই সে সেই কথাগুলো বলেছিলো নিজেকে রাসূলের (সাঃ) কাছে প্রিয় করে তোলার জন্য, কিন্তু সে বোঝে নি যে এই কথাগুলো শুনলে রাসূল (সাঃ) তার কাছ থেকে আলাদা হয়ে তাকে সুরক্ষা দেবেন।
এটা তিনটি সনদে বর্ণিত হয়েছে,
(i) ইবনে সা’দ আত-তাবাকাত (৮/১৪৩-১৪৮) এবং আল-হাকিম আল-মুস্তাক (৪/৩৯) গ্রন্থে মুহাম্মদ ইবনে উমর আল-ওয়াকিদির মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে, যিনি হাদিস বর্ণনায় যঈফ।
(ii) ইবনে সা’দ বর্ণনা করেছেন ‘আত-তাবাক্বাতে‘ সা’ঈদ ইবনে আবদুল রহমান ইবনে আবজা সূত্রে, যিনি বলেছিলেন:

“জাওনি নারীটি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর কাছ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। তাকে বলা হয়েছিল: এটি তাকে আল্লাহর রাসূলের কাছে প্রিয় করে তুলবে। আর তাঁর কাছ থেকে কোনো নারী আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়নি, সে ব্যতীত। কিন্তু সে আসলে ছলিত হয়েছিলো কারণ তাকে সুন্দর দেখাচ্ছিলো। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে বলা হয়েছিলো তাদের সম্পর্কে যারা সেই জাওনি মহিলাকে দিয়ে সেই কথা বলিয়েছিল, “তারা ইউসুফের (আঃ) চারপাশে রমণীদের মত।”

(iii) ইবনে সা’দ এটি ‘আত-তাবাকাত (৮/১৪৫)‘এও বর্ণনা করেছেন। তিনি বললেনঃ

হিশাম ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আস-সা’ইব তার পিতার কাছ থেকে আবু সালেহ থেকে, ইবনে আব্বাস থেকে আমাদের কে বলেছেন: রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসমা বিনতে আন-নুমানকে বিয়ে করেন, যিনি সে সময়ের সবচেয়ে সুন্দর ও তরুণ চেহারার মহিলাদের একজন ছিলেন। যখন রাসূল (সাঃ) বিভিন্ন গোত্রের নারীদেরকে বিয়ে করতে শুরু করলেন, তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন, “তিনি অন্য গোত্রের স্ত্রীদের বেছে নিতে শুরু করেছেন এবং শীঘ্রই তারা তাকে আমাদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।” কিন্দা-এর প্রতিনিধি দল যখন তাঁর (রাসূল) কাছে এসেছিল তখন তিনি তার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রাসূল (সা.)- এর পত্নীগণ যখন তাকে দেখল, তখন তারা তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হল এবং তাকে বললঃ “যদি তোমরা তাঁর কাছে নিজেকে ভালোবাসাতে চাও, তবে আল্লাহর কাছে তাঁর কাছ থেকে আশ্রয় চাও, যখন সে তোমার কাছে প্রবেশ করবে।” অতঃপর যখন তিনি প্রবেশ করলেন এবং পর্দা ফেলে দিলেন, তখন তিনি তার কাছে পৌঁছলেন এবং সে বললোঃ “আমি আপনার কাছ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।” তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে, তাকে নিরাপত্তা দেয়া হবে। তোমার পরিবারের কাছে ফিরে যাও”।

ইবনে সা’দ (রহঃ) আরো ঘটনাটির ক্ষেত্রে আরো একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেনঃ

