ভারত

প্রবীণ মুসলিম দম্পতিকে পিটিয়ে হত্যা করল হিন্দু পড়শীরা

ভারতের উত্তরপ্রদেশে এক প্রবীণ মুসলিম দম্পতিকে তাদের হিন্দু প্রতিবেশীরা ঘিরে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই দম্পতির ‘অপরাধ’ হচ্ছে – তাদের ছেলে কয়েক বছর আগে মহল্লার একটি হিন্দু মেয়ের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল।

এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার (১৮ অগাস্ট) রাতে, উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর জেলার রাজ্যেপুর গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দম্পতির নাম আব্বাস ও কামরুল নিশা – তাদের দুজনেরই বয়স ছিল পঞ্চাশের ওপর।

সীতাপুর জেলার পুলিশ সুপার চক্রেশ মিশ্রা আরও জানান, তারা গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন এবং মূল হামলাকারী-সহ মোট তিনজনকে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে পুরো ঘটনাটি যে হিন্দু ও মুসলিম পরিবার থেকে আসা দুই যুবক-যুবতীর প্রেম ও পালিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করেই ঘটেছে, সে কথা তিনিও স্বীকার করেছেন।

ভারতে মুসলিম যুবকরা যখনই কোনও হিন্দু মেয়ের সঙ্গে ভালবাসা বা বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, দেশের হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো তার নামকরণ করেছে ‘লাভ জিহাদ’ – আর এখানেও সে রকমই একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সূত্রপাত হয়েছিল।

তথাকথিত লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে – এবং দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে এই ‘লাভ জিহাদ’ যে রাজনৈতিক প্রচারণার একটি বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে তাতেও কোনও সন্দেহ নেই।

তবে এই ধরনের ক্যাম্পেইন সমাজে কী মারাত্মক অভিঘাত সৃষ্টি করছে, সীতাপুরের ঘটনায় তা আরও একবার সামনে চলে এলো।

“উত্তরপ্রদেশের নানা প্রান্তে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণভাবে পাশাপাশি বসবাস করছেন শত শত বছর ধরে, কিন্তু এখন এই বিভাজন এতটাই সাঙ্ঘাতিক চেহারা নিয়েছে যে তারা মেরে পড়শীর মাথা ফাটিয়ে দিতেও দ্বিধা করছেন না”, বিবিসিকে বলছিলেন ওই রাজ্যের সাংবাদিক পীযূষ রাই।

সীতাপুরে যা ঘটেছিল

জেলার পুলিশ প্রধান চক্রেশ মিশ্রা জানান, বছর তিনেক আগে রাজ্যেপুর গ্রামের যুবক শওকত তাদের পাড়ারই একটি হিন্দু মেয়ে রুবির প্রেমে পড়ে। তাদের বিয়েতে পরিবার সম্মতি দেবে না এটা বুঝে দুজনেই একসঙ্গে পালিয়ে যায়।

কিন্তু ২০২০ সালে ওই ঘটনার সময় রুবি তখনও অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল – ফলে তার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ শওকতের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা রুজু করে।

ওই মামলায় অভিযুক্ত শওকতকে জেলেও যেতে হয়েছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে শওকত জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার গ্রামে ফিরে এলে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ নতুন করে মাথা চাড়া দেয়।

গ্রামবাসীরাই পুলিশকে জানিয়েছেন, এরপরই রুবির বাবা শৈলেন্দ্র জয়সোয়াল আরও কয়েকটি হিন্দু পরিবারের সঙ্গে মিলে শওকতদের বাড়িতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা আঁটেন।

সেই অনুযায়ী শৈলেন্দ্র জয়সোয়াল ও তার বেশ কয়েকজন সঙ্গীসাথী লোহার রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শুক্রবার শওকতদের বাড়িতে হানা দেন।

ঘটনার সময় শওকত বাড়িতে ছিল না, কিন্তু ছিলেন তার বাবা-মা আব্বাস ও কামরুল নিশা।

হামলাকারীদের বাধা দিতে গিলে তাদের দুজনকেই বেধড়ক মারধর করা হয়, মাথায় লোহার রডের বাড়ি মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়।

প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। হামলাকারীরাও এর পরেই এলাকা ছেড়ে পালায়।

পুলিশ পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত দম্পতির দেহ উদ্ধার করেছে এবং ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে এলাকা জুড়ে চিরুনি তল্লাশিও শুরু হয়ে যায় শনিবার থেকেই।

ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করে পুলিশ সুপার চক্রেশ মিশ্রা সংবাদমাধ্যমকে যে ব্রিফিং করেন, তার একটি ভিডিও এদিন টুইট করেছেন ওই রাজ্যের সাংবাদিক পীযূষ রাই।

তিনি সেখানে জানিয়েছেন, জোড়া খুনের এই ঘটনায় শৈলেন্দ্র জয়সোয়াল, পল্লু ও অমরনাথ নামে তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও দুজন হামলাকারীর খোঁজে অভিযান চলেছে।

এই ঘটনার পর রাজ্যেপুর গ্রামে পুলিশ চৌকিও বসানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।

    Source
    BBC News বাংলা
    0 0 votes
    Article Rating
    Subscribe
    Notify of
    0 Comments
    Oldest
    Newest Most Voted
    Inline Feedbacks
    View all comments
    Back to top button