হিশাম ইবনে মুহাম্মাদ আমাদের বলেছেন: ইবনে আল-গাসিল বলেছেন হামজাহ ইবনে আবি উসাইদ আস-সা’ইদী থেকে, যিনি বলেছেন তার পিতার কাছ থেকে (যিনি বদরের যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন) – যিনি বলেছিলেন: “আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আসমা বিনতে আন-নু’মান আল-জাওয়ানিয়াহকে বিয়ে করেছিলেন; তিনি আমাকে পাঠিয়েছিলেন এবং আমি তাকে নিয়ে এসেছি (রাসূলের নিকট)। হাফসাহ (রাযিঃ) আয়িশা (রাঃ)-কে বললেন, কিংবা আয়িশা (রাযিঃ) হাফসা (রাঃ)-কে বললেন, “তার চুল রঙ করে দাও, আমি তা আঁচড়ে দিই।” অতঃপর তারা তা করল, আর তাদের মধ্যে একজন তাকে বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পছন্দ করেন, যখন রাসূল (সাঃ) প্রবেশ করবেন এবং সে যদি বলে, ‘আমি আপনার কাছ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।’ অতঃপর যখন তাকে তাঁর কাছে নিয়ে আসা হলো, এবং যখন তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং পর্দা ফেলে দিলেন, তখন সে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন এবং বললেন, ‘আমি আপনার কাছ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই’। তিনি তার মুখমন্ডলে তার হাতা রাখলেন এবং তিনি তা দিয়ে নিজেকে ঢেকে দিলেন এবং বললেন: “তুমি আমার থেকে সুরক্ষিত”। আবু উসাইদ (রাঃ) বললেন, অতঃপর তিনি আমার কাছে এসে বললেন, হে আবু উসাইদ, তাকে তার পরিবারের কাছে নিয়ে যাও এবং তাকে সাদা চাদরের দুটি পোশাক দাও। অতঃপর সেই স্ত্রীলোকটি বলতেন, ‘আমি খুবই দুর্ভাগা।’

এই সনদগুলো একে অপরকে সমর্থন করে এবং যখন একসাথে নেওয়া হয় তখন প্রমাণ করে যে এই দৃশ্যের একটি ভিত্তি রয়েছে।

কিংবা, তার রাজকুমারী হওয়ার অহংকার

অন্যান্য আলেমরা বলেন যে, সে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছিলো তার কারণ ছিল তার অহংকার, কারণ সে সুন্দরী ছিলো এবং রাজকীয় আরব পরিবারগুলির মধ্যে একটি থেকে এসেছিলো এবং সে এমন কাউকে বিয়ে করতে চাননি যিনি রাজা ছিলেন না। উপরে এরকম হাদিস (সহিহুল বুখারী ৫২৫৫) থেকেও দেখা যায়ঃ তখন সে বললঃ কোন রাজকুমারী কি কোন বাজারিয়া ব্যক্তির কাছে নিজেকে সমর্পণ করে? রাবী বলেনঃ এরপর তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করলেন তার শরীরে রাখার জন্য, যাতে সে শান্ত হয়। সে বললঃ আমি আপনার থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তিনি বললেনঃ তুমি উপযুক্ত সত্তারই আশ্রয় নিয়েছ। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ হে আবূ উসায়দ! তাকে দু’খানা কাতান কাপড় পরিয়ে দাও এবং তাকে তার পরিবারের নিকট পৌঁছিয়ে দাও।
আল-হাফিয ইবনে-হাজার (রহঃ) বলেছেন,[2]ফাতহুল বারী ৯/৩৫৮ https://shamela.ws/book/1673/5327

” ( السُّوقة ) قيل لهم ذلك لأن الملك يسوقهم فيساقون إليه ، ويصرفهم على مراده ، وأما أهل السوق فالواحد منهم سوقي . قال ابن المنير : هذا من بقية ما كان فيها من الجاهلية ، والسوقة عندهم من ليس بملك كائنا من كان ، فكأنها استبعدت أن يتزوج الملكة من ليس بملك ، وكان صلى الله عليه وسلم قد خير أن يكون ملكا نبيا ، فاختار أن يكون عبدا نبيا ، تواضعا منه صلى الله عليه وسلم لربه ، ولم يؤاخذها النبي صلى الله عليه وسلم بكلامها ، معذرة لها لقرب عهدها بجاهليتها ” انتهى.
‘সাধারণ মানুষ(সাধারণ মানুষ বোঝাতে বাজারিয়া শব্দটি এসেছে)’: … ইবনে আল-মুনীর (রাঃ) বলেন: জাহেলী মনোভাবের অবশিষ্টাংশ কিছু তার মধ্যে তখনও বিদ্যমান ছিল। তাদের(তাদের বংশীয়) দৃষ্টিভঙ্গি মতে, রাজা না হলেই সে সাধারণ ব্যক্তি, সে যেই হোক না কেন। সুতরাং ব্যাপারটা এমন ছিল যে, সে এটিকে অসম্ভাব্য বলে মনে করেছিলেন যে কোনও রানী এমন কাউকে বিয়ে করবে যিনি রাজা ছিলেন না। [রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বাদশাহ-নবী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তার পালনকর্তার কাছে নম্রতার বশবর্তী হয়ে বান্দা-নবী হওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন।] কিন্তু রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার কথার জন্য তাকে শাস্তি দেননি এবং তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন কারণ তিনি অতিসম্প্রতি জাহেলিয়াতের সময়কে পেছনে ফেলে এসেছিলেন।

বর্ণনাগুলো উল্লিখিত কারণ এবং আলেমদের কথায় এটাই বলা যেতে পারে যে, এই সবকিছুই নবীর (সাঃ) মহৎ মনোভাবের দিকে ইঙ্গিত করে, কারণ তিনি এমন কাউকে বিয়ে করতে চাননি/রাখতে চাননি যাকে তিনি মনে করেন যে সে তাকে চান না, এবং তিনি শারীরিক বা আর্থিকভাবে কোনও মুসলমানের ক্ষতি হোক এটা চান নি।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এমন কোনো স্ত্রীলোককে স্পর্শ করেন নি, যে তাঁকে বিয়ে করতে চায়নি কিংবা বিবাহে থাকতে চায়নি।
(আল্লাহই ভালো জানেন)

কাল্পনিক অভিযোগ ও খণ্ডন

অভিযোগ ১: রাসূল (সাঃ) এর শানে অপবাদ

মেডিকেল সাইন্সে ‘প্যাথোলজিক্যাল লায়িং‘ নামের একটা মানসিক রোগ আছে। সেই রোগী বারবার মিথ্যা বলতেই থাকে। সম্ভবত সেই রোগে আক্রান্ত এক ব্লগার তার ব্লগে উক্ত ঘটনাকে নিম্নোক্তরূপে লিখেছেঃ

রাসূল (সাঃ)-এর সাথে উমায়মাহ বিনতে শারাহীলের বিচ্ছেদের বর্ণনা নিয়ে লুকোচুরির সমাপ্তি রাসূল (সাঃ)-এর সাথে উমায়মাহ বিনতে শারাহীলের বিচ্ছেদের বর্ণনা নিয়ে লুকোচুরির সমাপ্তি রাসূল (সাঃ)-এর সাথে উমায়মাহ বিনতে শারাহীলের বিচ্ছেদের বর্ণনা নিয়ে লুকোচুরির সমাপ্তি

আমার মনে হয় না, তার মিথ্যাচার আপনাদের কাছে আবার নতুন করে করে দেখিয়ে দিতে হবে। তার ক্যাপশন আর রেফারেন্সে যে আদৌ মিল নেই সেটা স্বাভাবিক যেকোনো মানুষই বুঝতে পারবে।
বল, ‘সত্য এসে গেছে আর মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, মিথ্যা তো বিলুপ্ত হওয়ারই।’
– কুরআন ১৭:৮১

সতর্ককারী আমরা, চয়েস আপনার, মিথ্যুকদের দলে থাকবেন নাকি সত্যের পথে প্রত্যাবর্তন করবেন?

অভিযোগ ২: বাজারিয়া শব্দটি নিয়ে জলঘোলা

আমার মনে হয় না এটা আদৌ কোনো অভিযোগ। অভিযোগটা “বাজারিয়া” শব্দটি নিয়ে। এক অজ্ঞ ব্যক্তির অভিযোগ, যে এই শব্দটি দিয়ে নাকি রাসূল (সাঃ) কে দুঃচরিত্র বলা হয়েছে।

প্রথমত,

উমায়মাহ বিনতে শারহীলের উক্ত কথা গ্রহণযোগ্য নয়, সেটা কেন আমরা উল্লেখ করেছি। জাহেলী যুগের বংশগৌরব জাহির সম্পর্কিত অপরাধ করেছে সে। বরং রাসূল (সাঃ) তাকে ক্ষমা করে দিয়ে মহত্ত্বের পরিচয় দিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত,

উক্ত শব্দটি দিয়ে ‘সাধারণ মানুষ’ বোঝানো হয়েছে। মানসিক রোগিটির ব্লগেও তার রেফারেন্সে এটির উল্লেখ আছে (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৫/৪৮৭ ইফাবা)। লজিক্যালি ভাবলেও নিজেকে রাজকন্যা পাশাপাশি আর অপরজনকে দুঃচরিত্র বলা – এটা একটা ফ্যালাসি, ক্যাটেগরি এরর
বাংলাদেশী অনুবাদকরা ‘বাজারিয়া’ শব্দটি অনুবাদ করেছে আরবি ‘سوقة‘ শব্দ থেকে। যার একটা মানে ‘রাজা নয় এমন’ কাউকেও বোঝায়ঃ[3]https://www.almougem.com/search.php?mdatabase=lmougem&query=سوقة

الكلمة: السُّوقة. الجذر: سوق. الوزن: فُعْلَة.

[السُّوقة]: من الناس: خلاف الملوك، قال زهير:

يا حارِ لا أُرْمَيَنْ منكمْ بداهيةٍ *** لم يَلْقها سُوقَةٌ قبلي ولا ملكُ

شمس العلوم-نشوان بن سعيد الحميري-توفي: 573هـ/1177م

আমরা যদি বাংলা বাদে অন্য অনুবাদগুলো দেখি তাহলে বিষয়টা আরো স্পষ্ট হয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক ইংরেজি অনুবাদঃ
Narrated Abu Usaid:
We went out with the Prophet (ﷺ) to a garden called Ash-Shaut till we reached two walls between which we sat down. The Prophet (ﷺ) said, “Sit here,” and went in (the garden). The Jauniyya (a lady from Bani Jaun) had been brought and lodged in a house in a date-palm garden in the home of Umaima bint An- Nu`man bin Sharahil, and her wet nurse was with her. When the Prophet (ﷺ) entered upon her, he said to her, “Give me yourself (in marriage) as a gift.” She said, “Can a princess give herself in marriage to an ordinary man?” The Prophet (ﷺ) raised his hand to pat her so that she might become tranquil. She said, “I seek refuge with Allah from you.” He said, “You have sought refuge with One Who gives refuge. Then the Prophet (ﷺ) came out to us and said, “O Abu Usaid! Give her two white linen dresses to wear and let her go back to her family.”[4]Sahih al-Bukhari 5255

In-book reference : Book 68, Hadith 5

USC-MSA web (English) reference : Vol. 7, Book 63, Hadith 182

  (deprecated numbering scheme)

অনলাইন উৎসঃ https://sunnah.com/bukhari:5255
পাশাপাশি উর্দু অনুবাদও দেখা যাক সুবিধার্থে,
 نبی کریم صلی اللہ علیہ وسلم کے ساتھ باہر نکلے اور ایک باغ میں پہنچے جس کا نام ”شوط“ تھا۔ جب وہاں جا کر اور باغوں کے درمیان پہنچے تو بیٹھ گئے۔ نبی کریم صلی اللہ علیہ وسلم نے فرمایا کہ تم لوگ یہیں بیٹھو، پھر باغ میں گئے، جونیہ لائی جا چکی تھیں اور انہیں کھجور کے ایک گھر میں اتارا۔ اس کا نام امیمہ بنت نعمان بن شراحیل تھا۔ ان کے ساتھ ایک دایہ بھی ان کی دیکھ بھال کے لیے تھی۔ جب نبی کریم صلی اللہ علیہ وسلم ان کے پاس گئے تو فرمایا کہ اپنے آپ کو میرے حوالے کر دے۔ اس نے کہا کیا کوئی شہزادی کسی عام آدمی کے لیے اپنے آپ کو حوالہ کر سکتی ہے؟ بیان کیا کہ اس پر نبی کریم صلی اللہ علیہ وسلم نے اپنا شفقت کا ہاتھ ان کی طرف بڑھا کر اس کے سر پر رکھا تو اس نے کہا کہ میں تم سے اللہ کی پناہ مانگتی ہوں۔ نبی کریم صلی اللہ علیہ وسلم نے فرمایا کہ تم نے اسی سے پناہ مانگی جس سے پناہ مانگی جاتی ہے۔ اس کے بعد نبی کریم صلی اللہ علیہ وسلم باہر ہمارے پاس تشریف لائے اور فرمایا کہ ابواسید! اسے دو رازقیہ کپڑے پہنا کر اسے اس کے گھر پہنچا آؤ۔
صحیح بخاری حدیث: 5255 عربی حدیث: 5255
সহিহুল বুখারী ৫২৫৫ উর্দু অনুবাদ[5]https://al-hadees.com/hadees-details/bukhari/5255
এখানে “عام آدمی” অর্থাৎ “আ’ম আদমি” শব্দটির অর্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এসবকিছু ছাড়াও, মূল ঘটনা অংশে ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে রেফারেন্স দিয়েছি, সেখানে ‘সাধারণ মানুষ’-ই বোঝানো ছিলো।

এবং
আল্লাহই ভালো জানেন।

    Footnotes

    Footnotes
    1, 2ফাতহুল বারী ৯/৩৫৮ https://shamela.ws/book/1673/5327
    3https://www.almougem.com/search.php?mdatabase=lmougem&query=سوقة
    4Sahih al-Bukhari 5255
    In-book reference : Book 68, Hadith 5
    USC-MSA web (English) reference : Vol. 7, Book 63, Hadith 182
      (deprecated numbering scheme)
    অনলাইন উৎসঃ https://sunnah.com/bukhari:5255
    5https://al-hadees.com/hadees-details/bukhari/5255

    ইসলামকিউএ

    www.islamqa.info(এই একাউন্টটি ফ্রম মুসলিমস-এর এডমিন প্যানেল দ্বারা চালিত। ইসলামকিউএ থেকে বিভিন্ন অনুবাদকৃত লেখা এখানে পাবেন।)

    ইসলামওয়েব

    www.islamweb.net(এই একাউন্টটি ফ্রম মুসলিমস-এর এডমিন প্যানেল দ্বারা চালিত। ইসলামওয়েব থেকে বিভিন্ন অনুবাদকৃত লেখা এখানে পাবেন।)
    0 0 votes
    Article Rating
    Subscribe
    Notify of
    3 Comments
    Oldest
    Newest Most Voted
    Inline Feedbacks
    View all comments
    Fahim Khan
    1 year ago

    1.er por ar biye koren ni keno rasul sa ke?

    তারা বললঃ ইনি তো আল্লাহর রাসূল। তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছিলেন। সে বলল,এ মর্যাদা থেকে আমি চিরদিনের জন্য বঞ্চিতা। 
    সহিহুল বুখারী ৫৬৩৭, অনুবাদঃ তাওহীদ পাবলিকেশন্স; সহিহুল মুসলিম ৩৬/৯, হাদিস নং ২০০৭

    2. biye houyar somoy unader porichoy eke oporke bolenni?

    3. biye ki hoyechilo? kokhon holo?

    Fahim Khan
    Reply to  Tahsin Arafat
    1 year ago

    ধন্যবাদ 

    Back to top button